আরেট্টু হলে রবিবার নিউক্যাসল জার্নালে হেডলাইন হচ্ছিলো - "মাউন্টেন রেসকিউ সেভস কাপল ফ্রম রোজবেরি স্লোপ" বা "আ ডেয়ারিং রেসকিউ বাই দ্য মাউন্টেন রেসকিউ টীম"...
গপ্পোটা বলি শোন৷
প্রতি হপ্তাতেই প্রায় কোথাও না কোথাও যাই - বয়স হচ্ছে, ওজন বাড়ছে - তাই হাঁটতে, বেড়ানোও হয়, সাথে একটু গা-ঘামানো, এই করেই যদি ওজনটা কমে৷ ব্রিটিশরা হাঁটতে খুব ভালোবাসে, তাই হাঁটার রুট নিয়ে প্রচুর সাইট আছে, ওয়াকিং রুটগুলো খুব ভালো করে মেনটেন করা হয়, রীতিমতন ভালো ডিরেকশন দেওয়া...তো সেই রকম এক সাইট থেকে "রোজবেরি টপিং" এর খবর জোগাড় হল৷ মিডলসবরোর কাছে "নর্থ-ইয়র্ক মুর"-এর একদম শুরুর দিকে, মাইল চারেকের পথ, ক্যাটেগরি "strenuous" (যদিও সেটা আগে খেয়াল করে দেখা হয়নি) - হেঁটে একটা পাহাড়ের মাথায় ওঠা এবং নামা, পথটা একটা বনের মধ্যে দিয়ে গেছে, আশেপাশের দৃশ্য অতীব সুন্দর - এরকমই দাবি ছিলো লিফলেটে৷ তাই গেলুম, পার্কিং লটে গাড়ি রেখে একটু খেয়ে হাঁটার শুরু৷
কিছুদূর গিয়ে দেখলুম রাস্তা দুভাগ হয়েছে, একটা পথ বাঁদিকে চলে গেছে, দিব্যি সুন্দর হাঁটা রাস্তা, আরেকটা সিধে ওপরদিকে উঠেছে, ভালো চড়াই (সেটা কতদূর ভালো সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য)৷ সিধে রাস্তাতে দেখলাম বেশ ওপরে জনাদুই লোক উঠছে, আমরাও ভাবলুম এটাতেই যাই৷ আমি একবার সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলুম - একটা পুঁচকে ছেলে আছে, ফুটপাথ ধরেই যাই, কিন্তু...তো যাই হোক, এই ভোটের ফল তো জানা - ভোট নয়, ভেটো - চড়াইটাই ধরা ঠিক হল৷
চড়াইয়ে তিনটে ধাপ, প্রথম ধাপটা ছোট, পঞ্চাশ ফুট মতন - খুব বেশি খাড়া নয়, কিন্তু ঝুড়ো মাটি৷ তার মধ্যে যে পাথর-টাথরগুলো আটকে রয়েছে সেই ধরে প্রথম ধাপ অবধি তো পৌঁছনো গেলো৷ সেখানে আবার সেই জনসাধারণের জন্যে নির্মিত পথখানা...চড়াইয়ে উঠছি, তাই সেখানাকে ইগনোর মোডে ফেলে দেওয়া গেলো৷ এবার দ্বিতীয় ধাপ৷ প্রথম কুড়ি-তিরিশ ফুট অবধি ঠিকঠাক, কিন্তু হাত ব্যবহার না করলে হেঁটে ওঠা অসম্ভব৷ আমি সুমনাকে বল্লুম তুমি আর ঋক আগে ওঠ, আমি পিছনে আসছি, দরকারে আমি ধরতে পারবো - কেউ যদি গড়ায় আর কি৷ সে প্ল্যান খাটলো না৷ ঋকবাবু মায়ের সঙ্গে যাবেন না, এবং তাঁর প্রথম আপত্তি হল হাতে মাটি লাগবে৷ একটু চেষ্টা-চরিত্তির করতে করতেই তিনি একবার ধপাস হয়ে ভ্যাঁ জুড়লেন - অগত্যা আমার হাত ধরে তাঁর ওঠা শুরু হল৷ আমি এক