দ্বিতীয়দিন থেকে একটু বোর লাগা শুরু হল - একেবারেই কিছু করার না থাকলে যা
হয়। আকাশটা একটু ভালো থাকলে পিছনের পাহাড়টায় ঘুরে আসা যেত, কিন্তু সেও গুড়ে
বালি। অগত্যা বই আর ঘুম, ঘুম আর বই। মাঝে সকালে পুরী-সবজি, দুপুরে ডিমের
ঝোল, ডাল আলুভাজা আর ভাত, রাতে রুটি আর দেশি মুরগীর ঝোল। এর মধ্যে দোতলায়
যাঁরা ছিলেন, তাঁরা চলে গেলেন। ফোর্সের একটা ভাড়ার গাড়ি এসে নিয়ে গেলো।
তখনই শুনলাম - নিজের গাড়ি নিয়ে ওপরে আমরাই প্রথম যাত্রী।
সেদিন বিকেল থেকে ঋতিরও মুখ একটু ভার। কী ব্যাপার? না পরের দিন ওই রাস্তায় নামতে হবে, তাই একটু...ওই আর কী...পেট গুড়গুড় করছে। আরে তুই তো নর্থ সিকিমও ঘুরে এলি - তখন তো বলিসনি। জানলাম তখনও নাকি ভয় ভয়ই করেছিলো। তা আমি যে পরের বার গাড়ি নিয়ে অরুণাচল যাবো - তুই যাবি না? সোজা উত্তর - না।
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে ব্যাগপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলতে তুলতে ন'টা বেজে গেলো। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিলো - তাই দেরী না করে নামতে শুরু করলাম, আবার ওই পাথর মোড়া রাস্তায়। নামার সময় আর অত চিন্তা নেই - একবার উঠেছি যখন, রাস্তা জানা হয়ে গেছে, অজানা কোথাও যাচ্ছি না আর। তবে সাবধানতাটা বেশি, কারণ নিউটনসায়েবের থিওরি, আর প্রাকৃতিক নিয়ম। নামার আগে বলেছিলাম একটু ভিডিও করে রাখতে - সেও করা হল, অপেক্ষকৃত কম দুলুনি যেখানে সেখানে। দুলতে দুলতে, লাফাতে লাফাতে অবশেষে ফের ফাড়ি বস্তি...মোমোর দোকান ইত্যাদি।
(ফাড়ি বস্তিতে নেমে ঋতিকে বল্লাম - এই তো দ্যাখ, কেমন সুন্দর নেমে এলাম। এবার অরুণাচল যাবি তো? ঋতি উত্তর দিলো - আগে আমাকে "আনস্ক্র্যাচড" অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দাও, তারপর ভাববো। অথচ, এর আগে চিলিকা, পুরী, সাতকোশিয়ার সময় এত ভাবনা ছিলো না। অবিশ্যি সেও বছর পাঁচেক আগের কথা।)
গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটু নীচের দিকের রাস্তা ধরে হেঁটে রিভার ক্যাম্পও ঘুরে এলাম। আসল রিভার ক্যাম্প, যেটা মূর্তির ধারেই ছিলো, সেটা বন্ধ হয়ে পাহাড়ের গায়ে একটা নতুন রিসর্ট হয়েছে। নদীর ধারটা এখন পিকনিক স্পট। ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা লোকজন সান্তালেখোলা অবধি নিজেদের গাড়িতে এসে ফাড়ি বস্তি থেকে লোকাল ভাড়ার গাড়ি নিয়ে পিকনিক করতে যান।
সান্তালেখোলার পর্ব শেষ। এখান থেকে আমরা যাবো পানঝরা - চাপড়ামারি রিজার্ভের ভিতরে। যে রাস্তায় এসেছিলাম, সেই পথেই ফিরলাম - এক দুবার একটু রাস্তা জিগ্গেস করতে হল বটে, কিন্তু মোটামুটি ঠিকভাবেই সেই সামসিং চাবাগানের মধ্যে এসে পড়লাম। এর পরেই মূর্তি ব্রীজ, আর তারপর নয়াবস্তি পেরিয়ে আরেকটু গিয়েই চাপড়ামারির গেট। গেটে সমস্ত কাগজ দেখাতে হল, নামধাম এন্ট্রি করতে হল, তারপর ঢুকলাম জঙ্গলের মধ্যে। জঙ্গলের বাইরের রাস্তা আর জঙ্গলের ভিতরের পরিবেশের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। নিঝুম জঙ্গলে শুধু পাখির ডাক আর ঝিঁঝিপোকা - গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে অল্প আলো এসে পড়ছে - ভেজা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি। রাস্তাটা একটা গাড়ি যাওয়ার মতন, কোথাও কোথাও পাশের ঝোপঝাড় গাড়িতে ঠেকে যায়। নীচে গাড়ির চাকা গিয়ে গিয়ে দুটো সমান্তরাল মাটির লাইন হয়ে রয়েছে, তার মাঝখানে ঝোপঝাড় যে কে সেই - গাড়ির নীচে নানারকম বাজনা বাজায় - খসখস - খুট - টুংটাং...
