স্লোগান দিতে গিয়ে আমি বুঝেছি এই সার, সাবাস যদি দিতেই হবে সাবাস দেবো তার, ভাঙছে যারা, ভাঙবে যারা খ্যাপা মোষের ঘাড় ৷
Tuesday, May 30, 2006
ইয়র্কশায়ার ডেলের গপ্পো
দিব্যি বেড়ালুম৷
শনিবার সকালবেলা (সকাল মানে প্রায় দশটা) রওনা দিলুম - ইয়র্কশায়ার ডেলের মধ্যে দিয়ে প্রথমে Kirkby Lonsdale - একটা ছোট্ট ব্রীজ আছে, নাম "ডেভিলস ব্রীজ", কেন ডেভিলস ব্রীজ আর কে-ই বা ডেভিল, সে কথা গাইডবুকে লেখা নেইকো - সেটা দেখে সোজা ইঙ্গলটনের দিকে৷ বিচ্ছিরি বৃষ্টি পড়ছিলো, তার মধ্যে দিয়ে পাহাড় ঘুরে ঘুরে ইঙ্গলটন থেকে আরেকটু এগিয়ে "হোয়াইট স্কার কেভস" - ইংল্যাণ্ডের সবচেয়ে বড় "শো-কেভ" - প্রায় মাইলখানেক ভিতর অবধি নিয়ে যায়, আর অর্ধেকটাই কুঁজো হয়ে, মাথায় হেলমেট ছিলো বলে মাথাটা বেঁচে গেছে৷ ঋকের বেশ মজা - ওকে কুঁজো হতে হয়না, তাই দুপদুপিয়ে গেছে, একবার যদিও ওকেও একটু নীচু হতে হয়েছিলো৷ কয়েকশো মিলিয়ন বছরের পুরনো কেভ, ভিতরে ভর্তি স্ট্যালাগমাইট আর স্ট্যালাকটাইট৷ সবচেয়ে সুন্দর একদম শেষের দিকে সরু সরু লম্বা অসংখ্য স্ট্যালাকটাইট - আলো নিভিয়ে দিলে অন্ধকারের মধ্যে নীলচে রেশমের পর্দার মতন দেখায়৷
ওখান থেকে বেরোতে বেরোতে বাকি সব বন্ধ হয়ে যাবার সময় হয়ে গেছে, তাই "কটেজ"-এর দিকে গেলুম৷ আগে তো কখনো কটেজে থাকিনি - এবার কোন হোটেল বা বেড-অ্যাণ্ড-ব্রেকফাস্ট পাইনি (সব ভর্তি) - এই একটাই কটেজ পাওয়া গেসলো - দু রাতের জন্যে ষাট পাউন্ড - বেড অ্যাণ্ড ব্রেকফাস্টের অর্ধেক৷ আমরা ভেবেছিলুম বড়জোর খান দুই নাইলনের খাট থাকবে, রান্না তো বলেই দিয়েছিলো নিজের করতে হবে - তো আমরা একদম ক্যাম্পিংএর স্টোভ, অ্যালুমিনিয়মের বাসন, খাবার-দাবারের মধ্যে সসেজ, ডিম, পাঁউরুটি সব নিয়ে গেছি - গিয়ে দেখি হোটেলের বাড়া - একটা বড় ফার্ম-হাউজের একাংশ, সেল্ফ-সাফিসিয়েন্ট দোতলা, বড় বড় ঘর, সাজানো বিছানা, গ্যাস, মাইক্রো-ওয়েভ, টোস্টার, ডেনবীর স্টোনওয়্যারের সেট, টিভি, ভিসিআর, ক্যাসেট ...ঋক দৌড়লো পাশের পুকুরে মাছ দেখতে, হলুদ-কমলা মাছ ...
পরের দিন আবার ইঙ্গলটন - ওখানে একটা পাঁচ মাইলের সার্কুলার রুট আছে, হাঁটার জন্যে - "ইঙ্গলটন ওয়াটারফলস ওয়াক" - একটা জিওলজিক্যাল ফল্টের মধ্যে দিয়ে দুটো নদীর ধার ধরে পর পর জলপ্রপাতের পাশ দিয়ে দিয়ে - জলপ্রপাতগুলো বেশ সুন্দর, মোটামুটি জঙ্গল - সেও সুন্দর - মাঝে মাঝে "ব্লুবেল"-এর কার্পেট ... রাস্তা বেশ কঠিন - অন্তত হাঁটার অভ্যেস না থাকলে, আর আগেরদিন বৃষ্টি পড়ে কাদা-ভর্তি - ঋকের খুব মজা, ওয়াকিং শু পড়ে কাদার মধ্যে ছপাত্ ছপাত্ - এমনি তো করতে পারে না ... তবে ছেলেটা বিনা প্রতিবাদে পাঁচ মাইল হেঁটে দিলো, কোন কমপ্লেন নেই - শুধু সেই আগের বারের মতন মুখ বন্ধ হয়নি এক সেকেন্ডের তরে৷ একবার শুধু কান্না জুড়েছিলো - সে "থর্নটন ফোর্স" বলে একটা প্রপাত আছে, আমি সেখানে ওদের ধারে রেখে একটু ভিতরদিকে চলে গেছি ধারের একটা ছোট্ট প্রপাতের ছবি তুলবো বলে - মোটামুটি জলের মধ্যে, দুটো পাথরের ওপর ব্যালান্স করে দাঁড়িয়ে - ছবি তুলছি, আর ঋক তো ভেড়ার ছানার মতন "বাবাআআআআআ ... " করে কান্না জুড়েছে - আমি ঘুরে ওকে থামাতে গিয়ে ধপ্পাস!!! পুরো জলের মধ্যে - জুতোর ওপর দিয়ে জল ঢুকে ভিতরের দুটো মোজাই ভিজে চুপ্পুস, প্যান্ট ভিজে, ক্যামেরাটা বেঁচে গেছে, আর পাথরে ধাক্কা খেয়ে হাঁটুতে চোট:-) তো ঐ ভিজে মোজা-প্যান্ট পরেই বাকি রাস্তাটুকু হাঁটলুম৷
আড়াইটে নাগাদ ওখান থেকে গেলুম "সেটল" - ইচ্ছে "সেটল-কার্লাইল" লাইনের ট্রেনে চড়বো - অন্যতম বিখ্যাত "সীনিক রুট"৷ হতভাগারা প্রমোট করছে এই বলে, অথচ, রোববার বলে আড়াইটেতে একটা ট্রেন, তাপ্পর সাড়ে ছটা - সেটাতে গেলে ফেরার কোন ট্রেন নেই৷ অগত্যা, উল্টোদিকের ট্রেনে চড়লুম - ঋককে শান্ত করতে - ট্রেনের মূলো দেখিয়েই পাঁচ মাইল হাঁটানো হয়েছে কিনা৷ উল্টো দিকে "কিথলী" বলে একটা জায়গাতে একটা পুরনো স্টীম ইঞ্জিন চলে - ওয়ারথ ভ্যালী রেলওয়ে, চার-পাঁচটা স্টেশনকে সেই গত শতাব্দীর শুরুর দিকের মতন করে রেখেছে - ভলান্টিয়াররা ট্রেন চালায়, টিকিট বিক্রী করে যা পয়সা ওঠে সব যায় লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের পিছনে৷ এবার কিথলী পৌঁছে দেখি যে আমরা যদি ঐ স্টীম ট্রেনে উঠি, তাহলে পুরো সার্কুলার রুট ঘুরে যখন ফেরত্ আসবো, ততক্ষণে কিথলী থেকে সেটল ফেরার শেষ ট্রেন চলে যাবে - সুতরাং দেড় ঘন্টা ফাঁকা ইস্টিশনে বসে বসে ভ্যারেণ্ডা ভাজো৷
