দিল্লী।
যুদ্ধ-রক্ত-প্রতিহিংসা-প্রেম-যৌনতা-বিলাস থেকে ট্র্যাজেডির শহর দিল্লী।
দিল্লীর সঙ্গে আমার পরিচয় চাকরিসুত্রে, সাতানব্বইয়ের সেপ্টেম্বরে। যে
দিল্লী আমার গায়ে কাঁটা দেওয়ায়, সেই দিল্লী আমি প্রথম দেখেছি অন্যের চোখ
দিয়ে। নিজে যখন থেকেছি, তখন নিজের চোখে সেই দিল্লীকে খোঁজার চেষ্টা করেছি -
দিল্লীর পথে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাসের মধ্যে। তবে সেও কিছুদিন পরে।
থাকার ব্যবস্থা করতেই বেশ হয়রানি গেছিলো। বড়মামার পরিচিতিতে প্রথম গিয়ে উঠলাম অশোক রোডে সি আই টি ইউ-এর একটা আপিসে - অসংখ্য বড় বড় বাংলোর মধ্যে কোনো একটা বাংলোর আউটহাউজ সেটা। একখানা ঘর, সেখানে এক সর্দারজী এবং আরেক ভদ্রলোক থাকেন - নিজেরাই রান্না করে খান। ঘরময় ছড়ানো পোস্টার, রঙ তুলি। "আপহি উদয়ভাইয়াকে ভাঞ্জে হো" বলে সর্দারজী তো হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন - যতদিন খুশি ওখানে থাকতে পারি এই বলে। কিন্তু ওই দুই কমরেডের থাকার অবস্থা দেখে ওঁদের ওপর আরেকটা বোঝা হতে ইচ্ছে করলো না। গেলাম সেই মায়ের ছোটকাকার অমুকের তমুকের ফোন নাম্বারে ফোন করে জনকপুরীতে এক হোটেলে - তিনি ওখানে কথা বলে রেখেছেন। উরিবাবা, গিয়ে দেখি একটা ঘরে খান আষ্টেক বিছানা, সেগুলোর ওপর দিয়েই ঘরে চলাফেরা করতে হয় - কারণ খাটগুলোর পাশে খালি জায়গা বলতে আর কিছু নেই। ওখান থেকে কেটে পড়াই শ্রেয় মনে হল। খুঁজতে খুঁজতে গেলাম এমপি হোস্টেলে - সেই ট্রেনে একসাথে আসা দুই বন্ধুর একজন সেখানেই উঠেছে। সেখানে খোঁজ পাওয়া গেল বসু লজ-এর, সেটার আবার নাম আগে থেকেই শোনা, কাজেই ভরসা পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখলাম মোটামুটি থাকতে পারার মত ঘর - যদিও আরো তিনটে খাট আছে, তবুও হাঁটা চলার জায়গা রয়েছে।
সারাদিন এদিক ওদিক আস্তানা খোঁজার চেষ্টায় ঘুরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো রাত্তির বারোটা নাগাদ হঠাৎ - চোখে আলো পড়ছে, কানের পাশে বকরবকর। দেখি আমার খাটের একপাশে আমি শুয়ে আছি, অন্য পাশে অন্য লোকজন বসে, পাশের খাটেও জনা তিনেক, সামনে টেবিলে বোতল খোলা - মজলিশ চলছে, আর তার সাথে পরের দিনের কাগজে টাইম্স অব ইন্ডিয়ার কোন খবরগুলো কপি মারা যায় সেই আলোচনা। আমাকে উঠে বসতে দেখে এক "স্টাফ-রিপোর্টার" বল্লেন - আ-আপনার অ-অশুবিধা হশ্শে না তো ডাডা? শালা! মাঝরাত্তিরে আমার বিছানায় বসে ক্যাচরম্যাচর করে আমার ঘুম ভাঙিয়ে আমাকেই জিগ্গেস করছে অসুবিধা হচ্ছে কিনা!!! ওদিকে সংখ্যালঘু আমি আর অসুবিধার কথা মুখ ফুটে বলি কী করে...কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঘন্টা দুই বারান্দায় বসে মশার কামড় খেলুম আর সাংবাদিকদের চৌদ্দ গুষ্টির উদ্ধার করতে করতে সিগারেট ফুঁকলুম। তাঁরা নিজের নিজের কপি শেষ করে শোওয়ার উয্যুগ করার সময় আমিও গুটিগুটি গিয়ে শুয়ে পড়লুম, উইথ আ ডিটারমিনেশন - যে পরের দিন অন্য ব্যবস্থা করতেই হবে।
