সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎই বিবিসি-ফোরে দুই কিস্তিতে একটা তথ্যচিত্র দেখলাম - "কিউবা! আফ্রিকা! রেভলিউশন!" - আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষবিরোধী আন্দোলনে, এবং আফ্রিকার নানা দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে কিউবার ইনভলভমেন্ট নিয়ে। দেখতে দেখতে মনে হল এই ডকুমেন্টারিটার কথা লিখে রাখি - এ এমন এক ইতিহাস যাকে সজ্ঞানে গণস্মৃতি থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে বহুদিন ধরে - আর তার ফলেই এই কথাগুলো আমরা অনেকেই হয়তো জানি না...
সেই থেকেই লেখা শুরু - গুরুচণ্ডা৯র পাতা থেকে বিবিসি-ফোরে প্রচারিত তথ্যচিত্র অবলম্বনে "কিউবা! আফ্রিকা! বিপ্লব!"
প্রথম পর্ব
সাতাশ বছর জেলে কাটানোর পরে ছাড়া পেয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা চেয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে দেখা করতে৷ কিউবা সম্পর্কে ম্যান্ডেলার একটি মন্তব্য বিখ্যাত হয়ে আছে – “Long live the Cuban Revolution. Long live comrade Fidel Castro...Cuban internationalists have done so much for African independence, freedom, and justice. We admire the sacrifices of the Cuban people in maintaining their independence and sovereignty in the face of a vicious imperialist campaign designed to destroy the advances of the Cuban revolution. We too want to control our destiny... There can be no surrender. It is a case of freedom or death. The Cuban revolution has been a source of inspiration to all freedom-loving people.”
অবশ্যই এক অংশের মানুষের কাছে এরপর ম্যান্ডেলা “হিপোক্রিট” হয়ে পড়েন - ছোট এবং হাস্যকর উদাহরণ ইয়াহু অ্যানসারের এই পাতাটা।
২০০৩ সালে, কাউন্টারপাঞ্চে প্রকাশিত এক ইন্টারভিউয়ে নোয়াম চমস্কি বাকি পৃথিবীর মানুষের স্বাধীনতার লড়াইয়ে কিউবার যোগদান নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন – “for example, let's take Cuba's role in the liberation of Africa. It's an astonishing achievement that has almost been totally suppressed. Now you can read about it in scholarship, but the contribution that
সলিডারিটি আর আন্তর্জাতিকতাবাদের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস দেখায় বিবিসির এই তথ্যচিত্র৷ এমন একটা সময়ে যখন সলিডারিটি শব্দটা ক্রমশ: ধোঁয়াটে হয়ে এসেছে, ভিয়েতনামের জন্যে কলকাতায় মিছিল বা কিউবায় চাল পাঠিয়ে সলিডারিটি দেখানোর প্রচেষ্টা দেখলে আমরা ঠোঁট বেঁকিয়ে সরে যেতে পছন্দ করি৷
কঙ্গো - ১৯৬০
১৯৬০ সালের শুরুর দিকে বেলজিয়াম সিদ্ধান্ত নেয় যে কঙ্গোকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে৷ ঐ বছরই মে মাস নাগাদ কঙ্গোর জাতীয় নির্বাচনে প্যাট্রিস লুমুম্বার নেতৃত্বে Mouvement National Congolais (MNC) জিতে সরকার তৈরীর অধিকার পায়৷ ২৩শে জুন পঁয়ত্রিশ বছর বয়স্ক লুমুম্বা কঙ্গোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী হ'ন, রাষ্ট্রপতি হ'ন জোসেফ কাসা-ভুবু৷ ৩০শে জুন, ১৯৬০, কঙ্গো স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়৷ ঐ দিনটা বিশেষভাবে উল্লিখিত হয় কঙ্গোর স্বাধীনতার ইতিহাসে৷ স্বাধীনতা ঘোষনার সময় বেলজিয়াম সম্রাট Baudouin তাঁর ভাষণে বলতে থাকেন কিভাবে বেলজিয়াম রাষ্ট কঙ্গোর অসভ্য বর্বর মানুষদের সভ্যতার আলোয় আনার চেষ্টা করেছে...সম্রাট লিওপোল্ড কিভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন কঙ্গো থেকে sleeping sickness তাড়ানোর জন্যে...ইত্যাদি...ইত্যাদি...সামনে পাথরের মতন বসে বাদবাকি বেলজিয়ান ভদ্রলোকের দল, আর আস্তে আস্তে অশান্ত হয়ে ওঠে কঙ্গোর “অসভ্য” কালো মানুষেরা৷ অনুষ্ঠানসূচীতে লুমুম্বার নাম ছিলো না, কিন্তু লুমুম্বা উঠে দাঁড়িয়ে একটি বক্তৃতা দেন৷
“For this independence of the Congo, even as it is celebrated today with Belgium, a friendly country with whom we deal as equal to equal, no Congolese worthy of the name will ever be able to forget that is was by fighting that it has been won, a day-to-day fight, an ardent and idealistic fight, a fight in which we were spared neither privation nor suffering, and for which we gave our strength and our blood...This was our fate for eighty years of a colonial regime; our wounds are too fresh and too painful still for us to drive them from our memory.