ট্রেনে করে সেটল ফিরলাম - ঋক ওতেই খুশী - ট্রেনে চড়া হল তো৷ জিএনইআর-এর ভবিষ্যত ড্রাইভার বলে কথা৷ সেটল থেকে গাড়ি নিয়ে ঐ কার্লাইল লাইনের পাশ ধরে গেলুম রিবলহেড-এর দিকে - সেখানে একটা বিখ্যাত "ভায়াডাক্ট" আছে - রিবলহেড ভায়াডাক্ট - বিশাল লম্বা, অনেক পুরনো, হেরিটেজ ব্রীজ, ওপর দিয়ে ঐ কার্লাইল লাইনের ট্রেনগুলো যায় - দেখতে খুব সুন্দর৷ সেখানে গিয়ে এক কাণ্ড - ঋক তো মাঠের ওপর যাবে না - ভেড়া আর ছাগলে "পটি" করে রেখেছে, কোনক্রমে ওয়াকিং রুটটার ওপর নিয়ে যাওয়া হল - কিন্তু ব্রীজের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় না৷ তো আমি বল্লুম যে তোরা দাঁড়া, আমি দুটো ছবি তুলে আনি - এগিয়ে গেছি - প্রায় আধমাইল দূর থেকে সেই পরিচিত "বাবাআআআআআআ ... " - বাবা বোধহয় হারিয়ে গেলো:-)
সেখান থেকে আবার কটেজে ফিরলুম প্রায় রাত্তির আটটা - রাত্তির মানে আমাদের হিসেবে রাত্তির - আটটার সময় এখানে সূর্য দিব্যি চড়চড় করছে৷
সোমবার (গতকাল) নাকি aweful weather হওয়ার কথা ছিলো - বিবিসিতে বললো৷ তো আমরা ভাবলুম চটপট বেরিয়ে এবার ইয়র্কশায়ার ডেলকে দক্ষিণ থেকে উত্তরের রাস্তায় পেরবো৷ সেই রিবলহেড ছাড়িয়ে আরেকটু এগিয়ে "বাটারটাবস পাস" বলে একটা জায়গা আছে - দারুণ৷ একদম পাহাড়ের মাথা অবধি নিয়ে যায়, সরু এঁকা-বেঁকা রাস্তা ধরে - দারুণ দৃশ্য - আর গাড়ি চালিয়ে আনন্দ৷ ঐ রাস্তা ধরে "সোয়েলডেল"-এর মধ্যে দিয়ে রিচমণ্ড হয়ে বাড়ি পৌঁছলুম বিকেল পাঁচটা৷
তাঁবু কেনা হয়েছিলো একটা - এবারে ক্যাম্পিংয়ে যাবো - ভাবলুম তাঁবুটা খাটানোর চেষ্টা করে দেখি - উরিশ্শালা, দুজনে মিলে একদম কেলিয়ে গেসলুম - তবে শেষমেষ ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় সেটা দাঁড় করানো গেছিলো - অবশ্যই "টেন্ট পেগ" ছাড়া - বাড়িতে কোথায় পুঁতবো - তবে টেকনিকটা শিখে গেছি - এর পরের একটা ছুটিতে যাবো "গ্লেন নেভিস" - ক্যাম্পিং করতে৷
(ছবি সব এখানে)
Wednesday, May 24, 2006
সংরক্ষণ নিয়ে দু-চার কথা
সংরক্ষণ কি সে বিষয়ে বিষদ যাবার প্রয়োজন নেই কোন, গত মাস খানেকের বাংলা, ইংরিজী খবরের কাগজের প্রথম পাতায় এছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়, মাসখানেকের এই আন্দোলন নিয়ে -
(১) ভিপি সিং-এর আমলে মণ্ডল নিয়ে প্রথম যখন ঝড় উঠলো - আমরাও স্কুলে বনধ ডেকেছিলুম - স্কুলের ইতিহাসে প্রথম ছাত্র ধর্মঘট - তখন যুক্তি ছিলো চাকরীক্ষেত্রে নয়, পিছিয়ে-পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের উচ্চ-শিক্ষায় সুযোগ দাও, যাতে পরে চাকরীক্ষেত্রে তারা প্রতিযোগীতায় নামতে পারে৷ এখন শিক্ষায় সুযোগ দিতে গেলে বলা হচ্ছে স্কুল-শিক্ষায় দাও, স্কুল-শিক্ষায় দিতে গেলে কি বলবে জন্মের আগে দাও?
(২) ধরা যাক এরকম কাউকে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ দেওয়া হল - ধরা যাক জয়েন্টে সে এল ৮০০ নম্বরে, তাও সে যাদবপুরে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হল৷ সে তো শুধু ভর্তিই হল - তাকে তো চার বছর প্রতিটা পরীক্ষায় পাশ করতে হবে৷ সে যদি সেটা করতে পারে তাহলে কি তার মেরিট নেই? তথাকথিত উচ্চবর্ণের মেরিটোরিয়াস ছাত্র (জয়েন্টে দিয়েই যারা কম্পিউটার সায়েন্সে ঢুকেছে, বা অন্য উপায়ে - দক্ষিণের কলেজে) তারা যখন বছর-বছর ঘষটায়? ঐ সীটটায় তাদের কোন যোগ্যতা ছিলো/আছে কি?
(৩) মেরিট শুধু জীন নয়, নির্ভর করে ট্রেনিংএর ওপরেও৷ কলকাতা বা দিল্লীতে থাকা ছেলেপুলেরা যে কোচিং পায় (বই-পত্র-স্কুল-কলেজ-কোচিং সেন্টারে) পুরুলিয়ার গ্রামের একটা ছেলে সেটা কোথায় পাবে? তার কি মেরিট নেই সেটা অলরেডী গ্রান্টেড? সেতো কোনদিন সুযোগই পেলো না৷
(৪) জয়েন্ট বা সমতুল পরীক্ষায় সুযোগ না পেয়ে অনেকেই শুধুমাত্র চার-পাঁচ লক্ষ টাকার জোরে ভর্তি হয়ে যান দক্ষিণের কোন কলেজে - ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারিতে - এও কি সংরক্ষণ নয়? উচ্চবিত্তের সংরক্ষণ?
সংরক্ষণের আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিলো এই সুযোগটুকু করে দেওয়া, ডিপেন্ডেন্ট বানিয়ে দেওয়া নয়, বা শুধু পাইয়ে দেওয়া নয় - দুর্ভাগ্যক্রমে যেটা হয়েছে৷ আন্দোলনটা হতে পারতো এই নিয়ে - কি করে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায় যাতে পুরুলিয়ার গ্রামের ছেলে/মেয়েও আমাদের মতন সুযোগটুকু পায়৷ কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য শুনলে সন্দেহ হয় - এদের মেন্টালিটি নিয়ে - মোটামুটি মধ্যযুগীয় "ওরা অচ্ছুত" মেন্টালিটি৷ আন্দোলনটা বলতে পারতো - যে হ্যাঁ, শিক্ষায় সুযোগ দাও, যাতে ওরা কলেজে পড়তে পারে, লাইব্রেরী থেকে বই নিতে পারে, দুটো বেশি বই কিনতে পারে তার জন্যে অল্প হলেও স্কলারশিপ দাও - তারপর চাকরিক্ষেত্রে ওদের কমপিট করতে দাও - সেখান থেকে সংরক্ষণ তুলে দাও৷ আন্দোলনটা বলতে পারতো সংরক্ষণকে বংশানুক্রমিক করা বন্ধ হোক, আর জাতের বিচারে নয়, অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে করা হোক - শুধুমাত্র সুযোগটুকু করে দেওয়ার জন্যে ... আন্দোলনটা বলতে পারতো খালি থেকে যাওয়া সংরক্ষিত সীটগুলোকে ওপেন করে দাও ...
