Monday, November 13, 2006
রাষ্ট্র বনাম ধর্মীয় স্বাধীনতা
তর্কটা বহুদিন ধরেই চলছে...অনেকটাই ঘেঁটে যাওয়া, খেই হারিয়ে ফেলা, এবং আরো ঘেঁটে দেবার জন্যেই এই লেখা৷ দুধকে ঘেঁটেই তো মাখন বেরোয়...
৬ই অক্টোবর - ল্যাঙ্কাশায়ার টেলিগ্রাফে কমনসের লেবার পার্টির নেতা জ্যাক স্ট্র মুসলিম মহিলাদের নিকাব নিয়ে আপত্তির কথা লিখলেন -
"It was not the first time I had conducted an interview with someone in a full veil, but this particular encounter, though very polite and respectful on both sides, got me thinking. In part, this was because of the apparent incongruity between the signals which indicate common bonds - the entirely English accent, the couples' education (wholly in the UK) - and the fact of the veil. Above all, it was because I felt uncomfortable about talking to someone 'face-to-face' who I could not see."
জ্যাক স্ট্র লেবার পার্টির অন্যতম চেনা মুখ, তাঁর মুখে নিকাব-পরিহিতার সাথে কথা বলাতেও অস্বস্তির কথা ব্রিটেনের মাল্টি-কালচারিজমের মুখে বড় জুতো। অবিশ্যি স্ট্র পরে এও লিখেছেন - "I explain that this is a country built on freedoms. I defend absolutely the right of any woman to wear a headscarf. As for the full veil, wearing it breaks no laws" - কিন্তু তার সাথে এটুকুও - "I go on to say that I think, however, that the conversation would be of greater value if the lady took the covering from her face" - একটা নিকাবেই তাঁর অস্বস্তি, নাকি একটু পালিশ করা ভাষায় আরেকজনের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?
(পুরো লেখা পাবেন এখানে।)
১৫ই অক্টোবর - রবিবার সকালে ঘুম ভাঙলো আরো একটা অস্বস্তিকর খবরে - ডিউসবুরির এক প্রাইমারী স্কুলের টীচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট আয়েশা আজমিকে সেই স্কুল সাসপেন্ড করেছে কিছুদিন আগে, পড়ানোর সময় নিকাব থাকার জন্য৷ লেবার সরকারের Race Relations -বিষয়ক মন্ত্রী Phil Woolas দাবী করেছেন আয়েশাকে বরখাস্ত করা উচিত৷ স্কুলের বক্তব্য - "Ms Azmi had been asked to take off her veil in class because children had difficulty understanding her in English lessons. When she refused to remove the veil, she was suspended pending an employment tribunal", আয়েশার বক্তব্য - "The children are aware of my body language, my eye expressions, the way I'm saying things. If people think it is a problem, what about blind children? They can't see anything but they have a brilliant education, so I don't think my wearing the veil affects the children at all".
প্রশ্নটা এখানে ধর্মীয় অনুশাসনের নয় - নিকাব পরা ঠিক কি ভুল সেটা নিয়েও নয়৷ প্রশ্নটা আয়েশার নিকাব পরার স্বাধীনতা নিয়ে৷ আয়েশা নিশ্চয় ইন্টারভিউ দিয়েই চাকরি পেয়েছিলেন, এবং একজন শিক্ষিকা ক্লাসে (এবং সর্বত্র) নিকাব পরছেন মানে ইন্টারভিউয়ের সময় তিনি কোট-প্যান্ট পরেছিলেন এটা ভাবা কষ্টকর৷ হঠাৎ করে এখনই স্কুল এবং ডিউসবুরি কাউন্সিলের পোশাক-সংক্রান্ত ডিসিপ্লিন জেগে উঠলো কেন?
ডেইলি এক্সপ্রেস একটা "ওপিনিয়ন পোল" করলো - ৯৭ শতাংশ ডেইলি এক্সপ্রেস পাঠক নাকি মনে করেন হিজাব/নিকাব/বোরখার ওপর নিষেধাজ্ঞা সাম্প্রদায়িক সম্রীতি বজায় রাখবে৷ ডেভিড এডগার একটা লেখা লিখলেন "দ্য গার্ডিয়ান"-এ (সরি, উই জাস্ট কান্ট পিক অ্যাণ্ড চুজ হোয়াট উই টলারেট) - নিষেধাজ্ঞাটা কি করে লাগু হবে? নিকাব পরলে পুলিশে সেটা টেনে ছিঁড়ে দেবে? নাকি অ্যাসবো (Asbo - অ্যান্টি সোশ্যাল বিহেভিয়ার অর্ডার)? নাকি জেলে ভরবে? ঐ লেখাই জানাচ্ছে যে এর প্রিসিডেন্স আছে - ফ্রান্সের ইস্কুলে পোশাক নিয়ে বিতর্কের খবর আমাদের বাংলা কাগজেও বেরিয়েছিলো৷ নেদারল্যাণ্ডসের পার্লামেন্টও কর্মক্ষেত্রে এবং পাবলিক প্লেসে বোরখা ব্যান নিয়ে একটি আইন পাস করেছে৷ রটারড্যামে মসজিদের ডিজাইন "অতি ইসলামিক" বলে বাতিল হচ্ছে; এবং ডাচ নাগরিকত্ব আইন বলে রাস্তাঘাটে ডাচ ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলা যাবে না৷ বোরখা/হিজাব/নিকাব ব্যান জার্মানির কিছু জায়গাতেও৷ "Liberalism can so easily collapse into nativism..." - এডগার লিখলেন - "There is, one hopes, no call for Britain to follow the US state of Virginia in banning visible underwear from its streets. But you can't have it both ways: I can disagree with what you wear, but - if I am to remain true to universalist Enlightenment values - the other half of Voltaire's formulation has to click in too."
এই দেশগুলো - ব্রিটেন, নেদারল্যাণ্ডস, ফ্রান্স - যারা প্রগতিশীল বলে পরিচিত, যারা সবরকম সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে - তারা নিজেরাই এখন সেই সেন্সরশিপকেই জাস্টিফাই করতে ব্যস্ত৷
এবার স্বীকারোক্তি -
স্বীকারোক্তিটা হল নিকাব বা বোরখা পরিহিতা কারো সাথে সামনাসামনি কথা বলতে কিছুক্ষণের জন্যে হয়তো আমারও অস্বস্তি হবে৷ নিকাব/বোরখা পরিহিতা নারী শুধু নয় - পুরো পাগড়িঢাকা কোন পুরুষের ("সোনার কেল্লা" দ্রষ্টব্য) সাথে কথা বলতেও অস্বস্তি হবে - আমি লালমোহনবাবু নই, ভয়ের প্রশ্ন নয় - কিন্তু মুখ না দেখতে পেলে ভালো করে কথা বলা যায়কি? কিন্তু কতক্ষণ অস্বস্তি হবে? পাঁচ মিনিট? দশ মিনিট? তার বেশি কি? মনে হয় না৷ এটুকু স্বীকার করে নিয়ে দুটো প্রশ্ন রাখতে চাই৷৷৷
ঐ অস্বস্তি সত্ত্বেও নিকাব/বোরখা/হিজাব - যিনি পরছেন তাঁর নিজস্ব চয়েজ, রাষ্ট এখানে নাক গলানোর কেউ নয়৷ কাজেই ফ্রী স্পীচ বা সিভিল রাইটস আন্দোলনকে সমর্থন করলে স্ট্র, বা Phil Woolas (এবং প্রায় অর্ধেক লেবার/টোরি কেউকেটা) - এঁদের বিভিন্ন ডিগ্রীর হিটলারই মনে হবে৷ এবং বিশেষ করে চার্চ স্কুলে ফাদার বা সিস্টারেরা যখন দিব্যি ধর্মীয় আলখাল্লা বা হ্যাবিট পরতে পারেন, নিকাব/হিজাব ব্যান হবে কোন দু:খে? ব্রিটেন না মাল্টিকালচারাল?
একটা প্রশ্ন উল্টোদিকেও - শুধু জানতে চাই কোরাণের কোন ইন্টারপ্রিটেশন চোদ্দ বছর ধরে সাধারণ স্কুল ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাওয়া সাবিনা বেগমকে একদিন আচমকা মনে করিয়ে দেয় যে জিলবাব না পরলে সে ধর্মভ্রষ্ট হবে? বা সদ্য শিরোনামে আসা তেইশ বছরের আয়েশাকে বলে বাচ্চাদের ক্লাস নেওয়ার সময়েও নিকাব পরা খোদার বিধান?
শেষে একটা ছোট্ট সংযোজন - ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এক মহিলা কর্মীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তাঁর জুয়েলারি কনসিলড ছিলো না বলে - জুয়েলারি বলতে একটা ক্রস৷ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের তরফ থেকে স্টেটমেন্টে বলা হয়েছে হিজাব বা পাগড়ি বা বালা (শিখেদের ক্ষেত্রে) কনসিল করা সম্ভব নয়, তাই সেগুলোর জন্যে ছাড় দেওয়া হতে পারে৷ ক্রিশ্চান সংগঠনগুলো এই নিয়ে প্রবল আপত্তি করেছে - যে কারণে একজন শিখ হাতে বালা বা মাথায় পাগড়ি পরতে পারে, বা একজন মুসলমান হিজাব পরতে পারে, আমরা কেন ক্রস ঝোলাতে পারবো না...
