tag:blogger.com,1999:blog-269488612024-03-26T16:03:18.105+00:00স্লোগান দিতে গিয়েস্লোগান দিতে গিয়ে আমি বুঝেছি এই সার,
সাবাস যদি দিতেই হবে সাবাস দেবো তার,
ভাঙছে যারা, ভাঙবে যারা খ্যাপা মোষের ঘাড় ৷Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.comBlogger116125tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-29841459824181762502023-11-12T14:36:00.000+00:002023-11-12T14:37:05.831+00:00বেঙ্গল ফাইলস: পশ্চিমবঙ্গের জন্মবৃত্তান্ত ও শ্যামাপ্রসাদ<div>এই বছর, আরেকরকম পত্রিকার পুজো সংখ্যায় অধমের কিছু হাঁউমাউখাঁউ ছেপে বেরিয়েছিল। সংখ্যাটা যেহেতু শুধুই প্রিন্ট ভার্সন, তাই মাসখানেক পর এখানে পোস্ট করলাম...</div><div><br></div><div>বেঙ্গল ফাইলস </div><div>পশ্চিমবঙ্গের জন্মবৃত্তান্ত ও শ্যামাপ্রসাদ</div><div><br></div><div>(১)</div><div><br></div><div>"শ্যামাপ্রসাদ পশ্চিমবঙ্গের জনক" বা "শ্যামাপ্রসাদের জন্যেই কলকাতা পশ্চিমবঙ্গে রয়ে গেছে" এই মিথদুটোর বয়স বেশ কয়েকবছর হল। ফি বছর হিন্দুত্ববাদীরা এই নিয়ে প্রচার করে, তার পালটা লেখাও তৈরী হয়, আবার তার পরের বছর একই ঘটনা ঘটে। তবে দুটো মিথকেই সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় কিছু তথ্য আর ম্যাপ দিয়ে। এই লেখার উদ্দেশ্য সেইটাই। যদিও তার আগে ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতটা একটু দেখে নেওয়া প্রয়োজন - তার জন্যে খানিক গৌরচন্দ্রিকা…</div><div><br></div><div>তিরিশের দশকের মাঝামাঝি থেকেই ম্যাকডোনাল্ড অ্যাওয়ার্ড (কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড নামেও ইতিহাসে পরিচিত) আর বেঙ্গল টেনেন্সী অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট - মূলত: এই দুটো ঘটনা, আর গ্রামের দিকে বাড়তে থাকা কৃষক আন্দোলন - এই সবকিছুর জেরে ভদ্রলোক হিন্দুরা কংগ্রেসের দিক থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করে। বিশেষ করে যে জমিদার আর হিন্দু ব্যবসায়ীদের চাঁদার ওপর কংগ্রেস ভালোমত নির্ভরশীল ছিল, তারা বিমুখ হওয়ায় কংগ্রেস বেশ চাপে পড়ে যায়। ১৯৩৬-৩৭-এর প্রাদেশিক ভোটে আশিটা সাধারণ আসনের মাত্র আটচল্লিশটা আর বিশেষ সংরক্ষিত হিন্দু আসনের মাত্র চারটে জেতে কংগ্রেস। নির্দল হিন্দু প্রার্থীরা জেতে সাঁইত্রিশটা আসনে, হিন্দু মহাসভা দুটো আসনে।</div><div><br></div><div>হিন্দু এবং হিন্দুধর্মকে রক্ষার দাবী নিয়ে ততদিনে হিন্দু ভদ্রলোক আইডেন্টিটি তৈরী হয়ে গেছে - মূলত: শিক্ষিত সমাজকে ঘিরে, যাদের বেশিরভাগের গ্রামের দিকে জমিজমা, বাড়ি আর শহরে চাকরি ছিল - অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ক্ষমতাশালী উচ্চবিত্ত, বা মধ্যবিত্তের ক্রীমি অংশ। চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে প্রান্তিক গোষ্ঠীর লোকজনকেও এই বৃহত্তর হিন্দু সমাজের অংশ হিসেবে টেনে আনার চেষ্টা শুরু হয়। জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসবগুলো হয়ে ওঠে রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র, ফলে গ্রাম বা ছোট মফস্বল শহরের সাধারণ হিন্দুদের মধ্যেও এই প্রবল হিন্দু আইডেন্টিটি ছড়াতে শুরু করে।</div><div><br></div><div>১৯৩৬-৩৭ এর ভোটের ফলাফলের পর কংগ্রেসও আর এর বাইরে থাকার কথা ভাবেনি। কমতে থাকা ফান্ড আর সরতে থাকা "ভদ্রলোক সাপোর্টের" ধাক্কায় কংগ্রেসও উঠেপড়ে লেগেছিল হিন্দু প্রোফাইল তৈরী করতে। প্রথম পদক্ষেপ ছিল সুভাষ-শরতের আমলে কংগ্রেস ছেড়ে চলে যাওয়া হিন্দু জমিদারদের খুব কাছের লোক নলিনীরঞ্জন সরকারকে আবার বড় দায়িত্ব দিয়ে ফিরিয়ে আনা। তারপর ক্রমশ: কৃষক আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে উলটে জমিদারদের পক্ষ নেওয়া, সুভাষ-শরতকে একঘরে করে দেওয়া এবং শেষপর্যন্ত সরিয়েই দেওয়া – সবটাই ঘটেছিল বাংলা কংগ্রেসকে ফের ভদ্রলোকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে। জয়া চ্যাটার্জী তাঁর বেঙ্গল ডিভাইডেড বইয়ে রীতিমত তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন যে, এই সময়ে, মানে সুভাষ আর শরৎ বসুকে বের করে দেওয়ার পর, হিন্দু মহাসভা আর বাংলা কংগ্রেসের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাৎ সাধারণ চোখে ধরাই পড়তো না।</div><div><br></div><div>১৯৪৫-৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে হাতেনাতে ফল পায় কংগ্রেস এই আইডেন্টিটি পরিবর্তনের - বাংলার হিন্দুরা একজোটে কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দেয় - একাত্তরটা সাধারণ আসন আর পনেরোটা বিশেষ হিন্দু আসন জেতে কংগ্রেস, তার মধ্যে বেশ কয়েকটা হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে ছিনিয়ে আনা। হিন্দু মহাসভা ছাব্বিশটা আসনে কংগ্রেসের বিপক্ষে লড়ে পায় মোটে ২.৭৩% ভোট। একটা মাত্র আসনে - বিশেষ ইউনিভার্সিটি আসন – সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জেতেন শ্যামাপ্রসাদ। খুব স্পষ্টভাবে, ভদ্রলোক হিন্দুদের রায় ছিল কংগ্রেসের পক্ষেই। অন্যদিকে, সংরক্ষিত তফশিলী আসনের ৮০% জেতে কংগ্রেস, ৩৬-৩৭ সালে যেটা ২৫%-এরও কম ছিল। সব মিলিয়ে মোটামুটি ৯০% হিন্দু ভোটার মনে করেছিল যে কংগ্রেসই তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা - ধনী ব্যবসায়ী, জমিদার - যাদের মধ্যে হিন্দু মহাসভা তিরিশের দ্বিতীয়ভাগ থেকে ক্রমশ: শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, তাদেরও বিপুল সমর্থন পেয়েছিল কংগ্রেস - এই নতুন পাওয়া হিন্দু আইডেন্টিটির জোরে [১]।</div><div><br></div><div>আলাদা হিন্দু অধ্যুষিত রাজ্যের দাবীও ওঠে এই সময় থেকেই। ১৯৪৬-এর ভোটে সুরাহওয়র্দীর মন্ত্রীসভার ক্ষমতায় আসা, বিশেষ করে দুর্ভিক্ষের সময়ে যে সুরাহওয়র্দীকে নিয়ে প্রবল ক্ষোভ ছিল হিন্দুদের মধ্যে, ছেচল্লিশের কুখ্যাত দাঙ্গা, এবং সেই সময়ে কলকাতার রাস্তায় ঘটে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ সামলাতে না পারা - সব মিলিয়ে বাংলার হিন্দুদের বদ্ধমূল ধারণা তৈরী হয়ে যায় যে "মুসলমানদের সরকার" থাকলে বাংলার পাকিস্তান হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না, হিন্দুদের থেকে যেতে হবে মুসলমানদের অধীনে। স্বয়ং শ্যামাপ্রসাদের হাতে লেখা ছেচল্লিশ সালের একটা নোট [২] পাওয়া যায় এই মর্মে, যার মূল বক্তব্য ছিল – “বাংলা যদি পাকিস্তান হয়ে যায়, বাঙালী হিন্দুদের যদি পাকাপাকি মুসলমান শাসনে থাকতে হয়, তাহলে সেটা হবে বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতির শেষ অধ্যায়…নীচু জাতের কিছু হিন্দু যারা মুসলমান হয়েছে, তাদের খুশী করতে হিন্দু সংস্কারকে বলি দেওয়া…”</div><div><br></div><div>একসময় "অবিভক্ত বাংলা"-র সমর্থক শ্যামাপ্রসাদ সেই সময়েই কিন্তু বাংলা ভাগের পক্ষে চলে গিয়েছিলেন। আর, ব্রিটিশ রাজের শেষ দুটো বছরে, বাংলার হিন্দু ভদ্রলোকদের মধ্যে হিন্দু মহাসভা বস্তুত: কংগ্রেসের সেকেন্ড ফিডল হিসেবেই থেকে গিয়েছিল।</div><div><br></div><div>(২)</div><div><br></div><div>ছেচল্লিশের দাঙ্গায় দোষী কে সেই প্রসঙ্গে যাওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। হাজারো লেখা আছে, বই আছে - পড়ে দেখতে পারেন। যেটা বাস্তব, সেটা হল ১৯৪৭ সালে দেশভাগই যে একমাত্র পথ সেইটা মোটামুটি সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বই মেনে নিয়েছিলেন। ১৯৪৭-এর ৮ই মার্চ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিও জানিয়ে দেয় যে দেশভাগ যদি হতেই হয়, তাহলে মুসলমান-প্রধান বাংলা আর পাঞ্জাবকেও ভাগ করতে হবে। ৩রা জুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাটলি ঘোষণা করেন যে দশ সপ্তাহের মধ্যে ইংরেজরা ভারত ছেড়ে যাবে। ১৫ই আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের দুই উত্তরসুরীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। দুই মুসলমান প্রধান রাজ্য, বাংলা আর পাঞ্জাবকে ভাগ করে মুসলমান অধ্যুষিত পাশাপাশি জেলাগুলো দেওয়া হবে পাকিস্তানকে, আর অ-মুসলমানপ্রধান বাকি জেলাগুলো থেকে যাবে ভারতে।</div><div><br></div><div>মানে, ওই দশ সপ্তাহের মধ্যে বাংলার সব হিন্দু রাজনৈতিক নেতা (কংগ্রেস ও মহাসভা মিলিয়ে) - যাঁরা আগের কয়েক বছর ধরে নিরন্তর রাজ্যভাগের কথা বলে এসেছিলেন - তাঁদের সকলকেও এবার দেশভাগের জমাখরচের হিসেব কষতে হবে…</div><div>দেশভাগের অধিকাংশ ইতিহাস জানায় যে স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ তাঁর মর্জিমত কলমের আঁচরে ভারত আর পাকিস্তানকে আলাদা করেছিলেন। তড়িঘড়ি করে করা এই কাজে ভারত আর পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ছিল দাবার বোড়ে মাত্র। বাস্তবে যদিও, যে রাজনীতিকরা দেশভাগের পক্ষে মত দিয়েছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে এই নতুন রাজ্যের বর্ডার কী হবে সেইটা স্থির করার কাজ করে গিয়েছিলেন।</div><div><br></div><div>কাজটা অবশ্যই সহজ ছিল না। ৩রা জুন থেকে ১৭ই আগস্ট - এই অল্প কয়েকটা দিনের মধ্যেই শুধু যে দুই দেশের সীমা নির্ধারণ করতে হবে তা নয়, ভাগ করতে হবে আরো অনেক কিছুই - নদীনালা, রাস্তা, ব্রিজ, রেলপথ, গুদামে থাকা জিনিসপত্র, মায় সরকারি কর্মচারীদেরও। আর, এমনও নয় যে এর কোন ব্লুপ্রিন্ট কোথাও ছিল, যাতে সেটা দেখে দেখে কাজটা সহজেই করে ফেলা যায়। বেসিক গ্রাউন্ডরুল লন্ডন ও দিল্লী থেকেই বলে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু রাজ্যের কোন অঞ্চল কীভাবে ভাগ হবে - সেটা ছাড়া হয়েছিল রাজ্যের ওপরেই। এই গ্রাউন্ডরুল অনুযায়ী বাংলার আইনসভাকে দুটো ভাগে ভাগ করা হবে - মুসলমান আসনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা ভাগ, আর হিন্দু আসনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে আরেকটা ভাগ - দুটো ভাগেই আলাদা করে দেশভাগের ওপর ভোট নেওয়া হবে আর, কোনো একটা ভাগে পার্টিশনের পক্ষে ভোট হলেই ভাগ করা হবে রাজ্যকে। ২০শে জুন ১৯৪৭ - যে দিনটাকে হিন্দুত্ববাদীরা পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করেছে - সেই দিন, বাংলার আইনসভায় এই দুটো ভাগ তৈরী করে ভোট হয়। সেই ঐতিহাসিক ভোটে, একেবারে প্রত্যাশিতভাবেই হিন্দু অংশ ভোট দেয় বাংলা ভাগের পক্ষে আর মুসলমান অংশ ভোট দেয় বিপক্ষে। বাংলার রাজ্যপাল ফ্রেডেরিক বারোওজ টেলেক্স করে মাউন্টব্যাটেনকে জানান -</div><div>Separate meetings of members West repeat West Bengal Legislative Assembly this afternoon decided under paragraph six of H.M.G.’s statement by 58 votes to 21 votes that Province should be partitioned; and under paragraph eight of statement by 58 votes to 21 votes again that West Bengal should join existing Constituent Assembly. Separate meeting of members East repeat East Bengal Legislative Assembly this afternoon decided under paragraph six of statement by 106 votes to 35 votes that Province should not repeat not be partitioned; under paragraph eight of statement by 107 votes to 34 that East Bengal should join new Constituent Assembly; and under paragraph thirteen of statement by 105 votes to 34 votes that East Bengal would agree to amalgamation of Sylhet. [৩, ৪]</div><div><br></div><div>এখানে যেটা দেখার, সেটা হল বাংলা ভাগের পক্ষে রাজ্যের হিন্দু প্রতিনিধিরা একজোট হয়েই ভোট দিয়েছিলেন, আর সেই সময়ে আইনসভায় হিন্দু মহাসভার তরফে ছিলেন একজনই - শ্যামাপ্রসাদ নিজে। কাজেই, খুব সাধারণ অঙ্কের হিসেবেও ৫৮টা ভোটকেই শ্যামাপ্রসাদ হিসেবে ধরা যায় না (সে ইদানীংকালে কেউ কেউ ২৯৪ আসনে তাঁকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে বললেও)...</div><div><br></div><div>মানে, আগে যে ধারণার কথা লিখেছিলাম - বাংলার অধিকাংশ হিন্দু রাজনৈতিক নেতৃত্বই রাজ্যভাগের প্রশ্নে একমত ছিলেন - আইনসভাতে হিন্দু অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠের মত সেই ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। আর এই হিন্দু প্রতিনিধিদের প্রায় সকলেই বাংলা কংগ্রেস থেকে আসা। পশ্চিমবঙ্গের গঠনের পিছনে হিন্দু মহাসভা ও শ্যামাপ্রসাদের আলাদা কোনো কৃতিত্ব নেই। বরং বলা ভালো কোনো কৃতিত্বই নেই।</div><div>[আদৌ কাউকেই এই কৃতিত্ব দেওয়া যায় কিনা সে সম্পূর্ণ আলাদা প্রসঙ্গ, আলাদাভাবে লেখা প্রয়োজন তাই নিয়ে। শুধু এইটুকু বলি - দেশভাগের হিউম্যান কস্ট আর দুটো দেশেরই ক্ষয়ক্ষতি, বিশেষ করে রিসোর্সের হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বিচার করলে কৃতিত্ব শব্দটাই এখানে বেমানান। দেশভাগ বাঙালীর কাছে একটা যন্ত্রণার ঘটনা, এবং পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে এমন একটা ধাক্কা যেখান থেকে এই রাজ্যটা কখনোই বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাই, অত্যন্ত নোংরা খুনে মানসিকতার লোক না হলে ২০শে জুন তারিখটা নিয়ে উৎসব কেউ করবে না।]</div><div><br></div><div>(৩)</div><div><br></div><div>এবার আসা যাক অন্য প্রসঙ্গটায় - কলকাতার পশ্চিমবঙ্গে থাকা বা না-থাকা নিয়ে…তার জন্যে আমাদের যেতে হবে ২০শে জুন ১৯৪৭-এর পরের কয়েক সপ্তাহে, ঢুকতে হবে বাউন্ডারি কমিশনের ভিতরে...যার কাজ শুরু হয়েছিল তুমুল অনিশ্চয়তার মধ্যে। বাংলা আর পাঞ্জাব, দুই জায়গাতেই চারজন বিচারককে নিয়ে তৈরী হয়েছিল বাউন্ডারি কমিশন, দুই কমিশনেই চেয়ারপার্সন ছিলেন সিরিল র্যাডক্লিফ। আর চারজন বিচারককে মনোনীত করেছিল কংগ্রেস আর মুসলিম লীগ। বাংলা কংগ্রেসের তরফে এই কমিশনে ছিলেন জাস্টিস বি.কে. মুখার্জী এবং জাস্টিস সি.সি. বিশ্বাস। মুসলিম লীগের মনোনীত সদস্য ছিলেন জাস্টিস আবু সালেহ মহম্মদ আক্রম, এবং জাস্টিস এস.এ. রহমান। এবং স্বাভাবিকভাবে সকলেই রীতিমত অনুগতভাবে নিজের নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং দলগত নীতির প্রতিনিধিত্ব করে গেছিলেন পুরো সময়টা জুড়ে। মাসখানেক ধরে ৩৬জন উকিল ৩৬টা আবেদন এই কমিশনের সামনে হাজির করলেও (সময়াভাবে আরো ৭১টা আবেদন পেশই করা যায়নি) র্যাডক্লিফ পুরো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শুধুমাত্র কমিশনের চার সদস্যের আনা দাবী আর পাল্টা-দাবীর ওপর ভিত্তি করে - মানে বাস্তবে কংগ্রেসের "সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি" আর মুসলিম লীগের পেশ করা বক্তব্যের ওপরেই [৫]।</div><div><br></div><div>এই পুরো পর্বটা জুড়েই কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বাউন্ডারি কমিশন থেকে হাজার মাইল দূরে দাঁড়িয়ে থেকেছিল, রাজ্যের সীমানা সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর ছেড়ে দিয়ে। এই নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। স্বয়ং বাবাসাহেব আম্বেদকর কংগ্রেসের এই অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছিলেন - তাঁর বক্তব্য ছিল এই সীমানা নির্ধারণ রাজ্যের নয়, দেশের সরকারের দায়িত্ব হওয়ার কথা, এবং এখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বদলে সেনাবাহিনীর লোকজনের থাকা প্রয়োজন, কারণ শেষ অবধি, সীমানার দেখভালের দায়িত্ব তাদেরই। অবশ্যই আম্বেদকরের এই কথায় বিশেষ কেউ কান দেয়নি - না কংগ্রেস হাইকম্যান্ড, না ব্রিটিশ রাজ, না প্রতিরক্ষা দপ্তরের কেউ (ওই দপ্তর থেকে কেউ বাউন্ডারি কমিশনের সামনে হাজির পর্যন্ত হননি)।</div><div>সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটিটা ছিল খানিক খিচুরি সংগঠন - বারো সদস্যের এই কমিটিতে দুজন ছিলেন বাংলা কংগ্রেস থেকে (এই দুজনের একজন ব্যারিস্টার অতুল চন্দ্র গুপ্ত - কমিটির চেয়ারম্যান), বাকি দশজন ছিলেন হিন্দু মহাসভা, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন আর নিউ বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে। বারোজনের মধ্যে দশজন দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদী - স্পষ্টতই যাকে বলা যায় "বিপর্যয়ের রেসিপি"।</div><div><br></div><div>এবার, পার্টিশনের গ্রাউন্ড রুল - যেটা লন্ডন থেকে বলে দেওয়া হয়েছিল - সেটা ছোট করে বুঝে নেওয়া দরকার। লন্ডনের তরফে ৩রা জুনের স্টেটমেন্টটা যদি একবার দেখি -</div><div><br></div><div>For the immediate purpose of deciding on the issue of partition, the members of the legislative assemblies of Bengal and the Punjab will sit in two parts according to Muslim majority districts (as laid down in the Appendix) and non-Muslim majority districts. This is only a preliminary step of a purely temporary nature as it is evident that for the purposes of final partition of these provinces a detailed investigation of boundary question will be needed; and as soon as a decision involving partition has been taken for either province a boundary commission will be set up by the Governor-General, the membership and terms of reference of which will be settled in consultation with those concerned. It will be instructed to demarcate the boundaries of the two parts of the Punjab on the basis of ascertaining the contiguous majority areas of Muslims and non-Muslims. It will also be instructed to take into account other factors. Similar instructions will be given to the Bengal Boundary Commission. Until the report of a boundary commission has been put into effect, the provisional boundaries indicated in the Appendix will be used. [৬]</div><div><br></div><div>পাশাপাশি অবস্থিত মুসলমানপ্রধান জেলাগুলো যাবে পাকিস্তানে, আর বাদবাকি জেলাগুলো থেকে যাবে ভারতে - শুধু এই নিয়মের ভিত্তিতে যদি বাংলা ভাগ করা হয়, তাহলে ভাগীরথী-হুগলীর পূর্বদিকের প্রায় পুরো অঞ্চলই বাদ দিতে হয়, বাদ দিতে হয় গঙ্গার উত্তরের একটা বড় অংশও। ভদ্রলোক হিন্দু বাঙালি পার্টিশন চেয়েছিল কারণ তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সঙ্গে একসাথে থাকতে চায়নি, ক্ষমতার ভাগাভাগি চায়নি। সেক্ষেত্রে মুসলমান প্রধান জেলাগুলোকে বাদ দিয়ে দিলে পশ্চিমবঙ্গের ভাগে পড়ে থাকে দক্ষিণবঙ্গের অর্ধেক - শুধু বর্ধমান, হুগলী, হাওড়া, কলকাতা, ২৪ পরগণা, বাঁকুড়া, বীরভূম, আর মেদিনীপুর - মানে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলো - ঠিক যে যে জেলায় পার্টিশনের পক্ষে সবচেয়ে বেশি প্রচার চলেছিল...[প্রথম ছবি: Map 1]</div><div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgXCBHtcgyeCHqVt3vgLxkAMR9S8gykKMgFAbuZbQvIyqoJ0wBf4E0DlC4Nbq929rP3hOGPpHLImxKbqcp88lUU35kL6oafJHAn2xjtbGExojDfVn3ycNP7kFcUkwIxlczqpfflgayTj6r15IJQpCVwd4xCuTPH4VSFTCfQjRCAyzW1MvHpOporzg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgXCBHtcgyeCHqVt3vgLxkAMR9S8gykKMgFAbuZbQvIyqoJ0wBf4E0DlC4Nbq929rP3hOGPpHLImxKbqcp88lUU35kL6oafJHAn2xjtbGExojDfVn3ycNP7kFcUkwIxlczqpfflgayTj6r15IJQpCVwd4xCuTPH4VSFTCfQjRCAyzW1MvHpOporzg" width="400">
</a>
</div><br></div><div>অক্ষরে অক্ষরে নিয়ম মেনে চললে এ বড় কঠিন বাস্তব। যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ভদ্রলোক হিন্দু এতদিন লড়ে এলো, বা যে পাকিস্তানের জন্যে মুসলিম লীগ, সেই সবই যদি এরকম পোকায় কাটা অর্ধেক রাজ্য হয়ে যায়, তাহলে সেই রাজ্য কি আদৌ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে? যে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল নিয়ে এত কথা, এই অর্ধেক রাজ্যে সেই ক্ষমতার কতটুকুই বা বাকি থাকবে?</div><div><br></div><div>কাজেই, ওই বেঁধে দেওয়া গ্রাউন্ডরুলের মধ্যে একটা বাক্যের আশ্রয় নিতে হয়েছিল কো-অর্ডিনেশন কমিটি আর লীগকে - “It will also be instructed to take into account other factors" - দুই পক্ষই এই "আদার ফ্যাক্টরস"-কে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করে তাদের ভাগের অংশকে বাড়ানোর চেষ্টা করে গেছিল ক্রমাগত। তবে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হল যে এই "আদার ফ্যাক্টরস" শব্দবন্ধকে ব্যবহার করে কতটা জমি পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে আনার চেষ্টা করা হবে, তাই নিয়ে কো-অর্ডিনেশন কমিটির মধ্যেই বড়সড় মতভেদ ছিল, আর সেটা একেবারে শুরুতেই সামনে আসে।</div><div><br></div><div>এই মতবিরোধটাই এই প্রসঙ্গে আপাতত জরুরী। শ্যামাপ্রসাদের জন্যেই কলকাতা পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল কিনা সেটা যাচাই করতে আমাদের ঠিক এই জায়গাতেই যেতে হবে...</div><div><br></div><div>(৪)</div><div><br></div><div>সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল পশ্চিমবঙ্গ কত বড় হলে রাজ্যভাগের রাজনীতির আঙিনার চরিত্ররা সন্তুষ্ট হবেন, আর এই নতুন রাজ্যটাও অর্থনৈতিকভাবে কার্য্যকর হবে। আর এই প্রশ্নে সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিভিন্ন পক্ষ একে অপরের সম্পূর্ণ উলটো মেরুতে বসে ছিলেন। একদল ছিলেন রাজ্যের কলেবর যতটা সম্ভব বাড়ানোর পক্ষে, আরেকদল ছিলেন ছোট কমপ্যাক্ট রাজ্যের পক্ষে - যা শাসন করা অপেক্ষাকৃত সহজ। আর, এই বিভেদ ছিল একেবারে পার্টি লাইন বরাবর। ছোট দলগুলোর দাবী ছিল আকাশপ্রমাণ। হিন্দু মহাসভা আর নিউ বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন চেয়েছিল যতটা সম্ভব এলাকা দাবী করতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই "আদার ফ্যাক্টরস" শব্দবন্ধকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অসম্ভব বাড়িয়ে তুলে। এগারোটা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা (বর্ধমান, মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলী, কলকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা, দার্জিলিং আর জলপাইগুড়ি) ছাড়াও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলার অনেক অংশও এদের দাবীর মধ্যে ছিল - যেমন নদীয়ার বড় অংশ, ফরিদপুর, দিনাজপুর, এবং রংপুর আর রাজশাহীর বেশ কিছু অঞ্চল। মহাসভা আর নিউ বেঙ্গলের দাবী মানলে পশ্চিমবঙ্গে আসতো অবিভক্ত বাংলার পাঁচভাগের প্রায় তিন ভাগ [দ্বিতীয় ছবি - Map 2][৭]</div><div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgCjK-7C95N6eJXShubx6GWQYIWxloTlx2CrpSnkmxonT_YprTM-q7j-cn_yt2v42LLs1XtwpM1kLW7V305C43UbZ6ysw6mgbpUGJ-BT-PUZkE7LSulCBxU5ZfKXamUVmAIl490yPPC9QN3hYsEPD-9GHp_WBiRxqbsxI_lZtkADrhQEXbCaIYE4w" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgCjK-7C95N6eJXShubx6GWQYIWxloTlx2CrpSnkmxonT_YprTM-q7j-cn_yt2v42LLs1XtwpM1kLW7V305C43UbZ6ysw6mgbpUGJ-BT-PUZkE7LSulCBxU5ZfKXamUVmAIl490yPPC9QN3hYsEPD-9GHp_WBiRxqbsxI_lZtkADrhQEXbCaIYE4w" width="400">
</a>
</div><br></div><div>উল্টোদিকে, অতুল চন্দ্র গুপ্তর নেতৃত্বে কংগ্রেস ক্যাম্পের দাবী তুলনামূলকভাবে অনেক নিচু স্কেলে বাঁধা ছিল। তাঁরা বলতে চেয়েছিলেন যে অহেতুক অযৌক্তিক দাবীর ফলে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা সংক্রান্ত সমস্ত দাবীই লঘু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলোর প্রতিনিধিরা এই প্রস্তাব নাকচ করলে অতুল চন্দ্র গুপ্ত স্ট্র্যাটেজি বদলে দুটো প্রস্তাব রাখেন - একটা "কংগ্রেস স্কিম", যেখানে অনেক বড় আকারে দাবী পেশ করা হয়েছিল - মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলার অংশ জুড়ে (যদিও সেটাও মহাসভার দাবীর চেয়ে কমই ছিল), আর দ্বিতীয়টা "কংগ্রেস প্ল্যান", যেখানে প্রথম স্কিমের চেয়ে কম এলাকা চাওয়া হলেও সেটা মোটামুটিভাবে ওই মৌলিক তত্ত্ব মেনেই, অর্থাৎ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলোকেই নিয়ে। "আদার ফ্যাক্টরস" হিসেবে অল্প কিছু মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল চাওয়া হয়েছিল এই প্ল্যানে। তৃতীয় ছবি, অর্থাৎ Map 3 খেয়াল করে দেখলে দেখতে পাবেন কংগ্রেস স্কিম আর কংগ্রেস প্ল্যান - দুটোর ক্ষেত্রেই প্রস্তাবিত এলাকা দাগ দিয়ে বোঝানো রয়েছে। এবং, দুটো ম্যাপেই কলকাতা কিন্তু প্রস্তাবিত পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই রয়েছে। হিন্দু মহাসভা এই প্রস্তাবও মানেনি। শেষ অবধি তারা আলাদাভাবে পিটিশন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। Map 2 তারই ফসল।</div><div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgmvezQh1cXD0Ih-QjdJO4E1K18_DeKgly3Pqk6FQ_jp0EpxXGYntrSVmOSKJwFQtUnbPpqidRJHaPKbhmUFhkrNU9lZX7aEzy9VwbVr3t1-SMNHWvKKkLzzE3H3qpib7yFndaPgiboo8Nr60l_zrGWgr_3nJQYj9C3xjy5vGPeUJrIsefFYSwYxQ" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgmvezQh1cXD0Ih-QjdJO4E1K18_DeKgly3Pqk6FQ_jp0EpxXGYntrSVmOSKJwFQtUnbPpqidRJHaPKbhmUFhkrNU9lZX7aEzy9VwbVr3t1-SMNHWvKKkLzzE3H3qpib7yFndaPgiboo8Nr60l_zrGWgr_3nJQYj9C3xjy5vGPeUJrIsefFYSwYxQ" width="400">
</a>
</div><br></div><div>মোদ্দা কথা হল, যে কয়েকটা পিটিশন জমা পড়েছিল কংগ্রেস আর হিন্দু মহাসভার তরফে, তার প্রতিটাতেই কলকাতা ছিল পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই। অর্থাৎ, হিন্দুত্ববাদীদের দ্বিতীয় দাবী, যে শ্যামাপ্রসাদের জন্যেই কলকাতা পশ্চিমবঙ্গে এসেছে, সেই দাবীটিকেও এই ম্যাপের দৌলতে সহজেই নস্যাৎ করে দেওয়া যায়। </div><div> </div><div>(৫)</div><div><br></div><div>এই লেখাটা এইখানেই শেষ করে দেওয়া যেত। কিন্তু মনে হল সম্পূর্ণতার খাতিরে আরো কিছু তথ্য জুড়ে দেওয়া দরকার। উদ্দেশ্য শ্যামাপ্রসাদ ও হিন্দু মহাসভা, এবং আজকের বিজেপি – উগ্র দক্ষিণপন্থার আসল মানসিকতাটা চিনে নেওয়া…</div><div><br></div><div>চল্লিশের দশকের রাজ্যভাগের রাজনীতির সঙ্গীদের থেকে পশ্চিমবঙ্গের জন্যে অনেক কম এলাকা দাবী করে কংগ্রেস বেশ বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছিল। যেহেতু দেশভাগের পর তারাই সরকারে বসবে, অর্থাৎ তারাই হবে ব্রিটিশ রাজের উত্তরাধিকারী, সেহেতু, তাদের বিরুদ্ধে “বাংলার জন্মগত অধিকার খর্ব করা” বা “ভারতের নিজস্ব ভৌগলিক এলাকা শত্রুর হাতে তুলে দেওয়া” জাতীয় অভিযোগ তোলা সহজেই সম্ভব। কংগ্রেসের যুক্তিটা এখানে কংগ্রেসেরই দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে হবে - তাদের লক্ষ্য ছিল এই নতুন রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখা, শুধু উত্তরাধিকারী হিসেবে নয়, তার পরেও। এবং তার জন্যে যদি এই অভিযোগের জবাব দিতে হয়, তাহলে সেটাই এই ক্ষমতা ধরে রাখার দাম। এবং হিন্দু মহাসভাও এইটা ভালোমতনই বুঝে গেছিল। </div><div><br></div><div>হিন্দু কো-অর্ডিনেশন কমিটি পাকাপাকি ভেঙে যাওয়ার পর হিন্দু মহাসভা আর তাদের সঙ্গীরা বুঝে যায় যে তাদের আর হারানোর কিছু নেই, এবং তারা চাইলে নির্বিচারে আরো যুক্তিহীন দাবীও তুলতে পারে। এবং দক্ষিণপন্থী হিন্দুদের সামনে এই দেখনদারি চেঁচামেচিতে বরং তাদের লাভ হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায় (যেটা আজ একেবারে ১০০% বাস্তব)। চরম দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলো আরো চমকপ্রদ দাবী তুলতে থাকে মহাসভার উস্কানিতে...যেমন আর্য্য রাষ্ট্র সংঘ (হয়তো হাতে গোনা একশোটা লোক ছিল এতে) অবিভক্ত বাংলার পাঁচভাগের চারভাগ চেয়ে বসে, সঙ্গে বাংলার প্রত্যেকটা শহরও, কারণ বাংলার শহরাঞ্চলে হিন্দুদের সংখ্যা বেশি…</div><div><br></div><div>মহাসভা এই নতুন জন্মানো রাজ্যের সীমানা নিয়ে ক্রমশঃ আরো উদ্ভট দাবী করতে শুরু করে কারণ তারা পুরোপুরি বুঝে গিয়েছিল যে এই নতুন রাজ্যে তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। কাজেই, পাশাপাশি জেলার তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ যে কোনো জেলাকেই তারা পশ্চিমবঙ্গে ঢোকানোর কথা বলে ওই "আদার ফ্যাক্টরস"-এর হিসেবে। যেমন, গোটা নদীয়া চেয়ে বসে শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান হিসেবে, রাজশাহী চেয়ে বসে সেখানে বারেন্দ্র রিসার্চ সেন্টার রয়েছে বলে, এবং বরিশাল - সেখানকার হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্যে। মহাসভা জানতো যে তাদের এই দাবীগুলো কোথাওই কোনো গুরুত্ব পাবে না, তা সত্ত্বেও নিজেদের "হিন্দুস্বার্থ রক্ষার সৈন্য" হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টায় খামতি রাখেনি। দুইদিকেই লাভ - একদিকে হিন্দুস্বার্থ রক্ষার একনিষ্ঠ সৈনিকের খ্যাতি - যদি দাবীগুলোর একটাও বাস্তবে সত্যি না হয়; অন্যদিকে কংগ্রেসের প্ল্যানের বাইরে সামান্য এলাকাও পশ্চিমবঙ্গে এলে তার কৃতিত্ব নেওয়ার সুযোগ...একই সঙ্গে ভবিষ্যতের ইলেকশন যুদ্ধে নিজেদের জায়গা পোক্ত করা। বস্তুতঃ প্রোপাগান্ডাই ছিল মহাসভার মূল উদ্দেশ্য। সেদিনও যা ছিল, আজও তাই।</div><div><br></div><div>উল্টোদিকে কংগ্রেসের হাতে এই কল্পনাবিলাসের সুযোগ ছিল না। নতুন যে রাজ্য তৈরী হবে, তাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল, আর তাদের প্রতি পদক্ষেপ ছিল সেই লক্ষ্যে। অতুল গুপ্তের তত্ত্বাবধানে কংগ্রেসের কমিটি রাজ্যের প্রতিটা থানার জনসংখ্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব করেছিল সেন্সাস রিপোর্টের সাহায্য নিয়ে [চতুর্থ ছবি - Map 4]। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে দেখলে, কংগ্রেস প্ল্যানে অনেক সমস্যা চোখে পড়লেও, কংগ্রেসের প্ল্যানাররা মোটামুটিভাবে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির কথা ভেবেই সীমানা নির্ধারণের চেষ্টা করেছিলেন। দার্জিলিং এর চা-বাগান এলাকা, ভাগিরথী-হুগলীর নদীপথ, এবং কলকাতা বন্দরের কথা ভেবে মালদা-মুর্শিদাবাদ-নদীয়া - এগুলো সব তাঁদের প্ল্যানে ধরা ছিল - “this territory has been included in West Bengal for the most compelling factor of essential necessity for requirements and preservation of the Port of Calcutta. The life of the Province of West Bengal is mostly dependent on Calcutta, and with the partition it will become wholly so dependent” [৮] - অর্থাৎ, এখানেও কলকাতাকে বাদ দিয়ে কোনো প্ল্যানই ছিল না। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্ল্যান তৈরী হয়েছিল কলকাতাকে তার কেন্দ্রে রেখেই।</div><div>আরো অনেক হিসেবনিকেশ ছিল কংগ্রেস প্ল্যানে। সেই হিসেবগুলো যে ঠিক, সে কথা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বলা যায় না। এও ভাবতে আশ্চর্য্য লাগে যে এই প্ল্যানের মধ্যে বেশ কিছু এমন "অনুমান" ছিল, যেগুলো রেট্রোস্পেক্টে দেখলে ধৃষ্টতা মনে হয়। পিছন ফিরে তাকিয়ে এও মনে হয় যে সেই সময়ে গণপরিষদে বাংলার প্রতিনিধিদের সমস্ত পদক্ষেপই ছিল যেনতেনপ্রকারেণ এই নতুন রাজ্যের ক্ষমতা ধরে রাখার দিকে তাকিয়ে। কংগ্রেসের নিজের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ছিল এই প্ল্যান নিয়ে। অতুল্য ঘোষ এবং তাঁর গোষ্ঠীর তরফে আরো সংক্ষিপ্ত রাজ্যের একটা প্ল্যান দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র দক্ষিণবঙ্গের হিন্দুপ্রধান জেলাগুলোকে নিয়ে (যদিও কংগ্রেস সেই প্ল্যান জমা দেয়নি) - যেখানে অতুল্য ঘোষের মূল উদ্দেশ্য সম্ভবত: ছিল নতুন রাজ্যে তাঁর গোষ্ঠীর (মানে হুগলী-বর্ধমান জেলার) নেতাদের ক্ষমতা সুরক্ষিত করা। এত কিছু সত্ত্বেও, বিশেষ করে দূরদর্শিতার অভাব থাকলেও, এইটুকু বলাই যায় যে বাউন্ডারি কমিশনের সামনে জমা দেওয়া প্ল্যানের মধ্যে প্রোপাগান্ডা ছিল না, জনতাকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে দেখনদারি ছিল না। এইটাই আসল কথা - আর এই বাস্তবটা ওই সময়ের কিছু ডকুমেন্ট খুঁটিয়ে দেখলেই জানা যায়।</div><div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEiKuQC2tuYk3tK3Y1CbFNe9HpIkptcTnZ04EsRJnboqqvp7KAR_7843dWbTLldEkSlrvXs2LcRGn1Hd-dBhYw1Wy3c3Ox-s6XpaSElg0H6jqlkbylGacVyvw_iPZkvvUVorUQv6t1CJM-Zj-rbH7fkxOSkKoS3_GrzkogaFaxxANuxIpdO6GmmTaw" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEiKuQC2tuYk3tK3Y1CbFNe9HpIkptcTnZ04EsRJnboqqvp7KAR_7843dWbTLldEkSlrvXs2LcRGn1Hd-dBhYw1Wy3c3Ox-s6XpaSElg0H6jqlkbylGacVyvw_iPZkvvUVorUQv6t1CJM-Zj-rbH7fkxOSkKoS3_GrzkogaFaxxANuxIpdO6GmmTaw" width="400">
</a>
</div><br></div><div>শেষ অবধি, সিরিল র্যাডক্লিফ যে পার্টিশন লাইনটা টানেন, সেটা মোটামুটিভাবে কংগ্রেস প্ল্যানের সঙ্গেই মিলে গিয়েছিল। শুধু খুলনার বদলে পশ্চিমবঙ্গে আসে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ - গঙ্গা-ভাগিরথী রিভার সিস্টেমকে অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে।</div><div>আজ এই অবধি থাক। অন্য কোনোদিন চেষ্টা করবো পার্টিশনের জমাখরচ নিয়ে লিখতে। বারবার শুধু এইটাই বলার – হিন্দুত্ববাদীরা সেদিনও প্রোপাগান্ডাকেই তাদের অস্ত্র করেছিল, আজও তাই। ফ্যাসিবাদী শক্তি তার জন্মলগ্ন থেকে এই কাজই করে এসেছে। ভারতের এই নয়া ফ্যাসিস্টরা তাদের রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু গোয়েবলসের শিক্ষাই মেনে চলেছে – সেদিনও, আর আজও।</div><div><br></div><div> তথ্যসূত্র -</div><div>[১] Bengal Divided: Hindu Communalism and Partition, 1932-1947, Joya Chatterji, Cambridge University Press</div><div>[২] Shyama Prasad Mookerjee Papers, II-IV Instalment, File No. 75/1945-46</div><div>[৩] The Spoils of Partition: Bengal and India 1947-1967, Joya Chatterji, Cambridge University Press</div><div>[৪] Constitutional Relations between Britain and India: Transfer of Power, 1942-7, Volume XI The Mountbatten Viceroyalty, Announcement and Reception of the 3 June Plan, 31 May – 7 July 1947, ed: Nicholas Mansergh, Penderel Moon</div><div>[৫] The Fashioning of a Frontier: The Radcliffe Line and Bengal’s Border Landscape, 1947-52, Joya Chatterji, Modern Asian Studies / Cambridge University Press</div><div>[৬] Statement by His Majesty’s Government, dated the 3rd June 1947, PP I, p. 2</div><div>[৭] Memorandum for the Bengal Boundary Commission. Submitted by the Bengal Provincial Hindu Mahasabha and the New Bengal Association, Shyama Prasad Mookerjee Papers, 1st Instalment, Printed Material, File No. 17 (Serial No. 8).</div><div>[৮] Memorandum on the partition of Bengal presented on behalf of the Indian National Congress before the Boundary Commission, p. 7.</div><div>(সমস্ত ছবির সোর্স: জয়া চ্যাটার্জীর "স্পয়েলস অফ পার্টিশন")</div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-27874410933350307362022-08-08T14:41:00.001+01:002022-08-08T14:41:38.035+01:00#ShadowArmiesOfHindutva - Part 6<div>২৯শে সেপ্টেম্বর ২০০৮ - রমজানের সময়ে, রাত্রি সাড়ে ন'টা নাগাদ মালেগাঁওয়ের অঞ্জুমান চক আর ভিকু চকের মাঝে শাকিল গুডস ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির বাড়ির সামনে, জনবহুল একটা এলাকায় বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরক ডিভাইস বসানো ছিলো একটা LML Freedom স্কুটারে, রেজিস্ট্রেশন নম্বর MH-15-P-4572 - বিস্ফোরণের ফলে ছ'জন মারা যায়, আহত হয় আরো শ'খানেক লোক, সম্পত্তি নষ্টের পরিমাণ চার লক্ষ টাকার ওপর। যেহেতু সেই সময়টা ছিলো রমজানের, আর ঠিক পরের দিন, মানে ৩০শে সেপ্টেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিলো নবরাত্রি উৎসবের, বোঝাই যায়, যে বিস্ফোরণ যারা ঘটিয়েছিলো তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো আতঙ্ক ছড়ানো, আর মানুষ মেরে, সম্পত্তি ধ্বংস করে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরী করা। ঘটনার পরেই বিশাল পুলিশবাহিনী স্পটে পৌঁছে যায়, কিন্তু প্রায় হাজার পনেরো ক্ষুব্ধ মানুষের ভিড়ে থমকে যায়। ইঁট ছোঁড়ে বিক্ষুব্ধ জনতা, বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়, কয়েকটা গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার পরেই বিস্ফোরণের তদন্তে নামে পুলিশ। এই গন্ডগোলের জন্যে আলাদা করে রায়টিং এর কেস নথিভুক্ত হয় আজাদ নগর থানায়, কেস নম্বরঃ ১৩১/২০০৮।</div><div><br></div><div>বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে আজাদ নগর থানাতেই কেস রেজিস্টার হয় ৩০শে সেপ্টেম্বর ভোর তিনটেয়, কেস নম্বরঃ ১৩০/২০০৮, আইপিসি ৩০২, ৩০৭, ৩২৬, ৩২৪, ৪২৭, ১৫৩-এ, ১২০-বি, এক্সপ্লোসিভ সাবস্ট্যান্সেস অ্যাক্টের ৩/৪/৫ ধারায়। পুলিশ একে একে গ্রেপ্তার করে বেশ কয়েকজনকে - যাদের মধ্যে ছিলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, শিবনারায়ণ গোপালসিং কালসাংরা, শ্যাম ভওয়রলাল সাহু, রমেশ শিবজী উপাধ্যায়, সমীর শারদ কুলকার্নি, অজয় ওরফে রাজা একনাথ রাহিরকর, রাকেশ দত্তাত্রেয় ধাওরে, জগদিশ চিন্তামন মাহত্রে, লেফটেন্যান্ট কর্ণেল শ্রীকান্ত প্রসাদ পুরোহিত ওরফে বলবন্ত রাও ওরফে শ্রেয়ক রণদিভে, সুধাকর উদয়ভান ধর দ্বিবেদী ওরফে দয়ানন্দ পান্ডে ওরফে স্বামী অমৃতানন্দ দেবতীর্থ ওরফে সারদা সর্বজ্ঞ পীঠের শঙ্করাচার্য্য আর সুধাকর ওঙ্কার চতুর্বেদী। ওয়ান্টেড লিস্টে নাম ওঠে রামজী রামচন্দ্র গোপালসিং কালসাংরা, সন্দীপ বিশ্বাস ডাঙ্গে, প্রভীন মুতালিক ইত্যাদিদের।</div><div><br></div><div>বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে নাসিকের ফরেন্সিক টিম জানায় যে সেই বিস্ফোরণে আরডিএক্স আর অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার হয়েছিলো। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত আরো একটি বাইক (রেজিস্ট্রেশন নম্বর GJ-05-BR-1920) রেজিস্টার্ড ছিলো প্রজ্ঞাসিং চন্দ্রপালসিং ঠাকুরের নামে। ওয়ান্টেড লিস্টে নাম থাকা তিনজন এবং আরো কিছু লোক মিলে সেই এলএমএল ফ্রীডম বাইকে বিস্ফোরক ডিভাইস বসিয়েছিলো।</div><div><br></div><div>খুব ছোট করে, এই হল মালেগাঁও ব্লাস্ট কেসের সামারি - যেটা আপনারা হয়তো খবরের কাগজে পড়ে থাকবেন। ঘটনাটা মনে করিয়ে দিলাম, নামধামসহ - এর পরের কথাগুলো রিলেট করতে সুবিধা হবে বলে।</div><div><br></div><div>এগারোজন অভিযুক্তের নাম ছিলো পুলিশ রিপোর্টে - আর খেয়াল করলে দেখা যায় যে এদের মধ্যে তিনটে ডিসটিংক্ট গ্রুপ রয়েছে - প্রথমতঃ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, দ্বিতীয়তঃ সেনাবাহিনীর বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্য, আর তৃতীয়তঃ সংঘ পরিবারের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মী/সদস্য। এবং, ঘটনাচক্রে, এদের অধিকাংশই মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ, বিশেষ করে চিৎপাবন - একেবারে সেই হিন্দু মহাসভার রমরমার দিনগুলোর সময় সাভারকরের শিষ্যদের মত। সেই বছরের ২৬শে জানুয়ারি হওয়া ফরিদাবাদের যে মিটিঙের কথা আগের পর্বে লিখেছিলাম, সেই মিটিঙেই এঁরা ভারতের এক নতুন সংবিধানের খসরা তৈরী করা শুরু করেন - যেখানে এই চিৎপাবন ব্রাহ্মণদের ভারতীয় এয়ারফোর্সে ঢোকানোর জন্যে আলাদা ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়…</div><div><br></div><div>যে তিন ধরণের মানুষের কথা লিখলাম, তাদের মধ্যে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা - সন্ন্যাসী বা মহন্ত - চিরকালই হিন্দু জাতীয়তাবাদী মুভমেন্টের সাথে জড়িয়ে ছিলেন - অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতা হিসেবে বৈধতা দেওয়ার জন্যে, কিছু ক্ষেত্রে সক্রিয় সদস্য হিসেবেও। এর আগেও হিন্দু মহাসভাকে সমর্থন করেছেন কবীর পীঠের শঙ্করাচার্য্যের মত ব্যক্তিত্ব, বা গোরক্ষনাথ মঠের আচার্য্য মহন্ত দিগ্বিজয়নাথ…যাঁদের উত্তরাধিকারীরা হিন্দু মহাসভা থেকে ক্রমে ভারতীয় জনতা পার্টিতে চলে এসেছেন। নব্বইয়ের দশকে, বিজেপির জনা ছয়েক সাংসদ ছিলেন গেরুয়াধারী সন্ন্যাসী, যদিও এঁদের বেশিরভাগেরই সেরকম কোনো ধর্মীয় জনভিত্তি ছিলো না - হয় তাঁরা নামীদামী কোনো সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী ছিলেন না, বা একদম শূন্য থেকে নিজেদের আশ্রম তৈরী করেছিলেন। যদিও, এঁদের প্রধান সম্পদ ছিলো জোরালো বক্তব্য রাখার ক্ষমতা - প্রধাণতঃ জঙ্গি মনোভাবের - যেমন সাধ্বী ঋতম্ভরা বা উমা ভারতীর মত লোকেরা…</div><div><br></div><div>অমৃতানন্দ দেবতীর্থ ছিলেন এই দ্বিতীয় ক্যাটেগরির ধর্মীয় নেতা - জঙ্গি মনোভাব আর চরম মুসলমান বিদ্বেষ ছিলো যাঁর অস্ত্র। উনি নিজেকে শ্রীসারদা সর্বজ্ঞপীঠের শঙ্করাচার্য্য বলে দাবী করতেন আর সেই পীঠের ধর্মীয় আচার ফের শুরু করার চেষ্টায় ছিলেন, যদিও বাস্তবে সারদাপীঠ বর্তমানে কাশ্মীরের লাইন অফ কন্ট্রোলের ওপারে (এই সমস্ত পীঠের সংখ্যা, মাহাত্ম্য আর কে শঙ্করাচার্য্য হবেন তাই নিয়ে বর্তমান এবং হলেও-হতে-পারেন শঙ্করাচার্য্যদের মধ্যেই প্রচন্ড বিতর্ক আর রেষারেষি রয়েছে - উৎসাহী পাঠক চাইলে ধীরেন্দ্র কুমার ঝা-এর Ascetic Games পড়ে দেখতে পারেন। মালেগাঁও ব্লাস্ট নিয়ে লেখায় এর ডিটেলড আলোচনা আর করছি না)।