সে সব কিছু নয় - আমরা উঠে পড়ে লাগলাম আমাদের সুযোগ কমে যাবে কিনা তাই নিয়ে৷ স্বার্থপর? তা ছাড়া কি?
(১) ভিপি সিং-এর আমলে মণ্ডল নিয়ে প্রথম যখন ঝড় উঠলো - আমরাও স্কুলে বনধ ডেকেছিলুম - স্কুলের ইতিহাসে প্রথম ছাত্র ধর্মঘট - তখন যুক্তি ছিলো চাকরীক্ষেত্রে নয়, পিছিয়ে-পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের উচ্চ-শিক্ষায় সুযোগ দাও, যাতে পরে চাকরীক্ষেত্রে তারা প্রতিযোগীতায় নামতে পারে৷ এখন শিক্ষায় সুযোগ দিতে গেলে বলা হচ্ছে স্কুল-শিক্ষায় দাও, স্কুল-শিক্ষায় দিতে গেলে কি বলবে জন্মের আগে দাও?
(২) ধরা যাক এরকম কাউকে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ দেওয়া হল - ধরা যাক জয়েন্টে সে এল ৮০০ নম্বরে, তাও সে যাদবপুরে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হল৷ সে তো শুধু ভর্তিই হল - তাকে তো চার বছর প্রতিটা পরীক্ষায় পাশ করতে হবে৷ সে যদি সেটা করতে পারে তাহলে কি তার মেরিট নেই? তথাকথিত উচ্চবর্ণের মেরিটোরিয়াস ছাত্র (জয়েন্টে দিয়েই যারা কম্পিউটার সায়েন্সে ঢুকেছে, বা অন্য উপায়ে - দক্ষিণের কলেজে) তারা যখন বছর-বছর ঘষটায়? ঐ সীটটায় তাদের কোন যোগ্যতা ছিলো/আছে কি?
(৩) মেরিট শুধু জীন নয়, নির্ভর করে ট্রেনিংএর ওপরেও৷ কলকাতা বা দিল্লীতে থাকা ছেলেপুলেরা যে কোচিং পায় (বই-পত্র-স্কুল-কলেজ-কোচিং সেন্টারে) পুরুলিয়ার গ্রামের একটা ছেলে সেটা কোথায় পাবে? তার কি মেরিট নেই সেটা অলরেডী গ্রান্টেড? সেতো কোনদিন সুযোগই পেলো না৷
(৪) জয়েন্ট বা সমতুল পরীক্ষায় সুযোগ না পেয়ে অনেকেই শুধুমাত্র চার-পাঁচ লক্ষ টাকার জোরে ভর্তি হয়ে যান দক্ষিণের কোন কলেজে - ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারিতে - এও কি সংরক্ষণ নয়? উচ্চবিত্তের সংরক্ষণ?
সংরক্ষণের আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিলো এই সুযোগটুকু করে দেওয়া, ডিপেন্ডেন্ট বানিয়ে দেওয়া নয়, বা শুধু পাইয়ে দেওয়া নয় - দুর্ভাগ্যক্রমে যেটা হয়েছে৷ আন্দোলনটা হতে পারতো এই নিয়ে - কি করে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায় যাতে পুরুলিয়ার গ্রামের ছেলে/মেয়েও আমাদের মতন সুযোগটুকু পায়৷ কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য শুনলে সন্দেহ হয় - এদের মেন্টালিটি নিয়ে - মোটামুটি মধ্যযুগীয় "ওরা অচ্ছুত" মেন্টালিটি৷ আন্দোলনটা বলতে পারতো - যে হ্যাঁ, শিক্ষায় সুযোগ দাও, যাতে ওরা কলেজে পড়তে পারে, লাইব্রেরী থেকে বই নিতে পারে, দুটো বেশি বই কিনতে পারে তার জন্যে অল্প হলেও স্কলারশিপ দাও - তারপর চাকরিক্ষেত্রে ওদের কমপিট করতে দাও - সেখান থেকে সংরক্ষণ তুলে দাও৷ আন্দোলনটা বলতে পারতো সংরক্ষণকে বংশানুক্রমিক করা বন্ধ হোক, আর জাতের বিচারে নয়, অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে করা হোক - শুধুমাত্র সুযোগটুকু করে দেওয়ার জন্যে ... আন্দোলনটা বলতে পারতো খালি থেকে যাওয়া সংরক্ষিত সীটগুলোকে ওপেন করে দাও ...
সে সব কিছু নয় - আমরা উঠে পড়ে লাগলাম আমাদের সুযোগ কমে যাবে কিনা তাই নিয়ে৷ স্বার্থপর? তা ছাড়া কি?
Thursday, May 11, 2006
শহর থেকে শহরে - ২
চিরকাল মা একটু আপত্তি করতো - বাসরাস্তা থেকে এত দূরে বাড়ি বলে৷ আমার কিন্তু কখনো খারাপ লাগেনি, বাসের আওয়াজ নেই, গাড়ির আওয়াজ নেই - গরমকালের দুপুরে বড়জোর কাঁধে বাক্স ঝুলিয়ে রঙিন বরফ বিক্রি-করা ফেরিওয়ালার ডাক - "আ-ই-স-কি-রি-ম"৷ রোজ সকালে উঠে দৌড়দৌড়ি শুরু হত, আটটার মধ্যে বেরোতে হবে, ইস্কুলের বাস আসবে সাড়ে আটটায় - মঙ্গলদার রিক্সা করে রাণীকুঠি যেতে হত৷ পথে রাণীকুঠির বাড়িটা - শোনা কথা ওটা পুঁটুরাণীর বাড়ি - পুঁটুরাণী মানে সাবর্ণ রায়চৌধুরির মেয়ে - আদিগঙ্গা-পারের বিস্তীর্ণ এলাকা সেই মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দেওয়া হয়েছিলো - তাই "পুঁটুরাণী" থেকে বদলাতে বদলাতে "পুঁটিয়ারী"৷ বাড়িটা দেখে মনে হত ভুতের বাড়ি - পরে বড় হয়ে একদিন আঁকার ইস্কুল থেকে ফেরার সময় আমি আর বাপি সাহস করে ঢুকে পড়লুম - পোড়ো বাড়ি, তাও একদম বসবাসহীন নয় - কেউ কেউ ঝুপড়ি বানিয়ে রাস্তার ধারে থাকতো, কেউ ঐ বাড়িতে - পোড়ো হলে কি হয়েছে, বাড়ি তো৷ তাদের পছন্দ হয়নি আচমকা দুটো উটকো ছোঁড়া ঢুকে পড়াতে ... বেরিয়ে এসে এদিক সেদিক ঘুরে আবিস্কার করলুম পুঁটুরাণীর পরে এই বাড়িটার মালিকানা ছিলো "ইস্ট ইন্ডিয়া স্টুডিও"-র - একটা শুকিয়ে যাওয়া ফোয়ারায় তাদের নাম লেখা ...