We have known harassing work, exacted in exchange for salaries which did not permit us to eat enough to drive away hunger, or to clothe ourselves, or to house ourselves decently, or to raise our children as creatures dear to us. We have known ironies, insults, blows that we endured morning, noon, and evening, because we are Negroes. Who will forget that to a black one said ‘tu’, certainly not as to a friend, but because the more honorable ‘vous’ was reserved for whites alone?
We have seen our lands seized in the name of allegedly legal laws which in fact recognized only that might is right. We have seen that the law was not the same for a white and for a black, accommodating for the first, cruel and inhuman for the other.
We have witnessed atrocious sufferings of those condemned for their political opinions or religious beliefs; exiled in their own country, their fate truly worse than death itself.
We have seen that in the towns there were magnificent houses for the whites and crumbling shanties for the blacks, that a black was not admitted in the motion-picture houses, in the restaurants, in the stores of the Europeans; that a black travelled in the holds, at the feet of the whites in their luxury cabins.
Who will ever forget the massacres where so many of our brothers perished, the cells into which those who refused to submit to a regime of oppression and exploitation were thrown?
All that, my brothers, we have endured.”
সম্রাট Baudouin-এর “রাজসিক” ভাষণ এবং কাসা-ভুবুর নিরুত্তাপ প্রতিবাদহীন বক্তব্যের পর লুমুম্বার ভাষণের আগুন উপস্থিত সমস্ত কঙ্গোবাসীর মুখে দেখা যেতে থাকে৷ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় প্রতিশোধের, থুড়ি, বেয়াদপির শাস্তির প্রস্তুতি৷
কঙ্গো স্বাধীনতা পেলেও পাঁচ বছরের জন্যে সমস্ত জরুরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থেকে যায় বেলজিয়ামের হাতে - স্বাধীন কঙ্গোর স্বাধীন সরকারকে প্রায় ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হয় - লুমুম্বার বেয়াদপির শাস্তির শুরু৷ ওদিকে বেলজিয়ামের সমর্থনে কাটাঙ্গা অঞ্চল কঙ্গো থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা ঘোষনা করে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষক সৈন্যদল কঙ্গোয় নামে - কিন্তু সেটা প্রায় আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে৷ কাসা-ভুবু আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে লুমুম্বাকে বরখাস্ত করেন, লুমুম্বাও কাসা-ভুবুকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেন...সেপ্টেম্বর মাসে কর্নেল মোবুতুর নেতৃত্বে আর কাসা-ভুবুর সমর্থনে এক অভ্যুত্থানে কঙ্গোর প্রথম সরকারের শেষ নামে, লুমুম্বা বন্দী হ'ন৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষক বাহিনী লুমুম্বাকে গৃহবন্দী করে রাখে - রক্ষার উদ্দেশ্যে৷ লুমুম্বা পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন - রাষ্ট্রপুঞ্জ তাঁকে বাঁচাতে অস্বীকার করে৷ কর্নেল মোবুতুর ডেরায় রীতিমতন অত্যাচারের পর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় কাটাঙ্গার সৈন্যদের হাতে, সম্ভবত ১৯৬১ সালে লুমুম্বাকে হত্যা করা হয়৷ পরে এক বেলজিয়ান কমিশন রায় দেয় কাটাঙ্গার সরকারের হাতে লুমুম্বার মৃত্যু ঘটলেও সেখানে বেলজিয়ান সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন, এবং তাঁদের সমর্থনও ছিলো৷ এবং পরোক্ষে লুমুম্বার অপসারণ এবং হত্যার পিছনে আইজেনহাওয়ারের সমর্থনও ছিলো - কারণ আমেরিকা লুমুম্বার সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের যোগাযোগকে সন্দেহের চোখে দেখতো৷
বিবিসি-র এই ডকুমেন্টারিতে CIA-এর এক প্রাক্তন অপারেটিভকেও এই বক্তব্য সমর্থন করতে দেখা যায়৷ ইনফ্যাক্ট, আইজেনহাওয়ার চেয়েছিলেন CIA-এর এই অপারেটিভই কাজটা সারুন৷
নিউ ইয়র্ক, ১৯৬৪
কঙ্গোর আগুন ততদিনে আফ্রিকার অন্যত্রও ছড়াতে শুরু করেছে৷ ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে চে গেভারার নেতৃত্বে কিউবার এক প্রতিনিধিদল নিউ ইয়র্কে আসেন... রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে গেভারার ভাষণ আজ ইতিহাস৷ ঐ ভাষণেই চে আফ্রিকার স্বাধীনতার লড়াই কথা আনেন -
“Once again we raise our voice to put the world on guard against what is happening in South Africa. The brutal policy of apartheid is being carried out before the eyes of the whole world. The peoples of
The philosophy of despoilment not only has not ceased, but rather it is stronger than ever, and that is why those who used the name of the United Nations to commit the murder of Lumumba, today, in the name of the defence of the white race, are assassinating thousands of Congolese. How can one forget how the hope that Patrice Lumumba placed in the United Nations was betrayed? How can one forget the machinations and manoeuvres which followed in the wake of the occupation of that country by United Nations troops under whose auspices the assassins of this great African patriot acted with impunity? How can we forget that he who flouted the authority of the United Nations in the
...
