Thursday, April 23, 2009

ছাঁটা ফুলের আসন - দময়ন্তী

দমুকে বললাম দেখ নিজের জীবন থেকে একটা কিছু লিখতে হবে, যা কোনোদিন কাউকে বলা হয় নি ৷ দমু বলল লিখে ফেলো, সমস্যা কি? আমি বললাম না মানে --- না বলা কথা ৷ দমু বলল তাতেই বা সমস্যা কি? খুকীর গল্প লিখে দাও না ৷ ও গল্প তো কেউ জানে না ৷ আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোন খুকী? দমু বললঃ খুকীটা আমি-খুকী হতে পারে, তুমি-খুকী হতে পারে , অথবা সেই-খুকীও হতে পারে ৷ আসলে আমাদের এখানে তো আমি-খুকী, তুমি-খুকী বা সেই-খুকীর গল্পগুলো উল্টেপাল্টে এরটা তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেও খুব একটা ভুল হয় না ৷ কোথায়ও না কোথায়ও গিয়ে সব খুকীদের গল্পগুলৈ একইরকম হয়ে যায়৷ঠিকই তো ৷৷৷৷

মনে পড়ল, খুকী যখন ছোট্ট ছিল, তখন একটু ট্যালা ছিল ৷ মানে একটু হাবলিমত আর কি ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ খুকীর দিদা ভারী সুন্দর আসন সেলাই করতেন ৷ কিছু ছিল এমনি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য, চটের ওপরে ক্রচেট সুতোয় ফুল লতাপাতা আঁকা ৷ আর কিছু ছিল তোলা-আসন ৷ এগুলো ছিল ছাঁটা ফুলের আসন ৷ ঐ চটের ওপরেই বোনা হত উল দিয়ে ৷ তারপর আবার সেই নকশার ওপর কাঁচি দিয়ে কেটে কেটে দেওয়া হত ৷ ফলে আসনের ওপরটা পুরো একটা গালিচার মত চেহারা নিত ৷ তাতে কিন্তু সেলাই আলগা হয়ে খুলে যেত না ৷ ঐ ক্রসস্টীচে বুনে তারপর ওপরটা ছেঁটে দিয়ে ফাইনাল নকশা ফোটানো হত ৷ সবটা শেষ হলে পেছনটা লাল টুকটুকে শালু দিয়ে মুড়ে দেওয়া হত ৷ খুকীর ভারী পছন্দ ছিল এই আসনগুলো ৷ ওকে কেউ ওতে বসতে দিত না বলেই ওর আরো বেশী বেশী পছন্দ ছিল ৷ ভাইফোঁটার দিনে মামারা সব, দাদাভাই আর খোকা বসত লাইন দিয়ে , প্রত্যেকে একেকটা আসনে ৷ মা, মাসিমনি, ছোটদি আর খুকী মাটিতে হাঁটুমুড়ে বসে ফোঁটা দিত ৷