কিলোমিটার খানেক গিয়ে ফরেস্ট বাংলো - সরকারি এলাকা, তার মধ্যে একটা ওয়াচটাওয়ার (যেখানে আমরা বিকেলে আসবো)। বাংলোটার সামনে দিয়ে বাঁদিক ঘুরে আরো ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আরো আড়াই তিন কিলোমিটার গিয়ে চাপড়ামারির ঠিক বাইরে একটা খালি জমিতে পানঝরা রিসর্ট। কাঠের তৈরী চারটে না পাঁচটা কেবিন, সামনে একটু লন - সেখানে বাচ্চারা দৌড়োদৌড়ি করতে পারে, তার পরেই বেড়া, আর একপাশে ইলেক্ট্রিক ফেন্স - হাতি আটকানোর জন্যে। সামনে দিয়ে মূর্তি নদী চলে গেছে, কোনের দিকটায় মূর্তির ওপর রেলব্রীজ আর গাড়ি চলার ব্রীজ।
মোটের ওপর জায়গাটা বেশ সুন্দর। একেবারে জঙ্গলের মধ্যে নয় বটে, কিন্তু জঙ্গলের গায়েই। ইলেক্ট্রিক ফেন্স মানে হাতি বা অন্য জন্তু চলে আসার ইতিহাস রয়েছে। টুরিস্ট বলতে সেই মুহুর্তে শুধুই আমরা। কটেজগুলোর মাঝে একটা কমন বারান্দাওয়ালা রান্নাঘর কাম খাবার জায়গা কাম রিসেপশন। সেখানে কাগজপত্র দেখাতে আমাদের দুটো কটেজ খুলে দিলো। সান্তালেখোলায় ঠান্ডা আর ল্যাদ কাটিয়ে কেউই চানটান আর মাথায় আনেনি। এখানে গরমজল পেয়ে আগে চান, তারপর আবার গরম গরম ভাত-ডাল-আলুভাজা আর বড়সড় মাছ। খাবার দেওয়ার সময়েই বলে দিলো সাড়ে তিনটে নাগাদ ওয়াচটাওয়ারে চলে যেতে, তারপর সাড়ে পাঁচটায় ট্রাইবাল ডান্স হবে রিসর্টে, সাথে চা আর পকোড়ার স্ন্যাক্স।
চাপড়ামারি কিন্তু বেশ পুরনো। ব্রিটিশ আমলে একে ন্যাশনাল রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চাপড়ামারি ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভ নামটা চালু হয় ১৯৪০ নাগাদ, আর ১৯৯৮ সালে একে ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর চাপড়ামারি নামটা এসেছে "চাপড়া" - এক ধরণের ছোট মাছ, যেটা কিনা এই এলাকায় অজস্র ("মারি") পাওয়া যায়। কী পাওয়া যায়? প্রধাণতঃ হাতি। চাপড়ামারি বিখ্যাত হাতির জন্যে। তাছাড়া ভারতীয় বাইসন (বা গৌড়), লেপার্ড, হরিণ, শুওর ইত্যাদি পাবেন কপালে থাকলে, আর অনেক পাখি - অনেক রকমফের তাদের। যেমন ধরুন - ড্রঙ্গো, বা ফিঙে - সে কলকাতায় বাড়ির সামনে ইলেক্ট্রিক তারের ওপরেই বসে থাকতে দেখেছি (ইদানিং অবশ্য কমে গেছে)। কিন্তু র্যাকেট-টেইলড ড্রঙ্গো - তাদের ন্যাজে দুটো আলাদা লম্বা পালক - এসব শুধু এদিকেই পাবেন।