হাতে ঋককে একটু করে তুলছি, তারপর নিজে উঠছি, পিঠে ব্যাগ, পিছনে সুমনা আসছে৷ এবার যত উঠি, দেখি স্লোপটা তত খাড়া হচ্ছে৷ সামনের প্রায় শ তিনেক ফুট বেশ খাড়া - আমাকেও হাত-পা ব্যবহার করে রীতিমতন স্ক্র্যাম্বল করতে হচ্ছে৷ এবং ঋককে নিয়ে ওঠা ক্রমশ: মুশকিল হচ্ছে৷ কিন্তু ততক্ষণে প্রায় পঞ্চাশফুট উঠে এসেছি, ঐ পথে নামা আরো কঠিন৷ আমি আগে পুরুলিয়ায় পাহাড়ে চড়েছি দড়িদড়া নিয়ে - আমি পারলেও, ঋককে নামাতে পারবো না, সুমনা বলেই দিলো ও নামবে না, মানে পারবে না৷ সুতরাং উঠে যাওয়াই একমাত্র উপায়৷
প্রায় মাঝামাঝি যখন পৌঁছেছি, তখন আরেকটা কোনক্রমে দাঁড়ানো বা বসার জায়গা, সেখানে ঋককে বসিয়ে ভালো করে ওপর-নীচ খতিয়ে দেখলুম৷ সামনে আরো অন্তত: দেড়শো ফুট, প্রায় ন্যাড়া, মাটিতে অল্প ঘাস, কিন্তু সে ঘাস ধরে ওঠার চেষ্টা করলে ঘাস উপড়ে আসবে৷ আগে অন্যান্য লোক গেছে বলে (এবং ভেজা অবস্থায় গেছে নির্ঘাত) কিছু খোঁদল রয়েছে - জুতোর খোঁদল৷ ওগুলো ধরে ওঠা ছাড়া কোন গতিক নেই৷ আরেকবার ভাবলুম নেমে যাবো কিনা - কিন্তু তখন নামা অসম্ভব হয়ে গেছে৷ সুমনা ঐ ছোট ধাপের কাছাকাছি যখন পৌঁছেছে, তখন আমি ঋককে নিয়ে আবার উঠতে শুরু করলুম - এবার আর কোথাও দাঁড়ানোর উপায় নেই৷ নিচে সুমনাকে যে টেনে তুলবো, তাও সম্ভব নয়৷ এক হাতে ঋককে একটু করে তুলছি, এবার ওকে বাধ্য হয়ে হাত দিয়েও খামচে উঠতে হচ্ছে, একটা জুতোর গর্তে ঋক যখন পা রাখছে, ওকে পিছন থেকে ধরে আমি নিজে এক ধাপ উঠছি৷ মাঝে মাঝেই ঋক আমার ঘাড়ে ওঠার জন্যে বায়না করছে - ঘাড়ে উঠবে কি - পিঠে বাঁধা গেলে হয়তো ওঠা সম্ভব৷ হঠাত্ "ফড়াত্" - আমার সাধের আউটডোর ট্রাউজারের পায়ের ভিতরের দিকে যে সেলাই থাকে সেখানে ফাটলো৷ প্রথমে ছোট৷ তারপরে এক একটা ধাপ উঠছি, আরেকটু ফড়াত্...ঋকের কান্না, ঐ ফড়াত্ ফড়াত্, আর সুমনার "এবার কোনদিকে" শুনতে শুনতে আর ঋককে কোনমতে ঠেলতে ঠেলতে দ্বিতীয় ধাপের মাথায় তুলে ধপ করে বসে পড়লুম৷ ঋককে একটা পাথরের পাশে বসিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে চমত্কৃত৷ ওখান থেকে পড়লে আর দেখতে হবে না...গড়গড়িয়ে সিধে নীচে, তাতে মরণ না হলেও হাসপাতালে গমন অবশ্যম্ভাবী৷ দ্বিতীয় চমক নিজেকে দেখে - বেল্টের ঠিক নীচ থেকে হাঁটুর তলা অবধি - প্যান্টটা পুরো পতাকা হয়ে ঝুলছে, পুলিশে চাইলে ইনডিসেন্ট এক্সপোজারের জন্যে হাজতে ভরতে পারে, একদম কেলেংকারী কেস নয় যদিও, তবুও...