আজ হল গিয়ে জ্যৈষ্ঠমাসের ষষ্ঠীপুজো ৷ কাগজে লেখে জামাইষষ্ঠী ৷ খুকীদের বাড়ী বলে অরণ্যষষ্ঠী ৷ আজকে মা, মামীরা, মাসিরা, দিদিরা, খুকীরাও আসনে বসে ষষ্ঠী নেবে ৷ মা, মাসিমনি, বড়মামা, বড়মামী, মেজমামা, মেজমামীকে ষষ্ঠী দেবে দিদা ৷ ছোটদি, দাদাভাই, খোকা, খুকীকে ষষ্ঠী দেবে মা, মাসিমনি, মামীরা ৷ খুকী মনে মনে ভারী খুশী হয় ৷ আজ তো আসনে বসার দিন ৷ আজকে ও-ও ঐ গালিচার মত নরম সুন্দর ঝলমলে রঙের আসনগুলোতে বসবে ৷ বেগুণী, গোলাপী, নীল দিয়ে নকশা করা যেটা, ঐটা নেবে খুকী বসতে ৷ খুকী ওটার দিকে এগোতেই দিদার ধমক - "আরে ধরিস না , ধরিস না -- ঐটা ছুঁইস না, ঐটায় বাচ্চু বইব' ৷ খুকী একটু মন খারাপ করে ৷ "ছোটমামা বসবে ওটায়, কেন বাবা আমি একদিন বসলে কি এমন অসুবিধে হত ছোটমামার! এইটাই তো সবচেয়ে সুন্দর' ৷ কিন্তু সুন্দর কিম্বা অসুন্দর কোন ছাঁটা ফুলের আসনেই ওকে বসতে দেওয়া হয় না ৷ ওদের জন্য আছে তো ক্রসস্টীচে নকশাকরা চটের আসন ৷ মা, মামীরা, মাসিমনি মাটিতেই বসে, খুকী আর দিদিরা কেউ কেউ ঐ চটের আসনে ৷খুকী ভাবে গালচের মত আসন মাত্র অল্প কয়েকটা তো, তাই ওদের বসতে দেওয়া হয় না ৷ দিদা তো আরো বানাচ্ছে ৷ সেগুলো শেষ হলেই এক এক করে ওরা বসতে পাবে ৷ দিদা বানিয়ে চলে আর বিড়বিড় করে "অহন আর ভাল দেহি না চক্ষে -- কতটি বাকী আসে অহনও ---- বাচ্চুর বিয়া আইতাসে -- অর লাইগ্যা একটা বানানি লাগব --- মুন্নিরও বিয়ার বয়স হইসে --- অর জামাইয়ের লাইগ্যাও একখান লাগব -- রাজার লাইগ্যা একটা বানানি লাগে ---- খোকাও বড় হইতাসে ------ ' দিদার বকবকানি চলতে থাকে ৷ খুকী শুনতে থাকে ---- শুনতেই থাকে ৷ না : ওর নাম উচ্চারিত হয় না --- এক আধবার অবশ্য ওর "বর' নামক এক অনির্দিষ্ট কারো কথা শোনা যায় ---- আবার "সে অনেক দেরী' বলে চাপা পড়ে যায় ৷

খুকী দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে --- শুনতে থাকে --- বুঝতে থাকে---- খুকী নেই ---- কোত্থাও নেই ----- ঐ সুন্দর রঙচঙে গালিচার মত দেখতে আসনগুলোর জীবনচক্রে খুকী নেই ৷ খুকীর ভেতরটা হঠাত খালি খালি লাগতে থাকে ৷ ঠিক মন খারাপ নয় কিন্তু ৷ দুঃখ, রাগ ষষ্ঠীর দিন যেমন হয়েছিল, সেসব কিচ্ছু নয় ৷ শুদ্ধু ফাঁকা লাগে ৷

খুকী আর খোকা খেতে বসেছে ৷ দিদার সঙ্গে বড়মামী আসে একটা ছোট্ট খুরিতে দই আর চামচ নিয়ে ৷ দাঁড়িয়ে থাকে ৷ মা খোকাকে খাইয়ে দিচ্ছে ৷ খোকার ভারী বায়না, মাছ খেতে চায় না কিছুতে ৷ মা ভুলিয়েভালিয়ে খাওয়াচ্ছে ৷ খুকী এমনিতেই চটপট খায় ৷ শেষ করে থালাটা হাত দিয়ে চেটে পরিস্কার করে বড়মামীর দিকে তাকায় ৷ কিন্তু বড়মামী তো ওর দিকে তাকাচ্ছেই না ৷ খুকী তাই বলে "হ্যাঁ এইবারে দাও' ৷ বড়মামীমা হঠাতই কিরকম অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ৷ মা বলে "আরে ওটা তোর জন্য নয়' ৷ খুকী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে ওঠে "আমি তো দই খুব ভালোবাসি' ৷ বড়মামীমা অপ্রস্তুতভাবেই "আচ্ছা আচ্ছা' বলে ওর পাতে 1 চামচ দই তুলে দেয় ৷ মা খোকার পাতের পাশে জায়গা করে বলে "তুই আর কতক্ষণ দাঁড়াবি বৌদি! এইখানে দিয়া যা গা '৷ বড়মামী বাকী সমস্ত দইটা খোকার পাতে দিয়ে বাড়ী চলে যায় ৷ পাশাপাশিই বাড়ী ওদের ৷ দিদা কটমট করে খুকীর দিকে তাকিয়ে বলে "এত লোভ কেন তোর?"