একদিকে রাজনীতিবিদ, অন্যদিকে হিউম্যান রাইটস - তর্ক চলে৷ ক্রমশ প্রচারমাধ্যমের চড়া আলোয় গা পোড়ে সাধারণ মুসলমান মানুষের - নিরীহ নাদিম বলে "লোকে আমার নাম শুনলে এখন বড় অন্যরকম ভাবে তাকায়, জানো"...চার্চ থেকে বাইবেল হাতে প্রচার করতে আসা ভদ্রলোক আমার নিরুত্সাহ দেখে প্রশ্ন করেন আমি মুসলমান কিনা..."দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে"-র মাল্টিকালচারালিজম নয়, নেটিভ সমাজের মধ্যে মিশে যাওয়ার দাবি করা প্রগতিশীলতার কথা শুনি - নরেন্দ্র মোদিদের কথা মনে পড়ে যায় - আর গার্ডিয়ানে গরম গরম লেখাগুলো পড়ে স্যাঁতস্যাঁতে নিউক্যাসলে আমি একটু গা গরম করি৷ একদিন আমার প্রশ্নদুটোর উত্তর পেলেই হল৷
(মূল লেখা গুরুচণ্ডা৯তে এবং কিছু আলোচনা)
Friday, October 20, 2006
রাষ্ট্রপতির মৃত্যু
"শিকাগোতে উনিশে অক্টোবরের সকাল৷ শিকাগো এয়ারপোর্টে আমেরিকা যুক্তরাষ্টের্র প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এসে পৌঁছেছেন৷ শিকাগো ইকোনমিক ক্লাবের মিটিঙে ভাষণ দেবেন৷ প্রেসিডেন্টের কনভয় শেরাটন হোটেলের দিকে রওনা দিয়েছে৷ অন্যদিকে সেইদিন শিকাগো শহর বুশবিরোধী সমাবেশ, মিছিল ও ধর্নায় উত্তাল৷ শিকাগোর পুলিশ চিফের কথায়- "বুশ যেখানেই যান সাধারণত: সেখানে বিক্ষোভ দেখানো হয়৷ কিন্তু এই প্রথম মনে হল বিক্ষোভকারীদের চোখমুখ দিয়ে যেন ঘেন্না ঠিকরে পড়ছে৷" রাস্তার দুপাশের বিক্ষোভকারীদের সারি একসময় পুলিশ কর্ডন ভেঙে ফেলে৷ কেউ কেউ রাস্তার মধ্যে এসে যায়৷ বুশের কনভয় থেমে যায়৷ কোনো কোনো দু:সাহসী বুশের গাড়িতেও হাত দেয়৷ পুলিশ কোনো রকমে তাদের হঠিয়ে দিলে, বুশের কনভয় পূর্বনির্ধারিত পথ ছেড়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে শেরাটন হোটেলে পৌঁছায়৷ শেরাটন হোটেলের বাইরেও লাগাতার বিক্ষোভ চলছে৷ সেইখানেও একটা সময়ের পর বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়৷ দুই একজন পুলিশের নিশ্ছিদ্র কর্ডন ভেঙেও ফেলে৷ শেরাটন হোটেলের চারদিকে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট বুশ তার বক্তৃতা শুরু করেন৷ যথারীতি দুই একটা বুশোচিত রসিকতা, শিকাগোর ডেমোক্র্যাট মেয়রের প্রশস্তি ইত্যাদি৷ তবে বক্তৃতার মূল কেন্দ্রবিন্দু উত্তর কোরিয়ার প্রতি হুমকি৷ বক্তৃতা শেষ হলে প্রেসিডেন্ট হোটেলের দরজার সামনে এসে লাল দড়ির আশেপাশে জমায়েত অভ্যাগতদের সাথে আলাপ পরিচয় করছেন৷ বক্তৃতার অভিঘাত প্রত্যাশিত৷ তাই প্রেসিডেন্ট বেশ খোশমেজাজে৷ এই আলাপচারিতার মধ্যেই হঠাত্ একটা বুলেটের শব্দ৷ বেশ কয়েকজন লুটিয়ে পড়েন মাটিতে৷ তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট একজন৷ প্রচন্ড বিশৃঙ্খলা, আর্তনাদ, হুড়োহুড়ি৷ তার মধ্যে স্পেশাল সার্ভিসের লোকেরা বিদ্যুত্গতিতে প্রেসিডেন্টকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন৷
ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালের ১৯শে অক্টোবর৷ সিনেমার নাম দেখে নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে এর পরে প্রেসিডেন্ট মারা যাবেন৷ তবে সিনেমাটা প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতেই কিন্তু শেষ হয় না৷ প্রেসিডেন্টের হত্যার তদন্ত এবং অপরাধের শাস্তি অবধি সিনেমা এগোয়৷ কে মারলেন, কি ভাবে মারলেন ইত্যাদি ইত্যাদি চাপাই থাক৷ নইলে পুরো সিনেমাটার মজাটাই নষ্ট৷
এই পর্যন্ত পড়ে যদি কেউ ভাবেন যে এটা বুঝি হলিউডের তারকাখচিত কোনো ব্লকবাস্টার, তাহলে ভুল ভাবছেন৷ এই সিনেমাটির অবস্থান তথ্যচিত্র এবং কাহিনীচিত্রের মাঝামাঝি কোনো জায়গায়৷ এটি কাহিনীচিত্র কারণ পুরো সিনেমাটায় যা দেখানো হয় তা পুরোটাই ভবিষ্যত্ কল্পনা৷ কিন্তু গঠনের দিক থেকে সিনেমাটি একটি তথ্যচিত্র৷ যারা ব্রিটিশ ডকুমেন্টারি ছবির সাথে পরিচিত, তারা এই স্টাইলের ব্যাপারটা ধরতে পারবেন৷ ঘটনার ফুটেজ এবং মূল পাত্রপাত্রীদের ইন্টারভিউ দিয়ে সিনেমটা বানানো হয়েছে৷ বি বি সির যে কোনো টি ভি ডকুমেন্টারির সাথে এই সিনেমার গঠনের কোনো তফাত্ নেই৷ তফাত্ শুধু একটাই- এখানে তথ্যও কাল্পনিক৷ কিন্তু জর্জ বুশ মানে জর্জ বুশ, ডিক চেনি মানে ডিক চেনি৷ অর্থাত্ জর্জ বুশ বা ডিক চেনির ভূমিকায় কোনো অভিনেতা অভিনয় করেন না৷ সিনেমাতে দেখবেন জর্জ বুশ শিকাগো এয়ারপোর্টে নামছেন, শিকাগোতে বক্তৃতা দিচ্ছেন, অভ্যাগতদের সাথে হাত মেলাচ্ছেন এবং গুলি খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন৷ ডিক চেনি কার্যভার গ্রহণ করছেন, এবং মৃত প্রেসিডেন্টের পারলৌকিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছেন৷ সিনেমাটি প্রথম দেখানো হয় ২০০৪ সালের টরন্টো চলচ্চিত্র উত্সবে৷ মোর৪ চ্যানেলে ৯ই অক্টোবর৷ এবং চ্যানেল ফোরে ১৯শে অক্টোবর, ২০০৬৷ আমেরিকানরা মারাত্মক খেপে গেছেন সিনেমা দেখে৷ টেক্সাসের রিপাব্লিকান পার্টির মতে সিনেমার বিষয়বস্তু "shocking" এবং "disgusting" ৷ জর্জ বুশের পয়লা প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিন্টনের মতে: "I think it's despicable... I think it's absolutely outrageous. That anyone would even attempt to profit on such a horrible scenario makes me sick." আমরা যেহেতু কিছুতেই খুব একটা অসুস্থ হই না, তাই আমরা সিনেমাটির আর একটু ভিতরে যাব৷
সিনেমা শুরু হয় এক মহিলার কন্ঠস্বরে আরবী ভাষার ভয়েস ওভার দিয়ে৷ ৯/১১ হবার পরে মহিলা বিধ্বস্ত৷ যদিও তাঁর অনেক প্রতিবেশীই বলেন, যা হয়েছে ঠিক হয়েছে৷ আমরা এতদিন ভুগেছি, এবার ওরাও একটু ভুগুক৷ কিন্তু মহিলার প্রশ্ন- এর ফলে আমরা কি পেলাম? মহিলা এইবার জামাল বলে কোনো এক লোকের কথা বলেন যিনি মহিলার স্বামীই হবেন হয় তো৷ জামাল এইটা কি করল? কেন করল? আমাদের সন্তানের কথা ভাবল না? দেশের কথা? মানুষের কথা৷ এর পরেই কাহিনী শুরু হয় সকালবেলার শিকাগো এয়ারপোর্টে৷ যেহেতু আমেরিকানরা ক্ষেপে গেছেন, মনে হওয়া স্বাভাবিক যে সিনেমাটা প্রচন্ড আমেরিকাবিরোধী বা বুশবিরোধী৷ নিশ্চয় প্রচুর সাবভার্সিভ রাগী কথাবার্তা আছে৷ এবং সিনেমার শুরুতে সেই আরবী ভাষার ইন্টারভিউ বুঝিয়ে দেয় যে এই সিনেমা প্রথম থেকেই যতদূর সম্ভব নিরাসক্ত থাকবে৷ যতদূর থাকা যায়৷
কি করে নিরাসক্ত থাকা যায়? ধরুন আজ আপনি বুশের কাছের লোকজনদের ইন্টারভিউ নিলে যে রকম কথাবার্তা শুনবেন, সিনেমাতে বুশের স্পেশাল অ্যাডভাইজার ঠিক সেইভাবেই ইন্টারভিউ দেন৷ বা পুলিশকর্তারা৷ বা ঘটনার পরে যাদের সন্দেহের বশে গ্রেফতার করা হয় তারাও৷ কখনই উচ্চকিত চমক নেই৷ আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে ২০০৭ অবধি যদি একটা ট্রেন্ড লাইন আঁকেন, তবে মনে হবে এই সব উক্তি, প্রত্যুক্তি, মতামত একান্ত স্বাভাবিক৷ আজকে দাঁড়িয়ে টি ভিতে আমরা এই সবই শুনে থাকি৷ আজকের টি ভির বিভিন্ন খবর নিয়ে যদি একটা কোলাজ বানান, ইরাক-আফগানিস্থান-আবু ঘ্রায়িব-সিরিয়া-ইরান- ঠিক এই রকমই দাঁড়াত৷ তফাত্ হল, এখানে সবই কাল্পনিক যা একবছর পরে ঘটে৷ এবং বুশকে হত্যা করা হয়৷ ধারাবিবরণীতেও স্রেফ বিবরণ থাকে৷ কোথাও পরিচালক নিজের মতামত একবারও বলেন না৷ কিন্তু পুরো সিনেমাটাই তো পরিচালকের নিজের কথা!
