কোন পোস্ট মডার্ন সাহিত্য নয়, জ্বালাময়ী বক্তৃতাও না - শুধুমাত্র টুকরো টুকরো ঘটনা, কে কি বলেছেন আর তার ইনফারেন্স...এবং একটা অকপট স্বীকারোক্তি৷
তর্কটা বহুদিন ধরেই চলছে...অনেকটাই ঘেঁটে যাওয়া, খেই হারিয়ে ফেলা, এবং আরো ঘেঁটে দেবার জন্যেই এই লেখা৷ দুধকে ঘেঁটেই তো মাখন বেরোয়...
৬ই অক্টোবর - ল্যাঙ্কাশায়ার টেলিগ্রাফে কমনসের লেবার পার্টির নেতা জ্যাক স্ট্র মুসলিম মহিলাদের নিকাব নিয়ে আপত্তির কথা লিখলেন -
"It was not the first time I had conducted an interview with someone in a full veil, but this particular encounter, though very polite and respectful on both sides, got me thinking. In part, this was because of the apparent incongruity between the signals which indicate common bonds - the entirely English accent, the couples' education (wholly in the UK) - and the fact of the veil. Above all, it was because I felt uncomfortable about talking to someone 'face-to-face' who I could not see."
জ্যাক স্ট্র লেবার পার্টির অন্যতম চেনা মুখ, তাঁর মুখে নিকাব-পরিহিতার সাথে কথা বলাতেও অস্বস্তির কথা ব্রিটেনের মাল্টি-কালচারিজমের মুখে বড় জুতো। অবিশ্যি স্ট্র পরে এও লিখেছেন - "I explain that this is a country built on freedoms. I defend absolutely the right of any woman to wear a headscarf. As for the full veil, wearing it breaks no laws" - কিন্তু তার সাথে এটুকুও - "I go on to say that I think, however, that the conversation would be of greater value if the lady took the covering from her face" - একটা নিকাবেই তাঁর অস্বস্তি, নাকি একটু পালিশ করা ভাষায় আরেকজনের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?
(পুরো লেখা পাবেন এখানে।)
১৫ই অক্টোবর - রবিবার সকালে ঘুম ভাঙলো আরো একটা অস্বস্তিকর খবরে - ডিউসবুরির এক প্রাইমারী স্কুলের টীচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট আয়েশা আজমিকে সেই স্কুল সাসপেন্ড করেছে কিছুদিন আগে, পড়ানোর সময় নিকাব থাকার জন্য৷ লেবার সরকারের Race Relations -বিষয়ক মন্ত্রী Phil Woolas দাবী করেছেন আয়েশাকে বরখাস্ত করা উচিত৷ স্কুলের বক্তব্য - "Ms Azmi had been asked to take off her veil in class because children had difficulty understanding her in English lessons. When she refused to remove the veil, she was suspended pending an employment tribunal", আয়েশার বক্তব্য - "The children are aware of my body language, my eye expressions, the way I'm saying things. If people think it is a problem, what about blind children? They can't see anything but they have a brilliant education, so I don't think my wearing the veil affects the children at all".
প্রশ্নটা এখানে ধর্মীয় অনুশাসনের নয় - নিকাব পরা ঠিক কি ভুল সেটা নিয়েও নয়৷ প্রশ্নটা আয়েশার নিকাব পরার স্বাধীনতা নিয়ে৷ আয়েশা নিশ্চয় ইন্টারভিউ দিয়েই চাকরি পেয়েছিলেন, এবং একজন শিক্ষিকা ক্লাসে (এবং সর্বত্র) নিকাব পরছেন মানে ইন্টারভিউয়ের সময় তিনি কোট-প্যান্ট পরেছিলেন এটা ভাবা কষ্টকর৷ হঠাৎ করে এখনই স্কুল এবং ডিউসবুরি কাউন্সিলের পোশাক-সংক্রান্ত ডিসিপ্লিন জেগে উঠলো কেন?
ডেইলি এক্সপ্রেস একটা "ওপিনিয়ন পোল" করলো - ৯৭ শতাংশ ডেইলি এক্সপ্রেস পাঠক নাকি মনে করেন হিজাব/নিকাব/বোরখার ওপর নিষেধাজ্ঞা সাম্প্রদায়িক সম্রীতি বজায় রাখবে৷ ডেভিড এডগার একটা লেখা লিখলেন "দ্য গার্ডিয়ান"-এ (সরি, উই জাস্ট কান্ট পিক অ্যাণ্ড চুজ হোয়াট উই টলারেট) - নিষেধাজ্ঞাটা কি করে লাগু হবে? নিকাব পরলে পুলিশে সেটা টেনে ছিঁড়ে দেবে? নাকি অ্যাসবো (Asbo - অ্যান্টি সোশ্যাল বিহেভিয়ার অর্ডার)? নাকি জেলে ভরবে? ঐ লেখাই জানাচ্ছে যে এর প্রিসিডেন্স আছে - ফ্রান্সের ইস্কুলে পোশাক নিয়ে বিতর্কের খবর আমাদের বাংলা কাগজেও বেরিয়েছিলো৷ নেদারল্যাণ্ডসের পার্লামেন্টও কর্মক্ষেত্রে এবং পাবলিক প্লেসে বোরখা ব্যান নিয়ে একটি আইন পাস করেছে৷ রটারড্যামে মসজিদের ডিজাইন "অতি ইসলামিক" বলে বাতিল হচ্ছে; এবং ডাচ নাগরিকত্ব আইন বলে রাস্তাঘাটে ডাচ ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলা যাবে না৷ বোরখা/হিজাব/নিকাব ব্যান জার্মানির কিছু জায়গাতেও৷ "Liberalism can so easily collapse into nativism..." - এডগার লিখলেন - "There is, one hopes, no call for Britain to follow the US state of Virginia in banning visible underwear from its streets. But you can't have it both ways: I can disagree with what you wear, but - if I am to remain true to universalist Enlightenment values - the other half of Voltaire's formulation has to click in too."