প্রাইমারী ইস্কুল শেষ করে সেকেণ্ডারী ইস্কুলের সময় বাস ধরতে যেতে হত নেতাজীনগর - আরেকটু কাছে - আর মঙ্গলদার রিক্সা নয় - এবার থেকে হেঁটে৷ ইস্কুল বাস মিস করলে ধ্যাদ্ধেড়ে ৪১/১ ভরসা - সোজা ইস্কুলের সামনে - আর নইলে অন্য বাস ধরে হাজরা মোড়ে নেমে হন্টন৷ ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন, একদিন গড়িয়াহাটের কাছে ইস্কুলের বাস জবাব দিলো - পকেটে পয়সা নেই, কিন্তু কয়েকজন বন্ধু মিলে টুপ করে একটা এস১৫-এ চড়ে বসলুম - কনডাকটরও বুঝেছিলো ইস্কুলের ছেলে (বাসটাও তো ওখানেই দাঁড়িয়ে, আর ইউনিফর্মটা ছিলো ইউনিক) - অন্য প্যাসেঞ্জারেরা চাঁদা করে আমাদের টিকিট কেটে দিলো৷ এখন কেউ দেবে? সন্দেহ আছে৷
এর পর থেকেই আমাকে প্রতি মাসের শুরুতে দুটো করে টাকা দিত মা, এরকম ব্যাপার হলে যাতে বাসভাড়াটা দিতে পারি৷ সেই টাকাগুলো জমাতুম - দুর্গাপূজোর সময়ও অল্প কিছু জমাতুম, কালিপূজোর বাজি না পুড়িয়ে মা'র কাছ থেকে গোটা দশ-পনেরো টাকা নিয়ে জমাতুম - এই করে করে আস্তে আস্তে একটা ক্রিকেট ব্যাট, একটা হকি স্টিক কিনেছিলুম ...
ঐ সিক্সেই যখন পড়ি, তখন একদিন দুপুরবেলা সেকেণ্ডারী সেকশনের প্রিফেক্ট এসে বললেন - ইস্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, খবর এলো ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করা হয়েছে৷ রাস্তাঘাট বন্ধ, বাস যাবে না, আর বাড়িতে ফোনও নেই যে ফোন করে বলবো ... আর বল্লেই বা কে এসে নিয়ে যাবে? অগত্যা আমি, বৌদি (কৌশিক সেন - বারো বছর বেচারিকে লোকে বৌদি বলে ডেকে গেছিলো) আর আসিফ হাঁটা দিলাম৷ কোন মোড়ে গিয়ে দেখছি বাস জ্বলছে, কোথাও ঝুপড়ি ... তার মধ্যেই টুকটুক করে প্রায় দেড় ঘন্টা হেঁটে বাড়ি - মা চমকে উঠলো - তখনো খবরই শোনেনি কেউ৷
দিদি ঐসময় বি ই কলেজে চলে গেছে, বাড়িটা ফাঁকা, মারামারি করার কেউ নেই৷ সপ্তাহের শেষে বাড়ি আসতো, নানা রকম গল্প হত - ঐসময় দিদি পড়ালো "ইস্পাত"৷ মাথা বিগরোনোর সেই শুরু৷ দিদি কলেজে নাটক করতো, গানের গ্রুপে ছিলো - আমি বাড়িতে বসে সেই গণসঙ্গীতগুলো শিখতুম৷ সল্টলেকে দ্বাদশ পার্টি কংগ্রেসে একটা একজিবিশন হল, দিদিরা মডেল দিলো - তখন কম্পিউটার নিয়ে বাওয়ালি চলছে - দিদিরা কোথায় কেন কম্পিউটারের প্রয়োজন হতে পারে সেই নিয়ে ডেমো দিত৷ একদিন ডেমোর সময় একজন ধুতি-পাঞ্জাবী পরা, ছোটখাটো কিন্তু টকটকে চেহারার ভদ্রলোক এলেন, মন দিয়ে শুনলেন, এবং প্রচুর প্রশংসা করলেন - টিভিতে মুখ দেখে খুবই চেনা - জ্যোতি বসু৷ ঐসময়েই মনে হয় মাথায় কোনভাবে ঢুকে গেছিলো কম্পু নিয়ে পড়তে হবে, আর বি ই কলেজেই যেতে হবে:-)
টেনে পড়ি যখন তখন দিদির বিয়ে হয়ে গেলো (ঐ প্রথম নিজে পছন্দ করে বিয়ে দেখার সৌভাগ্য - অবিশ্যি পরে জেনেছি আমার দুই মামাও একই পথের পথিক - তবে তাদের বিয়ের সময় আমি বড়ই ছোট), দিদিরা বণ্ডেল গেটের কাছে একটা বাড়ি ভাড়া নিলো - রাইফেল রেঞ্জ রোড সম্ভবত রাস্তাটার নাম ছিলো৷ একদিন দিদি ওদের বাড়ি আমাকে নেমন্তন্ন করলো, রান্না করে খাওয়াবে৷ দিদির রান্না বলতে এতদিন ছিলো শুধু ভাইফোঁটার দিনগুলো৷ সেদিন আমার খেলা ছিলো, খেলা শেষ করে আমি বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কোয়ালিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি - দিদি বা বিমানদা এসে নিয়ে যাবে - কারো পাত্তা নেই৷ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আমি রাইফেল রেঞ্জ রোডের দিকে হাঁটা দিলুম ... খুঁজে খুঁজে রাস্তাটা বের করে বাড়ির সামনে অবধি গেলুম - কিন্তু ঐ বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটা দেখতে পেলুম না - বোকার মতন, বাড়ির পাশের গলিটা খেয়ালই করিনি৷ আসলে টাইব্রেকে সেদিন হেরে গিয়ে মনটাও খারাপ ছিলো৷ ফের সেই কোয়ালিটির সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, কাউকে না দেখে বাড়ি৷ রাত দশটার সময় বাড়ির সামনে একটা ট্যাক্সি এলো - দেখি দিদি আর বিমানদা৷ দিদি এসেই জিগ্গেস করলো "মিতুল ফিরেছে" - উত্তর শুনে ওখানেই (মানে গেটের সামনে) বসে পড়ে হাউহাউ করে কান্না - বেচারি সন্ধ্যে থেকে রাত্তির অবধি টেনশন করেছে ...
এই সেদিন বাড়ি গেলুম - সুমনাকে এই ঘটনাটা বলে বলেছিলুম যে দিদি যেই শুনবে আমরা এসেছি, তক্ষুণি আসবে৷ সুমনা বল্ল - এখন কি আর আসবে? এখন একটা মেয়ে আছে, ঘর-সংসার সামলানো আছে - ফোন করবে, পরের দিন আসবে ... এখনো কিন্তু আমার কথাটাই ঠিক হল - দিদি যেই শুনলো আমরা এসেছি, সঙ্গে সঙ্গে হাজির ...
হায়ার সেকেণ্ডারীও একই ইস্কুলে - শুধু ক্লাস শুরু হত সকাল সাতটায়, বাড়ি থেকে বেরোতুম ভোর সাড়ে পাঁচটায়৷ শীতকালে আকাশে চাঁদ থাকতো৷ পাঁচটা পঞ্চাশের ৪১/১ ধরলে সাড়ে ছটা নাগাদ ইস্কুলে পৌঁছতুম৷ বারোটা অবধি ইস্কুল৷ তখন প্রায়সই আমরা হেঁটে ফিরতুম ... মাঝে মাঝে সাইকেলে ইস্কুল যেতুম - বাবার তিরিশ বছরের পুরনো হারকিউলিস - চট করে অন্য কেউ চালাতে পারতো না৷ প্রথম মিছিলে হাঁটা এই সময়েই - সংহতি মিছিল - এখন মনে নেই কি ব্যাপারে ছিলো, তবে অত লোকের মিছিলে হাঁটার সেই শুরু - এসপ্ল্যানেড থেকে পার্ক সার্কাস ময়দান৷ গলা খুলে স্লোগান দেওয়ার শুরুও ওখানেই৷
তার পরের চারটে বছর সম্ভবত সেরা সময়৷ গানে-স্লোগানে-মিছিলে হু হু করে কেটে যাওয়া ...
