Tuesday, August 15, 2006

রাজনীতির শিকার না অরাজনীতির?

সৌমিক মারা গেলো, বি ই কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র...দুই দল ছাত্রের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষ, সেখান থেকে...

জনতার আদালতে, আনন্দবাজারের বিচারে দোষী হল "ছাত্র রাজনীতি"...এই পোস্টটা সেই নিয়েই। সৌমিকের মৃত্যু নিঃসন্দেহে দুঃখজনক, কিন্তু দোষী কি রাজনীতি, না কিছু আহাম্মক যারা রাজনীতিতে ঢুকে বসে থাকে? দিন দুয়েক আগে টাইমস অব ইন্ডিয়া মতামত জানতে চেয়েছিলো, খুব স্বাভাবিকভাবেই যা বলেছি তার ৮০% গায়েব...

প্রথমে একটা কথা আছে আবাপ-র বক্তব্য নিয়ে - "বাইরের সক্রিয় রাজনৈতিক সহায়তায় ভিতরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা থাকে" - একেবারে গপ্পোকথা৷ আমাদের সঙ্গে এস এফ আই জেলা বা রাজ্য কমিটির যোগাযোগ ছিলো ঠিকই, এবং থাকাই স্বাভাবিক, কিন্তু বি ই কলেজের আভ্যন্তরীন ইস্যুতে আমরা কখনো কাউকে নাক গলাতে দিই নি৷ জেলায় যদি ছাত্র ধর্মঘটের ডাক থাকতো, তার প্রচার আমরা নিজেরা করতাম, কলেজের ভিতরে বাইরে থেকে এস এফ আই কমরেডরা এসে কাজ করতো না - এই ব্যাপারে আমাদের ক্লিয়ার আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো - হ্যাঁ, বিভিন্ন লেভেলে মীটিং হয়েছে, কখনো আমাদের ঘরেই, কিন্তু ওই অবধিই৷ কাজেই বাইরে থেকে অন্য কর্মীরা এসে ভোটের সময় গণ্ডগোল করতো - এটা রীতিমতন কষ্টকল্পনা৷ বরং ভোট বা ছাত্র পরিষদের ধর্মঘটের সময় অম্বিকা ব্যানার্জীকে কলেজে ছাত্র পরিষদের বেঞ্চিতে বসে থাকতে দেখেছি৷

অবশ্য বাইরের সাধারণ লোকজনের সঙ্গে বি ই কলেজের ছাত্রদের সম্পর্ক কোনকালেই স্বাভাবিক ছিলো না৷ অনেক ক্ষেত্রেই "আমি কি হনু" ভাব দেখাতে গিয়ে এক শ্রেণীর ছাত্র একটা বাজে ধারণা তৈরী করতো৷

তবে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি অবধি কলেজের অবস্থা অনেক সুস্থ ছিলো, কারণ চেষ্টা করা হত একটা সুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাখার৷ তখন কলেজে ছাত্র ফেডারেশন ছাড়াও ছিলো ছাত্র পরিষদ এবং নকশালপন্থী পি এস এ - স্ট্রাইক-টাইকের সময় কলেজ গেটে গণ্ডগোল হয়নি তা নয় - কিন্তু হকি-স্টিক, রড, চেন - না:, সে অবস্থায় পৌঁছত না৷ একবারই বড় গণ্ডগোল হয়েছিলো - কিছু বিশেষ ছাত্র কয়েকজন কর্মচারী এবং, ডেপুটি রেজিস্ট্রারের গায়ে হাত তোলার পরে - সেই গণ্ডগোলটা এতটাই ছড়িয়েছিলো যে আশে পাশের মানুষজন জড়িয়ে পড়েছিলো৷ কিছুদিনের জন্যে হোস্টেল খালি করে দিতে হয় - আমরা তখন ফার্স্ট ইয়ার, সম্ভবত ৯২ সালের শুরুর কথা - তবে সেই কয়েকজন ছাত্র ক্ষমা চেয়ে নেয়, শাস্তিও হয়, এই ঘটনা ওখানেই শেষ হয়ে গেছিলো৷