খুকী অবাক হয়ে যায় --- ভীষণ অবাক হয়, "অপমানবোধ' নামক অনুভুতিটার সাথে তখনও চেনাজানা হয় নি, তাই বুঝতে পারেনা এরকম লাগছে কেন? কিরকম যেন একটা লাগে ৷৷৷৷৷৷ কানগাল সব গরম, হাত পা ছুঁড়তে ইচ্ছে করছে আবার হাতপা নাড়াতে ইচ্ছে করছে না ৷ এক্ষুণি এখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে, অথচ উঠে গিয়ে আঁচাতেও ইচ্ছে করছে না ৷ খুকীর ভিতরটা হঠাত্ই আবার খালি হয়ে যায় ৷ ফাঁকা হয়ে যায় ৷

খুকী বড় হতে থাকে আর খুকীর পিঠে একটা ডানা গজিয়ে যায় পাতলা ফিনফিনে জলরঙের ডানা, তাতে সোনালী রুপোলি ফুল ------ খুকী একদিন মস্তবড় হয়ে যায় ---- বড় হয়ে ডানা মেলে উড়ে যায় ৷ "সে' চলতে থাকে ------ চলতেই থাকে ---- পথ শেষ হয় না --- ঠ্যাঙাড়ে হীরুরায়ের বটতলা পেরিয়ে, সোনাডাঙার মাঠ ছাড়িয়ে যে রাস্তাটা চলে এসেছিল -- সে রাস্তার তো শেষ নেই -- শেষ থাকতে নেই তার --- আমি-খুকী, তুমি-খুকী , সেই-খুকীরা সেই পথ ধরেই চলতে থাকে, যতদিন না তাদের একজোড়া ফিনফিনে পাতলা ডানা গজায় ৷ খুকীরা জানে, নিজেনিজেই জেনে যায়, যে জায়গা ছেড়ে আসা যায়, সেখানে আর কখনও, কক্ষণো "ফেরা' যায় না ৷ সেখানে আবার যাওয়া যায়, কিন্তু "ফেরা' যায় না ৷

ছাদে ইজিচেয়ারে কফি আর বই নিয়ে আয়েস করে বসে সামনের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ভাবে ---- সেই-খুকী কোনোদিনই আর ছাঁটা ফুলের আসনে বসে নি, কি এক প্রবল অনীহায় এই আসনবোনার বিশেষ পদ্ধতিটা শেখার চেষ্টাও করে নি ৷ কোন দুঃখও নেই তার জন্য ৷ খোকার জন্য বানানো আসনটা আছে মায়ের কাছে, ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের জন্য পেতে দেয় মা ৷ একদিন সেটার ছবি তুলে অর্কুটে লাগালো, এক বন্ধু একেবারে মুগ্ধ ; জানতে চায় আসনবোনার পদ্ধতি ৷ সেই-খুকী চীত্কার করতে চায় "জানিনা , জানিনা , জানিনা, জানতে চাইও না' , বলা যায় না ৷ ভদ্রভাবে বলে "জানি না' ৷ বন্ধু খুব দুঃখ করে আগেকার এইসব শিল্পসৃষ্টি সব হারিয়ে যাচ্ছে বলে ৷ সেই-খুকী হাসে ৷ এখন ও জানে, টের পায়, ওকে আসনে বসতে দেয় নি যে, সে নিজেও কোনোদিন বসে নি নিজের সৃষ্ট ঐ রূপকথার টুকরোগুলোয় ৷ অল্প অল্প হাসি পায় ---- আসনের চেয়ে ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকতে আরাম অনেক বেশী ৷ করুণা হয়, মায়া হয় দিদার জন্য ৷ তাও কোথায় যেন একটা তেতো স্বাদও লেগে থাকে --- বলা হয়নি ---- "তুমি জানতেই পারনি, টেরও পাও নি, কত্তদিন আগে ঐ ছোট্ট লোভগুলো টুপ টুপ করে মরে গেছে, সাথে নিয়ে গেছে তোমার জন্য রাখা ভালবাসাটুকুও' ৷

* লেখাটি সচলায়তন ডট কম প্রকাশিত "কাঠগড়ায় গল্প' নামক ন- বুক-এ ছাপা হয়েছিল৷ আর পাওয়া যাবে গুরুচণ্ডা৯তে

Tuesday, April 21, 2009

শিশুবেচার হাটে

(লেখাটা অনেক দিনের পুরনো - ডিসেম্বর ২০০৭ - গুরুচণ্ডা৯ থেকে তুললাম)