</div><div><br></div><div>দ্বিতীয় যে গোষ্ঠীর কথা বললাম - সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্য - হিন্দু জাতীয়তাবাদী মুভমেন্টে এঁদেরও উপস্থিতি নেহাত কম নয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদ শুরু থেকেই এই মুভমেন্টে একটা মার্শাল বা সামরিক রূপ দিতে চেয়েছে। সাভারকরের ক্ষেত্রে যেমন "হিন্দুধর্মের সামরিকীকরণ" (militarise Hindudom) শুধুমাত্র একটা স্লোগান ছিলো না - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাভারকর সক্রিয়ভাবে কমবয়সী হিন্দু ছেলেদের আর্মিতে ঢোকানোর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, লক্ষ্য ছিলো এই প্রশিক্ষিত হিন্দু সৈন্যরা ভবিষ্যতে মুসলমানদের সাথে অবশ্যম্ভাবী সিভিল ওয়ারে হিন্দুত্বের পরম শক্তিশালী খুঁটি হয়ে উঠবে। হিন্দু মহাসভায় তাঁর অনুগামী ডঃ বিএস মুঞ্জে যে ভোঁসলে মিলিটারি স্কুল তৈরী করেছিলেন - যার কথা এই সিরিজের একদম প্রথম পোস্টে ছিলো - সেই স্কুলের পিছনেও সাভারকরের পূর্ণ সমর্থন ছিলো। এবং, অভিনব ভারতের সঙ্গেও ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়। ২৬শে জানুয়ারির ফরিদাবাদ মিটিঙে কর্ণেল পুরোহিত জোরগলায় বলেছিলেন - "<i>Whatever I have said today is in fact taken care of by the officers sitting there. The entire school is in my hands</i>."</div><div><br></div><div>একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিই - ইন্টারেস্টিং লাগতেও পারে।</div><div><br></div><div>১৯৮৯-৯১ সাল নাগাদ, মানে যে সময়ে ভারতীয় জনতা পার্টি কোমর বেঁধে ইলেকশনে নামে, সেই সময়ে পার্টিতে বেশ কিছু এক্স-আর্মি লোকজনকে নেওয়া হয়, যাঁদের মধ্যে ছিলেন - দুজন রিটায়ার্ড এয়ারমার্শাল, ছ'জন রিটায়ার্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল, চারজন রিটায়ার্ড মেজর জেনারেল, চারজন রিটায়ার্ড ব্রিগেডিয়ার, চারজন রিটায়ার্ড কর্ণেল, দুজন রিটায়ার্ড মেজর, তিনজন রিটায়ার্ড ক্যাপ্টেন, দুজন রিটায়ার্ড উইং কম্যান্ডার, আর একজন করে রিটায়ার্ড এয়ার কমোডোর, লেফটেন্যান্ট কর্ণেল, স্কোয়াড্রন লীডার আর ফ্লায়িং অফিসার। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বসানো হয় বিজেপির জাতীয় কার্য্যসমিতিতে আর পার্টির ডিফেন্স সেল-এ। এঁদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কিছুদিন আগে আরো বেশ কয়েকজন প্রাক্তন সেনা হিন্দুত্ব ফোল্ডে চলে এসেছিলেন - যাঁদের মধ্যে একজন, ক্যাপ্টেন জগৎ বীর সিং দ্রোণ ততদিনে কানপুরের আরএসএস প্রধান। শুধু আর্মি নয়, আশি আর নব্বইয়ের দশকে পুলিশের বেশ কিছু বড়কর্তাও একে একে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে।</div><div><br></div><div>একটা কথা মনে রাখা ভালো - স্বাধীনতার অনেক বছর পরেও একটা সময় অবধি ধর্মীয় দাঙ্গার সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পারফরমেন্সে কোনো কালির দাগ ছিলো না। তবে ওই নব্বইয়ের দশকের শুরুতে একসাথে এতজন আর্মি অফিসারের বিজেপিতে যোগ দেওয়া স্বাভাবিকভাবে আর্মির ভিতরের "চেঞ্জিং ডায়নামিক্স" নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। ২০০৩ সালে তেহেলকার এক সার্ভেতে জানা যায় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে ১৯% কোনো না কোনো সময়ে ধর্মীয় বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছেন। সার্ভেতে যাঁরা পার্টিসিপেট করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২৪% মুসলমান।</div><div><br></div><div>গত শতাব্দীর শেষের দিক থেকে সেনাবাহিনীর ভিতরের ডায়নামিক্স যদি বদলেও থাকে, ২০০৮ এর আগে হিন্দু মৌলবাদী কোনো ঘটনায় কখনো আর্মি অফিসারকে জড়িত থাকতে দেখা যায়নি। অভিনব ভারত সেই ধারণার মূলে সজোরে আঘাত করে - সেই প্রথম - যখন অন্ততঃ দুজন আর্মি অফিসারের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। একদম শুরুতেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মেজর রমেশ উপাধ্যায় - প্রাক্তন ডিফেন্স সার্ভিসেস অফিসার - যিনি খুব জলদিই স্বীকার করেন যে নাসিকের ভোঁসলে মিলিটারি স্কুল কমপ্লেক্সের মধ্যেই সাধ্বী প্রজ্ঞা এবং আরো কয়েকজনের সাথে তিনি গোটা ঘটনার প্ল্যান তৈরীর মিটিঙে অংশ নিয়েছিলেন। পাব্লিক প্রসিকিউটর অজয় মিসার কোর্টে জানান - "<i>Upadhyaya, who was posted in the artillery department while working with the Indian military, is suspected to have guided the arrested accused on how to assemble a bomb and procure RDX" </i> (Retd Major trained Sadhvi in bomb-making: Prosecutor, Times of India, October 30, 2008).</div><div><br></div><div>বেশ কিছু প্রেস রিপোর্ট অনুযায়ী রমেশ উপাধ্যায় ছিলেন অভিনব ভারতের অ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট, যখন হিমানী সাভারকর ছিলেন প্রেসিডেন্ট। তবে গোটা গ্রুপের আসল কর্ণধার ছিলেন সেনাবাহিনীর আরেক সদস্য - লেফটেন্যান্ট কর্ণেল শ্রীকান্ত পুরোহিত - রমেশ উপাধ্যায় নাসিকে লিয়াজঁ অফিসার হিসেবে পোস্টেড থাকাকালীন পুরোহিতই তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন। পুরোহিত এবং উপাধ্যায় একসাথেই কমবয়সী সদস্যদের মিলিটারি ট্রেনিং দিতেন, অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবস্থাও করতেন। ২০০৪-০৫ সালে জম্মুকাশ্মীরে পোস্টেড থাকাকালীন পুরোহিত ডকুমেন্ট জাল করতে শুরু করেছিলেন - অন্যদের অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যে। ২০০৮ সালের জুলাই নাগাদ মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারিতে পোস্টেড হয়ে আসার পর লাগাতার বেশ কিছু ট্রেনিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেন হিন্দুত্বের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে। এর মধ্যে অধিকাংশ ক্যাম্পই হত নাসিকের ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলে - সেখানে যদিও পুরোহিতই প্রথম নয়, বরং ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল অবধি রিটায়ার্ড মেজর পিবি কুলকার্নি এই ক্যাম্পগুলো চালাতেন। মেজর কুলকার্নির সাথে আরএসএস এর সম্পর্ক সেই ১৯৩৫ সাল থেকেই। আর শুধু অভিনব ভারত নয়, তার আগে ২০০১ সালেও বজরং দল ওই একই ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলে অস্ত্রশিক্ষার ক্যাম্প করেছে - যেখানে ১০-১৫ বছরের ছেলেদের আগ্নেয়াস্ত্রের শিক্ষা দেওয়া হত।</div><div><br></div><div>মালেগাঁও ব্লাস্টের বিভিন্ন নথি, টেস্টিমোনিয়াল ঘেঁটে বোঝা যায় যে শুধু এই দুজন ন'ন, আরো বেশ কয়েকজন আর্মি অফিসার অভিনব ভারতের সাথে জড়িয়েছিলেন। কর্ণেল পুরোহিত মেইন ইনফ্লুয়েন্সার/রিক্রুটার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন আরো বেশি বেশি করে সেনাবাহিনীর লোককে হিন্দুত্বের ছাতার তলায় টেনে আনার। শুধু সেনাবাহিনী নয়, সংঘ পরিবারের অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে থাকা চরমপন্থী লোকেদেরও টেনে আনার…</div><div><br></div><div>"<i>The interrogation of Purohit establishes him as a man with forthright views on Hindu extremism. He was extremely frank in expressing his concerns about Hindus getting killed by jehadi terror groups and strongly felt that something had to be done about it. He had shared such views – that Hindus needed to retaliate – on several occasions with his colleagues in the Army. Of course, none of these colleagues realised the seriousness of his opinion or that it would lead him to plot real revenge attacks.[...] Purohit was the key man behind Abhinav Bharat, building its cadre by drawing ‘extremist’ elements from VHP [Vishwa Hindu Parishad] and RSS. An expert at liaisoning, Purohit had a unique sixth sense in identifying radical members of the right-wing outfits like VHP and then motivating them to join Abhinav Bharat.</i>" ["I masterminded Malegaon Blast: Lt. Col", The Economic Times, 7 November 2008]</div><div><br></div><div>হিন্দুত্বের ইতিহাস ফলো করলে দেখবেন - সাভারকর নিজেও আরএসএসের তথাকথিত নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ নাথুরাম গডসেকে টেনে এনেছিলেন নিজের হিন্দু রাষ্ট্র দলে - কারণ আরএসএস "বিশ্বাসঘাতক" গান্ধী আর মুসলমানদের বিরুদ্ধে "অ্যাকশন" নিতে দেরী করছিলো। পরের ঘটনা তো সবাই জানে…</div><div><br></div><div>বাকি রইলো মালেগাঁও ব্লাস্টে জড়িত তৃতীয় গোষ্ঠী - মানে সংঘ পরিবারের কর্মী/সদস্য…</div><div><br></div><div>রমেশ উপাধ্যায় নিজেই একসময় মুম্বইয়ে বিজেপির এক্স-সার্ভিসমেন সেল এর মাথায় ছিলেন। মালেগাঁও বিস্ফোরণের তদন্তে প্রথম গ্রেপ্তার হ'ন সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর - ইন্দোর এবং উজ্জয়িনীর অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের নেত্রী ছিলেন ১৯৯৭ সাল অবধি - এবিভিপির জাতীয় কর্মসমিতিতে যাওয়ার আগে অবধি। সমীর কুলকার্নি - যিনি অ্যাপারেন্টলি মধ্যপ্রদেশে অভিনব ভারত শুরু করেছিলেন (হিমানী সাভারকরের ভাষ্য অনুযায়ী) - ছিলেন আরএসএস এর সক্রিয় কর্মী। তবে সংঘ পরিবারের তথাকথিত "নিষ্ক্রিয়তা" দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিনব ভারতে আসার সেরা উদাহরণ বিএল শর্মা - যিনি ১৯৪০ থেকে আরএসএস এর সাথে যুক্ত ছিলেন, আর রামজন্মভূমি আন্দোলনের সময় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হয়ে মাঠে নামেন। ১৯৯১ আর ১৯৯৬ সালে বিজেপির টিকিটে লোকসভা ভোটে জেতার পরে ১৯৯৭ সালে সাংসদ পদ আর বিজেপি থেকে বেরিয়ে এসে পুরোদস্তুর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কাজে জড়িয়ে পড়েন রাজ্য সম্পাদক হিসেবে। "অখন্ড ভারত" নিয়ে এগোতে বিজেপির "অনীহা" দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে লালকৃষ্ণ আদবানিকে একটা কড়া চিঠি লিখেছিলেন সেই সময়ে যেটা তিনি ২৬শে জানুয়ারির ফরিদাবাদ মিটিঙে পড়ে শোনান…</div><div><br></div><div>"<i>The country should be taken over by the Army. How far is it feasible? It’s been a year that I have sent some three lakh letters, distributed 20,000 maps of Akhand Bharat on 26 January, but these Brahmins and traders have never done anything and neither will they do. I do not talk of casteism. It’s just that they don’t have the potential; they don’t have the aptitude for this kind of feelings. Ultimately they do things that are feasible. One Chanakya comes up and becomes a moderate ruler. Even if people have the capability it is only when a seed is planted in the mind [that] it can make huge differences. It is not that physical power is the only way to make a difference but to awaken people mentally. I believe that you have [to] set fire in the society, at least a spark.</i>"</div><div><br></div><div>যদিও এই চিঠি লেখা সত্ত্বেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনুরোধে ফের ২০০৯ সালে শর্মা বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন…মানে তথাকথিত "নিষ্ক্রিয়তা" নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও সংঘ পরিবারের মধ্যে থেকেই এঁরা প্রত্যেকে অভিনব ভারতের পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন ক্যাপাসিটিতে।</div><div><br></div><div>মালেগাঁও ব্লাস্ট সেই গোটা পরিকল্পনার একটা ছোট্ট অংশ। পুরো পরিকল্পনা কী ছিলো? লিখবো আস্তে আস্তে।</div><div><br></div><div>#ShadowArmiesOfHindutva</div><div><br></div><div>(১) Shadow Armies - Fringe Organisations and Foot Soldiers of Hindutva, Dhirendra Kr. Jha</div><div>(২) Abhinav Bharat, the Malegao Blast and Hindu Nationalism: Resisting and Emulating Islamist Terrorism, Christophe Jaffrelot, Economic & Political Weekly, Vol. 45, Issue No. 36, 04 Sep, 2010</div><div>(৩) Chargesheets and Miscellaneous Documents regarding the Malegaon Case</div><div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg40N7idLoqq57XsIpznBK0rusm8rw4dYaNU3g13L5xsf6NY7spQ5vYWKiyUiYRgE-lrLwWErLB-74F1moSRrtEf_HFHA_oedKXs7dR3YnTmiDBCaJpgU1Ji73TOMBT4Aodyt2dng/s1600/1659966089111394-0.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg40N7idLoqq57XsIpznBK0rusm8rw4dYaNU3g13L5xsf6NY7spQ5vYWKiyUiYRgE-lrLwWErLB-74F1moSRrtEf_HFHA_oedKXs7dR3YnTmiDBCaJpgU1Ji73TOMBT4Aodyt2dng/s1600/1659966089111394-0.png" width="400">
</a>
</div><br></div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-32095085794048331592022-08-08T14:38:00.001+01:002022-08-08T14:38:18.008+01:00#ShadowArmiesOfHindutva - Part 5<div>শুরুটা ধীরেন্দ্র কুমার ঝা-এর ভাষাতেই করি...</div><div><br></div><div>১২ই অক্টোবর ২০১৫ - রাতভর বৃষ্টির পর সেদিন সকালে পুণের বৈকুণ্ঠ শ্মশানঘাটের ইলেকট্রিক চুল্লিতে হিমানী সাভারকরের দেহ যখন তোলা হয়, হিমানীর ছেলে সাত্যকি সাভারকরের সঙ্গে শ্মশানে দাঁড়িয়েছিলো অভিনব ভারতের সমস্ত সদস্য। হিমানীর দেহ ছাই হয়ে যাওয়ার পর সকলে যখন সাত্যকির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে, তখন একটাই কথা তারা প্রত্যেকে জানিয়েছিলো - হিমানীর মৃত্যুর সাথেই ছিঁড়ে গেছে তাদের সকলের "আদর্শ" দুই ঐতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গে একমাত্র জীবন্ত যোগসূত্রটা। </div><div><br></div><div>কে এই হিমানী সাভারকর?</div><div><br></div><div>একদিকে গোপাল গডসে, অর্থাৎ নাথুরাম গডসের ভাইয়ের মেয়ে, অন্যদিকে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ভাই নারায়ণ সাভারকরের ছেলের বউ - হিমানী সাভারকর - একই সাথে সংঘ পরিবারের দুই সুপ্রীম নেতার লেগ্যাসি বহন করতেন। পেশায় ছিলেন আর্কিটেক্ট - ১৯৭৪ সালে থেকে ২০০০ সাল অবধি নিজের পেশাতেই নিযুক্ত ছিলেন মুম্বইয়ে। ২০০০ সালে আর্কিটেক্টের কাজ ছেড়ে পুণে চলে আসেন সাভারকরের সমস্ত লেখাপত্রের একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে সেইসব দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে। গডসে এবং সাভারকর পরিবারের যৌথ লেগ্যাসিই তাঁকে নিয়ে আসে অভিনব ভারতের ছাতার তলায়। ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণে যখন অভিনব ভারতের সদস্যদের জড়িয়ে থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, হিমানী তখন প্রকাশ্যে অভিনব ভারতকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে বলেছিলেন - "বুলেটের বদলা বুলেট যদি হয়, তাহলে বিস্ফোরণের বদলা বিস্ফোরণ কেন হবে না?" [‘If we can have bullet for bullet, why not blast for blast?’, Outlook , 17 November 2008.]</div><div><br></div><div>অভিনব ভারতের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটা একটু ধোঁয়াশায় ঢাকা। সংগঠনের নামটা অবশ্যই ১৯০৫ সালে ফার্গুসন কলেজে পড়ার সময় সাভারকরের তৈরী গুপ্ত সংগঠনের নামে - সেই সময়ে সাভারকর এই সংগঠনের নাম রেখেছিলেন গাইসেপ্পে মাজিনির "ইয়াং ইটালি" অনুপ্রেরণায়। প্রথমবার গ্রেপ্তার হওয়ার আগে অবধি সাভারকর বাস্তবিকই সশস্ত্র বিপ্লবে আস্থা রেখেছিলেন - সেই আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই অভিনব ভারতের সদস্যদের হাতে একাধিক ব্রিটিশ অফিসার খুনও হয়েছিলেন - ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে। ব্রিটিশ শাসন এবং ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে সাভারকরের মনোভাব সম্পূর্ণ বদলে যায় গ্রেপ্তারির পর, এবং আবারও ইতিহাস সাক্ষী - যে আরএসএস বা হিন্দু মহাসভা পরবর্তীকালে ব্রিটিশের সাথে সহযোগিতার রাস্তাতেই হেঁটেছে। সাভারকরের তৈরী সেই অভিনব ভারত বন্ধ হয়ে যায় ১৯৫২ সালে। </div><div><br></div><div>২০০৮ সালে, মালেগাঁও বিস্ফোরণের পর আউটলুকের ওই সাক্ষাৎকারে হিমানী জানান যে ১৯৫২ সালের আরো পঞ্চাশ বছরেরও কিছু পরে নতুনভাবে অভিনব ভারত শুরু করেছিলেন সমীর কুলকার্নি, আর তিনিই হিমানীকে অনুরোধ করেছিলেন সংগঠনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে - হিমানী সেই সময়ে ছিলেন হিন্দু মহাসভার সভাপতি। ২০০৮ সালে পুলিশের কাছে হিমানী জানান যে ওই বছরেরই এপ্রিল মাসে ভোপালে একটা মিটিঙে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। হিমানীর জবানবন্দী অনুযায়ী সমীর কুলকার্নি মূলতঃ মধ্যপ্রদেশেই ভিতরেই চেষ্টা করছিলেন অভিনব ভারতকে তৈরী করার। যে মিটিঙে তাঁকে সভাপতি স্থির করা হয়, সেই মিটিঙে উপস্থিত ছিলেন আরও কয়েকজন - স্বামী অমৃতানন্দ দেবতীর্থ (যাঁকে আরও অন্য কিছু নামে জানা যায় - সুধাকর দ্বিবেদী, সুধাকর ধর, আর দয়ানন্দ পাণ্ডে যার মধ্যে অন্যতম, এবং হিমানী যাঁকে জম্মু কাশ্মীর শঙ্করাচার্য্য বলে ডাকতেন), সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, মেজর রমেশ উপাধ্যায়, সুধাকর চতুর্বেদী, এবং কর্ণেল শ্রীকান্ত প্রসাদ পুরোহিত - এই শেষের জনকে হিমানী অন্ততঃ দু বছর আগে থেকেই চিনতেন, পারিবারিক সম্পর্কের কারণে।</div><div><br></div><div>“<i>I know colonel Purohit personally, for over two years but our families have ties that go back a long time. But, he has never ever spoken to me about the Abhinav Bharat Trust – either that he founded it or about its work. Similarly, I do not know if he as involved with the Abhinav Bharat Sangathan in Madhya Pradesh.</i>” [Interrogatories: 8, Malegaon Blast Documents]</div><div><br></div><div>তবে, মালেগাঁও বিস্ফোরণের অন্যান্য টেস্টিমোনিয়াল থেকে মনে হয়ে অভিনব ভারতের আসল সংগঠক ছিলেন শ্রীকান্ত পুরোহিত নিজেই। তিনিই ২০০৬ সালের জুন মাসে ষোলোজন লোককে নিয়ে রায়গড়ে ছত্রপতি শিবাজীর দূর্গে অভিনব ভারত ট্রাস্টের সূচনা করেছিলেন। পুলিশের জেরায় সেই ষোলোজনের একজন জানান - “<i>We took the blessings of Shivaji Maharaj’s throne and decided to name the trust Abhinav Bharat and prayed for its success</i>” [Interrogatories: 1, Malegaon Blast Documents]। এর পরের বৈঠক হয় ২০০৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর - যেদিন উপস্থিত সদস্যরা একসাথে বিজয়দিবস (বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়) সেলিব্রেট করেন। যদিও, ট্রাস্টের প্রথম অফিশিয়াল মিটিং হয় ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, পুণের কারভে রোডের সন্ত কৃপা অ্যাপার্টমেন্টের এক ঠিকানায় - ট্রাস্টের অফিশিয়াল ঠিকানাও ছিলো এখানেই, ট্রাস্টের সদস্য এবং ট্রেজারার অজয় রাহিরকরের বাড়িতে। </div><div><br></div><div>পরের মিটিং সম্ভবত হয় ২০০৭-এর জুন মাসে, নাসিকে, যেখানে পরশুরাম সাইখেদকর থিয়েটারে ট্রাস্টের উদ্বোধন হয়। কর্ণেল পুরোহিত মুম্বই থেকে বেশ কয়েকজন লোককে নিয়ে সেখানে গেছিলেন...গেছিলেন দেওলালি ক্যাম্পেও - যেখানে অমৃতানন্দ দেবতীর্থ তাঁর শিষ্যদের "দর্শন" দিচ্ছিলেন সেই সময়েই। পুরোহিতের সঙ্গে যাঁরা গিয়েছিলেন দেওলালিতে, তাঁদের একজন ১৪ই ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে পুলিশের কাছে জানান যে এই মিটিঙেই কর্ণেল পুরোহিত দেশের অবস্থা সম্পর্কে অনেক কথা বলেন - বলেন দেশে যা হচ্ছে তার অনেক কিছুই ভুল, এবং সেই ভুলগুলো শুধরোতে হবে - তার জন্যে একতা জরুরী। শঙ্করাচার্য্য, মানে অমৃতানন্দ বলেন - হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করতে হবে, হিন্দু ধর্ম বিপদে (সেই বিখ্যাত "হিন্দু খতরে মে হ্যাঁয়") - আমাদের দায়িত্ব হিন্দুধর্মকে রক্ষা করা। সেই জন্যে দেশের সব হিন্দুকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে…শঙ্করাচার্য্যের বক্তৃতার সময়েই পুরোহিত টেবিলে নিজের ল্যাপটপ রেখে চালু করেন মিটিং রেকর্ড করার উদ্দেশ্যে। পুরোহিত নিজে জোরগলায় দাবী করেন যে মুসলমানদের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে দরকারে বোমা বিস্ফোরণ অবধি যেতে হবে - যদিও কয়েকজন এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। একজন সদস্য পুরোহিতকে বলেন এই ধরণের মিটিঙে যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক হতে পারে, সেখানে বোমা ইত্যাদিতে উৎসাহী কাউকে না ডাকতে, এবং তিনি নিজে বোমা বিস্ফোরণ, দাঙ্গা বা অন্যান্য হিংসাত্মক পন্থার বিপক্ষে - অভিনব ভারত ট্রাস্ট সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার জন্যে তৈরী হয়নি, ইত্যাদি... [Interrogatories: 2, Malegaon Blast Documents]। </div><div><br></div><div>সেই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে দেওলালিতে আরও একটা বৈঠক বসে - আবারও মুম্বই থেকে আসা বেশ কিছু লোক, এবং কর্ণেল পুরোহিত ছিলেন সেখানে। এইবারে আরেকজন নতুন লোক ছিলেন - পূর্ব দিল্লীর সাংসদ, ভারতীয় জনতা পার্টির বিএল শর্মা। শর্মার সঙ্গে অমৃতানন্দর পরিচয় আগেই ছিলো - ২০০৪ সালে, নিজের লোকসভা কেন্দ্র ঘোরার সময়ে - সেই কেন্দ্রের কাশ্মীরি পণ্ডিত উদ্বাস্তুদের মধ্যে অমৃতানন্দ বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। ২৬শে ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে শর্মা জানান যে সেই মিটিঙে অমৃতানন্দ নিজের ল্যাপটপে ইসলামিক উগ্রপন্থীদের নানান ভয়ানক কাজের ভিডিও দেখিয়েছিলেন। ২০০৭ সালের নাসিকের বৈঠকে অমৃতানন্দই শর্মাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেদিন তিনি অখণ্ড ভারতের আইডিয়ার কথা বলেন - কীভাবে অভিনব ভারতের হাত ধরে ভারতবর্ষ হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে উঠবে... </div><div><br></div><div>"<i>There he spoke about his idea of Akhand Bharat and of making India a Hindu Rashtra and he also talked about the Abhinav Bharat organisation. He told us that Prasad Purohit was trying to achieve Akhand Bharat through his Abhinav Bharat organisation. We were told that Sudhakar Chaturvedi was working full-time for the organisation. Our meeting lasted one hour during which we discussed the rape of Hindu women in J and K, their murder, etc…. I returned to Delhi after the meeting</i> [Interrogatories: 6, Malegaon Blast Documents].</div><div><br></div><div>পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, মালেগাঁও বিস্ফোরণের গোটা ছক এবং তার খুঁটিনাটি তৈরী হয়েছিলো ২০০৮ সালে হওয়া চারটে মিটিঙে [Chargesheets and Miscellaneous Documents – Malegaon Case: 61]। </div><div><br></div><div>২০০৮ সালের ২৫-২৭শে জানুয়ারি প্রথম মিটিঙে কর্ণেল পুরোহিত, মেজর উপাধ্যায়, সমীর কুলকার্নি, সুধাকর চতুর্বেদী এবং অমৃতানন্দ দেবতীর্থ দেখা করেন ফরিদাবাদে "সেভ আওয়ার সোল" সংস্থার এক বাড়িতে যেখানে অমৃতানন্দ সেই সময়ে থাকতেন। এই মিটিঙের একটা বড় অংশ ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলির ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় - ক্রিস্টফ জাফ্রেলোর আর্টিকলের সাথে। পুলিশ তদন্তের সময়ে অমৃতানন্দের রেকর্ড করা এই মিটিঙের পুরো ভিডিও খুঁজে পেয়েছিলো - সেই ভিডিও থেকে জানা যায় যে আরও তিনজন ব্যক্তি এই মিটিঙে উপস্থিত ছিলেন - সাংসদ বিএল শর্মা, অ্যাপোলো হাসপাতালের ডঃ আরপি সিং, আর কর্ণেল আদিত্য ধর। ফরিদাবাদের এই মিটিঙে আরপি সিং গল্পচ্ছলে বলেছিলেন যে তিনি কীভাবে মকবুল ফিদা হুসেনের নামে মামলা করেছিলেন, এমনকি জামিয়া মিলিয়ায় এক অনুষ্ঠানে যেখানে হুসেনের বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিলো, সেখানেও উনি পৌঁছে গেছিলেন ১৫ লিটার পেট্রল নিয়ে - হুসেনকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে - যদিও সুযোগ পাননি, কারণ অসুস্থতার কারণে হুসেন সেই অনুষ্ঠানে যাননি...</div><div><br></div><div>এপ্রিলের ১১-১২ তারিখে এঁরাই (মানে, মূল পাঁচজন - পুরোহিত, উপাধ্যায়, কুলকার্নি, চতুর্বেদী আর অমৃতানন্দ) ভোপালে দেখা করেন প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের সঙ্গে, এবং মালেগাঁওয়ের কোনও একটা জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুসলমানদের ওপর বদলা নেওয়ার কথা স্থির করেন। পুরোহিত দায়িত্ব নেন বিস্ফোরক যোগাড়ের, প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর দায়িত্ব নেন বিস্ফোরণ ঘটানোর লোক যোগান দেওয়ার...এবং এই মিটিঙে উপস্থিত প্রত্যেকে একযোগে এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। পুলিশ এও প্রমাণ করেছিলো যে বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্তরা ছাড়া অন্য কয়েকজনও এই মিটিঙে ছিলেন - এমনকি হিমানী সাভারকরও - তাঁর নিজের জবানবন্দী অনুযায়ীই।</div><div><br></div><div>এরপর, ১১ই জুনের পরবর্তী মিটিঙে সাধ্বী প্রজ্ঞা তাঁর সঙ্গে আনেন আরও দুজন লোককে - রামচন্দ্র কালসাংরা, আর সন্দীপ ডাঙ্গে - বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা যারা মালেগাঁওয়ে বোমা রাখার আসল কাজটা করবে - এইভাবেই এদের পরিচয় করিয়ে দেন অমৃতানন্দের সঙ্গে [Chargesheets and Miscellaneous Documents – Malegaon Case: 65]।</div><div><br></div><div>৩রা আগস্ট উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দিরের ধর্মশালায় হওয়া এক মিটিঙে কর্ণেল পুরোহিতকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কালসাংরা আর ডাঙ্গের জন্যে আরডিএক্স যোগাড় করার। পুরোহিতের নির্দেশে তাঁর সহযোগী রাকেশ ধাওরে (পুরোহিতের ভাষায় “a trained expert in committing explosions and assembling improvised explosive devices”), আগস্টের ৯/১০ তারিখে পুণেতে কালসাংরা আর ডাঙ্গের সঙ্গে দেখা করে তাদের হাতে বিস্ফোরক তুলে দেন [Chargesheets and Miscellaneous Documents – Malegaon Case: 66]।</div><div><br></div><div>শুরু হয় চূড়ান্ত প্রস্তুতি - যার ফল মালেগাঁও বিস্ফোরণ, এবং সেই বিস্ফোরণের তদন্তের সময়েই প্রথম সামনে আসে স্যাফ্রন টেরর বা হিন্দু উগ্রপন্থার কথা।</div><div><br></div><div>এরপর বিভিন্ন চরিত্রগুলোর সাথে পরিচয় করাবো একে একে, আর দেখাবো এর আগে বার দুয়েক হাইলাইট করে দেওয়া জাতিগত পরিচয়ের রেফারেন্স কেন আর কতটা জরুরী।</div><div><br></div><div>#ShadowArmiesOfHindutva</div><div><br></div><div>(১) Shadow Armies - Fringe Organisations and Foot Soldiers of Hindutva, Dhirendra Kr. Jha</div><div>(২) Abhinav Bharat, the Malegao Blast and Hindu Nationalism: Resisting and Emulating Islamist Terrorism, Christophe Jaffrelot, Economic & Political Weekly, Vol. 45, Issue No. 36, 04 Sep, 2010</div><div>(৩) Chargesheets and Miscellaneous Documents regarding the Malegaon Case</div><div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgVoM21UkqgoYGyeF0U2o9YOzqg4esLATQn9TeSjqdSKliP7RH1R70yhPyCBhw0NKOgvrMLQvX4bJLND6-rW-BYL_fIC-jG1vxGJuZqKWnxunL2m6Vmox1mfE7a7ugExsDXyMlmSA/s1600/1659965891618461-0.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgVoM21UkqgoYGyeF0U2o9YOzqg4esLATQn9TeSjqdSKliP7RH1R70yhPyCBhw0NKOgvrMLQvX4bJLND6-rW-BYL_fIC-jG1vxGJuZqKWnxunL2m6Vmox1mfE7a7ugExsDXyMlmSA/s1600/1659965891618461-0.png" width="400">
</a>
</div><br></div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-63253148405125990292022-08-08T14:36:00.001+01:002022-08-08T14:36:23.706+01:00#ShadowArmiesOfHindutva - Part 4<div>যে সিকোয়েন্সটা মাথায় রেখে লিখতে শুরু করেছিলাম - হিন্দুত্বের শ্যাডো আর্মি বা ছায়া সৈন্য হিসেবে তথাকথিত ফ্রিঞ্জ গোষ্ঠীগুলোর কথা - সেইটা শুরু করি এবার। মুসলমানদের "ওরা" হিসেবে দেখতে শুরু করার টাইমলাইন, মেইনস্ট্রীম হিন্দুত্বের শুরু, আর তার পিছনে নাৎসী আর ফ্যাসিস্টদের চিন্তাভাবনার অবদান, এমনকি এদের মধ্যে যোগাযোগের কথা আগেই বলেছি...</div><div><br></div><div>এবার একটু রিসেন্ট সময়ে ফিরি।</div><div><br></div><div>মালেগাঁও বিস্ফোরণ, অভিনব ভারত, আর ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের হিন্দু জাতীয়তাবাদ...</div><div><br></div><div>- শুরুর কথা -</div><div><br></div><div>একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছিলো ১১ই সেপ্টেম্বরের টুইন টাওয়ার আক্রমণ দিয়ে - ২০০১ সালে। আমি তখন ওয়াশিংটন ডিসির কাছে চাকরি করি, থাকি মেরিল্যান্ডে। কাজেই সেই দিনের ঘটনাক্রম, তার পরের দিনগুলো - যখন মানুষজনের চোখে একই সাথে আতঙ্ক আর আমার মত গায়ের চামড়ার লোকেদের দিকে সন্দেহভরা দৃষ্টি - দুইই মনে আছে।</div><div><br></div><div>শুরুটা আমেরিকা দিয়ে হলেও ভারতেও আঘাত কম আসেনি। ঘটনার সংখ্যা দিয়ে হিসেব করলে ভারত উগ্র ইসলামিক মৌলবাদের হাতে অন্যতম আক্রান্ত দেশ হয়ে উঠেছিলো। ২০০৮ সালের নভেম্বর অবধি প্রায়সই এখানে ওখানে বিস্ফোরণ - কখনো বড় শহরে, কখনো মাঝারি শহরে - মানুষ মরেছে কখনো হয়তো দশবারোজন, কখনো শখানেক বা আরো বেশি। ২০০১ থেকে ২০০৮ অবধি মৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় আটশোর কাছাকাছি।</div><div><br></div><div>২০০৬/০৭ অবধি এরকম সমস্ত ঘটনারই দায় সরকারি তরফে চাপানো হত প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর। অফিশিয়াল ভাষ্য বা সাধারণ মানুষের ধারণায় ছিলো যে এদেশের নাগরিকদের হাতে এরকম ঘটনা ঘটে না, দোষীরা প্রধাণতঃ পাকিস্তান বা বাংলাদেশের নাগরিক। যদিও তদন্তে দেখা গেছে ভারতীয় মুসলমানদের একাংশও কখনো অযোধ্যা বা কখনো গুজরাট দাঙ্গার বদলা নিতে এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে - এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা শুধু সাহায্য করা বা খবরাখবর দেওয়ার মধ্যে আটকে থাকছে না। ২০০৮ সালে জয়পুর, আহমেদাবাদ আর দিল্লীতে বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সেখানে সম্ভবতঃ Students Islamic Movement of India (SIMI) থেকে গজিয়ে ওঠা ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন জড়িত।</div><div><br></div><div>যেটা প্রথমে কেউই বুঝতে পারেনি সেটা হল এরই পালটা হিসেবে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নতুন হিন্দু মিলিশিয়া তৈরী হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে তারা পুরনো প্রায়মৃত সংগঠনকে আবার অ্যাক্টিভ করে তুলেছে, আর উগ্র ইসলামিক জঙ্গীদের কাজের বদলা নিতে টার্গেট করেছে সাধারণ ভারতীয় মুসলমানদের। </div><div><br></div><div>হ্যাঁ, এখানে শুরুতে "বুঝতে পারেনি" কথাটা লিখলাম ঠিকই - হয়তো সত্যিই বুঝতে পারেনি। যদিও কখনো কখনো সন্দেহ হয় যে যাদের বোঝার দরকার ছিলো তারা হয় বুঝতে চায়নি, বা তাদের বুঝতে দেওয়া হয়নি। কারণ, যারা এই কাজে জড়িত প্রায় সকলেই কোনো না কোনোভাবে সংঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত, আর সংঘ পরিবারের হাতে তিরিশের দশক থেকে ঘটে চলা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কথা আগেই লিখেছি। কাজেই, সন্দেহটা সত্যি হলে আশ্চর্য্যের কিছু থাকবে না।</div><div><br></div><div>২০০৮ সালে, রমজানের ঠিক পরেই সেপ্টেম্বর মাসে মালেগাঁও শহরে এক মসজিদের সামনে ঘটা বিস্ফোরণে মারা যায় ছ'জন লোক। সেই তদন্তের সময়ে হিন্দুত্ববাদীদের এই পুরো পরিকল্পনা প্রথম সামনে আসে - বিভিন্ন জায়গায় সার্চের সময় পাওয়া জিনিসপত্র আর ডকুমেন্ট থেকে জানা যায় যে মালেগাঁও বিস্ফোরণের পিছনে দায়ী অভিনব ভারত বলে একটা "নতুন" সংগঠন - যাদের লক্ষ্য ইসলামিক উগ্রপন্থার জবাব তাদেরই আদলে হিন্দু উগ্রপন্থা দিয়েই দেওয়া - টিট ফর ট্যাট, যে উগ্রপন্থাকে ধিক্কার জানানোর কথা, তারই নকল করে।</div><div><br></div><div>মালেগাঁও বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে হেমন্ত কারকারের তৈরী রিপোর্ট থেকে এই ঘটনার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়...এবং, হিন্দু জাতীয়তাবাদী মহলের ভিতরকার ডিসকোর্সের একটা আঁচ পাওয়া যায় বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে কথোপকথনের রেকর্ডিং (এবং ট্রানস্ক্রিপ্ট) থেকে - ২০০৭-০৮ এর মধ্যে হওয়া বিভিন্ন গোপন মিটিংএর।</div><div><br></div><div>এর পর কয়েকটা পর্বে বলবো মালেগাঁও বিস্ফোরণের পিছনের গোটা গল্পটা।</div><div><br></div><div>#ShadowArmiesOfHindutva</div><div><br></div><div>(১) Shadow Armies - Fringe Organisations and Foot Soldiers of Hindutva, Dhirendra Kr. Jha</div><div>(২) Abhinav Bharat, the Malegao Blast and Hindu Nationalism: Resisting and Emulating Islamist Terrorism, Christophe Jaffrelot, Economic & Political Weekly, Vol. 45, Issue No. 36, 04 Sep, 2010</div><div>(৩) Chargesheets and Miscellaneous Documents regarding the Malegaon Case</div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-5052664630126570732022-08-08T14:35:00.001+01:002022-08-08T14:35:07.175+01:00#ShadowArmiesOfHindutva - Part 3<div>আইআইটি বম্বের অধ্যাপক এক বন্ধুর লেখা পড়ছিলাম - কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে সরকারি চিঠি এসেছে সকলকে পরিবার, বন্ধুবান্ধব সকলকে নিয়ে একটা সিরিয়াল দেখতে বলে। চিঠিতে লেখা হয়েছে ছাত্রদেরও বলতে সিরিয়ালটা দেখতে, আর তারপর তাদের নিয়ে একটা ক্যুইজ করতে, যাতে ছাত্ররা কী "শিখেছে" জানা যায়। সিরিয়ালটা ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে #AzadiKaAmritMahotsav উপলক্ষ্যে, আর সেখানে পরাধীন ভারতের টাইমলাইন ধরা হয়েছে ১৫০০ সাল থেকে - মানে মোটামুটি মুঘল সাম্রাজ্যের শুরু (যদিও সেটা সঠিকভাবে দেখলে ১৫২৬ খ্রীষ্টাব্দ) থেকে৷ যদি মুসলমান শাসনকেই পরাধীন ধরা হয়, তাহলে মুঘল শাসনের আগের প্রায় তিনশো বছরকে কোন অঙ্কে বাদ রাখা হল সেটা অবশ্য বোঝা যায় না - হতে পারে তুঘলকের সাথে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মানসিকতার মিল আছে বলেই হয়তো...</div><div><br></div><div>তবে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, অধ্যাপক বন্ধুও লিখেছেন - মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকে "ওরা" হিসেবে চিহ্নিত করার অফিশিয়াল প্রক্রিয়ার শুরু এখান থেকেই। এতদিন বিজেপি মুখে বলতো, তথাকথিত "ফ্রিঞ্জ" গোষ্ঠীগুলো কুপিয়ে, পুড়িয়ে, পিটিয়ে করে দেখাত। এইবার তার "ফর্মালাইজেশন" শুরু হল। যদিও, এই তত্ত্বের শুরু বহু আগে। আজকে সেইটাই একবার ফিরে দেখি - এই তত্ত্বের সাথে ফ্যাসিস্ট আর নাৎসী আদর্শের ঠিক কতটা যোগাযোগ ছিলো।</div><div><br></div><div>************************************************</div><div>তিরিশের দশকের শেষার্ধ - মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার বছর দুয়েক আগের কথা…</div><div><br></div><div>ছাড়া পাওয়ার পরেই, ১৯৩৭ সালে হিন্দু মহাসভার প্রেসিডেন্ট হ'ন সাভারকর, আর এই পদে ছিলেন ১৯৪২ অবধি। যদিও সাধারণভাবে বলা হয় যে আরএসএস আর হিন্দু মহাসভার মধ্যে সম্পর্ক বিশেষ ভালো ছিলো না, আর সাভারকরের আমলেই এই দুই সংগঠনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় - তবে ঘটনাপ্রবাহ দেখে মনে হয় সেটা সম্পূর্ণ গল্পকথা। এরকম ছাড়াছাড়ি তো হয়ইনি, বরং দিব্যি যোগাযোগ বহাল ছিলো। আরএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ার নিজেই হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন ১৯২৬ থেকে ১৯৩১ অবধি, আর সাভারকরের জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার উৎসবে আরএসএস সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত ছিলো। সেই সময়ে আরএসএস আর হিন্দু মহাসভার বেশ কিছু সভায় সাভারকর বক্তৃতা দেন - যার মূল পয়েন্টগুলো ছিলো তৎকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আর ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে।</div><div><br></div><div>১৯৩৮ সালের পয়লা আগস্ট, পুণের এক সভায় (প্রায় ২০০০০ লোকের উপস্থিতিতে) সাভারকর জার্মানি আর ইতালিতে নাৎসী আর ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থনে বক্তৃতা দেন। আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিলেন জওহরলাল নেহরু।</div><div><br></div><div>"<i>Who are we to dictate to Germany, Japan or Russia or Italy to choose a particular form of policy of government simply because we woo it out of academical attraction? Surely Hitler knows better than Pandit Nehru does what suits Germany best. The very fact that Germany or Italy has so wonderfully recovered and grown so powerful as never before at the touch of Nazi or Fascist magical wand is enough to prove that those political “isms” were the most congenial tonics their health demanded.</i></div><div><i><br></i></div><div><i>India may choose or reject particular form of government, in accordance with her political requirements. But Pandit went out of his way when he took sides in the name of all Indians against Germany or Italy. Pandit Nehru might claim to express the Congress section in India at the most. But it should be made clear to the German, Italian, or Japanese public that crores of Hindu Sanghatanists in India whom neither Pandit Nehru nor the Congress represents, cherish no ill-will towards Germany or Italy or Japan or any other country in the world simply because they had chosen a form of government or constitutional policy which they though (sic) suited best and contributed most to their national solidarity and strength.