Tuesday, May 06, 2008

ইট ফুটি, স্লিপ ফুটি, ড্রিংক ওনলি নিউক্যাসল ব্রাউন

ঘিঞ্জি স্যাঁতস্যাঁতে ঠাণ্ডা এই শহরটার সাথে প্রায় ছয় বছরের অ্যাটাচমেন্ট শেষ হবার মুখে৷ বাক্স গোছনো, ডেস্ক খালি করা, তড়িঘড়ি প্রোজেক্টের কাজ এগোনোর মতন বোরিং জীবনে এই শেষ কয়েক সপ্তাহের একমাত্র আকর্ষন - বলা ভালো টেনশন - সীজন শেষে এই সাদা-কালো শহরটার সাদা-কালো ফুটবল দলটা ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে কোন তলায় থাকবে৷ ফুটবল তো সব শহরেই খেলে - লণ্ডনে নয় নয় করে চার থেকে পাঁচটা দল প্রিমিয়ার লীগে খেলে৷ কিন্তু এই শহরটার স্কাইলাইনের সবচেয়ে প্রমিনেন্ট চিহ্ন - সেন্ট জেমস পার্কে - একটা বল নিয়ে এগারোজন সাদা-কালো মানুষের নব্বই মিনিটের দৌড় টাইনসাইডের লোকজনের কাছে শুধু একটা ফুটবল ম্যাচ নয়৷ লণ্ডন অঞ্চলে ফুটবল রিক্রিয়েশন হতে পারে - নর্থ-সাউথ ডিভাইড পেরিয়ে টাইনসাইড বা উইয়ারসাইড বা টীজসাইডে ফুটবল ঐ লণ্ডনের সাথে টক্কর দেওয়ার মাধ্যম৷ টাইনসাইডের ফুটবল ফিলোজফিটা এর মধ্যে আবার একটু অন্যরকম - দাঁতে দাঁত চেপে ম্যাচ বাঁচানোর চেয়ে বিপক্ষকে কাঁপিয়ে দিয়ে হারা বেশি প্রিয়৷ ফুটবল মানে এন্টারটেইনমেন্ট - লণ্ডনে লোকের মনোরঞ্জন ওয়েস্ট এন্ডে থিয়েটার বা অপেরা - হপ্তাভর কাজের পর টাইনসাইডে এককালের খনিশ্রমিকদের মনোরঞ্জনের জায়গা ফুটবল মাঠ, আর লাগাতার বিয়ার৷

কয়েকমাস আগের কথা - এফএ কাপের তৃতীয় রাউন্ডে দ্বিতীয় ডিভিশনের স্টোক সিটির সাথে কোনওরকমে ম্যাচ ড্র করার পর "উল্লসিত" ম্যানেজারের মুখের ওপর ক্লাব সমর্থকদের তুমুল অসন্তোষ - তার আগের বেশ কিছু খেলায় সেই কোনওরকমে ম্যাচ বাঁচানোর খেলা দেখে বিরক্ত গোটা টাইনসাইড৷ স্টোক সিটির সাথে প্রথম লেগের খেলার দিন দুই পর সেই ম্যানেজার ছাঁটাই - তারপর বেশ কিছুদিন ধরে খবরের কাগজে নানান উড়ো গুজব, অনেক বড় বড় লোকের নাম জড়িয়ে - কখনো "স্পেশ্যাল ওয়ান" মোরিনহো, কখনো বা অন্য কেউ৷ সাউথহ্যাম্পটন গেলুম - সেখানে ট্যাক্সিচালক আমাকে খবর দিলো এর পরের ম্যানেজার নাকি "অ্যারি" রেডন্যাপ৷ দিন কয়েক এই সোপ অপেরা চলার পর সেদিন ছিলো ঐ স্টোক সিটির সাথে দ্বিতীয় লেগের খেলা - সেন্ট জেমস পার্কে৷ ম্যানেজারহীন নিউক্যাসল নিয়ে কেউ আর কিছু আশা করে না - কট্টর সমর্থকেরাও না৷ সব বদলে গেলো ক্লাবের তরফে আসা একটা টেক্সট মেসেজে - সন্ধ্যেবেলায় ক্লাবের সাইটে রেজিস্টারড সব সমর্থকের মোবাইলে একটা দুই লাইনের মেসেজ এলো - "দ্য কিং ইজ ব্যাক, মোর টু ফলো"৷ গোটা টাইনসাইড একটি মানুষকে রাজা বলে চেনে - এককালের খেলোয়াড়, পরে একসময়ের ম্যানেজার - কেভিন কীগানকে৷ ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দেখলুম শহরটার অন্য চেহারা - রাম অযোধ্যায় ফেরার সময় অযোধ্যাবাসীরা মনে হয় এমনই আনন্দ করেছিলো...সেন্ট জেমস পার্কের সামনে হাজার দশেক লোকের ভিড় জমতে আধ ঘন্টাও লাগেনি - মাঠের মধ্যে হঠাৎ চেগে ওঠা নিউক্যাসল যখন প্রথম গোলটা দিচ্ছে, তখনও সমর্থকের দল ডিরেক্টর বক্সের দিকে তাকিয়ে - রাজা কখন আসবেন৷ পরের দিন নিউক্যাসল ক্রনিকল লিখলো - "দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং - কেভ কামস ব্যাক টু সেটল আনফিনিশড বিজনেস"৷ আট-দশ বছর বয়সী ছেলেমেয়ের দল - কীগানের আগের আমলে এরা কেউ জন্মায়নি - শুধু গল্প শুনেছে বাপমায়ের কাছে - রিজার্ভ দলের খেলায় "কিং কেভ"-কে গ্যালারীতে দেখে তাদের উচ্ছ্বাস দেখলে চমক লাগে৷ হুজুগ? পাগলামি? কিন্তু কেনই বা?