পরের দিন অফিসে জয়েন করার দিন। গোলমার্কেট থেকে যেতে হবে আইটিও। গিয়ে দেখি যাদবপুরের মাস্টার্স ক্লাসের আরো জনা চারেক হাজির। এবং তারা বেশ খুশি খুশি - মানে রাতে ভালোই ঘুমিয়েছে। জিগ্গেস করাতে বললো রাজিন্দার নগরে (তখনো জানি না সেটা কোন মুলুকে) দিব্যি ভালো জায়গায় পেয়িং গেস্ট হয়ে উঠেছে ওরা। ঝামেলা ঝঞ্ঝাট কিছুই নেই। সেদিন জয়েনিং ফর্মালিটির পর বাসে করে গুরগাঁও নিয়ে গেল - সেখানে পরের তিন মাস ট্রেনিং হবে। ট্রেনিং সেন্টারটা দেখি শিবপুর বা যাদবপুরের ল্যাবের চেয়েও ওঁচা। আর ট্রেনিং-এর নমুনার কথা নাই বা বললাম। এই গোয়ালে যারা ঢুকেছে বা নাম শুনেছে তারা ওই ট্রেনিং-এর "মূল্য" হাড়ে হাড়ে বোঝে। সে যাক - সেসব সুখদুঃখের কথা পরে আবার আসবে। সেদিন ট্রেনিং সেন্টারের ক্যান্টীনের সাথেও পরিচয় হল - মানে ঘাসের ঘ্যাঁটের মধ্যে কাঁচা পনীর ঢাললে যে পালক-পনীর হয় সেটাও শিখলাম।
ফিরলাম যাদবপুরের বন্ধুদের সাথে - সেই রাজিন্দর নগরে যে বাড়িতে ওরা উঠেছে সেখানে। একটা ঘর পাওয়া গেলো - তখনকার মত ওটাই স্বর্গ হাতে পাওয়ার সমান। তড়িঘড়ি বসু লজ থেকে শিফ্ট হলাম ওল্ড রাজিন্দর নগরে।
মন্টু সিং-এর বাড়ি, পরের বছর দেড়েকের ঠিকানা।
থাকার ব্যবস্থা করতেই বেশ হয়রানি গেছিলো। বড়মামার পরিচিতিতে প্রথম গিয়ে উঠলাম অশোক রোডে সি আই টি ইউ-এর একটা আপিসে - অসংখ্য বড় বড় বাংলোর মধ্যে কোনো একটা বাংলোর আউটহাউজ সেটা। একখানা ঘর, সেখানে এক সর্দারজী এবং আরেক ভদ্রলোক থাকেন - নিজেরাই রান্না করে খান। ঘরময় ছড়ানো পোস্টার, রঙ তুলি। "আপহি উদয়ভাইয়াকে ভাঞ্জে হো" বলে সর্দারজী তো হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন - যতদিন খুশি ওখানে থাকতে পারি এই বলে। কিন্তু ওই দুই কমরেডের থাকার অবস্থা দেখে ওঁদের ওপর আরেকটা বোঝা হতে ইচ্ছে করলো না। গেলাম সেই মায়ের ছোটকাকার অমুকের তমুকের ফোন নাম্বারে ফোন করে জনকপুরীতে এক হোটেলে - তিনি ওখানে কথা বলে রেখেছেন। উরিবাবা, গিয়ে দেখি একটা ঘরে খান আষ্টেক বিছানা, সেগুলোর ওপর দিয়েই ঘরে চলাফেরা করতে হয় - কারণ খাটগুলোর পাশে খালি জায়গা বলতে আর কিছু নেই। ওখান থেকে কেটে পড়াই শ্রেয় মনে হল। খুঁজতে খুঁজতে গেলাম এমপি হোস্টেলে - সেই ট্রেনে একসাথে আসা দুই বন্ধুর একজন সেখানেই উঠেছে। সেখানে খোঁজ পাওয়া গেল বসু লজ-এর, সেটার আবার নাম আগে থেকেই শোনা, কাজেই ভরসা পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখলাম মোটামুটি থাকতে পারার মত ঘর - যদিও আরো তিনটে খাট আছে, তবুও হাঁটা চলার জায়গা রয়েছে।