প্রাইমারী ইস্কুল শেষ করে সেকেণ্ডারী ইস্কুলের সময় বাস ধরতে যেতে হত নেতাজীনগর - আরেকটু কাছে - আর মঙ্গলদার রিক্সা নয় - এবার থেকে হেঁটে৷ ইস্কুল বাস মিস করলে ধ্যাদ্ধেড়ে ৪১/১ ভরসা - সোজা ইস্কুলের সামনে - আর নইলে অন্য বাস ধরে হাজরা মোড়ে নেমে হন্টন৷ ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন, একদিন গড়িয়াহাটের কাছে ইস্কুলের বাস জবাব দিলো - পকেটে পয়সা নেই, কিন্তু কয়েকজন বন্ধু মিলে টুপ করে একটা এস১৫-এ চড়ে বসলুম - কনডাকটরও বুঝেছিলো ইস্কুলের ছেলে (বাসটাও তো ওখানেই দাঁড়িয়ে, আর ইউনিফর্মটা ছিলো ইউনিক) - অন্য প্যাসেঞ্জারেরা চাঁদা করে আমাদের টিকিট কেটে দিলো৷ এখন কেউ দেবে? সন্দেহ আছে৷
এর পর থেকেই আমাকে প্রতি মাসের শুরুতে দুটো করে টাকা দিত মা, এরকম ব্যাপার হলে যাতে বাসভাড়াটা দিতে পারি৷ সেই টাকাগুলো জমাতুম - দুর্গাপূজোর সময়ও অল্প কিছু জমাতুম, কালিপূজোর বাজি না পুড়িয়ে মা'র কাছ থেকে গোটা দশ-পনেরো টাকা নিয়ে জমাতুম - এই করে করে আস্তে আস্তে একটা ক্রিকেট ব্যাট, একটা হকি স্টিক কিনেছিলুম ...
ঐ সিক্সেই যখন পড়ি, তখন একদিন দুপুরবেলা সেকেণ্ডারী সেকশনের প্রিফেক্ট এসে বললেন - ইস্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, খবর এলো ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করা হয়েছে৷ রাস্তাঘাট বন্ধ, বাস যাবে না, আর বাড়িতে ফোনও নেই যে ফোন করে বলবো ... আর বল্লেই বা কে এসে নিয়ে যাবে? অগত্যা আমি, বৌদি (কৌশিক সেন - বারো বছর বেচারিকে লোকে বৌদি বলে ডেকে গেছিলো) আর আসিফ হাঁটা দিলাম৷ কোন মোড়ে গিয়ে দেখছি বাস জ্বলছে, কোথাও ঝুপড়ি ... তার মধ্যেই টুকটুক করে প্রায় দেড় ঘন্টা হেঁটে বাড়ি - মা চমকে উঠলো - তখনো খবরই শোনেনি কেউ৷
দিদি ঐসময় বি ই কলেজে চলে গেছে, বাড়িটা ফাঁকা, মারামারি করার কেউ নেই৷ সপ্তাহের শেষে বাড়ি আসতো, নানা রকম গল্প হত - ঐসময় দিদি পড়ালো "ইস্পাত"৷ মাথা বিগরোনোর সেই শুরু৷ দিদি কলেজে নাটক করতো, গানের গ্রুপে ছিলো - আমি বাড়িতে বসে সেই গণসঙ্গীতগুলো শিখতুম৷ সল্টলেকে দ্বাদশ পার্টি কংগ্রেসে একটা একজিবিশন হল, দিদিরা মডেল দিলো - তখন কম্পিউটার নিয়ে বাওয়ালি চলছে - দিদিরা কোথায় কেন কম্পিউটারের প্রয়োজন হতে পারে সেই নিয়ে ডেমো দিত৷ একদিন ডেমোর সময় একজন ধুতি-পাঞ্জাবী পরা, ছোটখাটো কিন্তু টকটকে চেহারার ভদ্রলোক এলেন, মন দিয়ে শুনলেন, এবং প্রচুর প্রশংসা করলেন - টিভিতে মুখ দেখে খুবই চেনা - জ্যোতি বসু৷ ঐসময়েই মনে হয় মাথায় কোনভাবে ঢুকে গেছিলো কম্পু নিয়ে পড়তে হবে, আর বি ই কলেজেই যেতে হবে:-)
টেনে পড়ি যখন তখন দিদির বিয়ে হয়ে গেলো (ঐ প্রথম নিজে পছন্দ করে বিয়ে দেখার সৌভাগ্য - অবিশ্যি পরে জেনেছি আমার দুই মামাও একই পথের পথিক - তবে তাদের বিয়ের সময় আমি বড়ই ছোট), দিদিরা বণ্ডেল গেটের কাছে একটা বাড়ি ভাড়া নিলো - রাইফেল রেঞ্জ রোড সম্ভবত রাস্তাটার নাম ছিলো৷ একদিন দিদি ওদের বাড়ি আমাকে নেমন্তন্ন করলো, রান্না করে খাওয়াবে৷ দিদির রান্না বলতে এতদিন ছিলো শুধু ভাইফোঁটার দিনগুলো৷ সেদিন আমার খেলা ছিলো, খেলা শেষ করে আমি বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কোয়ালিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি - দিদি বা বিমানদা এসে নিয়ে যাবে - কারো পাত্তা নেই৷ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আমি রাইফেল রেঞ্জ রোডের দিকে হাঁটা দিলুম ... খুঁজে খুঁজে রাস্তাটা বের করে বাড়ির সামনে অবধি গেলুম - কিন্তু ঐ বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটা দেখতে পেলুম না - বোকার মতন, বাড়ির পাশের গলিটা খেয়ালই করিনি৷ আসলে টাইব্রেকে সেদিন হেরে গিয়ে মনটাও খারাপ ছিলো৷ ফের সেই কোয়ালিটির সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, কাউকে না দেখে বাড়ি৷ রাত দশটার সময় বাড়ির সামনে একটা ট্যাক্সি এলো - দেখি দিদি আর বিমানদা৷ দিদি এসেই জিগ্গেস করলো "মিতুল ফিরেছে" - উত্তর শুনে ওখানেই (মানে গেটের সামনে) বসে পড়ে হাউহাউ করে কান্না - বেচারি সন্ধ্যে থেকে রাত্তির অবধি টেনশন করেছে ...
এই সেদিন বাড়ি গেলুম - সুমনাকে এই ঘটনাটা বলে বলেছিলুম যে দিদি যেই শুনবে আমরা এসেছি, তক্ষুণি আসবে৷ সুমনা বল্ল - এখন কি আর আসবে? এখন একটা মেয়ে আছে, ঘর-সংসার সামলানো আছে - ফোন করবে, পরের দিন আসবে ... এখনো কিন্তু আমার কথাটাই ঠিক হল - দিদি যেই শুনলো আমরা এসেছি, সঙ্গে সঙ্গে হাজির ...
হায়ার সেকেণ্ডারীও একই ইস্কুলে - শুধু ক্লাস শুরু হত সকাল সাতটায়, বাড়ি থেকে বেরোতুম ভোর সাড়ে পাঁচটায়৷ শীতকালে আকাশে চাঁদ থাকতো৷ পাঁচটা পঞ্চাশের ৪১/১ ধরলে সাড়ে ছটা নাগাদ ইস্কুলে পৌঁছতুম৷ বারোটা অবধি ইস্কুল৷ তখন প্রায়সই আমরা হেঁটে ফিরতুম ... মাঝে মাঝে সাইকেলে ইস্কুল যেতুম - বাবার তিরিশ বছরের পুরনো হারকিউলিস - চট করে অন্য কেউ চালাতে পারতো না৷ প্রথম মিছিলে হাঁটা এই সময়েই - সংহতি মিছিল - এখন মনে নেই কি ব্যাপারে ছিলো, তবে অত লোকের মিছিলে হাঁটার সেই শুরু - এসপ্ল্যানেড থেকে পার্ক সার্কাস ময়দান৷ গলা খুলে স্লোগান দেওয়ার শুরুও ওখানেই৷
তার পরের চারটে বছর সম্ভবত সেরা সময়৷ গানে-স্লোগানে-মিছিলে হু হু করে কেটে যাওয়া ...