একটা মেয়ের কথা দিয়ে শুরু করি৷ উনিশ বছরের মেয়েটা, তার একুশ বছর বয়সী সঙ্গী৷ মেয়েটা সন্তানসম্ভবা৷ কিন্তু দেশের আইন অনুযায়ী এই শিশুটি অবৈধ, কারণ মেয়েটির বয়স কুড়ির কম৷ শিশুটি যদি জন্মায়, কোনো খাতায় তার নাম উঠবে না৷ তার কোনো পরিচয় নেই, নিয়ম অনুযায়ী শিশুটির কোনো অস্তিত্ব নেই৷ ডাক্তারী কারণে মেয়েটি গর্ভপাত করাতে পারে না, তাই এক দূর গ্রামে গিয়ে শিশুটির জন্ম দেয়, আর তারপর অল্প কিছু পয়সার বিনিময়ে বেচে দেয় অন্য কারো কাছে৷

এমন খবর প্রায়সই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে চোখে পড়ে৷ কিন্তু না, যে দেশটার কথা বলছি সেটা ভারত নয়৷ বলছি চীনের কথা৷ বেজিং অলিম্পিকের জন্যে সুসজ্জিত চীন৷ অলিম্পিককে সফল করার জন্যে অসম্ভব যত্নশীল চীন - খবরে কিছু না কিছু প্রায় রোজই থাকে - এবং সাথে থাকে বিতর্কও - পরিবেশ এর মধ্যে একটা বড় ইস্যু - যেমন মাউন্ট এভারেস্টের কতদূর উচ্চতা অবধি যেন রাস্তা তৈরী হবে - এরকম একটা খবর ছিলো কিছুদিন আগেও৷ ছিলো আরো একটা খবর - পরিবেশের মতন এত সুদূরপ্রসারিত ইস্যু না হলেও, খবর হিসেবে অনেক বেশি ভয়ংকর হয়তো - চীনের হারিয়ে যাওয়া শিশুদের খবর৷

১৯৯৫ সালে চীনের অনাথাশ্রমের অবস্থা নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি তৈরী হয়েছিলো - দ্য ডায়িং রুমস৷ এতই বিতর্কিত, যে চীন এবং যুক্তরাজ্যের সম্পর্কটা পাকাপাকিভাবে তুবড়ে যাওয়ার মতন অবস্থায় পৌঁছয়৷ সেই ডকুমেন্টারির প্রোডাকশন ম্যানেজার Jezza Neumann ফিরে যান চীনে ডায়িংরুমের পরের খবর জানতে - তৈরী হয় "China's Stolen Children" - চীনের দম্পতিপিছু একটি সন্তান আইনের অন্যদিকটার খবর৷ হিসেব বলে - দিনে অন্তত: ১৯০টি শিশু হারিয়ে যায় বা চুরি হয় - তাদের বিছানা থেকে, রাস্তা থেকে; বছরে ৭০,০০০; যারা বিক্রি হয়ে যায়৷

এই নিয়ে কেউ কথা বলে না - সরকার তো নয়ই, কারণ এই নিয়ে কথা বলা আর সমস্যার অস্তিত্ব মেনে নেওয়ার মধ্যে খুব অল্পই ফারাক৷ নয়ম্যানের ডকুমেন্টারিতে এই সমস্যার গভীরে ঢোকার চেষ্টা আছে৷ লুকিয়ে৷ সাড়ে তিন মাস ধরে ট্যুরিস্টের বেশে হাতেগোনা কিছু চীনা সাংবাদিকের সাহায্যে পুলিশ এবং সিকিউরিটির চোখ এড়িয়ে নয়ম্যান খুঁজে বের করেন সেই সমস্ত বাপ-মায়েদের যাঁদের ছেলেমেয়েরা হয় হারিয়ে গেছে, বা যাঁরা বাধ্য হয়েছেন ছেলেমেয়েগুলোকে অন্যের হাতে তুলে দিতে, বা বিক্রি করে দিতে - "এক সন্তান'" আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে৷ কি বলে এই আইন? শিশুর জন্ম দিতে গেলে বাপমা-কে আগে "অনুমতিপত্র" পেতে হবে৷ গ্রামের দিকে প্রথম সন্তান মেয়ে হলে বাপমাকে আরো একটা সুযোগ দেওয়া হয় - আরেকটা বাচ্চার, শহরে আইন ভাঙলে জরিমানা৷ ছেলের চাহিদা বেশি - কারণ পরিবার বাড়ে তাদের দিয়ে, বংশ রক্ষা হয় তাদের দিয়ে৷ প্রথম মেয়েটিকে জন্মের আগেই মেরে না ফেললে ছেলের সম্ভাবনা তো থাকে না৷ তাই লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত বৈনী হলেও প্রায় চার কোটি মেয়ে অজাত থেকে গেছে - ১৯৭৯ সালে এই "এক সন্তান" আইন চালুর পর থেকে৷ আর নিশ্চিত ছেলে? যেখানে ভ্রূণহত্যার বিবেকদংশন নেই? সে মেলে কালোবাজারে৷ শিশু বেচাকেনার হাটে৷ সেই থেকে শুরু এই হারিয়ে যাওয়ার গল্প৷