এই নিরাসক্তির ছবি দেখতে দেখতে তবুও গায়ে জ্বালা ধরে, এবং সাথে সাথে হাড় হিম হয়ে আসে৷ আমাদের চারদিকে যা ঘটছে, ঘটেছে এবং ঘটতে চলেছে, তা এমনিতেই এমন ভয়ঙ্কর, যে তার জন্য আলাদা করে কোনো স্টাইলাইজড সাবভার্শনের দরকার হয় না৷ প্রতিদিনের সি এন এন, বি বি সি, এমন কি ফক্স নিউজের নিউজ ক্লিপিং জড়ো করে তৈরি করা যায় এই কালরাত্রির পাঁচালী৷ যদিও আমরা জানি মিডিয়া কিভাবে চলে এবং কোন মিডিয়া কাদের কথা বলে- তা সজ্জ্বেও এই বিকিয়ে যাওয়া মিডিয়ার তোলা ছবি দেখতে দেখতেই ভিতর থেকে আগুন জ্বলে৷ কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মন্তব্য ছাড়াই৷ এই খবরগুলো সাজানোতেই পরিচালকের মুন্সিয়ানা৷ কিন্তু সাজিয়ে তোলার খেলাটা দর্শক কখনই বোঝেন না৷ শুধু গায়ে জ্বালা ধরে, হাড় হিম হয়ে আসে৷
যাদের রাজনৈতিক থিল্রার ভালো লাগে, তাদের অবশ্যই এই ছবি ভালো লাগবে৷ পুরো হত্যাকান্ডের ছক এইখানে বলব না আগেই বলেছি৷ শুধু বলি সব শেষে কি হয়৷ খুব অবাক করে দেওয়া কিছু হয় না৷ যা এখনও হচ্ছে, তারি একটা যৌক্তিক পরিণতি ঘটে৷ আমেরিকান পুলিশ এবং রাষ্ট্র নিজেদের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে নেয়৷ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্টের নতুন সংস্করণ বের হয় এবং প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট পার্মানেন্ট আইনে পরিণত হয়৷ ডিক চেনি প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করেন৷ আমেরিকা বিদেশী রাষ্টের্র মদত খুঁজে ফেরে৷ কোন রাষ্ট সেটা সিনেমাতেই দেখুন৷"
পুরো সিনেমা দেখতে চাইলে চলে যান গুগুল ভিডিওতে।
ধাঁধাঁ, মজা, হেঁয়ালি...
আমি আটকে একচল্লিশে।
Monday, October 02, 2006
আমার পুজো, ঋকের পুজো
"শেষ কবে কলকাতার পুজো দেখেছি? বছর কুড়ি আগে বোধহয়৷ পুজো দেখার গপ্পো সকলে জানে, আর সকলের মতনই ছোটবেলায় কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, মণ্ডপে যাওয়া - পারোলিনের পুজোর সঙ্গে আমার ছোটবেলার পুজোর কোন তফাৎ প্রায় নেই-ই৷ আরো পরে পুজো আর টানতো না - ভিড়, শব্দ, আলো থেকে দূরে নিজের দশ ফুট বাই দশ ফুটের রাজ্যে একটা বই, বা বেহালা, বা টেপরেকর্ডার - এই নিয়ে সময় কাটতো৷ লাল চশমা পরা আমি পুজো থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করতুম৷ রাস্তায় যেতে-আসতে যেটুকু চোখে পড়ে সেটুকু ছাড়া বাকিটা পুজো না-দেখা বললেই চলে৷ তারপর শুরু যাযাবরের জীবন, এঘাট সেঘাটের জল খাওয়া, লাল চশমার ওপর বাস্তবের প্রলেপ পড়া - তখন পুজোর মানে পুজা-অর্চনা থেকে বদলে হয় নিছক আড্ডা - শুণ্য আর এক, এই দুটো সংখ্যার বাইরে একটা গেট-টুগেদার...
নিউক্যাসলে পুজো হয় - ফেনহ্যামে "হিন্দু মন্দিরে" - একদম দিনক্ষণ-তিথিনক্ষত্র মেনে, আয়োজক "নীবপা" - নর্থ ইস্ট অব ইংল্যাণ্ড বেঙ্গলি পুজা অ্যাসোসিয়েশন৷ বাক্স থেকে বের করে নতুন করে সাজানো মুর্তি নয়, প্রতি বছর কুমোরটুলি থেকে অর্ডার দিয়ে আনানো ছোট্ট মুর্তি৷ গোটা দিন শুণ্য আর এক ঘেঁটে সন্ধ্যেবেলা ফুলবাবুটি (মাইনাস ধুতি) সেজে সপরিবারে আমরা পুজো দেখতে যাই৷ লাল চশমা এখনও আছে, তাই পুজো থেকে একটু দূরে আমরা - আমি, সনাতনদা, জলদিন্দু, অংশুডাক্তার, আরো কয়েকজন৷ ফুলবিবিরাও থাকেন৷ আর কুচোকাঁচাগুলো এখানে সেখানে দৌড়ে বেড়ায়৷ আশেপাশে ইউনিভার্সিটিতে সদ্য ভর্তি হওয়া কিছু বাঙালী অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে, কারো বিলিতি বন্ধু ধুতি পরে, কারো বিলিতি বান্ধবী শাড়ি পরে৷ এরা বাস্তববাদি - প্রতি শনি-রবিবার নিয়ম করে মন্দিরে আসে, শুধু দুই দিনের ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে - রান্নার মেহনতটা বেঁচে যায় আরকি৷ দোতলায় নবরাত্রির গরবা হয়, সেখানে প্রচুর ভিড় - ইউনিভারসিটি ছাত্র-ছাত্রীদের৷ সেই ভিড়ে চোখে-চোখে কিছু কথার খেলাও চলে - ইশারা খেটে গেলে টুক করে সটকে আশেপাশের কোন পাবে চলে যাওয়া৷ আলাদা ভিড় পাকাপাকি থেকে যাওয়া লোকেদের - অধিকাংশই ডাক্তার - তাঁদের কাছে আমাদের ওজন নেই, অন্য ডাক্তারদের ওজন থাকলেও সেটা বাড়ে কমে কত বছর ধরে এখানকার বাসিন্দা তার ওপর - সাময়িক হলে আমাদের মতনই ওজনহীন৷
দোতলা থেকে কেউ একটা ঢোল নিয়ে আসেন - আমরা তারস্বরে গান ধরি৷ ওদিকে "শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরী" চলে, এদিকে জন হেনরী, পল রোবসন থেকে আমায় ডুবাইলি রে৷ একজন দুজন ধার্মিক ওই পাকাপাকি থেকে যাওয়াদের ভীড় থেকে এদিকে একটু কটমট করে তাকালেও অঞ্জলির দিক থেকে ভিড় ক্রমশ পাতলা হয়ে এদিকে সরে আসে৷ "মনের কথা হয়না বলা, বলতে লাগে ভয়, গলায় দড়ি দিয়ে গিন্নী ডুবে মরতে কয়" শুনে বিবিরা খিলখিল করে হেসে ওঠে...সন্ধ্যে থেকে রাত হয়, অনভ্যাসে গলা ভাঙতে থাকে, ঢোল পিটিয়ে হাতে টান ধরতে থাকে, তবু চলে মেহফিল...আর অপেক্ষা...কয়েকজন নজর রাখেন খাবার ঘরের দিকে - টেবিলে বড় গামলাগুলো চড়লেই সেখানে লাইন লেগে যায়৷
এর পর একটা কোথাও বিজয়ার গেট টুগেদারের কথা প্ল্যান করে যে যার বাড়ির দিকে রওনা দিই৷ রাতে ঘুমনোর সময় ঋককে দুর্গার গল্প বলি - গণেশ আর সিংহ তার সবচেয়ে প্রিয়৷ পরের দিন কতগুলো এক আর শুণ্য ঘাঁটতে হবে সে কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমনোর চেষ্টা করি৷
সুর্মা আমিন৷
কোথায় কাশফুলের রোমান্টিকতা? কোথায় ঢাকের বাজনা? দশমীর দধিকর্মা? লাইন দিয়ে মহম্মদ আলি পার্কের প্যাণ্ডেল দেখতে যাওয়া, বা কলেজ স্কোয়্যারের আলো? বিজয়গড় ভারতমাতার মাঠের অনুষ্ঠান? গড়িয়ায় নবদুর্গা দেখতে গিয়ে দশের মধ্যে দশটা বেলুন ফাটানো? মধ্যতিরিশেই নস্টালজিক আমি বিশ বছর আগের অরবিন্দ পার্কে ফিরে যাই - ঢাকে কাঠি পড়েছে, হাফ প্যান্ট পরে মিতুল দৌড়চ্ছে পুজো প্যাণ্ডেলের দিকে, কোমরে গোঁজা একটা ক্যাপ ফাটানোর রুপোলি পিস্তল, পকেটে রোল ক্যাপের দুটো প্যাকেট...কোথায় যাচ্ছিস, দাঁড়া, দাঁড়া...মিতুল ঘুরে দাঁড়িয়ে এক গাল হাসে, ওর মুখটা আস্তে আস্তে পাল্টায়...দেখি ঋক দাঁড়িয়ে আছে, স্যান্ডিফোর্ডে৷ এখানে সেই পিস্তলগুলো পাওয়া যায় না - ঢাকে কাঠি পড়ে না - সেই পুজোটাকে ঋক চেনেই না..."
