Friday, January 26, 2007

দুই মেরুর গপ্পো

(১)

পৃথিবীর দুই মেরু

উত্তর এবং দক্ষিণ নয়, পৃথিবীর দুই মেরু আজ অন্য দুটি জায়গায়...

- সুইস আল্পসের মধ্যে দৃষ্টিসুখজাগানো শৈলনিবাস দাভোস, আর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি...

- দাভোসে অসংখ্য ফ্ল্যাশবাল্বের আলোয় উজ্জ্বল বিশ্ববাণিজ্যের রথী-মহারথীরা, হলিউডের মহাতারকারা, ফাইভ স্টার হোটেলের কনফারেন্স স্যুটে ঘন ঘন বৈঠকে ব্যস্ত, ব্যস্ততার ফাঁকে ছয় কোর্সের লাঞ্চ-ডিনার...অন্যদিকে নাইরোবিতে আশি হাজার লোকের মুঠো করা হাত, রাস্তার ধারে ধারে জমায়েত, মিছিল, আর যে দেশে মানুষের গড় দৈনিক আয় দুই ডলারের কম, সেই দেশে সাত ডলারে খাবার বিক্রি করতে চাওয়া ফাইভ স্টার হোটেলের খাবার তাঁবুতে ক্ষুধার্ত শিশুদের হানা...

- দাভোসে বড় কোম্পানির অ্যাটেন্ডেন্স ফী ১৮,০০০ সুইস ফ্রাঁ, বা প্রায় সাড়ে সাত হাজার পাউন্ড, অন্যদিকে জনতার দাবিতে নাইরোবিতে সাত ডলারের এন্ট্রী ফী বাতিল...

- রোজকার খবরে হেডলাইনে আসে দাভোসে কি আলোচনা করলেন বিশ্ববাণিজ্যের কুরুপাণ্ডবের দল, অন্যদিকে নাইরোবির কথা কষ্ট করে খুঁজতে হয়...

- দাভোসে বিশ্ববাণিজ্য এবং অর্থনীতির কূটতর্কে মশগুল ওঁরা, নাইরোবিতে দেখি সেই কূটতর্কের ফসল - হয়তো৷

প্রতি বছর জানুয়ারীর শেষাশেষি নামীদামী কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা, শক্তিধর রাষ্ট্রের হর্তাকর্তারা আর হলিউডি মহাতারকারা - মানে যাঁদের নিয়ে তৈরী বিশ্ব-অর্থনীতির দুধের গেলাসের মালাইয়ের স্তর, জমায়েত হন দাভোসে - ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে৷ প্রায় ওই একই সময়ে, পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে জমায়েত হন জনপিছু গড়ে দুই ডলার দৈনিক আয় করা অন্ধকার দেশের মানুষের দল - ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরামের সম্মেলনে - দাভোসের দুধ-মালাই হয়তো এদের ঘর থেকেই লুঠ করা...

দাভোসে এই বছরের থীম "The Shifting Power Equation" - ওঁরা আলোচনা করছেন পরিবেশদূষন এবং জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে, মধ্য প্রাচ্য এবং কোরিয়ার টেনশন নিয়ে, দুনিয়াজোড়া চাকরির বাজারের ইনসিকিউরিটি নিয়ে, চীন এবং ভারতের উত্থান নিয়ে...দুর্জনে প্রশ্ন করে "এত শক্তিশালী লোকেরা এক জায়গায় এসে বাকি দুনিয়াকে ভাগ বাঁটোয়ারার চেষ্টা করবেন নাতো?" উত্তর আসে - "না না, সেকি, ছি:৷ ওসব বলতে নেই৷ দেখুন না, এখানে কি শুধু বিল গেটস বা জর্জ বুশ আসেন? এখানে তো গরীব দেশ থেকেও কত সোশ্যাল entrepreneur, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরা আসেন৷ তাঁদের কাছে এ কত বড় সুযোগ রাজামহারাজাদের সামনে নিজেদের বক্তব্য বয়ান করার৷"

হ্যাঁ, ভিক্ষে চাওয়ার - কে যেন সেই গেয়েছিলেন - "নুইয়ে মাথা চাইছ প্রসাদ, দেখছ ঘুঘু দেখছ না ফাঁদ..."

