Friday, October 20, 2006

রাষ্ট্রপতির মৃত্যু

চ্যানেল ফোরে কাল দেখালো একটা বিতর্কিত ডকু-ফিল্ম - ডেথ অব আ প্রেসিডেন্ট। গুরুচণ্ডা৯তে রঙ্গনের লেখা এই নিয়ে...

"শিকাগোতে উনিশে অক্টোবরের সকাল৷ শিকাগো এয়ারপোর্টে আমেরিকা যুক্তরাষ্টের্র প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এসে পৌঁছেছেন৷ শিকাগো ইকোনমিক ক্লাবের মিটিঙে ভাষণ দেবেন৷ প্রেসিডেন্টের কনভয় শেরাটন হোটেলের দিকে রওনা দিয়েছে৷ অন্যদিকে সেইদিন শিকাগো শহর বুশবিরোধী সমাবেশ, মিছিল ও ধর্নায় উত্তাল৷ শিকাগোর পুলিশ চিফের কথায়- "বুশ যেখানেই যান সাধারণত: সেখানে বিক্ষোভ দেখানো হয়৷ কিন্তু এই প্রথম মনে হল বিক্ষোভকারীদের চোখমুখ দিয়ে যেন ঘেন্না ঠিকরে পড়ছে৷" রাস্তার দুপাশের বিক্ষোভকারীদের সারি একসময় পুলিশ কর্ডন ভেঙে ফেলে৷ কেউ কেউ রাস্তার মধ্যে এসে যায়৷ বুশের কনভয় থেমে যায়৷ কোনো কোনো দু:সাহসী বুশের গাড়িতেও হাত দেয়৷ পুলিশ কোনো রকমে তাদের হঠিয়ে দিলে, বুশের কনভয় পূর্বনির্ধারিত পথ ছেড়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে শেরাটন হোটেলে পৌঁছায়৷ শেরাটন হোটেলের বাইরেও লাগাতার বিক্ষোভ চলছে৷ সেইখানেও একটা সময়ের পর বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়৷ দুই একজন পুলিশের নিশ্ছিদ্র কর্ডন ভেঙেও ফেলে৷ শেরাটন হোটেলের চারদিকে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট বুশ তার বক্তৃতা শুরু করেন৷ যথারীতি দুই একটা বুশোচিত রসিকতা, শিকাগোর ডেমোক্র্যাট মেয়রের প্রশস্তি ইত্যাদি৷ তবে বক্তৃতার মূল কেন্দ্রবিন্দু উত্তর কোরিয়ার প্রতি হুমকি৷ বক্তৃতা শেষ হলে প্রেসিডেন্ট হোটেলের দরজার সামনে এসে লাল দড়ির আশেপাশে জমায়েত অভ্যাগতদের সাথে আলাপ পরিচয় করছেন৷ বক্তৃতার অভিঘাত প্রত্যাশিত৷ তাই প্রেসিডেন্ট বেশ খোশমেজাজে৷ এই আলাপচারিতার মধ্যেই হঠাত্ একটা বুলেটের শব্দ৷ বেশ কয়েকজন লুটিয়ে পড়েন মাটিতে৷ তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট একজন৷ প্রচন্ড বিশৃঙ্খলা, আর্তনাদ, হুড়োহুড়ি৷ তার মধ্যে স্পেশাল সার্ভিসের লোকেরা বিদ্যুত্গতিতে প্রেসিডেন্টকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন৷

ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালের ১৯শে অক্টোবর৷ সিনেমার নাম দেখে নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে এর পরে প্রেসিডেন্ট মারা যাবেন৷ তবে সিনেমাটা প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতেই কিন্তু শেষ হয় না৷ প্রেসিডেন্টের হত্যার তদন্ত এবং অপরাধের শাস্তি অবধি সিনেমা এগোয়৷ কে মারলেন, কি ভাবে মারলেন ইত্যাদি ইত্যাদি চাপাই থাক৷ নইলে পুরো সিনেমাটার মজাটাই নষ্ট৷

