আইটিনেরারি মত বুকিং করে ফেল্লুম - পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের সাইট থেকে বহরমপুর টুরিস্ট
লজ আর টিলাবাড়ি আমিই করে নিলুম, আর আমার নর্থ বেঙ্গলের এক বন্ধু যে ট্যুর
অপারেটরের কাজ করে, সে মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো, পানঝরা আর মেন্ডাবাড়িতে বুকিং
করে দিলো।
সব ঠিকঠাকই ছিলো, এই মার্কেটে হঠাৎ পুজোর আগে খবর বেরোলো যে ফারাক্কায় কাজ শুরু হয়েছে, একটা লেন বন্ধ থাকবে মাসখানেক। আমি চটজলদি দেবাশিসকে (মানে নর্থ বেঙ্গলের যে বন্ধুর কথা বললাম - এর কথা পরে আরো বলবো, ক্ষ্যাপাটে লোক) ফোন করলুম - সে বল্ল ন্যাশনাল হাইওয়ের ওপরে কুড়ি কিলোমিটার লম্বা লরির লাইন লেগে থাকছে - কারণ রাত্রি নটার আগে লরি ছাড়ছে না, আর সেই লরির লাইন কাটতে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে।
অনেকদিন আগে একবার গাড়ি নিয়ে নর্থ বেঙ্গল প্ল্যান করেছিলাম - তখন একজন অন্য একটা রাস্তা বাতলেছিলো - যেটা একটু ঘুরপথ (প্রায় শ'খানেক কিলোমিটার), কিন্তু তাতে করে ফারাক্কা/মালদা এড়িয়ে যাওয়া যায়। সেটা সিউড়ি-দুমকা হয়ে। মিচেলিনের ম্যাপ বই আর গুগুল ম্যাপ কনসাল্ট করে আমি নতুন রুট প্ল্যান করলুম - যেহেতু আমার রওনা দিতে তিনটে বেজে যাবে (যে কারণে বহরমপুরে থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম) - প্রথম হল্ট এবার সিউড়িতে। পরের দিন ভোরে বেরিয়ে সিউড়ি-দুমকা হাইওয়ে ধরে ম্যাসাঞ্জোরের গা দিয়ে দুমকা অবধি, তারপর সেখান থেকে ঝাড়খন্ড-বিহারের মধ্যে দিয়ে ভাগলপুর। ভাগলপুরে গঙ্গা পেরোতে হবে বিক্রমশীলা ব্রীজ দিয়ে, সেখান থেকে পূর্ণিয়া হয়ে একেবারে ডালখোলা রেলগেট ছাড়িয়ে আবার ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪-এ উঠবো। ভালো কথা। সেই মত সিউড়িতে একটা হোটেল বুক করলাম - বাস স্ট্যান্ডের কাছেই, নাম সাগর। গো-আইবিবো দিয়ে বুকিং হয়, রিভিউও ভালোই। ফেরার সময় প্ল্যান করলাম ভাগলপুরে থাকবো - সেখানে হাইওয়ের ধারেই বৈভব হাইওয়ে ইন - তারও রিভিউ ভালো। সেখানে ফোন করে কথা বলে নেওয়া হল - বল্ল আলাদা করে টাকা পাঠিয়ে বুক করতে হবে না, এসে নাম বলবেন, তাহলেই হবে।
[বাই দ্য ওয়ে, এখন মনে হয় এই ন্যাশনাল হাইওয়েগুলোর নম্বর বদলানো হচ্চে, কারণ মিচেলিনের ম্যাপ, যেটা কয়েক বছরের পুরনো, আর গুগুল ম্যাপে রাস্তা এক হলেও নম্বর আলাদা। যেমন, NH34 বহরমপুরের পর গুগুল ম্যাপ বলছে NH12 - যেটা ফারাক্কা/মালদা হয়ে উত্তরবঙ্গে যায়। NH31, যেটা শিলিগুড়ি থেকে গুয়াহাটির দিকে যায়, সেটাও NH114 না কী যেন বলছে গুগুল। অবিশ্যি নম্বর আলাদা বল্লেও রাস্তাগুলো দিব্যি ঠিকই বলে - সেই নিয়ে কোনো চাপ নেই। পরে জায়গায় জায়গায় রাস্তার ডিটেলস বলে দেবো।]
এই নতুন রুট শুনে বাবাও বেশ উত্তেজিত - কারণ পূর্ণিয়া হল আমাদের দ্যাশের বাড়ি (কেন আমি ছাতু খেতে পছন্দ করি এবারে বুইলেন তো?) - যদিও আমি কখনো দেখিইনি, বাবা ছোটোবেলায় ওখানেই থাকতো। সতীনাথ ভাদুড়ির বাড়িও আশেপাশেই ছিলো, এবং ঢোঁড়াইরাও (রেফঃ ঢোঁড়াই চরিত মানস) থাকতো ওই বাড়ির পাশেই। তা সেই বাড়ি (প্রচুর জমি - আম-জাম বাগান সহ) বিক্রি হয়ে গেছে - সেখানে নাকি হোটেল হবে - বাড়ি আর দেখার কিছুই নেই, শুধু আমি ওই পথে গেলে জায়গাটা দেখে আসতে পারবো...
