রাত সাড়ে এগারোটায় প্রায় টলতে টলতে, (আর গাড়ির বাকিরা ধুঁকতে ধুঁকতে)
টিলাবাড়ি পৌঁছে আর কিছু নজর করার অবস্থা ছিলো না। সকালে ঘুম ভাঙতে দেখলাম
কমপ্লেক্সটা বেশ বড়। মানে বেশ ভালোই বড়। সাজানো বাগান, পাথরের ফোয়ারা, বড়
পার্কিং লট, মিউজিয়াম, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। কটেজগুলোর যা সাইজ, একটায়
অনায়াসে চারজন থাকা যায়, কিন্তু ব্যবস্থা এবং নিয়ম করে রেখেছে দুজনের। বছর
দুয়েক হল তৈরী হয়েছে এই কমপ্লেক্সটা, উত্তর বঙ্গে ট্যুরিজম বাড়ানোর জন্যে,
যদিও, ফরেস্ট লজ বলতে যা বোঝায় টিলাবাড়ি একেবারেই সেরকম নয়, বরং গরুমারার
জঙ্গলে এতটা জায়গা নিয়ে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স একটু বাড়াবাড়ি (এবং বেখাপ্পা)
ঠেকেছে। জঙ্গল এলাকার বাইরে হলে ব্যাপারটা অন্যরকম হত। ক্যামেরা আর বের
করতে ইচ্ছে করছিলো না - হাতের কাছে মোবাইল ছিলো, তাতেই এদিক ওদিক কয়েকটা
ছবি তুলে রেখেছিলো জনতা, ডকুমেন্টেশনের জন্যে (হোয়াটস অ্যাপের দৌলতে
রিয়েলটাইম খবরাখবর যায় বিভিন্ন জায়গায়)।
আরো একটা জিনিস দেখে ছেলেমেয়ের খুব মজা - রাতে যেখানে গাড়ি রেখেছিলাম, তার পাশে একই মেক/মডেল/ট্রিম এবং কাছাকাছি রেজিস্ট্রেশন নম্বরের আর একটা গাড়ি, শুধু রঙটা আলাদা।
ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি - তার লিস্টে বেশ কিছু নাম থাকলেও পুরী-তরকারি আর টোস্ট ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেলো না। খেতে খেতে আলাপ হল অন্য গাড়িটার লোকজনের সাথে - তাঁরা কলকাতার সেটা তো অবভিয়াস - যাবেনও সান্তালেখোলা - তবে থাকবেন রিভার ক্যাম্পে (আমরা পাহাড়ের ওপর মৌচুকি জাঙ্গল ক্যাম্পে), তারপর যাবেন "পারেন" আর "জলদাপাড়া"।
স্নানটান সারতে সারতে দেবাশিস ফোন করলো - পানঝরা, সান্তালেখোলা, মেন্ডাবাড়ির কাগজপত্র সব ওর কাছে আছে - ও এসে দিয়ে যাবে। আর আসছেই যখন, তখন পানঝরার রাস্তাটা চিনিয়ে দিয়ে যাবে, কারণ গুগুল ম্যাপে শুধু চাপড়ামারির গেটটা দেখা যায় - সেটাও একটু এদিক ওদিক ঘুরে। দশটা নাগাদ চেক-আউট করলাম। এসব সরকারি গেস্ট হাউজে এখন চেক-আউটের সময় একটা করে গিফট-প্যাক দিচ্ছে (রুম পিছু একটা) - বাঁশের পেনদানি গোছের কিছু, আর একটা চকোলেট।
এর মধ্যে দেবাশিসও এসে গেল, সাথে পুরো পরিবার - স্বাতী (দেবাশিসের বৌ), আর যমজ ছেলেমেয়ে। এই ফাঁকে পরিচয়টা দিয়ে রাখি - দেবাশিসের সাথে আমার আলাপ আমাদের ফটোগ্রাফি ক্লাবে। মধ্যমগ্রামে থাকতো, পেশা ছিলো পড়ানো - স্কুলে টুলে নয়, পুরো টিউশনি। অবসরে ছবি তোলা। ক্লাবের একজনের মেয়েকে পড়াতো, তাই ক্লাবে সবাই "দেবুস্যার" বলেই ডাকে। ভালোই ছিলো, হঠাৎ একদিন কী খেয়াল হল - কলকাতা/মধ্যমগ্রাম ছেড়ে দিয়ে চিলাপাতায় রওনা দিয়ে দিলো - সেখানেই থাকে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, জমি কিনে ফার্মিং করে, আর ট্যুর অপারেটরের ব্যবসা। ভালোই চলে - ইদানিং পাহাড়ে (মানে সিকিম) আর জঙ্গলে (মানে ডুয়ার্সে) ভালো পরিচিতি হয়ে গেছে। লোক খুবই ভালো, শুধু মাথাটা...মানে মাঝেমাঝেই বেশ আজগুবি দাবীদাওয়া করে থাকে...মাসখানেকে হিমালয়কে চক্কর দেওয়ার মতন।