এই পর্যন্ত পড়ে যদি কেউ ভাবেন যে এটা বুঝি হলিউডের তারকাখচিত কোনো ব্লকবাস্টার, তাহলে ভুল ভাবছেন৷ এই সিনেমাটির অবস্থান তথ্যচিত্র এবং কাহিনীচিত্রের মাঝামাঝি কোনো জায়গায়৷ এটি কাহিনীচিত্র কারণ পুরো সিনেমাটায় যা দেখানো হয় তা পুরোটাই ভবিষ্যত্ কল্পনা৷ কিন্তু গঠনের দিক থেকে সিনেমাটি একটি তথ্যচিত্র৷ যারা ব্রিটিশ ডকুমেন্টারি ছবির সাথে পরিচিত, তারা এই স্টাইলের ব্যাপারটা ধরতে পারবেন৷ ঘটনার ফুটেজ এবং মূল পাত্রপাত্রীদের ইন্টারভিউ দিয়ে সিনেমটা বানানো হয়েছে৷ বি বি সির যে কোনো টি ভি ডকুমেন্টারির সাথে এই সিনেমার গঠনের কোনো তফাত্ নেই৷ তফাত্ শুধু একটাই- এখানে তথ্যও কাল্পনিক৷ কিন্তু জর্জ বুশ মানে জর্জ বুশ, ডিক চেনি মানে ডিক চেনি৷ অর্থাত্ জর্জ বুশ বা ডিক চেনির ভূমিকায় কোনো অভিনেতা অভিনয় করেন না৷ সিনেমাতে দেখবেন জর্জ বুশ শিকাগো এয়ারপোর্টে নামছেন, শিকাগোতে বক্তৃতা দিচ্ছেন, অভ্যাগতদের সাথে হাত মেলাচ্ছেন এবং গুলি খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন৷ ডিক চেনি কার্যভার গ্রহণ করছেন, এবং মৃত প্রেসিডেন্টের পারলৌকিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছেন৷ সিনেমাটি প্রথম দেখানো হয় ২০০৪ সালের টরন্টো চলচ্চিত্র উত্সবে৷ মোর৪ চ্যানেলে ৯ই অক্টোবর৷ এবং চ্যানেল ফোরে ১৯শে অক্টোবর, ২০০৬৷ আমেরিকানরা মারাত্মক খেপে গেছেন সিনেমা দেখে৷ টেক্সাসের রিপাব্লিকান পার্টির মতে সিনেমার বিষয়বস্তু
"shocking" এবং "disgusting" ৷ জর্জ বুশের পয়লা প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিন্টনের মতে: "I think it's despicable... I think it's absolutely outrageous. That anyone would even attempt to profit on such a horrible scenario makes me sick." আমরা যেহেতু কিছুতেই খুব একটা অসুস্থ হই না, তাই আমরা সিনেমাটির আর একটু ভিতরে যাব৷

সিনেমা শুরু হয় এক মহিলার কন্ঠস্বরে আরবী ভাষার ভয়েস ওভার দিয়ে৷ ৯/১১ হবার পরে মহিলা বিধ্বস্ত৷ যদিও তাঁর অনেক প্রতিবেশীই বলেন, যা হয়েছে ঠিক হয়েছে৷ আমরা এতদিন ভুগেছি, এবার ওরাও একটু ভুগুক৷ কিন্তু মহিলার প্রশ্ন- এর ফলে আমরা কি পেলাম? মহিলা এইবার জামাল বলে কোনো এক লোকের কথা বলেন যিনি মহিলার স্বামীই হবেন হয় তো৷ জামাল এইটা কি করল? কেন করল? আমাদের সন্তানের কথা ভাবল না? দেশের কথা? মানুষের কথা৷ এর পরেই কাহিনী শুরু হয় সকালবেলার শিকাগো এয়ারপোর্টে৷ যেহেতু আমেরিকানরা ক্ষেপে গেছেন, মনে হওয়া স্বাভাবিক যে সিনেমাটা প্রচন্ড আমেরিকাবিরোধী বা বুশবিরোধী৷ নিশ্চয় প্রচুর সাবভার্সিভ রাগী কথাবার্তা আছে৷ এবং সিনেমার শুরুতে সেই আরবী ভাষার ইন্টারভিউ বুঝিয়ে দেয় যে এই সিনেমা প্রথম থেকেই যতদূর সম্ভব নিরাসক্ত থাকবে৷ যতদূর থাকা যায়৷