ছয় বছর এই সাদা কালো শহরটাতে থাকতে থাকতে বুঝেছি এই আবেগ আসে অনেক ভিতর থেকে৷ বাইরে থেকে দেখলে হুজুগ বা পাগলামি মনে হলেও এর পিছনে আছে একটা স্বপ্ন, আরেকবার উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন - পুরনো জৌলুষ আর সন্মান ফিরে পাবার ইচ্ছে৷ আজকের নয় এই শহরটা - রোমান আমলে তৈরী, রোমান সম্রাট হেড্রিয়ানের তৈরী এপার থেকে কার্লাইল অবধি "হেড্রিয়ানস ওয়ালের" ধ্বংসাবশেষ এখনও টিঁকে আছে শহরের এক প্রান্তে৷ রোমানরা চলে যাবার পর এই শহরের নাম হয় "মঙ্কচেস্টার" - শক্তিশালী অ্যাংলো স্যাক্সন রাজার রাজত্বের অংশ৷ বার কয়েকের যুদ্ধ, বন্যায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া মঙ্কচেস্টারের ওপর রবার্ট কার্থোজের আমলে গড়ে ওঠে "নোভাম ক্যাস্টেলাম" - নিউক্যাসল৷ তারপর শিল্পবিপ্লবের সময় শুরু হয় এর স্বর্ণযুগ - আশেপাশে অ্যাশিংটন, ডারহাম, নর্দাম্বারল্যাণ্ডে অপর্যাপ্ত কয়লার দৌলতে৷ লোকে বলতে শুরু করে "ক্যারিয়িং কোলস টু নিউক্যাসল" - ১৫৩৮ সাল নাগাদ৷ তৈরী হয় জাহাজের কারখানা, বড় ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প - নিউক্যাসল পাল্লা দিতে শুরু করে ম্যাঞ্চেস্টার আর লিভারপুলের সাথে - সে অনেককাল আগের কথা৷ তারপর টাইন নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে - টাইনের কালো জলে নিউক্যাসলের সেদিনের স্বচ্ছলতা ধুয়ে গেছে৷ বছর কয়েক আগে শেষ কয়লাখনিটাও তার দরজা বন্ধ করলো, রুগ্ন জাহাজ শিল্পের শেষ সম্বল "সোয়ান হান্টার" বন্ধ হল বছর দুয়েক আগে৷ দিনে দিনে বাড়তে থাকা নর্থ-সাউথ ডিভাইডের কবলে পড়ে নিউক্যাসল যেন এক হাঁপানীর রুগী - যার সেই আগের দিনগুলো ফিরে পাবার ইচ্ছের কোন খামতি নেই - কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর সম্বল বলে কিছু নেই৷ মিলেনিয়াম ব্রীজ বা সায়েন্স সিটি তো অতি হালফিলের ঘটনা - কিন্তু গত কয়েক দশকের ইতিহাস শুধু বঞ্চনার, বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়লাখনির, রুগ্ন জাহাজশিল্পের৷ এক সময় পঁয়তাল্লিশ হাজার শ্রমিকের পায়ে পায়ে ধুলো উড়তো সোয়ান হান্টারে, প্রায় ষোলশো জাহাজ তৈরীর ইতিহাস - আজ তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভুতের মতন দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেনগুলো সেই নর্থ-সাউথ ডিভাইডের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হয়ে চোখের সামনে ভাসে৷ আর এই ভুত-বাংলোর মধ্যে গত কয়েক দশক ধরে "জর্ডি-প্রাইড' ঘুরে চলেছে সেন্ট জেমস পার্কে ছুটে বেড়ানো সাদা-কালো জার্সি পরা এগারোটা ছেলেকে ঘিরে৷ "The Geordie nation, that's what we're fighting for. London's the enemy! You exploit us, you use us" - নর্থ-সাউথ ডিভাইডের প্রত্যক্ষ ফসল - মেট্রো-সেন্টারখ্যাত প্রোমোটার স্যার জন হল-এর ব্যবসাবুদ্ধির শুরু৷ সেই শুরুও চমক দিয়ে - খেলোয়াড় হিসেবে একসময় সমর্থকদের প্রিয়পাত্র কেভিন কীগানকে ম্যানেজার হিসেবে এনে৷ দ্বিতীয় ডিভিশনে র তলার দিকে ধুঁকতে থাকা নিউক্যাসল ইউনাইটেডকে কীগান তুলে আনেন প্রথম ডিভিশনে, আর তারপরের কয়েক বছর জর্ডি স্মৃতিতে সোনায় বাঁধানো৷ আপাদমস্তক জর্ডি এবং নিউক্যাসল ইউনাইটেড ফ্যানজিন ট্রু-ফেইথের এডিটর মাইকেল মার্টিনের তাঁর ছেলেবেলায় কীগানের "এন্টারটেইনরাস"-দের খেলা দেখে ফুটে ওঠা জর্ডি-রক্তের কথা মনে পড়ে - সেই সময়ের আরো অসংখ্য জর্ডি সমর্থকদের মতন - "John Hall tapped into something latent, the pride and the apartness of the north-east. Newcastle was depressed; industries like mining and shipbuilding had been destroyed. We bought into the idea of the club as the flagship of revival." (গার্ডিয়ান, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৬) জর্ডি নেশনের সেন্টিমেন্ট ছড়িয়ে দিয়ে হল পরিবার ভালো রোজগার করে নিলেন - সীজন টিকিট, দোকানে হটককের মতন বিক্রি হওয়া রেপ্লিকা শার্ট - সারভাইভালের স্বপ্নে বুঁদ গোটা টাইনসাইড সাদা-কালো ইউনিফর্মে ছেয়ে গেলো - চার বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে আশি বছরের বৃদ্ধা অবধি - শেষ জেতা ট্রফি সেই কবে ১৯৫৯-এ অধুনা বিস্মৃত ফেয়ারস কাপ হলেও৷ কীগান সেই স্বপ্নটাকে কিছুদিনের জন্যে হলেও অনেকটাই বাস্তবরূপ দিতে পেরেছিলেন - ১৯৯৫/৯৬/৯৭-এর প্রিমিয়ার লীগে সাদা-কালো জার্সির দৌড় পাঁড় ককনি ওয়েস্ট হ্যাম সমর্থকেরাও ভোলেনি - আর জর্ডিরাও তাই কীগানকে রাজা বানিয়ে রেখেছে৷ হল পরিবার নিউক্যাসল ইউনাইটেডকে "ক্যাশ কাউ" হিসেবে দেখলেও জর্ডিদের কাছে ক্লাবটা "ফ্ল্যাগশিপ অব সারভাইভাল' হিসেবেই রয়ে গেছে৷ হল পরিবারের হাত থেকে ক্রমে পিএলসি, তারপর চাকা ঘুরে আরেক মালিক - দিন পাল্টেছে, কিন্তু সেই জর্ডি প্রাইড, বা প্যাশন কমেনি৷ বাপ-মায়ের হাত থেকে ব্যাটন চলে এসেছে তাদের ছেলেমেয়েদের হাতে, সেখান থেকে তাদের ছেলেমেয়েদের হাতে, যাবে তাদের ছেলেমেয়েদের কাছে - জেনারেশন থেকে জেনারেশন৷