এসব খবর পেলাম ফোন ঘেঁটে। সাড়ে তিনটের সময় গাড়ি নিয়ে গুটি গুটি গিয়ে হাজির হলাম ওয়াচটাওয়ারের কাছে। সেখানে একটা বড় বোর্ডে বড় বড় করে লেখা রয়েছে কী কী ধরণের গাছ আর জন্তুজানোয়ার চাপড়ামারির অধিবাসী। ওয়াচটাওয়ারের সামনে একটু ফাঁকা জায়গা, তারপর তারের বেড়া (সম্ভবতঃ ইলেক্ট্রিক ফেন্স), তারপর একটা জলাজমি, তারপর একটা সল্ট লিক্ আর ওয়াটার হোল। টাওয়ার থেকে ওয়াটার হোলটা দুশো মিটার মতন হবে হয়তো। টাওয়ারটা তিনতলা - মানে মাটির ওপরে একটা লেভেল, তার ওপর আরেকটা। আমরা সোজা ওপরে চলে গেলাম...কেউ কোত্থাও নেই...দূরে জলাটার ওপাড়ে খান কয়েক বাইসন (গৌড়) কাদার মধ্যে ঝিমোচ্ছে, সেগুলোর কয়েকটার পিঠের ওপর খান কয়েক বক বসে (সম্ভবতঃ পোকা খাচ্ছে)।
জঙ্গলের সমস্যা হল এইসব জন্তু জানোয়ারগুলো ওই দূরে দূরেই থাকে। ঠিকঠাক ইকুইপমেন্ট না থাকলে ওই দূর থেকে দেখেই ক্ষান্ত থাকতে হবে। আর যদি ভালো কোয়ালিটির ছবিটবি তুলতে চান, তাইলে পেল্লায় লেন্স ঘাড়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। মুশকিল হল এই ধরনের লেন্স শুধু এই নেচার ফটোগ্রাফিতেই কাজে আসে, আর আমার সেদিকে খুব একটা আগ্রহ কখনোই ছিলো না বলে এসব লেন্সও আমার নেই। তবে ওয়াচটাওয়ারে উঠে মনে হল না এনে বোকামো হয়েছে। আমার ২৪-৭০মিমি লেন্স দিয়ে কিস্যু হবে না। অন্ততঃ ক্লাবের কারো কাছ থেকে একটা ৮০-৪০০ বা নিদেনপক্ষে ৭০-২০০ ধার নিয়ে আসা উচিত ছিলো। তা এখন আর আপশোস করে কীই বা হবে এই ভেবে ওই ২৪-৭০ দিয়েই অল্প সল্প চেষ্টা করলাম। বিশেষ কিসুই হল না। বিশেষ করে খান কয়েক ধণেশ (হর্নবিল) খালি এদিক ওদিক করছিলো - ওগুলোর ছবি তুলতে পারলে কাজের কাজ হত...
দিব্যি বসেছিলুম ওয়াচটাওয়ারে একখান মাদুর পেতে। হঠাৎ গোঁ গোঁ করে বেশ কয়েকটাই জিপসি ধেয়ে এলো বাইরের দিক থেকে। আর সেগুলো থেকে পিল পিল করে লোক। জিপসিপিছু ছজন মতন - কাজেই শ-খানেক বা আরো বেশি লোক তো হবেই। তারা এসেই খুব হন্তদন্ত হয়ে টাওয়ারের সামনে ফাঁকা জমিটাতে নেমে পড়লো - খুব হইচই - মোবাইলে ছবি, সেল্ফি স্টিকে মোবাইল লাগিয়ে দুশো মিটার দূর থেকে ভিডিও তোলার প্রচেষ্টা, সেটা হয় না বলে আরো খানিক হইচই, অবশেষে দুদ্দাড় করে টাওয়ারে ওঠা, টাওয়ারে খানিক ভূমিকম্পের এফেক্ট...আমরা না, মোটামুটি হাঁ হয়ে বসে আছি তখন...মানে ব্যাপারটা কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে। ওয়াচটাওয়ারটা ফরেস্ট বাংলোর পাশেই, আর সেই সময়ে বাংলোর সামনে কিছু কাজ হচ্ছিলো - তার কিছু খুটখাট আওয়াজও ছিলো - যদিও সেই আওয়াজটা জঙ্গলের অ্যাম্বিয়েন্সে বেখাপ্পা ঠেকছিলো না। হঠাৎ, টাওয়ারের তলা থেকে বাজখাঁই গলায় কেউ চেঁচিয়ে উঠলেন - "আমরা মাল দিয়ে দেখতে এসেছি, তোরা এরকম আওয়াজ করলে আর জানোয়ার আসবে?"