গুরুচণ্ডা৯তে পুজো স্পেশ্যালের বাকি লেখাগুলো পাবেন এখানে।
Monday, September 04, 2006
আপডেট
পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ
একটি বাংলা ব্লগকথা
কারুবাসনা
সাভাসের ওয়েবলগ (টেকনিক্যাল ব্লগ)
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি
ড্রেসডেন নিয়ে পরে লিখবো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বোমারু বিমান কিভাবে ড্রেসডেনকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো তাই নিয়ে। আপাততঃ ব্যাকলগ ক্লিয়ার করি। গুরুচণ্ডা৯-তে তিনটি নতুন লেখা -
মাঙ্গুলি নাহাকের মৃত্যু
দ্য সিল্ক রোড - স্বেন হেদিন
বঙ্গীয় বারোমাস্যা - দ্যাখ কেমন লাগে
১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ - জানি অনেকদিন আপডেট হচ্ছে না, হাতে একদম সময় নেই। অনেক গল্প বলার আছে - ড্রেসডেনের, ড্রাগন বোট রেসের গল্প...দেখি, সময় পেলে লিখবো। ম্যাক থেকে লিখতে পারলে সুবিধা হত, কিন্তু ইউনিকোড ঠিকমতন আসে না যে...
Tuesday, August 22, 2006
পাগলা সানাই...
বিসমিল্লার পাগলা সানাই,
হাত পেতে নিয়ে চেটেপুটে খাই
স্মৃতিবিজড়িত পাগলা সানাই...
চলে গেলেন সানাইয়ের একছত্র বাদশা - উস্তাদ বিসমিল্লা খান। পাগলা সানাই কিন্তু রয়ে যাবে আমাদের সকলের মধ্যে...যাবেই।
Monday, August 21, 2006
গান যখন আচ্ছন্ন করে...
"Now you're telling me
You're not nostalgic
Then give me another word for it
You who are so good with words
And at keeping things vague
Because I need some of that vagueness now
It's all come back too clearly
Yes I loved you dearly
And if you're offering me diamonds and rust
I've already paid"
গানটা বায়েজ লিখেছিলেন ডিলানকে নিয়ে, ডিলান যখন বায়েজকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন তখন বায়েজ বলেছিলেন - "I was heartbroken" - সেটা যে কত গভীর, তা বায়েজের গানটা শুনলে প্রতি লাইনে বোঝা যায়।
বায়েজের প্রতিটা গানই দুর্দান্ত - ওঁর গলার স্বরে একটা অদ্ভুত কিছু রয়েছে যেটা মনের মধ্যে গেঁথে যায়। আরেকটা গানের কথা না বললে বায়েজের গান সম্পর্কে লেখা পুরো হবে না - "Song of Bangladesh" - ১৯৭১ সালের পয়লা আগস্টের "Concert for Bangladesh" নিয়ে আমার এক বন্ধু/ভাই লিখেছে তার ব্লগে, ওকে পাঠিয়েছিলাম বাংলাদেশ নিয়ে বায়েজের এই গানটা...
"Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh
The story of Bangladesh
Is an ancient one again made fresh
By blind men who carry out commmands
Which flow out of the laws upon which nation stands
Which is to sacrifice a people for a land
Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh
Once again we stand aside
And watch the families crucified
See a teenage mother's vacant eyes
As she watches her feeble baby try
To fight the monsoon rains and the cholera flies
And the students at the university
Asleep at night quite peacefully
The soldiers came and shot them in their beds
And terror took the dorm awakening shrieks of dread
And silent frozen forms and pillows drenched in red
Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh
Did you read about the army officer's plea
For donor's blood? It was given willingly
By boys who took the needles in their veins
And from their bodies every drop of blood was drained
No time to comprehend and there was little pain
And so the story of Bangladesh
Is an ancient one again made fresh
By all who carry out commands
Which flow out of the laws upon which nations stand
Which say to sacrifice a people for a land
Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh"
আজ পঁয়ত্রিশ বছর পরেও ঘটনাগুলো রয়েই গেছে, দেশের নাম বদলে যায়, আক্রমণকারীর পরিচয় বদলে যায় - ঘটনাগুলো একই রয়ে যায়। তাই "Song of Bangladesh" কখনো পুরনো হয় না। বায়েজও তাঁর জায়গায় থেকে যান - ওয়াশিংটন স্কোয়্যারের ভিড়ে যুদ্ধবিরোধী মানুষগুলোর কন্ঠে, আরো অনেক প্রতিবাদী গায়ক-গায়িকার সাথে...
এবং আমাকে এই মুহুর্তে দিওয়ানা - ফিদা - পাগল - যা খুশী বলতে পারেন, একটুও তর্ক করবো না, বায়েজে আমি এতটাই আচ্ছন্ন।
Thursday, August 17, 2006
স্বপ্ন দেখতে দেখতে...
আইডিয়াটা মন্দ নয় - বাড়ি যেতে হলে দশ ঘন্টা প্লেনে কাটাতে হয়, অসহ্য। ঘুম পাড়ানি ইঞ্জেকশন নিতে আমি অন্ততঃ খুব রাজি। তার সঙ্গে "কাস্টমাইজড স্বপ্ন" - ঘুমোতে ঘুমোতে স্বপ্ন দেখবেন হাওয়াইয়ের সমুদ্রতটে বসে আছেন, বা এভারেস্টের চুড়োয়...স্বপ্ন শেষ হলেই আপনার গন্তব্যস্থল...বাড়ি। মন্দ কি?
Wednesday, August 16, 2006
আবাপ দেখতে পাচ্ছি না...
প্রসঙ্গতঃ, ইউনিকোড নিয়ে এই লেখাটা ভালো লাগলো, এই নিয়ে একসাথে এগোনো খুব জরুরী।
Tuesday, August 15, 2006
রাজনীতির শিকার না অরাজনীতির?
জনতার আদালতে, আনন্দবাজারের বিচারে দোষী হল "ছাত্র রাজনীতি"...এই পোস্টটা সেই নিয়েই। সৌমিকের মৃত্যু নিঃসন্দেহে দুঃখজনক, কিন্তু দোষী কি রাজনীতি, না কিছু আহাম্মক যারা রাজনীতিতে ঢুকে বসে থাকে? দিন দুয়েক আগে টাইমস অব ইন্ডিয়া মতামত জানতে চেয়েছিলো, খুব স্বাভাবিকভাবেই যা বলেছি তার ৮০% গায়েব...