এবার তৃতীয় সমস্যা হল সুমনাকে দেখতে পাচ্ছি না৷ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, তার নীচের বেশ কিছুটা অতি খাড়া, তার নীচে খান কয়েক ঝোপঝাড়, কিন্তু সুমনা নেই৷ হাঁক পাড়লুম - ঝোপের আড়াল থেকে সাড়া এলো৷ সুমনা ওখানে আটকে আছে, আর এগোতে পারছে না৷ অনেক হাঁকডাকের পর মাথাটা বেরলো, তারপর বাকিটা - ওখানে চারটে খোঁদলে হাত-পা আটকে সুমনা প্রায় ত্রিশঙ্কু৷ বেশ কিছুটা মেহনত করে ফুট কয়েক উঠলো, কিন্তু এমন একটা জায়গায় চলে গেছে যেখান থেকে ধরে ওঠার মতন আর কিছু নেই৷ আমি যে গর্তগুলো বেয়ে উঠেছি সেগুলো থেকে বেশ কিছুটা ডানদিকে সরে গেছে৷ এবার আমি যত বলি গর্তগুলোর কাছে এসো, সে আর পারে না৷ বলে আমি আর উঠতে পারবো না, নামতেও পারবো না - তুমি এমার্জেন্সী ডায়াল করো৷ মুশকিল হল আমি ঋককে বসিয়ে যেতে পারছি না, কারণ আমি নামলেই তিনি ধারে এসে পর্যবেক্ষণ শুরু করবেন - তাহলে পড়ে যাবার প্রভুত চান্স৷ দড়িও নেই যে দড়ি নামিয়ে দেবো...আর অন্য কেউও সেদিক দিয়ে আসছে না যে সাহায্য করবে৷ গতিক না দেখে করলুম ৯৯৯ - তারা বলে "ফায়ার, অ্যামবুলেন্স না পুলিশ" - আমি বল্লুম "মাউন্টেন রেসকিউ" - তো সেখানে ট্রান্সফার করে দিলো৷ ওদের পুরো অবস্থাটা বল্লুম - যে আমার বউ রোজবেরি টপিংয়ের স্লোপে ঝুলছে, উঠতেও পারছে না, নামা সম্ভব নয় - বাঁচাও...সে কত প্রশ্ন - তোমার নাম কি, বউয়ের নাম কি, বয়স কত, তোমার সাথে আর কেউ আছে কিনা, বাচ্চা-টাচ্চা - বল্লুম হ্যাঁ, একটা ছোট ছেলে আছে, কিন্তু সে সেফ...তখন বল্লে যে আমরা আসছি৷
এর ঠিক পরেই দেখি একটা অল্পবয়সী ছেলে আর তার বাবা ঐ পথেই উঠছে৷ ছেলেটা রীতিমতন মাউন্টেনিয়ারিং জানে, চটপট উঠছে, তার বাবাও তাই৷ ওরা পাশ দিয়ে আসার সময় সুমনাকে বললো যে ওরা যেখান দিয়ে যাচ্ছে, সেখান দিয়ে আসতে৷ ছেলেটার বাবা বেশ ভারিক্কী চেহারার, ওকে দেখে সুমনার ভরসা মনে হয় বাড়লো কিছুটা, হাঁচোড়-পাঁচোড় করে মাথা অবধি চলে আসার পরে আমি টেনে নিলুম৷ সাথে সাথেই মাউন্টেন রেসকিউয়ের ফোন - যে আমরা রওনা দিচ্ছি - তোমরা ঠিক আছো কি? আমি বল্লুম যে আরেকটা টীম আসছিলো, তারা সাহায্য করেছে, আমার বউ উঠে এসেছে...