ফুটবল আর সামাজিক পরিচয় নিয়ে অনেক লেখালেখি আছে - গ্লাসগোর দুই দল, সেল্টিক আর রেঞ্জারসের মধ্যে রেষারেষি শুধু দুটো ফুটবল দলের মধ্যে রেষারেষি নয় - ওর পরিধি অনেক বিস্তৃত - উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের শিন ফেন এবং ইউনিয়নিস্টদের লড়াই অবধি - সেল্টিকের সবুজ-সাদা জার্সি আর আইব্রক্স ছেয়ে যাওয়া আয়ারল্যাণ্ডের সবুজ পতাকা প্রমাণ দেয় এই সামাজিক পরিচিতির৷ ফুটবল আর সমাজের গবেষণায় বলা হয় যে ফুটবল মাঠে একটা জিত আর তার সাথে যুক্ত মিডিয়া কভারেজ, সোশ্যাল ইভেন্ট, নিজের দলের জার্সি পরা - বা দলের এমব্লেম আর চিহ্ন জমিয়ে রাখা - এসব শুধু খেলা নয় - এর সাথে রয়েছে কয়েকশো বছরের ইতিহাস - সামাজিক ভেদাভেদ, দৈনন্দিন বাস্তব৷ ঠিক তাই হয় সেল্টিক আর রেঞ্জারসের মধ্যে, বা এখানে এই টাইনসাইডে৷ এই মনোভাব থেকেই ১৯১১ সালে মোহনবাগনের শিল্ড জয় যেমন স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সিননিমাস হয়েছিলো, একইভাবে নিউক্যাসল ইউনাইটেড জর্ডি-রিভাইভালের ফ্ল্যাগশিপ হয়েছে৷ প্রায় একই ঘটনা উইয়ারসাইডে সাণ্ডারল্যাণ্ডের ক্ষেত্রে, টীজসাইডে মিডলসবরোর ক্ষেত্রে৷ উত্তর-পূর্ব-ইংল্যাণ্ডের তিনটে শহর একইভাবে আঁকড়ে আছে তাদের ফুটবল ক্লাবগুলোকে৷ একই নর্থ-সাউথ ডিভাইডের ফসল এরা৷