প্রথমে একটা কথা আছে আবাপ-র বক্তব্য নিয়ে - "বাইরের সক্রিয় রাজনৈতিক সহায়তায় ভিতরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা থাকে" - একেবারে গপ্পোকথা৷ আমাদের সঙ্গে এস এফ আই জেলা বা রাজ্য কমিটির যোগাযোগ ছিলো ঠিকই, এবং থাকাই স্বাভাবিক, কিন্তু বি ই কলেজের আভ্যন্তরীন ইস্যুতে আমরা কখনো কাউকে নাক গলাতে দিই নি৷ জেলায় যদি ছাত্র ধর্মঘটের ডাক থাকতো, তার প্রচার আমরা নিজেরা করতাম, কলেজের ভিতরে বাইরে থেকে এস এফ আই কমরেডরা এসে কাজ করতো না - এই ব্যাপারে আমাদের ক্লিয়ার আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো - হ্যাঁ, বিভিন্ন লেভেলে মীটিং হয়েছে, কখনো আমাদের ঘরেই, কিন্তু ওই অবধিই৷ কাজেই বাইরে থেকে অন্য কর্মীরা এসে ভোটের সময় গণ্ডগোল করতো - এটা রীতিমতন কষ্টকল্পনা৷ বরং ভোট বা ছাত্র পরিষদের ধর্মঘটের সময় অম্বিকা ব্যানার্জীকে কলেজে ছাত্র পরিষদের বেঞ্চিতে বসে থাকতে দেখেছি৷
অবশ্য বাইরের সাধারণ লোকজনের সঙ্গে বি ই কলেজের ছাত্রদের সম্পর্ক কোনকালেই স্বাভাবিক ছিলো না৷ অনেক ক্ষেত্রেই "আমি কি হনু" ভাব দেখাতে গিয়ে এক শ্রেণীর ছাত্র একটা বাজে ধারণা তৈরী করতো৷
তবে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি অবধি কলেজের অবস্থা অনেক সুস্থ ছিলো, কারণ চেষ্টা করা হত একটা সুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাখার৷ তখন কলেজে ছাত্র ফেডারেশন ছাড়াও ছিলো ছাত্র পরিষদ এবং নকশালপন্থী পি এস এ - স্ট্রাইক-টাইকের সময় কলেজ গেটে গণ্ডগোল হয়নি তা নয় - কিন্তু হকি-স্টিক, রড, চেন - না:, সে অবস্থায় পৌঁছত না৷ একবারই বড় গণ্ডগোল হয়েছিলো - কিছু বিশেষ ছাত্র কয়েকজন কর্মচারী এবং, ডেপুটি রেজিস্ট্রারের গায়ে হাত তোলার পরে - সেই গণ্ডগোলটা এতটাই ছড়িয়েছিলো যে আশে পাশের মানুষজন জড়িয়ে পড়েছিলো৷ কিছুদিনের জন্যে হোস্টেল খালি করে দিতে হয় - আমরা তখন ফার্স্ট ইয়ার, সম্ভবত ৯২ সালের শুরুর কথা - তবে সেই কয়েকজন ছাত্র ক্ষমা চেয়ে নেয়, শাস্তিও হয়, এই ঘটনা ওখানেই শেষ হয়ে গেছিলো৷
তবে এখনকার মতন ঘটনা - ছাত্রদের মধ্যে এরকম মারামারি - আমাদের কাছে নতুন৷ এই ট্রেন্ডটা দেখছি নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে৷ মানে যে সময় থেকে কলেজে রাজনীতির ট্রেন্ড কমতে থাকে৷ নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিই তত্কালীন ভিসি - স্পর্শমণি চট্টোপাধ্যায়, এবং রেজিস্ট্রার - এন উপাধ্যায় - রাজনৈতিক কাজের ওপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা জারি করতে শুরু করেন - টি এন শেষন স্টাইলে, বা এবারের বিধানসভা নির্বাচন স্টাইলে৷ এর আগে থেকেই ছাত্র পরিষদ একটা "অরাজনৈতিক" ভাব বজায় রাখতো - অরাজনীতির রাজনীতি, যেটাকে আমরা কাউন্টার করার চেষ্টা করতাম৷ কলেজ কতৃপক্ষও সমস্ত রাজনৈতিক কাজের বিরোধিতা করায় এই অরাজনৈতিক ব্যাপারটা হাওয়া পায়, ছাত্র পরিষদ পাল্টে এখনকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসলিডেশন তৈরী হয় - এদের তো নিজেদের মধ্যেই খেয়োখেয়ি আছে...ছাত্র পরিষদের "অরাজনৈতিক" বক্তব্য ছিলো- "কলেজে এসেছিস, ফূর্তি করবি, মস্তি করবি - বাইরে কি হল তাই দিয়ে আমাদের কি দরকার" - আমরা এটাকে ঠেকাতাম৷ এই মস্তি/ফূর্তি কালচার কিন্তু আরো অনেক কিছু টেনে এনেছিলো - মদ, ব্লু ফিল্ম, কোরেক্স...আমরা হোস্টেলে প্রয়োজনে জোর করে ব্লু ফিল্ম আটকেছি, এই কালচার ঠেকানোর চেষ্টা করেছি পলিটিক্যালি৷ মুশকিল হল এই কালচারের বিরুদ্ধে লড়াই না থাকলে, এই কালচার ছেয়ে যায়...এবং সেটাই সম্ভবতঃ হয়েছিলো, সম্ভবত এখনও রয়ে গেছে৷
এছাড়া অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রশ্ন আছে - আমার ব্যক্তিগত (এবং সম্ভবত অনেকের ব্যক্তিগত) ধারণায় স্পর্শমণি চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত বাজে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ছিলেন - যত নামকরা অ্যাকাডেমিকই হয়ে থাকুন না কেন৷ ওঁর আগে ড: বিমল সেনের একটা অসাধারণ পার্সোনালিটি ছিলো, যার জন্যে তিনি অনেক শ্রদ্ধা আদায় করে নিতেন৷ ড: সেনের সাথে মুখোমুখি প্রচণ্ড তর্ক হয়েছে, উনি একবার আমাকে সকলের সামনে বলেছিলেন "তুমি কি করে কলেজ থেকে বেরোও দেখবো" - কিন্তু ওঁর ওপর থেকে শ্রদ্ধা কমেনি - উনি আমাদেরও কিন্তু সমান রেসপেক্ট দিতেন৷ এই ব্যাপারটা পরের দিকে কমে এসেছিলো বলে মনে হয়৷
আরো একটা ব্যাপার আমার মনে হয় এখানে কাজ করেছে - আমাদের সময়ে ফার্স্ট/সেকেণ্ড/থার্ড ইয়ার - সব একই হোস্টেলে থাকতো - ফলে মেলামেশা অনেক বেশি ছিলো৷ এর খারাপ দিকও ছিলো - নির্বিচারে ragging, এর জন্যেই ৯৪-৯৫ সালে হোস্টেল আলাদা করে দেওয়া হয়৷ ছাত্র পরিষদ এর তুমুল বিরোধিতা করে, ছাত্রদের অধিকাংশও - বেশ কিছুদিন অনশন হয়েছিলো৷ এস এফ আই নীতিগত কারণে হোস্টেল আলাদা করে দেওয়াকে সমর্থন করেছিলো৷ আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওই আলাদা করে দেওয়াতে এক হোস্টেলে থাকার মতন মেলামেশা যে বন্ধ হয়ে গেছিলো, সেটাই এখনকার এই গোলমেলে অ্যাটিচিউডের একটা কারণ নয়তো? এখন অধিকাংশ গণ্ডগোল কিন্তু এক হোস্টেল বনাম আর এক হোস্টেল, অর্থাৎ, এক ইয়ার বনাম আরেক ইয়ার...
আরো একটা পনেরই আগস্ট...
"সেদিন যখন জাতীয় পতাকায় মালা
আর গান্ধী-নেহরুর কপালে চন্দনের তিলক আঁকা হচ্ছিল,
কৃষাণী হরিদাসী তার ভগ্নকুটীরের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি,
শতছিন্ন পোশাকে বেরিয়ে পড়েছিল পথে,
স্বাধীনতার পতাকার আড়ালে
সে এক সুখী সমাজ ও জীবন দেখতে পেয়েছিলো৷
রমজান মিঞা, উদ্দাম মেঘনায়
যে দরাজ গলায় গান গেয়ে নৌকা বাইতো,
সে সেদিন জোর করে
তার নৌকোটাকে মাঝনদীতে ডুবিয়ে দিয়েছিলো,
সে জেনেছিলো রোদ-বৃষ্টি-ঝড়কে উপেক্ষা করে
তাকে আর নৌকা ঠেলতে হবে না৷
স্বাধীন হয়ে গেল সবাই, নদী ঝাঁপিয়ে
সেও সেদিন পথের মিছিলে ছুটে এসেছিলো৷
ভুতনাথ মাহাতো, যে রাজপথে রিক্সা চালাতো,
সে সেদিন ভোরে উঠে তার গাড়ি সাজালো,
মালায়, চন্দনে আর পতাকায়৷
পথে বেরলো সে, বড় আনন্দের দিন...
হঠাৎ ভুতনাথ লাফিয়ে উঠলে, চিত্কার করে উঠলো,
বন্দে মাতরম্, বন্দে মাতরম্৷
মেঘনা নদীর সেই মাঝি আজ গান ভুলে গেছে,
উদাস নয়নে সে এখন নদীর ধারে বসে থাকে৷
হরিদাসী এখন গঞ্জের নিষিদ্ধ এলাকায় সন্ধ্যের পরে দাঁড়িয়ে থাকে
একমুঠো অন্নের আশায়৷
ভুতনাথ মাহাতো শহরের ফুটপাথে রাত কাটায়,
নি:স্তব্ধ রাত্রে তার কাশির শব্দ শোনা যায়৷
অথচ, ঠিক তেমনি করে সেদিনের মতো আজও
হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ টাকায় ব্যয় করে
স্বাধীনতাদিবস পালিত হয়,
লালকেল্লার দুর্গ থেকে ভাষণ প্রতি ঘরে ঘরে শোনা যায়,
হরিদাসী, রমজান মিঞা, ভুতনাথ মাহাতো
চিত্কার করে বলে ওঠে -
স্বাধীনতা, তুমি কার?
