#TheNewOrder, Part 1
ন্যাশনাল সোশ্যালিজম, বা নাৎসি আইডিওলজির দুটো দিক আছে - একটা সোশ্যাল সিস্টেমের দিক, আরেকটা জাতীয়তাবাদী ওয়ার ইকোনমির দিক - যেখানে গ্রেট ডিপ্রেশনের পরেও জাতীয়তাবাদী স্লোগানের জোরে জার্মান ইকোনমি ওয়াইমার রিপাবলিকের সময়ে পৌঁছে যাওয়া তলানি থেকে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো। দ্বিতীয়টা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করবেন। এই সিরিজটাকে আপাতত শুধু প্রথমটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছি - কারণ এই সোশ্যাল সিস্টেম, যাকে বলা হয়েছিলো The New Order, তাকেই প্রায় হুবহু নকল করার চেষ্টা করে আজকের #NewIndia...
তাই শিরারের "দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ দ্য থার্ড রাইখ" এর পাশাপাশি রিচার্ড ইভান্সের রাইখ ট্রিলজি এবং নিউরেমবার্গ ট্রায়ালের নথিপত্র ঘেঁটে যা পাওয়া যাচ্ছে তাই নিয়ে এই সিরিজটা চালু করলাম...কৃতিত্বটা মূলতঃ শিরারেরই, কারণ ওনার দেখানো রেফারেন্স ধরেই এগোচ্ছি, এবং লেখার অনেকটাই শিরারের বইয়ের বিভিন্ন অংশের কম্পাইলেশন।
The New Order, Part 1
অক্টোবর ৪, ১৯৪৩ - অধিকৃত পোল্যান্ডের Poznan (তখন Posen) শহরের টাউনহলে এসএস বাহিনীর প্রধান হাইনরিখ হিমলার বাহিনীর অফিসারদের সামনে বক্তৃতা দিতে উঠে বলেন -
"একজন রাশিয়ান বা চেকোস্লোভাকিয়ানের শেষ অবধি কী হল আমার তাতে কোনও আগ্রহ নেই। এই দেশগুলো থেকে আমাদের জার্মানদের মত শুদ্ধ রক্তের যা পাওয়া যায় তা আমরা নেবো, প্রয়োজনে ওদের বাচ্চাদের অপহরণ করে আমাদের সমাজে বড় করে। এসব দেশের মানুষ ভালোভাবে বাঁচলো, নাকি গরুবাছুরের মত উপোষে মরলো - তাতে আমার আগ্রহ নেই, যতক্ষণ তাদের আমরা জার্মানরা ক্রীতদাসের মত ব্যবহার করতে পারছি। দশ হাজার রুশী মহিলা ট্যাঙ্করোধী পরিখা খুঁড়তে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে মরে গেলো কিনা, তাতেও আমার আগ্রহ নেই, যতক্ষণ পরিখার কাজ শেষ হচ্ছে।" [1]
হিমলারের এই বক্তৃতার প্রায় তিন বছর আগে, ১৯৪০ সালেই, অ্যাডলফ হিটলার তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার অধিবাসী, অর্থাৎ নাৎসি সাম্রাজ্যের প্রথম স্লাভিক প্রজাদের কী পরিণাম হবে তার মোটামুটি একটা আউটলাইন দিয়ে রেখেছিলেন তাঁর জেনারেলদের কাছে - তাদের অর্ধেককে খাস জার্মান জাতির দাসত্ব করতে হবে, বাকি অর্ধেক, বিশেষ করে ইন্টেলেকচুয়ালদের খতম করা হবে [2]। সেই সময়ের আরেকটি দলিলে, চেকদের পরের স্লাভিক জাতি, যাদের জার্মানি কলোনাইজ করবে, অর্থাৎ পোলিশদের ভাগ্যে কী আছে তাও পাওয়া যায়। হিটলারের নিজস্ব চিন্তাভাবনা নথিভুক্ত করে রেখেছিলেন তাঁরই বিশ্বস্ত সেক্রেটারি মার্টিন বরম্যান। এক ঝলকে সেটা মোটামুটি এই রকম -
“পোলিশ নাগরিকদের জন্মই নীচুতলার কাজকর্মের জন্য। ওদের কোনোরকম উন্নতির প্রয়োজন নেই। পোলিশদের জীবনযাত্রার মান তলানিতেই রাখতে হবে, আর দেখতে হবে কোনোভাবেই যেন তার কোনও উন্নতি না হয়। পোলিশরা অলস, এবং তাদের কাজ করতে বাধ্য করতে হবে। পোল্যান্ডের সরকারকে ব্যবহার করা হবে কায়িক শ্রমের যোগানদার হিসেবে।" [3]
এই কথাগুলোর কোনটাই নতুন নয়। বিয়ার হল বিদ্রোহের পরে জেলে বন্দী অবস্থায় লেখা Mein Kampf এ হিটলার এরকমই চিন্তাভাবনার কথা লিখে গেছেন (আর এই বইয়ের ভাবনারই প্রায় ফটোকপি দেখা যায় আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা গোলওয়ালকরের We or Our Nationhood Defined বইয়ে) - ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট পার্টি, মানে নাৎসি পার্টির মূল তত্ত্বই ছিলো এর ওপর দাঁড়িয়ে - খাস জার্মান জাতিই খাঁটি আর্য্য, বাকি স্লাভিক প্রজাতির লোকজন জন্মেছে জার্মানদের দাসত্ব করার উদ্দেশ্যে। জার্মানরা জাতিগত এবং জৈবিক দিক থেকে স্লাভিক প্রজাতির মানুষের চেয়ে হাজারগুণ দামী...
উত্তর ভারতীয় বর্ণহিন্দুরাই খাঁটি আর্য্য এবং আসল শাসক, বাকি দক্ষিণ/পূর্ব ভারতীয়, দলিত/শুদ্র/তফশিলী জাতি/উপজাতির লোকেরা ভৃত্যশ্রেণীর - হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীদের এই কথাটা এইবার চেনা ঠেকছে কি? মুসলমানদের এখনো আনলাম না, কারণ সেটা তুলনীয় আরেক সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে। সেই তুলনা ক্রমশঃ আসবে।
(1) Nuremberg Trial Document, Extracts from speeches concerning the SS and the conduct of the war, Speech [of] the Reichsfuehrer-SS at the meeting of SS Major-Generals at Posen, 04 October 1943, Heinrich Himmler (Reichsfuehrer-SS and Chief of Police; Minister of Interior), PS-1919
(2) Nuremberg Trial Document, Report of Gen. Gotthard Heinrici, Deputy General of the Wehrmacht in the Protectorate, PS-862
(3) Bormann’s memorandum, quoted in Trial of Major War Criminals before the International Military Tribunal (TMWC), Volume VII, pp. 224–26 (N.D. USSR-172)
No comments:
Post a Comment