১৬৫৩ সালে কেউ একটা গান লিখেছিলেন -

"England's a perfect World; has Indies too.
Correct your Maps; Newcastle is Peru
."

গানটা তখনকার নর্দাম্বারল্যাণ্ড অঞ্চলের উন্নতির কথা বোঝাত - অ্যাজটেক আর মায়ার পেরুর সাথে তুলনায়৷ সেই যখন কয়লাখনি, জাহাজশিল্পের দৌলতে নিউক্যাসল, সাণ্ডারল্যাণ্ড আগেকার "অসভ্য" আর "পশ্চাত্পর" দিন থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে এগোচ্ছে৷ "The growth of the coal industry since 1560 had had a profound impact; a rural world of corn-laden mules and cottage collieries had been transformed into England's first industrial landscape, dominated by coal-filled wagons, pit-heads, and the great wharfs of the Tyne and Wear. Newcastle and Sunderland had grown into major centres surrounded by prospering agricultural hinterlands aided by the recent enclosure of fields. Newcastle was England's third largest city, with a population of 12,000 in 1660, and had been described in 1633 by William Brereton - widely travelled in Britain and the Low Countries - as 'beyond all compare the fairest and richest town in England, inferior for wealth and building to no city save London and Bristol'. North-east England was anything but a backwater, and for some, Newcastle was a place of fine living, wining and dining: a true capital of culture." [Cattle to Claret: Scottish economic influence in North-East England, 1660-1750 - Mathew Greenhall]