এর পর আর গপ্পো নেই৷ আমার প্যান্ট তো ঐরকম পতাকা হয়ে রয়েছে, ব্যাগ থেকে ঋকের একটা স্পেয়ার শার্ট নিয়ে পায়ের ফাঁক দিয়ে বাঁধলুম, হাঁটুর কাছে নিজের রুমালটা বাঁধলুম, সুমনার কাছে সেফটিপিন ছিলো - সেই দিয়ে নিজের জামাটা প্যান্টের সঙ্গে আটকে দিলুম - যাতে কোনরকমে রেখেঢেকে রাখা যায়৷ কিন্তু মুশকিল হল এক পা করে হাঁটছি, আর ফুট করে আরেকটু ছিঁড়ছে...দেখলুম ঐ করে আর পুরো পাহাড়ের মাথা অবধি যাওয়া যাবে না, তাইলে আর প্যান্টটাই থাকবে না...অগত্যা নেমে গেলুম - এবার রাস্তা দিয়ে৷ অবশ্য সুমনার অলরেডী তখন প্যানিক হয়ে গেছে - রাস্তাটা মোটামুটি ঢালু - কিন্তু তাতেও ভয় পাচ্ছে...ধরে ধরে নামলো...
কি শিখলুম?
(১) আউটডোর ট্রাউজার কক্ষণো সেল-এ কিনতে নেই৷
(২) আবার যাবো - কিন্তু এবার একটা দড়ি আর দুটো হুক নিয়ে৷
(৩) সুমনা বলেছে আর কক্ষণো ফুটপাথ ছেড়ে শর্টকাট ধরবে না৷
গপ্পোটা বলি শোন৷
প্রতি হপ্তাতেই প্রায় কোথাও না কোথাও যাই - বয়স হচ্ছে, ওজন বাড়ছে - তাই হাঁটতে, বেড়ানোও হয়, সাথে একটু গা-ঘামানো, এই করেই যদি ওজনটা কমে৷ ব্রিটিশরা হাঁটতে খুব ভালোবাসে, তাই হাঁটার রুট নিয়ে প্রচুর সাইট আছে, ওয়াকিং রুটগুলো খুব ভালো করে মেনটেন করা হয়, রীতিমতন ভালো ডিরেকশন দেওয়া...তো সেই রকম এক সাইট থেকে "রোজবেরি টপিং" এর খবর জোগাড় হল৷ মিডলসবরোর কাছে "নর্থ-ইয়র্ক মুর"-এর একদম শুরুর দিকে, মাইল চারেকের পথ, ক্যাটেগরি "strenuous" (যদিও সেটা আগে খেয়াল করে দেখা হয়নি) - হেঁটে একটা পাহাড়ের মাথায় ওঠা এবং নামা, পথটা একটা বনের মধ্যে দিয়ে গেছে, আশেপাশের দৃশ্য অতীব সুন্দর - এরকমই দাবি ছিলো লিফলেটে৷ তাই গেলুম, পার্কিং লটে গাড়ি রেখে একটু খেয়ে হাঁটার শুরু৷
কিছুদূর গিয়ে দেখলুম রাস্তা দুভাগ হয়েছে, একটা পথ বাঁদিকে চলে গেছে, দিব্যি সুন্দর হাঁটা রাস্তা, আরেকটা সিধে ওপরদিকে উঠেছে, ভালো চড়াই (সেটা কতদূর ভালো সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য)৷ সিধে রাস্তাতে দেখলাম বেশ ওপরে জনাদুই লোক উঠছে, আমরাও ভাবলুম এটাতেই যাই৷ আমি একবার সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলুম - একটা পুঁচকে ছেলে আছে, ফুটপাথ ধরেই যাই, কিন্তু...তো যাই হোক, এই ভোটের ফল তো জানা - ভোট নয়, ভেটো - চড়াইটাই ধরা ঠিক হল৷