টিলাবাড়ি থেকে বেরোতে পৌনে এগারোটা বাজলো। তেল নিতে হবে - গেলাম চালসার দিকে। সেখান থেকে আবার ঘুরে মূর্তি রিভার ক্যাম্পের পাশ দিয়ে একটা সরু ব্রীজ পেরিয়ে চাপড়ামারির রাস্তায় উঠলাম। আগের দিন রাতের মত অন্ধকারে হাতড়ানো নয় আর - দুপাশে ঘন জঙ্গল দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ একটা হরিণও...এরা মাঝেমাঝেই লাফিয়ে রাস্তায় চলে আসে বলে এই পুরো এলাকাতেই স্পীড লিমিট বাঁধা। বেশ জোরে পাখির ডাক শোনা যায়। আর একটা কনস্ট্যান্ট উঁচুতারে ঝিঁঝিঁর ডাক - আমাদের কলকাতা শহরতলির ঝিঁঝিঁর চেয়ে অনেকটাই অন্যরকম।
(চলবে)
(আগের কথা)
আরো একটা জিনিস দেখে ছেলেমেয়ের খুব মজা - রাতে যেখানে গাড়ি রেখেছিলাম, তার পাশে একই মেক/মডেল/ট্রিম এবং কাছাকাছি রেজিস্ট্রেশন নম্বরের আর একটা গাড়ি, শুধু রঙটা আলাদা।
ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি - তার লিস্টে বেশ কিছু নাম থাকলেও পুরী-তরকারি আর টোস্ট ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেলো না। খেতে খেতে আলাপ হল অন্য গাড়িটার লোকজনের সাথে - তাঁরা কলকাতার সেটা তো অবভিয়াস - যাবেনও সান্তালেখোলা - তবে থাকবেন রিভার ক্যাম্পে (আমরা পাহাড়ের ওপর মৌচুকি জাঙ্গল ক্যাম্পে), তারপর যাবেন "পারেন" আর "জলদাপাড়া"।
স্নানটান সারতে সারতে দেবাশিস ফোন করলো - পানঝরা, সান্তালেখোলা, মেন্ডাবাড়ির কাগজপত্র সব ওর কাছে আছে - ও এসে দিয়ে যাবে। আর আসছেই যখন, তখন পানঝরার রাস্তাটা চিনিয়ে দিয়ে যাবে, কারণ গুগুল ম্যাপে শুধু চাপড়ামারির গেটটা দেখা যায় - সেটাও একটু এদিক ওদিক ঘুরে। দশটা নাগাদ চেক-আউট করলাম। এসব সরকারি গেস্ট হাউজে এখন চেক-আউটের সময় একটা করে গিফট-প্যাক দিচ্ছে (রুম পিছু একটা) - বাঁশের পেনদানি গোছের কিছু, আর একটা চকোলেট।
এর মধ্যে দেবাশিসও এসে গেল, সাথে পুরো পরিবার - স্বাতী (দেবাশিসের বৌ), আর যমজ ছেলেমেয়ে। এই ফাঁকে পরিচয়টা দিয়ে রাখি - দেবাশিসের সাথে আমার আলাপ আমাদের ফটোগ্রাফি ক্লাবে। মধ্যমগ্রামে থাকতো, পেশা ছিলো পড়ানো - স্কুলে টুলে নয়, পুরো টিউশনি। অবসরে ছবি তোলা। ক্লাবের একজনের মেয়েকে পড়াতো, তাই ক্লাবে সবাই "দেবুস্যার" বলেই ডাকে। ভালোই ছিলো, হঠাৎ একদিন কী খেয়াল হল - কলকাতা/মধ্যমগ্রাম ছেড়ে দিয়ে চিলাপাতায় রওনা দিয়ে দিলো - সেখানেই থাকে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, জমি কিনে ফার্মিং করে, আর ট্যুর অপারেটরের ব্যবসা। ভালোই চলে - ইদানিং পাহাড়ে (মানে সিকিম) আর জঙ্গলে (মানে ডুয়ার্সে) ভালো পরিচিতি হয়ে গেছে। লোক খুবই ভালো, শুধু মাথাটা...মানে মাঝেমাঝেই বেশ আজগুবি দাবীদাওয়া করে থাকে...মাসখানেকে হিমালয়কে চক্কর দেওয়ার মতন।
টিলাবাড়ি থেকে বেরোতে পৌনে এগারোটা বাজলো। তেল নিতে হবে - গেলাম চালসার দিকে। সেখান থেকে আবার ঘুরে মূর্তি রিভার ক্যাম্পের পাশ দিয়ে একটা সরু ব্রীজ পেরিয়ে চাপড়ামারির রাস্তায় উঠলাম। আগের দিন রাতের মত অন্ধকারে হাতড়ানো নয় আর - দুপাশে ঘন জঙ্গল দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ একটা হরিণও...এরা মাঝেমাঝেই লাফিয়ে রাস্তায় চলে আসে বলে এই পুরো এলাকাতেই স্পীড লিমিট বাঁধা। বেশ জোরে পাখির ডাক শোনা যায়। আর একটা কনস্ট্যান্ট উঁচুতারে ঝিঁঝিঁর ডাক - আমাদের কলকাতা শহরতলির ঝিঁঝিঁর চেয়ে অনেকটাই অন্যরকম।
(চলবে)
(আগের কথা)
No comments:
Post a Comment