আর এই ২০০৮-এ এই উত্তর-পূর্ব ইংল্যাণ্ড একটা এলিয়েন টেরিটরি - রুগ্ন শিল্পাঞ্চল, ধোঁয়াটে আকাশ - দক্ষিণ ইংল্যাণ্ডের স্বচ্ছল ককনিসম্প্রদায়ের কাছে পশ্চাত্পর, দূষিত ব্যাকওয়াটার৷ গার্ডিয়ানে স্টুয়ার্ট জেফরিজ লেখেন - "There is something different, not just about Newcastle and its football club, but about the north-east. Newcastle's like Liverpool - only more so - and nothing in the rest of England quite prepares you for it." দক্ষিণের নাক সিঁটকোনোতে অভ্যস্ত এখানকার লোকে নিজেদের অঞ্চল আর তার ইতিহাস নিয়ে অসম্ভব গর্বিত - এই অঞ্চলটা আলাদা, কারণ এখানকার লোকে মনে করে এটা আলাদা - "pride in immutability and apartness are Geordie sentiments" - জর্ডিরা এভাবেই ভাবতে ভালোবাসে৷ আর এই ভাবনা থেকে তৈরী হয় একটা সলিডারিটির প্ল্যাটফর্ম, অসম্ভব গভীর ফেলো-ফিলিং - যেটা শুধু ফুটবল ক্লাব নয়, এই অঞ্চলের যে কোনো কিছু ঘিরেই গড়ে ওঠে, উদাহরণ "নর্দার্ন রক"৷ নর্দার্ন রক যখন মুখ থুবড়ে পড়লো, আঞ্চলিক খবরের কাগজ নিউক্যাসল ক্রনিকলে একটা অ্যাপীল বেরিয়েছিলো - ব্যাঙ্কটাকে বাঁচানোর জন্যে - "In the past 10 years 1,520 organisations have received £175m from the Northern Rock Foundation. NOW IT'S YOUR TURN TO HELP" - কোনো আর্থিক সংস্থা সম্পর্কে এই মনোভাব আর কোথাও দেখা সম্ভব নয়, কেউ চিন্তাও করবে না৷ আর এই অ্যাপীলে লোকে সাড়াও দিয়েছিলো - লণ্ডনে যখন লোকে নর্দার্ন রকের কাউন্টারে লাইন দিয়েছে টাকা তুলে নেবার জন্য, এই অদ্ভুত জায়গাটাতে লোকে যেচে এসে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছে৷ পাগলের অপর নাম জর্ডি৷

পাগলের আরেক নাম বাঙালীও - আবেগপ্রবণ হুজুগে বাঙালী - তাই মায়া পড়ে যায় - এখানে থাকতে থাকতে - এদের দেখতে দেখতে কখন যেন আমিও প্রায়-জর্ডি এক বাঙালী হয়ে উঠি - নিজের ব্লগে মোহনবাগানের পাশে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের লিংক রাখি, রেডিওতে খেলা শুনতে শুনতে আমিও চেঁচাই, নিউক্যাসল ইউনাইটেড হারলে মেহনত করে রাঁধা মাংসটা রাতে বিস্বাদ লাগে৷ অ্যালান শিয়ারারের টেস্টিমনিয়াল ম্যাচের দিন গোটা শহরটা যখন সাদা-কালো পোশাকে সাজে, আমিও নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সাদা-কালো জামা পরি৷ মাঝেসাঝে শিয়ারারের নাম-লেখা জার্সি-পরা আমার ছয় বছরের "জুনিয়র ম্যাগপাই"-এর হাত ধরে মাঠে খেলা দেখতে যাই৷ আর কয়েক সপ্তাহ বাকি - তারপর এই ছয় বছরের একটা বড় অংশকে সঙ্গে নিয়ে যাবো ঐ দুটো সাদা-কালো জামাটার মধ্যে - আর দুটো জর্ডি ডিকশনারির মধ্যে - যেগুলো পড়ে আমিও বলতে শিখেছি "How'ay man, ya'aalreet?"

(অনেক আগের একটি লেখা অবলম্বনে; মূল লেখা এখানে)