শহর থেকে শহরে - ১
কলকাতা শহরতলী - মাঝে কয়েক বছরের জন্যে শিবপুর, দিল্লী, হেলসিঙ্কি, কলোরাডো স্প্রিঙস, সিলভার স্প্রিঙ-গেথার্সবার্গ হয়ে নিউক্যাসল আপন টাইন - এই আমার পথ এখনো৷ পুরো বৃত্ত তৈরী হবে যেদিন আবার সেই কলকাতা শহরতলীতে ফিরে যাবো৷
যখন ছোট ছিলাম, তখন সেটা কলকাতা ছিলো না, পূর্ব পুটিয়ারী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা৷ আবছা আবছা মনে পড়ে আশেপাশে নিজেদের বাড়িটা নিয়ে সাকুল্যে তিনটে বাড়ি - বাপিদের আর বুয়াইদের (এই দুজন আমার সেই বয়সের বন্ধু) - আর ধু ধু মাঠ, বাড়ি সামনে বাঁশবাগান, সেখানে সন্ধ্যে হলেই শেয়াল ডাকতো৷ সবচেয়ে কাছের বাসরাস্তা হেঁটে মিনিট কুড়ি৷ লোডশেডিং হলে একতলা বাড়িতে লন্ঠনের আলোয় বাবা, মা, ঠাকুমা, দিদি আর আমি বসে থাকতুম৷ প্রচুর পুকুর ছিলো, লক্ষ্মীপিসীরা একটু দূরে থাকতো, আমি দিনের বেলাটা প্রায়সই ওখানে থাকতুম, কারণ দাদু তখন পুরোপুরি বিছানায়, ঠাকুমা অসুস্থ, মা ঘর সামলে, দাদুকে সামলে আর আমাকে দেখে উঠতে পারতো না - লক্ষ্মীপিসী তাই আমাকে নিয়ে যেত৷ এই লক্ষ্মীপিসীই আমাকে সাঁতার শিখিয়েছিলো - তখন দু বছর বয়স মোটে ... আর যেদিন দাদু মারা গেলো, সেদিন আমাকে কোলে নিয়ে সাহাপাড়ার দিকে ঘুরতে চলে গিয়েছিলো, আমি বাড়ি ফিরে কেঁদেছিলাম - "দাদুকে কোথায় নিয়ে গেলো?"
সত্তরের দশকের অনেক গল্প শুনি - আবছা মনে আছে বাঁশবাগানের ওপারে দুম দুম আওয়াজ, আর একটু পরেই রক্ত মেখে এক জনের টলতে টলতে বাঁশবাগান থেকে বেরিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া৷ একদিন পুলিশ এসেছিলো বাড়িতে, সার্চ করতে - জবরদস্তি লফট থেকে প্যাকিংবাক্স নামিয়ে খুলে ফেলেছিলো, আর চড়াই পাখির বাসাগুলো ভেঙে সারা ঘরে ছড়িয়ে গেছিলো ... বাচ্চা চড়াইগুলোর চিঁচিঁ, আর বড়গুলোর সারা ঘরে উড়ে বেড়ানো ... পুলিশ অবিশ্যি ক্ষমা-টমা চেয়ে সেই ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে যায় ...
এখানেই চব্বিশ বছর - কুড়ি মিনিট হেঁটে বাসরাস্তায় পৌঁছে বাস ধরে ইস্কুলে যাওয়া, পরে সাইকেলে যাদবপুর ... বাড়ি একতলা থেকে দোতলা হয়, আশেপাশের সব মাঠ নতুন নতুন বাড়িতে ভর্তি হয়ে যায়, নিশ্চুপ নি:ঝুম অরবিন্দ পার্ক অনেকটা নেতাজীনগরের চেহারা নিয়ে নেয়, পুকুরগুলো আর নেই, বাঁশবাগানও নেই, নতুন নতুন লোক - এখন সকলকে চিনিও না - সেই লক্ষ্মীপিসী, বাপি, বুয়াইদের সঙ্গে যোগাযোগও আর নেই - ব্যস্ত হাউজিং এস্টেটের মতন অবস্থা যেখানে পাশের বাড়ির লোককেও অনেকে চেনে না - দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে কলকাতা হয়ে যায়, পিন কোড ৭০০০৯৩৷
বাসরাস্তাটা শুধু সেখানেই রয়ে গেছে৷
যখন ছোট ছিলাম, তখন সেটা কলকাতা ছিলো না, পূর্ব পুটিয়ারী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা৷ আবছা আবছা মনে পড়ে আশেপাশে নিজেদের বাড়িটা নিয়ে সাকুল্যে তিনটে বাড়ি - বাপিদের আর বুয়াইদের (এই দুজন আমার সেই বয়সের বন্ধু) - আর ধু ধু মাঠ, বাড়ি সামনে বাঁশবাগান, সেখানে সন্ধ্যে হলেই শেয়াল ডাকতো৷ সবচেয়ে কাছের বাসরাস্তা হেঁটে মিনিট কুড়ি৷ লোডশেডিং হলে একতলা বাড়িতে লন্ঠনের আলোয় বাবা, মা, ঠাকুমা, দিদি আর আমি বসে থাকতুম৷ প্রচুর পুকুর ছিলো, লক্ষ্মীপিসীরা একটু দূরে থাকতো, আমি দিনের বেলাটা প্রায়সই ওখানে থাকতুম, কারণ দাদু তখন পুরোপুরি বিছানায়, ঠাকুমা অসুস্থ, মা ঘর সামলে, দাদুকে সামলে আর আমাকে দেখে উঠতে পারতো না - লক্ষ্মীপিসী তাই আমাকে নিয়ে যেত৷ এই লক্ষ্মীপিসীই আমাকে সাঁতার শিখিয়েছিলো - তখন দু বছর বয়স মোটে ... আর যেদিন দাদু মারা গেলো, সেদিন আমাকে কোলে নিয়ে সাহাপাড়ার দিকে ঘুরতে চলে গিয়েছিলো, আমি বাড়ি ফিরে কেঁদেছিলাম - "দাদুকে কোথায় নিয়ে গেলো?"
সত্তরের দশকের অনেক গল্প শুনি - আবছা মনে আছে বাঁশবাগানের ওপারে দুম দুম আওয়াজ, আর একটু পরেই রক্ত মেখে এক জনের টলতে টলতে বাঁশবাগান থেকে বেরিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া৷ একদিন পুলিশ এসেছিলো বাড়িতে, সার্চ করতে - জবরদস্তি লফট থেকে প্যাকিংবাক্স নামিয়ে খুলে ফেলেছিলো, আর চড়াই পাখির বাসাগুলো ভেঙে সারা ঘরে ছড়িয়ে গেছিলো ... বাচ্চা চড়াইগুলোর চিঁচিঁ, আর বড়গুলোর সারা ঘরে উড়ে বেড়ানো ... পুলিশ অবিশ্যি ক্ষমা-টমা চেয়ে সেই ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে যায় ...