জিনিসপত্র গোছগাছ হল - গাড়িতে যাবো, অ্যাবান্ড্যান্ট জায়গা, কাজেই এবারে প্যাকিং নিয়ে ঝগড়া (যেটা কিনা ইউজুয়াল জিনিস) হল না। গাড়িতে ফ্লাস্ক যাবে - গরম জল, টী ব্যাগ, সুগার কিউব সব নিয়ে যাওয়া হবে যাতে গাড়িতে বসেই চা খাওয়া যায় (স্পিল-প্রুফ ট্র্যাভেল কাপে)। সুমনার ইচ্ছে ছিলো বিউটেন স্টোভও নিয়ে যায় - কিন্তু ডিম সেদ্ধটা হবে কোথায় - রাস্তার ধারে ধুলো খেতে খেতে - এই প্রশ্ন তোলায় সেটা বাতিল হয়। বাড়তি উঠলো টায়ার পাংচার কিট আর এমার্জেন্সি পাম্প (গাড়ির সকেট থেকে চালানো যায়, একটু আস্তে আস্তে হলেও দরকারে চাকায় হাওয়া ভরা যায়)। এছাড়া জামাকাপড়, ক্যামেরার ব্যাগ ইত্যাদি আনুসাঙ্গিক জিনিস তো উঠলোই।
এই সময়ে ঋকের ঘাড়ে একখান ফোঁড়া হয়েছিলো - আমি ফাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করাতে পেল্লায় চেঁচামেচি করে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ওষুধ টষুধ নিয়ে এলো, প্লাস গরমজলে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট মিশিয়ে সেঁক দেওয়ার ফরমান। সুতরাং আরেকটা ফ্লাস্ক, তাতে ওষুধ মেশানো গরমজল। প্লাস ফোন+ট্যাব+কিন্ডল - এই সারাদিন গাড়িতে থাকবে, কিছু একটা তো চাই। মাঝে একবার বলা হয়েছিলো গাড়িতে টিভি লাগানো যাবে কিনা...
তা এসে গেলো ১৩ই অক্টোবর। বাড়ি থেকে রওনা দিলুম তখন সওয়া দুটো। ঋকের স্কুল ছুটি হবে দুটো চল্লিশে, ওকে স্কুল থেকে তুলে আমরা বেরিয়ে পড়বো।
মোটামুটি এই ছিলো যাওয়ার প্ল্যান -
(চলবে)
(আগের কথা)
সব ঠিকঠাকই ছিলো, এই মার্কেটে হঠাৎ পুজোর আগে খবর বেরোলো যে ফারাক্কায় কাজ শুরু হয়েছে, একটা লেন বন্ধ থাকবে মাসখানেক। আমি চটজলদি দেবাশিসকে (মানে নর্থ বেঙ্গলের যে বন্ধুর কথা বললাম - এর কথা পরে আরো বলবো, ক্ষ্যাপাটে লোক) ফোন করলুম - সে বল্ল ন্যাশনাল হাইওয়ের ওপরে কুড়ি কিলোমিটার লম্বা লরির লাইন লেগে থাকছে - কারণ রাত্রি নটার আগে লরি ছাড়ছে না, আর সেই লরির লাইন কাটতে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে।
অনেকদিন আগে একবার গাড়ি নিয়ে নর্থ বেঙ্গল প্ল্যান করেছিলাম - তখন একজন অন্য একটা রাস্তা বাতলেছিলো - যেটা একটু ঘুরপথ (প্রায় শ'খানেক কিলোমিটার), কিন্তু তাতে করে ফারাক্কা/মালদা এড়িয়ে যাওয়া যায়। সেটা সিউড়ি-দুমকা হয়ে। মিচেলিনের ম্যাপ বই আর গুগুল ম্যাপ কনসাল্ট করে আমি নতুন রুট প্ল্যান করলুম - যেহেতু আমার রওনা দিতে তিনটে বেজে যাবে (যে কারণে বহরমপুরে থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম) - প্রথম হল্ট এবার সিউড়িতে। পরের দিন ভোরে বেরিয়ে সিউড়ি-দুমকা হাইওয়ে ধরে ম্যাসাঞ্জোরের গা দিয়ে দুমকা অবধি, তারপর সেখান থেকে ঝাড়খন্ড-বিহারের মধ্যে দিয়ে ভাগলপুর। ভাগলপুরে গঙ্গা পেরোতে হবে বিক্রমশীলা ব্রীজ দিয়ে, সেখান থেকে পূর্ণিয়া হয়ে একেবারে ডালখোলা রেলগেট ছাড়িয়ে আবার ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪-এ উঠবো। ভালো কথা। সেই মত সিউড়িতে একটা হোটেল বুক করলাম - বাস স্ট্যান্ডের কাছেই, নাম সাগর। গো-আইবিবো দিয়ে বুকিং হয়, রিভিউও ভালোই। ফেরার সময় প্ল্যান করলাম ভাগলপুরে থাকবো - সেখানে হাইওয়ের ধারেই বৈভব হাইওয়ে ইন - তারও রিভিউ ভালো। সেখানে ফোন করে কথা বলে নেওয়া হল - বল্ল আলাদা করে টাকা পাঠিয়ে বুক করতে হবে না, এসে নাম বলবেন, তাহলেই হবে।