</i>”</div><div><br></div><div>এই পুরো বক্তৃতা ছাপা হয়েছিলো হিন্দু মহাসভার অফিশিয়াল প্রেস নোটে। </div><div><br></div><div>ততদিনে হিটলার অস্ট্রিয়া আর চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণ করে বসেছেন - অস্ট্রিয়া আর সুদেটেনল্যান্ডকে জার্মানির সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার জন্যে। হিটলারের দাবী অনুযায়ী তা ছিলো সুদেটেন জার্মানদের ইচ্ছাকে সম্মান করা। একই সভায় সাভারকর এই আগ্রাসনকেও সমর্থন করেন - </div><div><br></div><div>"<i>...as far as the Czechoslovakia question was concerned the Hindu Sanghatanists in India hold that Germany was perfectly justified in uniting the Austrian and Sudeten Germans under the German flag. Democracy itself demanded that the will of the people must prevail in choosing their own government. Germany demanded plebiscite, the Germans under the Czechs wanted to join their kith and kin in Germany. It was the Czechs who were acting against the principle of democracy in holding the Germans under a foreign sway against their will...Now that Germany is strong why should she not strike to unite all Germans and consolidate them into a Pan-German state and realise the political dream which generations of German people cherished.</i>"</div><div><br></div><div>হিন্দু মহাসভার এই প্রেস নোট নাৎসী আর ফ্যাস্টিস্ট শক্তির প্রতি সাভারকরের আকর্ষণকেই প্রমাণ করে - পরবর্তীকালে যেটা আন্তর্জাতিক অবস্থা সম্পর্কে হিন্দু মহাসভার নিজস্ব স্ট্যান্ড হিসেবেই পরিচিতি পাবে। খানিকটা নেহরু যেভাবে বন্ধু ও শত্রু বেছে নিয়েছিলেন - সেরকমই - শুধু দুজনের বন্ধু আর শত্রু ছিলো উলটো। সুদেটেনল্যান্ডে জার্মান সংখ্যালঘুদের সাথে তুলনা করে সেই বছরেরই অক্টোবর মাসে পুণেতে আর এক সমাবেশে সাভারকর বলেন যে ভারতে এরকম প্লেবিসাইট হলে মুসলমানরা মুসলমানদের সঙ্গে আর হিন্দুরা হিন্দুদের সঙ্গে থাকাকেই বেছে নেবে - "নেশন বিল্ডিং"-এর জন্যে কয়েক শতাব্দী ধরে একসঙ্গে থেকে আসা যথেষ্ট নয়, বরং "the common desire to form a nation was essential for the formation of a nation" - এই ছিলো সাভারকরের বক্তব্য। অবধারিতভাবে সাভারকরের এই গোটা বক্তৃতা নাৎসী মুখপত্র ভোয়েল্কলিশে বেয়োবাখটারে (Volkischer Beobachter) ছেপে বেরোয় ১৯৩৮ সালের নভেম্বর মাসে।</div><div><br></div><div>এই সময়টাই ক্রিটিকাল - হিন্দু আর মুসলমানদের "আমরা-ওরা" হিসেবে দেখতে শুরু করার। সাভারকর হিন্দু মহাসভার সভাপতি থাকাকালীন মুসলমানবিরোধী রেটরিক ক্রমশঃ বাড়তে থাকে, ক্রমশঃ আরো অপ্রীতিকর হতে শুরু করে। সাভারকর ক্রমাগত ইহুদীদের প্রতি নাৎসী জার্মানির মনোভাবকে, বরং বলা ভালো Hitler’s answer to the Jewish Question কে সমর্থন করতে শুরু করেন - প্রকাশ্যেই, বিভিন্ন বক্তৃতায়, আর ভারতের মুসলমানদের জন্যেও একই "দাওয়াই"-এর কথা বলে চলেন।</div><div><br></div><div>"<i>A Nation is formed by a majority living therein. What did the Jews do in Germany? They being in minority were driven out from Germany.</i>" (২১শে অক্টোবর, ১৯৩৮, মালেগাঁও)</div><div><br></div><div>অথবা</div><div><br></div><div>১৯৩৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আরএসএস কর্মীদের এক সভায় -</div><div><br></div><div>"<i>in Germany the movement of the Germans is the national movement but that of the Jews is a communal one</i>"</div><div><br></div><div>এই দ্বিতীয় বক্তব্যটার সময়টা বোঝা বিশেষ করে জরুরী, কারণ তার ঠিক কিছুদিন আগেই, নভেম্বর মাসের ৯-১০ তারিখে ঘটে গেছে নাইট অফ দ্য ব্রোকেন গ্লাস বা কৃস্ট্যালনাখট - সারা পৃথিবী জেনে গেছে ইহুদীদের সম্পর্কে নাৎসীদের মনোভাব, ভারতে নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেসও সেই কৃস্ট্যালনাখটের বিরোধিতায় মুখর হয়েছে।</div><div><br></div><div>১৯৩৯ সালের শেষের দিকে, হিন্দু মহাসভার একুশতম সম্মেলনে সাভারকর সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ভারতীয় মুসলমানদের সম্পর্কে তাঁর নিজের, এবং গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক বৃত্তের মনোভাব খুলে বলেন - ২৯শে ডিসেম্বরের বম্বে ক্রনিকলে যার সামারি বেরোয়।</div><div><br></div><div>"<i>...the Indian Muslims are on the whole more inclined to identify themselves and their interests with Muslims outside India than Hindus who live next door, like Jews in Germany."</i></div><div><br></div><div>খেয়াল করে দেখবেন - এই বক্তব্যের সাথে সাভারকরের "হিন্দুত্ব" বইয়ে লেখা নেশন আর নেশনহুড নিয়ে কথাবার্তার বিশেষ তফাত নেই। এবং সাভারকরের ক্ষেত্রে এই ধারণার সূত্রপাত তিরিশের দশকের অনেক আগেই - কারণ হিন্দুত্ব বইটা লেখা হয়েছিলো এর অন্ততঃ কুড়ি বছর আগে, আন্দামানে, যেটা লুকিয়ে ভারতে নিয়ে আসা হয়, এবং আন্ডারগ্রাউন্ডেই ছাপা হয় ১৯২৩ সালে।</div><div><br></div><div>"<i>their holyland is far off in Arabia or Palestine. Their mythology and godmen, ideas and heroes are not the children of this soil. Consequently their names and their outlook smack of foreign origin.</i>"</div><div><br></div><div>অর্থাৎ, সাভারকরের ক্ষেত্রে, মুসলমানদের "ওরা" হিসেবে চিহ্নিত করার শুরু অনেক আগেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই - যে সময়ে জার্মানিতেও ইহুদীদের দায়ী করা শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধে হারের জন্যে। তিরিশের দশকে, বলা ভালো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে, সাভারকর এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা বরং নিজেদের আদর্শ খুঁজে পেয়েছিলেন নাৎসী আর ফ্যাসিস্ট শক্তির মধ্যে। আর, এই মনোভাবকেই আরএসএস নিয়ে গিয়েছিলো আরও গ্রাসরুট লেভেলে - যার ছাপ পাওয়া যায় গোলওয়ালকরের "We, or Our Nationhood Defined" বইয়ে - সেই গোলওয়ালকর, যিনি আরএসএস-এর প্রধান হয়েছিলেন ১৯৩৯ সালে।</div><div><br></div><div>"<i>German race pride has now become the topic of the day. To keep up the purity of the Race and its culture, Germany shocked the world by her purging the country of the Semitic Races - the Jews. Race pride at its highest has been manifested here. Germany has also shown how well-nigh impossible it is for Races and cultures, having differences going to the root, to be assimilated into one united whole, a good lesson for us in Hindusthan to learn and profit by. Then the state language is German, and the foreign races living in the Country as minorities, though they have freedom to use their respective languages among themselves, must deal in the nation's language in their public life. The factor of religion, too, is not to be ignored.</i>"</div><div><br></div><div>এই ধ্যানধারণার সূত্রপাত একটা আইডিয়া থেকে - যেখানে ভাবা হয় হিন্দুত্ব (সাভারকরের ভাষায়) আসলে জাতি এবং রক্তের সঙ্গে সম্পর্কিত, সংস্কৃতির সঙ্গে নয়। হিটলারের মেইন ক্যাম্পফ পড়লে দেখবেন খাঁটি জার্মান বা আর্য্য জার্মান সম্পর্কেও ভাবনাগুলো এরকমই। যদি আধুনিককালের সাহিত্য থেকে উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হয়, তাহলে হ্যারি পটারের গল্পে মাডব্লাড বা মাগল, আর পিওর ব্লাডের ডেফিনেশন দেখে নিতে পারেন, সঙ্গে ভল্ডেমর্ট এবং তার সঙ্গীসাথীদের মনোভাবও।</div><div><br></div><div>মুসলমানদের সম্পর্কে গোলওয়ালকরের চিন্তাভাবনা ছিলো আরও উগ্র। ওই একই বইয়ে পরের অংশটাও পাওয়া যায় - </div><div><br></div><div>"<i>There are only two courses open to the foreign elements, either to merge themselves in the national race and adopt its culture, or to live at its mercy so long as the national race may allow them to do so and to quit the country at the sweet will of the national race.... From this standpoint, sanctioned by the experience of shrewd old nations, the foreign races in Hindusthan must either adopt the Hindu culture and language, must learn to respect and hold in reverence Hindu religion, must entertain no idea but those of the glorification of the Hindu race and culture, i.e., of the Hindu nation and must lose their separate existence to merge in the Hindu race, or may stay in the country, wholly subordinated to the Hindu Nation, claiming nothing, deserving no privileges, far less any preferential treatment—not even citizen’s rights. There is, at least should be, no other course for them to adopt. We are an old nation; let us deal, as old nations ought to and do deal, with the foreign races, who have chosen to live in our country.</i>"</div><div><br></div><div>এই অংশটা একটু অনুবাদ করে দিই যাতে পড়ে বুঝতে সুবিধা হয়। </div><div><br></div><div>"এই বিদেশীদের জন্যে দুটিই রাস্তা খোলা রয়েছে। হয় তাদের রাষ্ট্রীয় জাতি হিসেবে তৈরী হতে হবে, অথবা তাদের রাষ্ট্রীয় জাতির আধিপত্য মেনে নিয়ে মাথা নীচু করে বাঁচতে হবে - যতদিন তাদের এই দেশে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত। এবং যেদিন মনে করা হবে তাদের এই দেশে থাকার প্রয়োজন নেই, সেদিন তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। পৃথিবীর অতিপ্রাচীন জাতিগুলির আদর্শে তৈরী এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী হিন্দুস্তানের সমস্ত বিজাতীয় মানুষকে হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষাকে আপন করে নিতে হবে, হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে হবে, এবং একমাত্র হিন্দু জাতি ও সংস্কৃতি - অর্থাৎ হিন্দু রাষ্ট্রকে মহিমান্বিত করা ছাড়া অন্য কোনো ধারণা বহন করা যাবে না। হয় তাদের নিজস্ব সমস্ত সত্ত্বা বিসর্জন দিয়ে হিন্দু জাতির সাথে একাত্ম হতে হবে, অথবা হিন্দু জাতির শ্রেষ্ঠতা মেনে নিয়ে তাদের বশ্যতা স্বীকার করে, কোনো সুযোগসুবিধার দাবী না করে, কোনো অগ্রাধিকারের আশা না করে, এমনকী নাগরিক সুযোগসুবিধার চাহিদাও না রেখে এই দেশে থাকতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় তাদের কাছে থাকবে না। আমরা প্রাচীন জাতি; প্রাচীন জাতিরা যেভাবে বিদেশীদের দেখেছে, আমরাও আমাদের দেশে থাকা বিদেশীদের সেইভাবেই দেখবো।"</div><div><br></div><div>এইখানে একটা বড় পয়েন্ট মাথায় রাখা দরকার - সেই সময়ের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে যে আইডিয়া পাওয়া যায়, সেটা হল এইরকমের ভাবনা শুধু উগ্র হিন্দুত্ববাদীদেরই ছিলো তা নয়, বরং মারাঠি উচ্চবর্ণীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এইসবই ছিল প্রচলিত ধারণা, এবং বিভিন্ন মারাঠি খবরের কাগজ এবং ম্যাগাজিনে নাৎসী ও ফ্যাসিস্ট ডিক্টেটরদের বিভিন্ন কাজকর্মের প্রশংসা করে লেখাপত্রও ছাপা হত - যেগুলোর সঙ্গে সাভারকর বা গোলওয়ালকরের বক্তব্যের বিশেষ তফাত ছিলো না। ১৯৩৯ সালে, দ্য মারহাট্টা পত্রিকায় ইতালি ও জার্মানির প্রশংসা করে একটা সিরিজ ছাপা হয়, কেশরী-তে ছাপা হয় গণতন্ত্রের পতন ও ফ্যাসিবাদের উত্থান নিয়ে লেখা - যেখানে ফ্যাসিবাদকে গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নত ব্যবস্থা বলে দাবী করা হয়। </div><div><br></div><div>হয়তো এবার আন্দাজ করতে পারবেন - আগের একটা লেখায় মাধব কাশীনাথ দামলের পরিচয় দেওয়ার সময় কেন তার চিৎপাবন ব্রাহ্মণ পরিচয়টাকে আলাদা করে হাইলাইট করেছিলাম। সেই সময়ের মারাঠি উচ্চবর্ণ হিন্দু মনোবৃত্তিতে যা ছিলো, ক্রমশঃ সেই আইডিয়াগুলোই আরও পোক্ত হয়ে ওঠে হিন্দু মহাসভা আর আরএসএসের ছত্রছায়ায়। এবং আরএসএস এর ছত্রছায়ায় যে তথাকথিত "ফ্রিঞ্জ" সংগঠগুলো বেড়ে উঠেছিলো - যেমন সনাতন সংস্থা, হিন্দু ঐক্য বেদী, অভিনব ভারত বা ভোঁসলে মিলিটারি স্কুল - সেখানেও এই একই ধ্যানধারণা দেখতে পাওয়া যায়। বিজেপি যতই এই গোষ্ঠীগুলোকে "ফ্রিঞ্জ" বলে অস্বীকার করুক, গ্রাসরুট লেভেলে আরএসএস-এর সাথে এরাই সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করে এসেছে এত বছর ধরে, যার ফল আমরা আজ দেখছি, আর একদম শুরুতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের যে চিঠির কথা বলেছিলাম - সেখানেও সেই একই আইডিয়ার ফর্মালাইজেশন দেখতে পাচ্ছি। </div><div><br></div><div>এই ছায়া সৈন্য বা শ্যাডো আর্মি - মানে, সনাতন সংস্থা, হিন্দু ঐক্য বেদী, অভিনব ভারত বা ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের আল্টিমেট গোল কী, আর তার জন্যে কী কী ঘটেছে, সেই গল্পেও আসবো আস্তে আস্তে।</div><div><br></div><div>#ShadowArmiesOfHindutva</div><div><br></div><div>সূত্রঃ </div><div><br></div><div>(১) Hindutva’s Foreign Tie-up in the 1930s - Archival Evidence, Marzia Casolari, Economic & Political Weekly, Vol. 35, Issue 4, 22 Jan 2000</div><div>(২) Nehru Memorial Museum and Library, Savarkar papers, microfilm, rn 23, part 2, Miscellaneous Correspondence January 1938-May 1939</div><div>(৩) Hindutva: Who is a Hindu?, VD Savarkar, 4th ed, Bharat Mudranalaya, Pune, 1949, p 94</div><div>(৪) We, or Our Nationhood Defined, MS Golwalkar, Bharat Publications, Nagpur, 1939</div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-91657367051492221782022-08-08T14:30:00.001+01:002022-08-08T14:30:58.138+01:00#ShadowArmiesOfHindutva - Part 2<div>একটা ছোট্ট খবর (সেই তিরিশের দশকের) দিয়ে যাই - আজকের লাস্ট ডোজ।</div><div><br></div><div>দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, ভারতে ইতালিয়ান কনসুলেটের মাধ্যমে মহারাষ্ট্র আর বাংলায় র্যাডিকাল মুভমেন্টগুলোর সাথে যোগাযোগ তৈরী করা শুরু হয়। আইডিয়াটা নতুন নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানিও একই জিনিস করেছিলো - উদ্দেশ্য শত্রুপক্ষকে চারদিক থেকে বিব্রত করা।</div><div><br></div><div>১৯৩৮ সালের জুন মাস থেকে বম্বের ইতালিয়ান কনসুলেট বেশি বেশি করে ভারতীয় ছাত্র ভর্তি করতে থাকে ইতালিয়ান ভাষার কোর্সগুলোতে - উদ্দেশ্য ছিলো ফ্যাসিস্ট প্রোপাগান্ডা ছড়ানো। এই কাজের দায়িত্ব ছিলো মারিও কারেল্লি বলে একজনের ওপর, যিনি ছিলেন ইনস্টিটিউট ফর মিডল অ্যান্ড ফার ইস্ট (ISMEO) বলে ১৯৩৩ সালে রোমে ফ্যাসিস্ট সরকারি মদতে তৈরী হওয়া একটি সংস্থার সেক্রেটারি ও লাইব্রেরিয়ান।</div><div><br></div><div>সেই সময়ে এই ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সে ভর্তি হওয়া অনেক ছাত্রের মধ্যে একজন বিশেষ ছাত্রের নাম ছিলো মাধব কাশীনাথ দামলে। কারেল্লির কথায়, দামলে মুসোলিনীর ডক্ট্রিন অফ ফ্যাসিজমের মারাঠি অনুবাদও করে ১৯৩৯ সালে - যেটা একটা সিরিজ হিসেবে লোখান্ডি মোর্চা (ইংরিজীতে Iron Front) নামে দামলেরই চালু করা একটা ম্যাগাজিনে ছেপে বেরোয়। শুধু এইটা নয়, আন্তোনিও পাগলিয়ারো বলে একজনের লেখা Fascism against Communism এর মারাঠি অনুবাদও ছেপে বেরোয় এই ম্যাগাজিনে। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে একটা বেশ উগ্র লেখা ছেপে পুলিশের নজরে আসে লোখান্ডি মোর্চা - ম্যাগাজিনটা বন্ধ করতে হয়, জরিমানাও দিতে হয় দামলেকে। সেই সময়ের পুলিশ রিপোর্টে লেখা হয় যে দামলে প্রকাশ্যে ফ্যাসিস্ট আর নাৎসী আদর্শের সমর্থক।</div><div><br></div><div>ইতালির সরকারকে দেওয়া ইতালিয়ান কনসালের দেওয়া রিপোর্টে লেখা হয়ঃ</div><div><br></div><div>"<i>Di idee fasciste, ha fondato un'organizzazione da lui chiamata 'Iron Guards' prendendo a modello le nostre, ma adattandole alle peculiari condizioni dell'India. Egli e i suoi amici vestivano la camicia nera: le prime camicie nere dell'India. Lo sviluppo di questa organizzazionee stato compromesso dallo scoppio della guerra</i>"</div><div><br></div><div>যার ইংরিজী অনুবাদ করলে দাঁড়ায় -</div><div><br></div><div>"<i>Holding fascist ideas, he founded an organisation called Iron Guards, modelled on ours, but adapted to Indian peculiar conditions. He and his friends wore the black shirt: India's first black shirts. The development of this organisation was compromised by the outbreak of the war.</i>"</div><div><br></div><div>ইতালির ফ্যাসিস্ট ব্ল্যাকশার্টদের আদলে ভারতের প্রথম ও একমাত্র ব্ল্যাকশার্ট গোষ্ঠী তৈরীর কৃতিত্ব পুণের চিতপাবন ব্রাহ্মণ, বম্বেনিবাসী এই মাধব কাশীনাথ দামলের।</div><div><br></div><div>(নামের আগে জাতিগত পরিচয়টাও কিন্তু এক্ষেত্রে জরুরী। কেন, সেটা এই সিরিজের বিভিন্ন লেখায় বারবার আসবে।)</div><div><br></div><div>#ShadowArmiesOfHindutva</div><div><br></div><div>সূত্রঃ </div><div>(১) Hindutva's Foreign Tie-up in the 1930s: Archival Evidence, Marzia Casolari, Economic & Political Weekly, Vol. 35, Issue 4, 22 Jan 2000</div><div>(২) Central State Archives (ACS), Minculpop (Ministry of Popular Culture), 17 bis, cit, report n 2298/St 3, from Italian Consulate, Bombay, October 4, 1939, to the Ministry of Popular Culture.</div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-18747452478111944372022-08-08T14:29:00.001+01:002022-08-08T14:29:01.745+01:00#ShadowArmiesOfHindutva - Part 1<div>১৯৩০ এর দশকে আরএসএস এর এক নামকরা খুঁটি ছিলেন ডঃ বিএস মুঞ্জে - যিনি হেডগেওয়ারের মেন্টর হিসেবেও পরিচিত। তিরিশের দশকের শুরুতে ব্রিটিশ সরকারের সাথে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে তিন রাউন্ড গোল টেবিল বৈঠক হয়েছিলো, সেখানে হিন্দু মহাসভার প্রতিনিধি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন মুঞ্জেও। ১৯৩১ সালের ১৫-২৪শে মার্চ মুঞ্জে রোম গেছিলেন মুসোলিনীর সাথে দেখা করতে। মুঞ্জের ডায়েরিতে প্রায় পনেরো পাতা জুড়ে ১৯শে মার্চ তারিখের সেই সাক্ষাতের বর্ণনা রয়েছে, আর রয়েছে ফ্যাসিস্ট সংগঠনগুলো সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। বিশেষ করে Balilla আর Avanguardisti - যে দুটো ফ্যাসিস্ট সিস্টেমের কর্নারস্টোন ছিলো - কমবয়সীদের "তৈরী" করার জন্যে - সেই দুটো নিয়ে প্রায় দুপাতা জোড়া প্রশংসা।</div><div><br></div><div>ভারতে ফেরার পর, ১২ই এপ্রিল, দ্য মারহাট্টা পত্রিকায় মুঞ্জের একটা সাক্ষাৎকার বেরোয় - যেখানে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়কে মিলিটারাইজ করার কথা বলেন মুঞ্জে - ফ্যাসিস্ট ইতালি আর নাজি জার্মানির ধাঁচে।</div><div><br></div><div>"<i>In fact, leaders should imitate the youth movement of Germany and the Balilla and Fascist organisations of Italy. I think they are eminently suited for introduction in India, adapting them to suit the special conditions. I have been very much impressed by these movements and I have seen their activities with my own eyes in all details."</i></div><div><br></div><div>১৯৩৪ সালের ৩১শে মার্চ, মুঞ্জে, হেডগেওয়ার আর লালু গোখেলের মধ্যে এক বৈঠক হয় জার্মানি আর ইতালির ধাঁচে হিন্দুদের মিলিটারি অর্গানাইজেশন নিয়ে। নীচের ছবিটা মুঞ্জের ডায়েরি থেকে এই বৈঠকের বিবরণ...হাইলাইট করা অংশগুলো একটু খুঁটিয়ে দেখবেন...সনাতন ধর্ম আর ডিক্টেটর নিয়ে বক্তব্যটা ইন্টারেস্টিং লাগবে।</div><div><br></div><div>এই বিএস মুঞ্জের হাতেই নাসিকে প্রথম তৈরী হয়েছিলো ভোঁসলে মিলিটারি স্কুল ১৯৩৭ সালে। তার আগে অবশ্য ১৯৩৪ এই তৈরী হয় সেন্ট্রাল হিন্দু মিলিটারি এডুকেশন সোসাইটি, যার লক্ষ্য (ফের মুঞ্জেরই ভাষায়) ছিলো - </div><div><br></div><div>"<i>to bring about military regeneration of the Hindus and to fit Hindu youths for undertaking the entire responsibility for the defence of their motherland, to educate them in the Sanatan Dharma, and to train them in the science and art of personal and national defence...</i>"</div><div><br></div><div>অর্থাৎ, দেশটেশের চেয়ে এখানে অনেক বড় হল হিন্দু সম্প্রদায়টুকু। ১৯৩৭ সালে নাসিকে স্কুল তৈরীর অনেক পরে, ১৯৯৬ সালে নাগপুরে একটা শাখা তৈরী হয় এই ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের। নাসিকে ১৬০ একর আর নাগপুরে ৩০ একর জমির ওপর তৈরী এই দুটো স্কুল সেই শুরু থেকে হিন্দুত্বের "সৈন্য" তৈরী করার কাজ করে এসেছে সরকারের নাকের ডগায় বসে। সেনাবাহিনীর অনেক প্রাক্তনের মধ্যে হিন্দুত্বের যে রমরমা দেখতে পান বিভিন্ন চ্যানেলে আর মিডিয়ায়, তার পিছনে এই ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের অবদান খুব কম নয়। আর এই স্কুলেরই কৃতি ছাত্র এবং পরে শিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল শ্রীকান্ত পুরোহিত - মালেগাঁও ব্লাস্টের অন্যতম কর্ণধার।</div><div><br></div><div>ভোঁসলে মিলিটারি স্কুল, সাভারকরের তৈরী অভিনব ভারত, সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, অসীমানন্দ ইত্যাদিদের গল্পে পরে আসবো...</div><div><br></div><div>#ShadowArmiesOfHindutva</div><div><br></div><div>সূত্রঃ</div><div>(১) Shadow Armies: Fringe Organizations and Foot Soldiers of Hindutva, Dhirendra Kr. Jha</div><div>(২) Hindutva's Foreign Tie-up in the 1930s: Archival Evidence, Marzia Casolari, Economic & Political Weekly, Vol. 35, Issue 4, 22 Jan 2000</div><div>(৩) Nehru Memorial Museum and Library, Moonje Papers, microfilm, diary 1932-36</div><div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEglgD5jHfXVVhOEKdisJ2D4e2JLkQkSrIMuedKY1zD4_GUczPDi-b1SAwJBlHLo-2sgJb9ckqdDboUrjiQJZtOgfCQjBUMcYfyrjESthLQMt91tGeRqcMC-E093l9w0sxAQEEAdzg/s1600/1659965335416915-0.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEglgD5jHfXVVhOEKdisJ2D4e2JLkQkSrIMuedKY1zD4_GUczPDi-b1SAwJBlHLo-2sgJb9ckqdDboUrjiQJZtOgfCQjBUMcYfyrjESthLQMt91tGeRqcMC-E093l9w0sxAQEEAdzg/s1600/1659965335416915-0.png" width="400">
</a>
</div><br></div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-85232794274499861712022-08-08T14:26:00.001+01:002022-08-08T14:26:00.483+01:00Shadow Armies: Fringe Organizations and Foot Soldiers of Hindutva<div>"The term Hindutva – explained by Savarkar as ‘Hindu-ness’ and not ‘Hinduism’ – is almost always used to refer to the core idea at the heart of the members of the Sangh Parivar. But on the ground, it is easy to get misled if one does not reverse the meaning of this term. It is Hinduism that is invoked to ensure the mobilization of masses and the polarization of voters. Hindutva as an ideological construct simply vanishes the moment one leaves the national headquarters of the BJP and the RSS.</div><div><br></div><div>The irony is that the young men from backward or lower castes who constitute a significant portion of the foot soldiers of these shadow armies are rarely able to recognize that the Hindutva to which they have dedicated their energies is nothing but brahminism. And that it is the same brahminical Hinduism that has kept them oppressed for centuries and against which they have their own legacies of resistance. They are so blinded by their growing Hindu religiosity and hatred for the ‘threatening other’ that they simply cannot see how the Hindutva they are working for ultimately seeks to revive the historical hegemony of brahmins and other upper castes.</div><div><br></div><div>Occasionally, the truth becomes visible. For instance, when caste hierarchies affect the distribution of power even at the local level. Sometimes this leads to the revolt of backward caste leaders and cadres (as in the case of the Sri Ram Sene), but the rebels hardly ever look for an ideological alternative.</div><div> </div><div>The triumph of Hindutva, following the BJP’s striking victory in the 2014 Lok Sabha elections and in many of the state polls thereafter, has resulted in brahminism trying to recolonize the spaces it had been forced to vacate due to social reform movements and anti-brahminical ideological struggles. In the chapters that follow I only offer vignettes illustrating how the shadow world of Hindutva, with its reliance on violence, hate speech and even terror, has contributed to these electoral triumphs as well as to the brahminical agenda underpinning the overall Hindu nationalist project."</div><div><br></div><div>- The Shadow Armies: Fringe Organisations and Foot Soldiers of Hindutva</div><div><br></div><div>Dhirendra K. Jha travels around UP and Bihar and narrates the story behind the so-called fringe organisations - Sanatan Sanstha, Hindu Yuva Bahini, Bajrang Dal, Sri Ram Sene, Hindu Aikya Vedi, Abhinav Bharat, Bhonsala Military School and Rashtriya Sikh Sangat.</div><div><br></div><div>Sanatan Sanstha filed a defamation lawsuit against the publishers of this book, but lost. Worth a read.<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh8-P_XEey1cjsbl99x1il51nDzuIL6A-VbQ17OP9Lto5P4s3VQAHgWfJvCXmvH8ypqQ9cgV5pfCE0YM_RKlTQizCL230uEgONctuHM36uq0-1iNmZ2zKWD-sbw_fDXxx0ndODHKg/s1600/1659965153431136-0.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh8-P_XEey1cjsbl99x1il51nDzuIL6A-VbQ17OP9Lto5P4s3VQAHgWfJvCXmvH8ypqQ9cgV5pfCE0YM_RKlTQizCL230uEgONctuHM36uq0-1iNmZ2zKWD-sbw_fDXxx0ndODHKg/s1600/1659965153431136-0.png" width="400">
</a>
</div></div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-55873064414966667732020-01-03T10:26:00.001+00:002020-01-03T10:26:40.723+00:00TheNewOrder, Part 2 – Lebensraum (Living Space)<div>#TheNewOrder, Part 2 – #Lebensraum (Living Space)<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi179uD0bZfacQAp1i-PTPL4PRp-ogT7w7ffPAejKqLlR15lCAs955Ez7FsozBTOw4jK2_LxFLNDmeIbZR7GkOxeHN-S8A0LfaVdlhhbzUKxxsUn6LuvJWUL0-TzRP6EQg3FxV9qQ/s1600/1578047192167856-0.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi179uD0bZfacQAp1i-PTPL4PRp-ogT7w7ffPAejKqLlR15lCAs955Ez7FsozBTOw4jK2_LxFLNDmeIbZR7GkOxeHN-S8A0LfaVdlhhbzUKxxsUn6LuvJWUL0-TzRP6EQg3FxV9qQ/s1600/1578047192167856-0.png" width="400">
</a>
</div></div><div><br></div><div>নিউ অর্ডারের উৎস বুঝতে চাইলে একটা কনসেপ্ট আগে বুঝে নিতে হবে - লিভিং স্পেস, বা বাসস্থানের কনসেপ্ট - জার্মান ভাষায় শব্দটা হল লেবেনস্রাউম। নাৎসিদের জাতিগত ধ্যানধারণা বা বিশ্বযুদ্ধের সময়ে দেশদখল - পুরোটাই দাঁড়িয়েছিল এই লেবেনস্রাউমের ওপর। তাই, এই ধারণাটা সম্পর্কে কিছুটা লেখা দরকার।</div><div><br></div><div>শব্দটা প্রথম আনেন এক জার্মান ভৌগোলিক, নাম ফ্রেডরিখ র্যাটজেল - ১৯০১ সালে। সেই সময়ে তিনি এবং আরও অনেকে মনে করতেন যে একটা দেশকে সুরক্ষিত থাকতে হলে তাকে সমস্ত রকম রিসোর্স এবং বাসস্থানের দিক থেকে স্বনির্ভর হতে হবে। র্যাটজেলের মত বাকিরাও ডারউইনের "ন্যাচারাল সিলেকশন"-এর তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু কোনও কারণে (ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত ভুল, তা আজ আর জানা যায় না) ডারউইনের প্রাণিজগতের তত্ত্ব এঁরা চাপিয়ে দিয়েছিলেন দেশের বা রাষ্ট্রের ওপরে। বলেছিলেন, প্রাণীরা যেমন প্রাকৃতিক সম্পদের জন্যে প্রতিযোগিতায় নামে, এবং যে জেতে সেই বেঁচে থাকে - যা ইভোলিউশনের জগতে "সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট" বলে বিখ্যাত, সেরকমভাবেই সমস্ত রাষ্ট্রও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্যে প্রতিযোগিতায় নামে - জয়ী রাষ্ট্রই টিঁকে থাকে। ব্রিটিশ এবং ফরাসী কলোনিগুলো দেখিয়ে র্যাটজেল বলতেন যে জার্মানিকেও একইভাবে জায়গা দখল করতে হবে জার্মানির ক্রমবর্ধমান নাগরিকদের বসবাস করানোর জন্য…এবং সবচেয়ে লজিক্যাল জার্মান এক্সটেনশন হল জার্মানির পূর্বদিকের অঞ্চল - অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপ থেকে রাশিয়া…</div><div><br></div><div>নাৎসি উত্থানের আগে থেকেই, মোটামুটি মধ্যযুগ থেকেই জার্মানরা পূর্ব ইউরোপে মাইগ্রেট করতে শুরু করেছিলো - মূলত অর্থনৈতিক কারণে - স্লাভিক এবং বল্টিক অঞ্চলগুলোতে বড় সংখ্যায় জার্মানরা বসবাস করতো। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মান স্কলার এবং আমজনতার মধ্যে একটা ধারণা বাড়তে শুরু করে - যে এই সব অঞ্চলে জাতিগতভাবে নিচুস্তরের লোকজনের জন্যে রিসোর্সের সদ্ব্যবহার ঠিকভাবে হয়ে উঠছে না। জাতিগতভাবে নিচুস্তর বলতে স্লাভিক আর ইহুদী সম্প্রদায়ের লোকজন। ইউরোপের বাকি অংশে জার্মান অধিকারের ভুল ঐতিহাসিক দর্শনের সাথে এই নতুন জৈবিক দর্শন মিশে গিয়ে জন্ম নেয় বিংশ শতকের লেবেনস্রাউমের আইডিয়া - পরবর্তীকালে জার্মানির ভবিষ্যৎ লেখা হয় যার ওপরে…</div><div><br></div><div>প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি এই লিভিং স্পেস প্রায় বানিয়েই ফেলেছিল - পূর্বদিকে প্রায় মিনস্ক অবধি মিলিটারি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে - যে একনায়কতন্ত্রের লক্ষ্য ছিলো এই গোটা অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ নিজের দখলে আনা, এবং দরকারমত ভূপ্রাকৃতিক ব্যবস্থার অদলবদল করা। ১৯১৮ সালের ১লা নভেম্বর, কম্পেইনের একটা রেল কামরায় জার্মানি আত্মসমর্পণ করে। ১৯১৯ সালের ২৮শে জুন সই হয় ভার্সাই চুক্তি - যার ফলে পূর্ব ইউরোপে দখলীকৃত সমস্ত অঞ্চল (৬৫০০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা এবং ৭০ লক্ষ মানুষ) ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় জার্মানি - ইউরোপের ম্যাপ থেকে অবলুপ্ত পোল্যান্ড ফিরে আসে, জন্ম হয় চেকোস্লোভাকিয়ার, স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে থেকে যায় ড্যানজিগ…</div><div><br></div><div>যুদ্ধে হারের ক্ষত, আর সাথে অত জায়গা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হারানো - ভার্সাই চুক্তি কঠিন দাগ রেখে যায় গোটা জার্মান জাতির মধ্যে, সাথে রেখে যায় বিশ্বাস - যে জার্মানিকে জিততে হলে পূবদিকে এগোতেই হবে। এই অবস্থারই সুযোগ নেন হিটলার - জার্মানির ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ন্যাশনাল সোশ্যালিজম বা নাৎসি ধারণার বীজ পুঁতে।</div><div><br></div><div>রাজনৈতিক স্লোগান Volk ohne Raum (ভূমিহীন জাতি) তৈরী হয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানিকে নিয়ে। একই সময় জার্মান ইউজেনিসিস্টরা স্লোগান তোলেন Volk ohne Jugend (তারুণ্যহীন জাতি) - পপুলেশন ডেমোগ্রাফিকে সম্পুর্ণ অস্বীকার করে যেখানে দাবী করা হয় যে জার্মান পপুলেশন ক্রমহ্রাসমান, সবাই প্রায় বয়স্ক - কাজেই জার্মানিকে বাঁচাতে হলে জার্মান পপুলেশনের বৃদ্ধি এবং জার্মান অঞ্চলের বৃদ্ধি - দুইয়েরই প্রয়োজন। ১৯২০এর দশকে এই দাবী মান্যতা পেয়ে যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জার্মানের কাছে। ১৯২৫ সালে লেখা Mein Kampf বইয়ে হিটলার একটা বড় অংশ রক্ষিত রাখেন লেবেনস্রাউমের জন্যে। হোহেনজোলেম সাম্রাজ্যের পলিসির সমালোচনা করে লেখেন - "ভৌগলিক সীমার সমস্যার সমাধান ক্যামেরুনে নয়, ইউরোপের মূল ভূখণ্ডেই রয়েছে। প্রকৃতি ইউরোপের মাটি কোনও বিশেষ দেশ বা জাতির জন্য সংরক্ষণ করে রাখেনি, বরং এই মাটি রয়েছে যার দখল করার ক্ষমতা আছে তার জন্য।" [Mein Kampf, page 138-139]</div><div><br></div><div>জার্মানির একটা বড় অংশের ইন্টেলেকচুয়ালরা চাইতেন জার্মানিকে ১৯১৪ সালের (মানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের) আগের বর্ডার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। হিটলার মনে করতেন সেটা বালখিল্যতা - এই ইন্টেলেকচুয়ালরা জিওপলিটিক্সের বোঝেটা কী? বরং, উনি পিছিয়ে গেলেন ছ'শো বছর - যখন জার্মানির দখলে ছিলো গোটা স্লাভিক এবং বল্টিক অঞ্চল।</div><div><br></div><div>"And so we National Socialists … take up where we broke off six hundred years ago. We stop the endless German movement to the south and west, and turn our gaze toward the land in the East...If we speak of soil in Europe today, we can primarily have in mind only Russia and her vassal border states" [Mein Kampf, page 654]</div><div><br></div><div>অর্থাৎ, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, বল্টিক দেশগুলো - যেমন রুমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, যুগোস্লাভিয়া, এবং সবশেষে রাশিয়া। নিউ অর্ডারের কনসেপ্ট অনুযায়ী এই স্লাভিক/বল্টিক/রাশিয়ান/ইহুদী পপুলেশন - কয়েক কোটি মানুষ - এরা সকলেই অনার্য্য, দূষিত রক্তের নীচুশ্রেণীর মানুষ...এদের জন্ম জার্মান জাতের দাসত্ব করার জন্য। অথবা, পাকাপাকিভাবে শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য। "এক্সটারমিনেশন" শব্দটা বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে - Mein Kampf এ, বা সেনাবাহিনীকে দেওয়া হিটলারের বিভিন্ন লিখিত আদেশে। লেবেনস্রাউমের সরাসরি ফসল জার্মান জাতিগত পলিসি, আর সেখান থেকেই তৈরী "নিউ অর্ডার।"</div><div><br></div><div>যদি কষ্ট করে এতদূর পড়ে থাকেন, তাহলে আরেকটু কষ্ট করে বর্তমান হিন্দুত্ববাদীদের তত্ত্ব বা কাজকর্মের সাথে একটু মিলিয়ে দেখতে পারেন - অখন্ড ভারতের সাথে লেবেনস্রাউমের মিল পান কিনা, বা "হিন্দু খতরেঁ মে হ্যায়" এর সাথে Volk ohne Raum আর Volk ohne Jugend স্লোগানের মিল, বা এমনকী পদ্ধতিরও মিল পান কিনা...</div><div><br></div><div>এই পর্ব শেষ করি হলোকাস্ট এনসাইক্লোপিডিয়ার একটা লাইন দিয়ে -</div><div><br></div><div>"লেবেনস্রাউমের ধারণা একা হলোকাস্টের জন্য দায়ী নয়, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী, জাতীয়তাবাদী এবং জাতিগত বিদ্বেষমূলক ভাবধারার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত - শেষ অবধি যে সমস্ত ধারণার ফলে ইউরোপের ইহুদীদের মরতে হয়েছিলো।"</div><div><br></div><div>সুত্রঃ</div><div><br></div><div>(১) Mein Kampf - Adolf Hitler</div><div>(২) Rise and Fall of the Third Reich - William Shirer</div><div>(৩) Coming of the Third Reich - Richard J Evans</div><div>(৪) Lebensraum - The Holocaust Encylopedia</div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-61662138846598783262020-01-03T10:25:00.001+00:002020-01-03T10:25:40.416+00:00TheNewOrder, Part 1<div>#TheNewOrder, Part 1</div><div><br></div><div>ন্যাশনাল সোশ্যালিজম, বা নাৎসি আইডিওলজির দুটো দিক আছে - একটা সোশ্যাল সিস্টেমের দিক, আরেকটা জাতীয়তাবাদী ওয়ার ইকোনমির দিক - যেখানে গ্রেট ডিপ্রেশনের পরেও জাতীয়তাবাদী স্লোগানের জোরে জার্মান ইকোনমি ওয়াইমার রিপাবলিকের সময়ে পৌঁছে যাওয়া তলানি থেকে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো। দ্বিতীয়টা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করবেন। এই সিরিজটাকে আপাতত শুধু প্রথমটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছি - কারণ এই সোশ্যাল সিস্টেম, যাকে বলা হয়েছিলো The New Order, তাকেই প্রায় হুবহু নকল করার চেষ্টা করে আজকের #NewIndia...</div><div><br></div><div>তাই শিরারের "দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ দ্য থার্ড রাইখ" এর পাশাপাশি রিচার্ড ইভান্সের রাইখ ট্রিলজি এবং নিউরেমবার্গ ট্রায়ালের নথিপত্র ঘেঁটে যা পাওয়া যাচ্ছে তাই নিয়ে এই সিরিজটা চালু করলাম...কৃতিত্বটা মূলতঃ শিরারেরই, কারণ ওনার দেখানো রেফারেন্স ধরেই এগোচ্ছি, এবং লেখার অনেকটাই শিরারের বইয়ের বিভিন্ন অংশের কম্পাইলেশন।</div><div><br></div><div>The New Order, Part 1</div><div><br></div><div>অক্টোবর ৪, ১৯৪৩ - অধিকৃত পোল্যান্ডের Poznan (তখন Posen) শহরের টাউনহলে এসএস বাহিনীর প্রধান হাইনরিখ হিমলার বাহিনীর অফিসারদের সামনে বক্তৃতা দিতে উঠে বলেন -</div><div><br></div><div>"একজন রাশিয়ান বা চেকোস্লোভাকিয়ানের শেষ অবধি কী হল আমার তাতে কোনও আগ্রহ নেই। এই দেশগুলো থেকে আমাদের জার্মানদের মত শুদ্ধ রক্তের যা পাওয়া যায় তা আমরা নেবো, প্রয়োজনে ওদের বাচ্চাদের অপহরণ করে আমাদের সমাজে বড় করে। এসব দেশের মানুষ ভালোভাবে বাঁচলো, নাকি গরুবাছুরের মত উপোষে মরলো - তাতে আমার আগ্রহ নেই, যতক্ষণ তাদের আমরা জার্মানরা ক্রীতদাসের মত ব্যবহার করতে পারছি। দশ হাজার রুশী মহিলা ট্যাঙ্করোধী পরিখা খুঁড়তে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে মরে গেলো কিনা, তাতেও আমার আগ্রহ নেই, যতক্ষণ পরিখার কাজ শেষ হচ্ছে।" [1]</div><div><br></div><div>হিমলারের এই বক্তৃতার প্রায় তিন বছর আগে, ১৯৪০ সালেই, অ্যাডলফ হিটলার তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার অধিবাসী, অর্থাৎ নাৎসি সাম্রাজ্যের প্রথম স্লাভিক প্রজাদের কী পরিণাম হবে তার মোটামুটি একটা আউটলাইন দিয়ে রেখেছিলেন তাঁর জেনারেলদের কাছে - তাদের অর্ধেককে খাস জার্মান জাতির দাসত্ব করতে হবে, বাকি অর্ধেক, বিশেষ করে ইন্টেলেকচুয়ালদের খতম করা হবে [2]। সেই সময়ের আরেকটি দলিলে, চেকদের পরের স্লাভিক জাতি, যাদের জার্মানি কলোনাইজ করবে, অর্থাৎ পোলিশদের ভাগ্যে কী আছে তাও পাওয়া যায়। হিটলারের নিজস্ব চিন্তাভাবনা নথিভুক্ত করে রেখেছিলেন তাঁরই বিশ্বস্ত সেক্রেটারি মার্টিন বরম্যান। এক ঝলকে সেটা মোটামুটি এই রকম -</div><div><br></div><div>“পোলিশ নাগরিকদের জন্মই নীচুতলার কাজকর্মের জন্য। ওদের কোনোরকম উন্নতির প্রয়োজন নেই। পোলিশদের জীবনযাত্রার মান তলানিতেই রাখতে হবে, আর দেখতে হবে কোনোভাবেই যেন তার কোনও উন্নতি না হয়। পোলিশরা অলস, এবং তাদের কাজ করতে বাধ্য করতে হবে। পোল্যান্ডের সরকারকে ব্যবহার করা হবে কায়িক শ্রমের যোগানদার হিসেবে।" [3]</div><div><br></div><div>এই কথাগুলোর কোনটাই নতুন নয়। বিয়ার হল বিদ্রোহের পরে জেলে বন্দী অবস্থায় লেখা Mein Kampf এ হিটলার এরকমই চিন্তাভাবনার কথা লিখে গেছেন (আর এই বইয়ের ভাবনারই প্রায় ফটোকপি দেখা যায় আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা গোলওয়ালকরের We or Our Nationhood Defined বইয়ে) - ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট পার্টি, মানে নাৎসি পার্টির মূল তত্ত্বই ছিলো এর ওপর দাঁড়িয়ে - খাস জার্মান জাতিই খাঁটি আর্য্য, বাকি স্লাভিক প্রজাতির লোকজন জন্মেছে জার্মানদের দাসত্ব করার উদ্দেশ্যে। জার্মানরা জাতিগত এবং জৈবিক দিক থেকে স্লাভিক প্রজাতির মানুষের চেয়ে হাজারগুণ দামী...</div><div><br></div><div>উত্তর ভারতীয় বর্ণহিন্দুরাই খাঁটি আর্য্য এবং আসল শাসক, বাকি দক্ষিণ/পূর্ব ভারতীয়, দলিত/শুদ্র/তফশিলী জাতি/উপজাতির লোকেরা ভৃত্যশ্রেণীর - হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীদের এই কথাটা এইবার চেনা ঠেকছে কি? মুসলমানদের এখনো আনলাম না, কারণ সেটা তুলনীয় আরেক সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে। সেই তুলনা ক্রমশঃ আসবে।</div><div><br></div><div>(1) Nuremberg Trial Document, Extracts from speeches concerning the SS and the conduct of the war, Speech [of] the Reichsfuehrer-SS at the meeting of SS Major-Generals at Posen, 04 October 1943, Heinrich Himmler (Reichsfuehrer-SS and Chief of Police; Minister of Interior), PS-1919</div><div><br></div><div>(2) Nuremberg Trial Document, Report of Gen. Gotthard Heinrici, Deputy General of the Wehrmacht in the Protectorate, PS-862</div><div><br></div><div>(3) Bormann’s memorandum, quoted in Trial of Major War Criminals before the International Military Tribunal (TMWC), Volume VII, pp. 224–26 (N.D. USSR-172)</div><div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiZcF-J0AnGAkKLmlzQXjcA_n3dqsy4EM3NaEPbpwhRqWjo_n1irTbFRuj1vM_k3IRxFZjxgVnpfVNg0cGSoY1JX1-kwEiZSfUruXWzoXtv9-lw6U_YrEmtJXhzlR2WQYnvVVyjpw/s1600/1578047132460448-0.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">