বাজারে বাচ্চার দামের তারতম্য আছে৷ অন্য সব বাজারের মতনই৷ মেয়ের দাম কম - অবশ্যই৷ কখনো সখনো মেয়ে বিক্রি হয়ে যায় দুশো ডলারে৷ ছেলেদের দাম সেখানে অনেক বেশি - সাতশো-হাজার ডলার (উন্নত বা অনুন্নত, সমাজতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক নয় - এই একটা বিষ প্রায় সমস্ত সমাজের তলায় তলায় ফেরে - তাই রাজকন্যের বহুবছর পর রাজপুত্তুর জন্মালে গোটা জাপান উদ্বেল হয়ে ওঠে, মাসমাইনের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের উপস্থিতি মেনে নেয় বিভিন্ন উন্নত দেশ, বা এই উন্নত দেশেই মেয়ে বলে জন্মের আগে মেরে ফেলার জন্যে বাপমা পাড়ি দেন অন্য দেশে - ভারতেই বেশিরভাগ৷৷৷বিষের রকমফেরমাত্র)৷ বয়সের ওপরেও দাম নির্ভর করে৷ একদম শিশু - বছরখানেকের কম বয়সে - দেখভাল করতে হয় অনেক, সময় দিতে হয় অনেক বেশি - তাই তাদের দাম কম৷ আবার বছর তিন-চার বয়সে ওরা নিজেদের বাপমা-কে বা অন্য লোকজনেদের চিনতে শিখে যায়, বাড়িটাকেও হয়তো চিনতে পারে - তখন এই হাতবদলের মধ্যে কিছুটা আশঙ্কা থেকে যায়, তাই তাদেরও দাম কম৷ বেশি দামে বিকোয় এক থেকে দুই বছরের বাচ্চারা৷ নয়ম্যানের ডকুমেন্টারির কেন্দ্রে এমনই এক হারিয়ে যাওয়া শিশু - চেন জি - ঠাকুমার সবজির দোকানের সামনে খেলতে খেলতে যে হারিয়ে গেছিলো৷ তাকে শেষবার দেখা যায় এক প্রতিবেশীর সাথে - ঝ্যাং - যার বক্তব্য হল বাচ্চাটাকে লজেন্স কেনার পয়সা দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের কাছেই সে ছেড়ে দিয়েছিলো৷ সে অর্থে চেন জিয়ের পরিবারের কাছে কোনো প্রমাণ না থাকলেও চেন জিয়ের ঠাকুমার কাছে ঝ্যাং বলে যে সে বাচ্চাটাকে বেচে দিয়েছে৷ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ঝ্যাং তার সাধারণ জীবনে ফিরে যায় - চেন জিয়ের পরিবার পারে না৷ হয়তো চেন জি-ও না৷ চেন জিয়ের মা আর বাবা ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার জন্যে চেষ্টা করে চলেন - সংবাদমাধ্যম সরকারের কাছাকাছি বলে তাদের সাহায্য পাওয়া যায় না, একই দু:খের ভাগিদার অন্য বাবা-মায়েদের সাথে যোগাযোগ করতে হয় গোপনে, নিখোঁজ শিশুদের পোস্টার লাগানো বৈনী, তাই লুকিয়ে বেসরকারি গোয়েন্দা, আর পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম৷