সারাদিন এদিক ওদিক আস্তানা খোঁজার চেষ্টায় ঘুরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো রাত্তির বারোটা নাগাদ হঠাৎ - চোখে আলো পড়ছে, কানের পাশে বকরবকর। দেখি আমার খাটের একপাশে আমি শুয়ে আছি, অন্য পাশে অন্য লোকজন বসে, পাশের খাটেও জনা তিনেক, সামনে টেবিলে বোতল খোলা - মজলিশ চলছে, আর তার সাথে পরের দিনের কাগজে টাইম্স অব ইন্ডিয়ার কোন খবরগুলো কপি মারা যায় সেই আলোচনা। আমাকে উঠে বসতে দেখে এক "স্টাফ-রিপোর্টার" বল্লেন - আ-আপনার অ-অশুবিধা হশ্শে না তো ডাডা? শালা! মাঝরাত্তিরে আমার বিছানায় বসে ক্যাচরম্যাচর করে আমার ঘুম ভাঙিয়ে আমাকেই জিগ্গেস করছে অসুবিধা হচ্ছে কিনা!!! ওদিকে সংখ্যালঘু আমি আর অসুবিধার কথা মুখ ফুটে বলি কী করে...কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঘন্টা দুই বারান্দায় বসে মশার কামড় খেলুম আর সাংবাদিকদের চৌদ্দ গুষ্টির উদ্ধার করতে করতে সিগারেট ফুঁকলুম। তাঁরা নিজের নিজের কপি শেষ করে শোওয়ার উয্যুগ করার সময় আমিও গুটিগুটি গিয়ে শুয়ে পড়লুম, উইথ আ ডিটারমিনেশন - যে পরের দিন অন্য ব্যবস্থা করতেই হবে।
পরের দিন অফিসে জয়েন করার দিন। গোলমার্কেট থেকে যেতে হবে আইটিও। গিয়ে দেখি যাদবপুরের মাস্টার্স ক্লাসের আরো জনা চারেক হাজির। এবং তারা বেশ খুশি খুশি - মানে রাতে ভালোই ঘুমিয়েছে। জিগ্গেস করাতে বললো রাজিন্দার নগরে (তখনো জানি না সেটা কোন মুলুকে) দিব্যি ভালো জায়গায় পেয়িং গেস্ট হয়ে উঠেছে ওরা। ঝামেলা ঝঞ্ঝাট কিছুই নেই। সেদিন জয়েনিং ফর্মালিটির পর বাসে করে গুরগাঁও নিয়ে গেল - সেখানে পরের তিন মাস ট্রেনিং হবে। ট্রেনিং সেন্টারটা দেখি শিবপুর বা যাদবপুরের ল্যাবের চেয়েও ওঁচা। আর ট্রেনিং-এর নমুনার কথা নাই বা বললাম। এই গোয়ালে যারা ঢুকেছে বা নাম শুনেছে তারা ওই ট্রেনিং-এর "মূল্য" হাড়ে হাড়ে বোঝে। সে যাক - সেসব সুখদুঃখের কথা পরে আবার আসবে। সেদিন ট্রেনিং সেন্টারের ক্যান্টীনের সাথেও পরিচয় হল - মানে ঘাসের ঘ্যাঁটের মধ্যে কাঁচা পনীর ঢাললে যে পালক-পনীর হয় সেটাও শিখলাম।
ফিরলাম যাদবপুরের বন্ধুদের সাথে - সেই রাজিন্দর নগরে যে বাড়িতে ওরা উঠেছে সেখানে। একটা ঘর পাওয়া গেলো - তখনকার মত ওটাই স্বর্গ হাতে পাওয়ার সমান। তড়িঘড়ি বসু লজ থেকে শিফ্ট হলাম ওল্ড রাজিন্দর নগরে।
মন্টু সিং-এর বাড়ি, পরের বছর দেড়েকের ঠিকানা।
No comments:
Post a Comment