দুশো মিটার দূরে ওয়াটার হোলটায় চারটে বাইসন ছিলো, দুটো উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটা দিলো।
আরো অনেক কিছুই হচ্ছিলো। টাওয়ারের ওপরে দাঁড়িয়ে নীচে কারো উদ্দেশ্যে (তারস্বরে) বলা - এই আমার একটা ছবি তুলে দে তো, বা এর উল্টোটাও। স্টর্ক জাতীয় পাখি দু একটা হেঁটে বেড়াচ্ছিলো জলায় - সেগুলো দেখিয়ে "ওই দ্যাখ বাবু, ওই দ্যাখ - হর্নবিল"। একটা ময়ূরী জলার পাশে আসার চেষ্টা করছিলো - তার পেখম না থাকায় এমনই সমবেত দুঃখ হল, এ ময়ূরীটা লজ্জা পেয়ে আর এলোই না।
সবুজ পোশাক পরা কয়েকজনকে দেখে বুঝলাম এরা ফরেস্ট গার্ড। তাদের কাছে জানলাম - এইসব গাড়িগুলো ডেইলি টুরিস্টদের গাড়ি। এঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ডুয়ার্স বেড়াতে এসে চালসা/মালবাজারের হোটেলে থাকেন, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট সকালে দু ঘন্টা আর বিকেলে দু ঘন্টার সাফারি চালায়, সেই টিকিট কেটে এঁরা জঙ্গলে ঘোরেন। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব হওয়া উচিৎ ছিলো জঙ্গলে কী কী করা যায় আর কী কী করা যায় না সেগুলো বুঝিয়ে দেওয়া - সেটা হয় বলে মনে হল না। কারণ যা যা করার কথা নয় - উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় পরা থেকে শুরু করে চেঁচামেচি, হইচই, সেল্ফি স্টিক - সমস্তই হচ্ছিলো, এবং অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে। আর একটা কাজ তো অবশ্যই করা উচিৎ - গাড়ির সংখ্যার ওপর একটা লিমিট রাখা। কারণ বিরক্ত হয়ে যখন নেমে এলাম, তখন অন্ততঃ খান পঁচিশেক জিপসি ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
নেমে আসাটা অবশ্য বোকামো হয়েছিলো - কারণ সেই যে ট্রাইবাল নাচের কথা বলেছিলাম - সেটা এই ডেইলি টুরিস্টদের প্যাকেজেরই অংশ। অত গাড়ির মিছিল সব গিয়ে পৌঁছলো পানঝরাতেই। আমরা পৌঁছে দেখি তখনই সামনের লনটা পুরো ভর্তি। টাওয়ারে থেকে গেলে সেখানটা খালিই পেতাম, হয়তো কিছুক্ষণ দাঁড়ালে হাতির দেখা পেলেও পেতে পারতাম...
যাই হোক - ভিড়ের মধ্যে আর নাচ দেখতে যাইনি, বরং বাংলোর সামনে রকে বসে চা আর পকোড়া খেয়ে গল্পসল্প করলুম। যখন বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে (এবং সব টুরিস্ট ফিরে গেছে), আমি একটু বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলুম - তখন হঠাৎ কসম্সে বলছি - টায়ার ফাটার মত একটা আওয়াজ এলো উল্টোদিকে নদী পেরিয়ে জঙ্গলের দিক থেকে, আর তার পরেই "আঃ" করে একটা চিৎকার - বাজি ফেলে বলতে পারি সেটা মানুষের গলার, আর আওয়াজটা বন্দুক জাতীয় কিছুর। তারপরেই বড় বড় টর্চের আলো ওদিক থেকে দেখা যেতে লাগলো। পানঝরার কেয়ারটেকার দুজন বল্ল হাতি এসেছে সম্ভবতঃ, যদিও ওদের টর্চের আলো (সাথে আমার সাথে আনা বড় ক্যাম্প লাইটের আলো) দিয়েও কিছু দেখা গেল না। ওদিকের আলোগুলো কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে আবার নিভে গেলো। কী হয়েছিলো বুঝলাম না, তবে পরের দিন দেবাশিসের সাথে কথা বলে মনে হল চোরাশিকারের ঘটনা হলেও হতে পারে - ওদিকে বেশ কয়েকটা জঙ্গলের সিকিউরিটির দায়িত্ব এখন এসএসবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, কারণ ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট ছড়াচ্ছে - এবং এসএসবির মুখের আগে গুলি চলে। ঠিক কী হয়েছিলো সেদিন, তা হয়তো কখনোই জানতে পারবো না - পরের দিন কাগজ বা লোকাল লোকের মুখেও কিছু শুনিনি, তবে যতবার ব্যাপারটা মনে পড়ে, ততবারই চোরাশিকারের ধারণাটাই আরো গেঁথে বসে।
