অনেকদিন বাদে ব্লগ লিখছি। প্রথমতঃ সময় পাই না, প্রায় ধরুন বছর দেড়েক
পরে কোথাও বেড়াতে গেলাম - প্রধান কারণ ছেলের মাধ্যমিক (হ্যাঁ, সেই ছেলে বড়
হয়ে গেছে, ক্লাস ইলেভেনে উঠে গেছে), আর দ্বিতীয়তঃ সেরকম অ্যাডভেঞ্চারের
ট্রিপ সেই ২০১৩ সালে সাতকোশিয়ার পর আর হয়নি। সে একটা সময় ছিল, আমেরিকা বা
ইংল্যান্ডে যখন গাড়ি নিয়ে টই টই করে বেড়িয়েছি। এখানেও শুরুর দিকে চিলিকা,
সাতকোশিয়া - তারপর এই স্কুল-টুলের চক্করে সে সব ডকে উঠেছিলো। বেড়াতে গেছি -
ধরুন নর্থ সিকিম, তুঙ্গনাথ, তার আগে মধ্যপ্রদেশ, কিন্তু লেখার মত কিছু
ছিলো না। আসলে প্ল্যান ছিলো ছেলের মাধ্যমিকের পরে দিন পনেরোর জন্যে গাড়ি
নিয়ে বেড়িয়ে পড়বো লম্বা কোথাও - অরুণাচল প্রদেশ বা উত্তরাখণ্ড। সেই মত রুট
ম্যাপও করে রেখেছিলাম। কিন্তু আজকাল মাধ্যমিকের পর ছুটি মেলে না। ক্লাস
ইলেভেনের অ্যাডমিশন অধিকাংশ জায়গায় হয়ে যায় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই। টিউশনে
ভর্তিগুলোও ওরকম সময়ে হয়ে যায়। সবই অ্যাডভান্সড ব্যাপার স্যাপার। তো এসব
তেমন জানতামও না - তাই নিয়ে হুড়োহুড়িও গেছে মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পরেই। আর
এপ্রিল থেকেই টিউশন আর স্কুল শুরু হয়ে গেল - রেজাল্ট বেরনোর আগেই। এসব
ঝামেলায় সেই প্ল্যান করা ট্রিপটা পুরো বরবাদ হয়ে গেলো। আর শুনলাম এই এগারো
ক্লাসে স্কুল যদি বা মিস হয়, টিউশন যেন একেবারেই মিস না হয়। মাইরি বলছি -
এরকম চাপ জন্মেও ভাবিনি। তা স্কুল আর টিউশনের কমন ছুটি হল পুজোর সময় -
ষষ্ঠী থেকে লক্ষ্মীপুজো। সেইমত নতুন প্ল্যান বানিয়ে এই কিছুদিন একটু ঘুরে
এলাম। হ্যাঁ, অনেকদিন পর আরেকটা রোড ট্রিপ।
লিখতে শুরু করার আরেকটা কারণ হল - আপিসের ম্যাগাজিনে লেখা দিতে বলেছে। তো সেইটা লেখার আগে একটা মকশো করে নিই, এর একটা ছোটো ভার্সন আপিসে দিয়ে দেবো, ইঞ্জিরি করে।
চেষ্টা করে দেখি, শেষ করতে পারি কিনা।
গোড়ার কথা
"রোড ট্রিপ কেন? এই তো বেশ নর্থ সিকিম ঘুরে এলাম, তুঙ্গনাথ ঘুরে এলাম - সেও তো গাড়িতেই, তা তোর নিজে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার এত শখ কেন?"