কি করে নিরাসক্ত থাকা যায়? ধরুন আজ আপনি বুশের কাছের লোকজনদের ইন্টারভিউ নিলে যে রকম কথাবার্তা শুনবেন, সিনেমাতে বুশের স্পেশাল অ্যাডভাইজার ঠিক সেইভাবেই ইন্টারভিউ দেন৷ বা পুলিশকর্তারা৷ বা ঘটনার পরে যাদের সন্দেহের বশে গ্রেফতার করা হয় তারাও৷ কখনই উচ্চকিত চমক নেই৷ আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে ২০০৭ অবধি যদি একটা ট্রেন্ড লাইন আঁকেন, তবে মনে হবে এই সব উক্তি, প্রত্যুক্তি, মতামত একান্ত স্বাভাবিক৷ আজকে দাঁড়িয়ে টি ভিতে আমরা এই সবই শুনে থাকি৷ আজকের টি ভির বিভিন্ন খবর নিয়ে যদি একটা কোলাজ বানান, ইরাক-আফগানিস্থান-আবু ঘ্রায়িব-সিরিয়া-ইরান- ঠিক এই রকমই দাঁড়াত৷ তফাত্ হল, এখানে সবই কাল্পনিক যা একবছর পরে ঘটে৷ এবং বুশকে হত্যা করা হয়৷ ধারাবিবরণীতেও স্রেফ বিবরণ থাকে৷ কোথাও পরিচালক নিজের মতামত একবারও বলেন না৷ কিন্তু পুরো সিনেমাটাই তো পরিচালকের নিজের কথা!

এই নিরাসক্তির ছবি দেখতে দেখতে তবুও গায়ে জ্বালা ধরে, এবং সাথে সাথে হাড় হিম হয়ে আসে৷ আমাদের চারদিকে যা ঘটছে, ঘটেছে এবং ঘটতে চলেছে, তা এমনিতেই এমন ভয়ঙ্কর, যে তার জন্য আলাদা করে কোনো স্টাইলাইজড সাবভার্শনের দরকার হয় না৷ প্রতিদিনের সি এন এন, বি বি সি, এমন কি ফক্স নিউজের নিউজ ক্লিপিং জড়ো করে তৈরি করা যায় এই কালরাত্রির পাঁচালী৷ যদিও আমরা জানি মিডিয়া কিভাবে চলে এবং কোন মিডিয়া কাদের কথা বলে- তা সজ্জ্বেও এই বিকিয়ে যাওয়া মিডিয়ার তোলা ছবি দেখতে দেখতেই ভিতর থেকে আগুন জ্বলে৷ কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মন্তব্য ছাড়াই৷ এই খবরগুলো সাজানোতেই পরিচালকের মুন্সিয়ানা৷ কিন্তু সাজিয়ে তোলার খেলাটা দর্শক কখনই বোঝেন না৷ শুধু গায়ে জ্বালা ধরে, হাড় হিম হয়ে আসে৷

যাদের রাজনৈতিক থিল্রার ভালো লাগে, তাদের অবশ্যই এই ছবি ভালো লাগবে৷ পুরো হত্যাকান্ডের ছক এইখানে বলব না আগেই বলেছি৷ শুধু বলি সব শেষে কি হয়৷ খুব অবাক করে দেওয়া কিছু হয় না৷ যা এখনও হচ্ছে, তারি একটা যৌক্তিক পরিণতি ঘটে৷ আমেরিকান পুলিশ এবং রাষ্ট্র নিজেদের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে নেয়৷ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্টের নতুন সংস্করণ বের হয় এবং প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট পার্মানেন্ট আইনে পরিণত হয়৷ ডিক চেনি প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করেন৷ আমেরিকা বিদেশী রাষ্টের্র মদত খুঁজে ফেরে৷ কোন রাষ্ট সেটা সিনেমাতেই দেখুন৷"

পুরো সিনেমা দেখতে চাইলে চলে যান গুগুল ভিডিওতে

ধাঁধাঁ, মজা, হেঁয়ালি...