যাই হোক, পানঝরায় আমাদের এক রাতেরই থাকা ছিলো। জিনিসপত্র রাতেই গুছিয়ে রাখলাম। পরের দিন ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে যাবো - গৌহাটি যাওয়ার রাস্তা ধরে জলদাপাড়া পেরিয়ে মেন্ডাবাড়ি/চিলাপাতা।
(চলবে)
(আগের কথা)
সেদিন বিকেল থেকে ঋতিরও মুখ একটু ভার। কী ব্যাপার? না পরের দিন ওই রাস্তায় নামতে হবে, তাই একটু...ওই আর কী...পেট গুড়গুড় করছে। আরে তুই তো নর্থ সিকিমও ঘুরে এলি - তখন তো বলিসনি। জানলাম তখনও নাকি ভয় ভয়ই করেছিলো। তা আমি যে পরের বার গাড়ি নিয়ে অরুণাচল যাবো - তুই যাবি না? সোজা উত্তর - না।
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে ব্যাগপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলতে তুলতে ন'টা বেজে গেলো। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিলো - তাই দেরী না করে নামতে শুরু করলাম, আবার ওই পাথর মোড়া রাস্তায়। নামার সময় আর অত চিন্তা নেই - একবার উঠেছি যখন, রাস্তা জানা হয়ে গেছে, অজানা কোথাও যাচ্ছি না আর। তবে সাবধানতাটা বেশি, কারণ নিউটনসায়েবের থিওরি, আর প্রাকৃতিক নিয়ম। নামার আগে বলেছিলাম একটু ভিডিও করে রাখতে - সেও করা হল, অপেক্ষকৃত কম দুলুনি যেখানে সেখানে। দুলতে দুলতে, লাফাতে লাফাতে অবশেষে ফের ফাড়ি বস্তি...মোমোর দোকান ইত্যাদি।
(ফাড়ি বস্তিতে নেমে ঋতিকে বল্লাম - এই তো দ্যাখ, কেমন সুন্দর নেমে এলাম। এবার অরুণাচল যাবি তো? ঋতি উত্তর দিলো - আগে আমাকে "আনস্ক্র্যাচড" অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দাও, তারপর ভাববো। অথচ, এর আগে চিলিকা, পুরী, সাতকোশিয়ার সময় এত ভাবনা ছিলো না। অবিশ্যি সেও বছর পাঁচেক আগের কথা।)
গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটু নীচের দিকের রাস্তা ধরে হেঁটে রিভার ক্যাম্পও ঘুরে এলাম। আসল রিভার ক্যাম্প, যেটা মূর্তির ধারেই ছিলো, সেটা বন্ধ হয়ে পাহাড়ের গায়ে একটা নতুন রিসর্ট হয়েছে। নদীর ধারটা এখন পিকনিক স্পট। ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা লোকজন সান্তালেখোলা অবধি নিজেদের গাড়িতে এসে ফাড়ি বস্তি থেকে লোকাল ভাড়ার গাড়ি নিয়ে পিকনিক করতে যান।
সান্তালেখোলার পর্ব শেষ। এখান থেকে আমরা যাবো পানঝরা - চাপড়ামারি রিজার্ভের ভিতরে। যে রাস্তায় এসেছিলাম, সেই পথেই ফিরলাম - এক দুবার একটু রাস্তা জিগ্গেস করতে হল বটে, কিন্তু মোটামুটি ঠিকভাবেই সেই সামসিং চাবাগানের মধ্যে এসে পড়লাম। এর পরেই মূর্তি ব্রীজ, আর তারপর নয়াবস্তি পেরিয়ে আরেকটু গিয়েই চাপড়ামারির গেট। গেটে সমস্ত কাগজ দেখাতে হল, নামধাম এন্ট্রি করতে হল, তারপর ঢুকলাম জঙ্গলের মধ্যে। জঙ্গলের বাইরের রাস্তা আর জঙ্গলের ভিতরের পরিবেশের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। নিঝুম জঙ্গলে শুধু পাখির ডাক আর ঝিঁঝিপোকা - গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে অল্প আলো এসে পড়ছে - ভেজা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি। রাস্তাটা একটা গাড়ি যাওয়ার মতন, কোথাও কোথাও পাশের ঝোপঝাড় গাড়িতে ঠেকে যায়। নীচে গাড়ির চাকা গিয়ে গিয়ে দুটো সমান্তরাল মাটির লাইন হয়ে রয়েছে, তার মাঝখানে ঝোপঝাড় যে কে সেই - গাড়ির নীচে নানারকম বাজনা বাজায় - খসখস - খুট - টুংটাং...