তবে এখনকার মতন ঘটনা - ছাত্রদের মধ্যে এরকম মারামারি - আমাদের কাছে নতুন৷ এই ট্রেন্ডটা দেখছি নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে৷ মানে যে সময় থেকে কলেজে রাজনীতির ট্রেন্ড কমতে থাকে৷ নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিই তত্কালীন ভিসি - স্পর্শমণি চট্টোপাধ্যায়, এবং রেজিস্ট্রার - এন উপাধ্যায় - রাজনৈতিক কাজের ওপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা জারি করতে শুরু করেন - টি এন শেষন স্টাইলে, বা এবারের বিধানসভা নির্বাচন স্টাইলে৷ এর আগে থেকেই ছাত্র পরিষদ একটা "অরাজনৈতিক" ভাব বজায় রাখতো - অরাজনীতির রাজনীতি, যেটাকে আমরা কাউন্টার করার চেষ্টা করতাম৷ কলেজ কতৃপক্ষও সমস্ত রাজনৈতিক কাজের বিরোধিতা করায় এই অরাজনৈতিক ব্যাপারটা হাওয়া পায়, ছাত্র পরিষদ পাল্টে এখনকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসলিডেশন তৈরী হয় - এদের তো নিজেদের মধ্যেই খেয়োখেয়ি আছে...ছাত্র পরিষদের "অরাজনৈতিক" বক্তব্য ছিলো- "কলেজে এসেছিস, ফূর্তি করবি, মস্তি করবি - বাইরে কি হল তাই দিয়ে আমাদের কি দরকার" - আমরা এটাকে ঠেকাতাম৷ এই মস্তি/ফূর্তি কালচার কিন্তু আরো অনেক কিছু টেনে এনেছিলো - মদ, ব্লু ফিল্ম, কোরেক্স...আমরা হোস্টেলে প্রয়োজনে জোর করে ব্লু ফিল্ম আটকেছি, এই কালচার ঠেকানোর চেষ্টা করেছি পলিটিক্যালি৷ মুশকিল হল এই কালচারের বিরুদ্ধে লড়াই না থাকলে, এই কালচার ছেয়ে যায়...এবং সেটাই সম্ভবতঃ হয়েছিলো, সম্ভবত এখনও রয়ে গেছে৷

এছাড়া অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রশ্ন আছে - আমার ব্যক্তিগত (এবং সম্ভবত অনেকের ব্যক্তিগত) ধারণায় স্পর্শমণি চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত বাজে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ছিলেন - যত নামকরা অ্যাকাডেমিকই হয়ে থাকুন না কেন৷ ওঁর আগে ড: বিমল সেনের একটা অসাধারণ পার্সোনালিটি ছিলো, যার জন্যে তিনি অনেক শ্রদ্ধা আদায় করে নিতেন৷ ড: সেনের সাথে মুখোমুখি প্রচণ্ড তর্ক হয়েছে, উনি একবার আমাকে সকলের সামনে বলেছিলেন "তুমি কি করে কলেজ থেকে বেরোও দেখবো" - কিন্তু ওঁর ওপর থেকে শ্রদ্ধা কমেনি - উনি আমাদেরও কিন্তু সমান রেসপেক্ট দিতেন৷ এই ব্যাপারটা পরের দিকে কমে এসেছিলো বলে মনে হয়৷

আরো একটা ব্যাপার আমার মনে হয় এখানে কাজ করেছে - আমাদের সময়ে ফার্স্ট/সেকেণ্ড/থার্ড ইয়ার - সব একই হোস্টেলে থাকতো - ফলে মেলামেশা অনেক বেশি ছিলো৷ এর খারাপ দিকও ছিলো - নির্বিচারে ragging, এর জন্যেই ৯৪-৯৫ সালে হোস্টেল আলাদা করে দেওয়া হয়৷ ছাত্র পরিষদ এর তুমুল বিরোধিতা করে, ছাত্রদের অধিকাংশও - বেশ কিছুদিন অনশন হয়েছিলো৷ এস এফ আই নীতিগত কারণে হোস্টেল আলাদা করে দেওয়াকে সমর্থন করেছিলো৷ আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওই আলাদা করে দেওয়াতে এক হোস্টেলে থাকার মতন মেলামেশা যে বন্ধ হয়ে গেছিলো, সেটাই এখনকার এই গোলমেলে অ্যাটিচিউডের একটা কারণ নয়তো? এখন অধিকাংশ গণ্ডগোল কিন্তু এক হোস্টেল বনাম আর এক হোস্টেল, অর্থাৎ, এক ইয়ার বনাম আরেক ইয়ার...

6 comments:

Anonymous said...

আপনার বক্তব্যটা পড়ে মনে হচ্ছে যত দোষ ছাত্র পরিষদের আর এসএফআইয়ের কোন দোষই নেই । তারা যেন ধোয়া তুলসিপাতা । ব্লুফিল্ম দেখা মদ খাওয়া আবার পার্টি দেখে হয় নাকি । আর সিপিএম আর এসএফআইয়ের যদি পশ্চিমবঙ্গে এতই প্রভাব থাকবে তাহলে শহর এবং গ্রামঞ্চলে এত মদ আর ব্লুফিল্মের জোয়ার আসবে কেন । আসলে আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলের সাথে এখন আর সিপিএম বা এসেএফআইয়ের কোনও প্রভেদ নেই । তারাও সমান দুর্নীতিগ্রস্ত । এই মৃত্যুর দায়িত্ব কিছুটা হলেও এসএফআইয়েরও আছে ।

Anonymous said...