এখানেই চব্বিশ বছর - কুড়ি মিনিট হেঁটে বাসরাস্তায় পৌঁছে বাস ধরে ইস্কুলে যাওয়া, পরে সাইকেলে যাদবপুর ... বাড়ি একতলা থেকে দোতলা হয়, আশেপাশের সব মাঠ নতুন নতুন বাড়িতে ভর্তি হয়ে যায়, নিশ্চুপ নি:ঝুম অরবিন্দ পার্ক অনেকটা নেতাজীনগরের চেহারা নিয়ে নেয়, পুকুরগুলো আর নেই, বাঁশবাগানও নেই, নতুন নতুন লোক - এখন সকলকে চিনিও না - সেই লক্ষ্মীপিসী, বাপি, বুয়াইদের সঙ্গে যোগাযোগও আর নেই - ব্যস্ত হাউজিং এস্টেটের মতন অবস্থা যেখানে পাশের বাড়ির লোককেও অনেকে চেনে না - দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে কলকাতা হয়ে যায়, পিন কোড ৭০০০৯৩৷
বাসরাস্তাটা শুধু সেখানেই রয়ে গেছে৷
ওরে তোরা মানুষ হ
ছোটবেলায় দিদির মুখে একটা গান শুনতাম - দিদি তখন বি ই কলেজে পড়ে - "বার বার হেরে গিয়ে শিক্ষা হল না..." - সুরটা সেই হেমন্ত মুখার্জীর বিখ্যাত হিন্দি গান "বেকরার করকে হমে ইঁউ না যাইয়ে..." অনুকরণে - কলেজ প্যারডি - তখন বি ই কলেজে এস এফ আই জিততো, আর ছাত্র পরিষদ আবোল তাবোল বকতো। ক'দিন ধরে এই গানটা খুব মনে পড়ছে...পশ্চিমবঙ্গে ইলেকশনের সময় থেকেই।
আজ রেজাল্ট বেরলো, আশা অনুযায়ী বামফ্রন্টের বিরাট জয়...শুধু দেখার "তাঁরা" কি বলেন। "তাঁরা" মানে ওই যাঁরা এতদিন বলে আসতেন নানারকম রিগিং-এর কথা - ক্লাসিকাল রিগিং, বৈজ্ঞানিক রিগিং - আরো কত কিছু।
এবার কি "ই-রিগিং"? বা "ভার্চুয়াল রিগিং"? একটা বিখ্যাত কাগজ আছে যারা "ভগবান ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না"!!! সেখানে হয়তো এই তত্ত্বই দেওয়া হবে - এই যে এত ইনফরমেশন টেকনোলজি কলেজ হয়েছে, সব ছাত্র-ছাত্রীরা হল সিপিএম-এর ক্যাডার - ওরা ভাইরাস/ওয়ার্ম পাঠিয়ে সব ভোটিং মেশিনগুলোকে "রিগ" করেছে - বা ই-ভোট দিয়েছেঃ-) হয়তো এবার এঁরা বলবেন "রাষ্ট্রপতি শাসন নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের সিকিউরিটি কাউন্সিলে প্রস্তাব নিতে হবে, আর রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষক বাহিনী এনে ভোট করতে হবে" - নইলে এঁরা ওই লেভেলেই থেকে যাবেন, যেখানে আজ আছেন...
ওরে তোরা আগে মানুষ হ।
আজ রেজাল্ট বেরলো, আশা অনুযায়ী বামফ্রন্টের বিরাট জয়...শুধু দেখার "তাঁরা" কি বলেন। "তাঁরা" মানে ওই যাঁরা এতদিন বলে আসতেন নানারকম রিগিং-এর কথা - ক্লাসিকাল রিগিং, বৈজ্ঞানিক রিগিং - আরো কত কিছু।
এবার কি "ই-রিগিং"? বা "ভার্চুয়াল রিগিং"? একটা বিখ্যাত কাগজ আছে যারা "ভগবান ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না"!!! সেখানে হয়তো এই তত্ত্বই দেওয়া হবে - এই যে এত ইনফরমেশন টেকনোলজি কলেজ হয়েছে, সব ছাত্র-ছাত্রীরা হল সিপিএম-এর ক্যাডার - ওরা ভাইরাস/ওয়ার্ম পাঠিয়ে সব ভোটিং মেশিনগুলোকে "রিগ" করেছে - বা ই-ভোট দিয়েছেঃ-) হয়তো এবার এঁরা বলবেন "রাষ্ট্রপতি শাসন নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের সিকিউরিটি কাউন্সিলে প্রস্তাব নিতে হবে, আর রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষক বাহিনী এনে ভোট করতে হবে" - নইলে এঁরা ওই লেভেলেই থেকে যাবেন, যেখানে আজ আছেন...
ওরে তোরা আগে মানুষ হ।
Wednesday, May 10, 2006
ছাঁইপাঁশ
কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে, হাবিজাবি - যা খুশী - কিন্তু কিছু ভেবে পাচ্ছি নে। সকাল থেকে ডাইনোসরের ছানা সামলে ক্লান্ত...তায় সামনেই বিশ্বকাপ ফুটবল...এদিকে ইউনিভার্সিটিতে কন্ট্রাক্ট শেষ হচ্ছে জুনের ১৫ তারিখ, ভিসাও শেষ হবে ওইদিনই - বাড়বে কি না কিছুই জানি না। পল ওয়াটসন যদিও কনফিডেন্ট, আমি ঘরপোড়া গরু - শিওর হতে পারছি নে। নতুন কন্ট্রাক্ট না হলে কিছুই এসে যায় না - বাড়ি ফিরে যাবো - শুধু দুঃখ থাকবে যে এতদিন যে কষ্ট করলুম পিএইচডির জন্যে, সেটা ফালতু হয়ে যাবে, এখানে হবে না হয়তো - এক যদি না দেশ থেকে ওভারসীজ স্টুডেন্ট হিসেবে করতে দেয়। হাসি পায়, এর পরেও কিছু পাগল কত কিছুই বলেঃ-))
কানে একটা হেডফোন লাগিয়ে দেবব্রত বিশ্বাসের গান শুনছি - রবীন্দ্রসঙ্গীত। প্রায় ৫০০ গান পেয়েছি, আর মনের আনন্দে শুনছিঃ-)
সামনে কম্পিউটারে অ্যাক্সিস ২.০-এর টিউটরিয়াল খোলা - পড়ছি, কিন্তু বুঝছি নে। পল ওয়াটসন ভালো খবর না দিলে মন বসছে না আর...
কাল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোবে - মোটামুটি জানা কি হবে - শুধু দেখার ওই যাঁরা কইতেন কত কিছু - যাঁদের জন্যে নির্বাচন কমিশন কত্ত কিছু করলো - আবার একবার গোহারান হেরে তাঁরা কি বলেনঃ-))
কানে একটা হেডফোন লাগিয়ে দেবব্রত বিশ্বাসের গান শুনছি - রবীন্দ্রসঙ্গীত। প্রায় ৫০০ গান পেয়েছি, আর মনের আনন্দে শুনছিঃ-)
সামনে কম্পিউটারে অ্যাক্সিস ২.০-এর টিউটরিয়াল খোলা - পড়ছি, কিন্তু বুঝছি নে। পল ওয়াটসন ভালো খবর না দিলে মন বসছে না আর...
কাল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোবে - মোটামুটি জানা কি হবে - শুধু দেখার ওই যাঁরা কইতেন কত কিছু - যাঁদের জন্যে নির্বাচন কমিশন কত্ত কিছু করলো - আবার একবার গোহারান হেরে তাঁরা কি বলেনঃ-))
Tuesday, May 09, 2006
পঁচিশে বৈশাখ
আজ পঁচিশে বৈশাখ। আজ সন্ধ্যেবেলা পাড়ায় পাড়ায় হয়তো জলসা হবে, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন কিনা। হয়তো শুধুই রবীন্দ্রনাথের গান আর কবিতা দিয়েই সকলে শ্রদ্ধা জানাবে, হয়তো একেই বলে "গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো"...