শুরু করেছিলাম যে মেয়েটির কথা বলে, তার সাথে এক এজেন্টের মোলাকাত দেখান নয়ম্যান এই ডকুমেন্টারিতে, যেখানে সেই এজেন্ট মেয়েটিকে বোঝায় কিভাবে এই ছেলেমেয়ে বেচাকেনার বাজারটা চলে; সে বোঝায় যে ছেলেদের দাম বেশি, কারণ চাহিদা বেশি; সে আওড়ায় সেই চেনা কথাগুলো - যা আমরা বহু বছর ধরে বার বার শুনেছি - ছেলেরা পরিবার চালায়, বংশবৃদ্ধি করে; সে জানায় পয়সাওয়ালা ক্রেতাদের দরকষাকষির ক্ষমতাও বেশি; সে বলে "If you want your baby to go to a family in a rich area you won't get as much money as if you sell to a poorer family." তার মতে সে কোন অন্যায় করছে না, সন্তানের জন্যে কাতর দম্পতিদের সাহায্যই করছে বরং৷ আর এরা টিঁকেও যায়৷ ঝ্যাং-এর মতন৷

China's Stolen Children নিয়ে চীন আপাতত বেশ রক্ষণাত্মক - সামনে অলিম্পিক, অনেক অনেক বড় একটা ইভেন্ট যার দিকে চোখ থাকবে কয়েকশো কোটি মানুষের; তাই ডকুমেন্টারিটাকে "গভীরতাহীন" আখ্যা দিয়ে বলা হয় "The trend of gender imbalance among the newly-born is a question that calls for scientific study and careful redressing. Finger-pointing is simply not the way forward."

দুমাস আগে ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শিত হয় চ্যানেল ফোরে, আর এইচবিও এটিকে অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্যে মনোনীত করে৷ নয়ম্যান আশা করেন চীনের সরকার "এক সন্তান' নীতি নিয়ে হয়তো আরেকবার চিন্তা করবে - নয়ম্যানের বিশ্বাস যে কারণে চার কোটি কন্যাভ্রূণহত্যা, যে কারণে চার কোটি চীনা পুরুষ কোনওদিনও কোনো সঙ্গিনী খুঁজে পাবে না৷

রেফারেন্স -

Shining a light into the shadowy world of China's stolen children - আটই অক্টোবর, ২০০৭
Has anyone seen our child? - তেইশে সেপ্টেম্বর, ২০০৭
China's Stolen Children
The Dying Rooms
http://uk.youtube.com/watch?v=b9YdA3WSiPM

Thursday, April 16, 2009

লাভা, লোলেগাঁও, রিশপ

লাভা, লোলেগাঁও, রিশপ নিয়ে নতুন করে লেখার কিছুই নেই - গত কয়েকবছর ধরে অনেকেই ঘুরে এসেছেন - আমরাও গেলুম এবার - আমার প্রথম উত্তরবঙ্গ দেখা


Thursday, April 02, 2009

Geordie Boy to Lead The Geordie Nation

How I miss Newcastle today. Even from quite a few thousand miles I can feel the pulse of the Geordie Nation - I can see men, women and children in black and whites flocking around the gates of St. James' Park - just as they did a year ago when The King came back. Since then, they have been betrayed most cruelly...the season collapsed, and now the dream is back from despair - I miss the feel of that dream.

As the Newcastle hero takes charge, Michael Walker reports on why he might just achieve the impossible

Thursday, 2 April 2009

They say that you should judge a man by the company he keeps – and so, when Alan Shearer makes his return to Newcastle United this afternoon, it might be worth considering the men either side of the Geordie hero as he trots up the steps into St James' Park once more. Shearer is perceived as dull and wooden by many but those who know Shearer well know a different individual – and by having Iain Dowie and Paul Ferris alongside him, Shearer is making an immediate statement.

Shearer left school in Gosforth in 1986, aged 16, to become an apprentice footballer at Southampton. He had one CSE – in English – and no interest in academia. When he sits down with Dowie and Ferris to discuss the immediate future at a football club seemingly hell-bent on hysteria, Shearer will be talking to an engineering degree student in Dowie and in Ferris a qualified barrister who has a masters degree in the history of ideas. One thing even Shearer's critics acknowledge: he is no mug.

There cannot be many more academically qualified former footballers than Dowie and Ferris, and though in time – if this eight-game spell is a success – Shearer will bring in more obvious Newcastle figures such as Rob Lee, he has in the first instance shown an ability to recognise the differing talent of others and to delegate.

That is a start. What Shearer then brings to the Newcastle dressing room – any dressing room – is a personality that fills it (not the one who looks vaguely uncomfortable on Match of the Day) and inspires it.

