ফলিং ইন লাভ (উইথ Delhi)
===============
মন্টু সিং - মন্টুদা - ওরফে মনোজ চ্যাটার্জী।
কস্মিনকালেও সর্দারজী নয়, নেহাতই আলাভোলা বাঙালী। একসময় হোটেলে চাকরি করতেন। একটা অ্যাকসিডেন্টে পা অকেজো হয়ে যাওয়ার পর নিজের বাড়িতেই হোটেল খুলেছেন, এই আমার মতন যাযাবরদের জায়গা দেওয়ার জন্যে। বাড়িতে মন্টুদা, বউদি, প্রাক্তন মিলিটারি ডাক্তার জ্যেঠু, বউদির এক বোন (মানে মন্টুদার শালী) আর মন্টুদার পুঁচকে ছেলে - সে এক যন্তর। রাঁধুনী প্রকাশজী - এর কথাও বলবো সময় হলে।
তো এই মন্টুদার বাড়িতে ছুটির দিনে দুবেলা আর অফিসের দিনে একবেলা পেটচুক্তির খাওয়া আর ঘরের কড়ারে থাকা। খরচ প্রথমে যতদিন একলা ঘরে ছিলাম ততদিন মাস মাইনের প্রায় অর্ধেক পড়ে যেত। পরে অন্য বড় ঘরগুলোর একজন "অনসাইট" চলে যাওয়ায় সেই ঘরে ঢুকে গেলাম, খরচও কমলো। মাছের ঝোলে মাছটা খুঁজে বের করতে হত, তরকারির মধ্যে প্রায়ই ঢ্যাঁড়স - তাতে কী? বসু লজের চেয়ে একশো গুণে ভালো। আর রাজিন্দার নগরের পিছনেই পুসা রোড পেরোলে আফজল খাঁ আর গফ্ফর খাঁ মার্কেট - কখনো ইচ্ছে হলে সেদিকে চলে গেলেই গরমাগরম তাওয়া চিকেন আর রুমালি - সেই তাওয়া চিকেনের কথা ভাবতে ভাবতে এখনই জিভে জল চলে এলো। আবার নিউ রাজিন্দার নগরের দিকে হেঁটে গেলে শঙ্কর রোডের ওপর সিনধ্ সুইট্স - সেখানে মট্কেওয়ালে লস্যি খেলে আর ডিনারের দরকার হয় না - একটা পেল্লায় সাইজের এক কিলোর হাঁড়ির মুখটা মালাই দিয়ে ঢাকা, আর ভিতরে দুরন্ত স্বাদের লস্যি। অত বড় হাঁড়ি ওভারডোজ হয়ে যাবে? গ্লাসে খান। অবশ্য সাইজে সেও কম নয় - পেল্লায় গ্লাস, তাতে লস্যি ঢেলে তার ওপর চামচ দিয়ে ছেঁকে তোলা মালাই। আফজল খাঁ মার্কেটে ঢোকার মুখে বাংলা সুইট্স - বাঙালীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই অবশ্য - ওই নামটাই যা। সেখানে রাবড়ি - মানে বাংলা ক্ষীর। সেখানেই শিখলাম যে ক্ষীর মানে পায়েস, আর দিল্লীর রাবড়ি মানে দুধে চোবানো ব্লটিং পেপার নয়, খাঁটি মাখোমাখো ক্ষীর, ভিতরে পেস্তা-বাদাম-ইলায়েচি। প্লেন দুধ চাইলে তাও পাবেন - রাস্তার ওপর কড়াইতে ঢেলে কনস্ট্যান্ট জ্বাল দিচ্ছে - চাইলেই আবার সেই পেল্লায় গ্লাসে ঢেলে দেয়, মিশিয়ে দেয় পেস্তা-বাদাম আর ওপরে এক ইঞ্চি পুরু সর - রোগাভোগা বাঙালীর জন্যে সেও প্রায় ডিনারের সামিল। শঙ্কর রোড ধরে পূবদিকপানে হেঁটে যান, আধ ঘন্টায় পৌঁছবেন গোলমার্কেট - সেখানে রয়েছে ছোটখাটো বেঙ্গল সুইট হোম - খাস বাঙালী মিষ্টির দোকান। প্রথমদিকে ক্যালকাটা টী ক্যাবিনও খুঁজেছিলাম, পাইনি। জটাধর বক্সীর সাথে দেখাও হয়নি।