কিছুদিন আগে কেউ ইমেলে একটা ধাঁধাঁ পাঠিয়েছিলো - হ্যাকার পাজল - হ্যাকারদের মতন করে চিন্তা করতে হবে। বেশ মজা লেগেছিলো, একটু ভেবেচিন্তে শেষও করে ফেলেছিলুম। এবার আরেকটা পেয়েছি - নিউট্রাল রিডল - আরও কঠিন। সত্তরটা লেভেল আছে, এক লেভেল থেকে অন্য লেভেলে যেতে হলে ব্রাউজারে এইচ টি এম এল পাতার সোর্সটা দেখে ক্লু খুঁজতে হবে। খেলতে হলে লাগবে ব্রাউজার, ইন্টারনেট কানেকশান, গিম্প বা ফোটোশপ জাতীয় ফোটো-এডিটিং সফটওয়্যার, কখনো এক্সিফ-রিডার (exif-reader), এবং একটু ধৈর্য। লেগে পড়ুন। অল দ্য বেস্ট।

আমি আটকে একচল্লিশে।

Monday, October 02, 2006

আমার পুজো, ঋকের পুজো

গুরুচণ্ডা৯ থেকে একটা লেখা -

"শেষ কবে কলকাতার পুজো দেখেছি? বছর কুড়ি আগে বোধহয়৷ পুজো দেখার গপ্পো সকলে জানে, আর সকলের মতনই ছোটবেলায় কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, মণ্ডপে যাওয়া - পারোলিনের পুজোর সঙ্গে আমার ছোটবেলার পুজোর কোন তফাৎ প্রায় নেই-ই৷ আরো পরে পুজো আর টানতো না - ভিড়, শব্দ, আলো থেকে দূরে নিজের দশ ফুট বাই দশ ফুটের রাজ্যে একটা বই, বা বেহালা, বা টেপরেকর্ডার - এই নিয়ে সময় কাটতো৷ লাল চশমা পরা আমি পুজো থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করতুম৷ রাস্তায় যেতে-আসতে যেটুকু চোখে পড়ে সেটুকু ছাড়া বাকিটা পুজো না-দেখা বললেই চলে৷ তারপর শুরু যাযাবরের জীবন, এঘাট সেঘাটের জল খাওয়া, লাল চশমার ওপর বাস্তবের প্রলেপ পড়া - তখন পুজোর মানে পুজা-অর্চনা থেকে বদলে হয় নিছক আড্ডা - শুণ্য আর এক, এই দুটো সংখ্যার বাইরে একটা গেট-টুগেদার...

নিউক্যাসলে পুজো হয় - ফেনহ্যামে "হিন্দু মন্দিরে" - একদম দিনক্ষণ-তিথিনক্ষত্র মেনে, আয়োজক "নীবপা" - নর্থ ইস্ট অব ইংল্যাণ্ড বেঙ্গলি পুজা অ্যাসোসিয়েশন৷ বাক্স থেকে বের করে নতুন করে সাজানো মুর্তি নয়, প্রতি বছর কুমোরটুলি থেকে অর্ডার দিয়ে আনানো ছোট্ট মুর্তি৷ গোটা দিন শুণ্য আর এক ঘেঁটে সন্ধ্যেবেলা ফুলবাবুটি (মাইনাস ধুতি) সেজে সপরিবারে আমরা পুজো দেখতে যাই৷ লাল চশমা এখনও আছে, তাই পুজো থেকে একটু দূরে আমরা - আমি, সনাতনদা, জলদিন্দু, অংশুডাক্তার, আরো কয়েকজন৷ ফুলবিবিরাও থাকেন৷ আর কুচোকাঁচাগুলো এখানে সেখানে দৌড়ে বেড়ায়৷ আশেপাশে ইউনিভার্সিটিতে সদ্য ভর্তি হওয়া কিছু বাঙালী অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে, কারো বিলিতি বন্ধু ধুতি পরে, কারো বিলিতি বান্ধবী শাড়ি পরে৷ এরা বাস্তববাদি - প্রতি শনি-রবিবার নিয়ম করে মন্দিরে আসে, শুধু দুই দিনের ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে - রান্নার মেহনতটা বেঁচে যায় আরকি৷ দোতলায় নবরাত্রির গরবা হয়, সেখানে প্রচুর ভিড় - ইউনিভারসিটি ছাত্র-ছাত্রীদের৷ সেই ভিড়ে চোখে-চোখে কিছু কথার খেলাও চলে - ইশারা খেটে গেলে টুক করে সটকে আশেপাশের কোন পাবে চলে যাওয়া৷ আলাদা ভিড় পাকাপাকি থেকে যাওয়া লোকেদের - অধিকাংশই ডাক্তার - তাঁদের কাছে আমাদের ওজন নেই, অন্য ডাক্তারদের ওজন থাকলেও সেটা বাড়ে কমে কত বছর ধরে এখানকার বাসিন্দা তার ওপর - সাময়িক হলে আমাদের মতনই ওজনহীন৷