কিলোমিটার খানেক গিয়ে ফরেস্ট বাংলো - সরকারি এলাকা, তার মধ্যে একটা ওয়াচটাওয়ার (যেখানে আমরা বিকেলে আসবো)। বাংলোটার সামনে দিয়ে বাঁদিক ঘুরে আরো ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আরো আড়াই তিন কিলোমিটার গিয়ে চাপড়ামারির ঠিক বাইরে একটা খালি জমিতে পানঝরা রিসর্ট। কাঠের তৈরী চারটে না পাঁচটা কেবিন, সামনে একটু লন - সেখানে বাচ্চারা দৌড়োদৌড়ি করতে পারে, তার পরেই বেড়া, আর একপাশে ইলেক্ট্রিক ফেন্স - হাতি আটকানোর জন্যে। সামনে দিয়ে মূর্তি নদী চলে গেছে, কোনের দিকটায় মূর্তির ওপর রেলব্রীজ আর গাড়ি চলার ব্রীজ।
মোটের ওপর জায়গাটা বেশ সুন্দর। একেবারে জঙ্গলের মধ্যে নয় বটে, কিন্তু জঙ্গলের গায়েই। ইলেক্ট্রিক ফেন্স মানে হাতি বা অন্য জন্তু চলে আসার ইতিহাস রয়েছে। টুরিস্ট বলতে সেই মুহুর্তে শুধুই আমরা। কটেজগুলোর মাঝে একটা কমন বারান্দাওয়ালা রান্নাঘর কাম খাবার জায়গা কাম রিসেপশন। সেখানে কাগজপত্র দেখাতে আমাদের দুটো কটেজ খুলে দিলো। সান্তালেখোলায় ঠান্ডা আর ল্যাদ কাটিয়ে কেউই চানটান আর মাথায় আনেনি। এখানে গরমজল পেয়ে আগে চান, তারপর আবার গরম গরম ভাত-ডাল-আলুভাজা আর বড়সড় মাছ। খাবার দেওয়ার সময়েই বলে দিলো সাড়ে তিনটে নাগাদ ওয়াচটাওয়ারে চলে যেতে, তারপর সাড়ে পাঁচটায় ট্রাইবাল ডান্স হবে রিসর্টে, সাথে চা আর পকোড়ার স্ন্যাক্স।
চাপড়ামারি কিন্তু বেশ পুরনো। ব্রিটিশ আমলে একে ন্যাশনাল রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চাপড়ামারি ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভ নামটা চালু হয় ১৯৪০ নাগাদ, আর ১৯৯৮ সালে একে ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর চাপড়ামারি নামটা এসেছে "চাপড়া" - এক ধরণের ছোট মাছ, যেটা কিনা এই এলাকায় অজস্র ("মারি") পাওয়া যায়। কী পাওয়া যায়? প্রধাণতঃ হাতি। চাপড়ামারি বিখ্যাত হাতির জন্যে। তাছাড়া ভারতীয় বাইসন (বা গৌড়), লেপার্ড, হরিণ, শুওর ইত্যাদি পাবেন কপালে থাকলে, আর অনেক পাখি - অনেক রকমফের তাদের। যেমন ধরুন - ড্রঙ্গো, বা ফিঙে - সে কলকাতায় বাড়ির সামনে ইলেক্ট্রিক তারের ওপরেই বসে থাকতে দেখেছি (ইদানিং অবশ্য কমে গেছে)। কিন্তু র্যাকেট-টেইলড ড্রঙ্গো - তাদের ন্যাজে দুটো আলাদা লম্বা পালক - এসব শুধু এদিকেই পাবেন।