ওদিকে শঙ্কর রোডের ওপর সারি সারি তন্দুরি/কাবাবের দোকান - মশলামাখানো আস্ত আস্ত মুরগী শিকে গেঁথে ঝুলিয়ে রেখেছে - সর্দারজীরা গাড়ি থেকে নামছে আর কিনছে। পার্থ সেই ছালছাড়ানো-নুনমাখানো মুর্গীর চেহারা দেখে নাম দিলো "ন্যাংটো মুর্গী"। বড় খানদানি রেস্তোরাঁ চাইলে চলে যান কনট প্লেস - সেখানে আছে স্ট্যান্ডার্ড বা গেলর্ডের মত ভারতীয় কাম কন্টিনেন্টাল খাবারের জায়গা, আবার মহারাণীর মতন খাস মোগলাই খানার জায়গা। করোলবাগের দিকে কোথাও ছিলো নিরুলাজ - তখনও পিজ্জা হাট ভারতে আসেনি - প্রথম পিজ্জা, এবং সেই স্বাদ পিজ্জা হাটের কোনো পিজ্জায় নেই - hot shoppe pizza খেলাম এই নিরুলাজ-এ। সাথে banana-split আইসক্রীম।
প্রকাশজীর রান্নায় বোর হয়ে গেলে এই সবই ছিলো আমাদের টাইমপাস্। তখনও পুরনো দিল্লী যাইনি। আসল মোগলাই রানার সঙ্গে পরিচয় হতে তখনো কিছুদিন বাকি।
কিন্তু তখনই দিল্লী মনের মধ্যে ঢুকতে শুরু করেছে - পেটের ভিতর দিয়ে;-)
===============
মন্টু সিং - মন্টুদা - ওরফে মনোজ চ্যাটার্জী।
কস্মিনকালেও সর্দারজী নয়, নেহাতই আলাভোলা বাঙালী। একসময় হোটেলে চাকরি করতেন। একটা অ্যাকসিডেন্টে পা অকেজো হয়ে যাওয়ার পর নিজের বাড়িতেই হোটেল খুলেছেন, এই আমার মতন যাযাবরদের জায়গা দেওয়ার জন্যে। বাড়িতে মন্টুদা, বউদি, প্রাক্তন মিলিটারি ডাক্তার জ্যেঠু, বউদির এক বোন (মানে মন্টুদার শালী) আর মন্টুদার পুঁচকে ছেলে - সে এক যন্তর। রাঁধুনী প্রকাশজী - এর কথাও বলবো সময় হলে।
তো এই মন্টুদার বাড়িতে ছুটির দিনে দুবেলা আর অফিসের দিনে একবেলা পেটচুক্তির খাওয়া আর ঘরের কড়ারে থাকা। খরচ প্রথমে যতদিন একলা ঘরে ছিলাম ততদিন মাস মাইনের প্রায় অর্ধেক পড়ে যেত। পরে অন্য বড় ঘরগুলোর একজন "অনসাইট" চলে যাওয়ায় সেই ঘরে ঢুকে গেলাম, খরচও কমলো। মাছের ঝোলে মাছটা খুঁজে বের করতে হত, তরকারির মধ্যে প্রায়ই ঢ্যাঁড়স - তাতে কী? বসু লজের চেয়ে একশো গুণে ভালো। আর রাজিন্দার নগরের পিছনেই পুসা রোড পেরোলে আফজল খাঁ আর গফ্ফর খাঁ মার্কেট - কখনো ইচ্ছে হলে সেদিকে চলে গেলেই গরমাগরম তাওয়া চিকেন আর রুমালি - সেই তাওয়া চিকেনের কথা ভাবতে ভাবতে এখনই জিভে