And as if this were not enough, we now have flung in our faces recent events which have filled the world with horror and indignation. Who are the perpetrators? Belgian paratroopers transported by
The free men of the world must be prepared to avenge the crime committed in the
The Cuban delegation extends greetings to the peoples of Southern Rhodesia and Southwest Africa, oppressed by white colonialist minorities, to the peoples of Basutoland, Bechuanaland, Swaziland, French Somaliland, the Arabs of Palestine, Aden, and the Protectorates, Oman, and to all peoples in conflict with imperialism and colonialism; and we reaffirm our support.”
কঙ্গো, ১৯৬৫
১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আফ্রো-এসিয়ান সলিডারিটির এক কনফারেন্সে চে বক্তব্য রাখেন – “এই লড়াইয়ের কোন সীমারেখা নেই৷ পৃথিবীর কোনো প্রান্তের কোনো ঘটনা থেকেই আমরা মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারি না৷ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যে কোন দেশের জয় আমাদের জয়, একইভাবে তাদের পরাজয়ও আমাদের৷” উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কোন মঞ্চে জনসমক্ষে চে-র এই শেষ উপস্থিতি৷ এই রকম সময়েই ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চে ব্যক্তিগতভাবে আফ্রিকায় কিউবার প্রথম মিলিটারি অ্যাকশনের নেতৃত্বে থাকবেন৷ কাস্ত্রো পরে জানান যে চে ঐসময়েই লাতিন আমেরিকা চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কাস্ত্রো মনে করতেন যে লাতিন আমেরিকার মানুষ গেরিলা যুদ্ধের জন্যে তখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয় - তাই লাতিন আমেরিকার বদলে আফ্রিকার কথা ভাবা হয়৷ চে গেভারা সিদ্ধান্ত নেন যে কঙ্গো-কিনশাসা এলাকাকে কেন্দ্র করে তাঁদের লড়াই শুরু হবে৷ ঐ অঞ্চলের মানুষের মনে প্যাট্রিস লুমুম্বার প্রতি সহানুভূতি ছিলো, আর কাবিলা বলে লুমুম্বার একসময়ের সাথী এক গেরিলা নেতাও ঐ অঞ্চলে ছিলেন (যদিও কাবিলা সম্পর্কে চে'র মনোভাব খুব একটা উঁচুদরের ছিলো না)৷
১৯৬৫ সালের এপ্রিলে রামোন বেনিতেজ বলে এক হিস্প্যানিক ভদ্রলোক (এখন আমরা জানি এই রামোন বেনিতেজ কে - সেই সময় স্বয়ং কাস্ত্রো চে-র এই ছদ্মবেশ ধরতে পারেননি) দার-এস-সালামে পৌঁছলেন - সেখান থেকে গোপনে কঙ্গো-কিনশাসার পথে৷ ঐ এপ্রিলেই ভিক্তর ড্রেক (চে'র গেরিলা যুদ্ধের সঙ্গী) এবং আরো বারোজন সদস্য কঙ্গোতে পৌঁছন - গোপনে৷ গোটা মিশনের প্ল্যানিং অত্যন্ত গোপনে হয়েছিলো৷ ভিক্তর ড্রেক পরে বিবিসি-র ইন্টারভিউয়ে জানান যে চে তাঁকে খুব “কালো” কয়েকজন গেরিলা-যুদ্ধে এক্সপার্ট কমরেডকে নিয়ে একটা দল তৈরী করতে বলেন - এমন একটা অভিযানের জন্যে যেখান থেকে ফেরার কোন নিশ্চয়তা নেই – “কত কালো?” – “খুব কালো”৷ তড়িঘড়ি টীম তৈরী হয়, এঁদের অল্প কিছু জামাকাপড় দেওয়া হয়...চটজলদি করার জন্যে একই দোকান থেকে একই সাইজের এবং একই রকমের সমস্ত পোশাক এসে পৌঁছয়...ড্রেক পরে জানান যে প্রচুর দর্শক জমে গেছিলো এই অদ্ভুত টীমকে দেখার জন্যে...
কঙ্গোতে প্রায় শ'খানেক বিদ্রোহী কিউবার থেকে আসা এই গেরিলা দলের সাথে যোগ দেয়৷ তাদের মধ্যে একজন ফ্রেডি ইলাঙ্গা - তখন টীনএজার মাত্র, পরে একজন ব্রেন-সার্জন৷ ইলাঙ্গা এই পুরো সময়টা চে-র সাথে থেকেছেন সঙ্গী এবং দোভাষী হিসেবে৷ এই ইলাঙ্গাই জানান, যে আন্তর্জাতিক ইস্যু হতে পারে বলে চে শুরু থেকে চেয়েছিলেন তাঁর উপস্থিতি গোপন রাখতে৷ তাই ভিক্তর ড্রেককে কমাণ্ডার বানান তিনি৷ নিজে থাকেন “ডাক্তার” হিসেবে৷ সোয়াহিলি ডিকশনারী ব্যবহার করে সকলের নাম দেওয়া হয় - যেমন ড্রেকের নাম হয় “ময়া” (সোয়াহিলি ভাষায় “এক” নম্বর), চে-র নাম হয় “তাতু” (অর্থাৎ তিন)৷ ইলাঙ্গা এবং আরো অনেকে প্রথমে আশ্চর্য্য হয়েছিলেন - এরা কি নম্বর দিয়ে নাম রাখে?
অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও চে এবং কিউবান বিপ্লবীরা কঙ্গোর গেরিলাদের সহজে গেরিলা-যুদ্ধে শিক্ষিত করতে পারেননি৷ ইলাঙ্গার কথাতেই – “বন্দুক ছিলো আমাদের, কিন্তু আমরা কেউ বন্দুক তাক করতে জানতাম না - বন্দুকে গুলি ভরতাম, তুলতাম আর ঘোড়া টিপতাম৷ আর তার ফলে আমার সাথীর গুলিতে আমার মরার সুযোগও ছিলো, কারণ সেও তো তাক করতে জানতো না৷” সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলোকেও কাটানো কঠিন হয়ে পড়েছিলো৷ আর কিউবান বিপ্লবীদের সাথে কঙ্গোর মানুষের সাংস্কৃতিক ফারাকও বিরাট৷ ওদিকে মোবুতুর সৈন্যবাহিনী টাঙ্গানাইকা লেককে টার্গেট করে কারণ এই লেকের অপর পাড়ে পাহাড়ী অঞ্চলে বিদ্রোহীদের আস্তানা ছিলো৷ সাথে আয়ারল্যান্ড-জাত মার্সিনারী কর্নেল “ম্যাড মাইক” হোর-এর ভাড়াটে পেশাদার সৈন্যের দল৷ সৈন্যদের একটা ঘাঁটি ওড়ানো জরুরী হয়ে পড়ে - চে সহ কিউবার বাকি সকলে আর কঙ্গোর গেরিলারা একসাথী ওই ঘাঁটি আক্রমণ করে৷ ঘাঁটিটা ধ্বংস হয় ঠিকই, কিন্তু চারজন কিউবান বিপ্লবী মারা যান – এবং দুর্ভাগ্যবশত: তাঁদের একজনের পরনে ছিলো একটি কিউবান অন্তর্বাস - যেটা মোবুতুর হাতে পৌঁছয়, এবং মোবুতুসহ বাকি দুনিয়া কিউবার বিপ্লবীদের উপস্থিতি সম্পর্কে নি:সন্দেহ হয়৷
ওদিকে চে গেভারাকে আর কিউবায় দেখা যাচ্ছে না - এটাও মোটামুটি সকলে জানে৷ পশ্চিমী শক্তিগুলো সর্বদা চিন্তিত - কোথায় গেলো এই উপদ্রবটা৷ CIA-র সন্দেহ হয় - আর ওরা চে-র নানারকম ছবি কঙ্গোর স্থানীয় মানুষদের দেখাতে শুরু করে - দাড়িওয়ালা চে, দাড়িছাড়া চে, গোঁফওয়ালা চে ইত্যাদি ইত্যাদি - একটা ছবি দেখে একজন স্থানীয় লোক “তাতু”-কে চিনতে পারেন৷ আন্তর্জাতিক ইস্যু হতে শুরু করে - অসুস্থ চে বাকি কমরেড আর কাস্ত্রোর কথায় কঙ্গো ছাড়তে বাধ্য হ'ন৷ কঙ্গোর ডায়েরীতে তিনি লেখেন “This is the history of a failure.”
কঙ্গো অভিযানকে সফল না বলা গেলেও ঠিক ব্যর্থও বলা যায় না৷ নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় দেওয়া বক্তৃতায় যে হুঁশিয়ারী কিউবা দিয়েছিলো, তার বাস্তব প্রতিফলন হতে শুরু করে কঙ্গোতে৷ এও সলিডারিটি আন্দোলনের এক অধ্যায়৷ এর পরেও কিউবা থেমে থাকেনি - অ্যাঙ্গোলা, দক্ষিন আফ্রিকা - সর্বত্র কিউবা সবরকমের সাহায্য করেছে৷ আজও করে৷ শুধু আফ্রিকা নয়, পৃথিবীর অন্যত্রও৷ কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলোর স্বাধীনতার লড়াইয়ে প্রত্যক্ষ ভাগ নেওয়াকে পশ্চিমী দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকা মেনে নিতে পারেনি - আর এই কারণেই আফ্রিকার এই লড়াইয়ে আরো অনেক ঘটনা ঘটে গেছে যার প্রভাব আজও দেখা যায়৷
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে কিউবার উপস্থিতিকে পশ্চিমী দুনিয়া চিরকালই দেখেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রক্সি হিসেবে - সোভিয়েতের পুতুলরাষ্ট তৈরীর প্রয়াস হিসেবে৷ একটা বড় অংশের অ্যাকাডেমিক যাঁরা দুনিয়াকে শুধু পূর্ব-পশ্চিমে ভাগ করতে অভ্যস্ত, তাঁরা অ্যাঙ্গোলার গৃহযুদ্ধে কিউবার অংশগ্রহণকে শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদারি হিসেবে দেখতে চান৷ অন্যদিকে নামিবিয়ার স্বাধীনতার লড়াই বা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে আফ্রিকার লড়াইয়ে সঙ্গী হিসেবে কিউবার ভূমিকাকে গণস্মৃতি থেকে মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলে৷ আর ওয়াশিংটনের তরফ থেকে কিউবার এই ভূমিকাকে সোভিয়েত-ডমিনেশনের জন্য ভাড়াটে-সৈন্যদের অ্যাক্টিভিটি হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, কোন ক্ষেত্রেই কিউবার কোনরকম অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা বা ইচ্ছা দেখা যায়নি৷ পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ - গিনি-বিসাউ - শক্তিশালী পোর্তুগালের বিরুদ্ধে লড়ে স্বাধীনতা আদায় করেছিলো৷ গিনি-বিসাউয়ের স্বাধীনতা-সংগ্রামের একচ্ছত্র নেতা আমিলকার কাবরালের ভাষায় – “কিউবা কোনও দাবি রাখেনি৷ শুধুমাত্র শর্তহীন সহায়তা দিয়েছে৷” কিউবা পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা আফ্রিকা থেকে ফিরেছে শুধুমাত্র তার নিজের সন্তানদের কফিন সাথে নিয়ে৷ ২০০৪ সালে কিউবায় দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্টদূত এই কথাটাই বলেন আবার – “No country has given as much to the world as Cuba. No country has received so little materially from the world as Cuba.”
