Thursday, August 10, 2006

টুকিটাকি

একটু ঢাক পেটাই - গুরুচণ্ডা৯তে লেখা "বুলবুলভাজা"।

"
(১) এখন গরমকাল - বেজায় গরম, যাকে বলে "পীক সামার" - গোটা ইংল্যাণ্ডে লোক হাঁসফাঁস করছে৷ করবে নাই বা কেন,প্রধাণত: শীতের দেশ, সেখানে দুম করে বত্রিশ-তেত্রিশ-কোথাও পঁয়ত্রিশ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা অস্বস্তিকর তো বটেই৷ তুমুল জল্পনা - উনিশশো এগারোর রেকর্ড (সাঁইত্রিশ ডিগ্রী) হয়তো ভাঙতে পারে৷ সকালের মেট্রোতে খবর - "Commuters in London are travelling in temperatures higher than those in which cattle are transported. Buses in London have reached 52 degree Celcius, while the tube reached 47 degrees. According to the EU guidelines, cattle are not to be transported in temperatures above 27 degrees." হাঁসফাঁসানো লোকে কটিবস্ত্র গলিয়ে ঝাঁক বেঁধে দৌড়েছে সমুদ্রের ধারে৷ লণ্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়্যারে ঘুরতে গেলে ওখানকার ফোয়ারাতে অগণিত স্নানদৃশ্য - মতান্তরে চোখের আরাম৷

(২) এইচ এম এস গ্লস্টার - যে কিনা বেইরুট থেকে একশো আশি জন আটকে পরা ব্রিটিশদের সাইপ্রাসে নিয়ে এসেছে, ক্রমশ আরো আসবে - আনুমানিক বিশ হাজার - ডানকার্কের পর এই প্রথম এত বড় ইভ্যাকুয়েশন৷

(৩) লেবাননের ওপর আরো ইজরায়েলী বোমা-বর্ষন৷

(৪) জি-৮ সামিটে বড়দা বুশ এবং ছোট ভাই ব্লেয়ারের ঘনিষ্ঠ কথোপকথন - যেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জ, হেজবোল্লার পাশাপাশি আলোচনার বিষয়বস্তু হয় একটা সোয়েটার


(৫) ফুটবলের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ "সেল" - জুভেন্টাস, লাজিও, ফিওরেন্টিনা আর এ সি মিলানের শাস্তির পরে কোন ফুটবলারের বাজারে কত দাম৷

(৬) তৃতীয়বার বাবা হলেন গর্ডন ব্রাউন৷৷৷

...

এর মাঝে দুটো ছোট্ট খবর একবার সামনে এসেই মিলিয়ে যায়, বুলবুলভাজার হেডলাইন সেগুলোই...

(১) সেই এক নিরীহ ব্রাজিলিয় ইলেক্টিশিয়ানের কথা মনে পড়ে? সেই জাঁ চার্লস ডি মেনেজেস? বাইশে জুলাই, ২০০৫ যাকে সশস্ত্র পুলিশবাহিনী স্টকওয়েল টিউব স্টেশনের ভিতরে গুলি করে মারে "সুইসাইড বম্বার" সন্দেহে - কোন প্রশ্ন না করে, কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে? প্রায় এক বছর পর ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের রায় - কোন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই, হ্যাঁ, কিছু ভুল হয়েছিলো বটে৷

"Despite mistakes made in planning and communication by officers, there had been "insufficient evidence to provide a realistic prospect of conviction against any individual police officer"."

ইনডিপেন্ডেন্ট পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট অন্ধকারে থেকে যায়, সম্ভবত পুরো ঘটনার কঠোর-সমালোচনার জন্যে৷ ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের রায় - ১৯৭৪ সালের "কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ এবং সুরক্ষা" আইনের সেকশন তিন এবং তেত্রিশ নম্বর ধারার আওতায় মেট্রোপলিটান পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক - for "failing to provide for the health, safety and welfare" of Mr Menezes on 22 July
- খুন নয়, ফেইলিং টু প্রোভাইড হেল্থ, সেফটি অ্যাণ্ড ওয়েলফেয়ার৷ পুলিশ কখনো খুন করে না৷

সাঁইত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় স্টকওয়েল টিউব স্টেশনের পাশে জাঁ চার্লস ডি মেনেজেসের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে পড়ে থাকা ফুলগুলো শুকোতে থাকে...

(২) সোয়ান হান্টার শিপইয়ার্ড থেকে ধীরগতিতে বেরিয়ে যায় ইয়ার্ডে তৈরী হতে থাকা শেষ জাহাজটা - কাজ শেষ হবে গ্লাসগোতে৷ টাইন নদীর দুধার নীরব চোখে তাকিয়ে থাকে ক্রমশ: দূরে যেতে থাকা ষোল হাজার টনের RFA Lyme Bay
-র দিকে৷ একশো ছেচল্লিশ বছরের জাহাজ তৈরীর ইতিহাস শেষ, বন্ধ হল টাইনের ধারের শেষ জাহার তৈরীর ইয়ার্ড৷ প্রতিরক্ষা দপ্তরের বক্তব্য ক্রমবর্ধমান খরচ, এবং কাজ শেষ হতে দেরীই এই কনট্র্যাক্ট বাতিল করে দেওয়ার কারণ, এবং, তার জন্যে দায়ী সোয়ান হান্টারের ম্যানেজমেন্ট৷ জাহাজের কোয়ালিটি নিয়ে কোন বিতর্কই নেই৷

কয়েক দশক আগেও এই একই সোয়ান হান্টারে কাজ করতো প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার শ্রমিক, নয় নয় করে ষোলশোর বেশি জাহাজ তৈরী হয়ে বেরিয়েছে এই ইয়ার্ড থেকে...কিন্তু নর্থ-সাউথ ডিভাইড অন্যান্য ইয়ার্ড আর কোলিয়ারিগুলোর মতন এরও শেষ বাঁশি বাজিয়ে দিলো৷

সাঁইত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পুড়তে থাকে ধুলো ঢাকা নির্জন সোয়ান হান্টার - টাইন নদীর ধারের শেষ শিপইয়ার্ড৷৷৷হয়তো এবার এখানে জাহাজ ভাঙা হবে..."

No comments:

Post a Comment