এই প্রশ্নটা প্রায় রেগুলার শুনি বাড়িতে রোড ট্রিপের কথা বল্লেই। সমস্যা হল এর উত্তরটা দিলেও যারা কখনো যায়নি, তারা ব্যাপারটা বুঝবেই না। ওই থ্রিলটা খুবই ব্যক্তিগত। যারা যায়, তাদের রাস্তা যেন ডাকে - আমায় ডাকে। রাতের বেলা ধানক্ষেতের মধ্যে বা জঙ্গলের মধ্যে এঁকেবেঁকে শুয়ে থাকা রাস্তার ওপর গাড়ি যখন ছুটিয়ে যাওয়ার সময় উল্টোদিক থেকে ধেয়ে আসা কুয়াশা, হাইওয়ের বাতি, দুপাশে ভেজা মাঠ, বা পাহাড়ি রাস্তার বাঁকগুলো অ্যাডিকশন ধরিয়ে দিয়েছে সেই যবে থেকে ইন্টারস্টেট ৭০ ধরে রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কে গেছিলাম, তবে থেকেই। এইটা এখন বাড়িতে বোঝানোর চেষ্টা করা ছেড়েই দিয়েছি। সুমনা জানে, তার নিজেরও ইন্টারেস্ট আছে, ঋক/ঋতি বলা যায় বেড়াতে পারলেই হল - কীসে গেলাম, গাড়িতে না রকেটে তাতে ওদের কিস্যু এসে যায় না। এই চারজনের বাইরে রোড ট্রিপ শুনলেই সবাই কেমন আঁতকে ওঠে।
তা এবারও তাই উঠলো যখন বল্লুম ডুয়ার্স যাবো। এক বন্ধুর সাথে কথা বলে আইটিনেরারি ঠিক করলাম। রিকোয়্যারমেন্ট ছিলো নির্জনতা চাই, পাহাড় চাই, জঙ্গল চাই। সেই মতন ঠিক হল কলকাতা থেকে বেরিয়ে প্রথমে যাবো টিলাবাড়ি, যদিও প্রথম গন্তব্য সান্তালেখোলায় মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো। টিলাবাড়ি যাবো কারণ সন্ধ্যে ছটার পর মৌচুকিতে ঢুকতে দেয় না, আর একদিনে কোনোমতেই তার আগে পৌঁছনো সম্ভব নয়। তাছাড়া, পুজোর আগের শনিবার অবধি স্কুল খোলা - কাজেই স্কুল ছুটির পরেই আমি রওনা দিতে পারবো - মানে বিকেল তিনটে নাগাদ - সেক্ষেত্রে, মাঝ্পথে কোথাও রাত কাটাতে হবে। মাঝপথ মানে বহরমপুর - তাহলে ভোরে বেরিয়ে পড়লে ভিড় এড়িয়ে ফারাক্কা আর মালদা পেরিয়ে যাওয়া যাবে।
সান্তালেখোলায় দুদিন সম্পূর্ণ ল্যাদ খাওয়ার প্রোগ্রাম। বহু বছর ধরে সকালে আমি সবাইকে ডেকে তুলে স্কুল/আপিসের জন্যে ঠেলছি, তাই বলেছিলুম এই ট্রিপে আমি সবাইকে পৌঁছে দেবো, কিন্তু তারপর সবাই আমাকে প্যাম্পার করবে - সকালে ডেকে তুলবে, ব্রেকফাস্ট করাবে, বেড়াতে নিয়ে যাবে ইত্যাদি। সান্তালেখোলা তার জন্যে আদর্শ।
তারপর যাবো চাপড়ামারি - পানঝোরা ফরেস্ট বাংলোতে - মূর্তি নদীর ধারে। সেখান থেকে মেন্ডাবাড়ি - সেটা চিলাপাতায়। মেন্ডাবাড়িতে এক রাত থেকে ফের ফিরে আসা, মাঝপথে মালদায় রাত কাটানো।
এই হল প্ল্যান। ১৩ই অক্টোবর রওনা দিয়ে ২০শে অক্টোবর বাড়ি ফেরা। রুট এইরকম -
কলকাতা থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪ ধরে বহরমপুর, সেখান থেকে ফারাক্কা পেরিয়ে রায়গঞ্জ হয়ে বোতলবাড়ি-রসুলপুরের রাস্তা ধরে দিনাজপুরের ভিতর দিয়ে ইসলামপুর (এটা ডালখোলা এড়ানোর জন্যে), তারপর ফুলবাড়ি-ঘোষপুকুর বাইপাস ধরে শিলিগুড়ি এড়িয়ে গাজলডোবা হয়ে লাটাগুড়ি। ফেরার সময়েও মেন্ডাবাড়ি থেকে ফালাকাটা-ধূপগুড়ি-আমবাড়ি-বেলাকোবা হয়ে হাইওয়েতে পড়ে মালদায় হল্ট করে পরের দিন মোরগ্রাম-বর্ধমান (স্টেট হাইওয়ে ৭) হয়ে কলকাতা।
কিন্তু ওই যে বলে - man proposes, God disposes...
(চলবে)
লিখতে শুরু করার আরেকটা কারণ হল - আপিসের ম্যাগাজিনে লেখা দিতে বলেছে। তো সেইটা লেখার আগে একটা মকশো করে নিই, এর একটা ছোটো ভার্সন আপিসে দিয়ে দেবো, ইঞ্জিরি করে।
চেষ্টা করে দেখি, শেষ করতে পারি কিনা।
গোড়ার কথা
"রোড ট্রিপ কেন? এই তো বেশ নর্থ সিকিম ঘুরে এলাম, তুঙ্গনাথ ঘুরে এলাম - সেও তো গাড়িতেই, তা তোর নিজে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার এত শখ কেন?"