(২)

চোখ ঢেকে যায় অবসেশনে

আমরা এক অবসেসড জাতি - আমরা অবসেশনে ভুগি আমাদের "তথাকথিত" উজ্জ্বল মুখটাকে দুনিয়ার সামনে হাজির করার জন্যে - আয়নার দিকে না তাকিয়ে, আমরা অবসেশনে ভুগি এই কুরুপাণ্ডবের দলে ভিড়ে যাবার জন্যে, আমরা অবসেশনে ভুগি নিজেদেরকে এই সফল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের মধ্যে দেখার জন্যে৷ আমাদের সবচেয়ে পছন্দের সাংস্কৃতিক নেশা "দেশের মুখ" হওয়ার চেষ্টা - বিগ ব্রাদার হাউজে এসে শিল্পা শেঠিও যে দাবিটি রেখেছিলেন৷

"Meanwhile, India's favourite cultural pastime is "representing the nation", the very task Shilpa announced for herself as she entered the BB compound. As India anxiously finds its place within the community of big global players and tries to reconcile its economic successes with the glaring (and often deepening) inequalities that still mar its social landscape and self-image, it is increasingly obsessed with disseminating the myth of the nation as fundamentally middle-class, professional and successful. The task has partly fallen on the feminine shoulders of India's flourishing glamour industry.

This anxiety to belong to the global community of the economically successful explains Shilpa's repeated protests that she is not from the "slums" and did not grow up on the "roadside". For all her disagreements with Jade, they seem to agree that economic disenfranchisement is a personal failure. Shilpa understands her task clearly: to show the world that India is really about beauty and entrepreneurial success, not slums and poverty. Losing neither time nor opportunity, India Tourism brought out a full-page ad last week in the form of an open letter to Jade inviting her to experience its "modern thriving culture", "bustling cosmopolitan cities and quiet countryside", and "healing spas".

[Anti-racism has to go beyond a facile representation game - Priyamvada Gopal, The Guardian, 25th january, 2007]''


দাভোসেও আমাদের এই অবসেশন - দাভোসে বিশ্ব-অর্থনীতির হর্তাকর্তারা যখন আলোচনা করেন চীন আর ভারত নিয়ে, যখন ভবিষ্যতবাণী করেন যে এই শতাব্দীতে ভারত বিশ্ব-অর্থনীতির শিখরে চড়বে, তখন অবসেসড আমরা নিজেদের পিঠ চাপড়াই - দিনের পর দিন ঘটে চলা মণিপুর, আমলাশোল, বিদর্ভ বা গুজরাট সত্ত্বেও৷ অবসেশনে ভোগা আমরা উন্নয়নের একমাত্র মুখ হিসেবে দেখতে থাকি আগাছার মতন গজিয়ে ওঠা বহুতল আর শপিং মলগুলোকে, বা সিঙ্গুরের মোটরগাড়ির কারখানাকে...অবসেসড আমাদের চোখে শুধু দাভোস জেগে থাকে, নাইরোবি ঝাপসা হয়ে যায়...

(৩)

স্লোগান দিতে গিয়ে

নাইরোবি শহরের সীমানার ঠিক মুখটাতে Kasarani স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে অল্পবয়সী স্প্যানিশ মেয়ের দল গালগল্পে ব্যস্ত ভিক্টোরিয়া লেকের কিছু জেলের সাথে...কানাডা থেকে আগত একটি মেয়ের ক্লান্তিভরা স্বীকারোক্তি - বেশ কয়েকদিন সে ঘুমোয়নি - কিন্তু দেওয়ালে লাগানো "Express yourself, Inspire change" স্লোগানটা তাকে জেগে থাকার প্রেরণা দেয়...

নাইরোবিতে আজ স্লোগান ওঠে "Another world is possible" - সামাজিক ন্যায়, আন্তর্জাতিক সলিডারিটি, লিঙ্গ-সমতা, শান্তি আর পরিবেশ রক্ষণকে সামনে রেখে পোর্তো আলেগ্রে থেকে মুম্বাই, বামাকো, কারাকাস, করাচী হয়ে আজ নাইরোবিতে একজোট ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরামের আশি হাজার মুখ৷ পোর্তো আলেগ্রে চার্টার থেকে তুলে ধরলে ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরাম হল "an open meeting place where groups and movements of civil society opposed to neo-liberalism and a world dominated by capital or by any form of imperialism, but engaged in building a planetary society centred on the human person, come together to pursue their thinking, to debate ideas democratically, formulate proposals, share their experiences freely and network for effective action..."

