আজকের নিউক্যাসলের ইতিহাস বঞ্চনার। তাই
মনে হয় আরো বেশি চেনা চেনা লাগে। আমার চেনা অন্য আরেকটা শহরের মতন। সেই
ইতিহাসের আরেকটা ঝলক - নিউক্যাসল, ২০০৬।
হেডলাইন
=====
২০০৬-এর গরমলাকের একটা দিনে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন কাগজের হেডলাইন -
(১) এখন গরমকাল। বেজায় গরম, যাকে বলে পীক সামার। গোটা ইংল্যান্ডে লোকে হাঁসফাঁস করছে। আশ্চর্য নয় - শীতপ্রধান দেশ, সেখানে দুম করে বত্রিশ-তেত্রিশ, কোথাও পঁয়ত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্র অস্বস্তিকর তো বটেই। জল্পনা চলে - উনিশশো এগারোর রেকর্ড (সাঁইত্রিশ ডিগ্রী) হয়তো ভাঙতেও পারে এবার। সকালের মেট্রোতে খবর - "Commuters in London are travelling in temperatures higher than those in which cattle are transported. Buses in London have reached 52 degree Celcius, while the tube reached 47 degrees. According to the EU guidelines, cattle are not to be transported in temperatures above 27 degrees." হাঁসফাঁসানো লোকে কটিবস্ত্র গলিয়ে ঝাঁক বেঁধে দৌড়চ্ছে সমুদ্রের ধারে। লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঘুরতে গেলে দেখা যায় অগণিত স্নানদৃশ্য।
(২) এইচ এম এস গ্লস্টার - যে কিনা বেইরুট থেকে একশো আশি জন আটকে পড়া ব্রিটিশ নাগরিককে সাইপ্রাসে নিয়ে এসেছে, ক্রমশঃ আরো আসবে, হয়তো হাজার কুড়ি আরো - ডানকার্কের পর এই প্রথম এত বড় স্কেলে ইভ্যাকুয়েশন।
(৩) লেবাননের ওপর আরো ইজরায়েলি বোমাবর্ষন।
(৪) জি-৮ সামিটে বড়দাদা বুশ এবং ছোট ভাই ব্লেয়ারের ঘনিষ্ঠ কথোপকথন - যেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জ, হেজবোল্লা, প্যালেস্টাইনের পাশাপাশি আলোচনার বিষয়বস্তু একটা সোয়েটার।
(৫) ফুটবলের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সেল - জুভেন্টাস, লাজিও, ফিওরেন্টিনা আর এ সি মিলানের শাস্তির পর বাজারে তাদের কোন ফুটবলারের কত দাম।
(৬) তৃতীয়বার বাবা হলেন গর্ডন ব্রাউন।
.......
এর মাঝে দুটো খবর এক ঝলকের জন্যে সামনে এসেই মিলিয়ে যায়। আন-ইম্পরট্যান্ট, ফালতু খবর...
(১) সেই নিরীহ ব্রাজিলীয় ইলেক্ট্রিশিয়ানের কথা মনে পড়ে? সেই জাঁ চার্লস ডি মেনেজেস? বাইশে জুলাই ২০০৫ যাকে সশস্ত্র পুলিশবাহিনে স্টকওয়েল টিউব স্টেশনের ভিতর গুলি করে মারে সুইসাইড বম্বার সন্দেহে - কোনো প্রশ্ন না করে, কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে? প্রায় এক বছর পর, ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের রায় - কোনো পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, হ্যাঁ, কিছু ভুল হয়েছিলো বটে।
"Despite mistakes made in planning and communication by officers, there had been 'insufficient evidence to provide a realistic prospect of conviction against any individual police officer'."
ইন্ডিপেন্ডেন্ট পুলিশ-কমিশনের রিপোর্ট অন্ধকারে থেকে যায়, সম্ভবতঃ পুরো ঘটনার কঠোর সমালোচনার জন্য। ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের রায় - ১৯৭৪ সালের "কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা" আইনের সেকশন তিন এবং তেত্রিশ নম্বর ধারার আওতায় মেট্রোপলিটান পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক - for "failing to provide for the health, safety and welfare" of Mr Menezes on 22 July - খুন নয়, ফেইলিং টু প্রোভাইড হেলথ্, সেফটি অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার। পুলিশ খুন করে না।
সাঁইত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় স্টকওয়েল টিউব স্টেশনের পাশে জাঁ চার্ল্স ডি মেনেজেসের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে পড়ে থাকা ফুলগুলো শুকোতে থাকে...