স্বাধীনতা, তুমি কিসের জন্যে?"
Thursday, August 10, 2006
টুকিটাকি
" (১) এখন গরমকাল - বেজায় গরম, যাকে বলে "পীক সামার" - গোটা ইংল্যাণ্ডে লোক হাঁসফাঁস করছে৷ করবে নাই বা কেন,প্রধাণত: শীতের দেশ, সেখানে দুম করে বত্রিশ-তেত্রিশ-কোথাও পঁয়ত্রিশ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা অস্বস্তিকর তো বটেই৷ তুমুল জল্পনা - উনিশশো এগারোর রেকর্ড (সাঁইত্রিশ ডিগ্রী) হয়তো ভাঙতে পারে৷ সকালের মেট্রোতে খবর - "Commuters in London are travelling in temperatures higher than those in which cattle are transported. Buses in London have reached 52 degree Celcius, while the tube reached 47 degrees. According to the EU guidelines, cattle are not to be transported in temperatures above 27 degrees." হাঁসফাঁসানো লোকে কটিবস্ত্র গলিয়ে ঝাঁক বেঁধে দৌড়েছে সমুদ্রের ধারে৷ লণ্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়্যারে ঘুরতে গেলে ওখানকার ফোয়ারাতে অগণিত স্নানদৃশ্য - মতান্তরে চোখের আরাম৷
(২) এইচ এম এস গ্লস্টার - যে কিনা বেইরুট থেকে একশো আশি জন আটকে পরা ব্রিটিশদের সাইপ্রাসে নিয়ে এসেছে, ক্রমশ আরো আসবে - আনুমানিক বিশ হাজার - ডানকার্কের পর এই প্রথম এত বড় ইভ্যাকুয়েশন৷
(৩) লেবাননের ওপর আরো ইজরায়েলী বোমা-বর্ষন৷
(৪) জি-৮ সামিটে বড়দা বুশ এবং ছোট ভাই ব্লেয়ারের ঘনিষ্ঠ কথোপকথন - যেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জ, হেজবোল্লার পাশাপাশি আলোচনার বিষয়বস্তু হয় একটা সোয়েটার৷
(৫) ফুটবলের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ "সেল" - জুভেন্টাস, লাজিও, ফিওরেন্টিনা আর এ সি মিলানের শাস্তির পরে কোন ফুটবলারের বাজারে কত দাম৷
(৬) তৃতীয়বার বাবা হলেন গর্ডন ব্রাউন৷৷৷
...
এর মাঝে দুটো ছোট্ট খবর একবার সামনে এসেই মিলিয়ে যায়, বুলবুলভাজার হেডলাইন সেগুলোই...
(১) সেই এক নিরীহ ব্রাজিলিয় ইলেক্টিশিয়ানের কথা মনে পড়ে? সেই জাঁ চার্লস ডি মেনেজেস? বাইশে জুলাই, ২০০৫ যাকে সশস্ত্র পুলিশবাহিনী স্টকওয়েল টিউব স্টেশনের ভিতরে গুলি করে মারে "সুইসাইড বম্বার" সন্দেহে - কোন প্রশ্ন না করে, কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে? প্রায় এক বছর পর ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের রায় - কোন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই, হ্যাঁ, কিছু ভুল হয়েছিলো বটে৷
"Despite mistakes made in planning and communication by officers, there had been "insufficient evidence to provide a realistic prospect of conviction against any individual police officer"."
ইনডিপেন্ডেন্ট পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট অন্ধকারে থেকে যায়, সম্ভবত পুরো ঘটনার কঠোর-সমালোচনার জন্যে৷ ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের রায় - ১৯৭৪ সালের "কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ এবং সুরক্ষা" আইনের সেকশন তিন এবং তেত্রিশ নম্বর ধারার আওতায় মেট্রোপলিটান পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক - for "failing to provide for the health, safety and welfare" of Mr Menezes on 22 July - খুন নয়, ফেইলিং টু প্রোভাইড হেল্থ, সেফটি অ্যাণ্ড ওয়েলফেয়ার৷ পুলিশ কখনো খুন করে না৷
সাঁইত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় স্টকওয়েল টিউব স্টেশনের পাশে জাঁ চার্লস ডি মেনেজেসের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে পড়ে থাকা ফুলগুলো শুকোতে থাকে...
(২) সোয়ান হান্টার শিপইয়ার্ড থেকে ধীরগতিতে বেরিয়ে যায় ইয়ার্ডে তৈরী হতে থাকা শেষ জাহাজটা - কাজ শেষ হবে গ্লাসগোতে৷ টাইন নদীর দুধার নীরব চোখে তাকিয়ে থাকে ক্রমশ: দূরে যেতে থাকা ষোল হাজার টনের RFA Lyme Bay -র দিকে৷ একশো ছেচল্লিশ বছরের জাহাজ তৈরীর ইতিহাস শেষ, বন্ধ হল টাইনের ধারের শেষ জাহার তৈরীর ইয়ার্ড৷ প্রতিরক্ষা দপ্তরের বক্তব্য ক্রমবর্ধমান খরচ, এবং কাজ শেষ হতে দেরীই এই কনট্র্যাক্ট বাতিল করে দেওয়ার কারণ, এবং, তার জন্যে দায়ী সোয়ান হান্টারের ম্যানেজমেন্ট৷ জাহাজের কোয়ালিটি নিয়ে কোন বিতর্কই নেই৷
কয়েক দশক আগেও এই একই সোয়ান হান্টারে কাজ করতো প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার শ্রমিক, নয় নয় করে ষোলশোর বেশি জাহাজ তৈরী হয়ে বেরিয়েছে এই ইয়ার্ড থেকে...কিন্তু নর্থ-সাউথ ডিভাইড অন্যান্য ইয়ার্ড আর কোলিয়ারিগুলোর মতন এরও শেষ বাঁশি বাজিয়ে দিলো৷
সাঁইত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পুড়তে থাকে ধুলো ঢাকা নির্জন সোয়ান হান্টার - টাইন নদীর ধারের শেষ শিপইয়ার্ড৷৷৷হয়তো এবার এখানে জাহাজ ভাঙা হবে..."
Wednesday, August 02, 2006
ওরা ভবিষ্যতের সন্ত্রাসবাদী
বাংলালাইভ মজলিশে দূর্গার লেখাটা পড়ে থমকে গেলাম৷ কিছুদিন ধরেই এই বিষয়টা নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিলো, আজ মনে হল দূর্গার লেখাটা দিয়ে শুরু করি৷
"কাল ছবিটা তাড়াতে চেয়েছি অনেক, আজ আবার এই লেখাটায় করে সে এসে পৌঁছলো আমার সামনে৷ তুলে দিচ্ছি - 'He picks up the body of the smallest one and holds it up for a second to show us. The boy is dressed in green shorts and white sleeveless t-shirt. Aside from the white dust that covers his body, there are no signs of the blast trauma and falling concrete that likely killed him. His eyes are closed and the only evidence of his violent death seems to be the slight gritting of his teeth.'
মুছে দিতে চাই ওকে মন থেকে, এখানেই ক'দিন আগে পড়া দাওয়াইটাই কাজে লাগাতে চাই, "ভবিষ্যতের সন্ত্রাসবাদী" ভাবতে চাই ওকে, কিন্তু পারি না৷ ও ঠিক গিয়ে ঠাঁই নেয় ছোট্ট দুটো হাফপ্যান্ট পরা পায়ের পাশে, যে ঘুমিয়ে থাকা পা দুটোতে আদর করে আমি অফিসে এসেছি আজ৷ সত্যিই মনে হয় - পুরোপুরি অপ্রকৃথিস্ত না হয়ে গেলে এই পৃথিবীতে স্বাভাবিকভাবে থাকা খুবই কঠিন৷
ওরা ভবিষ্যতের সন্ত্রাসবাদী৷ একজন লিখেছিলেন (সেই বাংলালাইভেই) - যে তিনশোজন বোমার আঘাতে মারা গেছে, খোঁজ নিয়ে দেখলে জানা যাবে তার মধ্যে দুশোজনই সন্ত্রাসবাদী, আর পঞ্চাশজন 'ভবিষ্যতের সন্ত্রাসবাদী'৷ সেদিন চমকেছিলাম - কি অদ্ভুত সহজভাবে আমরা মানুষকে চিহ্নিত করে দিই...যে সাইঁত্রিশটা শিশু মারা গেলো, তাদের গায়ে আমরা সভ্য শিক্ষিত মানুষের দল কি অনায়াসেই ছাপ মেরে দিয়েছিলাম সেদিন...ওরা ভবিষ্যতের সন্ত্রাসবাদী...