চড়াইয়ে তিনটে ধাপ, প্রথম ধাপটা ছোট, পঞ্চাশ ফুট মতন - খুব বেশি খাড়া নয়, কিন্তু ঝুড়ো মাটি৷ তার মধ্যে যে পাথর-টাথরগুলো আটকে রয়েছে সেই ধরে প্রথম ধাপ অবধি তো পৌঁছনো গেলো৷ সেখানে আবার সেই জনসাধারণের জন্যে নির্মিত পথখানা...চড়াইয়ে উঠছি, তাই সেখানাকে ইগনোর মোডে ফেলে দেওয়া গেলো৷ এবার দ্বিতীয় ধাপ৷ প্রথম কুড়ি-তিরিশ ফুট অবধি ঠিকঠাক, কিন্তু হাত ব্যবহার না করলে হেঁটে ওঠা অসম্ভব৷ আমি সুমনাকে বল্লুম তুমি আর ঋক আগে ওঠ, আমি পিছনে আসছি, দরকারে আমি ধরতে পারবো - কেউ যদি গড়ায় আর কি৷ সে প্ল্যান খাটলো না৷ ঋকবাবু মায়ের সঙ্গে যাবেন না, এবং তাঁর প্রথম আপত্তি হল হাতে মাটি লাগবে৷ একটু চেষ্টা-চরিত্তির করতে করতেই তিনি একবার ধপাস হয়ে ভ্যাঁ জুড়লেন - অগত্যা আমার হাত ধরে তাঁর ওঠা শুরু হল৷ আমি এক হাতে ঋককে একটু করে তুলছি, তারপর নিজে উঠছি, পিঠে ব্যাগ, পিছনে সুমনা আসছে৷ এবার যত উঠি, দেখি স্লোপটা তত খাড়া হচ্ছে৷ সামনের প্রায় শ তিনেক ফুট বেশ খাড়া - আমাকেও হাত-পা ব্যবহার করে রীতিমতন স্ক্র্যাম্বল করতে হচ্ছে৷ এবং ঋককে নিয়ে ওঠা ক্রমশ: মুশকিল হচ্ছে৷ কিন্তু ততক্ষণে প্রায় পঞ্চাশফুট উঠে এসেছি, ঐ পথে নামা আরো কঠিন৷ আমি আগে পুরুলিয়ায় পাহাড়ে চড়েছি দড়িদড়া নিয়ে - আমি পারলেও, ঋককে নামাতে পারবো না, সুমনা বলেই দিলো ও নামবে না, মানে পারবে না৷ সুতরাং উঠে যাওয়াই একমাত্র উপায়৷
প্রায় মাঝামাঝি যখন পৌঁছেছি, তখন আরেকটা কোনক্রমে দাঁড়ানো বা বসার জায়গা, সেখানে ঋককে বসিয়ে ভালো করে ওপর-নীচ খতিয়ে দেখলুম৷ সামনে আরো অন্তত: দেড়শো ফুট, প্রায় ন্যাড়া, মাটিতে অল্প ঘাস, কিন্তু সে ঘাস ধরে ওঠার চেষ্টা করলে ঘাস উপড়ে আসবে৷ আগে অন্যান্য লোক গেছে বলে (এবং ভেজা অবস্থায় গেছে নির্ঘাত) কিছু খোঁদল রয়েছে - জুতোর খোঁদল৷ ওগুলো ধরে ওঠা ছাড়া কোন গতিক নেই৷ আরেকবার ভাবলুম নেমে যাবো কিনা - কিন্তু তখন নামা অসম্ভব হয়ে গেছে৷ সুমনা ঐ ছোট ধাপের কাছাকাছি যখন পৌঁছেছে, তখন আমি ঋককে নিয়ে আবার উঠতে শুরু করলুম - এবার আর কোথাও দাঁড়ানোর উপায় নেই৷ নিচে সুমনাকে যে টেনে তুলবো, তাও সম্ভব নয়৷ এক হাতে ঋককে একটু করে তুলছি, এবার ওকে বাধ্য হয়ে হাত দিয়েও খামচে উঠতে হচ্ছে, একটা