<img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiZcF-J0AnGAkKLmlzQXjcA_n3dqsy4EM3NaEPbpwhRqWjo_n1irTbFRuj1vM_k3IRxFZjxgVnpfVNg0cGSoY1JX1-kwEiZSfUruXWzoXtv9-lw6U_YrEmtJXhzlR2WQYnvVVyjpw/s1600/1578047132460448-0.png" width="400">
</a>
</div><br></div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-66156125477792926982018-12-06T08:24:00.001+00:002018-12-06T09:43:33.826+00:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (শেষ পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
ভোর চারটেতে অ্যালার্ম দিয়ে উঠে তৈরী হয়ে নিলাম। পাঁচটায় গাড়ি আসবে, তার
আগে যতটা সম্ভব কাজ এগিয়ে রাখলে সাফারি থেকে ফিরে ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে
পড়া যাবে। সেদিন অনেক দূর যাওয়া - সেই মালদা অবধি। গোছগাছ সব সারা। গাড়ি
(মাথাখোলা জিপসি) এসে গেলো ঠিক পাঁচটায়। সওয়া পাঁচটার মধ্যে আটজন
জঙ্গলপিপাসুকে নিয়ে গাড়ি রওনা দিলো চিলাপাতা ফরেস্ট অফিসের দিকে - পারমিট
নিতে হবে। মেন্ডাবাড়ি থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই কিছুদূর গিয়ে একবার
বড় রাস্তায় উঠতে হয় - সেখান দিয়ে অল্প দূরে গিয়েই ফরেস্ট অফিস। ফরেস্ট
অফিসের আশেপাশে সব বাড়িই একটু উঁচুতে - থামের ওপরে তোলা। দুটো কারণে - (এক)
বর্ষায় জল তলা দিয়ে বেরিয়ে যায়, আর (দুই) ছোটখাটো জন্তুজানোয়ার এলে বাড়িতে
ধাক্কা মারতে পারে না।<br>
<br>
পারমিট নিতে মিনিট দশেক, তারপর আবার জঙ্গলের রাস্তা। রাস্তার কথা আগেই
বলেছি - শুধু চোখ বন্ধ করে একবার ভেবে নিন - ভারতের দ্বিতীয় ঘন জঙ্গল,
সুন্দরবনের পরেই - তার চেহারা কেমন হতে পারে। সূর্য্য তখনো পুরো ওঠেনি,
অল্প আলো ফুটেছে। পাশের জঙ্গলে তখনো আলোআঁধারির খেলা। রাস্তাটা চলে গেছে
দূরে কোন গভীরের দিকে জানি না। শুধু দূরে দেখা যায় আবছা আলোয় টানেলের মত
গাছের আড়ালে ঘুরে গেছে রাস্তাটা...অল্প কুয়াশা নেমেছে সেখানে...বাঁকের পরে
কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে কে বলতে পারে। চাপড়ামারির মত গাড়ির ভিড় নেই, সেই
মুহুর্তে শুধু একটাই গাড়ি শুকনো পাতার ওপর অল্প আওয়াজ করে এগিয়ে চলেছে।
পাশের জঙ্গলে খড়মড় করে অল্প আওয়াজ, তাকিয়ে দেখবেন দুটো হরিণ অবাক চোখে
তাকিয়ে রয়েছে - গাড়িটা দেখেই উল্টোদিকে ঘুরে দৌড়। ফিসফিসিয়ে কথা বলুন,
আশেপাশে পাখি রয়েছে অনেক - কান খাড়া করে রাখলে তাদের কথা বলা শুনতে পাবেন।
গাছের মাথা থেকে হুউউউউট হুউউউট করে আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখুন - পেঁচা বসে
রয়েছে একটা। গাছের ডালে খড়খড় ঝাপটা - তাকিয়ে দেখুন কয়েকটা বাঁদর ডাল বদলে
বসলো...<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhMcXpbjayNb9wKKRtVNoNYgow94Bo4MKo_iT27M-5JVKa0w1epqDCOrQ7Jyfc1ZNieY_u3eEU9DdXeTIuXvO0suWx-XGeoYzoKHhQNqdaSkNjiWrILT1v_6Ei3M4TViKIiC1MwOQ/s1600/DSC_1162.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="938" data-original-width="1600" height="233" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhMcXpbjayNb9wKKRtVNoNYgow94Bo4MKo_iT27M-5JVKa0w1epqDCOrQ7Jyfc1ZNieY_u3eEU9DdXeTIuXvO0suWx-XGeoYzoKHhQNqdaSkNjiWrILT1v_6Ei3M4TViKIiC1MwOQ/s400/DSC_1162.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgPkgKPx6BLcMfJaZWq0AxavH9YzI5wulcOo8mHNdX1Uor6nSecnBL7qI2DMw5yBhgTm_esRahhcTWgaG-mn4E4LPLZrin9C-Mao6cCrMlDAZPXPKPVHAMW4elLS4f-vXJrv-rCtw/s1600/DSC_1165.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="961" data-original-width="1600" height="240" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgPkgKPx6BLcMfJaZWq0AxavH9YzI5wulcOo8mHNdX1Uor6nSecnBL7qI2DMw5yBhgTm_esRahhcTWgaG-mn4E4LPLZrin9C-Mao6cCrMlDAZPXPKPVHAMW4elLS4f-vXJrv-rCtw/s400/DSC_1165.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhdWs2ayZ8SjkCBPrMzHqLzSI9iooIWFx0na7tj0bekmMgI6OSg5aExgv9xW-EEvrhPStGtAtBESD9BEUCw-tBuUII9eRnESm8WdxeV93vbE70Ypx85939LxBcCgCUAIJlepaVF5g/s1600/DSC_1167.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="937" data-original-width="1600" height="233" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhdWs2ayZ8SjkCBPrMzHqLzSI9iooIWFx0na7tj0bekmMgI6OSg5aExgv9xW-EEvrhPStGtAtBESD9BEUCw-tBuUII9eRnESm8WdxeV93vbE70Ypx85939LxBcCgCUAIJlepaVF5g/s400/DSC_1167.jpg" width="400"> </a></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<br></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
আস্তে আস্তে গাড়ি চলছে, সূর্য্য উঠলো বুঝতে পারছি - গাছের ফাঁকে ফাঁকে আলো
দেখা যাচ্ছে। অক্টোবরের ভোরে অল্প ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে...হাওয়ায় ঝিরঝির করে
সাড়া দিচ্ছে চিলাপাতা...আমাদের নজর দুদিকের জঙ্গলে...। মিনিট কয়েকের মধ্যে
গাড়িটা দাঁড়িয়ে পড়লো। সামনে দেখলাম আরো দুটো জিপসি রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে।
আমাদের গাড়ির ড্রাইভার ফিসফিস করে বললেন - হাতি। ডানপাশের জঙ্গলে, হার্ডলি
তিরিশ ফুট দূরে তিনটে হাতির একটা পরিবার পাতা খেতে ব্যস্ত। ক্যামেরা তুলে
তাক করে দাঁড়িয়ে রইলাম, যদি সুযোগ পাই একটা। কিন্তু সামনের দিকে না এসে
একটা হাতি আরেকটু দূরে গিয়ে রাস্তা পেরিয়ে উল্টোদিকের জঙ্গলে ঢুকে
গেলো...একটা মাঝারি সাইজের দাঁতাল। তার বউটা তখনো বাচ্চাটাকে নিয়ে
ডানদিকের জঙ্গলেই রয়েছে। আমরাও দাঁড়িয়ে রয়েছি। এর মধ্যে আমাদের গাড়িটা
রিভার্স করে আরো ফুট দশেক জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে পড়লো, আরো কাছে - খুব বেশি
হলে কুড়ি ফুট দূরে, একটা বড় ঝোপের আড়ালে দেখতে পাচ্ছি মা হাতিটার শরীরের
ওপরের দিকটা, আর তার সামনেই বাচ্চাটাও রয়েছে, একদম পাহারা দিয়ে রেখেছে যেন।
একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি আমরা কজন, নিঃশ্বাসও ফেলছি না প্রায়...ওদিকে
হাতি দুটোও তাই। কতক্ষণ হবে? মিনিট দশেক প্রায়? তারপর খস খস করে আওয়াজ
পেলাম, ক্রমশ সেটা দূরে মিলিয়ে গেলো। বুঝলাম মা হাতিটা বাচ্চাটাকে নিয়ে আরো
গভীরে ঢুকে গেছে। ভেবেছিলাম আরো কিছুক্ষণ দাঁড়াই, কিন্তু গাইড যিনি, তিনি
বললেন যে দাঁতালটা রাস্তা পেরিয়ে উল্টোদিকে গেছে, সেটা পরিচিত হাতি, আর তার
খানিক ইতিহাসও আছে ফিরে আসার, আর সেটা সুখকর নয়, না দাঁড়ানোই ভালো।<br>
<br>
[গল্প (বা ঘটনাটা) পরে শুনেছিলাম দেবাশিসের কাছে। ঠিক গোধূলির মুখে,
জঙ্গলের মধ্যে রাস্তায় হাতি প্রায় ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে মিশে যায়, ভালো
বোঝা যায় না। এই কিছুদিন আগেই - মাস দুয়েক হবে হয়তো - দুটি ছেলে চিলাপাতার
গেটের কাছেই পিচরাস্তায় বাইক নিয়ে যাচ্ছিলো একটু জোরেই। এই দাঁতালটাই একটা
বাঁকের মুখে বসে ছিলো। ছেলেদুটো বাঁক ঘুরেই হাতিটাকে ধাক্কা মারে। বাইক
ছিটকে পড়ে যায়, ছেলে দুটোও উল্টে গিয়ে পড়ে - একজন বাইকের পাশেই, আরেকজন
বাইক থেকে অল্প দূরে জঙ্গলের পাশে। হাতিটা প্রথমে বাইকের পাশের ছেলেটাকে
আছড়ে আছড়ে মারে, তারপর বাইকটাকে পা দিয়ে থ্যাঁতলায়। তারপর উল্টোদিকে ঘুরে
হাঁটা দেয়। এর মধ্যে অন্য ছেলেটা এইসব দেখে হামাগুড়ি দিয়ে সরে যাচ্ছিলো -
এর মধ্যে তার মোবাইলটা বেজে ওঠে। হাতিটা ফিরে যেতে গিয়েও ঘুরে আসে,
ছেলেটাকে শুঁড়ে তুলে আছড়ে ফেলে পা দিয়ে থেঁতলে মাংসপিন্ড বানিয়ে তারপর আবার
জঙ্গলে ঢুকে যায়।]<br>
<br>
গাইডের বারণ শুনে আর দাঁড়াইনি। ছবি পেলাম না ঠিকই, কিন্তু ওই দশটা মিনিট
প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষার মুহুর্তগুলো সেই যে সিন্দুকটা থাকে যেখানে
বিশেষ বিশেষ কিছু ছবি/কথা জমানো থাকে, সেখানে ঢুকে গেছে।<br>
<br>
চিলাপাতার ক্লাইম্যাক্স এইটাই। এর পরেও জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে বেড়ালাম প্রায়
সাড়ে সাতটা অবধি। টুকটাক পাখি, খরগোশ, হরিণ চোখে পড়লেও আর সেরকম কোনো ঘটনা
ঘটেনি। মাঝে একটা গড় চোখে পড়লো - পুরনো কেল্লার ধ্বংসাবশেষ - বলে নলরাজা
গড়, গুপ্ত যুগের সময়কার নল রাজাদের কেল্লা। তার সামনের গেটটা এখনো দেখা যায়
মাটির ওপর কিছুটা জেগে রয়েছে। আগে ভিতরে ঘুরে বেড়ানো যেত, কিন্তু এখন
জঙ্গল এতটাই ঘন যে আর ওদিকে যেতে দেয় না।</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAgtQTK9jk5xn20g3LEObOcGAggsCMucuQNZWEDmIlnmPFhf9LI8otKDPN0c420xiEJ29nS0EXQy3hNon1Da12O0E-5A8PDQ_htv8q4aYc6DMBmcuYYARYnbMKbaLjrpKVFB7zjw/s1600/DSC_1161.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="930" data-original-width="1600" height="232" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAgtQTK9jk5xn20g3LEObOcGAggsCMucuQNZWEDmIlnmPFhf9LI8otKDPN0c420xiEJ29nS0EXQy3hNon1Da12O0E-5A8PDQ_htv8q4aYc6DMBmcuYYARYnbMKbaLjrpKVFB7zjw/s400/DSC_1161.jpg" width="400"></a></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
<br></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
আরো এদিক সেদিক কিছুক্ষণ ঘুরে একটা ওয়াচটাওয়ারের পাশ দিয়ে প্রায় সাড়ে সাতটা
নাগাদ ফিরে এলাম ফের মেন্ডাবাড়িতে। সাফারি শেষ। আমাদের বেড়ানোও। এবার
ফেরার পালা।<br>
<br>
ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়ে সব জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে রওনা দিলাম। দেবাশিস আগে
কালজানি বলে একটা নদীর ধারে ঘোরাতে নিয়ে গেল - এমনিই বেশ সুন্দর জায়গা।
তারপর টিপিক্যাল হাইওয়েতে না উঠে ফালাকাটা-ধূপগুড়ি-ময়নাগুড়ির রাস্তা ধরলাম -
কারণ চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে এই রাস্তাটা অসম্ভব সুন্দর, এবং তাড়াতাড়ি
ফুলবাড়ি বাইপাস হয়ে ন্যাশনাল হাইওয়েতে ওঠা যাবে। এতে এবারের মত মালবাজারে
বাপীদার হোটেলে বোরোলি বা অন্যান্য মাছ খাওয়া হল না বটে, কিন্তু সন্ধ্যের
মধ্যে মালদা পৌঁছনোর প্ল্যানটা ঠিকই রইলো। বাপিদার হোটেলে খাওয়া শুরু হয়
বারোটার পর - ততক্ষণ অপেক্ষা করতে গেলে দেরি হয়ে যেত।<br>
<br>
এরপর আর সেরকম ঘটনা নেই। ফুলবাড়ি বাইপাস ধরে এনএইচ ১২ এ উঠলাম, হাইওয়ের
ধারে একটা রেস্তোরাঁয় ছেলেমেয়ের শখ মিটিয়ে চীনে খাবার প্যাক করানো হল। আমার
খেতে সময় লাগে না বলে আমি পার্কিংএই দাঁড়িয়ে পটাপট খেয়ে গাড়িতে স্টার্ট
দিলুম, বাকিরা গাড়িতে খেতে খেতে চললো।<br>
<br>
ইসলামপুর ছাড়িয়ে ফের বোতলবাড়ি-রসখোয়া রোড। দুপাশে গ্রামের পর গ্রাম ফেলে
রেখে রায়গঞ্জ হয়ে মালদা। মালদা টাউনে ঢোকার আগে গোল্ডেন পার্ক বলে একটা
হোটেল/রিসর্ট আছে - যেখানে আগে থেকেছিলাম মালদায় বেড়াতে আসার সময়ে -
সেখানেই উঠলাম সেদিন রাতের মত।<br>
<br>
পরের দিন সকালে টোস্ট-অমলেটের ব্রেকফাস্ট সেরে মালদা পেরিয়ে ফারাক্কা হয়ে
বহরমপুরের একটু আগে মোরগ্রামে এনএইচ ১২/৩৪ ছেড়ে ধরলাম স্টেট হাইওয়ে ৭ -
যেটা মুর্শিদাবাদের মধ্যে দিয়ে আসে বর্ধমান অবধি। এনএইচ ৩৪ এর ট্রাফিক যদি
এড়াতে চান তাহলে এই রাস্তাটাই নেওয়া ভালো - মুশকিলের মধ্যে খাবার জায়গা
পাবেন না বিশেষ - ছোটখাটো ভাতের হোটেলের বাইরে বিশেষ কিছুই নেই। সেদিন
বেকারি বন্ধ বলে কোথাও পাঁউরুটিও পাওয়া যায়নি। শেষে খড়গ্রামের কাছে একটা
ভাতের হোটেলেই বিরিয়ানি পাওয়া গেল - মোটের ওপর মন্দ নয়, শুধু মিষ্টতাটা
বেশি। বিকেল নাগাদ বর্ধমান - সেখানে একটা মিষ্টির দোকান থেকে
সীতাভোগ/মিহিদানা কিনে সোওওজা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। শক্তিগড়ে দাঁড়িয়ে
ল্যাংচামহলের ল্যাংচা, আর পাশের চায়ের দোকানে চা খেয়ে ফের রওনা। অবশেষে রাত
আটটা নাগাদ গাড়ি পার্ক করলাম বাড়িতে। ট্রিপমিটার তখন দেখাচ্ছে ১৮৩১.৯
কিমি।</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
<br></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhQEyZToYCQP1-x6eop8jSnOxbzzI8X7erVUZQdlVEZgGKtGfDWgLJga1HXGjUdnlp-KrmqWfoBlWWRsRRzuflgl_Qsk5weEMkFl6irsDK6kBOpVTiZWdYrTE_H0AgcLullyh6AZw/s1600/IMG_20181020_195347.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1034" data-original-width="1600" height="257" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhQEyZToYCQP1-x6eop8jSnOxbzzI8X7erVUZQdlVEZgGKtGfDWgLJga1HXGjUdnlp-KrmqWfoBlWWRsRRzuflgl_Qsk5weEMkFl6irsDK6kBOpVTiZWdYrTE_H0AgcLullyh6AZw/s400/IMG_20181020_195347.jpg" width="400"></a></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
<br></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
বেড়ানো শেষ আবার বছর দেড়েকের জন্যে। ২০২০তে ঋকের উচ্চমাধ্যমিক - তাই এর
মধ্যে আর সবাই মিলে বড়্সড় বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হবে না। শুরুতেই লিখেছিলাম -
স্কুলের ছুটির চেয়ে বড় টিউশন থেকে ফাঁক পাওয়া - সেটা ওই পুজোর কয়েকটা দিন
ছাড়া সম্ভব নয়। যদি পারি, পরের বছর পুজোর ছোটো করে একটা রোডট্রিপ সেরে
নেবো, আর নয়তো একটা গ্র্যান্ড প্ল্যান রয়েছে ২০২০ সালের জন্যে। ফের একটা
ট্র্যাভেলগ নিয়ে আসবো তখন।<br>
<br>
এই ট্রিপে দুটো পার্সোনাল রেকর্ড হল -<br>
<br>
(১) একটানা ১৮ ঘন্টা গাড়ি চালানো, একদিনে<br>
(২) স্কটিশ হাইল্যান্ডস বা লেক ডিস্ট্রিক্ট ছাড়া, এখানকার পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানো<br>
<br>
দেখা যাক, পরের প্ল্যানটা নামাতে পারি কিনা।<br>
<br>
আমার কথাটি ফুরলো<br>
নটেগাছটি মুড়লো।</div>
<hr>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/12/road-to-nowhere_5.html">(আগের কথা)</a><br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
<br></div>
</div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-91482428915143683192018-12-05T12:17:00.000+00:002020-06-30T13:31:31.332+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (১০ম পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
শেষ হয়ে আসছে বেড়ানোর দিন। পানঝরা থেকে আমরা যাবো মেন্ডাবাড়ি - সেখান থেকে
আবার ফেরা শুরু। বহুদিন পরের বেড়ানোটা এখনো অবধি দিব্যি হয়েছে। আমাদের
প্রথমবার ডুয়ার্স আসা - এখনো অবধি সেভাবে বোর হতে হয়নি কোথাও।<br>
<br>
আলিপুরদুয়ার থেকে মোটামুটি কুড়ি কিলোমিটার দূরে, জলদাপাড়ার পাশেই চিলাপাতা
ফরেস্ট, হাসিমারা থেকে খুবই কাছে। এর মধ্যেই কোদাল বস্তির পাশে হল
মেন্ডাবাড়ি জাঙ্গল ক্যাম্প - ডুয়ার্সের মধ্যে আরো একটা ইকো টুরিস্ট রিসর্ট।
সময়মত গেলে আর কপালে থাকলে ক্যাম্পে বসেই আশেপাশে বুনো জন্তুজানোয়ার দেখতে
পাওয়া যায় - কারণ চিলাপাতা রেঞ্জটা জলদাপাড়া আর বক্সা টাইগার রিজার্ভের
মধ্যে একটা ন্যাচারাল করিডরের কাজ করে। এখানে যেতে হলে আপনাকে চাপড়ামারি
ছাড়িয়ে নাগরাকাটা, বানরহাট, বীরপাড়া পেরিয়ে যেতে হবে হাসিমারা। হাসিমারা
গুরদোয়ারা পেরিয়ে আরেকটু এগোলেই চিলাপাতার শুরু। যাওয়ার পথটা জলদাপাড়ার পাশ
দিয়ে চলে গেছে সোজা গৌহাটির দিকে, দুধারে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য চা-বাগান। মাঝে
কথা হয়েছিলো এই রাস্তাটাকে ৪-লেন হাইওয়ে বানানোর - তাতে চা-বাগান তো নষ্ট
হতই, আরো অনেক গাছ কাটা পড়তো - এমনকি জলদাপাড়ার গায়েও হাত পড়তো। কাজও শুরু
হয়ে গেছিলো - নানা জায়গায় সেই কাজের চিহ্ন দেখতে পাবেন। কিন্তু পরিবেশের
চাপে ভাগ্যক্রমে এই প্ল্যান বাতিল করে অন্য একটা রাস্তাকে চওড়া করার কাজ
শুরু হয়েছে। বেঁচে গেছে অনেকটা জঙ্গল। জানা নেই যদিও কতদিনের জন্যে -
সভ্যতা ক্রমশ ডুয়ার্সের দিকে হাত বাড়ানো শুরু করেছে বেশ কিছুদিন হল...<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj12QTl6nRN2WGvvZ9FPSZlWKLmhu2XFyoUZfWH4j4CpWDCHSOzCuIeljhBsTwyJeWYWPp4SQsWsyUb8StURaUA0xJlHLO9ZqNXSjo_td53aobTVzA6UZVji-2OqxrK94sfDZ1cdg/s1600/Screenshot+from+2018-12-05+12-11-46.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="499" data-original-width="735" height="271" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj12QTl6nRN2WGvvZ9FPSZlWKLmhu2XFyoUZfWH4j4CpWDCHSOzCuIeljhBsTwyJeWYWPp4SQsWsyUb8StURaUA0xJlHLO9ZqNXSjo_td53aobTVzA6UZVji-2OqxrK94sfDZ1cdg/s400/Screenshot+from+2018-12-05+12-11-46.png" width="400"></a></div>
<br>
চাপড়ামারি থেকে হাসিমারা লাগলো ঘন্টাখানেক। দূরত্ব বেশি নয়, কিন্তু ৪০
কিলোমিটারের স্পীড লিমিট বাঁধা রয়েছে গোটা পথেই। হাসিমারা এয়ারবেস এর কাছেই
রাস্তার ধারে দেবাশিসরা দাঁড়িয়েছিলো। ওরাও যাবে আমাদের সাথে মেন্ডাবাড়ি।
বাকি পথটা দেবাশিসই চিনিয়ে নিয়ে গেলো আমাদের আগে আগে গিয়ে।<br>
<br>
পিচমোড়া রাস্তা থেকে হঠাৎই একটা কাঁচা রাস্তা ঢুকে পড়েছে বাঁদিকে জঙ্গলের
মধ্যে - সেই রাস্তা ধরতেই চোখের সামনে দৃশ্য পুরো বদলে যায়। চিলাপাতায়
ঢুকলে চাপড়ামারিকে মনে হবে ঝোপঝাড়ের চেয়ে অল্প বড় কিছু। একইভাবে গাড়ি চলে
চলে দুটো সমান্তরাল দাগ হয়ে রয়েছে - সেটাই রাস্তা। দুধারে ঘন জঙ্গল, গাড়ির
গায়ে ছোঁয়া দিয়ে যায়। চাকার দাগদুটোর মধ্যেকার ঝোপঝাড় আরো অনেক ঘন। রাস্তার
পাশেই খানায়েক ময়ূর খেলে বেড়াচ্ছে - গাড়িদুটোর দিকে একবার তাকিয়ে ফের
খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। চলতে চলতে এসে পড়লাম কোদাল বস্তির সামনে। একটা ছোটো
খাল পেরোতে হয় এখানে - আগে জলের মধ্যে দিয়েই পার হতে হত, কিছুদিন হল একটা কাঠের
সাঁকো বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে একটা খোলা জায়গায় দুটো বাড়ি
পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর একটা কাঠের গোল বাড়ি - সেটা খাওয়ার জায়গা।
দুটো দোলনা রয়েছে খেলার জন্যে। আর ওই চত্ত্বরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে আরো কয়েকটা
ময়ূর। চারপাশে তারের উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা, পাশেই ছোটো গ্রামটা, আর বড় বড়
গাছে ঘেরা চারদিক...অসংখ্য পাখি, বিশেষ করে টিয়ার মেলা...বাইরে গ্রামের
দিকটায় একটা কুনকী হাতি দাঁড়িয়ে কান নাড়িয়ে চলেছে, বড় নয়, বাচ্চা একটা।
গ্রামে দুর্গাপুজো হচ্ছে - তার ঢাকের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। হাতিটা যেন সেইটা
শুনেই মাঝে মাঝে দুলে উঠছে, যেন নাচছে।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEibtMkFJTBIHWwvCQgd4UIomEn4c5SvY32XfJZa7ALbV9Z12H6AjweoXcpWkwltSp48TDbfElWNtMmkMhyfLQbWAnaaia5W_SiAH3q4cj8r77oYJG5STNW4PJL4KWeukvYVwI0e6g/s1600/chilapata-jungle-camp.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="412" data-original-width="550" height="298" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEibtMkFJTBIHWwvCQgd4UIomEn4c5SvY32XfJZa7ALbV9Z12H6AjweoXcpWkwltSp48TDbfElWNtMmkMhyfLQbWAnaaia5W_SiAH3q4cj8r77oYJG5STNW4PJL4KWeukvYVwI0e6g/s400/chilapata-jungle-camp.jpg" width="400"></a></div>
(<a href="https://media-cdn.tripadvisor.com/media/photo-s/09/1e/4e/4b/chilapata-jungle-camp.jpg" target="_blank">https://media-cdn.tripadvisor.com/media/photo-s/09/1e/4e/4b/chilapata-<br>jungle-camp.jpg - </a>বাড়িটার ছবি তুলতে ভুলে গেছি, তাই ট্রিপ অ্যাডভাইসর থেকে একটা ছবি দিলাম)<br>
<br>
বাড়িটার দোতলায় (নাকি একতলাই বলা উচিৎ) দুটো বড় ঘর আছে - ডর্মিটরি টাইপের।
এক একটা ঘরে পাঁচ ছয়্জন থাকতে পারে। ঘরগুলো বিশেষ মেন্টেইন হয় না - কারণ
মেন্ডাবাড়ির গ্ল্যামার কোশেন্ট কমই বলা চলে। ঠিক luxurious জায়গা তো নয়।
বাথরুমের অবস্থাও খুব ভালো নয় - একটু ভাঙা ভাঙা। কিন্তু চলে যায়। ইন
ফ্যাক্ট, এরকম জঙ্গলের মধ্যে ঝাঁ চকচকে ঘরদোর বেমানানই লাগতো হয়তো।<br>
<br>
[আর একটা বাড়ি আছে এখানে - সেটা আরেকটু উন্নত বলা যায়, কারণ এসি মেশিন
বসানো রয়েছে - বছর দুয়েক আগে রাণিমা পদধূলি দিয়েছিলেন বলে বসানো হয়েছিলো।
ভোল্টেজ এতই কম যে সে মেশিন বিশেষ চলেই না।] <br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhKQtx6U9yI6PD5bGTqk2scOfKlSTDxo4d0Cd_cjwfmPizBr17AsTYyHk7AL3RnWiId31b6a9dHMkdstgB5nWQ873swDl83PEHFEmbjQCBxaq2nQL7klwCKib52b-QX05TlzA-lxg/s1600/mendabari_jungle_camp_1_1024.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="638" data-original-width="1024" height="248" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhKQtx6U9yI6PD5bGTqk2scOfKlSTDxo4d0Cd_cjwfmPizBr17AsTYyHk7AL3RnWiId31b6a9dHMkdstgB5nWQ873swDl83PEHFEmbjQCBxaq2nQL7klwCKib52b-QX05TlzA-lxg/s400/mendabari_jungle_camp_1_1024.jpg" width="400"></a></div>
(<a href="https://northbengaltourism.com/images/govt-resorts/mendabari_jungle_camp_1_1024.jpg" target="_blank">https://northbengaltourism.com/images/govt-resorts/mendabari_jungle_ca<br>mp_1_1024.jpg - </a>এই ছবিটা নর্থ বেঙ্গল টুরিজমের সাইট থেকে দিলাম)<br>
<br>
দুপুরের খাওয়া অ্যাজ ইউজুয়াল - ভাত, আলুভাজা, ডাল, তরকারি আর ডিমের
ঝোল। সেদিন আমরা আটজন, পরিমাণও সেই অনুপাতে। রাঁধুনী আর কেয়ারটেকার
দেবাশিসের পরিচিত - সেই কারণে, নাকি দেবাশিসের বক্তব্য অনুযায়ী গাঁজার
ধুমকিতে - কে জানে - আট জনের জন্যে দুই ডজন ডিম! ডিমখোড়ের মধ্যে পড়ি আমি,
সুমনা আর দেবাশিস...তাতেও একটা/দুটো এক্সট্রা হলে কথা ছিল - আটটা ডিম বেশি -
ভাত খাওয়ার পর কোনোমতেই শেষ করা সম্ভব নয়।<br>
<br>
খাওয়াদাওয়া শেষে বেলা পড়ে আসার আগে দুটো গাড়িতে রওনা দিলাম জয়ন্তী নদীর
দিকে। হাইওয়ে ধরে কিছুদূর গিয়ে বক্সা টাইগার রিজার্ভের সীমানা। তার মধ্যে
দিয়েই চলে গেছে হাইওয়েটা সোজা ভুটান সীমান্তের দিকে। শুধু গেট পার হওয়ার আগে
টিকিট কাটতে হয় - টোলও বলা যায়। কালো চকচকে পিচঢালা রাস্তা, দুপাশে বেশ ঘন
জঙ্গল। কিন্তু যদি জন্তুজানোয়ার দেখার ইচ্ছে থাকে, এই পথে সেই ইচ্ছে পুরো
সফল হবে না, কারণ শ'য়ে শ'য়ে মোটরগাড়ি আর মোটরসাইকেল যাচ্ছে এই রাস্তায়।
এমনকি বাসও। পাখির ডাক শুনতে পাবেন - যদি না জঙ্গল কাঁপিয়ে কোনো বাইক চলে
যায়। কিছু পাখি দেখতেও হয়তো পাবেন। দু একটা ছোটখাটো জন্তুও হয়তো - যেমন
হরিণ (আমরা পেলাম একটা বার্কিং ডিয়ার)। তার বেশি কিছু চাইলে এখানকার সাফারি
ছাড়া উপায় নেই।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEje2bJi63qEDMorNxKi-Npiz_hkvuMd59Ths1940JB9ec-SwOlm58__M9fz5ZtCjOMH_KQD9S_5FWJ1Sx7mwT0GO5GJ1_W8UD6H3elrhc7cntJEW8E4VeSfsMoXMMClRSp-VyMAxg/s1600/Screenshot+from+2018-12-05+13-51-43.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="486" data-original-width="687" height="282" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEje2bJi63qEDMorNxKi-Npiz_hkvuMd59Ths1940JB9ec-SwOlm58__M9fz5ZtCjOMH_KQD9S_5FWJ1Sx7mwT0GO5GJ1_W8UD6H3elrhc7cntJEW8E4VeSfsMoXMMClRSp-VyMAxg/s400/Screenshot+from+2018-12-05+13-51-43.png" width="400"></a></div>
<br>
এই পথটা জঙ্গলের মধ্যে দুভাগ হয়ে একটা ভাগ চলে যায় জয়ন্তী নদীর দিকে।
সেখানে বিকেলের দিকে যেন মেলা বসে যায়। নদী পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা
ওয়াচটাওয়ার আছে - কিন্তু সেখানে যেতে চাইলে জিপসি জাতীয় গাড়ি নেওয়াই ভালো।
আমরা হয়তো পেরিয়ে যেতে পারতাম বিআরভি নিয়ে, কিন্তু দেবাশিসদের ছোট গাড়ি,
এগজস্টে জল ঢুকে গেলে চিত্তির। তাই নদী না পেরিয়ে নদীর ধারেই কিছুটা সময়
কাটানো হল।<br>
<br> নদীর খাতটা বেশ চওড়া - হয়তো বর্ষার সময় পুরো ভরে যায়। পুজোর সময় জল শুধু
মাঝে অল্প কিছুটা, বড়জোর তিরিশ ফুট। নুড়িপাথরে মোড়া খাত, জুতো খুলে নদীর
জলে নামলে টের পাবেন যে সেটা পাহাড় থেকে নেমেছে। উল্টোদিকে আবছা নীলচে
ভুটান পাহাড় দেখা যায়। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে সময় কাটানোর পক্ষে বেশ ভালো
জায়গা, শুধু একমাত্র আপদ গাদা গাদা মোটরসাইকেল, আর তাদের স্টান্টবাজি।
নুড়িপাথরের মধ্যে চাকার গ্রিপ ভালো ধরে না, তাই হাতের কাছে অফরোডিং এর সাইট
হল এইটা...বাইক নিয়ে গোঁ গোঁ করে জলে নামছে, নদীর মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে
আবার গোঁ গোঁ করছে, তারপর আবার উল্টোদিকে ফিরে যাচ্ছে - এইটাই ওদের
স্টান্ট। এর মধ্যে আমরা কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়িয়ে, নদীর পাথর কুড়িয়ে ব্যাংবাজি
করে ঘন্টাখানেক সময় কাটিয়ে ফেললাম। তারপর সন্ধ্যে নামতে আবার বক্সার
জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মেন্ডাবাড়ি অবধি। মাঝে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে উত্তরবঙ্গের রসগোল্লা...<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhZWjyP_r7XeFb-ofdh93V4dIqbQhVtqahV7lvqF4FR9Fb4UPkqjgPJm-AjX18-YHWsi7AnBA4GtQjQzT-1AM5MiGTlH7ezKAOcn8y2NUJjnwPLXb_JNryXzG5J_jMZgzjLNDQRBQ/s1600/DSC_1138.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1000" data-original-width="1600" height="250" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhZWjyP_r7XeFb-ofdh93V4dIqbQhVtqahV7lvqF4FR9Fb4UPkqjgPJm-AjX18-YHWsi7AnBA4GtQjQzT-1AM5MiGTlH7ezKAOcn8y2NUJjnwPLXb_JNryXzG5J_jMZgzjLNDQRBQ/s400/DSC_1138.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgAEnb7iJw33On3YynHTM78vr2KnHeiiLnvOXFTZpSjB8T2MMwC_3-luaumXai_dj1mptcYP1SkwXwfeZyh7wl3QxB1avX44Y-l6zQvg5abEA5WHdfuDuznqIZjGHW7Sgw-74V5ug/s1600/DSC_1146.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1600" data-original-width="1141" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgAEnb7iJw33On3YynHTM78vr2KnHeiiLnvOXFTZpSjB8T2MMwC_3-luaumXai_dj1mptcYP1SkwXwfeZyh7wl3QxB1avX44Y-l6zQvg5abEA5WHdfuDuznqIZjGHW7Sgw-74V5ug/s400/DSC_1146.jpg" width="285"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhf8vGEbfI7k7x52aVAYt8X2nsRMiRc0TCEmZiNnUtiyn5pjw7wYIDcjopOiLluONqRPpCsTnkuIkFNNC2TkS4ocx6zKDI8TM6ljYwaVu1NhhZoqEL7BK5WDdwHV33AA-7eCzg-Mw/s1600/DSC_1148.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="940" data-original-width="1600" height="235" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhf8vGEbfI7k7x52aVAYt8X2nsRMiRc0TCEmZiNnUtiyn5pjw7wYIDcjopOiLluONqRPpCsTnkuIkFNNC2TkS4ocx6zKDI8TM6ljYwaVu1NhhZoqEL7BK5WDdwHV33AA-7eCzg-Mw/s400/DSC_1148.jpg" width="400"></a></div>
<br>
মেন্ডাবাড়িতে সেদিন আমাদের প্রথম আর শেষ রাত্রি। ডুয়ার্সেও শেষ রাত্রি। শুধু
বাকি রয়েছে পরের দিন ভোরবেলার সাফারি। চাপড়ামারির মত চিলাপাতায় কিন্তু অত
বেশি সংখ্যক গাড়ি আসে না। ভোর পাঁচটায় আর বিকেল তিনটের সময় মেন্ডাবাড়ি থেকে
দুটো, চিলাপাতা বাংলো থেকে চারটে - এই ছ'টা গাড়িই একসময় জঙ্গলে ঢুকতে
পারে। সেরকমই একটা জিপসি আমরা বুক করে রাখলাম পরের দিন সকালের জন্যে।<br>
<br>
রাতে খাওয়ার (ঠিক ধরেছেন, রুটি আর চিকেন) পর বারান্দায় গল্প করছি। হঠাৎ
নিস্তব্ধ জঙ্গল খানখান হয়ে গেল টিন পেটানোর আওয়াজে। সাথে তুমুল জোরে ঢাকের
আওয়াজ, আর লোকজনের চেঁচামেচি। পাশের কোদাল বস্তি পুরো জেগে গেছে। কারণ
বাংলোর ঠিক পাশের জঙ্গলে হাতি এসেছে। যদিও টর্চ ফেলেও আমরা কিছু দেখতে
পাইনি। বাংলোয় সার্চলাইট থাকলে হয়তো দেখা যেত, হয়তো যেত না। শুনলাম হাতি
চাইলে প্রায় নিঃশব্দেই যাওয়াআসা করতে পারে - কেউ টেরটিও পাবে না। আধ ঘন্টা
টিন পেটানো, ঢাক, চিৎকারের পর সব শান্ত হল। আমরা ঘুমোতে চলে গেলাম। ভোর
পাঁচটায় গাড়ি এসে যাবে।<br>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/12/road-to-nowhere_6.html?m=1">(চলবে)</a><br>
<hr>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/12/road-to-nowhere.html">(আগের কথা)</a><br>
</div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-37847234329348925672018-12-05T05:03:00.001+00:002020-06-30T13:30:48.062+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (৯ম পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
দ্বিতীয়দিন থেকে একটু বোর লাগা শুরু হল - একেবারেই কিছু করার না থাকলে যা
হয়। আকাশটা একটু ভালো থাকলে পিছনের পাহাড়টায় ঘুরে আসা যেত, কিন্তু সেও গুড়ে
বালি। অগত্যা বই আর ঘুম, ঘুম আর বই। মাঝে সকালে পুরী-সবজি, দুপুরে ডিমের
ঝোল, ডাল আলুভাজা আর ভাত, রাতে রুটি আর দেশি মুরগীর ঝোল। এর মধ্যে দোতলায়
যাঁরা ছিলেন, তাঁরা চলে গেলেন। ফোর্সের একটা ভাড়ার গাড়ি এসে নিয়ে গেলো।
তখনই শুনলাম - নিজের গাড়ি নিয়ে ওপরে আমরাই প্রথম যাত্রী।<br>
<br>
সেদিন বিকেল থেকে ঋতিরও মুখ একটু ভার। কী ব্যাপার? না পরের দিন ওই রাস্তায়
নামতে হবে, তাই একটু...ওই আর কী...পেট গুড়গুড় করছে। আরে তুই তো নর্থ
সিকিমও ঘুরে এলি - তখন তো বলিসনি। জানলাম তখনও নাকি ভয় ভয়ই করেছিলো। তা আমি
যে পরের বার গাড়ি নিয়ে অরুণাচল যাবো - তুই যাবি না? সোজা উত্তর - না।<br>
<br>
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে ব্যাগপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলতে তুলতে ন'টা
বেজে গেলো। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিলো - তাই দেরী না করে নামতে শুরু
করলাম, আবার ওই পাথর মোড়া রাস্তায়। নামার সময় আর অত চিন্তা নেই - একবার
উঠেছি যখন, রাস্তা জানা হয়ে গেছে, অজানা কোথাও যাচ্ছি না আর। তবে
সাবধানতাটা বেশি, কারণ নিউটনসায়েবের থিওরি, আর প্রাকৃতিক নিয়ম। নামার আগে
বলেছিলাম একটু ভিডিও করে রাখতে - সেও করা হল, অপেক্ষকৃত কম দুলুনি যেখানে
সেখানে। দুলতে দুলতে, লাফাতে লাফাতে অবশেষে ফের ফাড়ি বস্তি...মোমোর
দোকান ইত্যাদি।<br>
<br>
(ফাড়ি বস্তিতে নেমে ঋতিকে বল্লাম - এই তো দ্যাখ, কেমন সুন্দর নেমে এলাম।
এবার অরুণাচল যাবি তো? ঋতি উত্তর দিলো - আগে আমাকে "আনস্ক্র্যাচড" অবস্থায়
বাড়ি পৌঁছে দাও, তারপর ভাববো। অথচ, এর আগে চিলিকা, পুরী, সাতকোশিয়ার সময় এত ভাবনা ছিলো না। অবিশ্যি সেও বছর পাঁচেক আগের কথা।) <br><br>গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটু নীচের দিকের রাস্তা ধরে হেঁটে রিভার ক্যাম্পও ঘুরে
এলাম। আসল রিভার ক্যাম্প, যেটা মূর্তির ধারেই ছিলো, সেটা বন্ধ হয়ে পাহাড়ের
গায়ে একটা নতুন রিসর্ট হয়েছে। নদীর ধারটা এখন পিকনিক স্পট। ডুয়ার্সে বেড়াতে
আসা লোকজন সান্তালেখোলা অবধি নিজেদের গাড়িতে এসে ফাড়ি বস্তি থেকে লোকাল
ভাড়ার গাড়ি নিয়ে পিকনিক করতে যান।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhryxd9wzP_qgUPVYqBViwOaReoFFejoIhL-nfXkpP-qknvXCU5Dy7oHMNthbY0kVEb3_lEA4ac54DDLi5x_GRKRjKJ4OnHxOVrg6akr9W2bM_fk_bB3h-NdW1YLY4-p1xEPu60Aw/s1600/IMG-20181023-WA0029.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1040" data-original-width="585" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhryxd9wzP_qgUPVYqBViwOaReoFFejoIhL-nfXkpP-qknvXCU5Dy7oHMNthbY0kVEb3_lEA4ac54DDLi5x_GRKRjKJ4OnHxOVrg6akr9W2bM_fk_bB3h-NdW1YLY4-p1xEPu60Aw/s400/IMG-20181023-WA0029.jpg" width="225"></a></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiKg9h7xNrhw22uNHkqEne7-_oL6zaq7MoL1p8eP3wMjnGzeeC3ALi1wChs4RBfspmY2nxBYGk7VVWaYD1zEWMVQs0xaMwkmlPxDq3hub3beV9ZlZgOibZ2rNGCZIYfSo9ZIUZtpg/s1600/DSC_1112.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1049" data-original-width="1600" height="261" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiKg9h7xNrhw22uNHkqEne7-_oL6zaq7MoL1p8eP3wMjnGzeeC3ALi1wChs4RBfspmY2nxBYGk7VVWaYD1zEWMVQs0xaMwkmlPxDq3hub3beV9ZlZgOibZ2rNGCZIYfSo9ZIUZtpg/s400/DSC_1112.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjkPc41c7AaP0C6Eec4DUc3V2_4_i6Cic5r1uQwqSVEnP7LXJZ3o7V2QECIj4yZB6r0T0Ub_K7u4ahqd5Mg_lQApbzRj-VwafqoNtld_V3WadgQQNy9EP77UWcL02Sa6t-yQLi_mQ/s1600/DSC_1115.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1600" data-original-width="1195" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjkPc41c7AaP0C6Eec4DUc3V2_4_i6Cic5r1uQwqSVEnP7LXJZ3o7V2QECIj4yZB6r0T0Ub_K7u4ahqd5Mg_lQApbzRj-VwafqoNtld_V3WadgQQNy9EP77UWcL02Sa6t-yQLi_mQ/s400/DSC_1115.jpg" width="298"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgrW3KEmbXygOK6KTGTskdbFxMGSVK95C-i9lmksIVO4Jp7gdLtH7bJIjqfuSzvCtFWZd0UDZoPSTd9keV9igPO8bnsIiju4aF7ndNCRpJTY7KzQXqQ9ZNYIbz1XiLHZnaGOaaUA/s1600/DSC_1128.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1600" data-original-width="1150" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgrW3KEmbXygOK6KTGTskdbFxMGSVK95C-i9lmksIVO4Jp7gdLtH7bJIjqfuSzvCtFWZd0UDZoPSTd9keV9igPO8bnsIiju4aF7ndNCRpJTY7KzQXqQ9ZNYIbz1XiLHZnaGOaaUA/s400/DSC_1128.jpg" width="287"></a></div>
<br>
সান্তালেখোলার পর্ব শেষ। এখান থেকে আমরা যাবো পানঝরা - চাপড়ামারি রিজার্ভের
ভিতরে। যে রাস্তায় এসেছিলাম, সেই পথেই ফিরলাম - এক দুবার একটু রাস্তা
জিগ্গেস করতে হল বটে, কিন্তু মোটামুটি ঠিকভাবেই সেই সামসিং চাবাগানের মধ্যে
এসে পড়লাম। এর পরেই মূর্তি ব্রীজ, আর তারপর নয়াবস্তি পেরিয়ে আরেকটু গিয়েই
চাপড়ামারির গেট। গেটে সমস্ত কাগজ দেখাতে হল, নামধাম এন্ট্রি করতে হল, তারপর
ঢুকলাম জঙ্গলের মধ্যে। জঙ্গলের বাইরের রাস্তা আর জঙ্গলের ভিতরের পরিবেশের
মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। নিঝুম জঙ্গলে শুধু পাখির ডাক আর ঝিঁঝিপোকা - গাছের
পাতার ফাঁকে ফাঁকে অল্প আলো এসে পড়ছে - ভেজা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি।
রাস্তাটা একটা গাড়ি যাওয়ার মতন, কোথাও কোথাও পাশের ঝোপঝাড় গাড়িতে ঠেকে যায়।
নীচে গাড়ির চাকা গিয়ে গিয়ে দুটো সমান্তরাল মাটির লাইন হয়ে রয়েছে, তার
মাঝখানে ঝোপঝাড় যে কে সেই - গাড়ির নীচে নানারকম বাজনা বাজায় - খসখস - খুট -
টুংটাং...<br>
<br>
কিলোমিটার খানেক গিয়ে ফরেস্ট বাংলো - সরকারি এলাকা, তার মধ্যে একটা
ওয়াচটাওয়ার (যেখানে আমরা বিকেলে আসবো)। বাংলোটার সামনে দিয়ে বাঁদিক ঘুরে
আরো ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আরো আড়াই তিন কিলোমিটার গিয়ে চাপড়ামারির ঠিক
বাইরে একটা খালি জমিতে পানঝরা রিসর্ট। কাঠের তৈরী চারটে না পাঁচটা কেবিন,
সামনে একটু লন - সেখানে বাচ্চারা দৌড়োদৌড়ি করতে পারে, তার পরেই বেড়া, আর
একপাশে ইলেক্ট্রিক ফেন্স - হাতি আটকানোর জন্যে। সামনে দিয়ে মূর্তি নদী চলে
গেছে, কোনের দিকটায় মূর্তির ওপর রেলব্রীজ আর গাড়ি চলার ব্রীজ।<br>
<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjaz9Y08QWgUV1qucMWpDw5U4p_4fk0bcSInWl2sxLBMiHayOhkpWx8V7zzs1WdOigrAfzqD_pzs1yKYhWuke6ZccxfLXCJXO5zWrZT5me8Gwf2xYuvhIgdO4LONHyS2zEGpug_OA/s1600/IMG-20181023-WA0005.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="585" data-original-width="1040" height="225" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjaz9Y08QWgUV1qucMWpDw5U4p_4fk0bcSInWl2sxLBMiHayOhkpWx8V7zzs1WdOigrAfzqD_pzs1yKYhWuke6ZccxfLXCJXO5zWrZT5me8Gwf2xYuvhIgdO4LONHyS2zEGpug_OA/s400/IMG-20181023-WA0005.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgxWfW5-z7xiKRPBdcSXANlnLp0WPsFZTkH_9nG8H-FO7Css-etb6ODxnbBn27Qi5qEj-Kzt0t2Q5hkHDUT0Q4794CFFHOXxph7sBLKGJXVLxr9FX0AEKR8BRMlDBj-rrpG0EMbTw/s1600/IMG-20181023-WA0007.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="585" data-original-width="1040" height="225" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgxWfW5-z7xiKRPBdcSXANlnLp0WPsFZTkH_9nG8H-FO7Css-etb6ODxnbBn27Qi5qEj-Kzt0t2Q5hkHDUT0Q4794CFFHOXxph7sBLKGJXVLxr9FX0AEKR8BRMlDBj-rrpG0EMbTw/s400/IMG-20181023-WA0007.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjyy3cpSry3FUV1bOZpLTpyKkxlhfWy8Oj4EZUFYnqjwo6ZPJiiGhtil7B7RJuAlQrA1FRrvVzcQz9KKhkWgK47wazMywoxjQHaeDDKmSLmO30A9teoj_hblTmDtd-hDwaGCqwKvQ/s1600/IMG-20181023-WA0033.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1040" data-original-width="585" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjyy3cpSry3FUV1bOZpLTpyKkxlhfWy8Oj4EZUFYnqjwo6ZPJiiGhtil7B7RJuAlQrA1FRrvVzcQz9KKhkWgK47wazMywoxjQHaeDDKmSLmO30A9teoj_hblTmDtd-hDwaGCqwKvQ/s400/IMG-20181023-WA0033.jpg" width="225"></a></div>
<br>
মোটের ওপর জায়গাটা বেশ সুন্দর। একেবারে জঙ্গলের মধ্যে নয় বটে, কিন্তু
জঙ্গলের গায়েই। ইলেক্ট্রিক ফেন্স মানে হাতি বা অন্য জন্তু চলে আসার ইতিহাস
রয়েছে। টুরিস্ট বলতে সেই মুহুর্তে শুধুই আমরা। কটেজগুলোর মাঝে একটা কমন
বারান্দাওয়ালা রান্নাঘর কাম খাবার জায়গা কাম রিসেপশন। সেখানে কাগজপত্র
দেখাতে আমাদের দুটো কটেজ খুলে দিলো। সান্তালেখোলায় ঠান্ডা আর ল্যাদ কাটিয়ে
কেউই চানটান আর মাথায় আনেনি। এখানে গরমজল পেয়ে আগে চান, তারপর আবার গরম গরম
ভাত-ডাল-আলুভাজা আর বড়সড় মাছ। খাবার দেওয়ার সময়েই বলে দিলো সাড়ে তিনটে
নাগাদ ওয়াচটাওয়ারে চলে যেতে, তারপর সাড়ে পাঁচটায় ট্রাইবাল ডান্স হবে
রিসর্টে, সাথে চা আর পকোড়ার স্ন্যাক্স।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjij8E0qGPIxWy69xAQfcVpd7CfOGXoknarlSL30mR6poJQWw62W79mYv63Lon1CHI3c2umL9Qn35TKPHLDPqMhWM4ZXsTC5VCFM2z5N-txKvuAL8PSJUxYeRkb8MJzdlUaHbfQzQ/s1600/panjhora.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="607" data-original-width="686" height="353" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjij8E0qGPIxWy69xAQfcVpd7CfOGXoknarlSL30mR6poJQWw62W79mYv63Lon1CHI3c2umL9Qn35TKPHLDPqMhWM4ZXsTC5VCFM2z5N-txKvuAL8PSJUxYeRkb8MJzdlUaHbfQzQ/s400/panjhora.png" width="400"></a></div>
<br>