"কত হাজার মরলে পরে, মানবে তুমি শেষে
বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে"
আজ নিজেকে সভ্য, শিক্ষিত বলতে লজ্জা করলো৷
Wednesday, July 26, 2006
একটা গানের খাতা
গানগুলো সঙ্গ ছাড়েনি, এখনও গুণগুণিয়ে...ঘরে বা চানঘরে...ছেলেকে শোনানোর জন্যে...কয়েকদিন আগে একটা গান পুরোটা মনে না পড়াতে সেই খাতাটার কথা মনে পড়লো - কত যে গান ছিলো ওতে...
শমিক গানটা যোগার করে দিয়েছে, লক্ষ্মী ছেলে...
হুঁশিয়ার, ও সাথী কিষাণ মজদুর ভাইসব হুঁশিয়ার।
মৃত্যুর বিভীষিকা ছড়াতে ছড়াতে গ্রাম
জ্বালাতে জ্বালাতে মাটি
হিংস্র সাপের রাশি তুলেছে ফনা
কেড়ে নিতে বাঁচবার লড়বার অধিকার
রক্তে রক্তে বোনা ফসলের অধিকার
সাথীদের খুনে রাঙা পথে দ্যাখো
হায়েনার আনাগোনা...
জানি পারবে না কেড়ে নিতে জনতার অধিকার
পারবে না কেড়ে নিতে পারবে না,
পারবে না শত্রুরা পারবে না।
জাগ্রত জনতার রোষানলে পুড়ে যাবে
পুড়ে যাবে শত্রুর শাণিত ফনা।
পারবে না শত্রুরা পারবে না৷
তাই আহ্বান দিকে দিকে নয় আর দেরি নয়,
সময় তো নেই আর ভাই রে
জোটটাকে আমাদের বজ্রকঠিন করে
তুলে নাও হাতিয়ার ভাই রে
ছিঁড়ে ফ্যালো দৃঢ় হাতে চক্রান্তের জাল
বিভেদের কুমন্ত্রণা,
সাথীদের খুনে রাঙা পথে দ্যাখো
হায়েনার আনাগোনা...
জানি জ্বলছে জ্বলছে শত অগ্নিপাথার বুকে
চক্ষে চক্ষে জ্বলে তীব্র ঘৃণা
সাথীদের খুনে বুকে উল্কা-জ্বালার দাহ
রক্তিম শপথের ভরা চেতনা
সাথীদের খুনে রাঙা পথে দ্যাখো
হায়েনার আনাগোনা...
তাই আহ্বান
ও সাথী কিষাণ মজদুর ভাই শোন আহ্বান।
তাই আহ্বান দিকে দিকে নয় আর দেরি নয়,
সময় তো নেই আর ভাই রে
জোটটাকে আমাদের বজ্রকঠিন করে
তুলে নাও হাতিয়ার তাই রে
কালজয়ী সংগ্রাম শুরু করো বন্ধুরা
হেঁকে বলো সইব না, সইব না
সাথীদের খুনে রাঙা পথে পথে
হায়েনার আনাগোনা আর সইবো না।
সাথীদের খুনে রাঙা পথে দ্যাখো
হায়েনার আনাগোনা...
থ্যাঙ্ক ইউ, শমিক।
একজন প্রতিবাদী গায়ক - পীট সীগার
The New Yorker
April 17, 2006
THE PROTEST SINGER
Pete Seeger and American folk music.
BY ALEC WILKINSON
'You wouldn't have heard that speech fifty years ago," Toshi said.
Monday, July 17, 2006
রোজবেরি টপিং, ফাটা প্যান্ট এবং মাউন্টেন রেসকিউ
গপ্পোটা বলি শোন৷
প্রতি হপ্তাতেই প্রায় কোথাও না কোথাও যাই - বয়স হচ্ছে, ওজন বাড়ছে - তাই হাঁটতে, বেড়ানোও হয়, সাথে একটু গা-ঘামানো, এই করেই যদি ওজনটা কমে৷ ব্রিটিশরা হাঁটতে খুব ভালোবাসে, তাই হাঁটার রুট নিয়ে প্রচুর সাইট আছে, ওয়াকিং রুটগুলো খুব ভালো করে মেনটেন করা হয়, রীতিমতন ভালো ডিরেকশন দেওয়া...তো সেই রকম এক সাইট থেকে "রোজবেরি টপিং" এর খবর জোগাড় হল৷ মিডলসবরোর কাছে "নর্থ-ইয়র্ক মুর"-এর একদম শুরুর দিকে, মাইল চারেকের পথ, ক্যাটেগরি "strenuous" (যদিও সেটা আগে খেয়াল করে দেখা হয়নি) - হেঁটে একটা পাহাড়ের মাথায় ওঠা এবং নামা, পথটা একটা বনের মধ্যে দিয়ে গেছে, আশেপাশের দৃশ্য অতীব সুন্দর - এরকমই দাবি ছিলো লিফলেটে৷ তাই গেলুম, পার্কিং লটে গাড়ি রেখে একটু খেয়ে হাঁটার শুরু৷
কিছুদূর গিয়ে দেখলুম রাস্তা দুভাগ হয়েছে, একটা পথ বাঁদিকে চলে গেছে, দিব্যি সুন্দর হাঁটা রাস্তা, আরেকটা সিধে ওপরদিকে উঠেছে, ভালো চড়াই (সেটা কতদূর ভালো সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য)৷ সিধে রাস্তাতে দেখলাম বেশ ওপরে জনাদুই লোক উঠছে, আমরাও ভাবলুম এটাতেই যাই৷ আমি একবার সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলুম - একটা পুঁচকে ছেলে আছে, ফুটপাথ ধরেই যাই, কিন্তু...তো যাই হোক, এই ভোটের ফল তো জানা - ভোট নয়, ভেটো - চড়াইটাই ধরা ঠিক হল৷
চড়াইয়ে তিনটে ধাপ, প্রথম ধাপটা ছোট, পঞ্চাশ ফুট মতন - খুব বেশি খাড়া নয়, কিন্তু ঝুড়ো মাটি৷ তার মধ্যে যে পাথর-টাথরগুলো আটকে রয়েছে সেই ধরে প্রথম ধাপ অবধি তো পৌঁছনো গেলো৷ সেখানে আবার সেই জনসাধারণের জন্যে নির্মিত পথখানা...চড়াইয়ে উঠছি, তাই সেখানাকে ইগনোর মোডে ফেলে দেওয়া গেলো৷ এবার দ্বিতীয় ধাপ৷ প্রথম কুড়ি-তিরিশ ফুট অবধি ঠিকঠাক, কিন্তু হাত ব্যবহার না করলে হেঁটে ওঠা অসম্ভব৷ আমি সুমনাকে বল্লুম তুমি আর ঋক আগে ওঠ, আমি পিছনে আসছি, দরকারে আমি ধরতে পারবো - কেউ যদি গড়ায় আর কি৷ সে প্ল্যান খাটলো না৷ ঋকবাবু মায়ের সঙ্গে যাবেন না, এবং তাঁর প্রথম আপত্তি হল হাতে মাটি লাগবে৷ একটু চেষ্টা-চরিত্তির করতে করতেই তিনি একবার ধপাস হয়ে ভ্যাঁ জুড়লেন - অগত্যা আমার হাত ধরে তাঁর ওঠা শুরু হল৷ আমি এক হাতে ঋককে একটু করে তুলছি, তারপর নিজে উঠছি, পিঠে ব্যাগ, পিছনে সুমনা আসছে৷ এবার যত উঠি, দেখি স্লোপটা তত খাড়া হচ্ছে৷ সামনের প্রায় শ তিনেক ফুট বেশ খাড়া - আমাকেও হাত-পা ব্যবহার করে রীতিমতন স্ক্র্যাম্বল করতে হচ্ছে৷ এবং ঋককে নিয়ে ওঠা ক্রমশ: মুশকিল হচ্ছে৷ কিন্তু ততক্ষণে প্রায় পঞ্চাশফুট উঠে এসেছি, ঐ পথে নামা আরো কঠিন৷ আমি আগে পুরুলিয়ায় পাহাড়ে চড়েছি দড়িদড়া নিয়ে - আমি পারলেও, ঋককে নামাতে পারবো না, সুমনা বলেই দিলো ও নামবে না, মানে পারবে না৷ সুতরাং উঠে যাওয়াই একমাত্র উপায়৷
প্রায় মাঝামাঝি যখন পৌঁছেছি, তখন আরেকটা কোনক্রমে দাঁড়ানো বা বসার জায়গা, সেখানে ঋককে বসিয়ে ভালো করে ওপর-নীচ খতিয়ে দেখলুম৷ সামনে আরো অন্তত: দেড়শো ফুট, প্রায় ন্যাড়া, মাটিতে অল্প ঘাস, কিন্তু সে ঘাস ধরে ওঠার চেষ্টা করলে ঘাস উপড়ে আসবে৷ আগে অন্যান্য লোক গেছে বলে (এবং ভেজা অবস্থায় গেছে নির্ঘাত) কিছু খোঁদল রয়েছে - জুতোর খোঁদল৷ ওগুলো ধরে ওঠা ছাড়া কোন গতিক নেই৷ আরেকবার ভাবলুম নেমে যাবো কিনা - কিন্তু তখন নামা অসম্ভব হয়ে গেছে৷ সুমনা ঐ ছোট ধাপের কাছাকাছি যখন পৌঁছেছে, তখন আমি ঋককে নিয়ে আবার উঠতে শুরু করলুম - এবার আর কোথাও দাঁড়ানোর উপায় নেই৷ নিচে সুমনাকে যে টেনে তুলবো, তাও সম্ভব নয়৷ এক হাতে ঋককে একটু করে তুলছি, এবার ওকে বাধ্য হয়ে হাত দিয়েও খামচে উঠতে হচ্ছে, একটা জুতোর গর্তে ঋক যখন পা রাখছে, ওকে পিছন থেকে ধরে আমি নিজে এক ধাপ উঠছি৷ মাঝে মাঝেই ঋক আমার ঘাড়ে ওঠার জন্যে বায়না করছে - ঘাড়ে উঠবে কি - পিঠে বাঁধা গেলে হয়তো ওঠা সম্ভব৷ হঠাত্ "ফড়াত্" - আমার সাধের আউটডোর ট্রাউজারের পায়ের ভিতরের দিকে যে সেলাই থাকে সেখানে ফাটলো৷ প্রথমে ছোট৷ তারপরে এক একটা ধাপ উঠছি, আরেকটু ফড়াত্...ঋকের কান্না, ঐ ফড়াত্ ফড়াত্, আর সুমনার "এবার কোনদিকে" শুনতে শুনতে আর ঋককে কোনমতে ঠেলতে ঠেলতে দ্বিতীয় ধাপের মাথায় তুলে ধপ করে বসে পড়লুম৷ ঋককে একটা পাথরের পাশে বসিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে চমত্কৃত৷ ওখান থেকে পড়লে আর দেখতে হবে না...গড়গড়িয়ে সিধে নীচে, তাতে মরণ না হলেও হাসপাতালে গমন অবশ্যম্ভাবী৷ দ্বিতীয় চমক নিজেকে দেখে - বেল্টের ঠিক নীচ থেকে হাঁটুর তলা অবধি - প্যান্টটা পুরো পতাকা হয়ে ঝুলছে, পুলিশে চাইলে ইনডিসেন্ট এক্সপোজারের জন্যে হাজতে ভরতে পারে, একদম কেলেংকারী কেস নয় যদিও, তবুও...