দ্বিতীয় পর্ব
আফ্রিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে কিউবার সহায়তা কঙ্গোর ব্যর্থতায় থামেনি৷ কূটনৈতিক সলিডারিটি, ট্রেনিং, আর মিলিটারি সহায়তা থেকে শুরু করে কিউবা সবই দিয়েছে - আলজিরিয়া, কঙ্গো, গিনি বিসাউ, ইথিওপিয়া - মোটামুটি আফ্রিকার সর্বত্র৷ ছোট্ট দেশ গিনি-বিসাউয়ের শক্তিশালী পোর্তুগালের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন আফ্রিকায় কলোনিয়ালিজমের শেষের শুরু৷ কিন্তু কিউবার অ্যাডভেঞ্চার পীক-পয়েন্টে পৌঁছয় অ্যাঙ্গোলায়৷ অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া আর দক্ষিন আফ্রিকা - এখানেই কলোনিয়ালিজম আর বর্ণবিদ্বেষের সমাপ্তি৷
১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ - এই ষোল বছরে প্রায় তিন লক্ষাধিক কিউবান স্বেচ্ছাসেবক অ্যাঙ্গোলায় দক্ষিন আফ্রিকার শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীকে ঠেকানোর কাজে যোগ দিয়েছিলেন - শুধু মিলিটারী সহায়তা নয় - ডাক্তারী, শিক্ষকতার মতন সিভিলিয়ান কাজের মাধ্যমেও৷ কেন? বাকি পৃথিবী এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে অনেক৷ তখন ঠাণ্ডা যুদ্ধের দিন - পূর্ব ও পশ্চিমী দুনিয়ায় অবিশ্বাস ছাড়া আর কিছু দেখা যায়না - কিউবাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের “সারোগেট” হিসেবে দেখানোর প্রবণতাই সর্বত্র, অথচ আফ্রিকায় এই সলিডারিটির ইস্যুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর কিউবার মতে মেলে না - সোভিয়েত ইউনিয়নের পলিটব্যুরো সদস্যরা প্রকাশ্যেই বলেন - ওরা অ্যাডভেঞ্চারিস্ট - কিউবার অবিশ্বাস্য ইনভলভমেন্ট সামনে আসার পর সোভিয়েতের সাথে কিউবার সম্পর্ক বেশ ঠাণ্ডা হতে শুরু করে (এর শুরু অবশ্য কিছুটা হলেও কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের সময় থেকে)
১৯৭৫ সালে কাস্ত্রোর ভাষণে আন্তর্জাতিকতাবাদের কনসেপ্টটা ঠিক বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমাদের, আমরা যারা শুধু দেওয়া-নেওয়ার পদ্ধতিই দেখেছি...
“
অ্যাঙ্গোলার উদ্দেশ্য কিউবার স্বেচ্ছাসেবকরা যেদিন রওনা হচ্ছে, সেদিন কাস্ত্রো বলেন – “Today it hurts us if a Cuban is hungry, if a Cuban has no doctor, if a Cuban child suffers or is uneducated, or if a family has no housing. It hurts us even though it's not our brother, our son, or our father. Why shouldn't we feel hurt if we see an Angolan child go hungry, suffer, be killed or massacred?”