এই প্রশ্নটা প্রায় রেগুলার শুনি বাড়িতে রোড ট্রিপের কথা বল্লেই। সমস্যা হল এর উত্তরটা দিলেও যারা কখনো যায়নি, তারা ব্যাপারটা বুঝবেই না। ওই থ্রিলটা খুবই ব্যক্তিগত। যারা যায়, তাদের রাস্তা যেন ডাকে - আমায় ডাকে। রাতের বেলা ধানক্ষেতের মধ্যে বা জঙ্গলের মধ্যে এঁকেবেঁকে শুয়ে থাকা রাস্তার ওপর গাড়ি যখন ছুটিয়ে যাওয়ার সময় উল্টোদিক থেকে ধেয়ে আসা কুয়াশা, হাইওয়ের বাতি, দুপাশে ভেজা মাঠ, বা পাহাড়ি রাস্তার বাঁকগুলো অ্যাডিকশন ধরিয়ে দিয়েছে সেই যবে থেকে ইন্টারস্টেট ৭০ ধরে রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কে গেছিলাম, তবে থেকেই। এইটা এখন বাড়িতে বোঝানোর চেষ্টা করা ছেড়েই দিয়েছি। সুমনা জানে, তার নিজেরও ইন্টারেস্ট আছে, ঋক/ঋতি বলা যায় বেড়াতে পারলেই হল - কীসে গেলাম, গাড়িতে না রকেটে তাতে ওদের কিস্যু এসে যায় না। এই চারজনের বাইরে রোড ট্রিপ শুনলেই সবাই কেমন আঁতকে ওঠে।
তা এবারও তাই উঠলো যখন বল্লুম ডুয়ার্স যাবো। এক বন্ধুর সাথে কথা বলে আইটিনেরারি ঠিক করলাম। রিকোয়্যারমেন্ট ছিলো নির্জনতা চাই, পাহাড় চাই, জঙ্গল চাই। সেই মতন ঠিক হল কলকাতা থেকে বেরিয়ে প্রথমে যাবো টিলাবাড়ি, যদিও প্রথম গন্তব্য সান্তালেখোলায় মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো। টিলাবাড়ি যাবো কারণ সন্ধ্যে ছটার পর মৌচুকিতে ঢুকতে দেয় না, আর একদিনে কোনোমতেই তার আগে পৌঁছনো সম্ভব নয়। তাছাড়া, পুজোর আগের শনিবার অবধি স্কুল খোলা - কাজেই স্কুল ছুটির পরেই আমি রওনা দিতে পারবো - মানে বিকেল তিনটে নাগাদ - সেক্ষেত্রে, মাঝ্পথে কোথাও রাত কাটাতে হবে। মাঝপথ মানে বহরমপুর - তাহলে ভোরে বেরিয়ে পড়লে ভিড় এড়িয়ে ফারাক্কা আর মালদা পেরিয়ে যাওয়া যাবে।
সান্তালেখোলায় দুদিন সম্পূর্ণ ল্যাদ খাওয়ার প্রোগ্রাম। বহু বছর ধরে সকালে আমি সবাইকে ডেকে তুলে স্কুল/আপিসের জন্যে ঠেলছি, তাই বলেছিলুম এই ট্রিপে আমি সবাইকে পৌঁছে দেবো, কিন্তু তারপর সবাই আমাকে প্যাম্পার করবে - সকালে ডেকে তুলবে, ব্রেকফাস্ট করাবে, বেড়াতে নিয়ে যাবে ইত্যাদি। সান্তালেখোলা তার জন্যে আদর্শ।
তারপর যাবো চাপড়ামারি - পানঝোরা ফরেস্ট বাংলোতে - মূর্তি নদীর ধারে। সেখান থেকে মেন্ডাবাড়ি - সেটা চিলাপাতায়। মেন্ডাবাড়িতে এক রাত থেকে ফের ফিরে আসা, মাঝপথে মালদায় রাত কাটানো।
এই হল প্ল্যান। ১৩ই অক্টোবর রওনা দিয়ে ২০শে অক্টোবর বাড়ি ফেরা। রুট এইরকম -
কলকাতা থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪ ধরে বহরমপুর, সেখান থেকে ফারাক্কা পেরিয়ে রায়গঞ্জ হয়ে বোতলবাড়ি-রসুলপুরের রাস্তা ধরে দিনাজপুরের ভিতর দিয়ে ইসলামপুর (এটা ডালখোলা এড়ানোর জন্যে), তারপর ফুলবাড়ি-ঘোষপুকুর বাইপাস ধরে শিলিগুড়ি এড়িয়ে গাজলডোবা হয়ে লাটাগুড়ি। ফেরার সময়েও মেন্ডাবাড়ি থেকে ফালাকাটা-ধূপগুড়ি-আমবাড়ি-বেলাকোবা হয়ে হাইওয়েতে পড়ে মালদায় হল্ট করে পরের দিন মোরগ্রাম-বর্ধমান (স্টেট হাইওয়ে ৭) হয়ে কলকাতা।
কিন্তু ওই যে বলে - man proposes, God disposes...
(চলবে)
No comments:
Post a Comment