জুতোর গর্তে ঋক যখন পা রাখছে, ওকে পিছন থেকে ধরে আমি নিজে এক ধাপ উঠছি৷ মাঝে মাঝেই ঋক আমার ঘাড়ে ওঠার জন্যে বায়না করছে - ঘাড়ে উঠবে কি - পিঠে বাঁধা গেলে হয়তো ওঠা সম্ভব৷ হঠাত্ "ফড়াত্" - আমার সাধের আউটডোর ট্রাউজারের পায়ের ভিতরের দিকে যে সেলাই থাকে সেখানে ফাটলো৷ প্রথমে ছোট৷ তারপরে এক একটা ধাপ উঠছি, আরেকটু ফড়াত্...ঋকের কান্না, ঐ ফড়াত্ ফড়াত্, আর সুমনার "এবার কোনদিকে" শুনতে শুনতে আর ঋককে কোনমতে ঠেলতে ঠেলতে দ্বিতীয় ধাপের মাথায় তুলে ধপ করে বসে পড়লুম৷ ঋককে একটা পাথরের পাশে বসিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে চমত্কৃত৷ ওখান থেকে পড়লে আর দেখতে হবে না...গড়গড়িয়ে সিধে নীচে, তাতে মরণ না হলেও হাসপাতালে গমন অবশ্যম্ভাবী৷ দ্বিতীয় চমক নিজেকে দেখে - বেল্টের ঠিক নীচ থেকে হাঁটুর তলা অবধি - প্যান্টটা পুরো পতাকা হয়ে ঝুলছে, পুলিশে চাইলে ইনডিসেন্ট এক্সপোজারের জন্যে হাজতে ভরতে পারে, একদম কেলেংকারী কেস নয় যদিও, তবুও...
এবার তৃতীয় সমস্যা হল সুমনাকে দেখতে পাচ্ছি না৷ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, তার নীচের বেশ কিছুটা অতি খাড়া, তার নীচে খান কয়েক ঝোপঝাড়, কিন্তু সুমনা নেই৷ হাঁক পাড়লুম - ঝোপের আড়াল থেকে সাড়া এলো৷ সুমনা ওখানে আটকে আছে, আর এগোতে পারছে না৷ অনেক হাঁকডাকের পর মাথাটা বেরলো, তারপর বাকিটা - ওখানে চারটে খোঁদলে হাত-পা আটকে সুমনা প্রায় ত্রিশঙ্কু৷ বেশ কিছুটা মেহনত করে ফুট কয়েক উঠলো, কিন্তু এমন একটা জায়গায় চলে গেছে যেখান থেকে ধরে ওঠার মতন আর কিছু নেই৷ আমি যে গর্তগুলো বেয়ে উঠেছি সেগুলো থেকে বেশ কিছুটা ডানদিকে সরে গেছে৷ এবার আমি যত বলি গর্তগুলোর কাছে এসো, সে আর পারে না৷ বলে আমি আর উঠতে পারবো না, নামতেও পারবো না - তুমি এমার্জেন্সী ডায়াল করো৷ মুশকিল হল আমি ঋককে বসিয়ে যেতে পারছি না, কারণ আমি নামলেই তিনি ধারে এসে পর্যবেক্ষণ শুরু করবেন - তাহলে পড়ে যাবার প্রভুত চান্স৷ দড়িও নেই যে দড়ি নামিয়ে দেবো...আর অন্য কেউও সেদিক দিয়ে আসছে না যে সাহায্য করবে৷ গতিক না দেখে করলুম ৯৯৯ - তারা বলে "ফায়ার, অ্যামবুলেন্স না পুলিশ" - আমি বল্লুম "মাউন্টেন রেসকিউ" - তো সেখানে ট্রান্সফার করে দিলো৷ ওদের পুরো অবস্থাটা বল্লুম - যে আমার বউ রোজবেরি টপিংয়ের স্লোপে ঝুলছে, উঠতেও পারছে না, নামা সম্ভব নয় - বাঁচাও...সে কত প্রশ্ন - তোমার নাম কি, বউয়ের নাম কি, বয়স কত, তোমার সাথে আর কেউ আছে কিনা, বাচ্চা-টাচ্চা - বল্লুম হ্যাঁ, একটা ছোট ছেলে আছে, কিন্তু সে সেফ...তখন বল্লে যে আমরা আসছি৷