এবার তৃতীয় সমস্যা হল সুমনাকে দেখতে পাচ্ছি না৷ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, তার নীচের বেশ কিছুটা অতি খাড়া, তার নীচে খান কয়েক ঝোপঝাড়, কিন্তু সুমনা নেই৷ হাঁক পাড়লুম - ঝোপের আড়াল থেকে সাড়া এলো৷ সুমনা ওখানে আটকে আছে, আর এগোতে পারছে না৷ অনেক হাঁকডাকের পর মাথাটা বেরলো, তারপর বাকিটা - ওখানে চারটে খোঁদলে হাত-পা আটকে সুমনা প্রায় ত্রিশঙ্কু৷ বেশ কিছুটা মেহনত করে ফুট কয়েক উঠলো, কিন্তু এমন একটা জায়গায় চলে গেছে যেখান থেকে ধরে ওঠার মতন আর কিছু নেই৷ আমি যে গর্তগুলো বেয়ে উঠেছি সেগুলো থেকে বেশ কিছুটা ডানদিকে সরে গেছে৷ এবার আমি যত বলি গর্তগুলোর কাছে এসো, সে আর পারে না৷ বলে আমি আর উঠতে পারবো না, নামতেও পারবো না - তুমি এমার্জেন্সী ডায়াল করো৷ মুশকিল হল আমি ঋককে বসিয়ে যেতে পারছি না, কারণ আমি নামলেই তিনি ধারে এসে পর্যবেক্ষণ শুরু করবেন - তাহলে পড়ে যাবার প্রভুত চান্স৷ দড়িও নেই যে দড়ি নামিয়ে দেবো...আর অন্য কেউও সেদিক দিয়ে আসছে না যে সাহায্য করবে৷ গতিক না দেখে করলুম ৯৯৯ - তারা বলে "ফায়ার, অ্যামবুলেন্স না পুলিশ" - আমি বল্লুম "মাউন্টেন রেসকিউ" - তো সেখানে ট্রান্সফার করে দিলো৷ ওদের পুরো অবস্থাটা বল্লুম - যে আমার বউ রোজবেরি টপিংয়ের স্লোপে ঝুলছে, উঠতেও পারছে না, নামা সম্ভব নয় - বাঁচাও...সে কত প্রশ্ন - তোমার নাম কি, বউয়ের নাম কি, বয়স কত, তোমার সাথে আর কেউ আছে কিনা, বাচ্চা-টাচ্চা - বল্লুম হ্যাঁ, একটা ছোট ছেলে আছে, কিন্তু সে সেফ...তখন বল্লে যে আমরা আসছি৷
এর ঠিক পরেই দেখি একটা অল্পবয়সী ছেলে আর তার বাবা ঐ পথেই উঠছে৷ ছেলেটা রীতিমতন মাউন্টেনিয়ারিং জানে, চটপট উঠছে, তার বাবাও তাই৷ ওরা পাশ দিয়ে আসার সময় সুমনাকে বললো যে ওরা যেখান দিয়ে যাচ্ছে, সেখান দিয়ে আসতে৷ ছেলেটার বাবা বেশ ভারিক্কী চেহারার, ওকে দেখে সুমনার ভরসা মনে হয় বাড়লো কিছুটা, হাঁচোড়-পাঁচোড় করে মাথা অবধি চলে আসার পরে আমি টেনে নিলুম৷ সাথে সাথেই মাউন্টেন রেসকিউয়ের ফোন - যে আমরা রওনা দিচ্ছি - তোমরা ঠিক আছো কি? আমি বল্লুম যে আরেকটা টীম আসছিলো, তারা সাহায্য করেছে, আমার বউ উঠে এসেছে...
এর পর আর গপ্পো নেই৷ আমার প্যান্ট তো ঐরকম পতাকা হয়ে রয়েছে, ব্যাগ থেকে ঋকের একটা স্পেয়ার শার্ট নিয়ে পায়ের ফাঁক দিয়ে বাঁধলুম, হাঁটুর কাছে নিজের রুমালটা বাঁধলুম, সুমনার কাছে সেফটিপিন ছিলো - সেই দিয়ে নিজের জামাটা প্যান্টের সঙ্গে আটকে দিলুম - যাতে কোনরকমে রেখেঢেকে রাখা যায়৷ কিন্তু মুশকিল হল এক পা করে হাঁটছি, আর ফুট করে আরেকটু ছিঁড়ছে...দেখলুম ঐ করে আর পুরো পাহাড়ের মাথা অবধি যাওয়া যাবে না, তাইলে আর প্যান্টটাই থাকবে না...অগত্যা নেমে গেলুম - এবার রাস্তা দিয়ে৷ অবশ্য সুমনার অলরেডী তখন প্যানিক হয়ে গেছে - রাস্তাটা মোটামুটি ঢালু - কিন্তু তাতেও ভয় পাচ্ছে...ধরে ধরে নামলো...
কি শিখলুম?
(১) আউটডোর ট্রাউজার কক্ষণো সেল-এ কিনতে নেই৷
(২) আবার যাবো - কিন্তু এবার একটা দড়ি আর দুটো হুক নিয়ে৷
(৩) সুমনা বলেছে আর কক্ষণো ফুটপাথ ছেড়ে শর্টকাট ধরবে না৷
Monday, June 26, 2006
কমার্শিয়াল পার্টনারশিপ
আমার ছেলের পাসপোর্ট রিনিউ করতে হবে। ঘটনাচক্রে এই ক্ষুদ্র ব্যক্তি আমেরিকান নাগরিক (এ এক যন্ত্রণা - সেই কবে পনেরো বছর হবে, তবে সে এই নাগরিকত্ব সারেণ্ডার করতে পারবে) - তাই আমেরিকান এমব্যাসীর নিয়ম দেখতে হচ্ছে। আমেরিকান এমব্যাসীতে সব পাসপোর্ট সাইজ ছবি নেয় না - নানা রকম রিক্যোয়ারমেন্ট আছে - আর ছবি তোলার মেশিন থেকে তোলা ছবি নেয় না। ওদের সাইটে বলেছে "আমরা কোন ফোটোগ্রাফার সাজেস্ট করতে পারি না, তবে এর আগে অমুক অমুক দোকান থেকে তোলা ছবি আমরা অ্যাকসেপ্ট করেছি" - দিয়ে একটা লম্বা লিস্টি - আমাদের সবচেয়ে কাছাকাছি বলতে মাইল পনেরো দূরে চেস্টার-লি-স্ট্রীটে একটা দোকান৷ শনিবার সেখেনে গেলুম - তো সকলে বিয়ের ফোটো তুলতে বাইরে গেছে, সামনের শনিবারের জন্যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হল৷ এমনি পাসপোর্ট ফোটো তুলতে লাগে আট পাউণ্ড (চার কপি, সাথে সাথে দেয়) - আমেরিকান পাসপোর্টের ফোটো তুলতে বিশ পাউণ্ড!!! আমি বল্লুম নির্ঘাত কমিশন দেয়, আমার বউ বল্ল "না - এটা কমার্শিয়াল পার্টনারশিপ - ওসব তুমি বুঝবে না":-))