As Sir Bobby Robson said when recommending Shearer for the post: "Alan will make a very good manager – he's got clout. Alan might not have any experience but he knows what the club is all about, he knows the supporters, he knows how they feel and he'd be dedicated to it."

"I got a call over the weekend off Derek Llambias [managing director] and Mike Ashley and I went round for a chat," said Shearer. "They asked if I would take charge for the remaining eight games and I asked for a little time to think and spoke to a few people. It's a club I love and I, like many thousands of people, desperately don't want the club to go down and I will do everything I can to try to prevent that. It's a tough situation and I feel deeply for this club. I believe I can help it along with the players. This is for an eight-game spell, I'm looking no further than that."

What Dowie brings is coaching experience. Dowie is known and trusted but his choice is proof of Shearer's sometimes unpredictable nature. In Ferris's case, there is vast experience of football and Newcastle United, for whom he first played as a 16-year-old in May 1982. As Gary Speed put it yesterday, what Shearer has already done is reveal his "common sense".

Speed, a former Newcastle team-mate, golfing partner and close friend, is not unbiased, but Speed describes the sudden Newcastle-Shearer development as "the best thing that could have happened at this time. Imagine what the atmosphere is going to be like against Chelsea on Saturday. That is down to one man. There is a lot of talk about experience and lack of it, but how do you get it? What I'd say is that management is about leadership and character and Alan has that. He is not the man you see on the telly, but then it's not just Alan Shearer who is restrained when on TV."

The Alan Shearer that former playing colleagues know is someone who was one of the lads off the pitch. Shearer has long been fully aware of his market rate, and has transformed the fabled sheet metal-worker's son into a multimillionaire, but while always at the back when it came to running exercises in training, Shearer was to the front when Newcastle players were having nights out on the Quayside and elsewhere.

However, unless you count decking Keith Gillespie outside a bar in Dublin on one Newcastle socialising trip as reckless, Shearer has managed to stay away from the more lurid headlines that afflicted footballers, several of whom were colleagues at Newcastle. Those who know him say the common sense kicks in. He is acutely aware that he is not just the "Al" his mates know, but the public figure who is Alan Shearer.

He understood this quickly. Given his ferocious match-defining abilities, Shearer could easily have got carried away in an era when celebrity culture was beginning to infect football, but he was aware from the earliest England and title-winning days at Blackburn Rovers of the weight of his opinion. Shearer's words can cause tremors like few others' in English football and that is one reason why he became set on hiding behind a device even he called "Shearer-speak".

Among friends that iron curtain comes down and as he wades into the water of management, with its press conference treadmill, Shearer will be expected to give away little pieces of himself. But it will be little by little.

And yet amid that caginess, there is a gambler – and a romantic – to add to the professional public figure and streetwise football man.

It is not just that Shearer has an interest in horseflesh that can lead him into the betting ring: when he made the two most important football decisions of his playing career, on each occasion Shearer shunned the favourite's option of joining Manchester United. In leaving Southampton in 1992, where he and Dowie overlapped for a year, Shearer famously spurned Alex Ferguson for Kenny Dalglish at Blackburn; in leaving Blackburn four years later, Shearer bought into Kevin Keegan's vision at Newcastle rather than, again, Ferguson's trophy parade at Old Trafford. This is not ruthless career progression, this is speculation.

And it went sour. Sitting alone with Shearer at St James' one day late in 1998, he reflected that, with Keegan's departure six months after his arrival, his first bad injury and then Dalglish's dismissal, he was not experiencing "the dream sold to me by Kevin Keegan". It was a difficult period at the club and the rumour of his imminent sale was unrelenting. His tone was downbeat. It felt that a wrong choice had been made at the end of Ewood Park and that the greatest striker of his generation, arguably the greatest English player of his generation, would go unfulfilled. Shearer's response to that notion was: "The club is unfulfilled, not just me. And I'm part of this club."

Although there were excellent Champions League days under Bobby Robson, a record number of goals for the club and an unforgettable testimonial night, that reply remains almost a Newcastle motto.

Shearer is now in a position to change that. But only if his impact is instant. There is a belief that due to the state Newcastle have got themselves into, Shearer is in a win-win situation even if the club is relegated. But a couple of losses soon change opinion. Shearer may be football-smart, possess common sense and natural clout, but this is still a gamble. It is another one featuring Newcastle United.

====================================================================

All the best Newcastle - I'll see you on Saturday from few thousand miles away.