বিশ্বায়নের অন্ধ-বিরোধিতা নয়, ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরাম বিরোধিতা করে এই মুহুর্তে বিশ্বায়ন বলতে আমরা যা দেখি তার - যে বিশ্বায়নের সুফল পৌঁছয় মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে, যে বিশ্বায়ন মানুষ আর পরিবেশের তোয়াক্কা করে না...নাইরোবি থেকে দাভোসের দিকে বার্তা যায় - বিশ্বায়নের সামাজিক অভিঘাতকে উপেক্ষা করা চলবে না - "Another World is Possible - one where global capital does not hold sway..."

"People's Struggles, People's Alternatives" থীম সামনে রেখে নাইরোবিতে তুলে ধরা হয়েছে আফ্রিকাকে - আফ্রিকার জনজাতির ইতিহাস, প্রাকৃতিক সম্পদ, সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাস, তথাকথিত উন্নত দেশের শোষণের ইতিহাস...

"এলো ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
এলো মানুষ ধরার দল,
গর্বে যারা অন্ধ, তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে৷
সভ্যের বর্বর লোভ নগ্ন করলো আপন নির্লজ্জ অমানুষতা৷
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকূল অরণ্যপথে
পঙ্কিল হল ধুলি, তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে৷
দস্যুপায়ের কাঁটামারা জুতোর তলায় বীভত্স কাদার পিণ্ড
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে..."

(৪)

নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত ঘোষণা

"বিগত কয়েকদিবস যাবৎ মহারাণীর রাজত্বে "শ্রীমান ব্রিটিশনেস"-কে খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না৷ জনসাধারণের মধ্য হইতে ব্রিটিশনেস আকস্মিক গায়েব হইয়াছেন৷ ব্রিটিশনেসের হালহকিকত্ সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী সংবাদ পাওয়া যাইতেছে৷ মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে বিরাট সংখ্যক মানুষ ব্রিটিশনেসকে "বিগ ব্রাদার হাউজ।" হইতে নিকাশনালীপথে সবেগে ধাবিত হইতে দেখিয়া জনে জনে অভিযোগ করিয়াছেন৷ দুই দিন পূর্বে, ডেভন উপকূলে শত শত মানুষকে ডুবন্ত সমুদ্রপোতের মালপত্র লুন্ঠন করিতে দেখা যায় - সংবাদে প্রকাশ ব্রিটিশনেসকে সমুদ্রে লাফ দিয়া আত্মবলিদান দিতে দেখা গিয়াছে৷ চত্বারিংশত্ নগরনিগম হইতে সংবাদে প্রকাশ ব্রিটিশনেসকে আকন্ঠ সুরাপান করিয়া পুলিশ ঠেঙাইতে, প্রতিবেশির গৃহের সম্মুখে মুত্রত্যাগ করিতে, অথবা চক্রযানের শিখরদেশে আরোহন করিয়া নৃত্য করিতে করিতে চক্রযানের বারোটা বাজাইতে দেখা গিয়াছে...

উপরিউক্ত পরস্পরবিরোধী সংবাদ পাইয়া মহামান্য সরকারবাহাদুর যথার্থই উদ্বিগ্ন হইয়াছেন, এবং ব্রিটিশনেসকে খুঁজিয়া বাহির করিয়া ধরিয়া আনিবার হুকুম জারি করিয়াছেন৷ ব্রিটিশনেস একান্তই গায়েব হইয়া থাকিলে স্কুলে স্কুলে শিশুদের মস্তিষ্কে নতুনভাবে ব্রিটিশনেস খোদাই করিয়া দিতে হইবে যাহাতে ভবিষ্যতে ব্রিটিশনেস আর নিখোঁজ না হয়৷''

- বিবিসি, ২৫শে জানুয়ারী, ২০০৭

Monday, January 22, 2007

খোলা পাতা, খোলা কোড - ওপেন সোর্সের দুনিয়া (১)

স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে,
কে বাঁচিতে চায়
দাসত্ব শৃঙ্খল বলো কে পরিবে পায়ে রে,
কে পরিবে পায়ে...