(২) সোয়ান হান্টার শিপইয়ার্ড থেকে ধীরগতিতে বেরিয়ে যায় ইয়ার্ডে তৈরী হতে থাকা শেষ জাহাজটা - কাজ শেষ হবে গ্লাসগোতে। টাইন নদীর দুই ধার নীরব চোখে চেয়ে থাকে ক্রমশঃ দূরে সরে যেতে থাকা ষোল হাজার টনের RFA Lyme Bay-র দিকে। একশো ছেচল্লিশ বছরের জাহাজ তৈরীর ইতিহাস শেষ। বন্ধ হল টাইনের ধারের শেষ জাহাজ তৈরীর কারখানা। প্রতিরক্ষা দপ্তরের বক্তব্য - ক্রমবর্ধমান খরচ এবং কাজ শেষ হতে দেরীই এই কনট্র্যাক্ট বাতিলের কারণ, এবং তার জন্যে দায়ী সোয়ান হান্টারের ম্যানেজমেন্ট। জাহাজের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো বিতর্কই নেই।
কয়েক দশক আগেও এই একই সোয়ান হান্টারে কাজ করতো প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার শ্রমিক, নয় নয় করে ষোলশর বেশি জাহাজ তৈরী হয়ে বেরিয়েছে এই ইয়ার্ড থেকে...কিন্তু নর্থ-সাউথ ডিভাইড অন্যান্য ইয়ার্ড আর কয়লাখনির মত এরও শেষ বাঁশি বাজিয়ে দিলো।
সাঁইত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পুড়তে থাকে ধুলো ঢাকা নির্জন সোয়ান হান্টার - টাইন নদীর ধারের শেষ শিপইয়ার্ড। হয়তো এবার সেখানে জাহাজ ভাঙা হবে...
হেডলাইন
=====
২০০৬-এর গরমলাকের একটা দিনে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন কাগজের হেডলাইন -
(১) এখন গরমকাল। বেজায় গরম, যাকে বলে পীক সামার। গোটা ইংল্যান্ডে লোকে হাঁসফাঁস করছে। আশ্চর্য নয় - শীতপ্রধান দেশ, সেখানে দুম করে বত্রিশ-তেত্রিশ, কোথাও পঁয়ত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্র অস্বস্তিকর তো বটেই। জল্পনা চলে - উনিশশো এগারোর রেকর্ড (সাঁইত্রিশ ডিগ্রী) হয়তো ভাঙতেও পারে এবার। সকালের মেট্রোতে খবর - "Commuters in London are travelling in temperatures higher than those in which cattle are transported. Buses in London have reached 52 degree Celcius, while the tube reached 47 degrees. According to the EU guidelines, cattle are not to be transported in temperatures above 27 degrees." হাঁসফাঁসানো লোকে কটিবস্ত্র গলিয়ে ঝাঁক বেঁধে দৌড়চ্ছে সমুদ্রের ধারে। লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঘুরতে গেলে দেখা যায় অগণিত স্নানদৃশ্য।
(২) এইচ এম এস গ্লস্টার - যে কিনা বেইরুট থেকে একশো আশি জন আটকে পড়া ব্রিটিশ নাগরিককে সাইপ্রাসে নিয়ে এসেছে, ক্রমশঃ আরো আসবে, হয়তো হাজার কুড়ি আরো - ডানকার্কের পর এই প্রথম এত বড় স্কেলে ইভ্যাকুয়েশন।
(৩) লেবাননের ওপর আরো ইজরায়েলি বোমাবর্ষন।
(৪) জি-৮ সামিটে বড়দাদা বুশ এবং ছোট ভাই ব্লেয়ারের ঘনিষ্ঠ কথোপকথন - যেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জ, হেজবোল্লা, প্যালেস্টাইনের পাশাপাশি আলোচনার বিষয়বস্তু একটা সোয়েটার।
(৫) ফুটবলের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সেল - জুভেন্টাস, লাজিও, ফিওরেন্টিনা আর এ সি মিলানের শাস্তির পর বাজারে তাদের কোন ফুটবলারের কত দাম।
(৬) তৃতীয়বার বাবা হলেন গর্ডন ব্রাউন।
.......