জল চলে এলো। আবার নিউ রাজিন্দার নগরের দিকে হেঁটে গেলে শঙ্কর রোডের ওপর সিনধ্ সুইট্স - সেখানে মট্কেওয়ালে লস্যি খেলে আর ডিনারের দরকার হয় না - একটা পেল্লায় সাইজের এক কিলোর হাঁড়ির মুখটা মালাই দিয়ে ঢাকা, আর ভিতরে দুরন্ত স্বাদের লস্যি। অত বড় হাঁড়ি ওভারডোজ হয়ে যাবে? গ্লাসে খান। অবশ্য সাইজে সেও কম নয় - পেল্লায় গ্লাস, তাতে লস্যি ঢেলে তার ওপর চামচ দিয়ে ছেঁকে তোলা মালাই। আফজল খাঁ মার্কেটে ঢোকার মুখে বাংলা সুইট্স - বাঙালীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই অবশ্য - ওই নামটাই যা। সেখানে রাবড়ি - মানে বাংলা ক্ষীর। সেখানেই শিখলাম যে ক্ষীর মানে পায়েস, আর দিল্লীর রাবড়ি মানে দুধে চোবানো ব্লটিং পেপার নয়, খাঁটি মাখোমাখো ক্ষীর, ভিতরে পেস্তা-বাদাম-ইলায়েচি। প্লেন দুধ চাইলে তাও পাবেন - রাস্তার ওপর কড়াইতে ঢেলে কনস্ট্যান্ট জ্বাল দিচ্ছে - চাইলেই আবার সেই পেল্লায় গ্লাসে ঢেলে দেয়, মিশিয়ে দেয় পেস্তা-বাদাম আর ওপরে এক ইঞ্চি পুরু সর - রোগাভোগা বাঙালীর জন্যে সেও প্রায় ডিনারের সামিল। শঙ্কর রোড ধরে পূবদিকপানে হেঁটে যান, আধ ঘন্টায় পৌঁছবেন গোলমার্কেট - সেখানে রয়েছে ছোটখাটো বেঙ্গল সুইট হোম - খাস বাঙালী মিষ্টির দোকান। প্রথমদিকে ক্যালকাটা টী ক্যাবিনও খুঁজেছিলাম, পাইনি। জটাধর বক্সীর সাথে দেখাও হয়নি।
ওদিকে শঙ্কর রোডের ওপর সারি সারি তন্দুরি/কাবাবের দোকান - মশলামাখানো আস্ত আস্ত মুরগী শিকে গেঁথে ঝুলিয়ে রেখেছে - সর্দারজীরা গাড়ি থেকে নামছে আর কিনছে। পার্থ সেই ছালছাড়ানো-নুনমাখানো মুর্গীর চেহারা দেখে নাম দিলো "ন্যাংটো মুর্গী"। বড় খানদানি রেস্তোরাঁ চাইলে চলে যান কনট প্লেস - সেখানে আছে স্ট্যান্ডার্ড বা গেলর্ডের মত ভারতীয় কাম কন্টিনেন্টাল খাবারের জায়গা, আবার মহারাণীর মতন খাস মোগলাই খানার জায়গা। করোলবাগের দিকে কোথাও ছিলো নিরুলাজ - তখনও পিজ্জা হাট ভারতে আসেনি - প্রথম পিজ্জা, এবং সেই স্বাদ পিজ্জা হাটের কোনো পিজ্জায় নেই - hot shoppe pizza খেলাম এই নিরুলাজ-এ। সাথে banana-split আইসক্রীম।
প্রকাশজীর রান্নায় বোর হয়ে গেলে এই সবই ছিলো আমাদের টাইমপাস্। তখনও পুরনো দিল্লী যাইনি। আসল মোগলাই রানার সঙ্গে পরিচয় হতে তখনো কিছুদিন বাকি।
কিন্তু তখনই দিল্লী মনের মধ্যে ঢুকতে শুরু করেছে - পেটের ভিতর দিয়ে;-)
No comments:
Post a Comment