কবিতাটা হাল ফ্যাশানের নয়৷ রঙ্গলাল বন্দ্যো স্বপ্নেও ভাবেননি, ভাবতে পারেন না যে তাঁর এই কবিতাটা একবিংশ শতাব্দীতে জনৈক সফটওয়্যার ক্ষ্যাপা সফটওয়ার-সংক্রান্ত লেখার শুরুতে ব্যবহার করবে৷ কিন্তু করলুম৷ কেন? কারণ ওপেন সোর্স সফটওয়্যারকে তলিয়ে দেখতে গেলে এই ফিলোজফিটা প্রয়োজন৷ আর প্রয়োজন একটু পিছিয়ে তাকানোর - কোথা থেকে, কি ভাবে এই ওপেন সোর্স, বা ফ্রী সফটওয়্যার, বা একটি বহু-প্রচলিত নাম "গ্নু" (ইংরিজীতে GNU) বাজারে এলো৷

পিছিয়ে যাই ষাটের দশকে৷

অ্যাকাডেমিক হ্যাকার সংস্কৃতি এবং স্টলম্যান

ষাটের দশক - কম্পিউটার জগতে মিনিকম্পিউটারের যুগ - ট্রানজিস্টর, ম্যাগনেটিক মেমরিকে কাজে লাগিয়ে অপেক্ষাকৃত "ছোট" পিডিপি, বা ভ্যাক্স কম্পিউটার৷ তখন ইন্টারনেটও নেই, কম্পিউটারের ভিতরে কি লাঠালাঠি-মারামারি চলে তার ঠিকানাও খুব বেশি প্রকাশিত নয়, অল্প লোকেই এইসব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করেন - যাঁরা করেন, তাঁরা ভিতরের খুঁটিনাটি আরো খুঁটিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেন৷ আজকের সাথে তুলনা করুন - আপনার উইন্ডোজ পিসির ভিতরে কি চলছে আপনি কি জানার চেষ্টা করেন কখনো? মাঝে মাঝে মনিটরে পুরো "এক মনিটর নীল সমুদ্র" এসে হাজির হয় - নিন্দুকেরা বলে "ব্লু স্ক্রীণ অব ডেথ" - বা একটা চৌকো বাক্স ভেসে ওঠে -
Fatal Error - কেন, কি হচ্ছে, জানার কথা ভাবেন? বা জানলেও সেটাকে ঠিক করার কথা? সেই মিনিকম্পিউটারের যুগে লোকে ভাবতো, এবং ভিতরে কি হচ্ছে সেটা খুঁটিয়ে দেখে ওষুধও দিত - এই সব লোকেদের বলা হত "অ্যাকাডেমিক হ্যাকার" - কারণ এদের বেশিরভাগ সময় পাওয়া যেত ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে, যার মধ্যে সবার আগে নাম ওঠে এমাঅইটি, বার্কলি এবং কার্নেগি মেলনের৷ হিপি-কালচারের মতন এই হ্যাকার-কালচারেরও নিজস্ব কিছু নিয়ম ছিল, অলিখিত -
  • প্রশ্ন করার অবাধ স্বাধীনতা
  • গোপনীয়তা অত্যন্ত নিন্দনীয়
  • তথ্য আর জ্ঞানের আদানপ্রদান
  • প্রচলিত কিছুকে নিয়ে, তাকে বদলে নতুন কিছু তৈরী করার অধিকার - কম্পু ভাষায় "ফর্ক"
  • অথরিটির গুষ্টির তুষ্টি
  • ...
আজকের সাধারণ ধারণায় হ্যাকার হল কিছু ক্ষ্যাপা লোক, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধপ্রবণ, যারা ভারত সরকারের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবোলতাবোল লিখে আসে, বা ব্যাঙ্ক এবং ইনসিওরেন্স কোম্পানীর ওয়েবসাইটে হানা দেয়...এর সাথে অ্যাকাডেমিক হ্যাকার কালচারের ধ্যানধারণার আকাশপাতাল ফারাক৷ উনিশশো চুরাশিতে প্রকাশিত Hackers: Heroes of the Computer Revolution এই অ্যাকাডেমিক হ্যাকারদের কাজ, ফিলোজফি, বেঁচে থাকাকে তুলে ধরেছিলো৷