দোতলা থেকে কেউ একটা ঢোল নিয়ে আসেন - আমরা তারস্বরে গান ধরি৷ ওদিকে "শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরী" চলে, এদিকে জন হেনরী, পল রোবসন থেকে আমায় ডুবাইলি রে৷ একজন দুজন ধার্মিক ওই পাকাপাকি থেকে যাওয়াদের ভীড় থেকে এদিকে একটু কটমট করে তাকালেও অঞ্জলির দিক থেকে ভিড় ক্রমশ পাতলা হয়ে এদিকে সরে আসে৷ "মনের কথা হয়না বলা, বলতে লাগে ভয়, গলায় দড়ি দিয়ে গিন্নী ডুবে মরতে কয়" শুনে বিবিরা খিলখিল করে হেসে ওঠে...সন্ধ্যে থেকে রাত হয়, অনভ্যাসে গলা ভাঙতে থাকে, ঢোল পিটিয়ে হাতে টান ধরতে থাকে, তবু চলে মেহফিল...আর অপেক্ষা...কয়েকজন নজর রাখেন খাবার ঘরের দিকে - টেবিলে বড় গামলাগুলো চড়লেই সেখানে লাইন লেগে যায়৷

এর পর একটা কোথাও বিজয়ার গেট টুগেদারের কথা প্ল্যান করে যে যার বাড়ির দিকে রওনা দিই৷ রাতে ঘুমনোর সময় ঋককে দুর্গার গল্প বলি - গণেশ আর সিংহ তার সবচেয়ে প্রিয়৷ পরের দিন কতগুলো এক আর শুণ্য ঘাঁটতে হবে সে কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমনোর চেষ্টা করি৷

সুর্মা আমিন৷

কোথায় কাশফুলের রোমান্টিকতা? কোথায় ঢাকের বাজনা? দশমীর দধিকর্মা? লাইন দিয়ে মহম্মদ আলি পার্কের প্যাণ্ডেল দেখতে যাওয়া, বা কলেজ স্কোয়্যারের আলো? বিজয়গড় ভারতমাতার মাঠের অনুষ্ঠান? গড়িয়ায় নবদুর্গা দেখতে গিয়ে দশের মধ্যে দশটা বেলুন ফাটানো? মধ্যতিরিশেই নস্টালজিক আমি বিশ বছর আগের অরবিন্দ পার্কে ফিরে যাই - ঢাকে কাঠি পড়েছে, হাফ প্যান্ট পরে মিতুল দৌড়চ্ছে পুজো প্যাণ্ডেলের দিকে, কোমরে গোঁজা একটা ক্যাপ ফাটানোর রুপোলি পিস্তল, পকেটে রোল ক্যাপের দুটো প্যাকেট...কোথায় যাচ্ছিস, দাঁড়া, দাঁড়া...মিতুল ঘুরে দাঁড়িয়ে এক গাল হাসে, ওর মুখটা আস্তে আস্তে পাল্টায়...দেখি ঋক দাঁড়িয়ে আছে, স্যান্ডিফোর্ডে৷ এখানে সেই পিস্তলগুলো পাওয়া যায় না - ঢাকে কাঠি পড়ে না - সেই পুজোটাকে ঋক চেনেই না..."

গুরুচণ্ডা৯তে পুজো স্পেশ্যালের বাকি লেখাগুলো পাবেন এখানে