চাপড়ামারি কিন্তু বেশ পুরনো। ব্রিটিশ আমলে একে ন্যাশনাল রিজার্ভ ফরেস্ট
হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চাপড়ামারি ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভ নামটা চালু হয় ১৯৪০
নাগাদ, আর ১৯৯৮ সালে একে ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি হিসেবে ঘোষণা
করা হয়। আর চাপড়ামারি নামটা এসেছে "চাপড়া" - এক ধরণের ছোট মাছ, যেটা কিনা
এই এলাকায় অজস্র ("মারি") পাওয়া যায়। কী পাওয়া যায়? প্রধাণতঃ হাতি।
চাপড়ামারি বিখ্যাত হাতির জন্যে। তাছাড়া ভারতীয় বাইসন (বা গৌড়), লেপার্ড,
হরিণ, শুওর ইত্যাদি পাবেন কপালে থাকলে, আর অনেক পাখি - অনেক রকমফের তাদের।
যেমন ধরুন - ড্রঙ্গো, বা ফিঙে - সে কলকাতায় বাড়ির সামনে ইলেক্ট্রিক তারের
ওপরেই বসে থাকতে দেখেছি (ইদানিং অবশ্য কমে গেছে)। কিন্তু র্যাকেট-টেইলড
ড্রঙ্গো - তাদের ন্যাজে দুটো আলাদা লম্বা পালক - এসব শুধু এদিকেই পাবেন।<br>
<br>
এসব খবর পেলাম ফোন ঘেঁটে। সাড়ে তিনটের সময় গাড়ি নিয়ে গুটি গুটি গিয়ে হাজির
হলাম ওয়াচটাওয়ারের কাছে। সেখানে একটা বড় বোর্ডে বড় বড় করে লেখা রয়েছে কী
কী ধরণের গাছ আর জন্তুজানোয়ার চাপড়ামারির অধিবাসী। ওয়াচটাওয়ারের সামনে একটু
ফাঁকা জায়গা, তারপর তারের বেড়া (সম্ভবতঃ ইলেক্ট্রিক ফেন্স), তারপর একটা
জলাজমি, তারপর একটা সল্ট লিক্ আর ওয়াটার হোল। টাওয়ার থেকে ওয়াটার হোলটা
দুশো মিটার মতন হবে হয়তো। টাওয়ারটা তিনতলা - মানে মাটির ওপরে একটা লেভেল,
তার ওপর আরেকটা। আমরা সোজা ওপরে চলে গেলাম...কেউ কোত্থাও নেই...দূরে জলাটার
ওপাড়ে খান কয়েক বাইসন (গৌড়) কাদার মধ্যে ঝিমোচ্ছে, সেগুলোর কয়েকটার পিঠের
ওপর খান কয়েক বক বসে (সম্ভবতঃ পোকা খাচ্ছে)।<br>
<br>
জঙ্গলের সমস্যা হল এইসব জন্তু জানোয়ারগুলো ওই দূরে দূরেই থাকে। ঠিকঠাক
ইকুইপমেন্ট না থাকলে ওই দূর থেকে দেখেই ক্ষান্ত থাকতে হবে। আর যদি ভালো
কোয়ালিটির ছবিটবি তুলতে চান, তাইলে পেল্লায় লেন্স ঘাড়ে ঘুরে বেড়াতে হবে।
মুশকিল হল এই ধরনের লেন্স শুধু এই নেচার ফটোগ্রাফিতেই কাজে আসে, আর আমার
সেদিকে খুব একটা আগ্রহ কখনোই ছিলো না বলে এসব লেন্সও আমার নেই। তবে
ওয়াচটাওয়ারে উঠে মনে হল না এনে বোকামো হয়েছে। আমার ২৪-৭০মিমি লেন্স দিয়ে
কিস্যু হবে না। অন্ততঃ ক্লাবের কারো কাছ থেকে একটা ৮০-৪০০ বা নিদেনপক্ষে
৭০-২০০ ধার নিয়ে আসা উচিত ছিলো। তা এখন আর আপশোস করে কীই বা হবে এই ভেবে ওই
২৪-৭০ দিয়েই অল্প সল্প চেষ্টা করলাম। বিশেষ কিসুই হল না। বিশেষ করে খান
কয়েক ধণেশ (হর্নবিল) খালি এদিক ওদিক করছিলো - ওগুলোর ছবি তুলতে পারলে কাজের
কাজ হত...<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEioOJNRy-UBOFXhpvPoBjH7TJxRcUpTN_WM3_MVv47AdAFs2ybby2mL-3MbifwlwmhjJFaLFSIyxdAD9vxRsEX47zgWk7Le3NrkqBXmIpeWAnNvM5vf9ohk52jZsDd40H1VYK5iXQ/s1600/DSC_1129.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="958" data-original-width="1600" height="238" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEioOJNRy-UBOFXhpvPoBjH7TJxRcUpTN_WM3_MVv47AdAFs2ybby2mL-3MbifwlwmhjJFaLFSIyxdAD9vxRsEX47zgWk7Le3NrkqBXmIpeWAnNvM5vf9ohk52jZsDd40H1VYK5iXQ/s400/DSC_1129.jpg" width="400"></a></div>
<br>
দিব্যি বসেছিলুম ওয়াচটাওয়ারে একখান মাদুর পেতে। হঠাৎ গোঁ গোঁ করে বেশ
কয়েকটাই জিপসি ধেয়ে এলো বাইরের দিক থেকে। আর সেগুলো থেকে পিল পিল করে লোক।
জিপসিপিছু ছজন মতন - কাজেই শ-খানেক বা আরো বেশি লোক তো হবেই। তারা এসেই খুব
হন্তদন্ত হয়ে টাওয়ারের সামনে ফাঁকা জমিটাতে নেমে পড়লো - খুব হইচই -
মোবাইলে ছবি, সেল্ফি স্টিকে মোবাইল লাগিয়ে দুশো মিটার দূর থেকে ভিডিও তোলার
প্রচেষ্টা, সেটা হয় না বলে আরো খানিক হইচই, অবশেষে দুদ্দাড় করে টাওয়ারে
ওঠা, টাওয়ারে খানিক ভূমিকম্পের এফেক্ট...আমরা না, মোটামুটি হাঁ হয়ে বসে আছি
তখন...মানে ব্যাপারটা কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে। ওয়াচটাওয়ারটা ফরেস্ট বাংলোর
পাশেই, আর সেই সময়ে বাংলোর সামনে কিছু কাজ হচ্ছিলো - তার কিছু খুটখাট
আওয়াজও ছিলো - যদিও সেই আওয়াজটা জঙ্গলের অ্যাম্বিয়েন্সে বেখাপ্পা ঠেকছিলো
না। হঠাৎ, টাওয়ারের তলা থেকে বাজখাঁই গলায় কেউ চেঁচিয়ে উঠলেন - "আমরা মাল
দিয়ে দেখতে এসেছি, তোরা এরকম আওয়াজ করলে আর জানোয়ার আসবে?"<br>
<br>
দুশো মিটার দূরে ওয়াটার হোলটায় চারটে বাইসন ছিলো, দুটো উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটা দিলো।<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhNOEt8-Vbta-VeQY45mt9EhFZ-S3gBIGlUjQ6AtbicFNDccrlrDkWVblXXpSNSYh-zlLzSkQtyCHM8sIdDDOmHHICTdFeik4VRCbTqKva42xoUoKoA70KovFgBFkjzt_fx1ojtMQ/s1600/IMG-20181023-WA0017.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1040" data-original-width="585" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhNOEt8-Vbta-VeQY45mt9EhFZ-S3gBIGlUjQ6AtbicFNDccrlrDkWVblXXpSNSYh-zlLzSkQtyCHM8sIdDDOmHHICTdFeik4VRCbTqKva42xoUoKoA70KovFgBFkjzt_fx1ojtMQ/s400/IMG-20181023-WA0017.jpg" width="225"></a></div>
<br>
<br>
আরো অনেক কিছুই হচ্ছিলো। টাওয়ারের ওপরে দাঁড়িয়ে নীচে কারো উদ্দেশ্যে
(তারস্বরে) বলা - এই আমার একটা ছবি তুলে দে তো, বা এর উল্টোটাও। স্টর্ক
জাতীয় পাখি দু একটা হেঁটে বেড়াচ্ছিলো জলায় - সেগুলো দেখিয়ে "ওই দ্যাখ বাবু,
ওই দ্যাখ - হর্নবিল"। একটা ময়ূরী জলার পাশে আসার চেষ্টা করছিলো - তার পেখম
না থাকায় এমনই সমবেত দুঃখ হল, এ ময়ূরীটা লজ্জা পেয়ে আর এলোই না।<br>
<br>
সবুজ পোশাক পরা কয়েকজনকে দেখে বুঝলাম এরা ফরেস্ট গার্ড। তাদের কাছে জানলাম
- এইসব গাড়িগুলো ডেইলি টুরিস্টদের গাড়ি। এঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ডুয়ার্স
বেড়াতে এসে চালসা/মালবাজারের হোটেলে থাকেন, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট সকালে দু
ঘন্টা আর বিকেলে দু ঘন্টার সাফারি চালায়, সেই টিকিট কেটে এঁরা জঙ্গলে
ঘোরেন। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব হওয়া উচিৎ ছিলো জঙ্গলে কী কী করা যায়
আর কী কী করা যায় না সেগুলো বুঝিয়ে দেওয়া - সেটা হয় বলে মনে হল না। কারণ
যা যা করার কথা নয় - উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় পরা থেকে শুরু করে চেঁচামেচি,
হইচই, সেল্ফি স্টিক - সমস্তই হচ্ছিলো, এবং অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে। আর একটা
কাজ তো অবশ্যই করা উচিৎ - গাড়ির সংখ্যার ওপর একটা লিমিট রাখা। কারণ বিরক্ত
হয়ে যখন নেমে এলাম, তখন অন্ততঃ খান পঁচিশেক জিপসি ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
দাঁড়িয়ে ছিলো।<br>
<br>
নেমে আসাটা অবশ্য বোকামো হয়েছিলো - কারণ সেই যে ট্রাইবাল নাচের কথা
বলেছিলাম - সেটা এই ডেইলি টুরিস্টদের প্যাকেজেরই অংশ। অত গাড়ির মিছিল সব
গিয়ে পৌঁছলো পানঝরাতেই। আমরা পৌঁছে দেখি তখনই সামনের লনটা পুরো ভর্তি।
টাওয়ারে থেকে গেলে সেখানটা খালিই পেতাম, হয়তো কিছুক্ষণ দাঁড়ালে হাতির দেখা
পেলেও পেতে পারতাম...<br>
<br>
যাই হোক - ভিড়ের মধ্যে আর নাচ দেখতে যাইনি, বরং বাংলোর সামনে রকে বসে চা
আর পকোড়া খেয়ে গল্পসল্প করলুম। যখন বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে (এবং সব টুরিস্ট
ফিরে গেছে), আমি একটু বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলুম - তখন হঠাৎ কসম্সে বলছি -
টায়ার ফাটার মত একটা আওয়াজ এলো উল্টোদিকে নদী পেরিয়ে জঙ্গলের দিক থেকে, আর
তার পরেই "আঃ" করে একটা চিৎকার - বাজি ফেলে বলতে পারি সেটা মানুষের গলার,
আর আওয়াজটা বন্দুক জাতীয় কিছুর। তারপরেই বড় বড় টর্চের আলো ওদিক থেকে দেখা
যেতে লাগলো। পানঝরার কেয়ারটেকার দুজন বল্ল হাতি এসেছে সম্ভবতঃ, যদিও ওদের
টর্চের আলো (সাথে আমার সাথে আনা বড় ক্যাম্প লাইটের আলো) দিয়েও কিছু দেখা
গেল না। ওদিকের আলোগুলো কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে আবার নিভে গেলো। কী
হয়েছিলো বুঝলাম না, তবে পরের দিন দেবাশিসের সাথে কথা বলে মনে হল
চোরাশিকারের ঘটনা হলেও হতে পারে - ওদিকে বেশ কয়েকটা জঙ্গলের সিকিউরিটির
দায়িত্ব এখন এসএসবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, কারণ ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট
ছড়াচ্ছে - এবং এসএসবির মুখের আগে গুলি চলে। ঠিক কী হয়েছিলো সেদিন, তা হয়তো
কখনোই জানতে পারবো না - পরের দিন কাগজ বা লোকাল লোকের মুখেও কিছু শুনিনি,
তবে যতবার ব্যাপারটা মনে পড়ে, ততবারই চোরাশিকারের ধারণাটাই আরো গেঁথে বসে।<br>
<br>
যাই হোক, পানঝরায় আমাদের এক রাতেরই থাকা ছিলো। জিনিসপত্র রাতেই গুছিয়ে
রাখলাম। পরের দিন ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে যাবো - গৌহাটি যাওয়ার রাস্তা ধরে
জলদাপাড়া পেরিয়ে মেন্ডাবাড়ি/চিলাপাতা। <br>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/12/road-to-nowhere_5.html?m=1">(চলবে)</a><br>
<hr>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/11/road-to-nowhere_27.html">(আগের কথা)</a></div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-41233361005516312062018-11-27T06:28:00.001+00:002020-06-30T13:30:01.103+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (৮ম পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
সম্পূর্ণ নির্জনতা চান? টোটাল সলিটিউড? যেখানে অন্য ট্যুরিস্ট এসে লাফালাফি
করবে না...শুধু আপনি, আপনার অল্প কয়েকজন সঙ্গী, ক্যামেরা, বই? মৌচুকী
ক্যাম্প একেবারেই তাই। যে একদিন বা দুদিন এখানে থাকবেন, আপনার সঙ্গী বলতে
(সঙ্গে যারা আছে তারা বাদ দিয়ে) চারপাশের জঙ্গল, বেশ কিছু পাখি,
ঝিঁঝিঁপোকার ডাক, সন্ধ্যেবেলা আলো দেখে ধেয়ে আসা দলে দলে পোকা, দুটো
হৃষ্টপুষ্ট কুকুর, আর বুদ্ধ - মানে মৌচুকীর কেয়ারটেকার। টুরিস্টের ভিড় নেই,
মেমোরেবিলিয়ার দোকান নেই, গাড়ির আওয়াজ নেই...নিশ্ছিদ্র নিশ্চুপ নির্জনতা।<br>
<br>
পাখির সীজনে গেলে - মানে আরেকটু শীত পড়লে - আপনি হেঁটে হেঁটে পিছনের
পাহাড়টায় উঠতে পারেন - পাখির ছবিশিকারীদের স্বর্গ। আকাশ পরিষ্কার থাকলে
পূবদিকে ভুটান পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। আর যদি আরেকটু অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছে
থাকে, তাহলে যে পাথরবসানো রাস্তায় উঠেছেন, সেই পথ বেয়েই নেমে যেতে পারেন
পনেরো কিলোমিটার মতন দূরে মূর্তি নদীর ওপর একটা ছোট ঝরনার ধারে - জায়গাটার
নাম ওরা দিয়েছে "রকি আইল্যান্ড", বা পিকনিক করে আসতে পারেন রিভার ক্যাম্পের
কাছে মূর্তির ধারে। আর যেতে পারেন যুগলে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বা nth
মধুচন্দ্রিমার জন্যে - ঠকবেন না গ্রান্টী।<br>
<br>
আমরা গেছিলাম ল্যাদ খাবো বলে। আর আমার সুপ্ত ইচ্ছে ছিলো একটু pampered
হওয়ার। ঋতিকে বললাম - রোজ তো আমি তোদের সবাইকে ঘুম থেকে তুলে স্কুল যাবার
জন্যে তৈরী করি, এই কদিন না হয় তোরা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবি, ব্রেকফাস্ট
খাওয়াবি, ঘুরতে নিয়ে যাবি...ঋতি শুনে এক কথায় উত্তর দিলো - "আহ্লাদী":-)<br>
<br>
সেদিন মৌচুকী পৌঁছে দেখলাম দোতলা কাঠের বাড়িটায় নীচের তলায় দুটো ঘর খালি,
দোতলায় একটা ফ্যামিলি রয়েছে - তারা পরের দিন ফিরে যাবে। নীচের দুটো ঘরের
মাঝখানে খাবার জায়গা। তিনবেলা খাবার পাবেন - সকালে ব্রেকফাস্ট, দুপুরের
লাঞ্চ, রাতের ডিনার। এর মাঝে চা পেয়ে যাবেন চাইলে। নীচের ঘরে জিনিসপত্র
রেখে একটু আশপাশটা দেখতে দেখতেই দুপুরের খাবার ডাক পড়লো। সাধারণ খাওয়া -
ডাল, ভাত, তরকারি আর ডিমের ঝোল, কিন্তু পরিমাণ দেখে চক্ষু চড়কগাছ। বুদ্ধ
মনে হয় খোদ আবদুর রহমানের হাতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত। একটা পেল্লায় ক্যাসারোলে
ভাত, প্রায় সেরকমই বড় পাত্রে ডাল/তরকারি...ডিমের ঝোলে ডিমের সংখ্যা অবশ্য
মাথাপিছু দুটো করে। খাবার দেখিয়ে বুদ্ধ বললো - কম পড়লে বলবেন, আরো দিয়ে
যাচ্ছি। খাওয়া শেষে দেখলাম ভাতের ক্যাসারোলের ওপরের ১/৩ কমেছে মাত্র, ডাল
প্রায় যেমনকার তেমনি রয়ে গেছে, তরকারি - মানে তেলতেলে আলুভাজাটাই পুরো শেষ,
আর ডিমের ঝোলটা। বুদ্ধকে জানিয়ে দিতে হল যে ভাত/ডালের পরিমাণটা একটু কম
হলেই ভালো...<br>
<br>
দুপুরে বাংলো খালি হয়ে যায় - বুদ্ধ আর ওকে সাহায্য করে বাচ্চামতন একটা
ছেলে - ওরা নীচে ওদের গ্রামে যায়। একা থাকার অভ্যেস না থাকলে সেই সময়টা মনে
হবে ভূতের বাড়িতে বসে আছেন। আলো পড়ে আসে তাড়াতাড়িই, পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘ
নামে - আস্তে আস্তে অল্প অল্প দেখতে পাওয়া ভুটান পাহাড় পুরো মেঘে ঢেকে যায়।
নীচে কয়েক কিলোমিটার দূরে গ্রামটার ছোট ছোট বাড়িগুলোও চলে যায় মেঘের
আড়ালে। কিছুক্ষণ পর বাড়িগুলোতে আলো জ্বলে উঠলে মেঘের মধ্যে দিয়ে আবছা আলোটা
দেখা যায়। আর দেখা যায় উল্টোদিকের পাহাড়ের গায়ের বাড়িগুলোর আলো।<br>
<br>
বারান্দায় বসে বই পড়ছিলাম, উঠে আলোটা জ্বালাতে হল। আর তার কিছুক্ষণ পরেই
দলে দলে পোকা ধেয়ে এলো। প্রথমদিকে কত রকমের পোকা সেটা গোণার একটা ক্ষীণ
চেষ্টা করেছিলাম - অল্প সময়ের মধ্যেই হাল ছাড়তে হল - কারণ পোকার সংখ্যা আর
তার রকমের সংখ্যা হাতের বাইরে ততক্ষনে। বুদ্ধ এসে চা দিলো, তারপর আবার বই
পড়া বা বকবক করা - কাজ বলতে এই। ছেলেমেয়ে কিছুক্ষণ বই পড়লো, কিছুক্ষণ
মোবাইলে গেম খেললো। ওপরের পরিবারের লোকজনের সাথে দুটো চারটে কথা হল চা
খাওয়ার সময়...<br>
<br>
রাতের খাবারের সময় সেই একই হাল - দুপুরের মত। রুটি কটা লাগবে তা আর বলা
হয়নি - অতএব খান পঁচিশেক রুটি এসে হাজির। সাথে আবার তেলতেলে আলুভাজা, ডাল
আর চিকেন। অল্প ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া, সাথে গরম রুটি, ডাল ইত্যাদি -
রোজকার দুটো রুটির লিমিট পেরিয়ে সেদিন মনে হয় খান আষ্টেক খেয়ে ফেলেছিলাম।
রান্নাও এখানে ভালোই করে, আর মুরগীটাও পোলট্রির পানসে মুরগী নয়...<br>
<br>
ন'টা বাজতেই পাহাড়ে মাঝরাত হয়ে যায়। নিঝুম অন্ধকারে চারপাশে ঝিঁঝির ডাক
ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। ও হ্যাঁ, দোতলায় পায়ে চলার জন্যে কাঠের মেঝের
ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ ছাড়া।<br>
<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEghGPEQt1je5QHpLVkoQeYxhkJKjsWgOxaFv69Y_ILP3A8R0BAT6SrRLrKj1u0_4EW7jNsvFVdYD2ub-bjXaFe6zBSACfM6XsdLnnNtQ2my3IAZKbli3OHMBuqP0TfgRu6LVADgWg/s1600/DSC_1108.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="959" data-original-width="1600" height="238" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEghGPEQt1je5QHpLVkoQeYxhkJKjsWgOxaFv69Y_ILP3A8R0BAT6SrRLrKj1u0_4EW7jNsvFVdYD2ub-bjXaFe6zBSACfM6XsdLnnNtQ2my3IAZKbli3OHMBuqP0TfgRu6LVADgWg/s400/DSC_1108.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/12/road-to-nowhere.html?m=1">(চলবে)</a><br>
<br>
<br>
<hr>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/11/road-to-nowhere_12.html">(আগের কথা)</a></div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-82318305570946026812018-11-12T11:02:00.000+00:002020-06-30T13:29:22.273+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (৭ম পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
দুপাশে চাপড়ামারির জঙ্গল ফেলে রেখে কালো কুচকুচে পিচ ঢালা কুমানি রোড চলে
গেছে সাম্তালেখোলার দিকে। দু চোখ যদি খোলা রাখেন, পাশের জঙ্গলে হঠাৎ করে
হরিণ দেখে ফেলতেই পারেন। আর পাখি তো অগুণতি, তেমন তাদের রকমারি ডাক। কলকাতা
স্টাইলে জানলা বন্ধ করে এসি চালিয়ে গাড়ি চালালে এসব কিছুই মিস করে যাবেন -
তাই জানলা খুলে গাড়ি আস্তে চালান - পরিষ্কার হাওয়ার সাথে জঙ্গলের গন্ধ
নাকে এসে ঢুকবে। গাড়ির স্টিরিওটাও বন্ধ রাখুন - বরং এই জঙ্গলের গান শুনুন -
হরেক রকমের পাখির ডাক, অন্ততঃ তিন চার রকমের ঝিঁঝিঁর ডাক, হাওয়ার ধাক্কায়
লম্বা গাছের পাতার ঝিরিঝিরি আওয়াজ...<br>
<br>
সিপচু শহীদ বলিদান পার্ক ছাড়িয়ে আরো কিছুটা এগোলে পড়বে খুনিয়া মোড় - একটা
তেমাথা। ডানদিকের রাস্তা চলে গেছে ঝালং এর দিকে, আপনি ঘুরবেন বাঁদিকে - নয়া
বস্তির দিকে। নয়া বস্তিতে পড়েই দেখবেন জিটিএ এলাকায় এসে গেছেন। আর একটু
এগিয়ে একটা তেমাথায় প্রায় হেয়ারপিন বেন্ড (রাস্তা প্রায় ভাঙাই এখানে) ঘুরে
নেমে যাবেন মূর্তি নদীর দিকে। একটা সরু ব্রীজের ওপর দিয়ে নদী পেরিয়ে শুরু
ডুয়ার্স অঞ্চলের চা-বাগান - এইটাই সামসিং। সরু রাস্তা চা-বাগানের মধ্যে
ঘুরে ঘুরে অল্প ওপরের দিকে উঠে গেছে - রাস্তার দুপাশে একটু কালচে সবুজ
পাতাওয়ালা চা-গাছ (দেশের যাবতীয় সিটিসি চা সাপ্লাই যায় ডুয়ার্সের এইরকম
চা-বাগানগুলো থেকেই), আর ইতস্ততঃ ছড়িয়ে আছে প্রচূর পাথর - সম্ভবতঃ মূর্তি
নদীর সাথে বয়ে এসেছিলো কোনোকালে। শুনলাম খুব সকালে এখানে আসতে পারলে অল্প
দূরে ভুটান পাহাড়ের পিছন থেকে অসামান্য সূর্য্যোদয় দেখা যায় - যদি আকাশ
পরিষ্কার থাকে। আর থাকে নানা রকমের পাখি - যদি আপনার পাখির ছবি তোলার শখ
থাকে...<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjVzD7GQWpGEHqOwodS37dyHgvDy6c_V20nCwWlWVL5UGc_CFtDy-fk06pqDy-vrjIHqF2YcqkfnEsH3n5MmuHwj5vTF8PvnEaGdgacOgdaI7GR08uE3CVPzNfkMtPOn1Yh9d-V4A/s1600/IMG-20181023-WA0011.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="585" data-original-width="1040" height="225" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjVzD7GQWpGEHqOwodS37dyHgvDy6c_V20nCwWlWVL5UGc_CFtDy-fk06pqDy-vrjIHqF2YcqkfnEsH3n5MmuHwj5vTF8PvnEaGdgacOgdaI7GR08uE3CVPzNfkMtPOn1Yh9d-V4A/s400/IMG-20181023-WA0011.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiAnUrQ5efvDRnomskTsxWq5yJXfyj2ETnFV2-TvNCloYWq3En6p36067h3GtetfELpjjPiRKhqnCoaAsyWw_KqgtSvjXCQhl0p7Id-ru0NnWMGheoO_HsZ7kX3jiZ_tTlljDVfyQ/s1600/IMG-20181023-WA0035.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="585" data-original-width="1040" height="225" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiAnUrQ5efvDRnomskTsxWq5yJXfyj2ETnFV2-TvNCloYWq3En6p36067h3GtetfELpjjPiRKhqnCoaAsyWw_KqgtSvjXCQhl0p7Id-ru0NnWMGheoO_HsZ7kX3jiZ_tTlljDVfyQ/s400/IMG-20181023-WA0035.jpg" width="400"></a></div>
<br>
সামসিং চা বাগান পেরিয়ে পর পর কয়েকটা ছোট গ্রামের মধ্যে দিয়ে ঘুরে ঘুরে
রাস্তা চলে গেছে সান্তালেখোলার দিকে - চেনা না থাকলে হারিয়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা প্রচুর, তাই মাঝে মাঝেই মোড়ের মাথায় জিগ্গেস করে নিতে হচ্ছিলো -
বিশেষ করে এক দুই জায়গায় রাস্তার কাজের জন্যে ডাইভার্শন থাকায় - এবং তার
ফলে বার দুয়েক অফরোডিং ও করতে হল। দেবাশিসের ছোট গাড়িতে চারজন ছিলো বলে এক
জায়গায় তিনজনকে নেমে গাড়ির ওজন কমিয়ে গাড়ি পার করতে হল। একটু বেশি গ্রাউন্ড
ক্লিয়ারেন্স হওয়ার দরুণ আমরা বেঁচে গেলাম।<br>
<br>
কিছুদূর এগোতেই পড়বে ফাড়ি বস্তি - ছোট্ট একটা গ্রাম। রাস্তা এখানেই শেষ -
মানে বাইরে থেকে আসা এমনি গাড়ির। সামনে একটা গেট রয়েছে যেটা পেরোতে হলে
আপনার কাছে হয় সান্তালেখোলা রিভার ক্যাম্প বা মৌচুকি ফরেস্ট বাংলোর বুকিং
থাকতে হবে। যদি নদীর ধারে পিকনিকে যেতে চান, বা পাহাড়ের পথে হাইকিং করতে
চান - হেঁটে যেতে পারেন, অথবা ওখানে কিছু মারুতি ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে - তাদের
ভাড়ায় নিতে পারেন। গাড়ি নিয়ে গেট পেরোতে গেলে আপনার কাছে কাগজ থাকতেই হবে।<br>
<br>
তখন প্রায় বারোটা বাজে বলে একটা ছোট দোকানে বসে আমরা একটু মোমো আর চা
খেলাম। আর একটা দোকান নজরে পড়লো - যার সামনে বড় ফ্লেক্স লাগানো - ছবিসহ -
কবে যেন "তিনি" এখানে এসে মোমো আর চা খেয়ে দাম দিয়েছিলেন!!!<br><br>
দেবাশিসদের টাটা করে রওনা দিলাম ফরেস্ট বাংলোর দিকে - ওরা ফিরবে জলপাইগুড়ি। আমরা যেদিন মেন্ডাবাড়ি যাবো, সেদিন আবার ওদের সাথে দেখা হবে।<br>
<br>
গেট পেরিয়ে রাস্তা জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে নেমে গেছে নীচে - নদীর ধারে
রিভার ক্যাম্পের দিকে, আর একটা সরু ইঁট পাতা রাস্তা উঠে গেছে পাহাড়ের গা
বেয়ে - সেইটাই ধরতে হবে আমাদের।<br>
<br>
এখানে আগে একটা ডিসক্লেমার দিয়ে রাখি। সান্তালেখোলা রিভার ক্যাম্প বুক না
করে মৌচুকি বুক করার ছোট একটা কারণ আছে। আগে, বহুদিন ধরে বহুবার বিলেতের
লেক ডিস্ট্রিক্ট বা স্কটিশ হাইল্যান্ডস বা আমেরিকায় রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল
পার্কের পাহাড়ি রাস্তা গাড়ি নিয়ে চষে ফেলেছিলাম, এমনকি আমেরিকায় যেটাকে
হায়েস্ট মোটোরেবল রোড বলে - রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কে - প্রায় সাড়ে
বারো হাজার ফুট উঁচু - তাও। কিন্তু এই গাড়ি নিয়ে পাহাড়ে যাবো শুনলেই
চেনাজানা প্রায় সকলেই হাঁ হাঁ করে ওঠেন - পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানো কী
মুখের কথা ইত্যাদি বলে - তাঁদের কাছে লেক ডিস্ট্রিক্ট/স্কটিশ হাইল্যান্ডসের
রাস্তা কলকেই পায় না একেবারে। তা হাত মকশো করার জন্যে (বরং বলা ভালো হাত
যে মকশো যে করাই আছে সেটা দেখানোর জন্যেই) মৌচুকি যাওয়া, রিভার ক্যাম্পে না
গিয়ে। একটুখানি অফরোডিং। একটুখানি প্রমাণ।<br>
<br>
পাহাড়টা বিশেষ উঁচু নয়, পাশে গভীর খাদও নেই। যেটা আছে সেটা হল না-থাকা
একটা রাস্তা। গুগুল ম্যাপে এখনো যদি দেখেন, দেখবেন ফাড়ি বস্তি থেকে একটা
ডটেড লাইন উঠে গেছে মৌচুকি অবধি। কিছুদিন আগে অবধিও এই পথে গাড়ি যেত না।
ইদানিং পাথর ফেলে একটা রাস্তা বানানো হয়েছে - চড়াইটাও মন্দ নয় - জঙ্গলের
মধ্যে ঘুরে ঘুরে এই পাথর ফেলা পথ উঠে গেছে প্রায় সাত কিলোমিটার। গাড়ি চলবে
দুলে দুলে, ঝড়ের নদীতে নৌকোর মত। সামান্য অসাবধান হলেই হয় চাকা পাথরে
ঠেকবে, বা গাড়ির তলায় জানান দেবে - মোবিল ট্যাঙ্ক ফেটে গেলেই চিত্তির। পথে
বিশেষ অসুবিধা আর কিছু নেই - মুশকিলটা হল ওটাই রাস্তা কিনা সেইটা কিছুতেই
বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ওই গ্রেডিয়েন্টে আর অসমান পাথরের মধ্যে ফার্স্ট
গিয়ারের ওপরে গাড়ি উঠবে না, আর কাজেই যেতে হচ্ছে বেজায় আস্তে - মানে সাত
কিলোমিটার পেরোতে ঢের সময় লাগবে। কাউকে জিগ্গেস করার উপায় নেই, কারণ কেউ
কোত্থাও নেই, আর মোবাইলও মৃত। বেশ খানিকটা ওঠার পর (ততক্ষণে গাড়ির মধ্যে
পিনড্রপ সাইলেন্স - শুধু বাইরে ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই - দুটি
চ্যাটারবক্সই একেবারে সুইচড অফ) একটা দুটো বাড়ি চোখে পড়লো - রাস্তাটা দুভাগ
হয়ে গেছে এখানে। নেমে গিয়ে ডাকাডাকি করে একজনকে পেলাম - জানতে পারলাম
রাস্তা ঠিকই আছে, আরো কিছুটা ওপরে উঠতে হবে, মানে প্রায় পাহাড়টার মাথায়।
নিশ্চিন্ত হয়ে এগোতে এগোতে দুটো বাঁক পেরোতেই দেখি একটা গেট (মানে ওই লেভেল
ক্রসিং এর গেটের মত) আর তাতে তালা বন্ধ। আর ওপর দিকে দেখা যাচ্ছে সবুজ
কাঠের দোতলা একটা বাড়ি - ওইটাই ফরেস্ট বাংলো।<br>
<br>
খেয়েছে। এবার আবার কাকে ডেকে তালা খোলাতে হবে? একটু এপাশ ওপাশ ঘুরে কাউকে
না দেখে বাধ্য হয়ে বার দুই তিন হর্ন বাজালাম। সাথে সাথেই বাংলোর একটা কোণা
থেকে দুটো মুন্ডু বেরিয়ে এলো। অত দূরে চেঁচালে শোনা যাবে না মোটে, তাই হাত
নাড়িয়ে ইশারা করাতে একজন মিনিট কয়েকের মধ্যে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে চলে এলো।
বুকিং রয়েছে জানাতেই খুল যা সিম সিম...আর খান তিনেক মোড় ঘুরতেই একটা ফাঁকা
জায়গা, তার মধ্যে সবুজ দোতলা কাঠের বাড়িটা।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiWxScbn8Mgy9ewI2ET2ZkIjZYnzXq_VZ7gdFzxncaRHR721sXhp5jb1s1n7s-rert8WxvTw5JqxmpODhqWs438eWrGuRSczZPFaQX8ww9mP9-2_GtVNtfx-acWmx4Mi1qjn_4T6g/s1600/IMG_20181015_145522.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1200" data-original-width="1600" height="300" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiWxScbn8Mgy9ewI2ET2ZkIjZYnzXq_VZ7gdFzxncaRHR721sXhp5jb1s1n7s-rert8WxvTw5JqxmpODhqWs438eWrGuRSczZPFaQX8ww9mP9-2_GtVNtfx-acWmx4Mi1qjn_4T6g/s400/IMG_20181015_145522.jpg" width="400"> </a></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
(ফিরে আসার পরে একটা জিনিস খেয়াল করলাম - মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো বলে একটা
সিনেমাও আছে। অজানা একটা জঙ্গলে তিনটে ছেলের প্যারানর্মাল অভিজ্ঞতা নিয়ে -
সেটা নাকি একটা কুড়িয়ে পাওয়া হ্যান্ডি-ক্যাম থেকে বের করা। টুক করে
সিনেমাটা দেখে ফেলতে পারেন। মৌচুকির গল্পে পরে আসবো।<br>
<br>
<a href="https://www.imdb.com/title/tt7855306/)" target="_blank">https://www.imdb.com/title/tt7855306/)</a></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
<br></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/11/road-to-nowhere_27.html?m=1">(চলবে)</a> <br>
</div>
<hr>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;">
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/11/road-to-nowhere_7.html">(আগের কথা)</a></div>
</div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-25735962603943009332018-11-07T11:01:00.000+00:002020-06-30T13:28:30.770+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (৬ষ্ঠ পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
রাত সাড়ে এগারোটায় প্রায় টলতে টলতে, (আর গাড়ির বাকিরা ধুঁকতে ধুঁকতে)
টিলাবাড়ি পৌঁছে আর কিছু নজর করার অবস্থা ছিলো না। সকালে ঘুম ভাঙতে দেখলাম
কমপ্লেক্সটা বেশ বড়। মানে বেশ ভালোই বড়। সাজানো বাগান, পাথরের ফোয়ারা, বড়
পার্কিং লট, মিউজিয়াম, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। কটেজগুলোর যা সাইজ, একটায়
অনায়াসে চারজন থাকা যায়, কিন্তু ব্যবস্থা এবং নিয়ম করে রেখেছে দুজনের। বছর
দুয়েক হল তৈরী হয়েছে এই কমপ্লেক্সটা, উত্তর বঙ্গে ট্যুরিজম বাড়ানোর জন্যে,
যদিও, ফরেস্ট লজ বলতে যা বোঝায় টিলাবাড়ি একেবারেই সেরকম নয়, বরং গরুমারার
জঙ্গলে এতটা জায়গা নিয়ে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স একটু বাড়াবাড়ি (এবং বেখাপ্পা)
ঠেকেছে। জঙ্গল এলাকার বাইরে হলে ব্যাপারটা অন্যরকম হত। ক্যামেরা আর বের
করতে ইচ্ছে করছিলো না - হাতের কাছে মোবাইল ছিলো, তাতেই এদিক ওদিক কয়েকটা
ছবি তুলে রেখেছিলো জনতা, ডকুমেন্টেশনের জন্যে (হোয়াটস অ্যাপের দৌলতে
রিয়েলটাইম খবরাখবর যায় বিভিন্ন জায়গায়)।<br>
<br>
আরো একটা জিনিস দেখে ছেলেমেয়ের খুব মজা - রাতে যেখানে গাড়ি রেখেছিলাম, তার
পাশে একই মেক/মডেল/ট্রিম এবং কাছাকাছি রেজিস্ট্রেশন নম্বরের আর একটা গাড়ি,
শুধু রঙটা আলাদা।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj-f8X93dFDKrVY-GLCuOJighqEGICISC34UbdHPrJbl9wA_VprSQccGwgM_uZJG7MbYLuDSpuyvmE1OXP2l4Fx0m5dlnCQLX9wFs62iomzmjZhayZfl4Tvgx1R4Xq6-Vcg-JobVw/s1600/IMG-20181023-WA0045.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="585" data-original-width="1040" height="225" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj-f8X93dFDKrVY-GLCuOJighqEGICISC34UbdHPrJbl9wA_VprSQccGwgM_uZJG7MbYLuDSpuyvmE1OXP2l4Fx0m5dlnCQLX9wFs62iomzmjZhayZfl4Tvgx1R4Xq6-Vcg-JobVw/s400/IMG-20181023-WA0045.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjSO7dDge-tv4g0tyxe9OKoCLQb0gtIikwelnXrIqnJCr11U6qZEzS_3e1vzhD15a5et1EaeJlFycB-rau0_WOG4mumtDpwaWgvaptvHEHdmtlxqQRSNm8Aj3T7rndFrltoEemyPw/s1600/IMG-20181023-WA0048.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="585" data-original-width="1040" height="225" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjSO7dDge-tv4g0tyxe9OKoCLQb0gtIikwelnXrIqnJCr11U6qZEzS_3e1vzhD15a5et1EaeJlFycB-rau0_WOG4mumtDpwaWgvaptvHEHdmtlxqQRSNm8Aj3T7rndFrltoEemyPw/s400/IMG-20181023-WA0048.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgtfvfq7339Yjxr3Y_HjPskO1KIFVpKi-pewRlCNs3-mp__KsAIj0XIBy5_cKBpFk269DA8dq99gaM2CMqLbo1SCJV71cCuyeG9hg6VhOM-aJjAUMl4kI-f3d7rKCXo_YTzyUG9_w/s1600/IMG-20181023-WA0052.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="585" data-original-width="1040" height="225" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgtfvfq7339Yjxr3Y_HjPskO1KIFVpKi-pewRlCNs3-mp__KsAIj0XIBy5_cKBpFk269DA8dq99gaM2CMqLbo1SCJV71cCuyeG9hg6VhOM-aJjAUMl4kI-f3d7rKCXo_YTzyUG9_w/s400/IMG-20181023-WA0052.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgBLGRRzu0uyIwq-mcdhFAri5gtk5rR7gR90btso2xKO_BzQS1_mQbnwBM6veYI72SttTvRSu9uhojNS_wQs7iFY9EGDvZ8m1eSgO4HPUuwJ7Jc01pUe9y2Zq0U8lR-CMJGsIDMjQ/s1600/IMG-20181023-WA0054.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="585" data-original-width="1040" height="225" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgBLGRRzu0uyIwq-mcdhFAri5gtk5rR7gR90btso2xKO_BzQS1_mQbnwBM6veYI72SttTvRSu9uhojNS_wQs7iFY9EGDvZ8m1eSgO4HPUuwJ7Jc01pUe9y2Zq0U8lR-CMJGsIDMjQ/s400/IMG-20181023-WA0054.jpg" width="400"></a></div>
<br>
<br>
ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি - তার লিস্টে বেশ কিছু নাম থাকলেও পুরী-তরকারি
আর টোস্ট ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেলো না। খেতে খেতে আলাপ হল অন্য গাড়িটার
লোকজনের সাথে - তাঁরা কলকাতার সেটা তো অবভিয়াস - যাবেনও সান্তালেখোলা - তবে
থাকবেন রিভার ক্যাম্পে (আমরা পাহাড়ের ওপর মৌচুকি জাঙ্গল ক্যাম্পে), তারপর
যাবেন "পারেন" আর "জলদাপাড়া"।<br>
<br>
স্নানটান সারতে সারতে দেবাশিস ফোন করলো - পানঝরা, সান্তালেখোলা,
মেন্ডাবাড়ির কাগজপত্র সব ওর কাছে আছে - ও এসে দিয়ে যাবে। আর আসছেই যখন, তখন
পানঝরার রাস্তাটা চিনিয়ে দিয়ে যাবে, কারণ গুগুল ম্যাপে শুধু চাপড়ামারির
গেটটা দেখা যায় - সেটাও একটু এদিক ওদিক ঘুরে। দশটা নাগাদ চেক-আউট করলাম।
এসব সরকারি গেস্ট হাউজে এখন চেক-আউটের সময় একটা করে গিফট-প্যাক দিচ্ছে (রুম
পিছু একটা) - বাঁশের পেনদানি গোছের কিছু, আর একটা চকোলেট।<br>
<br>
এর মধ্যে দেবাশিসও এসে গেল, সাথে পুরো পরিবার - স্বাতী (দেবাশিসের বৌ), আর
যমজ ছেলেমেয়ে। এই ফাঁকে পরিচয়টা দিয়ে রাখি - দেবাশিসের সাথে আমার আলাপ
আমাদের ফটোগ্রাফি ক্লাবে। মধ্যমগ্রামে থাকতো, পেশা ছিলো পড়ানো - স্কুলে
টুলে নয়, পুরো টিউশনি। অবসরে ছবি তোলা। ক্লাবের একজনের মেয়েকে পড়াতো, তাই
ক্লাবে সবাই "দেবুস্যার" বলেই ডাকে। ভালোই ছিলো, হঠাৎ একদিন কী খেয়াল হল -
কলকাতা/মধ্যমগ্রাম ছেড়ে দিয়ে চিলাপাতায় রওনা দিয়ে দিলো - সেখানেই থাকে,
জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, জমি কিনে ফার্মিং করে, আর ট্যুর অপারেটরের ব্যবসা।
ভালোই চলে - ইদানিং পাহাড়ে (মানে সিকিম) আর জঙ্গলে (মানে ডুয়ার্সে) ভালো
পরিচিতি হয়ে গেছে। লোক খুবই ভালো, শুধু মাথাটা...মানে মাঝেমাঝেই বেশ আজগুবি
দাবীদাওয়া করে থাকে...মাসখানেকে হিমালয়কে চক্কর দেওয়ার মতন।<br>
<br>
টিলাবাড়ি থেকে বেরোতে পৌনে এগারোটা বাজলো। তেল নিতে হবে - গেলাম চালসার
দিকে। সেখান থেকে আবার ঘুরে মূর্তি রিভার ক্যাম্পের পাশ দিয়ে একটা সরু
ব্রীজ পেরিয়ে চাপড়ামারির রাস্তায় উঠলাম। আগের দিন রাতের মত অন্ধকারে
হাতড়ানো নয় আর - দুপাশে ঘন জঙ্গল দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ একটা হরিণও...এরা
মাঝেমাঝেই লাফিয়ে রাস্তায় চলে আসে বলে এই পুরো এলাকাতেই স্পীড লিমিট বাঁধা।
বেশ জোরে পাখির ডাক শোনা যায়। আর একটা কনস্ট্যান্ট উঁচুতারে ঝিঁঝিঁর ডাক -
আমাদের কলকাতা শহরতলির ঝিঁঝিঁর চেয়ে অনেকটাই অন্যরকম।<br>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/11/road-to-nowhere_12.html?m=1">(চলবে)</a><br>
<hr>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/11/road-to-nowhere.html">(আগের কথা) </a><br>
<br>
<br></div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-30288669909889585172018-11-01T06:41:00.003+00:002020-06-30T13:27:29.741+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (৫ম পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
ঝটকা সামলে লরি ড্রাইভার আর চা-দোকানীর সাথে কথা বলে যা বুঝলাম সেইটা হল এই রকম -<br>
<br>
আমরা ভাগলপুর থেকে পঁচিশ কিলোমিটার মত দূরে। সামনে দুটো উপায় আছে - এক,
ওই পথেই এগিয়ে ভাগলপুর হয়ে মোকামা পৌঁছে গঙ্গা পার হওয়া - সেক্ষেত্রে আরো
অনেকটা পশ্চিমে যেতে হচ্ছে, ফের আবার পূবদিকে ঘুরে পূর্ণিয়া যেতে হবে; আর
দুই, কিছুটা পিছিয়ে বাঁদিকে গোড্ডা বলে একটা জায়গার ডিরেকশন পাওয়া যাবে -
সেই রাস্তা ধরে গেলে পাকুড় পেরিয়ে ধূলিয়ানে গিয়ে ফের ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪
(গুগুলের বক্তব্য অনুযায়ী ন্যাশনাল হাইওয়ে ১২) পাওয়া যাবে। সেই রাস্তা
কিছুদিন আগে অবধি বন্ধ ছিলো, সদ্য খুলেছে, আশা করা যায় আমরা পেরিয়ে যেতে
পারবো। এছাড়া উপায় হল দুমকা অবধি ফেরৎ যাওয়া - মানে আরো অনেক বেশি উল্টো
পথে ঘোরা আর সময় নষ্ট। দেবাশিসকে ফোন করলাম - ও শুনে গোড্ডার রাস্তাটাই
সাজেস্ট করলো। ম্যাপে দেখলাম - ধূলিয়ান প্রায় ১৬০ কিলোমিটার, লরি ড্রাইভার
বললো ঘন্টা চারেক লাগতে পারে। গুগুল ম্যাপও দেখলাম বলছে সাড়ে চার ঘন্টা।
অর্থাৎ, সেদিন সকালে বেরনোর সময় যে দূরত্বটা ছিলো ৫০০কিলোমিটার (বারো
ঘন্টার ড্রাইভ), সেইটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে ৬৭৩ কিলোমিটার, প্রায় আঠারো ঘন্টার
জার্নি! ছিলো রুমাল, হয়ে গেলো একটা বেড়াল। কিন্তু উপায় তো নেই।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh4Q1_HzRY5Zv1Gma-xsI8p8LNflt4P-IQv926LF5SyUuAhlITSQkKP53FFI80knwhrCdGd35RPZOz_JMAlrCY2EQHEmJkoETwpUlYuvYEj33YR1cNrr1CG0pURrFh7XMxTooUTtQ/s1600/reroute.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="621" data-original-width="1039" height="238" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh4Q1_HzRY5Zv1Gma-xsI8p8LNflt4P-IQv926LF5SyUuAhlITSQkKP53FFI80knwhrCdGd35RPZOz_JMAlrCY2EQHEmJkoETwpUlYuvYEj33YR1cNrr1CG0pURrFh7XMxTooUTtQ/s400/reroute.png" width="400"></a></div>
<br>
গাড়ি উল্টোদিকে ঘুরলো। যে জায়গাটায় আমরা পৌঁছেছিলাম, সেটার নাম
হাতপুরৈনী (Hatpuraini/हातपुरैनी)। উল্টোপথে কিছুটা গিয়ে পড়লো
পঞ্জওয়ারা/গোড্ডার রাস্তা। আরো এক প্রস্থ লোকজনকে জিজ্ঞেস করে ঢুকে পড়লাম -
সেটা সম্ভবত স্টেট হাইওয়ে ৮৪।<br>
<br>
লরি ড্রাইভার কেন "আশা করছিলো যে আমাদের গাড়ি চলে যাবে" সেটা বোঝা গেল
খানিকটা। সেই প্রথমবার গাড়ি নিয়ে চিলিকা গেছিলাম যখন, তখন স্থানীয় লোকজন
পুরী যাওয়ার একটা শর্টকাট বাতলেছিলো - সেই পথে গিয়ে হাল ঢিলে হওয়ার যোগাড়
হয়েছিলো সেবার - খানাখন্দ ভর্তি, আর একদিন ধরে রাস্তা বাঁধানোর কাজ চলছে -
রাস্তার দুটো দিকের উচ্চতার মধ্যে ফুটখানেকের তফাৎ। এও একই অবস্থা। কিছুদূর
পরে পরেই ডাইভার্সন - সেটা নীচে কালভার্টের তলা অবধি নেমে গর্ত পেরিয়ে
আবার ওপরে উঠছে - এর মধ্যেই বাস, অটো (সেও জাম্বো অটো), লরি, কনস্ট্রাকশন
ভেহিকল - সবই চলছে। গতিক নাই, আমরাও চল্লুম। গোড্ডা পেরিয়ে রাস্তাটা ঠিকঠাক
হল। তখন আমরা ঢুকছি সুন্দরপাহাড়ি বলে একটা জায়গায়...<br>
<br>
সুন্দরপাহাড়ি জায়গাটা বেশ মিষ্টি মতন। ঝাড়খন্ডের এই অঞ্চলটা হল রাজমহল
পাহাড়ের অংশ - সাঁওতাল পরগনা বললে আরো চেনা লাগবে। ছোটনাগপুর মালভূমির
কাছাকাছি হলেও দিব্যি সবুজে ঢাকা, রুক্ষ নয়। হয়তো গঙ্গার অববাহিকার মধ্যে
থাকার কারণেই। ঋকের প্রিয় সাবজেক্ট ছিলো ভূগোল - গড়গড়িয়ে কিছু রানিং
কমেন্টারি দিয়ে গেলো - রাজমহল পাহাড়ের এই পাহাড়গুলো জুরাসিক আমলের, অগ্নুৎপাতের কারণে তৈরী, সাঁওতাল পরগনার উত্তর-দক্ষিণ বরাবর রয়েছে, এখানেই
গঙ্গা তার দক্ষিণমুখী গতিপথ বদলে পূর্বদিকে যাওয়া শুরু করে; পাহাড়ের
ওপরদিকে থাকে পাহাড়িয়া উপজাতিরা, আর নীচে উপত্যকা অঞ্চলে সাঁওতালরা - যাদের
জীবিকা চাষবাস।<br>
<br>
রাস্তাটা এখানে বেশ নির্জন। উল্টো দিক থেকে কচ্চিৎকখনো দু একটা গাড়ি আর
রাস্তার পাশের ঘন শালবনে শুকনো পাতা বা কাঠ কুড়োতে আসা কিছু সাঁওতাল মেয়ে
ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ, নিঝ্ঝুম জঙ্গল দুপুরে ঘুমিয়ে
রয়েছে। তার মধ্যে দিয়ে এঁকে বেঁকে একটা উঁচুনীচু রাস্তা এগিয়ে গেছে - মাঝে
মাঝেই চড়া বাঁক...<br>
<br>
সুন্দরপাহাড়ির পরে জোলো, যোগেশ্বর, লিটিপাড়া, হিরণপুর পেরিয়ে পাকুড়।
পাকুড়ে এসেই রাস্তাটা কেমন আবার ঘিঞ্জি হয়ে গেলো। গাদা গাদা লরি, অটো, বাস।
মাঝে মাঝেই লম্বা লরির লাইন। এদিকে সেদিন আর আমাদের হাতে সময় নেই বলে
উল্টো লেন দিয়েই মাঝে মাঝে এগোচ্ছি। বাজার মত একটা জায়গা পেরিয়ে আরো কিছুটা
যেতেই দেখলাম সামনেই হাইওয়ে - ন্যাশনাল হাইওয়ে ১২ (বা ৩৪) - যেখান থেকে
আমাদের আবার বাঁদিকে হাইওয়ে ধরে চলে যেতে হবে ফারাক্কার দিকে।
ওই মোড় থেকে ফারাক্কা আরো আঠারো কুড়ি কিলোমিটার মত। কিন্তু ওখান থেকেই
৪-লেন হাইওয়ের বাঁ দিকের পুরোটাই বন্ধ করে লরি দাঁড়িয়ে রয়েছে। শ'য়ে শ'য়ে,
বা হাজারে হাজারে। ঘড়িতে তখন প্রায় তিনটে বাজে, টিলাবাড়ি আরো প্রায় সাড়ে
তিনশো কিলোমিটার...<br>
<br>
ফারাক্কায় আপাতত ওয়ান-ওয়ে একটা সিস্টেম চালু করেছে। আধ ঘন্টা করে মালদার
দিক থেকে আসা গাড়ি ছাড়া হচ্ছে, আধ ঘন্টা করে দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাওয়ার
গাড়ি। সেটা ছাড়াও, এনএইচ ৩৪ (বা ১২) তেও চতুর্দিকে কাজ হচ্ছে, ফলে অনেক
ডাইভার্সন, খোঁড়াখুঁড়ি। যেমন, ফারাক্কায় ঢোকার আগে একটা ব্রীজ পেরোতে হয় -
টেম্পোরারি ব্রীজ - সেটাও ওয়ান ওয়ে, কিন্তু সেখানে দুদিকে গাড়ি আটকানোর
জন্যে কেউ নেই। ইন ফ্যাক্ট, আমাদেরই ব্রীজে কিছুদূর উঠেও পিছিয়ে আসতে হল -
কারণ উল্টোদিকে বাস উঠে এলো - আর জানেনই তো, হাইওয়েতে (আসলে ভারতের সব
রাস্তাতেই) সাইজ ম্যাটারস - রাইট অফ দ্য ওয়ে (right of the way) বস্তুটি
এখানে নেই।<br>
<br>
ঘটনাচক্রে, এবং কিছুটা এদিক ওদিক দিয়ে নাক গলিয়ে (সচরাচর এই কাজগুলো নিজে
করি না, কিন্তু সেদিন লাটাগুড়ি পৌঁছনোর জন্যে যা থাকে কপালে করে চালাতে
হয়েছে) একটা আধ ঘন্টার ফ্লো-এর মধ্যে ঢুকে ব্যারেজে উঠে পড়লাম। এইবার পুরো
ব্যারেজটাই ঢিকির ঢিকির। প্রায় আড়াই কিলোমিটারের ব্যারেজ - যতক্ষণ লাগলো,
হেঁটে গেলেও মনে হয় তার চেয়ে কম সময়ে পৌঁছে যেতাম। তবে লোকে কেন ফারাক্কা
ব্যারেজের রাস্তাকে গাল দেয় সেটা স্পষ্ট বোঝা গেল - মানে ওখানে ঠিক রাস্তা বলে কিছু নেই। অসংখ্য উঁচুনীচু পিচের বাটিকে কেউ যদি সিমেন্ট দিয়ে জুড়ে
রাখে তাহলে যা হবে, ফারাক্কার অবস্থা তাই। আসলে গর্ত দিয়ে তৈরী বললেই হয়।
লীলা মজুমদারের টংলিং এ যেমন সেই পাঁউরুটি দেখে বলেছিলো - পষ্ট দেখতে
পাচ্ছি কতগুলো ফুটো জুড়ে জুড়ে তৈরী...<br>
<br>
এর কিছুদিন আগেই মাঝেরহাট ব্রীজ ভেঙে পড়েছে - অতএব, চতুর্দিকে সাজো সাজো
রব (গত সাত বছরে কী করছিলেন সেই প্রশ্ন করা যায় না) - তাই ফারাক্কার একটা
লেন বন্ধ করে পিচের লেয়ার খুঁড়ে তোলা হচ্ছে, অন্য লেন দিয়ে ওয়ান ওয়ে
সিস্টেমে গাড়ি চলছে। শামুকের মতন গতিতে গড়াচ্ছে বললেই ভালো। আড়াই
কিলোমিটারের ব্রীজ পেরোতে প্রায় আধ ঘন্টা। তুমুল ধুলো - জানলা খুলবেন তার