ষাটের দশকের শেষে, সত্তরের শুরুতে রিচার্ড স্টলম্যান এমাঅইটির আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ল্যাবে কাজ শুরু করেন, হার্ভার্ডের ছাত্র থাকার সময়েই - এবং হ্যাকার কমিউনিটিতেও চলে আসেন অচিরেই - " RMS " নামে৷ স্টলম্যানও সেই পাঠানের মতন - "না অ্যানার্কিও আমরা গুঁড়িয়ে দেবো" - ১৯৭৭-এ একবার এমাঅইটি কম্পিউটার সায়েন্স ল্যাবে পাসওয়ার্ড চালু হয়, স্টলম্যান পাসওয়ার্ড ভেঙে ঢুকে সমস্ত পাসওয়ার্ড ফাঁকা করে দিয়ে বাকিদের মেল করে দেন যে পাসওয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে...

আশির দশকে এই হ্যাকার কমিউনিটি ভাঙতে শুরু করে - যখন কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার প্রস্তুতকারকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়...অধিকাংশ কোম্পানি সফটওয়্যারে কপিরাইট এবং লাইসেন্স ব্যবহার করতে শুরু করে যাতে সেগুলো কপি বা রি-ডিস্ট্রিবিউট না অরা যায় - এবং ক্রমশ এটাই নিয়মে পরিণত হতে শুরু করে...আর এই সময় থেকেই সফটওয়্যার মোনোপলির সাথে স্টলম্যানের লড়াই শুরু৷ ষাটের দশকের গোড়ার কাউন্টারকালচারে (সিভিল রাইটস মুভমেন্ট বা ফ্রী স্পীচ মুভমেন্ট ইত্যাদি) সরাসরি জড়িয়ে না থাকলেও তখনকার কিছু আদর্শ স্টলম্যানকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো - নন-ডিসক্লোজার এগ্রীমেন্টে সই করে সুনিশ্চিত ভবিষ্যত্ তৈরী করতে অস্বীকার করেন তিনি৷ উনিশশো চুরাশীর জানুয়ারীতে স্টলম্যান এমআইটির
AI ল্যাব ছেড়ে GNU প্রোজেক্টে পুরোদমে কাজ করতে শুরু করেন৷

GNU প্রোজেক্ট - ফ্রী সফটওয়্যার আন্দোলনের শুরু

সেপ্টেম্বর ১৯৮৩-তে স্টলম্যান ARPANet মেইলিং লিস্টে প্রথম GNU প্রোজেক্টের ঘোষণা করেন, পরে বেশ কিছু USENET নিউজ গ্রুপেও এটা প্রকাশিত হয়৷ পঁচাশিতে বেরোয় GNU Manifesto - যেখানে স্টলম্যান ইউনিক্সের মতন একটা অপারেটিং সিস্টেমের কথা বলেন - ইউনিক্সের মতন, অথচ ফ্রী - GNU -এর পুরো কথা হল GNU's not Unix , একটা রিকার্সিভ অ্যাক্রোনিম৷ সাথে সাথেই তৈরী হয় Free Software Foundation - একটা non-profit অর্গানাইজেশন, ফ্রী সফটওয়্যারকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে৷ সারা পৃথিবীর লোকের ডোনেশনে চলা এই সংস্থার অবৈতনিক প্রেসিডেন্ট স্টলম্যান৷ গ্নু-এর ওয়েবসাইট থেকে কিছু অংশ তুলে দিই -