অ্যাঙ্গোলা - শুরুর কথা
অ্যাঙ্গোলার সাথে কিউবার সম্পর্কের শুরু ষাটের দশকেই - যখন থেকে কিউবা আফ্রিকার স্বাধীনতার লড়াইয়ের পাশে দাঁড়াতে শুরু করে৷ অ্যাঙ্গোলার অবস্থাটা একটু প্যাঁচালো ছিলো৷ কিউবার সাথে সম্পর্ক তৈরী হয় Movimento Popular de Libertayio de Angola অথবা Popular Movement for the Liberation of Angola-র - ছোট করে MPLA - বামপন্থী সংগঠন, যার নেতৃত্বে অগাস্টিনো নেটো৷ কিউবা এদের সামরিক শিক্ষা থেকে শুরু করে অস্ত্রসাহায্য অবধি করেছিলো৷ পোর্তুগীজ কলোনিয়ালিজমের বিরুদ্ধে অ্যাঙ্গোলার লড়াইয়ের একেবারে সামনে ছিলেন অগাস্টিনো নেটো এবং MPLA৷ ওদিকে MPLA-র বিরোধী সংগঠনও ছিলো - Uniaio Nacional para a Independencia Total de Angola (Union for the Total Independence of Angola UNITA) আর Frente Nacional de Libertayio de Angola (National Front for the Liberation of Angola FNLA) - অবামপন্থী (বলা ভালো ঘোরতর খ্রীষ্টধর্মীয় এবং জাতীয়তাবাদী) সংগঠন - তাই MPLA-র ঘোর বিরোধী৷ ওদিকে MPLA-কে আটকানো তখন আমেরিকার অ্যাজেন্ডাতেও জরুরী - কারণ MPLA বামপন্থী, এবং কিউবা ছাড়াও তাদের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের সখ্যতা...তাই অ্যাঙ্গোলার এই অবস্থাকে নিউট্রালাইজ (!!!) করার জন্যে আমেরিকা প্রকাশ্যেই FNLA এবং UNITA-কে সাহায্য করতে শুরু করে৷ আমেরিকার তত্কালীন সেক্রেটারি অব স্টেট, শ্রীযুক্ত কিসিঞ্জার সক্রিয়ভাবেই দক্ষিন আফ্রিকাকে সাথে নিয়ে MPLA-কে হঠানোর চেষ্টা শুরু করেন - MPLA এবং স্বাধীন অ্যাঙ্গোলা আমেরিকার কাছে কাম্য ছিলো না৷
পোর্তুগীজদের সাথে এক বৈঠকে স্থির হয় ১১ই নভেম্বর, ১৯৭৫ হবে স্বাধীন অ্যাঙ্গোলার জন্মদিন৷ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিনটে সংগঠনের প্রতিনিধিরাই - যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগাস্টিনো নেটো ( MPLA ), জোনাস সাভিম্বি ( UNITA ) এবং হোল্ডেন রোবার্তো ( FNLA )৷ স্বাধীন অ্যাঙ্গোলার খসরা তৈরী হয় - কিন্তু কার নেতৃত্বে সরকার তৈরী হবে সে ফয়সালা হয় না৷ তিন সংগঠন একসাথে চেষ্টা চালায় লুয়াণ্ডা দখলের - ১১ই নভেম্বর লুয়াণ্ডা যার হাতে, অ্যাঙ্গোলার সরকারও তারাই চালাবে৷ শুরু হয় গৃহযুদ্ধ - চলে যাবার আগে কলোনিয়ালিজমের শেষ চাল৷ দক্ষিন পশ্চিম আফ্রিকা, অর্থাৎ বর্তমান নামিবিয়ায় স্বাধীনতকামী SWAPO (South West Africa People's Organization) তাদের লড়াইয়ের একটা অংশ চালাতো অ্যাঙ্গোলা থেকে - তাদের ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সৈন্যবাহিনী অ্যাঙ্গোলায় ঢোকে৷ অন্যদিকে কঙ্গোতে কর্ণেল মোবুতুর শাসন ততদিনে স্বৈরতন্ত্রে পরিণত - FNLA গেরিলাদের পাশাপাশি সেখান থেকে সাহায্য আসতে শুরু করে UNITA-র কাছেও৷ একসাথে আক্রমণ চলে পেট্রোলিয়াম-রিচ কাবিন্দা অঞ্চলের ওপর৷ কিসিঞ্জারের অনুমোদনে CIA এর মধ্যে জড়িয়ে পরে - সাথে সাথে ইজরায়েলও - বামপন্থী MPLA-কে আটকানোর জন্য৷
অপারেশন কার্লোটা
তিনদিক থেকে আক্রান্ত অগাস্টিনো নেটো বাধ্য হয়ে কাস্ত্রোকে চিঠি লেখেন সাহায্য চেয়ে৷ ১৯৭৫-এর ৫ই নভেম্বর নেটোর অনুরোধে কিউবা অ্যাঙ্গোলায় সশস্ত্র বাহিনী পাঠানো শুরু করে৷ ফিদেল কাস্ত্রো বলেন - “We simply could not sit back when the MPLA asked us for help. We gave MPLA the necessary assistance to prevent a people fighting for their independence for almost 14 years from being crushed. It was our elementary duty, our revolutionary duty, our internationalist duty to give assistance to MPLA regardless of the price.”