উপায় নেই। রাস্তার পাশে রেললাইনের ধারে সংখ্যা লেখা রয়েছে - সম্ভবত
মাইলস্টোন। কড়িকাঠ নেই বলে সবাই সেইগুলো গুণতে গুণতেই সময় কাটালো...কী আর
করবে। এর মধ্যে দুটো ব্যাপার চোখে পড়লো।<br>
<br>
এক - লরি রাত ন'টার পরে ছাড়ার কথা হলেও, ওই দুপুরেও কিছু লরি ফারাক্কা পেরোচ্ছে। কীভাবে পেরোচ্ছে আন্দাজ করার জন্যে নকুলদানা নেই।<br>
<br>
আর দুই - পিচের লেয়ার কাটা হচ্ছে বড় পাওয়ার ড্রিল দিয়ে, তুমুল আওয়াজ আর
ভাইব্রেশন। সেফটি রুল অনুযায়ী (এটা সুমনা দেখেই বললো, কারণ ওদের নানা দেশের
কনস্ট্রাকশন প্রোজেক্ট হ্যান্ডল করতে হয়) ওই পাওয়ার ড্রিল কোনো মানুষের
মিনিট পাঁচেকের বেশি একটানা ধরে থাকার কথা নয় - মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হয়।
একাধিক লোকের পালা করে কাজটা করার কথা। এখানে হেলথ অ্যান্ড সেফটির এই
নিয়মের কথা হয় কেউ জানে না, বা খরচ বাঁচানোর জন্যে নিয়মের তোয়াক্কা কেউ করে
না। মানুষ এখানে বড়ই শস্তা।<br>
<br>
শেষমেষ সাড়ে তিনটের একটু আগে ফারাক্কা পেরিয়ে গেলাম; তারপর কালিয়াচক -
ট্র্যাফিক জ্যামের জন্যে কুখ্যাত - সেটাও পেরোলাম খুব অল্পই দাঁড়িয়ে।
দুপুরে খেতে হবে - সকালের পাঁউরুটি আর বালুসাই অনেকক্ষণ হজম হয়ে গেছে, আর
যে পথে এসেছি সেখানে শালের গুঁড়ি আর গাছের পাতা ছাড়া খাওয়ার মত কিছু চোখে পড়েনি; তাছাড়া
ফারাক্কা পার হওয়ার তাড়াও ছিলো। কালিয়াচক থেকে মালদা অবধি রাস্তা কখনো
ভাঙা, কখনো মোটামুটি - আর ঠিকঠাক হোটেল ছাড়ুন, ধাবাও বিশেষ চোখে পড়ে না।
তার মধ্যেই একটা ছোট হোটেলে রুটি-সবজি-ডিমভাজা খেয়ে আর ঋক/ঋতির খাবার প্যাক
করে (ওরা দুজনে তখন পালা করে পাবজি নিয়ে ব্যস্ত বলে খাওয়ার সময় পায়নি)
এগিয়ে পড়লাম। যেখানে সুযোগ পাচ্ছি, স্পীড বাড়িয়ে সময় বাঁচানোর চেষ্টা করছি -
এই জিনিসটাও সচরাচর করি না। মালদায় কতটা জ্যামে পড়বো তাই নিয়ে চিন্তায়
ছিলাম - কারণ দেবাশিসের কাছে ওর অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি আগে। ভাগ্যক্রমে, এবং
সম্ভবত ফারাক্কার দৌলতে, মালদায় জ্যামে দাঁড়াতেই হল না প্রায়। মালদা শহর
ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা দূর অবধি রাস্তা ভালো - চওড়া চার লেন - সেখানেও গাড়ি দৌড়
করানো যায়।<br>
<br>
তখনো ঠিক করে রেখেছি অন্ততঃ শিলিগুড়ি অবধি চলে যাই। যদি খুবই দেরী হয়ে
যায়, শিলিগুড়িতে একটা কোনো হোটেলে দাঁড়িয়ে যাবো, টিলাবাড়ির রিজার্ভেশনটা না
হয় নষ্টই হবে। আর যদি মনে হয় পৌঁছে যেতে পারবো, তাহলে টিলাবাড়িতে ফোন করে
রাতের খাবারের কথা জানিয়ে রাখবো।
বেশ কিছুটা রাস্তা একটু জোরে ছুটিয়ে কিছুটা সময় মেকাপ করে ছটার একটু আগে
রায়গঞ্জ পেরোলাম। রোড ট্রিপের প্রাইমারি নিয়ম - যে প্রতি দুই থেকে তিন
ঘন্টায় একবার দাঁড়ানো - সেদিনের মত ভুলে গিয়ে। ততক্ষণে বারো ঘন্টা পেরিয়ে
গেছে আমি একটানা স্টিয়ারিং ধরে আছি - মাঝে ওই এক দু বার চা খেতে দশ মিনিট,
আর দুপুরে খাওয়া আধ ঘন্টা বাদ দিলে...<br>
<br>
রায়গঞ্জ পেরিয়ে বালিহারা, মকদমপুর ছাড়িয়ে আসে আলতাপুর। এনএইচ ৩৪ (বা ১২)
এখান থেকে সোজা চলে গেছে করণদিঘি ছাড়িয়ে ডালখোলা - এখানে পূর্ণিয়া থেকে আসা
এনএইচ ২৭ আর এনএইচ ৩৪ মিশে যাচ্ছে - যেটা কিষণগঞ্জ হয়ে শিলিগুড়ি যাচ্ছে।
এই রুটটা বিহার-পশ্চিমবঙ্গ মিশিয়ে। গুগুল ম্যাপ আমাকে অন্য রাস্তা দেখালো -
আলতাপুর থেকে একটা রাস্তা ডানদিকে ঢুকে গেছে - গুগুলের উচ্চারণ বুঝতে
পারবেন না, কাজেই যদি কখনো এই রোড ট্রিপে যান, তাই মনে করে রেখে দিন -
বোতলবাড়ি-রসখোয়া রোড - চলে যাচ্ছে সাবধান (ভয় নেই - এটা একটা জায়গার নাম),
রুদেল, গোয়াগাঁও হয়ে একেবারে ধানতলা - যেখানে রাস্তাটা ফের ন্যাশনাল
হাইওয়ের সাথে মেশে। প্রায় সত্তর কিলোমিটার রাস্তা, পুরোটাই উত্তর
দিনাজপুরের গ্রামাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে। মনে আছে, প্রথমদিন যে সেকমপুর-সাহাপুর রোড
(ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৪) ধরে গুশকরা পেরিয়ে সিউড়ি এসেছিলাম? এই রাস্তাটাও
সেরকমই। ধানক্ষেত, মাঠের মধ্যে দিয়ে পাক খেয়ে যাওয়া রাস্তা, মাঝে মাঝে
দুপাশে ছোট ছোট গ্রাম পড়ছে, বা খুব ছোট ছোট বাজার - এই গ্রাম বা
বাজারগুলোতে ঢোকা আর বেরনোর সময় হয় ছোট ছোট বাম্প, বা ব্যারিকেড - গাড়ির
স্পীড কমানোর জন্যে। এই জনপদগুলো বাদ দিলে রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার - শুধু
উল্টোদিকের গাড়ির হেডলাইট ছাড়া। অনেকেই আজকাল ডালখোলা এড়ানোর জন্যে এই
রাস্তাটা ব্যবহার করে - কারণ ডালখোলা পুরোপুরি আনপ্রেডিক্টেবল - আধ
ঘন্টাতেও পেরোতে পারেন, তিন ঘন্টাও আটকে থাকতে হতে পারে। তবে বড় লরি এদিকে
বিশেষ আসে না - বেশিরভাগই ছোট গাড়ি, ছোট ম্যাটাডোর আর কিছু বাস।<br>
<br>
নীচে রুটটা দিয়ে দিলাম।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgvIaeA5yEfnWofHBVxHn50LfE2il5vfKd48TCCpUaHxhn7FIMuq17mUdM-_J5nRX2U9WEoH8vUlInaT49INYGWLILSIk-fDf2UggmD8Cu0WESVOG5z6BARK-1wE99GzY3zApOag/s1600/Screenshot+from+2018-11-01+10-16-00.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="628" data-original-width="587" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgvIaeA5yEfnWofHBVxHn50LfE2il5vfKd48TCCpUaHxhn7FIMuq17mUdM-_J5nRX2U9WEoH8vUlInaT49INYGWLILSIk-fDf2UggmD8Cu0WESVOG5z6BARK-1wE99GzY3zApOag/s400/Screenshot+from+2018-11-01+10-16-00.png" width="373"></a></div>
<br>
কুয়াশা এদিন আরও বেশি। আর তার চেয়ে বড় সমস্যা উল্টোদিকের গাড়ির হাই বীমের
হেডলাইট। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমি একবার করে হেডলাইটে ছোট ফ্লিকার মারলে
উল্টোদিকের গাড়ির আলোও নেমে আসছে বটে, কিন্তু ঠিক পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ফের
চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে হাই বীম করে দিয়ে। কিছুক্ষণ পরে কারণটা বুঝলাম - নিজে
এক দুইবার এক্সপেরিমেন্ট করে। এই কাজটা করে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উল্টোদিকের
গাড়ির বাউন্ডারিটা দেখতে পাওয়ার জন্যে - যেটা সাধারণ হেডলাইটের আলোতে চাপা
পড়ে যায় - যদিও এইটাও না করাই কাম্য। রাতে এরকম রাস্তায় চালানোর সেরা উপায়
(যদি নিজেও যস্মিন দেশে যদাচার না করতে চান) হল উল্টোদিকের গাড়ির মাথার
দিকে লক্ষ্য রাখা, আর নিজের বাঁদিকে রাস্তার বাউন্ডারি দেখে গাড়ি চালানো -
আমি সাধারণতঃ ডানদিকে অল্প ঘুরে বসি - তাতে কিছুটা সুবিধা হয়। যদিও সেদিন যদিও অত টেকনিক্যালিটি ভাবার সময় ছিলো না। অন্ধকার নেমেছে, অন্য
গাড়ির আলো ছাড়া পথে কোনো আলো নেই, তায় কুয়াশা, তায় বার বার চোখ ঘড়ির দিকে
আর মোবাইলে অন করে রাখা গুগুল ম্যাপের দিকে যাচ্ছে। এস্টিমেটেড অ্যারাইভাল
টাইম (টিলাবাড়িতে) তখন রাত সাড়ে দশটার কাছাকাছি। থ্যাঙ্কফুলি, টিলাবাড়ি ঠিক
জঙ্গলের ভিতরে নয় যে গেট বন্ধ হয়ে যাবে - তাই দেরী হলেও ঢুকতে পারবো।
কিন্তু পৌঁছতে পারবো কিনা, সেইটা বড় প্রশ্ন তখনও।<br>
<br>
ঘন্টা দেড়েক লাগলো এই সত্তর কিলোমিটার পার হতে। মাঝে শুধু একবার চা খেতে
দশ মিনিট দাঁড়িয়েছি - সেদিনের মত শেষ স্টপ। ঠিক করে রেখেছি একেবারে
টিলাবাড়ি পৌঁছে, বা নেহাতই না পারলে শিলিগুড়িতে দাঁড়াবো। এই স্টেট হাইওয়ের
একদম শেষের দিকে - যখন গুগুল ম্যাপ বলছে "দুশো মিটার পর ন্যাশনাল হাইওয়ে ২৭
এ ডানদিকে ঘুরতে হবে" - মানে যে রাস্তাটা ডালখোলা হয়ে এসেছে, সেটাতে উঠতে হবে - হেডলাইটের আলোয় যা দেখলাম, সেটা মোটামুটি চোখ কপালে
তুলে দেওয়ার মত। রাস্তা সিম্পলি নেই। হয়তো কোনো কালে ছিলো - শের শাহ এর
আমলে - আপাতত পুরোটাই ঢেউ খেলানো পাথুরে জমি। একটা দুটো গাড়ি পেরোচ্ছে
সামনে দেখতে পাচ্ছি - উত্তাল নদীতে দুলন্ত নৌকোর মত - রাস্তার বাঁদিক থেকে
ডানদিক আড়াআড়ি গিয়ে গর্ত আর পাথরের পাশ কাটাতে কাটাতে।<br>
<br>
[পরে জানা গেছিলো এইটা নাকি বেশ কয়েক বছর ধরে একই রকম হয়ে আছে, প্রতি
বর্ষায় আরো একটু করে যন্ত্রণা বাড়ে। এবং বহুবার জানানো সত্ত্বেও কোনো
পরিবর্তন হয়নি। অনেকে বলে ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত, হাইওয়ে থেকে বাস বা লরি
যাতে এই রাস্তায় ঢুকে না আসে, সেইটা নিশ্চিত করার জন্যে। কথা হল বাস বা
লরির বরং এই রাস্তায় কিচ্ছুটি হবে না - ঘটাং ঘটাং করে পৌঁছে যাবে। চাপ হবে
ছোটো গাড়ির। ২০৯ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স নিয়েও বিআর-ভি এর তলা একবার ঘষে গেলো - একটা জায়গায় সময়মতন আড়াআড়ি
কাটাতে না পেরে। আরো ছোটো মারুতি
ইত্যাদি তো আরোই ঠেকে যেতে পারে খুব সাবধানে না পার হলে। যদি এই পথে যান ছোটো গাড়ি নিয়ে, আগে গাড়ি থেকে বাকি যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে খালি গাড়ি নিয়ে পার হবেন। অথবা এই রাস্তার ডানদিকে প্রায় সমান্তরালভাবে আরেকটা রাস্তা চলে গেছে গোয়ালপোখর হয়ে ইসলামপুর অবধি - যেটা "বেঙ্গল-বেঙ্গল" হিসেবে পরিচিত। সেইটা ধরে ইসলামপুর চলে গেলে ধানতলার কাছে এই ভয়ানক অংশটা এড়াতে পারবেন। সমস্যা হল এই পথটার একটু বদনাম রয়েছে - ছিনতাই সংক্রান্ত।]<br>
<br>
খুব আস্তে আস্তে এই অংশটা পেরিয়ে (একবার ঘষে গেলো, বার দুয়েক গাড়িতে বসা
অন্যদের মাথা ঠুকে গেলো...) উঠলাম ন্যাশনাল হাইওয়ে ২৭ এ, এর পর টার্গেট
যতটা সম্ভব সময় মেকাপ করে শিলিগুড়ি বাইপাস ধরা। টিলাবাড়ি তখনও দেড়শো
কিলোমিটার। মাঝে রয়েছে ইসলামপুর - আরেকটি বটলনেক। ইসলামপুরের কাছাকাছি পৌঁছে দেখি লম্বা লরির লাইন - দুই তিন কিলোমিটার তো হবেই। তখন ফের সেই উল্টোদিক দিয়ে এগিয়ে দরকারমত আবার ভিতরে সরে এসে (মানে যেসব জিনিস দেখে কলকাতার রাস্তায় এতদিন গালিই দিয়ে এসেছি) ইসলামপুর মোড় পেরিয়ে গেলাম। জ্যামের মূল কারণ রাস্তার ওপর বাজারের মধ্যে পেল্লায় একটা পুজো। দেবাশিস বার দুয়েক ফোন করে খোঁজ নিয়েছে। আর বলে দিয়েছে ইসলামপুর ছাড়ানোর বেশ খানিকটা পরে, মানে এই তিরিশ কিলোমিটার পরে আসবে টোলগেট। তারপর একটা নির্মীয়মান ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে ডানদিকে ঘুরে ধরতে হবে শিলিগুড়ি বাইপাস - মানে ফুলবাড়ি-ঘোষপুকুর রোড। সেই রাস্তা নিয়ে যাবে গাজলডোবা হয়ে জলপাইগুড়ির দিকে। শিলিগুড়ি এমনিতেই খুব ঘিঞ্জি - দুটি মোটে রাস্তা - সেবক রোড, আর হিলকার্ট রোড - যা কিছু আছে শিলিগুড়ির, সবই এই দুটো রাস্তার ওপর - কাজেই সাধারণ সময়েই ভিড় থাকে, পুজোর সময় আরোই ক্যাচাল - শিলিগুড়ি না গিয়ে বাইপাস ধরে জলপাইগুড়ি যাওয়াই তুলনামূলকভাবে ভালো অপশন।<br>
<br>
এর মধ্যে টিলাবাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি যে আমরা শিলিগুড়ি বাইপাসে পৌঁছে গেছি - আর ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে টিলাবাড়ি পৌঁছে যাবো। কিছু খাবারও বলে দেওয়া হয়েছে - ওরা রেখে দেবে - যদিও ইন-রুম ডাইনিং ওদের নিয়মে নেই, তাও কেয়ারটেকার ভদ্রলোক সেই রাতে আমাদের নিরুপায় দেখে সেই ব্যবস্থাই করে রেখেছেন।<br>
<br>
গুগুল ম্যাপ এই একবারই ভুল রাস্তা দেখালো। আমবাড়ি ক্যানাল রোড ধরার জন্যে এক জায়গায় বাঁদিকে যেতে বলে - সেই রাস্তাটা নেইই, সবে তৈরী হচ্ছে। একটা বেড়া দেওয়া রয়েছে - বাইক নিয়ে লোকে সেই বেড়া পেরিয়ে চলে যাচ্ছে - গাড়ি যাওয়ার কোনো উপায় নেই। গাড়ি নিয়ে যেতে হলে আরো একটু এগিয়ে বাঁদিকে রেলগেট পেরিয়ে চলে যেতে হবে গাজলডোবার দিকে। গাজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজ পার হয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। রাত পৌনে এগারোটায় এই ক্যানাল রোডে আর একটাও গাড়ি চোখে পড়ছে না। হেডলাইটের আলোয় যতদূর দেখা যাচ্ছে শুধু জঙ্গল। এইটা পুরোটাই একসময় বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলের অংশ ছিলো - এখন কিছু কিছু জায়গায় জনবসতি হওয়ার ফলে আলাদা হয়ে গেছে জঙ্গলগুলো।<br>
<br>
বৈকুন্ঠপুর মনে পড়ে? ভবানী পাঠক? দেবী চৌধুরানী? এই সেই বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল, আর এইখানেই তিস্তায় (বঙ্কিম যাকে ত্রিস্রোতা লিখেছেন) ভাসতো দেবীর বজরা।<br>
<br>
ঋক আর ঋতিকে গল্পটা বলতে চাইলাম - কিন্তু দুটি চ্যাটারবক্সই তখন অদ্ভুতভাবে চুপ করে গেছে। সারাদিনের ক্লান্তি হতে পারতো, কিন্তু ঋতি যা জানালো তাতে বুঝলাম দুজনেই একটু ভয় পেয়েছে। রাস্তার একপাশে মাঝে মাঝে একটা দুটো চা বাগান দেখা যাচ্ছে, বাকিটা জঙ্গল, অন্যপাশটা শুধুই ঘন জঙ্গল, তার মাঝে কুয়াশা, গাড়ির হেডলাইট ছাড়া আর একটাও আলো নেই, এর মধ্যে একটা একলা রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে কোথায় কতদূরে তা জানি না, কোনও মাইলফলকও চোখে পড়ছে না। আর সম্পূর্ণ জনমানবহীন অন্ধকারে শুধু গাড়ির হেডলাইটে চারদিক একটা পরিত্যক্ত ভুতুড়ে এলাকার মত লাগছে। হয় এদিকে কোনো জনবসতি নেই, নয়তো ততক্ষণে সকলের মাঝরাত হয়ে গেছে। এমনিতেই বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলের একটু বদনাম রয়েছে হাতির জন্যে, যদিও সেটা ঋক বা ঋতির জানার কথা নয়। কিন্তু ওই জঙ্গলে, রাতে, যদি গাড়ি খারাপ হয়, বা পাশের জঙ্গল থেকে কিছু বেরিয়ে আসে - এই ভয়ে ঋতি বিশেষ করে খুবই টেনশনে। টেনশন আমারও যে অল্প হচ্ছিলো না তা নয়। গুগুল এদিক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আর কোনো গাড়ি নেই কেন? এই চিন্তাটা মাথায় ঘুরছিলো - কাটলো রাস্তার পাশে একটা বোর্ডে লাটাগুড়ি ৩০ কিলোমিটার দেখে - এতক্ষণ পরে এই একটা সাইনপোস্ট। তার কিছু পরেই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটু দূরে বাঁদিক থেকে আসা গাড়ির আলো চোখে পড়লো - বুঝলাম আর একটা রাস্তার সাথে মিশছি, এবং সেই রাস্তায় গাড়ি যাচ্ছে। এখনো।<br>
<br>
অল্প পরেই গরুমারার সাইনপোস্ট চোখে পড়লো - বুঝলাম প্রায় এসে গেছি। ম্যাপও বলছে আর মাত্র কয়েক কিলোমিটার। অবশেষে, ঘড়িতে তখন বাজে সাড়ে এগারোটা - টিলাবাড়ি টুরিস্ট কমপ্লেক্সের অফিস বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়ালাম। ভিতরে তখনো দু তিনজন রয়েছে - আমাদের জন্যেই বসে আছে রাত্তির সাড়ে এগারোটায়।<br>
<br>
গাড়ি থেকে নামতেই পা-টা টলে গেলো। সামলে দাঁড়াতেই বুঝতে পারলাম এতক্ষণের টেনশন ঠিক কতটা ছিলো, আর এতক্ষণ - মানে সেই ভোর পৌনে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে এগারোটা - মাঝে বড়জোর আধ ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ব্রেক - মানে প্রায় একটানা আঠারো ঘন্টা একই ভাবে গাড়ি চালানোর ফল কীভাবে মাথায় জানান দিচ্ছে...তখনও মাথাটা দুলছে বেশ বুঝতে পারছি, মনে হচ্ছে একটা লাগাতার মোশনের মধ্যে রয়েছি...তখনও মনে হচ্ছে চলছি যেন...একা কি আমারই মনে হচ্ছে? সুমনা জানালো ওরও এই মোশনের অনুভূতিটা হচ্ছে। এর ওপরে আমি তখন চোখে হলুদ ফ্ল্যাশ দেখছি - সারা সন্ধ্যে উল্টোদিকের গাড়ির আলো চোখে পড়ার এফেক্ট - লিটারেলি সর্ষেফুল দেখা যাকে বলে।<br>
<br>
চেকইন করে ঘরে পৌঁছতেই খাবার দিয়ে গেলো - রুটি, আলুভাজা, কপির তরকারি। ক্ষিদেও পেয়েছিলো - গোগ্রাসে খেলাম। তারপরে বিছানায় বডি ফেলতেই সেদিনের মত ব্ল্যাক আউট।<br>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/11/road-to-nowhere_7.html?m=1">(চলবে)</a><br>
<br>
[পরে শুনেছি, গাজলডোবার পরে জঙ্গলের মধ্যে ওই রাস্তাতেও একসময় ছিনতাই লেগে থাকতো। ইদানীং অনেকে বলছেন যে সেটা কমে গেছে। তবু, বেশি রাতের দিকে ওই পথে না যাওয়াই ভালো। বরং ফালাকাটা-ময়নাগুড়ি হয়ে যেতে পারেন, বা সেবক-মালবাজার-চালসা হয়েও।]<br>
<br>
<hr>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/10/road-to-nowhere_24.html">(আগের কথা)</a></div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-47773258358742212302018-10-31T11:06:00.001+00:002020-06-30T13:26:25.868+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (৪র্থ পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgxNC_glTRoBuw_0P5qi7PGqKLnlDrqiZgUDTtWZEVbHYNeVBDas-jBBXBNE7ePkXs3KWc43UdRV3NsYosXS9p0OY8JpGBV521LS7wWo0jDfN1TiSy7XPxxkhzeE2Nq-0DUw9PL5g/s1600/Screenshot+from+2018-10-31+16-33-08.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="639" data-original-width="608" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgxNC_glTRoBuw_0P5qi7PGqKLnlDrqiZgUDTtWZEVbHYNeVBDas-jBBXBNE7ePkXs3KWc43UdRV3NsYosXS9p0OY8JpGBV521LS7wWo0jDfN1TiSy7XPxxkhzeE2Nq-0DUw9PL5g/s400/Screenshot+from+2018-10-31+16-33-08.png" width="380"></a></div>
<br>
আমার একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে - ঘড়িতে যে সময়েই অ্যালার্ম দিই না কেন, তার
মিনিট কুড়ি আগে ঘুম ভাঙবে, একদম ভাঙবেই। খুব রেয়ার কিছু দিন ছাড়া এত বছরে
এর কোনো নড়চড় হয়নি। এদিনও তাই হল। ভোর সাড়ে তিনটেতে অ্যালার্ম দিয়ে থাকলেও
ঘুম ভেঙে গেল তিনটের পরে পরেই। কিছুক্ষণ ল্যাদ খেয়ে উঠে পাশের ঘরে টোকা
মেরে সুমনাকে ঘুম থেকে তুলে নিজে তৈরী হয়ে ঋককে তুললাম। ওদিকে, সুমনাও তৈরী
হয়ে ঋতিকে তুলে দিলো। তারপর রিসেপশনে চাবি দিয়ে গাড়িতে ফের জিনিসপত্র
তুলে, নীচে দারোয়ানকে ঘুম থেকে তুলে গেট খুলিয়ে বেরোতে বেরোতে সেই পৌনে
পাঁচটা হয়েই গেলো।<br>
<br>
ওই ভোরে সিউড়ির রাস্তায় একটাও জনমনিষ্যি নেই, শুধু রাস্তার
ল্যাম্পপোস্টগুলো একা একা দাঁড়িয়ে আছে। রওনা দিলাম সিউড়ি-দুমকা হাইওয়ের
দিকে। পথে একটা পেট্রোল পাম্প দেখে ট্যাংক ভরে নিলাম। তারপর ফের চলা শুরু।<br>
<br>
এখানে প্রধান ভরসা গুগুল ম্যাপ, কারণ মিচেলিনের পুরনো ম্যাপে বর্ধমান থেকে
সিউড়ির যে রাস্তা দিয়ে এসেছি সেটা নেইই। আর যেহেতু গুগুল ম্যাপ বেশ
সুন্দরভাবে নিয়ে এসেছে, তাই ভরসাও বেড়েছে। তা এক্ষেত্রেও গুগুল ম্যাপ ধরেই
চলতে চলতে একটা বড় রাস্তায় এসে পড়লাম - সেখান থেকে লরি ছুটছে দেখতে পাচ্ছি।
মনে হল এটাই হয়তো সিউড়ি-দুমকা হাইওয়ে হবে, কিন্তু গুগুল তো আমাকে সোজা
এইটা পেরিয়ে উল্টোদিকের অন্ধকার রাস্তাতে যেতে বলছে। কেউ নেই যে জিগ্গেস
করবো, কাজেই, গুগুলকে ভরসা করে সোজা চলেই গেলাম। কিছুক্ষণ পরে দেখি সে
রাস্তা মাঠঘাটের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে চলছে, হাইওয়ের সাথে বিন্দুমাত্র মেলে
না, আর বেশিটাই মাটির - আর প্রায় কাদা মাটির, আর সুড়কি। এইটাই কি ঠিক
রাস্তা? কে জানে বাবা...এগিয়ে তো যাচ্ছি। আর মাঝেমাঝেই আগের দিনের সন্ধ্যের
মত হঠাৎ হঠাৎ কুয়াশা ধেয়ে আসছে কাঁচের ওপর। চার পাঁচ কিলোমিটার এভাবেই
চলার পর চোখে পড়লো একটা গুমটিঘর - তার সামনে একটা লোক কুপি জ্বালিয়ে বসে
রয়েছে। তাকেই শুধোলাম - এইটা কি দুমকার রাস্তা? সে বল্ল হাঁ হাঁ, ইটাই।
তারপর জিগ্গেস করলুম - আর কতটা এরকম রাস্তা? সে বল্ল আরো কিলোমিটার দুয়েক।<br>
<br>
অন্ততঃ হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গেলো - যে ভুল রাস্তায় আসিনি। দুই কিলোমিটারটা ঠিক
দুই ছিলো না, চার পাঁচ হবে হয়তো - তারপর পাকা রাস্তা দেখা গেলো। ততক্ষণে আলোও ফুটেছে, আশপাশটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে - মাঠ, কাশের বন, লাল
মাটি...ঋক/ঋতিকে দেখানোর ইচ্ছে ছিলো - কিন্তু দুজনের একজন পিছনের সীটে,
আরেকজন মাঝের সীটে লম্বা হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।<br>
<br>
রাস্তাটা ক্রমশঃ ভালো হল, তারপর বেশ ভালো হল। ভোরের হালকা শিশিরে ভেজা
কালো পিচঢালা রাস্তা এগিয়েছে দুপাশে ছোট ছোট গ্রাম ফেলে রেখে - রঙপুর,
ধানিয়াগ্রাম, বড়া চতুরি, সিধুলি...শেষে কেঁদুলী (এই সম্ভবত জয়দেবের
কেঁদুলী - ঠিক জানি না) ছাড়িয়ে ঢুকে গেলাম ঝাড়খন্ডে। গুগুল ক্রমাগত রাস্তার নাম বলে চলে,
প্রায় প্রতি জাংশনে - আর সে এক কিম্ভুত উচ্চারণে। ঝাড়খন্ডে ঢুকে পড়েছি বোঝা
গেল আশেপাশে দোকানের বোর্ডে ভাষা বদলে যাওয়ায়। প্রথম যে জায়গাটার নাম
খেয়াল করলাম সেটা হল দিগুলী। জানি না, সিধুলি, কেঁদুলী আর দিগুলী - এই
তিনটে পর পর জায়গার মধ্যে কোনো লিংক রয়েছে কিনা, নামের মিল রয়েছে তা তো
দেখাই যাচ্ছে।<br>
<br>
সিউড়ি থেকে ম্যাসাঞ্জোর প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার - এক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে
যাওয়া উচিৎ ছিলো - কিন্তু শুরুর ওই দশ কিলোমিটার মাটি-সুড়কির গর্তভরা
রাস্তায় সময় খেয়ে নেওয়ায় ম্যাসাঞ্জোর ব্যারেজের পাশে এসে পৌঁছলাম তখন ছ'টা
বেজে গেছে। মনটা চা চা করছে - সেই ভোরে উঠেছি, চা খাইনি। অথচ সকালের চা-টা
দুধ চিনি ছাড়া লিকার খেতে ইচ্ছে করে না - অনেকদিনের অভ্যেস। ড্যামের একদম
শুরুতেই একটা চায়ের দোকান - ভাবলুম যদি চা পাই। গিয়ে দেখি সে একটা বাচ্চা
ছেলে বসে রয়েছে - সে সবে দোকান খুলেছে, হয়তো তার বাপ বা মা কেউ এসে উনুন
ধরাবে। কাজেই চা পাওয়া গেল না, বরং ওইখানেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে সাথে আনা গরমজলের সদ্ব্যবহার করে সেই লিকার চা-ই
খেলাম। ঋক/ঋতি তখনো গভীর ঘুমে, কাজেই আমি একটা ধোঁয়াও টেনে নিলাম (টেরিয়ে
তাকাবেন না মোটে, এই লম্বা ড্রাইভে আমার অফিশিয়াল পারমিশন থাকে)। তারপর
ম্যাসাঞ্জোর লেকের ধার ধরে এগোলাম দুমকার দিকে।<br>
<br>
রাস্তার এই অংশটা বড় সুন্দর। ছোট ছোট লালচে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে রাস্তাটা
এঁকেবেঁকে শুয়ে রয়েছে ঝাঝাপাড়া ছাড়িয়ে আরো কিছু দূর অবধি। তারপর পাহাড় শেষ
হয়ে বিস্তীর্ণ রুক্ষ লালচে জমির মধ্যে দিয়ে সোজা টানা রাস্তা - মাঝে মাঝে
ওঠে নামে, আর কালো পিচের ওপর লালচে ধূলো ছড়িয়ে ছুটে যায় একের পর এক লরি....<br>
<br>
ম্যাসাঞ্জোর থেকে দুমকা হয়ে যে রাস্তাটা ভাগলপুরের দিকে চলে গেছে সেটা
ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৪এ। দুমকা অবধি এই নাম, তারপর দুমকা শহর বাঁদিকে ফেলে
রেখে ডানদিকে ঘুরে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১৭ সোজা চলে গেছে ভাগলপুর। সিউড়ি থেকে
হিসেব করলে সাত ঘন্টায় পূর্ণিয়া পৌঁছনোর কথা। ভোর পাঁচটায় বেরিয়েছি -
অর্থাৎ, দুপুরের মধ্যে পূর্ণিয়া পৌঁছে যাবো। দুপুরের খাওয়া পূর্ণিয়া ছাড়িয়ে
কোনো একটা ধাবায় সেরে নেবো, আপাতত সকালের জন্যে কিছু পেটে দিতে হবে।
দেবাশিস আগেই বলেছিলো এই রাস্তায় ভালো খাবারের দোকান পাওয়া একটু চাপের, ওর
সাজেশন ছিলো হোটেলে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরনো, বা প্যাক করে নিয়ে আসা - কিন্তু
ভোর সাড়ে চারটেয় ওসব হবে কোত্থেকে? আগের দিন বাড়ি থেকে রওনা দেওয়ার সময়
কিছু মিষ্টি ছাঁদায় বাঁধা ছিলো, আর ছিলো একটা পাঁউরুটির প্যাকেট। ঠিক হল
কোথাও থেকে ডিম কলা কিনে নেওয়া হবে, তাই দিয়ে ব্রেকফাস্ট মোটামুটি হয়ে
যাবে।<br>
<br>
হাইওয়ে দিয়ে যেতে যেতে মাঝেমাঝেই ছোটো ছোটো গ্রাম, বা আরেকটু বড় - ঠিক শহর
নয়, মাঝামাঝি কিছু বলা যায় - পেরোতে হয়। সেখানে বাজার টাজার বসেছে। গাড়ি
দাঁড় করানো একটু কঠিন - কারণ যে রাস্তায় বাজার, সেই একই রাস্তায় বাস, লরি,
অটো, টোটো, গরু, মোষ, ছাগল, হাঁস, মুরগি, মানুষ সবই একসাথে সহাবস্থান করে।
দুমকার একটু আগে থেকেই হাইওয়ের মসৃণ পিচের সাড়ে দেড়টা বেজে গেছে। পুরো
ভাঙ্গা না হলেও, টুকটাক ভাঙাচোরা, বাম্পার, ধুলো...আবার এই ছোটো বাজারগুলো
পেরিয়ে গেলে মোটামুটি ঠিকঠাক।<br>
<br>
তো এরকম একটা বাজার, যেখানে একটু চওড়া রাস্তা, আর রাস্তার পাশে কিছুটা
ফাঁকা জায়গা পেলাম, সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটা দোকানে কলা কিনলাম। কোনো
দোকানে ডিম পাওয়া যাবে? সেদ্ধ? কলার দোকানদার বল্ল - ইঁয়েহি মিল যায়েগা,
আভি ফুন লাগাতে হেঁ। সে দিব্যি মোবাইল বের করে কাউকে একটা ফোন করলো - আমায়
বল্ল - আন্ডেওয়ালেকো ফুন কিয়া। তা আমাদের দুর্ভাগ্য, আন্ডেওয়ালা তখনই সিদ্ধ
ডিম দিতে পারলো না। কিন্তু লোকটা আমাদের মত আরবিট লোকের জন্যে চেষ্টা তো
করেছিলো - সেটাকেই বাহবা দিতে হয়। আরো দু চার জায়গায় খোঁজ করলাম - চায়ের
দোকান ইত্যাদিতে। একজন বল্ল - নবরাত্রি শুরু হয়ে গেছে, আর কি কোথাও
পাবেন...হুঁ, সেইটা কারণ হতেই পারে। ডিমের আশা ছেড়ে দিয়ে এগোতে এগোতে
দেখলাম অনেক মিষ্টির দোকান পড়ছে - থরে থরে লাড্ডু, পেঁড়া সাজানো। আচ্ছা,
যদি নোনতা কিছু পাই...পুরি-সবজি, আলু-পরোটা? আমাদের একজন আবার সুগারের
রুগী, কাজেই শুধু পাঁউরুটি/কলা/মিষ্টিতে একটু আপত্তি আছে। নাঃ, পুরি-সবজিও
পাওয়া গেলো না, তবে বালুসাই দেখে লোভ হল। ফ্রেশ বানানো, মাছি বসছে যদিও, আর
গরুতে চেটেও থাকতে পারে - খোলা রাখা রয়েছে, গরু আশেপাশেই ঘুরছে দোকানের
সামনে...তা জাতীয় মা বলে কথা, চেটে দিলে দোষ নেই - এই ভেবে খান কয়েক কিনেই
ফেল্লাম। মাইরি বলছি - কলকাতায় অনেক বালুসাই খেয়েছি, কিন্তু ফ্রেশ বালুসাই,
সে রাস্তার দোকানে খোলা বিক্রি হলেও - জায়গার কল্যাণে কিনা জানি না -
ঝক্কাস টেস্ট। আমি তো খেলামই, ছেলেমেয়েও পটাপট খেয়ে ফেললো, এমনকি সুগারের
রুগীও খেয়ে নিলো। জায়গাটা খুব সম্ভবত হংসডিহা বা হাঁসডিহা - একদম
বিহার-ঝাড়খন্ড বর্ডারের কাছেই।<br>
<br>
ঝাড়খন্ড পেরোলাম, বিহারে ঢুকতে মনে হল এই যে নীতিশবাউকে লোকে এত তোল্লাই
দেয় - রাস্তা টাস্তা নাকি ব্যাপক বানিয়েছেন - সেটা কী সম্পূর্ণ ঢপ? মানে যা
দেখলাম তাতে মনে হল পূর্ণিয়ার বহু আগে, এমনকি ভাগলপুর পৌঁছনোরও আগে সকালে
যা খেয়েছি সব হজম হয়ে যাবে। রাস্তার ধারে বাজারের সংখ্যাও বাড়ছে, ভিড়ও
বাড়ছে - এইভাবে চললো বেশ কিছুটা। ভাগলপুর থেকে তখন ওই পঁচিশ-তিরিশ
কিলোমিটার দূরে - একটা পেট্রোল পাম্পে দাঁড়ালাম, একটু হাল্কা হওয়া দকরকার
সবারই। পাম্পের ঠিক মুখে একটা চায়ের দোকান - সেখান থেকে একটু গরম জল
ফ্লাস্কে ভরে নিতে হবে, আর চাও খাবো ভাবলাম। চা খেতে খেতে দোকানীর পাশে
একজনের সাথে কিছু কথা হল...<br>
<br>
কাঁহাসে আ রাহেঁ হেঁ?<br>
<br>
কলকত্তেসে।<br>
<br>
কাঁহা যাইয়েগা?<br>
<br>
শিলিগুড়ি যায়েঙ্গে।<br>
<br>
শিলিগুড়ি ইঁহাসে ক্যাইসে যায়েঙ্গে?<br>
<br>
কিঁউ? ভাগলপুর-পূর্ণিয়া হো কর?<br>
<br>
সাব, ভাগলপুর তো যায়েঙ্গে, পর পূর্ণিয়া ক্যায়সে যায়েঙ্গে?<br>
<br>
যা শালা, আমি তো হুব্বা। ভাগলপুর দিয়েই তো বিক্রমশীলা ব্রীজ টপকে পূর্ণিয়া
যায়। আমি তাই বল্লুম। যা উত্তর দিলো শুনে সাথে সাথে যেন
ঝড়-ঝঞ্ঝা-বজ্রপাত-সুনামি-ভূমিকম্প-অগ্নুৎপাত-দাবানল সব একসাথে...<br>
<br>
সাব, হাম ইয়াঁহা তিন দিনসে বইঠে হ্যায়। বিক্রমশীলা ব্রীজ পুরা বন্ধ হ্যায়, সতরা তারিখ কো চালু হোগা! উও দেখিয়ে, উও মেরা ট্রাক।<br>
<br>
কেলেঙ্কারি করেছে। গুগুল ম্যাপ তো দিব্যি দেখাচ্ছে বিক্রমশীলা ব্রীজে স্লো
ট্রাফিক। বন্ধ তো বলছে না। কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝলাম ২৭শে সেপ্টেম্বর
বিক্রমশীলা ব্রীজ বন্ধ হয়েছে, ১৭ই অক্টোবর খোলার কথা। সেই সময়ে একদম মাঝের
একটা ৩৪ মিটারের স্প্যানে কাজ হচ্ছে বলে এপার থেকে ছোট গাড়ি (অটো ইত্যাদি)
কিছুদূর যাচ্ছে, তারপর হেঁটে পেরিয়ে ওপার থেকে আবার সেই অটো/টোটো। সেই
জন্যেই ট্রাফিক বন্ধ দেখাচ্ছে না, কনজেস্টেড বা স্লো দেখাচ্ছে।<br>
<br>
(কথা বলতে বলতে গুগুলে সার্চ মেরে দেখলাম - ঠিকই, ২৪শে সেপ্টেম্বরের টাইমস
অফ ইন্ডিয়ায় খবর আছে - সেখানেও বলেছে ১৭ই অক্টোবর খুলবে - আমাদেরই দোষ -
ফারাক্কা এড়ানোর জন্যে যখন নতুন প্ল্যান করলাম, তখনই চেক করে নেওয়া উচিৎ
ছিলো - কিন্তু এ জিনিস মাথায় আসবে কী করে যে এরকম একটা ভাইটাল ব্রীজ বন্ধ
হওয়া সত্ত্বেও ফারাক্কায় এই সময়েই মেনটেনেন্স শুরু হবে...)<br>
<br>
তখন বাজে প্রায় বেলা এগারোটা। কী করি? আবার দুমকা অবধি ফিরে যেতে হবে?<br>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/11/road-to-nowhere.html?m=1">(চলবে)</a><br>
<hr>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/10/road-to-nowhere_31.html">(আগের কথা)</a></div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-27949504412841252332018-10-31T04:53:00.002+00:002020-06-30T13:25:29.290+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (৩য় পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
১৩ তারিখ সকাল থেকে অল্প টেনশন ছিলো - একেবারে ছিলো না বলা যাবে না। কারণটা মূলতঃ অনেক দিন পরে লঙ ড্রাইভে বেরোনো। সেই ২০১৩ সালের পর। এর মধ্যে বয়স বেড়েছে, রিফ্লেক্স কমে থাকতেই পারে। আর যেটা হয়েছে সেটা হল প্রোগ্রেসিভ লেন্স - মানে চালশেও ধরেছে আর কী। রোজ দুবেলা নেতাজীনগর - নিউটাউন গাড়ি ঠ্যাঙালেও, হাইওয়েতে যাওয়াআসা নিয়ে দেড় হাজার কিলোমিটার একটু অন্য জিনিস। তবে সে বেশিক্ষণ থাকেনি - হাইওয়েতে পড়তেই আবার সেই চেনা অনুভূতিটা ফিরে এলো - কালো পিচঢালা রাস্তায় দৌড় দৌড় দৌড়...<br>
<br>
সেদিন মনে হয় পঞ্চমী ছিলো। এই প্রায় মহালয়া থেকে পুজো উদ্বোধন শুরু করে
কী রেটে যে হাল বেহাল হয়েছে সেটা কলকাতায় না থাকলে বোঝা অসম্ভব। মোটামুটি
দ্বিতীয়া থেকেই রাস্তায় কুলকুলিয়ে লোক নেমে গেছে, বাকিরা দেখে ফেলার আগেই
ঠাকুর দেখতে হবে এরকম কিছু মানসিকতা নিয়ে মনে হয়। মহালয়ার দিন উত্তর থেকে ফেরার সময়
সন্ধ্যেবেলা দেখেছি মণি স্কোয়্যার থেকে লেক টাউন অবধি জ্যাম - তা পঞ্চমীর
দিন কী হতে পারে বুঝতেই পারছেন। ওই দুপুরবেলাতেও লর্ডস মোড় পেরোতে
কান্নাকাটির অবস্থা। এর মধ্যে দুটো চল্লিশ বেজেও গেছে, ছেলে স্কুল থেকে
বেরিয়ে তিনবার ফোনও করে ফেলেছে। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে পৌঁছে তাকে তুলতে
তুলতেই তিনটে বেজে গেলো। তারপর আবার ডোভার রোড ঘুরে বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে এসে
জ্যাম। গুরুসদয় দত্ত রোডে জ্যাম। থিয়েটার রোডে জ্যাম। তো সেসব পেরিয়ে এজেসি
বোস রোড ফ্লাইওভারে উঠতেই সাড়ে তিনটে। সেকেন্ড ব্রীজ পেরোতে প্রায় চারটে।
ওদিকে সিউড়ি যেতেই লাগবে ঘন্টা পাঁচেক - মানে সাড়ে আটটা - ন'টার আগে
কোনোভাবেই পৌঁছনো যাবে না।<br>
<br>
এবার সেকেন্ড হুগলী ব্রীজ পেরিয়েই দেখি কোণা এক্সপ্রেসওয়ে পুরো জ্যাম।
জানলাম পুজোর সময় শহরে ট্রাক ঢোকার উপর রেসট্রিকশন রয়েছে, যেগুলো ঢুকেছিলো
সেগুলো তখন বেরিয়ে যাচ্ছে, কাজেই রাস্তার হাল খারাপ। সে জ্যাম চললো
সাঁতরাগাছি ব্রীজ অবধি। তারপরেও রেহাই নেই - ডানকুনিতেও বাজে জ্যাম। ওই
অবধি পৌঁছতেই জ্যামে জ্যামে হাল বেহাল।<br>
<br>
ডানকুনি পেরোনোর পরে হাইওয়ে ফাঁকা পেলাম - বর্ধমান অবধি কোনো চাপ নেই। বর্ধমান থেকে দুটো উপায়ে সিউড়ি যাওয়া যায় - এক) গুশকরা - সুরুল হয়ে, দূরত্ব ২০৫ কিমি - রাস্তাটা ন্যাশনাল হাইওয়ে হলেও দুটো লেনের; আর দুই) দুর্গাপুর/অন্ডাল হয়ে - দূরত্ব একটু বেশি, রাস্তাও চওড়া, কিন্তু সময় বেশি লাগছে - অর্থাৎ, গুশকরা-সুরুলের রাস্তা সরু হলেও, অসুবিধাজনক নয় বলেই মনে হয়।<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhLQZH_rIf7lA7OaZDcXvQQKHXBY6kRGR36MgFxaGb7y9dWa_Q4MJ8tcaoO1p9T_WOCCduh0JjtKD6Ukp5edifM2SBS1LlEj0WCeabKF6YiminQsgSOF5FGo1h9UEjDH_MUM1WjRQ/s1600/kolkata-suri.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="613" data-original-width="679" height="360" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhLQZH_rIf7lA7OaZDcXvQQKHXBY6kRGR36MgFxaGb7y9dWa_Q4MJ8tcaoO1p9T_WOCCduh0JjtKD6Ukp5edifM2SBS1LlEj0WCeabKF6YiminQsgSOF5FGo1h9UEjDH_MUM1WjRQ/s400/kolkata-suri.png" width="400"></a></div>
<br>
বর্ধমান পৌঁছে ডানদিকে ঘুরে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৪ (সেকমপুর-সাহাপুর রোড) -
সোজা চলে গেছে গুশকরার দিকে। এই রাস্তাটা ওই প্রায় জিটি রোডের মত - একটা
যাওয়ার লেন, একটা আসার লেন, মাঝে কোথাও কোথাও মিডিয়ান মার্ক করা আছে, কোথাও
নেই। আর প্রপার গ্রামবাংলার মধ্যে দিয়ে রাস্তা। দুদিকে ক্ষেত, রাস্তার
ধারে কাশবনের ছড়াছড়ি, আর, সন্ধ্যের মুখে সেসব ক্ষেতে আর মাঠে হু হা কুয়াশা।
মাঝে মাঝে এক একটা গ্রামে তখনো প্যান্ডেল বাঁধার কাজ চলছে (ওদিকে কলকাতায়
পুজোর অর্ধেক হয়ে গেছে সেটা মনে রাখবেন)। উল্টোদিক থেকে গাড়ি ধেয়ে আসছে
ডিপারের তোয়াক্কা না করে - সেই সময়টুকু চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া ছাড়া এই রাস্তাটা
নির্ঝঞ্ঝাট বলাই যায়। শুধু মাঝে মাঝে কিছু জায়গায় কুয়াশা রাস্তা ঢেকে দেয় -
গাড়ির উইন্ডশিল্ডের ওপর হইহই করে ধেয়ে আসে - গাড়ির হেডলাইট হাই-বীমে দিলে
আরোই বরং বেশি জ্বলজ্বল করে ওঠে, চোখ ধাঁধায়। কোথাও কোথাও রাস্তার ধারের গাছগুলো দুপাশ থেকে
বেঁকে এসে টানেলের মত তৈরী করে দিয়েছে - গাড়ি থেকে দেখলে মনে হয় পাতামোড়া একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে হু হু করে এগিয়ে যাচ্ছি - ওই দূরে টানেলের মুখ, সেখান দিয়ে বেরোলেই একটা নতুন কিছু দেখতে পাবো...<br>
<br>
এই রাস্তাটা গুশকরা পেরিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে সুরুল অবধি। সেখানে
শান্তিনিকেতনকে ডানদিকে ফেলে রেখে আপনি সিউড়ি-বোলপুর রোড ধরে আরো এগিয়ে
যাবেন। আশেপাশে শান্তিনিকেতন অঞ্চলের চেনা কিছু নামের বোর্ড দেখতে পাবেন -
প্রান্তিক যেমন একটা। আরো এগিয়ে অবশেষে সিউড়ি। বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে অল্প
এগোলেই বাঁদিকে হোটেল সাগর।<br>
<br>
গাড়ি পার্ক করে রাতের জন্যে দরকারি ব্যাগ, আর ক্যামেরা ব্যাগ নিয়ে চেকইন
করলুম। প্রথম প্রশ্ন - "আপনারা কি তারাপীঠ যাবেন?" কে জানে, সিউড়িতে যারাই
যায় তারা তারাপীঠ যায় কিনা। যাই হোক, ঘরগুলো ভালোই (তবে এক একটা ঘরে দুজন
করেই - তাই আমাদের চারজনের জন্যে দুটো ঘর নিতে হয়েছিলো)। ছেলেমেয়ে বায়না
করলো বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, বাড়ির মত ভাত-ডাল-রুটি খাবো না, এলোমেলো খাবো।
এবার এদের এলোমেলো মানে পিজ্জা/বার্গার - সে আর কোথায় পাওয়া যাবে - চাউমিন
আর চিলি চিকেনই সই। খেয়েদেয়ে চটপট ঘুমিয়ে পড়ার কথা, কারণ পরের দিন অনেকটা
পথ চালাতে হবে - প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার, কাজেই ভোরে বেরোতে হোবে। টার্গেট
দিলাম সাড়ে চারটে, আর সাড়ে তিনটেতে অ্যালার্ম দিয়ে সেদিনের মত গুডনাইট।<br>
<br>
পরের দিনের গন্তব্য লাটাগুড়ি পেরিয়ে টিলাবাড়ি টুরিস্ট কমপ্লেক্স।<br>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/10/road-to-nowhere_24.html?m=1">(চলবে)</a><br>
<hr>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/10/road-to-nowhere_30.html">(আগের কথা) </a></div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-66095524229442911482018-10-30T07:49:00.002+00:002020-06-30T13:24:29.190+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere (২য় পর্ব)<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
আইটিনেরারি মত বুকিং করে ফেল্লুম - পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের সাইট থেকে বহরমপুর টুরিস্ট
লজ আর টিলাবাড়ি আমিই করে নিলুম, আর আমার নর্থ বেঙ্গলের এক বন্ধু যে ট্যুর
অপারেটরের কাজ করে, সে মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো, পানঝরা আর মেন্ডাবাড়িতে বুকিং
করে দিলো।<br>
<br>
সব ঠিকঠাকই ছিলো, এই মার্কেটে হঠাৎ পুজোর আগে খবর বেরোলো যে ফারাক্কায় কাজ
শুরু হয়েছে, একটা লেন বন্ধ থাকবে মাসখানেক। আমি চটজলদি দেবাশিসকে (মানে
নর্থ বেঙ্গলের যে বন্ধুর কথা বললাম - এর কথা পরে আরো বলবো, ক্ষ্যাপাটে লোক)
ফোন করলুম - সে বল্ল ন্যাশনাল হাইওয়ের ওপরে কুড়ি কিলোমিটার লম্বা লরির
লাইন লেগে থাকছে - কারণ রাত্রি নটার আগে লরি ছাড়ছে না, আর সেই লরির লাইন
কাটতে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে।<br>
<br>
অনেকদিন আগে একবার গাড়ি নিয়ে নর্থ বেঙ্গল প্ল্যান করেছিলাম - তখন একজন
অন্য একটা রাস্তা বাতলেছিলো - যেটা একটু ঘুরপথ (প্রায় শ'খানেক কিলোমিটার),
কিন্তু তাতে করে ফারাক্কা/মালদা এড়িয়ে যাওয়া যায়। সেটা সিউড়ি-দুমকা হয়ে।
মিচেলিনের ম্যাপ বই আর গুগুল ম্যাপ কনসাল্ট করে আমি নতুন রুট প্ল্যান করলুম
- যেহেতু আমার রওনা দিতে তিনটে বেজে যাবে (যে কারণে বহরমপুরে থাকার
ব্যবস্থা করেছিলাম) - প্রথম হল্ট এবার সিউড়িতে। পরের দিন ভোরে বেরিয়ে
সিউড়ি-দুমকা হাইওয়ে ধরে ম্যাসাঞ্জোরের গা দিয়ে দুমকা অবধি, তারপর সেখান
থেকে ঝাড়খন্ড-বিহারের মধ্যে দিয়ে ভাগলপুর। ভাগলপুরে গঙ্গা পেরোতে হবে
বিক্রমশীলা ব্রীজ দিয়ে, সেখান থেকে পূর্ণিয়া হয়ে একেবারে ডালখোলা রেলগেট
ছাড়িয়ে আবার ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪-এ উঠবো। ভালো কথা। সেই মত সিউড়িতে একটা
হোটেল বুক করলাম - বাস স্ট্যান্ডের কাছেই, নাম সাগর। গো-আইবিবো দিয়ে বুকিং
হয়, রিভিউও ভালোই। ফেরার সময় প্ল্যান করলাম ভাগলপুরে থাকবো - সেখানে
হাইওয়ের ধারেই বৈভব হাইওয়ে ইন - তারও রিভিউ ভালো। সেখানে ফোন করে কথা বলে
নেওয়া হল - বল্ল আলাদা করে টাকা পাঠিয়ে বুক করতে হবে না, এসে নাম বলবেন,
তাহলেই হবে।<br>
<br>
[বাই দ্য ওয়ে, এখন মনে হয় এই ন্যাশনাল হাইওয়েগুলোর নম্বর বদলানো হচ্চে,
কারণ মিচেলিনের ম্যাপ, যেটা কয়েক বছরের পুরনো, আর গুগুল ম্যাপে রাস্তা এক
হলেও নম্বর আলাদা। যেমন, NH34 বহরমপুরের পর গুগুল ম্যাপ বলছে NH12 - যেটা
ফারাক্কা/মালদা হয়ে উত্তরবঙ্গে যায়। NH31, যেটা শিলিগুড়ি থেকে গুয়াহাটির
দিকে যায়, সেটাও NH114 না কী যেন বলছে গুগুল। অবিশ্যি নম্বর আলাদা বল্লেও
রাস্তাগুলো দিব্যি ঠিকই বলে - সেই নিয়ে কোনো চাপ নেই। পরে জায়গায় জায়গায়
রাস্তার ডিটেলস বলে দেবো।]<br>
<br>
এই নতুন রুট শুনে বাবাও বেশ উত্তেজিত - কারণ পূর্ণিয়া হল আমাদের দ্যাশের
বাড়ি (কেন আমি ছাতু খেতে পছন্দ করি এবারে বুইলেন তো?) - যদিও আমি কখনো
দেখিইনি, বাবা ছোটোবেলায় ওখানেই থাকতো। সতীনাথ ভাদুড়ির বাড়িও আশেপাশেই
ছিলো, এবং ঢোঁড়াইরাও (রেফঃ ঢোঁড়াই চরিত মানস) থাকতো ওই বাড়ির পাশেই। তা সেই
বাড়ি (প্রচুর জমি - আম-জাম বাগান সহ) বিক্রি হয়ে গেছে - সেখানে নাকি হোটেল
হবে - বাড়ি আর দেখার কিছুই নেই, শুধু আমি ওই পথে গেলে জায়গাটা দেখে আসতে
পারবো...<br>
<br>
জিনিসপত্র গোছগাছ হল - গাড়িতে যাবো, অ্যাবান্ড্যান্ট জায়গা, কাজেই এবারে
প্যাকিং নিয়ে ঝগড়া (যেটা কিনা ইউজুয়াল জিনিস) হল না। গাড়িতে ফ্লাস্ক যাবে -
গরম জল, টী ব্যাগ, সুগার কিউব সব নিয়ে যাওয়া হবে যাতে গাড়িতে বসেই চা
খাওয়া যায় (স্পিল-প্রুফ ট্র্যাভেল কাপে)। সুমনার ইচ্ছে ছিলো বিউটেন স্টোভও
নিয়ে যায় - কিন্তু ডিম সেদ্ধটা হবে কোথায় - রাস্তার ধারে ধুলো খেতে খেতে -
এই প্রশ্ন তোলায় সেটা বাতিল হয়। বাড়তি উঠলো টায়ার পাংচার কিট আর
এমার্জেন্সি পাম্প (গাড়ির সকেট থেকে চালানো যায়, একটু আস্তে আস্তে হলেও
দরকারে চাকায় হাওয়া ভরা যায়)। এছাড়া জামাকাপড়, ক্যামেরার ব্যাগ ইত্যাদি
আনুসাঙ্গিক জিনিস তো উঠলোই।<br>
<br>
এই সময়ে ঋকের ঘাড়ে একখান ফোঁড়া হয়েছিলো - আমি ফাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা
করাতে পেল্লায় চেঁচামেচি করে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ওষুধ টষুধ নিয়ে এলো,
প্লাস গরমজলে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট মিশিয়ে সেঁক দেওয়ার ফরমান। সুতরাং আরেকটা
ফ্লাস্ক, তাতে ওষুধ মেশানো গরমজল। প্লাস ফোন+ট্যাব+কিন্ডল - এই সারাদিন
গাড়িতে থাকবে, কিছু একটা তো চাই। মাঝে একবার বলা হয়েছিলো গাড়িতে টিভি
লাগানো যাবে কিনা...<br>
<br>
তা এসে গেলো ১৩ই অক্টোবর। বাড়ি থেকে রওনা দিলুম তখন সওয়া দুটো। ঋকের স্কুল
ছুটি হবে দুটো চল্লিশে, ওকে স্কুল থেকে তুলে আমরা বেরিয়ে পড়বো।<br>
<br>
মোটামুটি এই ছিলো যাওয়ার প্ল্যান -<br>
