যে সিকোয়েন্সটা মাথায় রেখে লিখতে শুরু করেছিলাম - হিন্দুত্বের শ্যাডো আর্মি বা ছায়া সৈন্য হিসেবে তথাকথিত ফ্রিঞ্জ গোষ্ঠীগুলোর কথা - সেইটা শুরু করি এবার। মুসলমানদের "ওরা" হিসেবে দেখতে শুরু করার টাইমলাইন, মেইনস্ট্রীম হিন্দুত্বের শুরু, আর তার পিছনে নাৎসী আর ফ্যাসিস্টদের চিন্তাভাবনার অবদান, এমনকি এদের মধ্যে যোগাযোগের কথা আগেই বলেছি...
এবার একটু রিসেন্ট সময়ে ফিরি।
মালেগাঁও বিস্ফোরণ, অভিনব ভারত, আর ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের হিন্দু জাতীয়তাবাদ...
- শুরুর কথা -
একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছিলো ১১ই সেপ্টেম্বরের টুইন টাওয়ার আক্রমণ দিয়ে - ২০০১ সালে। আমি তখন ওয়াশিংটন ডিসির কাছে চাকরি করি, থাকি মেরিল্যান্ডে। কাজেই সেই দিনের ঘটনাক্রম, তার পরের দিনগুলো - যখন মানুষজনের চোখে একই সাথে আতঙ্ক আর আমার মত গায়ের চামড়ার লোকেদের দিকে সন্দেহভরা দৃষ্টি - দুইই মনে আছে।
শুরুটা আমেরিকা দিয়ে হলেও ভারতেও আঘাত কম আসেনি। ঘটনার সংখ্যা দিয়ে হিসেব করলে ভারত উগ্র ইসলামিক মৌলবাদের হাতে অন্যতম আক্রান্ত দেশ হয়ে উঠেছিলো। ২০০৮ সালের নভেম্বর অবধি প্রায়সই এখানে ওখানে বিস্ফোরণ - কখনো বড় শহরে, কখনো মাঝারি শহরে - মানুষ মরেছে কখনো হয়তো দশবারোজন, কখনো শখানেক বা আরো বেশি। ২০০১ থেকে ২০০৮ অবধি মৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় আটশোর কাছাকাছি।
২০০৬/০৭ অবধি এরকম সমস্ত ঘটনারই দায় সরকারি তরফে চাপানো হত প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর। অফিশিয়াল ভাষ্য বা সাধারণ মানুষের ধারণায় ছিলো যে এদেশের নাগরিকদের হাতে এরকম ঘটনা ঘটে না, দোষীরা প্রধাণতঃ পাকিস্তান বা বাংলাদেশের নাগরিক। যদিও তদন্তে দেখা গেছে ভারতীয় মুসলমানদের একাংশও কখনো অযোধ্যা বা কখনো গুজরাট দাঙ্গার বদলা নিতে এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে - এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা শুধু সাহায্য করা বা খবরাখবর দেওয়ার মধ্যে আটকে থাকছে না। ২০০৮ সালে জয়পুর, আহমেদাবাদ আর দিল্লীতে বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সেখানে সম্ভবতঃ Students Islamic Movement of India (SIMI) থেকে গজিয়ে ওঠা ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন জড়িত।
যেটা প্রথমে কেউই বুঝতে পারেনি সেটা হল এরই পালটা হিসেবে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নতুন হিন্দু মিলিশিয়া তৈরী হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে তারা পুরনো প্রায়মৃত সংগঠনকে আবার অ্যাক্টিভ করে তুলেছে, আর উগ্র ইসলামিক জঙ্গীদের কাজের বদলা নিতে টার্গেট করেছে সাধারণ ভারতীয় মুসলমানদের।
হ্যাঁ, এখানে শুরুতে "বুঝতে পারেনি" কথাটা লিখলাম ঠিকই - হয়তো সত্যিই বুঝতে পারেনি। যদিও কখনো কখনো সন্দেহ হয় যে যাদের বোঝার দরকার ছিলো তারা হয় বুঝতে চায়নি, বা তাদের বুঝতে দেওয়া হয়নি। কারণ, যারা এই কাজে জড়িত প্রায় সকলেই কোনো না কোনোভাবে সংঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত, আর সংঘ পরিবারের হাতে তিরিশের দশক থেকে ঘটে চলা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কথা আগেই লিখেছি। কাজেই, সন্দেহটা সত্যি হলে আশ্চর্য্যের কিছু থাকবে না।
২০০৮ সালে, রমজানের ঠিক পরেই সেপ্টেম্বর মাসে মালেগাঁও শহরে এক মসজিদের সামনে ঘটা বিস্ফোরণে মারা যায় ছ'জন লোক। সেই তদন্তের সময়ে হিন্দুত্ববাদীদের এই পুরো পরিকল্পনা প্রথম সামনে আসে - বিভিন্ন জায়গায় সার্চের সময় পাওয়া জিনিসপত্র আর ডকুমেন্ট থেকে জানা যায় যে মালেগাঁও বিস্ফোরণের পিছনে দায়ী অভিনব ভারত বলে একটা "নতুন" সংগঠন - যাদের লক্ষ্য ইসলামিক উগ্রপন্থার জবাব তাদেরই আদলে হিন্দু উগ্রপন্থা দিয়েই দেওয়া - টিট ফর ট্যাট, যে উগ্রপন্থাকে ধিক্কার জানানোর কথা, তারই নকল করে।
মালেগাঁও বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে হেমন্ত কারকারের তৈরী রিপোর্ট থেকে এই ঘটনার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়...এবং, হিন্দু জাতীয়তাবাদী মহলের ভিতরকার ডিসকোর্সের একটা আঁচ পাওয়া যায় বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে কথোপকথনের রেকর্ডিং (এবং ট্রানস্ক্রিপ্ট) থেকে - ২০০৭-০৮ এর মধ্যে হওয়া বিভিন্ন গোপন মিটিংএর।
এর পর কয়েকটা পর্বে বলবো মালেগাঁও বিস্ফোরণের পিছনের গোটা গল্পটা।
#ShadowArmiesOfHindutva
(১) Shadow Armies - Fringe Organisations and Foot Soldiers of Hindutva, Dhirendra Kr. Jha
(২) Abhinav Bharat, the Malegao Blast and Hindu Nationalism: Resisting and Emulating Islamist Terrorism, Christophe Jaffrelot, Economic & Political Weekly, Vol. 45, Issue No. 36, 04 Sep, 2010
(৩) Chargesheets and Miscellaneous Documents regarding the Malegaon Case
No comments:
Post a Comment