[বাই দ্য ওয়ে, এখন মনে হয় এই ন্যাশনাল হাইওয়েগুলোর নম্বর বদলানো হচ্চে, কারণ মিচেলিনের ম্যাপ, যেটা কয়েক বছরের পুরনো, আর গুগুল ম্যাপে রাস্তা এক হলেও নম্বর আলাদা। যেমন, NH34 বহরমপুরের পর গুগুল ম্যাপ বলছে NH12 - যেটা ফারাক্কা/মালদা হয়ে উত্তরবঙ্গে যায়। NH31, যেটা শিলিগুড়ি থেকে গুয়াহাটির দিকে যায়, সেটাও NH114 না কী যেন বলছে গুগুল। অবিশ্যি নম্বর আলাদা বল্লেও রাস্তাগুলো দিব্যি ঠিকই বলে - সেই নিয়ে কোনো চাপ নেই। পরে জায়গায় জায়গায় রাস্তার ডিটেলস বলে দেবো।]
এই নতুন রুট শুনে বাবাও বেশ উত্তেজিত - কারণ পূর্ণিয়া হল আমাদের দ্যাশের বাড়ি (কেন আমি ছাতু খেতে পছন্দ করি এবারে বুইলেন তো?) - যদিও আমি কখনো দেখিইনি, বাবা ছোটোবেলায় ওখানেই থাকতো। সতীনাথ ভাদুড়ির বাড়িও আশেপাশেই ছিলো, এবং ঢোঁড়াইরাও (রেফঃ ঢোঁড়াই চরিত মানস) থাকতো ওই বাড়ির পাশেই। তা সেই বাড়ি (প্রচুর জমি - আম-জাম বাগান সহ) বিক্রি হয়ে গেছে - সেখানে নাকি হোটেল হবে - বাড়ি আর দেখার কিছুই নেই, শুধু আমি ওই পথে গেলে জায়গাটা দেখে আসতে পারবো...
জিনিসপত্র গোছগাছ হল - গাড়িতে যাবো, অ্যাবান্ড্যান্ট জায়গা, কাজেই এবারে প্যাকিং নিয়ে ঝগড়া (যেটা কিনা ইউজুয়াল জিনিস) হল না। গাড়িতে ফ্লাস্ক যাবে - গরম জল, টী ব্যাগ, সুগার কিউব সব নিয়ে যাওয়া হবে যাতে গাড়িতে বসেই চা খাওয়া যায় (স্পিল-প্রুফ ট্র্যাভেল কাপে)। সুমনার ইচ্ছে ছিলো বিউটেন স্টোভও নিয়ে যায় - কিন্তু ডিম সেদ্ধটা হবে কোথায় - রাস্তার ধারে ধুলো খেতে খেতে - এই প্রশ্ন তোলায় সেটা বাতিল হয়। বাড়তি উঠলো টায়ার পাংচার কিট আর এমার্জেন্সি পাম্প (গাড়ির সকেট থেকে চালানো যায়, একটু আস্তে আস্তে হলেও দরকারে চাকায় হাওয়া ভরা যায়)। এছাড়া জামাকাপড়, ক্যামেরার ব্যাগ ইত্যাদি আনুসাঙ্গিক জিনিস তো উঠলোই।
এই সময়ে ঋকের ঘাড়ে একখান ফোঁড়া হয়েছিলো - আমি ফাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করাতে পেল্লায় চেঁচামেচি করে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ওষুধ টষুধ নিয়ে এলো, প্লাস গরমজলে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট মিশিয়ে সেঁক দেওয়ার ফরমান। সুতরাং আরেকটা ফ্লাস্ক, তাতে ওষুধ মেশানো গরমজল। প্লাস ফোন+ট্যাব+কিন্ডল - এই সারাদিন গাড়িতে থাকবে, কিছু একটা তো চাই। মাঝে একবার বলা হয়েছিলো গাড়িতে টিভি লাগানো যাবে কিনা...
তা এসে গেলো ১৩ই অক্টোবর। বাড়ি থেকে রওনা দিলুম তখন সওয়া দুটো। ঋকের স্কুল ছুটি হবে দুটো চল্লিশে, ওকে স্কুল থেকে তুলে আমরা বেরিয়ে পড়বো।
মোটামুটি এই ছিলো যাওয়ার প্ল্যান -
(চলবে)
(আগের কথা)
1 comment:
মন দিয়ে পড়ছি। শেষ করতেই হবে, ল্যাদ খেলে চলবে না!
Post a Comment