এসব খবর পেলাম ফোন ঘেঁটে। সাড়ে তিনটের সময় গাড়ি নিয়ে গুটি গুটি গিয়ে হাজির হলাম ওয়াচটাওয়ারের কাছে। সেখানে একটা বড় বোর্ডে বড় বড় করে লেখা রয়েছে কী কী ধরণের গাছ আর জন্তুজানোয়ার চাপড়ামারির অধিবাসী। ওয়াচটাওয়ারের সামনে একটু ফাঁকা জায়গা, তারপর তারের বেড়া (সম্ভবতঃ ইলেক্ট্রিক ফেন্স), তারপর একটা জলাজমি, তারপর একটা সল্ট লিক্ আর ওয়াটার হোল। টাওয়ার থেকে ওয়াটার হোলটা দুশো মিটার মতন হবে হয়তো। টাওয়ারটা তিনতলা - মানে মাটির ওপরে একটা লেভেল, তার ওপর আরেকটা। আমরা সোজা ওপরে চলে গেলাম...কেউ কোত্থাও নেই...দূরে জলাটার ওপাড়ে খান কয়েক বাইসন (গৌড়) কাদার মধ্যে ঝিমোচ্ছে, সেগুলোর কয়েকটার পিঠের ওপর খান কয়েক বক বসে (সম্ভবতঃ পোকা খাচ্ছে)।
জঙ্গলের সমস্যা হল এইসব জন্তু জানোয়ারগুলো ওই দূরে দূরেই থাকে। ঠিকঠাক ইকুইপমেন্ট না থাকলে ওই দূর থেকে দেখেই ক্ষান্ত থাকতে হবে। আর যদি ভালো কোয়ালিটির ছবিটবি তুলতে চান, তাইলে পেল্লায় লেন্স ঘাড়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। মুশকিল হল এই ধরনের লেন্স শুধু এই নেচার ফটোগ্রাফিতেই কাজে আসে, আর আমার সেদিকে খুব একটা আগ্রহ কখনোই ছিলো না বলে এসব লেন্সও আমার নেই। তবে ওয়াচটাওয়ারে উঠে মনে হল না এনে বোকামো হয়েছে। আমার ২৪-৭০মিমি লেন্স দিয়ে কিস্যু হবে না। অন্ততঃ ক্লাবের কারো কাছ থেকে একটা ৮০-৪০০ বা নিদেনপক্ষে ৭০-২০০ ধার নিয়ে আসা উচিত ছিলো। তা এখন আর আপশোস করে কীই বা হবে এই ভেবে ওই ২৪-৭০ দিয়েই অল্প সল্প চেষ্টা করলাম। বিশেষ কিসুই হল না। বিশেষ করে খান কয়েক ধণেশ (হর্নবিল) খালি এদিক ওদিক করছিলো - ওগুলোর ছবি তুলতে পারলে কাজের কাজ হত...
দিব্যি বসেছিলুম ওয়াচটাওয়ারে একখান মাদুর পেতে। হঠাৎ গোঁ গোঁ করে বেশ কয়েকটাই জিপসি ধেয়ে এলো বাইরের দিক থেকে। আর সেগুলো থেকে পিল পিল করে লোক। জিপসিপিছু ছজন মতন - কাজেই শ-খানেক বা আরো বেশি লোক তো হবেই। তারা এসেই খুব হন্তদন্ত হয়ে টাওয়ারের সামনে ফাঁকা জমিটাতে নেমে পড়লো - খুব হইচই - মোবাইলে ছবি, সেল্ফি স্টিকে মোবাইল লাগিয়ে দুশো মিটার দূর থেকে ভিডিও তোলার প্রচেষ্টা, সেটা হয় না বলে আরো খানিক হইচই, অবশেষে দুদ্দাড় করে টাওয়ারে ওঠা, টাওয়ারে খানিক ভূমিকম্পের এফেক্ট...আমরা না, মোটামুটি হাঁ হয়ে বসে আছি তখন...মানে ব্যাপারটা কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে। ওয়াচটাওয়ারটা ফরেস্ট বাংলোর পাশেই, আর সেই সময়ে বাংলোর সামনে কিছু কাজ হচ্ছিলো - তার কিছু খুটখাট আওয়াজও ছিলো - যদিও সেই আওয়াজটা জঙ্গলের অ্যাম্বিয়েন্সে বেখাপ্পা ঠেকছিলো না। হঠাৎ, টাওয়ারের তলা থেকে বাজখাঁই গলায় কেউ চেঁচিয়ে উঠলেন - "আমরা মাল দিয়ে দেখতে এসেছি, তোরা এরকম আওয়াজ করলে আর জানোয়ার আসবে?"