এই দেশগুলো - ব্রিটেন, নেদারল্যাণ্ডস, ফ্রান্স - যারা প্রগতিশীল বলে পরিচিত, যারা সবরকম সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে - তারা নিজেরাই এখন সেই সেন্সরশিপকেই জাস্টিফাই করতে ব্যস্ত৷
এবার স্বীকারোক্তি -
স্বীকারোক্তিটা হল নিকাব বা বোরখা পরিহিতা কারো সাথে সামনাসামনি কথা বলতে কিছুক্ষণের জন্যে হয়তো আমারও অস্বস্তি হবে৷ নিকাব/বোরখা পরিহিতা নারী শুধু নয় - পুরো পাগড়িঢাকা কোন পুরুষের ("সোনার কেল্লা" দ্রষ্টব্য) সাথে কথা বলতেও অস্বস্তি হবে - আমি লালমোহনবাবু নই, ভয়ের প্রশ্ন নয় - কিন্তু মুখ না দেখতে পেলে ভালো করে কথা বলা যায়কি? কিন্তু কতক্ষণ অস্বস্তি হবে? পাঁচ মিনিট? দশ মিনিট? তার বেশি কি? মনে হয় না৷ এটুকু স্বীকার করে নিয়ে দুটো প্রশ্ন রাখতে চাই৷৷৷
ঐ অস্বস্তি সত্ত্বেও নিকাব/বোরখা/হিজাব - যিনি পরছেন তাঁর নিজস্ব চয়েজ, রাষ্ট এখানে নাক গলানোর কেউ নয়৷ কাজেই ফ্রী স্পীচ বা সিভিল রাইটস আন্দোলনকে সমর্থন করলে স্ট্র, বা Phil Woolas (এবং প্রায় অর্ধেক লেবার/টোরি কেউকেটা) - এঁদের বিভিন্ন ডিগ্রীর হিটলারই মনে হবে৷ এবং বিশেষ করে চার্চ স্কুলে ফাদার বা সিস্টারেরা যখন দিব্যি ধর্মীয় আলখাল্লা বা হ্যাবিট পরতে পারেন, নিকাব/হিজাব ব্যান হবে কোন দু:খে? ব্রিটেন না মাল্টিকালচারাল?
একটা প্রশ্ন উল্টোদিকেও - শুধু জানতে চাই কোরাণের কোন ইন্টারপ্রিটেশন চোদ্দ বছর ধরে সাধারণ স্কুল ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাওয়া সাবিনা বেগমকে একদিন আচমকা মনে করিয়ে দেয় যে জিলবাব না পরলে সে ধর্মভ্রষ্ট হবে? বা সদ্য শিরোনামে আসা তেইশ বছরের আয়েশাকে বলে বাচ্চাদের ক্লাস নেওয়ার সময়েও নিকাব পরা খোদার বিধান?
শেষে একটা ছোট্ট সংযোজন - ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এক মহিলা কর্মীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তাঁর জুয়েলারি কনসিলড ছিলো না বলে - জুয়েলারি বলতে একটা ক্রস৷ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের তরফ থেকে স্টেটমেন্টে বলা হয়েছে হিজাব বা পাগড়ি বা বালা (শিখেদের ক্ষেত্রে) কনসিল করা সম্ভব নয়, তাই সেগুলোর জন্যে ছাড় দেওয়া হতে পারে৷ ক্রিশ্চান সংগঠনগুলো এই নিয়ে প্রবল আপত্তি করেছে - যে কারণে একজন শিখ হাতে বালা বা মাথায় পাগড়ি পরতে পারে, বা একজন মুসলমান হিজাব পরতে পারে, আমরা কেন ক্রস ঝোলাতে পারবো না...
একদিকে রাজনীতিবিদ, অন্যদিকে হিউম্যান রাইটস - তর্ক চলে৷ ক্রমশ প্রচারমাধ্যমের চড়া আলোয় গা পোড়ে সাধারণ মুসলমান মানুষের - নিরীহ নাদিম বলে "লোকে আমার নাম শুনলে এখন বড় অন্যরকম ভাবে তাকায়, জানো"...চার্চ থেকে বাইবেল হাতে প্রচার করতে আসা ভদ্রলোক আমার নিরুত্সাহ দেখে প্রশ্ন করেন আমি মুসলমান কিনা..."দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে"-র মাল্টিকালচারালিজম নয়, নেটিভ সমাজের মধ্যে মিশে যাওয়ার দাবি করা প্রগতিশীলতার কথা শুনি - নরেন্দ্র মোদিদের কথা মনে পড়ে যায় - আর গার্ডিয়ানে গরম গরম লেখাগুলো পড়ে স্যাঁতস্যাঁতে নিউক্যাসলে আমি একটু গা গরম করি৷ একদিন আমার প্রশ্নদুটোর উত্তর পেলেই হল৷
(মূল লেখা গুরুচণ্ডা৯তে এবং কিছু আলোচনা)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
ধর্ম নিয়ে এতো ক্যাচাল আর ভালো লাগেনা।মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ।সে কোন ধর্মের সেটা কখনই বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না।
Post a Comment