আপনার বক্তব্যটা পড়ে মনে হচ্ছে যত দোষ ছাত্র পরিষদের আর এসএফআইয়ের কোন দোষই নেই । তারা যেন ধোয়া তুলসিপাতা । ব্লুফিল্ম দেখা মদ খাওয়া আবার পার্টি দেখে হয় নাকি । আর সিপিএম আর এসএফআইয়ের যদি পশ্চিমবঙ্গে এতই প্রভাব থাকবে তাহলে শহর এবং গ্রামঞ্চলে এত মদ আর ব্লুফিল্মের জোয়ার আসবে কেন । আসলে আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলের সাথে এখন আর সিপিএম বা এসেএফআইয়ের কোনও প্রভেদ নেই । তারাও সমান দুর্নীতিগ্রস্ত । এই মৃত্যুর দায়িত্ব কিছুটা হলেও এসএফআইয়েরও আছে ।

Arijit said...

না, আমি ছাত্র পরিষদকেও দোষ দিচ্ছি না - অন্ততঃ এই ব্যাপারে। দোষ দিচ্ছি অরাজনীতিকে, এবং তাকে যারা উস্কানি দেয় তাদের। রাজনীতি সুস্থ হতে গেলে সকলকেই দরকার।

Arijit said...

বেসিক্যালি বলতে পারেন ওই যে বলা হচ্ছে - রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে গণ্ডগোলও বন্ধ হয়ে যাবে, আমার আপত্তি ওখানেই। কই, দশ বছর আগে যখন এস এফ আই আর ছাত্র পরিষদ লড়তো ওই একুশটা সীটের জন্যে, এমন তো হত না? হাতাহাতি কোথায় না হয়, কিন্তু রড-চেন-হকিস্টিক? আমরা তো ওসব চোখেই দেখিনি কলেজে...আর বেশিদিন আগের কথা তো নয় - বছর দশ বারো...

Anonymous said...

আশা করি পড়তে পেরেছেন । আসলে কাউকে সমর্থনের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আরেকটু নরম হলে ভালো হয় । সিপিএম বা এসএফআইয়ের গঠনমূলক সমালোচনাও আপনার কাছ থেকে পেতে চাই শুধু অন্ধ সমর্থন নয় । একজন পশ্চিমবঙ্গবাসী তরুণ হিসাবে আমি গত বহু বছরের বামপন্থীদের কাজে খুব একটা খুশি নই । তারা অনেকক্ষেত্রেই ব্যর্থ বলে প্রমানিত হয়েছে । তাদের বিপুল ভোটে জয়লাভের কোন মূল্য আমার কাছে নেই । আর বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নানা ভূল নীতিকে তারা সমর্থন করছে । জাতপাতের ভিত্তিতে সংরক্ষনের কোনো প্রতিবাদ তারা করছে না । কিছুদিন আগে সারা ভারতে ব্লগ ব্যান করা হয়েছিল তাতেও তাদের কাছ থেকে কোন সমালোচনা শোনা যায় নি ।

Arijit said...

দাদা - আমি যে জন্মাবধি সিপিএম:-)

না, ঠাট্টা নয় - অনেক ব্যাপারে সত্যিই আরো সরব হওয়া দরকার। সেখান থেকেই সুস্থ রাজনীতির প্রসঙ্গটা বারবার উঠে আসে। সংরক্ষণ ইস্যুতে অনেক প্রশ্ন আছে, অথচ, পুরোপুরি বাতিলও করে দিতে পারি না, অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলো এড়ালে চলবে না। তবে ব্লগার ইস্যুতে আমি কিছু এক্সপেক্টই করিনি - ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা এখনো পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে। এবং সিপিএম আজও হাইটেক হতে পারে নি - বাঁধা গতের মধ্যেই রয়ে গেছে। এই দেখুন না, মানবদা আইটি মন্ত্রী থাকাকালীন সেই মাইক্রোসফটই এসেছে - হাইটেক কোম্পানী, তবে মুক্ত চিন্তা নয় - ওপেন সোর্স নিয়ে কোন চেষ্টাই হয়নি। শুধু গতকাল আজকালে দেখলুম একটা কনফারেন্সের কথা। সিপিএমের মধ্যে কয়েকজন এটা নিয়ে এগোতে চাইছে...

আপনার কথাগুলো মাথায় রাখবো।