দুশো মিটার দূরে ওয়াটার হোলটায় চারটে বাইসন ছিলো, দুটো উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটা দিলো।
আরো অনেক কিছুই হচ্ছিলো। টাওয়ারের ওপরে দাঁড়িয়ে নীচে কারো উদ্দেশ্যে (তারস্বরে) বলা - এই আমার একটা ছবি তুলে দে তো, বা এর উল্টোটাও। স্টর্ক জাতীয় পাখি দু একটা হেঁটে বেড়াচ্ছিলো জলায় - সেগুলো দেখিয়ে "ওই দ্যাখ বাবু, ওই দ্যাখ - হর্নবিল"। একটা ময়ূরী জলার পাশে আসার চেষ্টা করছিলো - তার পেখম না থাকায় এমনই সমবেত দুঃখ হল, এ ময়ূরীটা লজ্জা পেয়ে আর এলোই না।
সবুজ পোশাক পরা কয়েকজনকে দেখে বুঝলাম এরা ফরেস্ট গার্ড। তাদের কাছে জানলাম - এইসব গাড়িগুলো ডেইলি টুরিস্টদের গাড়ি। এঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ডুয়ার্স বেড়াতে এসে চালসা/মালবাজারের হোটেলে থাকেন, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট সকালে দু ঘন্টা আর বিকেলে দু ঘন্টার সাফারি চালায়, সেই টিকিট কেটে এঁরা জঙ্গলে ঘোরেন। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব হওয়া উচিৎ ছিলো জঙ্গলে কী কী করা যায় আর কী কী করা যায় না সেগুলো বুঝিয়ে দেওয়া - সেটা হয় বলে মনে হল না। কারণ যা যা করার কথা নয় - উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় পরা থেকে শুরু করে চেঁচামেচি, হইচই, সেল্ফি স্টিক - সমস্তই হচ্ছিলো, এবং অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে। আর একটা কাজ তো অবশ্যই করা উচিৎ - গাড়ির সংখ্যার ওপর একটা লিমিট রাখা। কারণ বিরক্ত হয়ে যখন নেমে এলাম, তখন অন্ততঃ খান পঁচিশেক জিপসি ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
নেমে আসাটা অবশ্য বোকামো হয়েছিলো - কারণ সেই যে ট্রাইবাল নাচের কথা বলেছিলাম - সেটা এই ডেইলি টুরিস্টদের প্যাকেজেরই অংশ। অত গাড়ির মিছিল সব গিয়ে পৌঁছলো পানঝরাতেই। আমরা পৌঁছে দেখি তখনই সামনের লনটা পুরো ভর্তি। টাওয়ারে থেকে গেলে সেখানটা খালিই পেতাম, হয়তো কিছুক্ষণ দাঁড়ালে হাতির দেখা পেলেও পেতে পারতাম...
যাই হোক - ভিড়ের মধ্যে আর নাচ দেখতে যাইনি, বরং বাংলোর সামনে রকে বসে চা আর পকোড়া খেয়ে গল্পসল্প করলুম। যখন বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে (এবং সব টুরিস্ট ফিরে গেছে), আমি একটু বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলুম - তখন হঠাৎ কসম্সে বলছি - টায়ার ফাটার মত একটা আওয়াজ এলো উল্টোদিকে নদী পেরিয়ে জঙ্গলের দিক থেকে, আর তার পরেই "আঃ" করে একটা চিৎকার - বাজি ফেলে বলতে পারি সেটা মানুষের গলার, আর আওয়াজটা বন্দুক জাতীয় কিছুর। তারপরেই বড় বড় টর্চের আলো ওদিক থেকে দেখা যেতে লাগলো। পানঝরার কেয়ারটেকার দুজন বল্ল হাতি এসেছে সম্ভবতঃ, যদিও ওদের টর্চের আলো (সাথে আমার সাথে আনা বড় ক্যাম্প লাইটের আলো) দিয়েও কিছু দেখা গেল না। ওদিকের আলোগুলো কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে আবার নিভে গেলো। কী হয়েছিলো বুঝলাম না, তবে পরের দিন দেবাশিসের সাথে কথা বলে মনে হল চোরাশিকারের ঘটনা হলেও হতে পারে - ওদিকে বেশ কয়েকটা জঙ্গলের সিকিউরিটির দায়িত্ব এখন এসএসবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, কারণ ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট ছড়াচ্ছে - এবং এসএসবির মুখের আগে গুলি চলে। ঠিক কী হয়েছিলো সেদিন, তা হয়তো কখনোই জানতে পারবো না - পরের দিন কাগজ বা লোকাল লোকের মুখেও কিছু শুনিনি, তবে যতবার ব্যাপারটা মনে পড়ে, ততবারই চোরাশিকারের ধারণাটাই আরো গেঁথে বসে।
যাই হোক, পানঝরায় আমাদের এক রাতেরই থাকা ছিলো। জিনিসপত্র রাতেই গুছিয়ে রাখলাম। পরের দিন ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে যাবো - গৌহাটি যাওয়ার রাস্তা ধরে জলদাপাড়া পেরিয়ে মেন্ডাবাড়ি/চিলাপাতা।
(চলবে)
(আগের কথা)
No comments:
Post a Comment