<br>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhIdvrOtCj-x6eT1kbhKnYTcTjMv3hs_SDCtbmrNX9aCZZ3c_HHoQtSyA_RKzEsD9tuwjiaFDkA7JJxFZqpHgpUBxEztM7MiQChRU_E-d7Of4GtnGpSfNce9UdFDHcGCrmT8GtB-A/s1600/Screenshot+from+2018-10-24+11-37-01.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="620" data-original-width="623" height="396" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhIdvrOtCj-x6eT1kbhKnYTcTjMv3hs_SDCtbmrNX9aCZZ3c_HHoQtSyA_RKzEsD9tuwjiaFDkA7JJxFZqpHgpUBxEztM7MiQChRU_E-d7Of4GtnGpSfNce9UdFDHcGCrmT8GtB-A/s400/Screenshot+from+2018-10-24+11-37-01.png" width="400"></a></div>
<br>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/10/road-to-nowhere_31.html?m=1">(চলবে)</a> <br>
<hr>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/10/road-to-nowhere.html">(আগের কথা)</a></div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-28609470185491471032018-10-29T04:36:00.004+00:002020-06-30T13:23:15.594+01:00দিকশূন্যপুরের রাস্তায় - The Road to Nowhere - শুরুর কথা<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
অনেকদিন বাদে ব্লগ লিখছি। প্রথমতঃ সময় পাই না, প্রায় ধরুন বছর দেড়েক
পরে কোথাও বেড়াতে গেলাম - প্রধান কারণ ছেলের মাধ্যমিক (হ্যাঁ, সেই ছেলে বড়
হয়ে গেছে, ক্লাস ইলেভেনে উঠে গেছে), আর দ্বিতীয়তঃ সেরকম অ্যাডভেঞ্চারের
ট্রিপ সেই ২০১৩ সালে সাতকোশিয়ার পর আর হয়নি। সে একটা সময় ছিল, আমেরিকা বা
ইংল্যান্ডে যখন গাড়ি নিয়ে টই টই করে বেড়িয়েছি। এখানেও শুরুর দিকে চিলিকা,
সাতকোশিয়া - তারপর এই স্কুল-টুলের চক্করে সে সব ডকে উঠেছিলো। বেড়াতে গেছি -
ধরুন নর্থ সিকিম, তুঙ্গনাথ, তার আগে মধ্যপ্রদেশ, কিন্তু লেখার মত কিছু
ছিলো না। আসলে প্ল্যান ছিলো ছেলের মাধ্যমিকের পরে দিন পনেরোর জন্যে গাড়ি
নিয়ে বেড়িয়ে পড়বো লম্বা কোথাও - অরুণাচল প্রদেশ বা উত্তরাখণ্ড। সেই মত রুট
ম্যাপও করে রেখেছিলাম। কিন্তু আজকাল মাধ্যমিকের পর ছুটি মেলে না। ক্লাস
ইলেভেনের অ্যাডমিশন অধিকাংশ জায়গায় হয়ে যায় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই। টিউশনে
ভর্তিগুলোও ওরকম সময়ে হয়ে যায়। সবই অ্যাডভান্সড ব্যাপার স্যাপার। তো এসব
তেমন জানতামও না - তাই নিয়ে হুড়োহুড়িও গেছে মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পরেই। আর
এপ্রিল থেকেই টিউশন আর স্কুল শুরু হয়ে গেল - রেজাল্ট বেরনোর আগেই। এসব
ঝামেলায় সেই প্ল্যান করা ট্রিপটা পুরো বরবাদ হয়ে গেলো। আর শুনলাম এই এগারো
ক্লাসে স্কুল যদি বা মিস হয়, টিউশন যেন একেবারেই মিস না হয়। মাইরি বলছি -
এরকম চাপ জন্মেও ভাবিনি। তা স্কুল আর টিউশনের কমন ছুটি হল পুজোর সময় -
ষষ্ঠী থেকে লক্ষ্মীপুজো। সেইমত নতুন প্ল্যান বানিয়ে এই কিছুদিন একটু ঘুরে
এলাম। হ্যাঁ, অনেকদিন পর আরেকটা রোড ট্রিপ।<br>
<br>
লিখতে শুরু করার আরেকটা কারণ হল - আপিসের ম্যাগাজিনে লেখা দিতে বলেছে। তো
সেইটা লেখার আগে একটা মকশো করে নিই, এর একটা ছোটো ভার্সন আপিসে দিয়ে দেবো,
ইঞ্জিরি করে।<br>
<br>
চেষ্টা করে দেখি, শেষ করতে পারি কিনা।<br>
<br>
<u><b>গোড়ার কথা</b></u><br>
<br>
"রোড ট্রিপ কেন? এই তো বেশ নর্থ সিকিম ঘুরে এলাম, তুঙ্গনাথ ঘুরে এলাম - সেও তো গাড়িতেই, তা তোর নিজে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার এত শখ কেন?"<br>
<br>
এই প্রশ্নটা প্রায় রেগুলার শুনি বাড়িতে রোড ট্রিপের কথা বল্লেই। সমস্যা হল
এর উত্তরটা দিলেও যারা কখনো যায়নি, তারা ব্যাপারটা বুঝবেই না। ওই থ্রিলটা
খুবই ব্যক্তিগত। যারা যায়, তাদের রাস্তা যেন ডাকে - আমায় ডাকে। রাতের বেলা
ধানক্ষেতের মধ্যে বা জঙ্গলের মধ্যে এঁকেবেঁকে শুয়ে থাকা রাস্তার ওপর গাড়ি
যখন ছুটিয়ে যাওয়ার সময় উল্টোদিক থেকে ধেয়ে আসা কুয়াশা, হাইওয়ের বাতি,
দুপাশে ভেজা মাঠ, বা পাহাড়ি রাস্তার বাঁকগুলো অ্যাডিকশন ধরিয়ে দিয়েছে সেই
যবে থেকে ইন্টারস্টেট ৭০ ধরে রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কে গেছিলাম, তবে
থেকেই। এইটা এখন বাড়িতে বোঝানোর চেষ্টা করা ছেড়েই দিয়েছি। সুমনা জানে, তার
নিজেরও ইন্টারেস্ট আছে, ঋক/ঋতি বলা যায় বেড়াতে পারলেই হল - কীসে গেলাম,
গাড়িতে না রকেটে তাতে ওদের কিস্যু এসে যায় না। এই চারজনের বাইরে রোড ট্রিপ
শুনলেই সবাই কেমন আঁতকে ওঠে।<br>
<br>
তা এবারও তাই উঠলো যখন বল্লুম ডুয়ার্স যাবো। এক বন্ধুর সাথে কথা বলে
আইটিনেরারি ঠিক করলাম। রিকোয়্যারমেন্ট ছিলো নির্জনতা চাই, পাহাড় চাই, জঙ্গল
চাই। সেই মতন ঠিক হল কলকাতা থেকে বেরিয়ে প্রথমে যাবো টিলাবাড়ি, যদিও প্রথম
গন্তব্য সান্তালেখোলায় মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো। টিলাবাড়ি যাবো কারণ সন্ধ্যে
ছটার পর মৌচুকিতে ঢুকতে দেয় না, আর একদিনে কোনোমতেই তার আগে পৌঁছনো সম্ভব
নয়। তাছাড়া, পুজোর আগের শনিবার অবধি স্কুল খোলা - কাজেই স্কুল ছুটির পরেই
আমি রওনা দিতে পারবো - মানে বিকেল তিনটে নাগাদ - সেক্ষেত্রে, মাঝ্পথে কোথাও
রাত কাটাতে হবে। মাঝপথ মানে বহরমপুর - তাহলে ভোরে বেরিয়ে পড়লে ভিড় এড়িয়ে
ফারাক্কা আর মালদা পেরিয়ে যাওয়া যাবে।<br>
<br>
সান্তালেখোলায় দুদিন সম্পূর্ণ ল্যাদ খাওয়ার প্রোগ্রাম। বহু বছর ধরে সকালে
আমি সবাইকে ডেকে তুলে স্কুল/আপিসের জন্যে ঠেলছি, তাই বলেছিলুম এই ট্রিপে
আমি সবাইকে পৌঁছে দেবো, কিন্তু তারপর সবাই আমাকে প্যাম্পার করবে - সকালে
ডেকে তুলবে, ব্রেকফাস্ট করাবে, বেড়াতে নিয়ে যাবে ইত্যাদি। সান্তালেখোলা তার
জন্যে আদর্শ।<br>
<br>
তারপর যাবো চাপড়ামারি - পানঝোরা ফরেস্ট বাংলোতে - মূর্তি নদীর ধারে। সেখান
থেকে মেন্ডাবাড়ি - সেটা চিলাপাতায়। মেন্ডাবাড়িতে এক রাত থেকে ফের ফিরে
আসা, মাঝপথে মালদায় রাত কাটানো।<br>
<br>
এই হল প্ল্যান। ১৩ই অক্টোবর রওনা দিয়ে ২০শে অক্টোবর বাড়ি ফেরা। রুট এইরকম -<br>
<br>
কলকাতা থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪ ধরে বহরমপুর, সেখান থেকে ফারাক্কা পেরিয়ে
রায়গঞ্জ হয়ে বোতলবাড়ি-রসুলপুরের রাস্তা ধরে দিনাজপুরের ভিতর দিয়ে ইসলামপুর
(এটা ডালখোলা এড়ানোর জন্যে), তারপর ফুলবাড়ি-ঘোষপুকুর বাইপাস ধরে শিলিগুড়ি
এড়িয়ে গাজলডোবা হয়ে লাটাগুড়ি। ফেরার সময়েও মেন্ডাবাড়ি থেকে
ফালাকাটা-ধূপগুড়ি-আমবাড়ি-বেলাকোবা হয়ে হাইওয়েতে পড়ে মালদায় হল্ট করে পরের
দিন মোরগ্রাম-বর্ধমান (স্টেট হাইওয়ে ৭) হয়ে কলকাতা।<br>
<br>
কিন্তু ওই যে বলে - man proposes, God disposes...<br>
<br>
<a href="https://sloganditegiye.blogspot.com/2018/10/road-to-nowhere_30.html?m=1">(চলবে)</a><br>
<br>
<br>
</div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-27929618663195950952017-05-04T10:25:00.002+01:002017-05-04T10:42:03.466+01:00A Backpacker's Guide to the Tuscan Heartland<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
The name Tuscany creates an image of rolling lush green and yellow valleys, series of cypress trees and undulating grape vines – pictures we often see in postcards and calendars, pictures many of us love to set as our desktop background. Ever since I took up photography as my hobby – possibly towards the end of the previous century – I had those images set in my mind by looking at the pictures in books. I wanted to be there, watch the rays of the morning sun glisten the misty slopes and walk the hills caressing those cypress trees. And when the chance came, to attend a conference at Florence, I embraced it dearly – knowing that I may only be able to squeeze only a short time to visit those places and it will be hectic, and possibly exhausting.<br />
<br />
An Italian photographer friend who roams around in Tuscany and is known for his landscape photographs was the person I could seek advice from, and he duly obliged. Equipped with his advice and a timetable of trains and buses, and of course my camera and lenses in a backpack, I set out from Florence on this journey to my very own Neverland.<br />
<br />
The landscape of this part of Tuscany, known in most literature as Val d'Orcia, is actually the agricultural hinterland of the Siena province. The place was developed with a view to showcase the model of good governance and aesthetically pleasing landscape back in the 14th and 15th century. For ages, since the renaissance and continuing till today, this landscape has inspired many artists resulting in images exemplifying the beauty of well-managed renaissance agricultural landscapes. Within the heart of this land, rests the medieval town of Pienza – one of the five municipalities forming the national park of Val D'Orcia featuring in the list of UNESCO's World Cultural Landscapes – which is where I was travelling to.<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
</div>
<table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody>
<tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEht8NDeyj5HllH5C5_O6ftz31YGgsyPs5ZN-gQkpsTWwDdR9JYtC3KegbtXB2V9fQuHP51BAj0PXa8FaHNtj6UYBisvHDLMctaQuD3JoSWbqyt0JkfnxUlnWlUq11sf6HX09AsdWw/s1600/map.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="398" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEht8NDeyj5HllH5C5_O6ftz31YGgsyPs5ZN-gQkpsTWwDdR9JYtC3KegbtXB2V9fQuHP51BAj0PXa8FaHNtj6UYBisvHDLMctaQuD3JoSWbqyt0JkfnxUlnWlUq11sf6HX09AsdWw/s400/map.jpg" width="400" /></a></td></tr>
<tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;">Map of Val d'Orcia (image source: http://www.nationalgeographicexpeditions.com/assets/images/2354/map.jpg)</td></tr>
</tbody></table>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
</div>
For a short trip, you really have two options to travel to the Tuscan heartland; firstly, the luxurious way, with tour companies, in air-conditioned coaches or chauffeur-driven tourist cars – travelling through the undulating valleys, finally visiting the famous wineries for wine tasting; and secondly, the backpacker's way – by trains and buses, stopping in-between, walking around the offbeat gravel paths through the rolling hills and cypress trees – a more exhausting, but more satisfying way. Taking the second option, it is a short train ride of an hour and a half from Florence to Siena, with trains running almost every hour. From then on, it becomes a little complicated as the buses in that area are not that frequent, but the ride from Siena to Pienza is a treat for the eyes of the beholder. Miles and miles of rolling landscape stretched along all directions, with almost every town tempting enough for getting off the bus and getting lost in the meadows. If you can resist the temptation, it takes about an hour and a half to Pienza, known as the “touchstone of Renaissance urbanism,” rebuilt by Pope Pius II from a village called Corsignano, his birthplace.</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjd-ddfzfhBSyP55fYM_VIZpbw00eECe3mJxGQ3fm4pnz30GC0QehDm8zhT5NLNnZgYbFSbme0hXIlH7BoFnF7hkg3pLiHvRwL4oE-jhRMMtzHE536U_3-a-52SO3DCMkeSIwDfFA/s1600/Green+Wave.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="210" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjd-ddfzfhBSyP55fYM_VIZpbw00eECe3mJxGQ3fm4pnz30GC0QehDm8zhT5NLNnZgYbFSbme0hXIlH7BoFnF7hkg3pLiHvRwL4oE-jhRMMtzHE536U_3-a-52SO3DCMkeSIwDfFA/s400/Green+Wave.jpg" width="400" /></a></div>
<br />
<br />
A town submerged in tranquility, Pienza is surrounded with a fortifying wall, and crisscrossed by narrow lanes and stone pathways with medieval palaces and cathedrals forming the centre of the town. Well known among these are the four forming the trapezoidal piazza - the Palazzo Piccolomini – the principal residence, the Duomo – the cathedral, Palazzo Vescovile – house of the bishops, and Palazzo Comunale – a civic building. Tourists with interests in medieval architecture will find the pilasters and columns and arches attractive, but for me, the narrow lanes of this tranquil town with happy people were more attractive – from the point of view of street-photography. Beyond the commune wall lie the open meadows stretching for miles beckoning the travellers. If you are of the explorer kind, there is a gravel pathway sloping down towards the next town of Montepulciano about 10 km from Pienza. The route goes right through the green meadows and is the best possible way to get intimate with Val d'Orcia, and I did not have second thoughts. I walked, for may be a couple of hours, between the lines of Cypress, the wind rustling in my ears when I realised that I have come a long way from Pienza and I did not have a place to spend the night. I walked back and checked myself in a bed & breakfast. The sun was about to set and I was back on the streets to take pictures of the valley in the setting sun – part of the golden hours as we call it in photography.</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
</div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiwIk95yMva0JP7aopSe4tjW00Rf5_W3E2YuNc2Prqqfp2kc1Cb6cgnT9KDmb1p1uhG6ubfrWhXTvLHVehzpVYXa71W9iFBOmLhzwgn3O6Aw901UJmgU4RccbXtNsSzrCbWMHiRSA/s1600/IMG_4741.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="236" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiwIk95yMva0JP7aopSe4tjW00Rf5_W3E2YuNc2Prqqfp2kc1Cb6cgnT9KDmb1p1uhG6ubfrWhXTvLHVehzpVYXa71W9iFBOmLhzwgn3O6Aw901UJmgU4RccbXtNsSzrCbWMHiRSA/s400/IMG_4741.jpg" width="400" /></a></div>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiPNli_-s6v1u_ETw45baxDgmm7Pi1Iu0z31OJZwmhU_BQ7255GDoXz-6YlJCKUhVxowA6JRNiNXApTCZNZJx57jc_GOOBouBJJy2-BWbahhGsuWcqxj9Q_D3N0-f0pJjEajQ4xDA/s1600/IMG_4749.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="255" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiPNli_-s6v1u_ETw45baxDgmm7Pi1Iu0z31OJZwmhU_BQ7255GDoXz-6YlJCKUhVxowA6JRNiNXApTCZNZJx57jc_GOOBouBJJy2-BWbahhGsuWcqxj9Q_D3N0-f0pJjEajQ4xDA/s400/IMG_4749.jpg" width="400" /></a></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiWQ99DknQABMPE7UanJWQ2Z4nWs3MqgrTm9BZ9pAmdAoM9ACw2eM8l5KjalNHyQOSDEWjczHjOt8jzwUQmVL19b33kLqSZKUNVsxWKuNj-DHAwD1goWOqt2fRyR7JtQ6MlGghaJw/s1600/IMG_4671-1.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="227" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiWQ99DknQABMPE7UanJWQ2Z4nWs3MqgrTm9BZ9pAmdAoM9ACw2eM8l5KjalNHyQOSDEWjczHjOt8jzwUQmVL19b33kLqSZKUNVsxWKuNj-DHAwD1goWOqt2fRyR7JtQ6MlGghaJw/s400/IMG_4671-1.jpg" width="400" /></a></div>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj-ZqCjrBliwEo9sZH_9dHCwLMVm6Z6HWc-50jCHEm9ouOP-k0VvopXqC1MdJvCPjwo3CNOhGNlNu0fY6X3Z0LE8oZukAQeP3-LeSisc4NfabkZK9NIT2EfD19y4J033HF_V79MUA/s1600/IMG_4679-1.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="207" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj-ZqCjrBliwEo9sZH_9dHCwLMVm6Z6HWc-50jCHEm9ouOP-k0VvopXqC1MdJvCPjwo3CNOhGNlNu0fY6X3Z0LE8oZukAQeP3-LeSisc4NfabkZK9NIT2EfD19y4J033HF_V79MUA/s400/IMG_4679-1.jpg" width="400" /></a></div>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjkdA3Qy5ptcWUXSi9lrWiBd0En-PHeTSukdH2ejuFEOSZ79GDJTjqmqZs6RY9iq1e2TIoGg7In2RB6UhXq8OpXqDSgEUZg_hIO6KrN8oawvo2PpPZ-W_i5AIhS1Xhb61Seg2g2tg/s1600/IMG_4685-1.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="230" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjkdA3Qy5ptcWUXSi9lrWiBd0En-PHeTSukdH2ejuFEOSZ79GDJTjqmqZs6RY9iq1e2TIoGg7In2RB6UhXq8OpXqDSgEUZg_hIO6KrN8oawvo2PpPZ-W_i5AIhS1Xhb61Seg2g2tg/s400/IMG_4685-1.jpg" width="400" /></a></div>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg0efFDApiSsrFjkn38sLkBq1FeqBQmUq6ZdcgJIyJjQjruAgq8idS4b6giejn47uyDG3DwvoKgl0lLYuhk078Sl37eM6xz_LgkegD-EFoqCeZjIWZaNU-xjV7ZvgGFP_4CR5MyBw/s1600/IMG_4714-1.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="236" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg0efFDApiSsrFjkn38sLkBq1FeqBQmUq6ZdcgJIyJjQjruAgq8idS4b6giejn47uyDG3DwvoKgl0lLYuhk078Sl37eM6xz_LgkegD-EFoqCeZjIWZaNU-xjV7ZvgGFP_4CR5MyBw/s400/IMG_4714-1.jpg" width="400" /></a></div>
<div style="text-align: justify;">
<br />
Morning was not too late (as it was the summer with long days), and I was anxious to take an early bus to San Quirico, on the way back to Siena – another place my photographer friend suggested. I reached San Quirico at 6.30AM when the sun has just risen behind the far away hills. I was walking on the highway out of San Quirico when through the trees besides, I caught a glimpse of a misty valley – with only one word fit to describe it – heaven. </div>
<div style="text-align: justify;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi1AqHG7hXb0R5EwpQomcSP7uZhqJxCGMC8hpRG4QImzg_tEq096ZGrjRcKOL-pnyKbTJUAEJk2VApRVnrs3BFeNMPcQ-AlAzIYsxLcbSUfXJ06Vxs7MCWuyldvnvaXJkGUyccPgw/s1600/Tuscan+Sunrise+-+1.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="205" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi1AqHG7hXb0R5EwpQomcSP7uZhqJxCGMC8hpRG4QImzg_tEq096ZGrjRcKOL-pnyKbTJUAEJk2VApRVnrs3BFeNMPcQ-AlAzIYsxLcbSUfXJ06Vxs7MCWuyldvnvaXJkGUyccPgw/s400/Tuscan+Sunrise+-+1.jpg" width="400" /></a></div>
<div style="text-align: justify;">
The soft morning light fell over the glistening mists which were caressing the grassland and the lines of cypresses, and a lonely house lost within it – I stood spellbound. The mist slowly started to rise and I followed the winding pathways for another hour to get a closer view of the valleys. </div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhohBNvYPujtKvYAZfYjFmb2Jb6cbK8uH2zs0tKYKoBZoTwJ-Wwek8uGec5GZulk4pfSG85EvYgRKdQFZNpBmoE0kPPKH3U50pRkzdQQ5jrR9qgrPXPj_8VR4QsNAglcMroB7o-hQ/s1600/Tuscan+Sunrise+-+2.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="217" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhohBNvYPujtKvYAZfYjFmb2Jb6cbK8uH2zs0tKYKoBZoTwJ-Wwek8uGec5GZulk4pfSG85EvYgRKdQFZNpBmoE0kPPKH3U50pRkzdQQ5jrR9qgrPXPj_8VR4QsNAglcMroB7o-hQ/s400/Tuscan+Sunrise+-+2.jpg" width="400" /></a></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjsKR1ksrTC2VNiT18Q-86yyKdPtPk5lxpFZmiEHW_4KsF5wrmDp0YeiCxt5hy3_FQ3m-YlXRX72vYqTSzAhOsVygxm7C1YAGJ3p-yrEqP3u1rC6_VOmg0o5lXNo8PiEcCUtUifug/s1600/Tuscan+Ladscape+-+1.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="201" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjsKR1ksrTC2VNiT18Q-86yyKdPtPk5lxpFZmiEHW_4KsF5wrmDp0YeiCxt5hy3_FQ3m-YlXRX72vYqTSzAhOsVygxm7C1YAGJ3p-yrEqP3u1rC6_VOmg0o5lXNo8PiEcCUtUifug/s400/Tuscan+Ladscape+-+1.jpg" width="400" /></a></div>
<div style="text-align: justify;">
By 8.30AM, my legs rebelled – the fifteen odd kilometres on the previous evening and possibly eight more in the morning were probably a little too much within a very short time, and I had to settle for a return to more urban Florence – tracing back the route I took during my onwards journey.</div>
<div style="text-align: justify;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
<br />
I know I haven't been able to do justice to Tuscany with such a short trip and a shorter travelogue – but those few hours I walked along the valleys and between the cypress trees have been etched permanently in my memory. People say “just like a photograph” to describe beauty. I would say that my photographs do not go anywhere close to the real beauty of the Tuscan heartland. Tuscany is more perfect than a perfect photograph.</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<i>(Originally published at @TCS, a magazine at my workplace)</i></div>
</div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-41309031001199861062017-05-02T13:07:00.002+01:002017-05-02T17:58:18.141+01:00The Untold Story of the Humans of Ladakh<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="color: blue; font-size: small;"><i>True, it is a travelogue of Ladakh, but unlike the popular ones, I
am not going to show you postcard shots of the famous places of Ladakh.
Rather, I will be telling a story of some humans from the farthest
corner of India - a place not frequented by tourists, a place where life
flows like an ancient stream, locked in time...It is not a story of the
great cold desert and the lakes visited by millions. Rather, it is a
story of a little hamlet of a couple of thousand people, living their
life day by day.</i></span></span></div>
<div style="text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div style="text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;">Believe me, as opposed to popular perception, I did not find Ladakh
exquisite. There are so many names - of popular places - Leh, Pangong,
the white sand dunes of Nubra...and the herds of Bactrian Camels...the
highest motorable roads through mountain passes like the Khardung La,
Chang La...perpetually covered with thick layers of snow...the high
clouds over some of the highest snow peaks of the world...Thousands of
tourists flock to take glimpses of these views each year, and when they
come back, they write passionate travelogues which get published in
travel magazines - but, for me, Ladakh remained a far away place. It isn't
about the geographical distance, rather more about a mental distance
that was never diminished. It is possible though, that somewhere it has
relations with the geographical distance - it takes nearly two days to
travel to Leh from Srinagar in a car, and after that wherever you go -
it takes at least a day. You will see some phenomenal landscapes, may be
stop for few moments or not, and again move on. There is never enough
time to spend some time at those places for an average traveller from
distant places of India. May be the natural roughness of the Western
Himalayas is a reason - the greyish, blackish, brownish rocks are
places for geologists to seek for treasures of their own kind - but
there will be no soft and moist winds of the Eastern Himalayas
whispering in your ears...the moist low clouds will not caress your face
while walking through a Rhododendron forest over the glistening dew
covered grass or stoney pathways lost under layers of moss...the sounds
of silence will not fill your ears like it happens on the unknown trails
of Sikkim; it never feels like the hill, or the stream, or the forest
path are mine - like it has happened countless times at the low hills of
Cherrapunjee or the mountains of Sikkim.</span></span><br />
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span>
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;">We go to Ladakh, like a strong wind, take a few glimpses around the
places, share a thousand photos on Facebook - but, Ladakh remains
distant.</span></span><br />
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span>
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;">There is though, a little hamlet in the midst of the Karakoram range
- where you will not see many tourists - a little green village of just
over three thousand residents on the North Western borders of India,
named Turtuk - a stoney staircase rising on the hillside besides little
houses where there is still an innocent look on the faces of those few
people. During those twelve days of incessant motoring, it was perhaps
the only place, where while walking on the little steps of the village
path towards a little Buddhist monastery at the very end of the village,
I felt that this path, the hills, the flowing stream on the roadside belong to me...they are my own.</span></span><br />
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span>
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><b>This travelogue is about that little village Turtuk and the life in it.</b></span><span style="font-size: small;"><i> </i></span></span></div>
<div style="text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><i><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjtZLbnIIeFAg6dgrJ2tJD3e6NZpGIdccsbDd6FZf5b_laaeR8CVrAfLNInFbyqq_ejN1EMXL_mohM_Bd03vVIrOKAmXZ008aJ6Y-4H7nxrZ6ahWCdLPE0Ur8atEM_Efc7wMil5ng/s1600/IMG_5001.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="255" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjtZLbnIIeFAg6dgrJ2tJD3e6NZpGIdccsbDd6FZf5b_laaeR8CVrAfLNInFbyqq_ejN1EMXL_mohM_Bd03vVIrOKAmXZ008aJ6Y-4H7nxrZ6ahWCdLPE0Ur8atEM_Efc7wMil5ng/s400/IMG_5001.jpg" width="400" /> </a></i></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;">Nubra Valley was an anti-climax. So much has been said about the "white
sand dunes" and the herds of bactrian camels of the cold desert beyond
Khardung La, the highest motorable road. I had created pictures of an
endless white ocean of sands in my head, but that was crushed when we
reached Hunder, about 160 km from Leh. The white sand dunes lay outside
Hunder, just a stretch of a couple of kilometres probably - with a
people (I mean tourist) density close to any metro cities of India
(well, sort of) - it has ended up as nothing more than a tourist trap
primarily because of the "famed" camel ride. Bactrian camels are natives
of Central Asia, and probably because this route was once part of the
famous trade routes of history, some descendants of the camels that used
to travel along this route ended up at Hunder. Unkempt, uncared, the
camels take those thousands of tourists around the sand dunes for a
joy-ride - one of the few things to sustain the economy of the village
where the virtues of "development" have failed to reach.</span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgSgMWIpI6n4EK20FHs4AZEGoiLhQex9phDvKBVn1-NJDCODEn5MEWC72_g7unVKLe0kC3Ejeu6tt7ZQca4uK602P482s8lO9nNWt7wcxA7x9J-QYo2wVVcQ62uRGv-W8qb68CrDQ/s1600/IMG_5024.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="256" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgSgMWIpI6n4EK20FHs4AZEGoiLhQex9phDvKBVn1-NJDCODEn5MEWC72_g7unVKLe0kC3Ejeu6tt7ZQca4uK602P482s8lO9nNWt7wcxA7x9J-QYo2wVVcQ62uRGv-W8qb68CrDQ/s400/IMG_5024.jpg" width="400" /></a></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"> Beyond Hunder, the road winds besides the Shyok river through the
Zanskar and Karakoram ranges towards the North Western borders of India,
at the end of which lies the little hamlet of Turtuk on the banks of
Shyok - which has metamorphosed into a roaring greenish torrent from its
turquoise blue placid state at Nubra. The village was originally part
of Baltistan and you can see that on the faces of the residents - their
rosy cheeks, high cheekbones and deep hollowed out eyes are starkly
different from the rest of the Ladakhis. Most of Baltistan is now beyond
the Line of Control, but during the 1971 war, Indian Army recaptured
four villages near the LoC of which one was Turtuk. The population is
predominantly Muslim, as opposed to primarily Buddhist Ladakh, with
people speaking in Baltistani, Ladakhi and Urdu. On one side of Shyok
stretches the Zanskar range with its reddish tint, and on the other side
lies the famed Karakoram range and somewhere inside those mountains,
lies the LoC across which bullets and cannonballs have travelled either
way for as long as the residents can remember. This has been the war
zone for more than fifty years, and it is evident from frequent military
barracks all along the road. Just past Turtuk, is the gate of the last
military command indicating the end of the trail for tourists. And just
outside the gates, on the mountains, are the caves - "we hide there when
the shelling starts; we spent a night in those caves only the previous
week" says the owner of the roadside tea-stall.</span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh_bVKra347bYCbhyT7AQaBWhMC9FLMb3GEuNt1wOQ1yW8t9L63yu3aJNsxclG_Fyu2XwpwZiWPwIr_TyS2Mozgk-N6m5KONX4oVtCIc3YoaYsHkrnaAWp7s2uvCm00GeAnZ-HoBg/s1600/IMG_5041.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="266" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh_bVKra347bYCbhyT7AQaBWhMC9FLMb3GEuNt1wOQ1yW8t9L63yu3aJNsxclG_Fyu2XwpwZiWPwIr_TyS2Mozgk-N6m5KONX4oVtCIc3YoaYsHkrnaAWp7s2uvCm00GeAnZ-HoBg/s400/IMG_5041.jpg" width="400" /></a></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;">Turtuk is actually not one, but two villages, Youl and Pharol - twins
actually, separated by a little bridge over a mountain stream. Youl, in
the Balti language, means "village" or "town" and Pharol means
"outskirts" - which is what Pharol actually is, created when Youl seemed
to be full. A little shop stands on the banks of the stream where we
stop for some snacks - maggi is readily available everywhere and is the
quickest thing to stuff yourself. At the shop, a local man tells about
the two villages - Youl and Pharol. He talks about the night in 1971
they went to sleep in Pakistan and the following morning when they woke
up in India. And he talks about a man who was forced to live on the
other side of the border with his pregnant wife in Youl and was only
allowed to "visit" the village forty-four years later to see his
grandson...The same man tells us about a little mosque in Pharol and the
Gompa on the top of the hill beyond Youl from where, if fortune
favours, you can see K2 towering above the mountains. I decided to take a
chance and visit the gompa first, and started across the bridge towards
the far-off hill.</span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhTmFAHX3QBqmFhygSagzD5_sUmAu4KBKez-GG3IMj2_QUuVieFGfCe_LhIHw6KmBa5V9WZRfVUQDffLLUhlgg8TItdoTqAnJZM1Ms_vKgI7qEjSLx196i4xUxnpaoRQyymm5LbJA/s1600/IMG_5039.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="278" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhTmFAHX3QBqmFhygSagzD5_sUmAu4KBKez-GG3IMj2_QUuVieFGfCe_LhIHw6KmBa5V9WZRfVUQDffLLUhlgg8TItdoTqAnJZM1Ms_vKgI7qEjSLx196i4xUxnpaoRQyymm5LbJA/s400/IMG_5039.jpg" width="400" /></a></span></span></div>
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiIwG7bVfESxG8BLQe3855ONmxyCl8-czu_Fo0_4KxSUbD7Kz84PXfUBwLKFT1U1ArWmt6DAvcuvZ_oZ3G6FPeHrC58syLH0puuxtYSmkvsHYAN4Hb5WXw3WLd49Rp70n87fd9zHg/s1600/IMG_5047.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="273" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiIwG7bVfESxG8BLQe3855ONmxyCl8-czu_Fo0_4KxSUbD7Kz84PXfUBwLKFT1U1ArWmt6DAvcuvZ_oZ3G6FPeHrC58syLH0puuxtYSmkvsHYAN4Hb5WXw3WLd49Rp70n87fd9zHg/s400/IMG_5047.jpg" width="400" /></a></span></span></div>
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjMF157-9Chi1OPtctvOjTLC7eV6KCaqss1emzVV7UzCyHUysKieBXMFIVq45o-b5Lji7sr4rZ183gLtqREdqpOQ_BXcJsMzBnaumAdfWUdbqhfu5rgkEMgziQ5nvrJOjfFt2qDjA/s1600/IMG_5085.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="258" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjMF157-9Chi1OPtctvOjTLC7eV6KCaqss1emzVV7UzCyHUysKieBXMFIVq45o-b5Lji7sr4rZ183gLtqREdqpOQ_BXcJsMzBnaumAdfWUdbqhfu5rgkEMgziQ5nvrJOjfFt2qDjA/s400/IMG_5085.jpg" width="400" /></a></span></span></div>
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhR7Jyp-PWD5yAs2RyBI_w1Qw-W9sYB2Lpzs1gZX8Rn364HYMiWbDHUiqwLJe8XiqKMbJvNi73fQK7-I103nVsDmCMqoEJP4vdqGnBL4gatSgKYU0wHpKL6iraWhew6vYwDwaonmw/s1600/IMG_5087.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="263" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhR7Jyp-PWD5yAs2RyBI_w1Qw-W9sYB2Lpzs1gZX8Rn364HYMiWbDHUiqwLJe8XiqKMbJvNi73fQK7-I103nVsDmCMqoEJP4vdqGnBL4gatSgKYU0wHpKL6iraWhew6vYwDwaonmw/s400/IMG_5087.jpg" width="400" /></a></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"> Inside, the village is a world-apart - unlike any other places I had so
far seen in Ladakh; there was life. Houses are made up of stone and wood
and are hidden behind lines of apricot, mulberry and walnut trees.
Narrow lanes made of little stoney stairs crisscross between rows of
houses, and a little channel of water flows besides the pathway where
few ladies do household chores while chatting away amongst them. There
were faces staring at us from little windows of the houses. I could do
with a few photographs, but the older women were too shy for cameras and
disappeared behind their doors or windows even before I could open the
lens-cap. The children were curious about the camera though, and flocked
close to me - almost on my laps, like my own daughter does - to happily
see their own faces on the camera display. Their language was alien to
me, so was mine to them - but their smiles were not. I walk through the
mazy pathways to cross the village and arrive at a wide courtyard which
can be called the village square. Some old men were sitting there and on
the courtyard, a group of older children were playing volleyball.
Beyond the courtyard was a greenery, with small fields where the village
people grow their crops, and a forest of trees - mostly walnuts and
apricots. At the end of the little forest, rises the hill, and on top of
that is the little gompa. It was closed at that time of the day, and
fortune did not favour me - so K2 was no where to be seen, but I could
see the entire village from the hilltop, with Shyok flowing past it, and
the blackish peaks of the Karakoram.</span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgoCUSorIXzfnR-WOqph5YS99Q6ZbxZR53_yANkxKzaukk5c5gEaM3pgnYRNzCBpvy3F5CD0O4qT_uD3J7VYKHps9dD3jYw1_yRSRrcgP9hKFYp7t2cj5SrHz0OqxTwnm7SAOIsjA/s1600/IMG_5040.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="400" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgoCUSorIXzfnR-WOqph5YS99Q6ZbxZR53_yANkxKzaukk5c5gEaM3pgnYRNzCBpvy3F5CD0O4qT_uD3J7VYKHps9dD3jYw1_yRSRrcgP9hKFYp7t2cj5SrHz0OqxTwnm7SAOIsjA/s400/IMG_5040.jpg" width="358" /></a></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;">Disheartened, I walked back to the bridge through the same mazy pathway
back to the shop. My fellow travellers, that is, the rest of my family
had gone along towards Pharol to see the mosque. I was having a glass of
tea at the shop when my son came running, very excited. He has just
seen a monarch, a living one! He explains to me that Pharol houses the
"royal family", or "the man who would be the king" - the house of the
Khan of Turtuk, Yabgo Mohammad Khan Kacho (from the Yabgo dynasty). His
ancestors used to control parts of a feeder road to the Silk Route,
going to Central Asia, from which came their power. The royal palace is a
three-storied wooden building, which has all those typicalities of
royalty - like a room full of portraits of the ancestors, a room full of
arms; but the auburn-haired and bearded man was rather down-to-earth
and himself showed them around the house. The "king" talked about his
family, his famous grandfather and his centenarian mother, who can still
walk around unaided around the house and about the bygone ages.