লুয়াণ্ডা থেকে অগাস্টিনো নেটোর অনুরোধে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির মধ্যে সাড়া দেয় একমাত্র কিউবা৷ আর আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকেও যতটা সম্ভব সাহায্য আসতে শুরু করে৷ কিউবার কম্যুনিস্ট পার্টির অন্যতম সদস্য জর্জ রিস্কেট পরে লেখেন “Luanda's appeal was an urgent, rapid request. The fact is that no country in
কিউবার সাহায্যে MPLA প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সৈন্যদলকে ঠেলে দেয় অ্যাঙ্গোলার বর্ডারের দিকে৷ বাকি দুই সংগঠনও লুয়াণ্ডা থেকে দূরে সরে যায়, কর্নেল মোবুতুর সৈন্যরা অ্যাঙ্গোলা থেকে পালায়৷ অগাস্টিনো নেটো স্বাধীন অ্যাঙ্গোলার প্রথম রাষ্ট্রপতি হ'ন৷
কুইটো ক্যুয়ানাভালের যুদ্ধ
অ্যাঙ্গোলার গৃহযুদ্ধ এর পরেও চলতে থাকে৷ আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রমশ: আরো সাহায্য দিতে শুরু করে সাভিম্বির UNITA গোষ্ঠীকে - সাভিম্বি রোনাল্ড রেগনের খাস দোস্ত হয়ে ওঠেন - রেগনের একতরফা নির্দেশে সাভিম্বির হাতে বিখ্যাত স্টিঙ্গার মিসাইলও তুলে দেওয়া হয়৷ এই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে কিউবার সম্পর্ক আরো কিছুটা ঠাণ্ডা হয়ে আসে - মিখাইল গর্বাচভ আফ্রিকায় লিবারেশন স্ট্রাগলের চেয়ে আমেরিকার সাথে দোস্তির দিকে বেশি মন দেন৷ আর অ্যাঙ্গোলায় MPLA সরকারের রাশিয়ান মিলিটারী উপদেষ্টাদের সাথে দূরত্ব বাড়ে কিউবান বিপ্লবীদের - কিউবানরা মনে করতো রাশিয়ানরা বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্লিন দখল করে থাকতে পারে, কিন্তু আফ্রিকায় যুদ্ধের কৌশল তাদের আয়ত্বে নেই৷ এবং তার প্রমাণও অচিরেই পাওয়া যায়৷ ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমেরিকার অত্যাধুনিক অস্ত্রে নতুন করে সজ্জিত UNITA গেরিলাবাহিনী আর দক্ষিণ আফ্রিকার সৈন্যদল MPLA-কে কোনঠাসা করে ফেলে কুইটো ক্যুয়ানাভালে৷
MPLA-র অনুরোধে কিউবা আরো সৈন্য পাঠায় অ্যাঙ্গোলায় - সব মিলিয়ে অ্যাঙ্গোলায় কিউবার সৈন্যসংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫০,০০০ - মিলিটারী এক্সপার্টরা বলেন একটা ছোট্ট দ্বীপের পক্ষ থেকে পাঠানো এত সৈন্য আমেরিকার সাড়ে বারো লক্ষের সমান৷ আর এর ফলে কিউবার নিজস্ব নিরাপত্তাও কমে আসে - কিন্তু সলিডারিটির কমিটমেন্ট থেকে কিউবা পিছু হটেনি - সেই মুহুর্তে দক্ষিণ আফ্রিকা পারমাণবিক শক্তিধর হওয়া সত্ত্বেও৷
“Even the (Cuban) Revolution was at stake there, because if this was a decisive battle for apartheid and meant a large-scale defeat, the Revolution was also at stake and a different outcome would have meant a major defeat for the Revolution, regardless of how noble, how just and how altruistic the cause.” - কাস্ত্রো, ১৯৮৯
“The revolution put everything at stake, it put its own existence at stake, it risked a huge battle against one of the strongest powers located in the area of the Third World, against one of the richest powers, with significant industrial and technological development, armed to the teeth, at such a great distance from our small country and with our own resources, our own arms. We even ran the risk of weakening our defences, and we did so. We used our ships and ours alone, and we used our equipment to change the relationship of forces, which made success possible in that battle. We put everything at stake in that action, and it was not the first time. I believe we also put an awful lot at stake in 1975 when we sent our troops to fight the South African invasion of
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৃহত্তম যুদ্ধ শুরু হয় আফ্রিকার মাটিতে - শেষ অবধি আফ্রিকার ইতিহাসে যেটা ল্যাণ্ডমার্ক হয়ে দাঁড়ায়৷
যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে - দক্ষিণ আফ্রিকা এবং UNITA-র যৌথবাহিনী কুইটো ক্যুয়ানাভাল দখল করতে পারেনি - যদিও তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা করতে চায়ওনি৷ অন্যদিকে ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে SADF (South African Defence Force) -কে বড়সড় পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয় এই যুদ্ধে৷ ফলাফল যাই হোক, এই যুদ্ধ থেকেই আফ্রিকার দক্ষিণাংশে চাকা ঘুরতে শুরু করে৷ কুইটো ক্যুয়ানাভালের যুদ্ধ প্রমাণ করে যে বর্ণবিদ্বেষী শক্তি আর অপরাজেয় নয় - দক্ষিণ আফ্রিকার মিলিটারীর মনোবল তলানীতে ঠেকে যায়৷ ওদিকে আমেরিকান কংগ্রেস তত্পর হয়ে ওঠে আরেকটা ভিয়েতনাম আটকানোর জন্য - UNITA এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যে অর্থ এবং অস্ত্রসাহায্য আটকে দেয় কংগ্রেস৷