এর মাঝে দুটো খবর এক ঝলকের জন্যে সামনে এসেই মিলিয়ে যায়। আন-ইম্পরট্যান্ট, ফালতু খবর...
(১) সেই নিরীহ ব্রাজিলীয় ইলেক্ট্রিশিয়ানের কথা মনে পড়ে? সেই জাঁ চার্লস ডি মেনেজেস? বাইশে জুলাই ২০০৫ যাকে সশস্ত্র পুলিশবাহিনে স্টকওয়েল টিউব স্টেশনের ভিতর গুলি করে মারে সুইসাইড বম্বার সন্দেহে - কোনো প্রশ্ন না করে, কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে? প্রায় এক বছর পর, ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের রায় - কোনো পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, হ্যাঁ, কিছু ভুল হয়েছিলো বটে।
"Despite mistakes made in planning and communication by officers, there had been 'insufficient evidence to provide a realistic prospect of conviction against any individual police officer'."
ইন্ডিপেন্ডেন্ট পুলিশ-কমিশনের রিপোর্ট অন্ধকারে থেকে যায়, সম্ভবতঃ পুরো ঘটনার কঠোর সমালোচনার জন্য। ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের রায় - ১৯৭৪ সালের "কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা" আইনের সেকশন তিন এবং তেত্রিশ নম্বর ধারার আওতায় মেট্রোপলিটান পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক - for "failing to provide for the health, safety and welfare" of Mr Menezes on 22 July - খুন নয়, ফেইলিং টু প্রোভাইড হেলথ্, সেফটি অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার। পুলিশ খুন করে না।
সাঁইত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় স্টকওয়েল টিউব স্টেশনের পাশে জাঁ চার্ল্স ডি মেনেজেসের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে পড়ে থাকা ফুলগুলো শুকোতে থাকে...
(২) সোয়ান হান্টার শিপইয়ার্ড থেকে ধীরগতিতে বেরিয়ে যায় ইয়ার্ডে তৈরী হতে থাকা শেষ জাহাজটা - কাজ শেষ হবে গ্লাসগোতে। টাইন নদীর দুই ধার নীরব চোখে চেয়ে থাকে ক্রমশঃ দূরে সরে যেতে থাকা ষোল হাজার টনের RFA Lyme Bay-র দিকে। একশো ছেচল্লিশ বছরের জাহাজ তৈরীর ইতিহাস শেষ। বন্ধ হল টাইনের ধারের শেষ জাহাজ তৈরীর কারখানা। প্রতিরক্ষা দপ্তরের বক্তব্য - ক্রমবর্ধমান খরচ এবং কাজ শেষ হতে দেরীই এই কনট্র্যাক্ট বাতিলের কারণ, এবং তার জন্যে দায়ী সোয়ান হান্টারের ম্যানেজমেন্ট। জাহাজের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো বিতর্কই নেই।
কয়েক দশক আগেও এই একই সোয়ান হান্টারে কাজ করতো প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার শ্রমিক, নয় নয় করে ষোলশর বেশি জাহাজ তৈরী হয়ে বেরিয়েছে এই ইয়ার্ড থেকে...কিন্তু নর্থ-সাউথ ডিভাইড অন্যান্য ইয়ার্ড আর কয়লাখনির মত এরও শেষ বাঁশি বাজিয়ে দিলো।
সাঁইত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পুড়তে থাকে ধুলো ঢাকা নির্জন সোয়ান হান্টার - টাইন নদীর ধারের শেষ শিপইয়ার্ড। হয়তো এবার সেখানে জাহাজ ভাঙা হবে...
No comments:
Post a Comment