এর ঠিক পরেই দেখি একটা অল্পবয়সী ছেলে আর তার বাবা ঐ পথেই উঠছে৷ ছেলেটা রীতিমতন মাউন্টেনিয়ারিং জানে, চটপট উঠছে, তার বাবাও তাই৷ ওরা পাশ দিয়ে আসার সময় সুমনাকে বললো যে ওরা যেখান দিয়ে যাচ্ছে, সেখান দিয়ে আসতে৷ ছেলেটার বাবা বেশ ভারিক্কী চেহারার, ওকে দেখে সুমনার ভরসা মনে হয় বাড়লো কিছুটা, হাঁচোড়-পাঁচোড় করে মাথা অবধি চলে আসার পরে আমি টেনে নিলুম৷ সাথে সাথেই মাউন্টেন রেসকিউয়ের ফোন - যে আমরা রওনা দিচ্ছি - তোমরা ঠিক আছো কি? আমি বল্লুম যে আরেকটা টীম আসছিলো, তারা সাহায্য করেছে, আমার বউ উঠে এসেছে...
এর পর আর গপ্পো নেই৷ আমার প্যান্ট তো ঐরকম পতাকা হয়ে রয়েছে, ব্যাগ থেকে ঋকের একটা স্পেয়ার শার্ট নিয়ে পায়ের ফাঁক দিয়ে বাঁধলুম, হাঁটুর কাছে নিজের রুমালটা বাঁধলুম, সুমনার কাছে সেফটিপিন ছিলো - সেই দিয়ে নিজের জামাটা প্যান্টের সঙ্গে আটকে দিলুম - যাতে কোনরকমে রেখেঢেকে রাখা যায়৷ কিন্তু মুশকিল হল এক পা করে হাঁটছি, আর ফুট করে আরেকটু ছিঁড়ছে...দেখলুম ঐ করে আর পুরো পাহাড়ের মাথা অবধি যাওয়া যাবে না, তাইলে আর প্যান্টটাই থাকবে না...অগত্যা নেমে গেলুম - এবার রাস্তা দিয়ে৷ অবশ্য সুমনার অলরেডী তখন প্যানিক হয়ে গেছে - রাস্তাটা মোটামুটি ঢালু - কিন্তু তাতেও ভয় পাচ্ছে...ধরে ধরে নামলো...
কি শিখলুম?
(১) আউটডোর ট্রাউজার কক্ষণো সেল-এ কিনতে নেই৷
(২) আবার যাবো - কিন্তু এবার একটা দড়ি আর দুটো হুক নিয়ে৷
(৩) সুমনা বলেছে আর কক্ষণো ফুটপাথ ছেড়ে শর্টকাট ধরবে না৷
হুম বুঝলম, বেশ ধকল গেছে| দেখবেন, দড়িটা আবার সেল এ কিনতে যাবেন না যেন :)
ReplyDeleteArijit,apnar postate bangla horofgulo ekdom bangla horof-r motoni dekhachee :)Kon bangla font use korchen?
ReplyDeleteসোলেমানলিপি। উইন্ডোজে বৃন্দাতে কেমন আরশোলার হেঁটে যাওয়ার মতন লাগেঃ-)
ReplyDeleteহাহ হাহ হা...
ReplyDeleteবৃন্দা ফন্ট সম্পর্কে একদম খাঁটি কথা বলেছেন। :D