১৯৮৮ সালে আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিউবা, অ্যাঙ্গোলা আলোচনায় বসে৷ আমেরিকার অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী অব স্টেট চেস্টার ক্রকার এই আলোচনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ “ইনটেনসিভ কূটনৈতিক” আলোচনা চলে প্রায় সাত মাস ধরে - যার ফলশ্রুতি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের রেজলিউশন ৪৩৫, এবং নামিবিয়ার স্বাধীনতা৷ কিউবা তার সৈন্যদল ফিরিয়ে নেয়, দক্ষিণ আফ্রিকা নামিবিয়া ছেড়ে পিছিয়ে যায়৷ বর্ণবিদ্বেষী সরকারের শেষ ঘনাতে শুরু করে - ম্যাণ্ডেলা ছাড়া পান, ঠিক পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্বাচিত হয় আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সরকার - শেষ হয় একটা কালো যুগের - ঐতিহাসিকদের একাংশ আফ্রিকার এই বিপ্লবী অধ্যায়ের নাম দেন “আফ্রিকান স্তালিনগ্রাড৷” ১৯৯১ সালে হাভানায় এক সম্মেলনে নেলসন ম্যাণ্ডেলা বলেন – “The defeat of the racist army at Cuito Cuanavale has made it possible for me to be here today! Cuito Cuanavale was a milestone in the history of the struggle for southern African liberation!”
কেন?
কেন কিউবা নিজেকে জড়িয়েছিলো অ্যাঙ্গোলায়? এই প্রশ্নের সবচেয়ে কমন উত্তর সকলেরই জানা - কিউবাকে পশ্চিমী দুনিয়া সোভিয়েতের "সারোগেট' হিসেবেই দেখতে পছন্দ করে৷ কিন্তু এর আসল উত্তরটা অন্য কোথাও খুঁজতে হয়৷
রক্তঋণ শোধ - কোনো এক সময় আমরাও স্লোগান দিয়েছি “শহীদ স্মরণে আপন মরণে রক্তঋণশোধ করো” - আজ ভাবলে হাসি পায়, যখন কিউবা আর আফ্রিকার এই ইতিহাস পড়ি৷ স্বাধীনতার লড়াইয়ে পাশে দাঁড়ানো, বা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই ছাড়াও কিউবা একটা বিরাট ঋণ শোধ করতে চেয়েছিলো - এই রক্তঋণ৷
অ্যাঙ্গোলায় কিউবান অপারেশনের নাম - অপারেশন কার্লোটা - দেওয়া হয় এক আফ্রো-কিউবান ক্রীতদাসিনীর নামে - যিনি ১৮৪৩ সালের ৫ই নভেম্বর (১৯৭৫-এর এই দিনে কিউবার অ্যাঙ্গোলা অভিযান শুরু হয়) এক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ কিউবান পেনেকোস্টাল চার্চের রেভারেণ্ড আবুনো গঞ্জালেস বলেছিলেন – “My grandfather came from Angola. So it's my duty to go and help
এই কেন-র উত্তর ১৯৮৩ সালে সবচেয়ে জোরালোভাবে দেন জর্জ রিস্কেট – “There were no doubts. It was not, however, a decision made without reflection. It was analyzed in depth. The conclusion was reached that it was correct to provide such aid, that it was absolutely necessary, and that it was possible. Not to do so, on the other hand, would be to commit a great crime against a people who had fought for a long time, a people we had helped in that fight. Moreover, we saw this kind of aid as a duty, as something for which we didn't even expect thanks. Why? Because of the way Africans had been brought to
আর আফ্রিকার লিবারেশন স্ট্রাগলে কিউবার অবদানের কথাকে ছোট্ট করে বুঝিয়ে দেন আমিলকার কাবরাল - “I don't believe in life after death, but if there is, we can be sure that the souls of our forefathers who were taken away to America to be slaves are rejoicing today to see their children reunited and working together to help us be independent and free.”
আর সেই ছোট্ট দ্বীপটার কোনো এক কোণে গোটা আফ্রিকার মানুষের মন থেকে রোজ ঝরে পড়া শ্রদ্ধা নিয়ে শুয়ে থাকেন প্রায় কুড়ি হাজার সাহসী সৈনিক - আফ্রিকা থেকে সোনা-হীরে-তেল নয়, শুধুমাত্র যাঁদের কফিন সাথে করে ফিরেছিলো কিউবা৷
সুত্র
(১) African Stalingrad: The Cuban Revolution, Internationalism, and the End of Apartheid, Isaac Saney, Latin American Perspectives, 2006; 33; 81
(২) প্যাট্রিস লুমুম্বা উইকিপিডিয়া থেকে, এবং উইকিপিডিয়ার আরো বিভিন্ন পাতা - এই বিষয়ে
(৩) Back to the Motherland: Cuba in Africa, Christian Parenti
(৪) Cuba!
(৫) ব্যাটল অব কুইটো ক্যুয়ানাভাল