Apparently, there are a number of centenarians in Turtuk. On one side of
the bridge, a number of old men gathered around - it was like the
village elders sitting and discussing about the village; many of them
could have been centenarians, but of course I couldn't ask them.</span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgcPyXlYUwW_-mvPw_kDgfL-QR7GOe6xGAIoQtmpVmaVFJkVCVL2rSEUpudBfW5bColg6oIKC7RJe5yS-MLvow21LccKTA1w5yzRZBoSX0jUzxvonbju0_bkdvRt9mWS_2aExtYtw/s1600/IMG_5054.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="273" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgcPyXlYUwW_-mvPw_kDgfL-QR7GOe6xGAIoQtmpVmaVFJkVCVL2rSEUpudBfW5bColg6oIKC7RJe5yS-MLvow21LccKTA1w5yzRZBoSX0jUzxvonbju0_bkdvRt9mWS_2aExtYtw/s400/IMG_5054.jpg" width="400" /></a></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"> It was close to afternoon and we had a long day. We were supposed to
travel back to Leh the following day - and so we decided to head on our
way to Hunder. Thus came the end of the only day when the hills and
mountains and streams felt "personal", I could find something new aside
the overcrowded tourist spots, bactrian camels and alpine lakes. I could
find life amongst the barrenness of Ladakh, hard life may be - with
four hours of electricity per day and communication links limited to
BSNL - but life it was...on the rosy cheeks of those innocent children,
the warm smile on their faces, their seemingly happy chatter when
looking at their own faces on my camera...There was life on the wrinkles
of those almost centenarian old men chatting idly at the village
courtyard, those kids playing volleyball...There was life in the bright
eyes of the local man who told us about the history of the
villages...</span></span></div>
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span>
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;">That little hamlet called Turtuk, by far, remains almost the only
reason, why, may be some day I would want to go back to Ladakh.</span></span><br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<span style="font-family: "georgia" , "times new roman" , serif;"><span style="font-size: small;"><br /></span></span></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;">
<br /></div>
</div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-57422855889109108572012-11-22T05:22:00.001+00:002012-11-22T05:22:30.153+00:00At the abode of the Cloud Warriors<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">শনিবার, ২০শে অক্টোবর, ২০১২</span><br /><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">
=====================<br />
</span><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">
প্রতি বছর যা হয় এবারও তাই। গোছগাছের সময় তাড়াহুড়ো, অতএব টুকটাক জিনিস
ভোলা - পুজোর সময়, তাই হাতে সময় নিয়ে রওনা দেওয়া, অতএব স্টেশনে বসে
ভ্যারেন্ডা ভাজা ইত্যাদি। তবে এবার একটু বেশি বেশিই। বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে
লেক গার্ডেন্স পৌঁছে খেয়াল হল ঋকের ক্যামেরার (ট্রেনি ফটোগ্রাফার এবার
৩৫০ডি ব্যবহার করতে শিখছে) চার্জার আনা হয়নি, এবং ব্যাক-আপ ব্যাটারিটা পুরো
মৃত। শেয়ালদা পৌঁছে দেখি তিল ধারণের জায়গা নেই। দশটায় ট্রেন, আমরা পৌঁছে
গেছি সাড়ে ছটায়। এমনিতেই শেয়ালদা স্টেশনটা অত্যন্ত বাজে, বসার জায়গা নেই,
ওয়েটিং রুমের অবস্থা খারাপ, আর এবার মনে হয় ভিড় বেশিই ছিলো। তায় সন্ধের
দিকে পরপর উত্তরবঙ্গের ট্রেন ছাড়ে। অতক্ষণ কে আর দাঁড়িয়ে থাকবে - একটা
কাগজের স্টল থেকে "এই সময়" কিনে এনে পেতে বসে পড়লাম<span style="font-size: small;">...</span></span><br /><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">
<br />
সাড়ে নটা নাগাদ কোন প্ল্যাটফর্ম জানতে গিয়ে দেখি ট্রেন এসে গেছে। সবাইকে
টেনে তুলতে গিয়ে সুমনার জুতোর সোল খুলে ঝুলতে শুরু করলো (চোদ্দ বছরের পুরনো
উডল্যান্ডস)। প্ল্যাটফর্মে কী ভিড়, বাপরে বাপ্। জেনারেল কম্পার্টমেন্ট
সাধারণতঃ মনে হয় দুটো থাকে - দার্জিলিং মেলে চারটে - প্রতিটা পুরো প্যাকড
আপ, তা সত্ত্বেও সেগুলোর সামনে শখানেক লোক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। স্লিপার
ক্লাসে লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজেদের কামরা অবধি পৌঁছতে বেশ কসরৎ করতে হল।
এরকম ভিড় একমাত্র দেখেছিলাম সেই মাধ্যমিকের পর (৮৯ সালে) একটা ঝড় হয়েছিলো -
তার পরের দিন ইস্ট কোস্টে।</span><br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><br /></span>
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">রবিবার, ২১শে অক্টোবর, ২০১২<br />
====================<br />
<br />
দার্জিলিং মেল মোটামুটি ভালোই যায়। সকালে এনজেপি পৌঁছে একটা অটো নিয়ে
তেনজিং নোরগে স্ট্যান্ড অবধি চলে গেলাম। অ্যাজ ইউজুয়াল, এনজেপি-তে পেডং
শুনেই কেউ সাড়ে তিন, কেউ চার অবধি হাঁকছিলো। তেনজিং নোরগে স্ট্যান্ড থেকে
মোটামুটি রিজনেবল দরে কালিম্পং-এর গাড়ি পেলাম, যদিও কালিম্পং-এর গাড়ির
স্ট্যান্ড অ্যাকচুয়ালি পানিট্যাঙ্কির কাছে - সেখানে শেয়ারের জিপগুলো পাওয়া
যায়।<br />
<br />
কালিম্পং পৌঁছে আগে তো জুতো কেনা হল, তাপ্পর একটা ক্যামেরার দোকানে
চার্জারও পাওয়া গেলো - যেটা দিয়ে ক্যাননের মোটামুটি সব ব্যাটারি চার্জ করা
যাবে। তাপ্পর একটা দোকানে মোমো আর চাউমিন খেয়ে একটা ন্যানোয় চেপে (কি
পুঁটকে গাড়ি রে বাবা, ভিতরে বসলে কেন জানি না আরো পুঁটকে লাগে) গেলাম পেডং।
কালিম্পং-এ শুধু ওই ঢালু রাস্তায় যেখানে গাড়িগুলো দাঁড়ায় সেখানটা দেখেছি,
আর সেখান থেকে দূরে। লোকে খুব কালিম্পং কালিম্পং করে বটে, কিন্তু আমার
প্রবল ঘিঞ্জি লাগলো।<br />
<br />
পেডং-এ উঠলাম সিল্ক রুট রিট্রিট বলে একটা রিসর্টে। ওদের কয়েকটা ঘর আছে, আর
তিনটে কটেজ। কটেজগুলো লগ-কেবিন গোছের, কাঠের বাড়ি, ভিতরে দুটো খাট, বাথরুম
ইত্যাদি। খুব বেসিক ব্যবস্থা, কিন্তু গোছানো। টিভি ইত্যাদি নেই। কিন্তু
কটেজের পাশে সুন্দর বাগান, তাতে ফুলটুল আছে, আর বেশ কিছু মাকড়সাও। ম্যাক্রো
লেন্স থাকলে মাকড়সা বেশ ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট। সিল্ক রুটের ব্যবস্থাপনা
ভালো, খাওয়াদাওয়াও মোটামুটি ভালোই। এখানে রিসর্টে থেকে হোটেলে খেয়ে আসার
গল্প চলবে না, কারণ রিসর্ট থেকে পেডং বাজার প্রায় আড়াই কিলোমিটার, পুরোটা
নীচের দিকে নামা, খেয়ে ফিরতে কালঘাম ছুটে যাবে, আর তাছাড়া পেডং বাজারও খুব
ছোট্ট, সেখানেও বিশেষ ব্যবস্থা নেই। তবে seclusion পছন্দ করলে সিল্ক রুট
রিট্রিট পছন্দ হবেই হবে।<br />
<br />
কেউ পেডং যেতে চাইলে সিল্ক রুট রেকো করবো। ওদের সম্পর্কে ইনফো পাবেন ওদের সাইটে - <a href="http://www.thesilkrouteretreat.com/" target="_blank">http://www.thesilkrouteretreat.com/</a></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">সোমবার, ২২শে অক্টোবর, ২০১২<br />
=====================<br />
<br />
পেডং-এ ঘোরার জায়গা বলতে পাশের সেলারি অঞ্চলটা। সিল্ক রুটের এই দিকের
ট্যুরিজম প্রোমোট করেন সেবাস্টিয়ান প্রধান বলে এক ভদ্রলোক - সেলারি,
রেশি/ঋষি, জুলুক - এই পুরো এরিয়াটা। পেডং থেকে একটু পিছিয়ে গিয়ে বাঁদিকে
একটা সরু রাস্তা উঠে গেছে পাহাড়ের ওপর। সেই রাস্তা এঁকে বেঁকে চলে গেছে
সেলারি বনের মধ্যে। দু পাশে কনিফেরাস ফরেস্ট, মাঝখান দিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে
ভিজে ভিজে রাস্তা - হেঁটে যাওয়ার পক্ষেই ভালো, কারণ তখন ওই ভেজা জঙ্গলের
আরো কাছে চলে যেতে পারবেন। তবে সিল্ক রুট রিট্রিট থেকে সেলারি অবধি দূরত্ব
প্রায় ছয় কিলোমিটার মতন।<br />
<br />
জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা ঘুরে ঘুরে ওঠে সেলারি গাঁও-এর দিকে। সেলারি
গাঁও ইদানিং একটা হট ডেস্টিনেশন। ইলেকট্রিসিটি নেই, পাহাড়ের গায়ে ২৪টা
পরিবারের একটা ছোট্ট গ্রাম। কিন্তু তাও দলে দলে টুরিস্ট এখন এই গ্রামে গিয়ে
হোমস্টে-তে থাকে। কলকাতার প্রচুর ট্রাভেল অপারেটর গ্রামের বাসিন্দাদের
ফান্ডিং করছে - তারা নিজেদের বাড়িতে হোমস্টে বানায়, লোককে রাখে - লজিংটা
কলকাতার অপারেটরদের পকেটে ঢোকে, খাবারের খরচটা সেলারি গাঁওয়ের লোকজন পায়।
যেদিকেই তাকাবেন, সেদিকেই গ্রামের বাড়িতে হোমস্টে, সেখানে কচিকাঁচা থেকে
শুরু করে বুড়োবুড়িদের ভিড়। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে জীন্সের সাথে গাদাখানেক
শাঁখা-পলা-চুড়ি পরিহিতা প্যাকেট ভর্তি সিঁদুর লাগানো বাঙালী মেয়েদের।<br />
<br />
সেলারিকে পাশে রেখে আগে উঠে যান ওই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু রামিটে
ভিউপয়েন্টের দিকে। এখান থেকে তিস্তার সবচেয়ে লম্বা স্ট্রেচটা দেখতে পাবেন -
১৪টা বাঁকসহ, একদম রংপো-র সিকিম মনিপাল ইনস্টিট্যুট অফ টেকনোলজি অবধি।
আমরা দেখতে পেয়েছি যদিও, কিন্তু সেদিনটা একটু hazy থাকার জন্যে ছবিটা ভালো
ওঠেনি - যদি এডিট করে দাঁড় করাতে পারি তাহলে তুলে দেবো।<br />
<br />
রামিটে ভিউপয়েন্ট থেকে ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে নীচে নেমে সেলারি গাঁও ঘুরে
দেখতে পারেন। হাতে সময় থাকলে দামসাং ফোর্ট (ধ্বংসাবশেষ) ঘুরে আসতে পারেন -
অনেকটা ওপরে উঠতে হবে, প্রায় ঘন্টাখানেক, অথবা তিনচুলে (দার্জিলিং-এর
গ্রামটা নয়, একটা peak) - সেও অনেকটা দূর। আর যেতে পারেন সাইলেন্স
ভ্যালী-তে - ওই সেলারি থেকে নামার পথেই। সেখানে অজস্র ফড়িং ঘুরঘুর করছে, আর
নানা রকম জংলী ফুল।<br />
<br />
বাদবাকি কয়েকটা স্পট একটু দূরে - যেমন ক্রসহিল্স আর রেশিখোলা/ঋষিখোলা।</span></span><br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"></span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">রেশিখোলাও সেবাস্টিয়ান প্রধানের
ব্রেনচাইল্ড। পঃবঙ্গ আর সিকিমের বর্ডারে রেশি নদীর গায়ে একটা ইকো-ট্যুরিজম
সেন্টার। পেডং থেকে কুড়ি কিমি মতন হবে, বা তারও কম। আগে একদম নীচে নদীর ধার
অবধি গাড়ি চলে যেত, এখন ওই জমি নিয়ে কিছু একটা গোলমালে গাড়ির রাস্তাটা
বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রাস্তা থেকে একটু ভাঙাচোড়া একটা ট্রেল নেমে গেছে - সেই
দিয়ে যেতে হয়। রিসর্ট অবধি যাই নি, কাজেই সেটা নিয়ে বলার কিছু নেই। রেশি
নদীও টিপিক্যাল ছোট পাহাড়ি নদী। নদীর ধারটা ভালো পিকনিক স্পট - সকাল সকাল
এসে একটু বসে পিকনিক করে চলে যেতে পারেন। থাকার পক্ষে মনে হল না খুব একটা
ভালো কিছু।<br />
<br />
তবে পোকামাকড়/প্রজাপতিতে আগ্রহ থাকলে এই ট্রেলটা ব্যাপক। মাঝে একটা জায়গায়
পাহাড় থেকে একটা ছোট্ট ঝোরা নেমে এসেছে রেশি অবধি, সেখানটা পাথর পেরিয়ে
যেতে হয়। তার পাশেই, মাঝে মাঝে অনেকগুলো হলদে প্রজাপতি এসে একটা ক্লাস্টার
মত বানিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণ বসে থাকে মাটিতে বা পাথরের ওপর, আবার উড়ে পালায়।
আবার হয়তো কিছুক্ষণ বাদে এসে জমা হয়। দু তিনবার চেষ্টা করলাম এই ছবিটা ধরে
রাখতে - প্রথমবার ওই ঝোরার পাথরের ওপর পা রাখতেই সব উড়ে পালিয়ে গেলো।
দ্বিতীয়বার লেন্স বাগিয়ে প্রায় দশ মিনিট অপেক্ষা করলাম ওদের জমা হওয়ার
জন্যে। ঠিক যখন জমা হচ্ছে, তখনই আরেকদল টুরিস্ট হই হই করে সেই ট্রেল বেয়ে
নেমে এলো - ব্যাস্, সবকটা প্রজাপতি ফের হাওয়া। তৃতীয়বারেও একই ঘটনা।
মেজরিটি টুরিস্টের মধ্যে এই ব্যাপারটা আছে, এবং এটা অসম্ভব বিরক্তিকর - কেউ
একজম ক্যামেরা নিয়ে কিছু একটা ছবি তোলার অপেক্ষায় রয়েছে - সেটা এদের কাছে
ম্যাটার করে না।</span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"></span></span><br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://3.bp.blogspot.com/-GqmaN9UHtyA/UI5yIPOLrsI/AAAAAAAAIH4/i3T5cnRIDCE/s1600/IMG_0777.JPG" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="218" src="http://3.bp.blogspot.com/-GqmaN9UHtyA/UI5yIPOLrsI/AAAAAAAAIH4/i3T5cnRIDCE/s320/IMG_0777.JPG" width="320" /></a></div>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://3.bp.blogspot.com/-1YnCGszlsiw/UI5yIrIZxII/AAAAAAAAIIA/AFzfoEXJQbw/s1600/IMG_0773.JPG" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="194" src="http://3.bp.blogspot.com/-1YnCGszlsiw/UI5yIrIZxII/AAAAAAAAIIA/AFzfoEXJQbw/s320/IMG_0773.JPG" width="320" /></a></div>
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><br />
<br />
যাই হোক, এখান থেকে ফের রাস্তায় উঠে দেখি গাড়ি হাওয়া। বলেছিলো একটু সামনে
এগিয়ে থাকবে, কিন্তু নেই। তাপ্পর জানা গেলো সে আরেকটু ওপরদিকে উঠে গেছিলো
গাড়ি ধোয়ার জন্যে, সেখানে কিছু বন্ধুবান্ধব পেয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো। রেশি থেকে
ফেরার পথে পেডং ঢোকার অল্প আগে ডানদিকে রাস্তা চলে গেছে ক্রসহিল্স-এর
দিকে। আঠারোশ কত সালে যেন কয়েকজন মিশনারি এই সিল্ক রুট ধরে চীনে যাওয়ার
চেষ্টা করেছিলেন - তাদের মেরে দেয়। তখন ওই জায়গায়, চীনের দিকে মুখ করে একটা
ক্রস বসানো হয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখানকার দৃশ্য খুব সুন্দর, এবং কপালে
থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘারও দেখা মেলে। তবে সেরকম আকাশ আমরা পাইনি। পেডং-এ ঘোরার
দিনটা পুরোটাই নীচে কুয়াশায় ঢাকা hazy ছিলো।</span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">মঙ্গলবার, ২৩শে অক্টোবর ২০১২ - জুলুকের পথে<br />
==============================<br />
<br />
অবশেষে ২৩ তারিখ। যে জায়গাটার ছবি ইন্ডিয়ামাইকে দেখে ফিদা হয়ে গেসলাম, যে
জায়গাটায় যাবো বলে সেই মে মাস থেকে হা পিত্যেশ করে বসে আছি, সেখানে যাবো।<br />
<br />
পেডং থেকেই শুরু ওল্ড সিল্ক রুটের - যেটা একসময় তিব্বতী লাসার সঙ্গে
ভারতকে জুড়তো জেলেপ লা-র মধ্যে দিয়ে - আপাতত যেটা পূর্ব সিকিম, টুরিস্টদের
কাছে আপেক্ষিকভাবে একটা নতুন জায়গা - খুব বেশিদিন নয় এই পথটা টুরিস্টদের
জন্যে খোলা হয়েছে। গোটা পথে কাতারে কাতারে মিলিটারি, প্রায় প্রতিটা গ্রামে
মিলিটারি ছাউনি। এরই মধ্যে ৯৫০০ ফুট ওপরে ছোট্ট গ্রাম জুলুক - যেখানে রয়েছে
"ক্লাউড ওয়ারিয়র"-দের base - একটা ট্রানজিট ক্যাম্প। বর্ডার অঞ্চলে যে
সৈন্যরা যায় তারা এখানে কয়েকদিন থাকে, acclimatisation-এর জন্যে। রোজ ছয়
কিলোমিটার ওপরে ওঠায়, ট্রেনিং করায় - যারা সুস্থ থাকে তাদের বর্ডার পোস্টে
পাঠানো হয়।</span></span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">এই পথে শুধু তখনই যাবেন যখন মনে হবে যে
হোটেল/রিসর্ট/ফুডকোর্ট/মল ইত্যাদির বাইরে অনেক দূরে শুধুমাত্র খুব বেসিক
থাকা-খাওয়াতেও এই জায়গাটার সৌন্দর্য শুষে নিতে পারবেন আপনি...যদিও
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পথেও আজকাল কিছু টুরিস্টের ভিড় হয় যারা ওখানে পৌঁছে
ছোটখাটো ঘর বা সাধারণ চালের ভাত-ডাল-ডিমের ঝোল দিয়ে খাওয়া বা রুম-কমফর্টের
অভাব নিয়ে অভিযোগ করে। হোম-স্টে-টাও অনেকটা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে গেছে -
সেলারিতে যেরকম টুরিস্টের ভিড় দেখেছিলাম, সেরকম লোকজন ইদানিং জুলুকেও যায়।
টুরিস্ট আসা জুলুকের পক্ষে খারাপ না হলেও এই ধরণের টুরিস্টের ভিড় মনে হয় না
খুব একটা ভালো। জুলুককে ভালো লাগাতে গেলে শুধু হিমালয়কে ভালোবেসে যেতে
হবে। মনে রাখবেন জুলুক দার্জিলিং বা গ্যাংটক নয়, কখনো চাইবোও না জুলুক
সেরকম হয়ে যাক। জুলুক যেমন আছে তেমনই থাকুক - পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট একটা
গ্রাম - সরু রাস্তা ঘুরে ঘুরে উঠে গেছে - যেখানে গায়ের ওপর দিয়ে মেঘ চলে
যায়, আরো ওপরে উঠলে মেঘের ওপর উঠে যাওয়া যায়...শুধু চোখ বন্ধ করবেন আর ভেসে
উঠবে হাজার বছর পুরনো ছবি - লাইন দিয়ে অনেক লোক ফার বা পুশতিনের কোট গায়ে
চাপিয়ে হয়তো ব্যাক্ট্রিয়ান ক্যামেলের পিঠে বোঝা চাপিয়ে পাহাড়ি পথে এগিয়ে
চলেছে...</span></span></span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">জুলুকে থাকার দুইটি জায়গা - এক নম্বর
হল গোপাল প্রধানের হোমস্টে (দিলমায়া), আর দুই নম্বর পাসাং শেরপার হোমস্টে
(পালজোর)। তিন চারটে মোটামুটি বড় গ্রুপ হলেই জুলুকে আর থাকার জায়গা থাকে
না, কাজেই হাতে সময় থাকতে বুক করে ফেলা ভালো। ফোন নম্বর দিয়ে দিচ্ছিঃ<br />
<br />
গোপাল প্রধান - ৯৬০৯৮৬০২৬৬<br />
পাসাং শেরপা - ৯৭৩৪১৫০৫৪৬<br />
<br />
গোপাল প্রধানকে আগে ফোন করেছিলাম - সেই মে মাসেই। তখন থেকেই পুজোর ছুটিতে
ওঁর হোমস্টে পুরো ভর্তি হয়ে গেছে। পাসাং শেরপাকে ফোন করে জায়গা পেয়েছিলাম।
গাড়ির কথাও হয়েছিলো। থাকা-খাওয়ার জন্যে জনপিছু ৭০০/-, আর গাড়ি দিনপিছু
৩৫০০/- - সেই গাড়ি আমাদের পেডং থেকে নিয়ে আসবে, জুলুকের আশেপাশে যা ঘোরার
ঘোরাবে, আবার পরের দিন গ্যাংটক ছেড়ে আসবে।<br />
<br />
তো কথামত গাড়ি এসে গেলো পেডং-এ পাক্কা সাড়ে আটটায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে রওনা
দিলাম - সেই রেশিখোলার পথেই আবার। রেশিখোলা ছাড়িয়ে আরো একটু এগিয়ে প্রথম
জনপদ "রেনক", আরো এগিয়ে "রংলি" - এখানে আপনাকে একটু দাঁড়াতে হবে, কারণ
জুলুকের রাস্তায় যেতে হলে পারমিট লাগে। আপনার/আপনাদের আইডি সঙ্গে রাখবেন -
ফটোকপিসহ - নইলে এখানে ফের ফটোকপি করাতে হবে, আর রাখবেন পাসপোর্ট সাইজ ফটো।
গাড়ির ড্রাইভারই এইসব ডকুমেন্ট নিয়ে গিয়ে পারমিট করিয়ে আনবে। রংলিতে চা-টা
খেয়ে ফের ওঠা শুরু, আর এই পথই আপনাকে নিয়ে যাবে জুলুক। পথে দেখবেন পর পর
মিলিটারি ট্রাক যাচ্ছে - বেশ আস্তেই, কারণ রাস্তা বেশ চড়াই। এই ট্রাকের
লাইনের পাশ দিয়েই অল্প জায়গা করে নিয়ে ছোট গাড়িগুলোকে বেরোতে হয়। প্রথম
পেরোবেন লিংথাম - যেখানে আপনাদের পাস চেক করা হবে, চেকপোস্টের লোক পাসের
একটা কপি রেখে দেবে। এর পর আরো উঠতে থাকবেন, আরো আরো উঁচুতে - গাড়ির
জানলাটা একটু একটু করে বন্ধ করতে হবে, কারণ হাওয়া ক্রমশঃ ঠান্ডা
হচ্ছে...আরেকটা ছোট গ্রাম পেরোবেন - নাম পদমচেন - এখানে হেডহান্টার্সদের
ছউনি।<br />
<br />
আরো উঠতে থাকুন - একের পর এক হেয়ারপিন বেন্ড। গাড়ির ড্রাইভার আপনাকে বলবে এ
আর এমন কি - জুলুকের ওপরে দেখবেন আসল হেয়ারপিন বেন্ড কাকে বলে...উঠতে উঠতে
একসময় রাস্তা ঢেকে যাবে মেঘ আর কুয়াশায়, তার ফাঁক দিয়ে নীচের দিকে তাকালে
আপনার গা শিউড়ে উঠবে - ভাবতে কষ্ট হবে যে ওই রাস্তায় আপনি উঠে এসেছেন।
তারপর এক জায়গায় দেখবেন পর পর মিলিটারি লরির লাইন - সেই লাইনের পাশ দিয়ে
এগোতে এগোতে পৌঁছবেন ছোট্ট গ্রাম জুলুকে - যেখানে থাকে Cloud Warriors...</span></span></span></span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">জুলুক পৌঁছলাম দুপুর দেড়টা নাগাদ।
মোড়ের মাথাতেই পাসাং শেরপার একটা ছোট দোকান - সেখানে টুকটাক জিনিসপত্র,
সিগারেট, লজেন্স আর ইসে পাওয়া যায়। দিনের খাওয়া দাওয়াও ওখানেই। ছোটখাটো
চেহারার লোক পাসাং, একগাল হাসি নিয়ে ওয়েলকাম জানালেন, বল্লেন জিনিসপত্র
এখানেই থাক - দুপুরের খাওয়া প্রায় তৈরী, খেয়ে নিয়ে ঘরে যাবেন। ছোট দোকানের
এক কোণে পাসাং-এর স্ত্রী রান্না করছিলেন, তিনিও এসে এক গাল হাসি দিয়ে ঋতির
গাল টিপে দিয়ে গেলেন।<br />
<br />
খাওয়াদাওয়া খুব সাধারণ। সাধারণ চালের ভাত, কালো ডাল, একটা ভাজা ভাজা
তরকারি - সম্ভবতঃ লাউ, আর ডিমের ঝোল। বাইরে তখন বেশ ঠান্ডা, যদিও অনেক
দিনের নর্থ ইস্ট ইংল্যান্ডের অভ্যাসে তখনও সেই ঠান্ডা ম্যানেজেবল। ভাত খেয়ে
ঘরে গেলাম - কাঠের বাড়ি, টিনের চাল। একটা ছোট ঘরে তিনটে খাট, লেপ-কম্বল
শুদ্ধু। পুরনো দিনের মেঝেওয়ালা বাথরুম, তবে কমোড সিস্টেম - যেটা কিনা একটু
সুবিধার, কারণ হাঁটু বিগরোনোর পর দেশি সিস্টেম ব্যবহার করতে একটু কষ্ট হয়।
গরম জলের কল নেই, ঝরণার জল ট্যাঙ্কে ভরে বাথরুমে ছাড়া হয়। ঘরে টিভি ইত্যাদি
নেই, টিমটিমে দুটো আলো আছে, আর টেবিলে একটা কেরোসিন ল্যাম্প আর মোমবাতি,
কারণ সন্ধ্যের দিকে প্রায়ই লোডশেডিং হয়। মোবাইলে সিগন্যাল কখনো থাকে, এক
ফুট এদিক ওদিক সরে গেলেই সিগন্যালও হাওয়া হয়ে যায় - তবে সেটা এয়ারটেল। ওসব
জায়গায় অন্য প্রোভাইডার হয়তো ভালো চলে - জানি না।<br />
<br />
হিমালয়ে যাঁরা প্রায়ই যান তাঁরা হয়তো লক্ষ্য করেছেন - দুপুরের পর থেকে
আবহাওয়া আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে যায়। জুলুকেও তাই। একটু বেলা গড়াতেই হু হু করে
মেঘ উড়ে এসে রাস্তাঘাট ঢেকে ফেললো - ঘরটা আরো স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে উঠলো। তার
মধ্যেই ঘরের পিছনদিকে পাহাড়ের গায়ে একটা সরু হাঁটাপথ ধরে একটু এদিক ওদিক
ঘুরে এলুম - পাহাড়ের গা বেয়ে যেদিকে সিল্ক রুট উঠে গেছে সেটা নীচ থেকে দেখা
যায়। আর অনেক ওপরে, পাহাড়ের মাথায় যেখানটা পুরো মেঘে ঢাকা - সেখানেই রয়েছে
থাম্বি ভিউপয়েন্ট, আর আরো একটু এগিয়ে লুংথুং - আমাদের পরের দিনের ভোরবেলার
গন্তব্য - সানরাইজ পয়েন্ট।</span></span></span></span></span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">সন্ধ্যেবেলা আর কিছু করার নেই।
ছেলেমেয়ে খুবই বোর হতে শুরু করলো - সে অবশ্য পেডং-এও হয়েছিলো, কারণ টিভি
নেই এমন জায়্গায় ওদের থাকা এই প্রথম (ছোটবেলার ইউরোপীয় ইউথ হোস্টেল বাদ
দিলে - আর টিভির অপরিহার্যতা এখন আরো বেশি ওদের কাছে)। পেডং বাজার থেকেই এক
প্যাকেট তাস আর একটা লুডো কিনে রেখেছিলাম - পেডং-এও কাজে এসেছিলো, এখানেও
এলো। ওদিকে পেডং-এ একদিন পাকামি করে দেওয়ালের কাছে একটা বিছানায় একা শুয়ে
ঋকের কাশিটা একটু বেড়েছিলো (কলকাতা থেকেই সর্দিভাব ছিলো, জানলা খুলে গাড়িতে
বসে সেটা বেড়ে গেছিলো) - এখানে ঠান্ডায় আরো একটু যেন বেড়ে গেলো। পাশের ঘরে
আরেকটা বাঙালী গ্রুপ এসেছিলো, তারা রুম হিটার নিয়েছিলো, আর
সোয়েটার-জ্যাকেট-রামের বোতল সত্ত্বেও তারা ঠান্ডায় ঠকঠক করছিলো (ফোনে কারো
সাথে কথোপকথন থেকে বুঝলাম)।<br />
<br />
রাতে পাসাং-এর বাবার তৈরী রুটি আর মুরগীর ঝোল খেয়ে শুয়ে পড়লাম - সাথে
তিনটের সময় অ্যালার্ম দিয়ে, কারণ পরের দিন ভোর সাড়ে চারটের মধ্যে বেরিয়ে
পড়তে হবে।</span></span></span></span></span></span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">বুধবার, ২৪শে অক্টোবর ২০১২ - সিল্ক রুট<br />
==========================<br />
<br />
সাড়ে তিনটেতে অ্যালার্ম দিয়ে উঠলাম, বাইরে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার, আর কনকনে
ঠান্ডা - নর্থ ইস্ট ইংল্যান্ডের শীতকাল পুরো। তার মধ্যেই ওই কনকনে জল দিয়ে
কোনোরকমে মুখ ধোয়ার কাজ সেরে বাকিদের ঠেলে তুললাম। ভোর চারটের সময়
অবভিয়াসলি পুঁটকে দুটো উঠতে চাইছিলো না, কিন্তু সানরাইজ পয়েন্টের লোভ
দেখিয়ে তুলতে হল। আর তারপর ওই ঠান্ডা জলে মুখ ধোয়ানো এক কেস...<br />
<br />
সেসব শেষ করে সওয়া চারটে নাগাদ গেলাম পাসাং শেরপার দোকানে। গাড়ি রেডি,
ড্রাইভারও রেডি। কাঁচের গেলাসে ধোঁয়া ওঠা চা-ও এসে গেলো। ঋককেও একটু চা
খাওয়ানো হল - প্রথমবার। তখন ওখানে আরো একটা গাড়ি এসে গেছে - তারাও ওপরে
যাচ্ছে। এবং তাদের সাথে গোপাল প্রধান। ওই গাড়ির ড্রাইভারকে ঘুম থেকে তোলা
যায়নি বলে গোপাল প্রধান নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। ভদ্রলোকের সঙ্গে
অল্প একটু কথা হল চা খেতে খেতে - অতি অমায়িক লোক, মানে সেটা কতটা তা কথা না
বল্লে বোঝা সম্ভব নয়। এতটা আস্তে আস্তে (নীচু গলায় এবং ধীরে - দুটোই) কথা
বলা লোক চট করে দেখা যায় না। আমরা তৈরী হয়ে বেরোতে বেরোতে আরো একটা গাড়ি
উঠে এলো - পদমচেন থেকে - ওখানেও এখন হোমস্টে তৈরী হয়েছে - যারা জুলুকে
জায়গা পায় না, তারা পদমচেনে থাকে।<br />
<br />
তিনটে গাড়ি লাইন দিয়ে সিল্ক রুট ধরে চলতে শুরু করলো, তখন ভোর সাড়ে চারটে।
সাড়ে নহাজার ফুট থেকে আমরা উঠবো থাম্বি ভ্হিউপয়েন্ট পেরিয়ে লুংথুং অবধি -
মোটামুটি ১২০০০ ফুট উচ্চতায়। দূরত্ব মাত্র ১২-১৪ কিমি। গাড়ির কাঁচের ওপর
ফ্রস্ট জমে রয়েছে, বার বার জল দিয়ে ওয়াইপার চালালেও অল্পক্ষণ পরেই ফের
ফ্রস্ট - এখানে বিলেতের মত ওয়াশার ফ্লুইড হিসেবে অ্যালোহলিক সোপ মিক্সের চল
নেই। একে অন্ধকার, তায় এইখানেই সিল্ক রুটের সেই বিখ্যাত ভুলভুলাইয়া - একের
পর এক চৌঁত্রিশটা সরু হেয়ারপিন বেন্ড - জুলুক থেকে ৯ কিমি দূরের থাম্বি
ভিউপয়েন্ট অবধি। উঠতে উঠতে আমরা মেঘের ওপর চলে এসেছি। রাস্তার পাশে নীচে
মেঘের কার্পেট। যেতে যেতেই দেখতে পাচ্ছি আকাশের রঙ বদলাচ্ছে আস্তে আস্তে।
তর সইছে না, হাত নিশপিশ করছে, অথচ তাড়া করার উপায় নেই - রাস্তা খুবই খতরনাক
- যদিও আশার কথা যে ওই সময় উল্টোদিক থেকে গাড়ি আসার সম্ভাবনা নেই।<br />
<br />
অবশেষে সাড়ে পাঁচটার একটু আগে আমরা পৌঁছলাম লুংথুং। সেখানে তখন অলরেডি বেশ
কিছু লোক - যারা পদমচেন আর নাথাং থেকে পৌঁছে গেছে। সূর্য তখন উঠবো উঠবো
করছে, মেঘের কার্পেটের ঠিক ওপরে আকাশের রঙ হলদেটে। উল্টোদিকে নীচে মেঘ।
আকাশ পরিষ্কার থাকলে ওদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর রঙের খেলা দেখা যায় - কিন্তু
সেদিন শুধুই মেঘ আর কুয়াশা। জুলুক সম্পর্কে সমস্ত লেখায় পড়েছিলাম যে আকাশ
পরিষ্কার থাকলে লুংথুং-এর সানরাইজ অন্য যে কোনো বিখ্যাত সানরাইজ পয়েন্টকে
কঠিন কম্পিটিশনে ফেলে দেবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, সেদিনই আকাশে নীচু মেঘ আর
কুয়াশায় একটা hazy ভাব এসেছিলো। যে দৃশ্যের অপেক্ষায় ছিলাম সেটা পেলাম না,
কিন্তু যা পেলাম তাও কম নয়।<br />
<br />
ওদিকে মেয়ে তো দুমিনিট বাইরে থেকেই ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গাড়িতে চলে
গেলো। ঋকও কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করে আর পারলো না।
জ্যাকেট ট্যাকেট পরা ছিলো বলে গায়ে সামলানো গেলেও ঠান্ডায় হাতের আঙুল বেঁকে
যাওয়ার মত অবস্থা। তার মধ্যেই উল্টোদিকে একটু আধটু ঘুরে দেখলাম - সেদিকেও
মিলিটারির লোক টেম্পোরারি ছাউনি ফেলে রয়েছে - তাঁবুতে রাত কাটিয়েছে ওখানে,
ভোরে রওনা দেবে।<br />
<br />
আশেপাশের পাহাড়ের গায়ে মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাহাড়গুলো লালচে দেখায়। দেখে
হঠাৎ করে সেই হাইল্যান্ডস মনে পড়ে গেলো - হেদারে ঢাকা পাহাড়গুলো লালচে
দেখাতো, এখানেও হেদারের মত ছোট ছোট না হলেও একটু বড় সাইজের লালচে ঝোপ সারা
পাহাড়ের গা জুড়ে - সেরকমই লালচে দেখায়। সেই হাইল্যান্ডসের মতই ধূ ধূ ঢেউ
খেলানো জমি আর পাহাড়...</span></span></span></span></span></span></span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">সানরাইজ পয়েন্ট থেকে নামার পথে দুবার
দাঁড়ালাম ভুলভুলাইয়ার ছবি তোলার জন্যে। একবার লুংথুং থেকে অল্পদূর নেমেই -
যেখান থেকে তিনটে পাহাড়ের গায়ে রাস্তার এই অংশটুকু দেখা যায়, আরেকবার
থাম্বি ভিউপয়েন্টে, যেখানে দৃশ্যটা একটু অন্যরকম।</span></span></span></span></span></span></span></span></span><br />
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://3.bp.blogspot.com/-oDKWXsdvqg4/UI5ynmy-M7I/AAAAAAAAII4/DpRFawcZ5_4/s1600/IMG_0852.JPG" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="178" src="http://3.bp.blogspot.com/-oDKWXsdvqg4/UI5ynmy-M7I/AAAAAAAAII4/DpRFawcZ5_4/s320/IMG_0852.JPG" width="320" /></a></div>
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://2.bp.blogspot.com/-PEdMkFQOYag/UI5yk9medTI/AAAAAAAAIIw/N2_57W49bfA/s1600/IMG_0846.JPG" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="218" src="http://2.bp.blogspot.com/-PEdMkFQOYag/UI5yk9medTI/AAAAAAAAIIw/N2_57W49bfA/s320/IMG_0846.JPG" width="320" /></a></div>
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"> </span> </span> </span> </span> </span> </span> </span> </span> </span><br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">জুলুকে ফিরে আসতে আসতে সওয়া সাতটা মতন
বাজলো। এবার দিনের বেড়ানোর জন্যে তৈরী হয়ে (চান করার কোনো সীনই নেই,
বাকিটুকুর জন্যে পাসাং শেরপার বাবা এক বালতি গরম জল দিয়ে গেলেন) ওয়াই ওয়াই
নুডল্স দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারতে সারতে সওয়া আটটা। ফের এক গ্লাস চা খেয়ে সাড়ে
আটটায় শুরু করলাম। ফের সেই লুংথুং-এর দিকেই যাওয়া, কিন্তু এবার সেখান থেকে
এগিয়ে যাবো নাথাং ভ্যালীর দিকে, তারপর বাবামন্দির আর কুপুপ হয়ে ছাংগু অবধি।
এর মধ্যে ম্যাক্সিমাম সাড়ে চোদ্দহাজার ফুটে উঠবো একবার, তারপরে ছাংগুতে
ফের বারো হাজার মতন।<br />
<br />
লুংথুং-এর রাস্তা সকালে তখন রোদে ঝকমক করছে। দুধারের সেই লাল ঝোপগুলো আরো
উজ্জ্বল। আবারো কয়েকটা মিলিটারি ছাউনি পেরোলাম - রায়পুর রেইডার্স, কী একটা
শুটার্স - এরা মনে হয় স্নাইপার রেজিমেন্ট এবং আরো কী কী নাম। নাথাং ভ্যালী
পড়বে রাস্তার বাঁদিকে কিছুটা নীচে। পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘ নেমে নাথাং
ভ্যালীকে ঢেকে দিচ্ছে, রাস্তার ওপরেই এক গুচ্ছ মেঘ - যার মধ্যে রাস্তাটা
পুরো হারিয়েই গেছে।</span><br />
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://1.bp.blogspot.com/-v848L7B39Fk/UI90DSXhuDI/AAAAAAAAIME/Iqyxiuzi0MY/s1600/IMG_0857-1.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="184" src="http://1.bp.blogspot.com/-v848L7B39Fk/UI90DSXhuDI/AAAAAAAAIME/Iqyxiuzi0MY/s320/IMG_0857-1.jpg" width="320" /></a></div>
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">আরো একটু এগোলে পুরোই ব্যারেন ল্যান্ড,
অনেকটা লেহ্-লাদাখের মত ধূসর। এখানেই কোথাও জেলেপ লা-র রাস্তা, যেটা এখন
বন্ধ - ৬২-র যুদ্ধের পর। শুধু পড়ে আছে অনেকগুলো পরিত্যক্ত বাঙ্কার - ৬২-র
চিহ্ন গায়ে মেখে। এর পরেই আসে আসল বাবা মন্দির - <a href="http://en.wikipedia.org/wiki/Baba_Harbhajan_Singh">ক্যাপ্টেন হরভজন সিং মান</a>-এর বাঙ্কার। অনেক গল্পকথা চালু আছে হরভজন সিং সম্পর্কে - এখনো নাকি
মিলিটারি পোস্টে কেউ পাহাড়া দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়লে "বাবা" খুব রেগে গিয়ে
তাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে বকাবকি করেন।<br />
<br />
এখান থেকে চীন বর্ডার খুব কাছেই। উত্তরদিকের পাহাড়গুলোর মাথায় বর্ডার
পোস্টগুলো দেখা যায়। একটা বাড়ি দেখিয়ে গাড়ির ড্রাইভার জানালো যে ওইটা
কনফারেন্স হল যেখানে ভারত এবং চীনের বর্ডার কনফারেন্স হয়। ওইদিকে যাওয়া
মানা, পুরোটাই শুধুমাত্র মিলিটারি এলাকা। চারদিকের এই পাহাড় আর পরিত্যক্ত
উপত্যকার মধ্যে দাঁড়ালে কেমন একটা যেন অনুভূতি হয়। কখনো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে
করে, কখনো নিজেকে একটা পিঁপড়ের সমান মনে হয়, কখনো ওইখানে পড়ে থাকা
সৈন্যগুলোর জন্যে খারাপ লাগে।<br />
<br />
তবে অতটা ভাবার অবস্থা তখন ছিলো না, কারণ ঋক। আগেই বলেছিলাম - কলকাতা থেকে
আসার সময়তেই একটু সর্দি ছিলো। পেডং-এ ঠান্ডা লেগে কাশিও শুরু হয়েছিলো।
জুলুকে আরো ঠান্ডায় বুকে সর্দি বেশ ভালোমত বসে গেছিলো। নাথাং-এ পৌঁছনোর
সময়েই সে আর গাড়ি থেকে নামতে চায়নি। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। বাবা
মন্দির পৌঁছে সে গাড়ির সীটে পুরো এলিয়েই পড়লো। আমরা তিনদিন আগে থেকেই সবাই
একটা হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাচ্ছিলাম - কোকা না কী যেন নামটা। তবে মনে হয় না
তাতে কোনো কাজ দিয়েছিলো। আমার তেমন কিছু অসুবিধা হয়নি, একটু জোরে হাঁটলে
অবশ্য বুঝতে পারতাম। সুমনার অল্প অস্বস্তি হয়েছিলো, ঋতির কিছু হয়নি, অথচ ঋক
- যার গুরুদংমারের রাস্তাতে কিছু হয়নি, সে পুরোই কাৎ - যদিও তার প্রধান
কারণ বুকে সর্দি বসা - যার ফলে অল্টিচিউড সিকনেসের এফেক্টটা বেশি হয়েছিলো।
রংলিতে এক শিশি ব্র্যান্ডি কিনেছিলাম - অল্প গরম জলের সাথে এক ঢাকনা মিশিয়ে
তাকে খাওয়ানো হল। তারপর চকোলেট। তাতে একটু শরীর গরম হল, বল্ল নিশ্বাসের
অস্বস্তিটাও অল্প কমেছে, কিন্তু গাড়ি থেকে আর নামলো না কোথাওই।</span><br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">একবার ভাবলাম নেমে যাই, আবার মনে হল আর
হয়তো এদিকে আসা হবে না। যার জন্যে চিন্তা সেও পুরোটা ঘুরেই তবে ফিরতে
ইচ্ছুক। ঠিক হল আরেকটু এগোই, যদি অবস্থা খারাপের দিকে যায় তাহলে নেমে যাবো।<br />
<br />
এগোলাম কুপুপের দিকে। নাথাং-এর লালচে ঝোপে ঢাকা পাহাড়ের বদলে এবার ধূসর
ল্যান্ডস্কেপ। থেকে থেকে দুটো একটা ছোট ছোট লেক, এখানে বলে পোখরি। তারপর
পাহাড়ের গায়ে একটা বাঁক ঘুরেই ডানদিকে বিরাট বড় এলিফ্যান্ট লেক বা হাতি
পোখরি। ওপর থেকে দেখতে অনেকটা হাতির মত - দূরের দিকটাতে হাতির শুঁড়, কাছের
দিকটা হাতির দেহ। রাস্তা থেকে কিছুটা নেমে লেকের পাশে একটা কুঁড়েঘর - লাক
পা, মানে আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড - আমাকে সেখানে যেতে দিলো না, বল্ল ভেড়া
পাহারা দেওয়ার কুকুর থাকবে আর সেগুলো বেজায় খতরনাক। হাতিপোখরি ছাড়িয়েই
কুপুপ গ্রাম - সেখানেও একপাশে বড় মিলিটারি ছাউনি। গ্রামের মধ্যে কয়েকটা
দোকান আছে - সেখানে চা বা অন্যান্য কিছু খাবার পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় চীন
থেকে আসা জিনিসপত্র - খেলনা, জ্যাকেট, কার্পেট ইত্যাদি।</span></span><br />
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="http://4.bp.blogspot.com/-x1osLl-DjiE/UI5y4xJZCRI/AAAAAAAAIJQ/jYqgIOsjGc0/s1600/IMG_0876.JPG" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" height="193" src="http://4.bp.blogspot.com/-x1osLl-DjiE/UI5y4xJZCRI/AAAAAAAAIJQ/jYqgIOsjGc0/s320/IMG_0876.JPG" width="320" /></a></div>
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">রংলিতে যে পাস করানো হয়েছিলো, সেটা
ছিলো কুপুপ অবধি। কিন্তু আমরা যাবো ছাংগু। কুপুপের চেকপোস্টে একজন ছিলো যে
আমাদের লাক পা-র চেনা - তো লাক পা পাসে ছাপ্পা মারার সময় তার সঙ্গে কথা বলে
ক্লিয়ার করে এলো। আমরা এগোলাম ছাংগুর দিকে। জুলুক থেকে কুপুপ হল ৩৪ কিমি,
কুপুপ থেকে ছাংগু আরো ৩৪ কিমি মতন। এদিকে ল্যান্ডস্কেপটা আরো কিছুটা বদলায়,
কুপুপ বা তার আগের তুলনায় একটু সবুজ। তবে রাস্তা তুলনামূলকভাবে অনেক
খারাপ। রংলি থেকে জুলুক হয়ে কুপুপ অবধি যা রাস্তা সেটা কলকাতা পৌরসভাকে
লজ্জা দেবে, আবার কুপুপ ছাড়িয়ে নাথু লা/ছাংগুর দিকের রাস্তা দেখে ইস্টার্ন
বাইপাসের কনট্র্যাক্টররা গর্ব করতেই পারে। এদিকে কিছুটা এগোলে ডানদিকে একটু
দূরে দেখা যায় মেমেন চু লেক।</span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">কুপুপ ছাড়িয়ে কিছুদূর গিয়ে দুই নং বাবা
মন্দির। এটা হল আগেরটার ক্লোন। আগেরটাই আসল বাবা মন্দির। যেহেতু কুপুপ
থেকে জুলুকের দিকের রাস্তা আগে সাধারণের জন্যে বন্ধ ছিলো, তাই নাথু লা-র
কাছে একটা দ্বিতীয় মন্দির বানানো হয় টুরিস্টদের জন্যে। গ্যাংটক থেকে যে
টুরিস্টরা ছাংগু/নাথু লা আসেন, তাঁরা এই বাবা মন্দিরেই ঘুরে যান।<br />
<br />
বাবা মন্দির ছাড়িয়ে আরেকটু এগোলে নাথু লা-র রাস্তা বেরিয়ে যায় ওপরদিকে।
সেখানে যেতে আলাদা পাস লাগে বলে আমরা আর যাইনি। এখানে একটা ইন্দো-চীন
বর্ডার মার্কেট বসে - চীন থেকে জিনিসপত্র নিয়ে গাড়ি আসে বর্ডার পেরিয়ে ওই
মার্কেটে - সপ্তাহে মনে হয় দুই দিন না তিন দিন বসে বাজারটা। চীন থেকে আসা
গাড়িগুলো একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ পাহারা
দেয়। আরো এগোলে আরো কিছু মিলিটারি ছাউনি পেরিয়ে ছাংগু - সিকিমের অতি
পরিচিত লেক, আশেপাশে ইয়াক নিয়ে লোকজন ঘুরছে, সিকিমিজ/ভুটানি/লেপচা পোশাক
পরে লোকজন ছবি তুলছে - টিপিক্যালি টুরিস্ট স্পট আর অত্যন্ত বোরিং। না এলেও
চলে আর কি, কিন্তু এসেই যখন পড়েছি দু একটা ছবি তোলাই যাক। শুনেচি বরফ থাকলে
নাকি দেখতে ভালো লাগে, আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে স্নো-পীকগুলোর ছায়া পড়ে।</span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">ছাংগু থেকে ফেরার সময় একটু তাড়াহুড়ো
করতে হল, কারণ ততক্ষণে ঋকের ব্র্যান্ডি আর চকোলেটের এফেক্ট ঘুচে গেছে। আরো
একটু চকোলেট খাইয়ে, বাবা-বাছা করে নেমে আসতে শুরু করলাম বিশেষ কোথাও না
দাঁড়িয়ে। নাথাং-এর আশেপাশে পৌঁছেছি যখন, তখন মেঘ করে এলো আরো বেশি। মুড়ির
দানার মত ছোট ছোট স্নো-ফ্লেক পড়তে শুরু করলো। আরো একটু এগোতে রাস্তা পুরো
মেঘে ঢাকা, এবং স্নো-ফ্লেকের বদলে বৃষ্টি। সেসব পেরিয়ে জুলুকে পৌঁছলাম তখন
আড়াইটে বাজে। ঋকের মুখ তখন কালচে হয়ে গেছে, ঠোঁট নীল। পাসাং শেরপারা বল্লেন
ওকে কিছু খাওয়াতে, তাতে সুস্থ লাগবে। সে ছেলে খেতে গিয়ে কাশতে কাশতে বমি
করে ফেললো সব, বমির সঙ্গে ঘন সর্দি। আর কিছু না পেয়ে সঙ্গে ডায়ামক্স ছিলো,
তাই অর্ধেক খাইয়ে দিলাম। আর আবার এক ঢাকনা ব্র্যান্ডি। সেদিন ঘরে রুম
হিটারও লাগালাম যাতে ঘরের ড্যাম্প ভাবটা কাটে। ঘন্টাখানেক ঘুমনোর পর বিকেল
নাগাদ ঋক একটু সুস্থ হল - সেটা বোঝা গেলো যখন ঋতির সঙ্গে একটা ছোট ঝগড়া
সেরে ফেললো।<br />
<br />
রাতটা কাটিয়ে পরের দিন গ্যাংটকে পৌঁছে ডাক্তার দেখাবো ভাবলাম। অন্ততঃ রংলি
পৌঁছে একটা কাফ-সিরাপ কিনে খাওয়াবো। যদিও তখন কাশি, আর তার জন্যে একটু
নিশ্বাস নিতে অস্বস্তি ছাড়া সে মোটামুটি ভালোই। সন্ধ্যেটা কাটিয়ে রাতে ফের
রুটি-মুর্গির ঝোল খেয়ে শুয়ে পড়লাম। পরের দিন ওই নটা নাগাদ বেরিয়ে পড়তে হবে,
ঘন্টা পাঁচেক লাগবে গ্যাংটক পৌঁছতে।</span></span></span><br />
<br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;">বৃহস্পতিবার, ২৫শে অক্টোবর, ২০১২<br />
=======================<br />
<br />
আগের রাতটা একটু ভয়ে ভয়ে কেটেছে। সেদিন আর ঋককে একা বিছানায় শুতে দিইনি,
নিজের পাশে শুইয়েছিলাম। রাতে বারবার উঠে খেয়াল রাখতে হয়েছে সে ঠিকঠাক আছে
কিনা।<br />
<br />
সকালে একটু বেলা করে উঠলাম - বিশেষ কিছু তো করার নেই, এখান থেকে গাড়িতে
গ্যাংটক পৌঁছনো ছাড়া। সকাল মানে ওই সাতটা। পাসাং শেরপাকে বলে গরম জলের
ব্যবস্থা করলুম - হাতমুখ ধোওয়া, বড় বাইরে ইত্যাদির জন্য। চান করার প্রশ্নই
নেই। আটটা নাগাদ দোকানে গিয়ে সেই ওয়াই ওয়াই নুডল্স আর চা খেয়ে সাড়ে আটটা
নাগাদ রওনা দিলাম। সেদিন আকাশ আগের দিনের চেয়ে পরিষ্কার - সেদিন ওপরে উঠলে
হয়তো লুংথুং আরো ভালো লাগতো, হয়তো ওখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখা যেত। জুলুক
থেকে অল্প নামতেই অবশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘার লেজটুকু দেখা গেছিলো...<br />
<br />
পদমচেনে ঢোকার আগে রাস্তার পাশে হেডহান্টার্সদের হাসপাতাল। ওরা শুধু
মিলিটারির লোক নয়, সবাইকেই দেখে। লাক্ পা বল্ল ঋককে একবার দেখিয়ে নিতে।
আর্মির ডাক্তার (মনে হয় প্যারামেডিক) দেখে কিছু ওষুধ দিলো - তখনই এক ডোজ
খাইয়েও দেওয়া হল। ফের সেই পুরনো রাস্তা ধরে ঘুরে ঘুরে নামতে নামতে সেই
রংলি। এখান থেকে একটা রাস্তা ঘুরে চলে গেছে রংপোর দিকে - যেটা বাংলা-সিকিম
বর্ডার - শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যাওয়ার পথে পড়ে। এই রাস্তাটা ভয়ানক বাজে -
পুরো ভাঙা। যেহেতু মিলিটারির যাতায়াত খুব একটা নেই, তাই মেরামতিও নেই। ঝকর
ঝকর করে ঘন্টাখানেক পর রংপো পৌঁছে ভালো রাস্তা পাওয়া গেল - সোজা গ্যাংটক
অবধি। এই রাস্তাটা একেবারেই আন-ইন্টারেস্টিং, আর সবার চেনা। কজেই নতুন করে
কিছু বলার নেই।<br />
<br />
গ্যাংটক সম্পর্কেও নতুন করে কিছু বলার নেই। সেই আগেরবার যে সোনম ডেলেক-এ
ছিলাম, সেখানেই উঠলাম। আগেরবার ছিলো ২০৪ নম্বর ঘর, এবার ৩০৪। জানলার বাইরে
ব্যালকনি, সেদিকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আর সেটা
দেখলামও - এই প্রথম এত ভালোভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা। পরের তিনদিন রোজ ভোর
পাঁচটায় উঠে ক্যামেরা আর ট্রাইপড নিয়ে ব্যালকনিতে বসে থেকেছি পুরো
সিকোয়েন্সটা তুলে রাখবো বলে। সূর্য ওঠার আগে আবছা অন্ধকারে সাদা
কাঞ্চনজঙ্ঘা, সূর্য উঠতে শুরু করার সময় প্রথমে একেবারে ডানদিকের চূড়ার ওপর
লালচে আলো, তারপর সেই আলোটুকুর আস্তে আস্তে অন্য চূড়াগুলোর ওপর ছড়িয়ে যাওয়া
এক এক করে, তারপর গোটা পাহাড়টারই কমলা রঙে চান করে যাওয়া, আর আস্তে আস্তে
সেই রঙ ফিকে হতে হতে হলদে, শেষে সাদা হয়ে যাওয়া - এই পুরো সিকোয়েন্সটা
দেখেছি পরের তিন দিন - রোজ।<br />
<br />
গ্যাংটকে বিশেষ ভিড় পাইনি। কারণটা মনে হয়ে আমরা দুটো ব্যাচের মাঝে
পৌঁছেছিলাম বলে। দুর্গাপুজোয় বেড়াতে আসা দলগুলো তখন নেমে গেছে, আর
লক্ষ্মীপুজোর সময়কার দলগুলো তখনো আসেনি - তাদের দেখলাম আমরা নেমে আসার সময়।
মাঝের সময়টা গ্যাংটক বেশ ফাঁকা (অন্যবারের তুলনায়)। রুমটেকটা আগে দেখা
ছিলো না - এবারে গ্যাংটক আসার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ওইটা দেখা, আর টুকটাক এদিক
ওদিক ঘুরে মেইনলি ল্যাদ খাওয়া। তো তাই হল - রুমটেক দেখলাম, আরো দু একটা
স্পট এদিক ওদিক - তবে বেলার দিকে আকাশ hazy হয়ে যাওয়ায় বিশেষ কিছু দর্শনীয়
পাইনি, একটা ফ্লাওয়ার শো (ওর চেয়ে ঢের সুন্দর শো হয় কলকাতার হর্টিকালচারল
সোসাইটির), হ্যান্ডিক্রাফটের বাজার - সেও অতি ঢপের। তবে হ্যাঁ - এঞ্চে
মনাস্টেরিটা মন্দ নয়। বেসিক্যালি ল্যাদ খাওয়ার ছিলো - তো দিনের বেলায় এদিক
ওদিক চক্কর কেটে বাকি সময়টা প্রচুর ল্যাদ খেয়েছি।<br />
<br />
তারপর একদিন সকালে গ্যাংটক থেকে বেরিয়ে ফের সেই এনজেপি। গোটা শিলিগুড়ি
বাইপাসটা দেখলাম ভেঙে চৌচির - একটু বেশি রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন হয়ে গেছে আর
কি - দু বছর আগেও রাস্তাটা অনেক ভালো অবস্থায় ছিলো। এনজেপি স্টেশনটাও
অত্যন্ত পচা, আর বড্ড বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিলো (একটু বেশি সাবধানী
হয়ে রাস্তায় আটকে যাওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি বেরোলে যা হয় আর কি)। ট্রেনটা ভালোই,
তবে শেয়ালদা পৌঁছে এক ঘন্টা ট্যাক্সির জন্যে দাঁড়ানো...এই ফেরাটাই সবচেয়ে
কষ্টকর। আর কষ্টকর হল সকাল সাড়ে আটটায় বাড়ি পৌঁছে আপিস যাবো না ভাবার পর
ন'টার সময় আপিস থেকে ফোং পেয়ে সেজেগুজে আপিস দৌড়নো...<br />
<br />
এই হল বেত্তান্ত।<span style="font-size: small;"> </span>ছবি দেখুন। </span></span></span> </span><br />
<span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"><span style="font-family: SolaimanLipi; font-size: small;"> </span> </span></div>
<embed flashvars="host=picasaweb.google.com&hl=en_GB&feat=flashalbum&RGB=0x000000&feed=https%3A%2F%2Fpicasaweb.google.com%2Fdata%2Ffeed%2Fapi%2Fuser%2F112619819199314747560%2Falbumid%2F5804702000427273729%3Falt%3Drss%26kind%3Dphoto%26hl%3Den_GB" height="192" pluginspage="http://www.macromedia.com/go/getflashplayer" src="https://picasaweb.google.com/s/c/bin/slideshow.swf" type="application/x-shockwave-flash" width="288"></embed></div>
Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com14tag:blogger.com,1999:blog-26948861.post-40433784445895976322012-06-11T07:39:00.001+01:002012-06-11T07:40:42.083+01:00ধুত্তেরি<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
শহর থেকে শহরে সিরিজের লেখাগুলো আরেক জায়গা থেকে কপি করেছিলাম - যা বুঝছি - ওগুলো ঠিকমত ইউনিকোডায়িত হয়নি। আবার সব ঠিক করতে হবে - দেখি কবে সময় পাই। আপাতত ওই লেখাগুলো এখানে পাবেন - <a href="http://www.banglalive.com/Blog/Other/5345">http://www.banglalive.com/Blog/Other/5345</a><br />
<br /></div>Arijithttp://www.blogger.com/profile/17068566260695847744noreply@blogger.com2