"Free software" is a matter of liberty, not price. To understand the concept, you should think of "free" as in "free speech", not as in "free ice cream". Free software is a matter of the users' freedom to run, copy, distribute, study, change and improve the software. More precisely, it refers to four kinds of freedom, for the users of the software:
  • The freedom to run the program, for any purpose (freedom 0).
  • The freedom to study how the program works, and adapt it to your needs (freedom 1). Access to the source code is a precondition for this.
  • The freedom to redistribute copies so you can help your neighbor (freedom 2).
  • The freedom to improve the program, and release your improvements to the public, so that the whole community benefits (freedom 3). Access to the source code is a precondition for this.
অর্থাৎ, আমার কম্পিউটারের কোন প্রোগ্রাম আমি আমার খুশিমতন চালাবো৷ সেই প্রোগ্রাম কি ভাবে চলছে, বা কি করছে তা জানার সম্পুর্ণ অধিকার আমার আছে, এবং আমার প্রয়োজনমত আমি তার বদল করতে পারবো৷ আমার প্রতিবেশি/বন্ধুবান্ধবকে সাহায্য করার জন্যে আমি সেই প্রোগ্রাম তাকে দিতে পারবো, এবং আমি সেই প্রোগ্রামে বদল করে তাকে যদি আরো কার্যকরী করতে পারি, তাহলে সেই বদলগুলো আমি সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো - যার জন্যে সেই প্রোগ্রামের সোর্স কোড (আভ্যন্তরীন সমস্ত ইনস্ট্রাকশন যা দিয়ে প্রোগ্রামটা তৈরী) সকলের কাছে থাকবে৷

Free Software Foundation এই গ্নু প্রোজেক্টের প্রধান সাংগঠনিক স্পনসর৷

গ্নু এবং Free Software Foundation -কে জাস্ট আরেকটা সফটওয়্যার ভাবলে ভুল করা হবে - সিভিল রাইটস মুভমেন্ট, ফ্রী স্পীচ মুভমেন্টের মতন এও আরেক আন্দোলন - সফটওয়্যার মোনোপলির বিরুদ্ধে৷ এই মুহুর্তে পৃথিবীর অধিকাংশ ইউনিভার্সিটি এই আন্দোলনের শরিক, কিছু বড় কোম্পানী এই আন্দোলনের শরিক হয়ে তাদের সফটওয়্যারকে "ওপেন সোর্স" করে দিচ্ছে - যেমন সান মাইক্রোসিস্টেমসের "সোলারিস" অপারেটিং সিস্টেম, নেটস্কেপ ব্রাউজার...অ্যাপলের ম্যাকিনটশ অপারেটিং সিস্টেম প্রধাণত OpenBSD -র ওপর তৈরী...উল্টোদিকে সফটওয়্যারে মোনোপলি প্রথার প্রধাণ স্তম্ভ মাইক্রোসফট, পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটার এবং অপারেটিং সিস্টেমের বেশি অংশ যাদের কব্জায়...

এ এক বড় বিচিত্র লড়াই - পেশাগত কারণে লড়াইটাকে খুব কাছ থেকে দেখি, ভিতর থেকেও - এক দিকে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের মালিক বড় বড় কিছু কোম্পানী, অন্যদিকে অসংখ্য সাধারণ মানুষ, যাঁদের অনেকে সারাদিন অফিসে হাড়ভাঙা খাটুনি খেতে বাড়ি এসে ওপেন সোর্স প্রোজেক্টের কাজ করেন, অনেকে দিনভর শুধুই এই ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট নিয়ে পড়ে থাকেন...যেখান থেকে মেটিরিয়াল বেনিফিট বলতে কিছুই তাঁদের পাওয়ার নেই৷ কে জিতবে তা বলবে সময়৷

(আজ শুধু শুরুর কথা, পরের বার লিখবো যুদ্ধ কতদূর এগিয়েছে তাই নিয়ে)৷

মূল লেখা এখানে

Friday, January 05, 2007

প্রথম হর্নবি



বেশ ছোটবেলায় কোনও বইয়ে বা অন্য কোথাও হর্নবির ছবি দেখেছিলুম। তখন থেকে মাথায় ছিলো যে ওইটা আমার চাই - কিন্তু ও জিনিস কলকাতায় পাওয়াও যেত না, আর গেলেও কেনার সামর্থ্য ছিলো না। তাপ্পর বড় হয়ে গেলুম, হর্নবি নিয়ে খেলা হল না। ঋক হর্নবি দেখলো, আর পছন্দও করলো। ভাবলুম নিজের ছোটবেলার শখটা ওকে দিয়েই মেটাই। সান্টা ক্লজ এই বড়দিনে ঋককে একটা হর্নবি সেট উপহার দিয়েছে। আম্মো একটু খেলে নিলুম।