সুকান্ত ভট্টাচার্যের একটা কবিতা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হয় আমার...
পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশ্যে
আমার প্রার্থনা শোন পঁচিশে বৈশাখ,
আর একবার তুমি জন্ম দাও রবীন্দ্রনাথের,
হতশায় স্তব্ধ বাক্য, ভাষা চাই আমরা নির্বাক
পাঠাব মৈত্রীর বাণী সারা পৃথিবীকে জানি ফের,
রবীন্দ্রনাথের কন্ঠে আমাদের ভাষা যাবে শোনা,
ভেঙে যাবে রুদ্ধশ্বাস সুদীর্ঘ মৌনতা,
আমাদের দুঃখেসুখে ব্যক্ত হবে প্রত্যেক রচনা,
পীড়নের প্রতিবাদে উচচারিত হবে সব কথা।
আমি দিব্যচক্ষে দেখি অনাগত সে রবীন্দ্রনাথ,
দস্যুতায় দৃপ্তকন্ঠ, বিগত দিনের
ধৈর্যের বাঁধন যাঁর ভাঙে দুঃশাসনের আঘাত,
যন্ত্রণায় রুদ্ধবাক, যে যন্ত্রণা সহায়হীনের।
বিগত দুর্ভিক্ষে যাঁর উত্তেজিত, তিক্ত তীব্র ভাষা,
মৃত্যুতে ব্যথিত আর লোভের বিরুদ্ধে খরধার,
ধ্বংসের প্রান্তরে বসে আনে দৃঢ় অনাহত আশা,
তাঁর জন্ম অনিবার্য, তাঁকে ফিরে পাবই আবার।
রবীন্দ্রনাথের সেই ভুলে যাওয়া বাণী
অকস্মাত করে কানাকানি,
দামামা ওই বাজে, দিন বদলের পালা
এলো ঝোড়ো যুগের মাঝে।
নিষ্কম্প গাছের পাতা, রুদ্ধশ্বাস, অগ্নিগর্ভ দিন,
বিস্ফারিত দৃষ্টি মেলে এ আকাশ, গতিরুদ্ধ বায়ু,
আবিশ্ব জিজ্ঞাসা এক চোখেমুখে ছড়ায় রঙীন,
সংশয়স্পন্দিত স্বপ্ন,
ভীত আশা উচ্চারণহীন,
মেলে না উত্তর কোন, সমস্যায় উত্তেজিত স্নায়ু।
ইতিহাস মোড় ফেরে, পদতলে বিধ্বস্ত বার্লিন,
পশ্চিম সীমান্তে শান্তি, দীর্ঘ হয় পৃথিবীর আয়ু,
দিকে দিকে জয়ধ্বনি, কাঁপে দিন রক্তাক্ত আভায়,
রাম রাবণের যুদ্ধে বিক্ষত এ ভারত জটায়ু,
মৃতপ্রায়, যুদ্ধাহত, পীড়নে দুর্ভিক্ষে মৌনমুখ।
পূর্বাঞ্চল দৃপ্ত করে বিশ্বজনসমৃদ্ধ সভায়
রবীন্দ্রনাথের বাণী তার দাবি ঘোষণা করুক,
এবারে নতুন রূপে দেখা দিক রবীন্দ্রঠাকুর,
বিপ্লবের স্বপ্ন চোখ, কন্ঠে গণসঙ্গীতের সুর,
জনতার পাশে পাশে উজ্জ্বল পতাকা নিয়ে হাতে
চলুক নিন্দাকে ঠেলে গ্লানি মুছে আঘাতে আঘাতে।
যদিও সে অনাগত, তবু যেন শুনি তার ডাক,
আমাদেরই মাঝে তাকে জন্ম দাও,
পঁচিশে বৈশাখ।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের একটা কবিতা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হয় আমার...
পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশ্যে
আমার প্রার্থনা শোন পঁচিশে বৈশাখ,
আর একবার তুমি জন্ম দাও রবীন্দ্রনাথের,
হতশায় স্তব্ধ বাক্য, ভাষা চাই আমরা নির্বাক
পাঠাব মৈত্রীর বাণী সারা পৃথিবীকে জানি ফের,
রবীন্দ্রনাথের কন্ঠে আমাদের ভাষা যাবে শোনা,
ভেঙে যাবে রুদ্ধশ্বাস সুদীর্ঘ মৌনতা,
আমাদের দুঃখেসুখে ব্যক্ত হবে প্রত্যেক রচনা,
পীড়নের প্রতিবাদে উচচারিত হবে সব কথা।
আমি দিব্যচক্ষে দেখি অনাগত সে রবীন্দ্রনাথ,
দস্যুতায় দৃপ্তকন্ঠ, বিগত দিনের
ধৈর্যের বাঁধন যাঁর ভাঙে দুঃশাসনের আঘাত,
যন্ত্রণায় রুদ্ধবাক, যে যন্ত্রণা সহায়হীনের।
বিগত দুর্ভিক্ষে যাঁর উত্তেজিত, তিক্ত তীব্র ভাষা,
মৃত্যুতে ব্যথিত আর লোভের বিরুদ্ধে খরধার,
ধ্বংসের প্রান্তরে বসে আনে দৃঢ় অনাহত আশা,
তাঁর জন্ম অনিবার্য, তাঁকে ফিরে পাবই আবার।
রবীন্দ্রনাথের সেই ভুলে যাওয়া বাণী
অকস্মাত করে কানাকানি,
দামামা ওই বাজে, দিন বদলের পালা
এলো ঝোড়ো যুগের মাঝে।
নিষ্কম্প গাছের পাতা, রুদ্ধশ্বাস, অগ্নিগর্ভ দিন,
বিস্ফারিত দৃষ্টি মেলে এ আকাশ, গতিরুদ্ধ বায়ু,
আবিশ্ব জিজ্ঞাসা এক চোখেমুখে ছড়ায় রঙীন,
সংশয়স্পন্দিত স্বপ্ন,
ভীত আশা উচ্চারণহীন,
মেলে না উত্তর কোন, সমস্যায় উত্তেজিত স্নায়ু।
ইতিহাস মোড় ফেরে, পদতলে বিধ্বস্ত বার্লিন,
পশ্চিম সীমান্তে শান্তি, দীর্ঘ হয় পৃথিবীর আয়ু,
দিকে দিকে জয়ধ্বনি, কাঁপে দিন রক্তাক্ত আভায়,
রাম রাবণের যুদ্ধে বিক্ষত এ ভারত জটায়ু,
মৃতপ্রায়, যুদ্ধাহত, পীড়নে দুর্ভিক্ষে মৌনমুখ।
পূর্বাঞ্চল দৃপ্ত করে বিশ্বজনসমৃদ্ধ সভায়
রবীন্দ্রনাথের বাণী তার দাবি ঘোষণা করুক,
এবারে নতুন রূপে দেখা দিক রবীন্দ্রঠাকুর,
বিপ্লবের স্বপ্ন চোখ, কন্ঠে গণসঙ্গীতের সুর,
জনতার পাশে পাশে উজ্জ্বল পতাকা নিয়ে হাতে
চলুক নিন্দাকে ঠেলে গ্লানি মুছে আঘাতে আঘাতে।
যদিও সে অনাগত, তবু যেন শুনি তার ডাক,
আমাদেরই মাঝে তাকে জন্ম দাও,
পঁচিশে বৈশাখ।